তুমি আমার পর্ব-১০

0
160

#তুমি_আমার (পর্ব ১০)
#মেঘা_আফরোজ
·
·
·
রেহান রাতে মেঘাকে ফোন দিচ্ছে কিন্তু মেঘা ধরছে না। বিরক্তি নিয়ে ফোনটা খাটের ওপর ছুড়ে মারলো রেহান। রুমের মধ্য কিছুক্ষণ পাইচারি করে আবারো ফোন হাতে তুলে মেঘাকে কল দিলো। ওপাশ থেকে এবার রিসিভ হলো ফোনটা কিন্তু কোনো কথা বলছে না। রেহান নিজেই বলতে লাগলো
– মেঘা কি হয়েছে তোমার ফোন ধরছিলে না কেনো,দুপুরে আমাকে না বলেই চলে গেলে কেনো??
…………
– এই মেঘা চুপ করে থেকো না প্লিজ কিছু তো বলো।
– কি জন্য ফোন দিয়েছেন আপনি?? রেগে বললো।
– কি জন্য মানে! তুমি কি ভুলে গিয়েছো আজ সকালের কথা গুলো??
– নাহ কিছুই ভুলিনি আমি।
– তাহলে কি হয়েছে বলো আমায় আর রাগ কেনো করেছো বলো??
– দুপুরে রাফিন আমার সাথে যখন কথা বলছিলো তখন আপনি রাফিনকে কিছু বললেন না কেনো??
– বলিনি তার বিশেষ কারন আছে।
– ওও তাই! তাহলে একটা কাজ করবো রাফিনের সাথেই এখন থেকে কথা বলবো আমি আর আপনি চেয়ে চেয়ে দেখবেন কেমন।
– এই একদম না,যদি কখনো দেখি তুমি নিজে থেকে ওর সাথে কথা বলছো তাহলে আমি যে কি করবো তুমি ভাবতেও পারবে না। মেঘা আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি কেনো বুঝো না তুমি।
– আচ্ছা তাহলে কাল যদি রাফিন আবারো কথা বলতে আসে তাহলে ওর সামনে আপনি আমাকে প্রোপোজ করবেন,কি পারবেন তো??
– হুম পারবো তবে কাল নয়। আমার কিছু কাজ আছে সেটা শেষ করেই রাফিনের সামনে আমি তোমাকে প্রোপোজ করবো।
– কি কাজ??
– কাল কলেজে এসো সব বুঝিয়ে বলবো তোমায়।
– আচ্ছা এখন রাখছি আমি।
– এখনি রেখে দেবে কথাই তো শেষ হলো না!!
– এতো কথা বলতে হবে না। মুচকি হেসে।
– কই এতো কথা বলেছি। এই মেঘা একটা কথা বলোতো তুমি হঠাৎ এমন পাল্টে গেলে কি করে?? আগে তোমাকে দেখে মনে হতো কথাই বলতে জানো না,আর রাগ অভিমাম বিরক্ত এসব তো দূরের কথা!!
– কেনো এখন কার মেঘাকে পছন্দ হচ্ছে না বুঝি??
– আরে এ কথা কখন বলেছি আমি।
– হুমম,আমি এমনি যখন যেভাবে চলতে হবে বা কথা বলতে হবে তখন সেভাবে চলি আর সেভাবেই কথা বলি। আচ্ছা আমি রাখছি এখন বাই।
– আরে এই মেঘ….যাহ কেটে দিলো ফোনটা!!

রেহান ফোনটা বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে হেসে দিয়ে বললো….তোমাকে আমি মন থেকে ভালোবেসেছি মেঘা তুমি যেমনি হও না কেনো তোমার সব রুপেই আমি তোমাকে ভালোবেসে যাবো।
.
🌿
.
কলেজে এসে রেহান মেঘাকে সবটা বুঝিয়ে বলেছে রাফিন আর ওর বড়মায়ের ব্যাপারে। মেঘা সব শুনে রেহানকে বললো
– আপনি আপনার বড়মার সাথে দেখা করতে চান??
– হুম চাই তো আর তার জন্যই রাফিনকে কিছু বলতে পারছি না। তবে একটা বিষয় আমি কিছুতেই মিলাতে পারছি না।
– কি বিষয়?
– বড়মা তো আগে আমাদের সাথেই থাকতো আর আমার জানা মতে ওনার একটা ছেলে আর একটা মেয়ে ছিলো।
– বড়মার ছেলের নাম কি ছিলো?
– রিফাত নাম ছিলো আর রিফাত ভাইয়া আমার থেকে ৩ বছরের বড় ছিলো। তাহলে রাফিন কে হয় বড়মার?
– সেদিন তো রাফিন আমার সামনে ওনাকে মানে আপনার বড়মাকে মা বলে ডাকছিলো। আচ্ছা একটা কাজ করলে কেমন হয়,রাফিনের সাথে আমি কথা বলে বলবো আমি ওনার মায়ের সাথে দেখা করতে চাই। রাফিন যদি আপনার বড়মাকে নিয়ে আসে তাহলেই সিওর হওয়া যাবে।
রেহান মেঘার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো
– তুমি রাফিনের সাথে কথা বলবে??
– এছাড়া আর উপায় কি বলুন আমি তো আপনাকে সাহায্য করতে চাইছি।
– ঠিকআছে রাফিনকে বলবে ওর মায়ের সাথে তাড়াতাড়ি দেখা করাতে বাট প্লিজ মেঘা এর থেকে একটা কথাও বেশি বলবে না।
মেঘা মুচকি হেসে রেহানকে বললো
– চিন্তা করবেন না আপনি।
– আচ্ছা যাও এখন ক্লাসে যাও ছুটির পরে দেখা হবে।
মেঘা মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো।

