তুমি আমার প্রিয়তমা পর্ব-০২

0
114

#তুমি_আমার_প্রিয়তমা
[দ্বিতীয় পর্ব ]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ

আচমকা কারোর ডাকে ঘুম ভেঙে যায় আদনানের। আদনান খুলতেই হতবাক হয়ে যায়। আদনান কিছুতেই নিজের চোখ সরাতে পারছেনা। হালকা সাজে আদিবাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে।

— এই-যে!

আদনান অপলকভাবে তাকিয়ে আছে আদিবার দিকে। আদনান যেনো হারিয়ে গিয়েছে অন্য এক জগতে। আদিবা এবার আদনানকে একটা ধাক্কা দিতেই আদনানের হুশ ফিরে আসে।

— এভাবে তাকিয়ে থাকার কি আছে আজব। কখন থেকে ডেকেই যাচ্ছি কানে শুনিশনা নাকি?

— কিছুক্ষণের জন্য আমি কোথায় যেনো হারিয়ে গিয়েছিলাম। সরি। বলুন কেন ডাকছেন?

— আমার খুব খিদে পেয়েছে আমার জন্য নাস্তা নিয়ে আয়।

— নাস্তা সবার সাথে এক সাথে করতে হবে। আপনি একটু অপেক্ষা করুন আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।

— ওকে।

এবার আদনান ফ্রেশ হতে চলে গেলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই আদনান ফ্রেশ হয়ে আসে। এবার দু’জনে নিচে যাবে তখন আদনান আদিবাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,

— দেখুন আমাদের মধ্যে কি হচ্ছে সেটা যেনো আমাদের মধ্যেই থাকে। বাবা-মা যেনো এই ব্যাপারে কিছু জানতে না পারে।

— ঠিক আছে।

— চলুন।

এবার দু’জনে রুম থেকে বেরিয়ে এসে সিঁড়ির ধাপে পা দেওয়ার আগেই আদিবা আদনানের হাত জড়িয়ে ধরে। এটা দেখে আদনান পুরো থ হয়ে যায়। আদনান সামনের দিকে খেয়াল করে তার মা-বাবা তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। এবার দুজন এক সাথে নাস্তা করার জন্য বসে পড়ে। নাস্তা শেষ করে দু’জন আবার এক সাথে নিজেদের রুমে ফিরে যায়।

আদিবা আদনানের দিকে তাকিয়ে বলল,

— কাল রাতে কি বলছিলাম মনে আছে?

— জ্বি আছে।

— তাহলে যান ডিভোর্সের ব্যবস্থা করুন। আর হ্যাঁ ডিভোর্স যেনো আজকের মধ্যেই হয়ে যায়।

— আচ্ছা আমি দেখছি কি করা যায়। কিন্তু আমার একটা প্রশ্ন ছিলো!

— কি প্রশ্ন?

— আপনি ডিভোর্স কেন চাইছেন? আমাকে কি আপনার পছন্দ না?

— আমি আপাতত এখন কোনো উত্তর দিতে পারবোনা। ডিভোর্সের পরে উত্তর পাবে।

— আচ্ছা দেখছি কি করা যায়। আর হ্যাঁ আমি এখন ভার্সিটি যাচ্ছি।

আদিবা আর কোনো কথা না বলে খাটের উপরে বসে থাকে। আদনান রেডি হয়ে বের হবে তখন আদনানের আম্মু রাবেয়া বেগম আদনানকে থামিয়ে দিয়ে বলল,

— আদনান তুই আজ এসময় ভার্সিটি যাচ্ছিস নাকি?

— হ্যাঁ আম্মু, জরুরী একটা ক্লাস আছে।

— আজ না গেলে হয়না? বুঝতেই তো পারছিস বাড়িতে নতুন বউ।

— না আম্মু যেতেই হবে। আসছি টাটা, দরজাটা আঁটকে রেখো।

এই কথা বলে আদনান বাসা থেকে বেরিয়ে ভার্সিটির দিকে চলে যেতে থাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই আদনান ভার্সিটির সামনে চলে আসে। তখনই আদনানের বন্ধু রাসেল আদনানকে ডাক দেয়।

— কিরে কখন থেকে ডাকছি কিন্তু তোর কোনো রেসপন্স পাচ্ছিনা।

— আসলে দোস্ত অন্যমনস্ক ছিলাম তাই।

— কি হইছে বল তো তোকে এমন দেখাচ্ছে কেন?

