তুমি আমার প্রিয়তমা পর্ব-০৩

0
99

#তুমি_আমার_প্রিয়তমা
[তৃতীয় পর্ব ]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ

আদিবার থাপ্পড় খেয়ে আদনান বাহিরে চলে আসে। কিছুক্ষণ আগে কি হয়ে গেলো! আদনান কি এমন করেছে যে আদিবা এতোটা রেগে গেলো। আর সে আদনানের গায়ে হাত তুললো। আদনান নিজের রুমে গিয়ে বেগ নিয়ে ভার্সিটি যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নিচে চলে যায়। আর সে যখন বাহিরে যাবে তখনই রাবেয়া বেগম আদনানকে ডাকেন।

— কিরে এতো সকালে কোথায় যাচ্ছিস?

— ভার্সিটি।

— নাস্তা করে যা।

— ভার্সিটিতে গিয়ে নাস্তা করব।

আদনান রাবেয়া বেগমকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বেরিয়ে পড়ে। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই সে ভার্সিটি পৌছে যায়।

এদিকে আদিবার বাবা আদিবার রুমে আসে মেয়ের সাথে দেখা করার জন্য।

— আদিবা কেমন আছিস তুই? তুই কি আমার উপরে রেগে আছিস?

— ভালো আছি। আর এখানে কি জন্য এলে তুমি? আমাকে বিদায় করতে চেয়েছ সেটা তো হয়েছে আবার এখানে কেন এলে?

— মা তুই এভাবে কথা কেন বলছিস?

— তো কীভাবে বলব?

— দেখ আদিবা বাবা-মা কখনও তার সন্তানের খারাপ চায়না।

— হ্যাঁ জানি।

— আদিবা আমি সব জানি তাই তোর বিয়েটা এতো তাড়াহুড়ো করে দিতে বাধ্য হয়েছি।

— কি জানো তুমি?

— তোর আর পিয়াসের রিলেশনের কথা। আমি পিয়াসের ব্যাপারে সব খোঁজ খবর নিয়েছি। পিয়াস ছেলেটা ভালো না। আমি তোর ফোনে পিয়াসের মেসেজ দেখেছি। তারপর ওর ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়েছি। ছেলেটা ভালো না।

— তুমি পিয়াসকে আমার থেকে ভালো চেনোনা। পিয়াসকে আমি খুব ভালো ভাবেই জানি। আর পিয়াস আমাকে অনেক বেশি ভালোবাসে।

— তুই এটা ভুল জানিস।

— পিয়াস ভালো ছেলে না। আমি ওর সম্পর্কে সব খোঁজ খবর নিয়েছি। ও অনেক মেয়ের জীবন নষ্ট করছে। আমি চাইনি তোর জীবনটাও অন্য মেয়েদের মতো নষ্ট হয়ে যাক।

— অনেক হয়েছে আমি আর কিছু শুনতে চাইনা। তুমি এখন এখান থেকে চলে যাও। আর হ্যাঁ! কখনও আর আমার সাথে দেখা করার জন্য আসবেনা। আজ থেকে মনে করবে তোমাদের আর কোনো মেয়ে নেই। আর কিছুদিনের মধ্যেই আমি আদনানকে ও ডিভোর্স দিয়ে পিয়াসের কাছে চলে যাবো। এই আদনান মাঝখানে এসে আমার সব প্ল্যান নষ্ট করে দিল।

আদিবার বাবা এবার বুঝতে পারে। আদিবা আসলে প্রেগন্যান্ট নই। সে সবার সাথে অভিনয় করছে। উনি আর কিছু না বলে চলে গেলো।

অন্যদিকে আদনান মন খারাপ করে গাছের নিচে বসে আছে। তখনই রাসেল এসে আদনানের পাশে বসে।

— কিরে তুই আজ এতো তাড়াতাড়ি কি ব্যাপার?

আদনান কোনো কথাই বলল না।

— মন খারাপ নাকি? কি হইছে আমাকে বল।

— কিছু হয়নি আমাকে একটু একা থাকতে দে।

— কিছু তো একটা হয়েছে। আর মুখ দেখে তো মনে হচ্ছে নাস্তা না খেয়েই চলে আসছিস। চল আগে নাস্তা করবি তারপর বলবি কি হইছে।

রাসেল জোর করে আদনানকে নিয়ে ক্যান্টিনে চলে যায়। তারপর দু’জন খাবার খেয়ে বেরিয়ে আসে।

— এবার বল কি হইছে?