ক্লাসের সামনে আসতেই তানিশা অনু মেঘাকে ঘিরে দাড়ালো অনু কোমোড়ে হাত রেখে ভ্রু কুঁচকে বললো
– রেহান ভাইয়ার সাথে কি চলে হুম?
– ককি চলবে কিছুনা। বলেই চলে যেতে নিলে তানিশা মেঘার হাত চেপে ধরে বললো
– একদম পালানোর চেষ্টা করবি না,আমি কিছুদিন যাবৎ খেয়াল করেছি রেহান ভাইয়া তোর দিকে কিভাবে যেনো তাকায় আর তুইও মাঝে মাঝে ওনার দিকে তাকিয়ে হাসতি,আর আজ তো পাশাপাশি দাড়িয়ে কথাও বললি!এসবের রহস্য কি বলবি আমায়?
মেঘা কি বলবে ওদের ভেবে পাচ্ছে না চুপ করে আছে,অনু বলতে লাগলো
– ওই চুপ করে আছিস কেনো বল। আচ্ছা এমন নয়তো তোদের মাঝে হয়তো প্রেমের সূচনা ঘটেছে??
মেঘা চমকে তাকালো ও বেশ বুঝতে পারছে ওদের থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে না তাই বাধ্য হয়েই খুলে বললো সবটা।
দুজনের মেঘার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ফিক করে হেসে উঠলো। মেঘা অবাক চোখে চেয়ে আছে ওদের দিকে হাসির কারনটা কি সেটা বুঝতে পারছে না। অনু মেঘাকে কনুই দিয়ে গুতো মেরে বললো
– আমার জায়গাটা তাহলে তুই দখল করে নিলি!!মুচকি হেসে বললো।
তানিশা হেসে বললো
– রেহান ভাইয়া তোকে কবে জায়গা দিয়েছিলো শুনি যে মেঘা তোর জায়গা নিয়ে নিবে!!
এভাবে হাসি তামাশা করেই সেদিন ওদের ক্লাসগুলো শেষ হলো।
.
🌿
.
রেহান গেটের বাইরে দাড়িয়ে আছে আর তানভিরের সাথে কথা বলছে। কেউ পেছন থেকে রেহানের কাধে হাত রেখে বললো
– হেই রেহান কেমন আছিস?
রেহান ঘুরে তাকিয়ে জোরপূর্বক হাসি ফুটিয়ে বললো
– আরে রাফিন যে, আমি ভালো আছি তুই কেমন আছিস?
– হুমম আমি বেশ আছি।
কলেজ ছুটি হয়ে গিয়েছে মেঘা তানিশা অনু একসাথেই বের হলো। তানিশা রেহানকে দেখে মেঘাকে ইশারায় দেখিয়ে ওরা চলে গেলো।
মেঘা রেহানের পাশে রাফিনকেও দেখতে পেলো যদিও রাফিনের সাথে কথা বলতে ও বিরক্ত বোধ করে কিন্তু কিছু যে করার নেই রেহানের জন্য কথা বলতো হবে।
রাফিন মেঘাকে দেখতে পেয়ে মুচকি হেসে রেহানের দিকে তাকিয়ে বললো
– রেহান আমি একটু আসছি।
রেহান বুঝতে পেরে মাথা নাড়ালো।
রাফিন এসে মেঘার সামনে দাড়িয়ে এটা সেটা বলে যাচ্ছে। ওর কথার মাঝেই মেঘা রাফিনকে বললো
– সেদিন আপনার সাথে যে মহিলাটি ছিলেন উনি কে হন আপনার??
– আমার মা উনি কেনো সেদিন তো তোমার সামনেই মা বলে ডাকলাম।
– ওহ হুম,আমি আপনার মায়ের সাথে দেখা করতে চাই।
রাফিন মেঘার দিকে একটু তাকিয়ে থেকে বললো
– ওকে কবে দেখা করতে চাও বলো?
মেঘা অবাক হলো রাফিন যে এতো সহজে রাজি হয়ে যাবে মেঘা ভাবেনি। মেঘা আড়চোখে রেহানের দিকে একবার তাকালো তারপর রাফিনকে বললো
– কাল তো বৃহস্পতিবার কলেজ ১২ টার দিকেই ছুটি হবে আপনি কালই নিয়ে আসবেন আপনার মাকে।
– ঠিকআছে নিয়ে আসবো বাট কেনো দেখা করতে চাও জানতে পারি কি??
– এমনি দেখা করবো আন্টিকে বেশ ভালো লেগেছে আমার।
– হুম বুঝলাম।

পরের দিন মেঘার কলেজ ছুটির পর মেঘা গেটের বাইরে আসতেই বড়মাকে দেখতে পেলো। মেঘা ওনার কাছে গিয়ে টুকটাক কথা বললো এর মাঝেই রাফিন রেহানকে সাথে নিয়ে ওদের সামনে এসে দাড়ালো।
রাফিন রেহানকে বললো এটা ওর মা।
রেহান ওর বড়মার দিকে তাকালো বড়মাও তাকালো ওর দিকে রেহানের চোখে জল চিকচিক করছে। বড়মার হাসিমাখা মুখটাতে মুহুর্তেই কষ্টের ছাপ ফুটে উঠলো রেহানের চোখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে রেহানের মুখোমুখি এসে দাড়ালো। মেঘা রাফিন এমনকি রেহান সবাই অবাক হয়ে চেয়ে আছে বড়মার দিকে। বড়মা ছলছল চোখে রেহানের দুগালে হাত রেখে বললো
– আমার ছোট্ট রেহান এতো বড় হয়ে গেছে!!
রেহান যেনো কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে ও সপ্নেও ভাবেনি ওর বড়মা ওকে চিনতে পারবে!!
·
·
·
চলবে…………………