— কি আর বলব অনেক বড় একটা ঘটনা ঘটে গিয়েছে কাল।

— কাল তো তুই আমার সাথেই ছিলিস, কি হইছে আবার?

আদনান এবার বিয়ের ব্যাপারে রাসেলের কাছে সব বলল।

— কি বলিস তাহলে তুই বিয়ে করে নিয়েছিস অথচ আমাকে একটা বারব বললি না।

— এখন ডিভোর্স চাইছে সে।

— মানে? ডিভোর্স চাইছে মানে তোর মধ্যে কোনো সমস্যা নাকি? তুই পারিস না কোনটা?

— চুপ শালা। মজা করিস না। এমনিতেই অনেক চিন্তার মধ্যে আছি।

— আচ্ছা কি হইছে আমাকে খুলে বল। দেখি কিছু একটা ব্যবস্থা করতে পারি নাকি।

এবার আদনান ডিভোর্সের ব্যাপারে রাসেলের কাছে সব বলল।

— আমার তো মনে হয় ছয়মাসের আগে ডিভোর্স হয়না।

— কিন্তু উনি আজকের মধ্যেই ডিভোর্স চাইছে। কি করব বল।

— দাড়া আমার মামা একজন উকিল আছে। ওনাকে ফোন দিয়ে দেখি কি বলে।

রাসেল তার মামাকে ফোন দিয়ে কথা বলে। কথা বলা শেষ করে আদনান নিজের বাড়িতে ফিরে আসে। আদনান সোজা নিজের রুমে চলে যায়। আদিবা আদনানের দিকে এগিয়ে আসে।

— কিছু ব্যবস্থা হইছে?

— হ্যাঁ, আমি উকিলের সাথে কথা বলছি। ছয়মাসের আগে ডিভোর্স হয়না। ছয়মাস আমাদের এক সাথে থাকতে হবে।

— কিহ! ছয়মাস আমার তোর সাথে থাকতে হবে? পিয়াস যদি এসব জানতে পারে তখন কি হবে?

— পিয়াস কে?

— আমার বয়ফ্রেন্ড।

— বয়ফ্রেন্ড থাকতে আবার অন্য যায়গায় বিয়ে ঠিক করে কীভাবে? বাসায় কি বয়ফ্রেন্ড এর ব্যাপারে কিছু বলেন নাই?

— নাহ।

— কেনো?

— কারণ কীভাবে বলব ও মাত্র বিদেশে গিয়েছে। ওখানে তো স্যাটেল হতে একটু সময় লাগবে। তার আগেই তো বাবা আমাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।

— আচ্ছা সমস্যা নেই আপনি আমার উপর ভরসা করতে পারেন। আমি কথা দিচ্ছি আমি নিজে আপনাকে আপনার বয়ফ্রেন্ডের হাতে তুলে দেবো। আর হ্যাঁ, আমরা একি রুমে থাকলেও আমি কখনও কোনো সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করব না। রেস্ট করুন আমি আসছি।

এই কথা বলে আদনান বাহিরে চলে যায়। দেখতে দেখতে রাত হয়ে যায়। আদনান ছাদের উপরে চলে যায়। ছাদের উপরে এক কোণে দাঁড়িয়ে থাকে আদনান। আকাশে চাঁদ উঠেছে। আর চাঁদটাও ঝলমল করছে। শীতল বাতাসে শরীর ও শীতল হয়ে উঠছে।

— আপনি চাঁদ দেখতে পছন্দ করেন?

কথাটা শুনেই আদনান পাশে তাকিয়ে দেখে আদিবা দাঁড়িয়ে আছে। আদনান পুরো অবাক হয়ে গেলো। কারণ আদিবা আদনানকে তুই থেকে আপনি করে বলছে।

— কি হলো কথা বলছেন না যে?

— না মানে আপনি আমাকে তুই থেকে হঠাৎ আপনি করে বলছেন যে?

— আসলে সরি আগের ব্যবহারের জন্য। আমার আপনার সাথে তুইতোকারি করা ঠিক হয়নি।

— সমস্যা নাই। আপনি এতো রাতে এখানে কেন আসলেন?