আদনান সকালের ঘটনা খুলে বলল রাসেলের কাছে। রাসেল কি বলবে বুঝতে পারছেনা। দু’জনেই নিশ্চুপ। নিরবতা ভাঙে রাসেল বলল,

— এটা নিয়ে মন খারাপ করিস না। হয়তো রেগে ছিলো তাই এমন করছে। বাদ দে এগুলো।

দু’জন ক্লাসে চলে গেলো। ক্লাস শেষ করে রাসেল আদনানের কাছে এসে বলল,

— আদনান আজ আমার একটা পার্টি আছে তুই চাইলে আমার সাথে যেতে পারিস। ওখানে গেলে মন হালকা ফ্রেশ হয়ে যাবে।

— ঠিক আছে চল তাহলে।

তখনই আদনানের ফোন বেজে উঠে আদনান ফোন হাতে নিয়ে দেখে বাসা থেকে ফোন এসেছে। আদনান ফোন রিসিভ না করে ফোন সাইলেন্ট করে রেখে দেয়। তারপর দু’জন পার্টিতে চলে যায়। আদনান অনেক বেশি ড্রিংকস করে ফেলে।

— আদনান তুই এতো ড্রিংকস করছিস কেন? আর করিস না। রাত হয়ে গিয়েছে বাসায় ফিরতে হবে।

— আমি ঠিক আছি।

এই কথা বলে আদনান আরো ড্রিংকস করতে শুরু করে। ইতিমধ্যে আদনান এতো বেশি ড্রিংকস করে ফেলছে যে তার কোনো হুশ নেই। ব্যাপারটা রাসেল বুঝতে পারে।

— আদনান এখন বাসায় যেতে হবে চল।

— ঠিক আছে চল। তুই তোর বাসায় চলে যা আমি আমার বাসায় যাচ্ছি।

— তোর যে অবস্থা তুই একা কিছুতেই যেতে পারবিনা। চল আমি তোকে বাসা অব্দি দিয়ে আসি।

— তার কোনো প্রয়োজন নেই। আমি একাই যেতে পারবো।

এই কথা বলে আদনান যখন পা বাড়াবে তখন সে ঠিক করে হাঁটতে পারছেনা। অতিরিক্ত ড্রিংকসের প্রভাবে সে পুরো মাতাল হয়ে যায়। রাসেল এবার আদনানকে ধরে গাড়িতে তুলে, আদনানকে বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে রাসেল নিজের বাড়ির দিকে চলে যায়। আর আদনান বাসার সামনে গিয়ে দরজার কলিং বেলে চাপ দিতেই তার আম্মু এসে দরজা খুলে দেয়। আদনান ভিতরে এসে দেখে তার বাবা তার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে।

আদনানের আম্মু বলল — আদনান তুই ফোন রিসিভ করিসনি কেন? তোকে আমরা দুপুর থেকে ফোন দিচ্ছি আর এখন রাত একটা বাজে।

— তো কি হইছে? আমি একটা পার্টিতে ছিলাম। আমার ঘুম পাচ্ছে আমি রুমে যাচ্ছে।

তখনই আদনানের আব্বু আদনানকে থামিয়ে দেয়।

— আদনান!

— হ্যাঁ বলো!

— তুই ড্রিংকস করে বাসায় এসেছিস? আমার বাসায় এসব এলাউ না তুই কি ভুলে গেছিস?

— আমার খুব ঘুম পাচ্ছে আমি ঘুমব। আমাকে কেউ যেনো ডিসটার্ব না করে আম্মু।

এই কথা বলতেই আদনানের গালে একটা থাপ্পড় এসে পড়ে। আদনান তাকিয়ে দেখে তার বাবা।

— আমি ভাবতেও পারছিনা তুই এতোটা খারাপ হয়ে যাবি। মদ খেয়ে বাসায় আসবি। তোকে এতো দিন ধরে আমি এই শিক্ষা দিয়েছি।

নিজের বাবার এসব কথা শুনে আদনান প্রচুর রেগে যায়। তার উপর মাতাল অবস্থায় আছে সে। এবার আদনান তার বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলল,

— আমি জীবনে তোমার কোন কথা রাখিনি বাবা? যখন যেটা বলছ সেটা করছি। কখনও আমার ইচ্ছার মূল্যায়ন তুমি করোনি। কখনো জানতে চাওনি আমি কি চাই। কখনও আমার কাধের উপরে হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করোনি বাবা তোর কোন জিনিস ভালো লাগে? তোর যেটা পছন্দ সেটা কর। সব সময় আমাকে তোমার পছন্দের কাজ করতে হয়েছে। যখন যেটা বলেছ সেটা করছি। তুমি হয়তো ভুলে গেছো আমি একটা মানুষ! আমার ও তো কিছু ইচ্ছে থাকতে পারে। আমার তো কিছু ভালোলাগা থাকতে পারে। তুমি সেটা কেন ভাব্বে? তোমার তো সেটাই দরকার তুমি যেটা চাও। তুমি বলতে পারবে লাস্ট কবে আমাদের নিয়ে কোথাও বেড়াতে গিয়েছ? বাবা আমি সব সময় তোমাকে সম্মান করি। আমি কখনো তোমার কোনো কাজে কোনো অভিযোগ করিনি। কিন্তু আমার তো কিছু চাওয়া-পাওয়া থাকতে পারে। তোমাকে এসব বলে লাভ নাই। আমি যাচ্ছি গুড নাইট।

আদনান চোখের পানি মুছে নিজের রুমের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। এদিকে আদনানের বাবা ছেলের এসব কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে।

আদনানের আম্মু এসে বলল — রুমে চলুন অনেক রাত হয়েছে।

— তুমি যাও আমি আসছি।

রাবেয়া বেগম নিজের রুমে চলে গেলো। আর জয়নাল সাহেব চেয়ারের উপর বসে আদনানের বলা কথা গুলো ভাবতে থাকে।

ইতিমধ্যে আদনান নিজের রুমে ফিরে আসে। আদনান রুমের দরজার মধ্যে ধাক্কা দিলে সে বুঝতে পারে দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করা। তাই আদনান দরজার মধ্যে টোকা দিতে থাকে। দরজার শব্দ শুনে আদিবার ঘুম ভেঙে যায়। সে এসে দরজা খুলে দেখে আদনান মাতাল অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে।

— দরজার সামনে থেকে সরেন আমি ভিতরে যাবো।

— এসব কি?

— দেখতে পাচ্ছেন না? ঘুম পাচ্ছে আমার খুব।

এই কথা বলে আদনান নিজের রুমে প্রবেশ করে। আর সে সোফায় উপরে এসে বসে।

— আপনি এতো রাতে ড্রিংকস করে এসেছেন?

— দেখতেই তো পাচ্ছেন জিজ্ঞেস করার কি আছে? নিজের যায়গায় গিয়ে শুয়ে পড়ুন আমাকে ডিস্টার্ব করবেন না।

— এই রুমে কোনো মাতালের যায়গা নেই। রুম থেকে বের হোন।

কথাটা শুনে আদনান দাঁড়িয়ে আদিবার সামনে চলে যায়।

— এই রুম কি তোর বাপের কেনা?

আদনানের মুখে তুই শব্দটা শুনে আদিবা হতবাক হয়ে যায়।

— এটা আমার বাড়ি, আমার রুম, আমি এখানে যা ইচ্ছে করতে পারি। আমাকে বাধা দেওয়ার তুই কে? নেক্সট টাইম আমার কোনো কিছু নিয়ে কথা বলতে আসলে এর পরিনতি ভালো হবে না।

এই কথা বলে আদনান সোফায় ঘুমিয়ে পড়ে। আদনানের এসব কথা শুনে আদিবা পুরো স্তব্ধ হয়ে যায়। আদিবা এবার নিজের বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে। আদিবা বুঝতে পারে আদনান আদিবার জন্য ড্রিংকস করছে। সকালের এমন ব্যবহারে হয়তো আদনান অনেক বেশি কষ্ট পেয়েছে।

এসব ভাবতে ভাবতে আদিবা ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে আদিবা ঘুম থেকে উঠে দেখে আদনান এখনও ঘুমিয়ে আছে। তাই আদিবা ওয়াশরুমের ভিতরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসে। আদিবা বাহিরে এসে দেখে আদনান এখনও ঘুমিয়ে আছে। আদিবা আদনানকে না ডেকে বাহিরে চলে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই আদনানের ঘুম ভেঙে যায়। আদনানের মাথা প্রচন্ড ব্যাথা করছে। গতকাল সে কি করছে কিছুই মনে করতে পারছেনা। তাকে এখানেই বা কে নিয়ে আসছে সেটাও মনে করতে পারছেনা। আদনান সব চিন্তা বাদ দিয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়।

ফ্রেশ হয়ে আদনান নাস্তা করতে গিয়ে দেখে সবাই বসে আছে। আদনান গুড মর্নিং বলে বসে পড়ে। সবাই আদনানের দিকে তাকিয়ে আছে।

— কি হইছে ভূত দেখার মতো এভাবে তাকিয়ে আছো কেন তোমরা আমার দিকে?

কেউ কোনো কথা বলল না। নাস্তা শেষ করে যে যার রুমে চলে গেলো। আদনান নিজের রুমে গিয়ে ভাবতে থাকে রাতে কি সে সবার সাথে খারাপ ব্যবহার করছে? সবাই তার দিকে কেন এভাবে তাকিয়ে ছিলো?

আদনান ভার্সিটি যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে যখনই সে দরজা খুলল তখন সে দরজার সামনে তাকিয়ে পুরো বাকরুদ্ধ হয়ে যায়।

চলবে?