— রুমে ঘুম আসছিলনা। আপনিও নেই, তাই ভাবলাম ছাদের উপরে যাই। এখানে এসে দেখলাম আপনি এখানেই আছেন।

— আমি প্রায় সময় এখানে আশি। রাতের আকাশ খুব ভালো লাগে। আর আকাশের চাঁদটার সাথে আমার অনেক মিল।

— কীভাবে?

— চাঁদটা যেমন একা, আমিও তেমন একা। আমাদের কারোর কথা শোনার মতো কেউ নেই। তাই আমি আমার দুঃখ গুলো চাঁদের সাথে শেয়ার করি।

— আপনার আবার কীসের দুঃখ? আপনাকে দেখে তো তেমন মনে হয়না।

— হয়তো। আমি আমার কষ্ট গুলো কাওকে বলিনি। শুধুই চাঁদকে ছাড়া। কারণ সে কাওকে বলবেনা।

— আপনার কীসের এতো কষ্ট শুনিতে পারি?

— আজ থাক অন্য একদিন বলব। অনেক রাত হয়েছে চলুন রুমে যাই।

— ঠিক আছে।

এবার দু’জনে রুমে যায়। আদিবা খাটে আর আদনান সোফায় ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে দরজার শব্দ শুনে আদনানের ঘুম ভেঙে যায়। আদনান দরজা খুলে দেখে রাবেয়া বেগম দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

— আম্মু এতো সকালে তুমি আমার রুমে কেন?

— বউকে ডেকে তুল। ওর বাবা আসছে।

— আচ্ছা তুমি যাও আমি ডেকে তুলছি।

রাবেয়া বেগম চলে গেলো। আদনান আদিবার কাছে চলে আসে। আদনান আদিবার দিকে তাকিয়ে থাকে। ঘুমন্ত অবস্থায় আদিবাকে খুব মায়াবী লাগছে। হুমায়ুন আহমেদের একটা লাইন মনে পড়ে গেল। হুমায়ুন আহমেদ বলেছেন ঘুমন্ত অবস্থায় যে মেয়েকে সুন্দর দেখায় সেই আসল সুন্দরী। আদিবাও ঠিক তেমন। আদনান এবার আদিবাকে কয়েকবার ডাক দেয়, কিন্তু আদিবার কোনো রেসপন্স নেই দেখে আদনান আদিবার শরীর স্পর্শ করে ধাক্কা দেয়। তখনই আদিবা আদনানের হাত জড়িয়ে ধরে বলল।

— আরেকটু ঘুমাতে দাও প্লিজ।

আদনান কি করবে বুঝতে পারছেনা। আদনান হাত সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু কিছুতেই আদিবা আদনানের হাত ছাড়ছেনা।

— উঠুন আপনার বাবা এসেছে। এই-যে।

এবার আদিবা নিজের চোখ খুলে। আর আদিবা যখন বুঝতে পারে সে আদনানের হাত জড়িয়ে ধরে আছে তখনই সাথে সাথে আদনানের হাত ছেড়ে দিয়ে ঘুম থেকে উঠে কোনো কথা না বলে ফ্রেশ হতে চলে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই আদিবা ফ্রেশ হয়ে আসে। কিন্তু লজ্জায় আদিবা আদনানের দিকে তাকাতে পারছেনা।

— আপনার বাবা এসেছে আপনার সাথে দেখা করার জন্য।

আদনানের মুখে কথাটা শুনে আদিবা মোটেও খুশি হলোনা। আদিবা খাটের উপরে বসে পড়ে। যেখানে মেয়েরা বাবা আসার কথা শুনে দৌড়ে চলে যাওয়ার কথা সেখানে আদিবা চুপচাপ হয়ে গেলো। ব্যাপারটা আদনান খেয়াল করল।

— কী ব্যাপার আপনি বসে পড়লেন যে? আপনার বাবার কাছে যান।

— আমি উনার সাথে কথা বলতে চাইনা আর।

— আজব! উনি এতো কষ্ট করে এলেন আর আপনি দেখা করবেন না এটা কোনো কথা হলো? চলুন তো।

এই কথা বলে আদনান যখনই আদিবার হাত ধরলো তখনই আদিবা আদনানের গালে ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। আদনান পুরো স্তব্ধ হয়ে গেলো।

— আপনাকে আমার হাত ধরার অধিকার কে দিয়েছে? নেক্সট টাইম আমাকে স্পর্শ করার চেষ্টা ও করবেন না।

আদনান সরি বলে মাথা নিচু করে বেরিয়ে চলে আসে।

চলবে?