তুমি আমার প্রিয়তমা পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব

0
132

#তুমি_আমার_প্রিয়তমা
[ষষ্ঠ ও শেষ পর্ব ]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ

হঠাৎ করে আদিবা কোথায় হারিয়ে গেলো? আদনান হাতে ডিভোর্স প্যাপার নিয়ে পুরো বাড়িতে আফিবাকে খুঁজে কোথাও না পেয়ে আদিবার নাম্বারে কল দেয়। কিন্তু ফোন অফ। আদনান নিজের রুমে বসে ভাবতে থাকে এই মেয়ে কোথায় চলে গেলো হঠাৎ করে? তাহলে কি পিয়াসের কাছে চলে গেলো? আমাকে বলে গেলে কি এমন হতো?

আদনান এসব ভাবছে বসে বসে। হঠাৎ করে কলিং বেল বেজে উঠলো। আদনান রুমে বসে সেই শব্দ শুনতে পায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই আদিবা রুমে আসে। আদনান আদিবাকে দেখে আদিবার কাছে চলে গেলো।

— আপনি কোথায় চলে গেছিলেন? আপনার ফোন ও অফ। আপনাকে আমি কখন থেকেই খুজে যাচ্ছি।

আদিবা কোনো কথা না বলে আদনানকে জড়িয়ে ধরে অঝোর ধারা কান্না করতে থাকে।

— আরে কি হইছে আপনার কান্না করছেন কেন? আমাকে বলুন সব। আর নিজেকে শান্ত করুন প্লিজ।

আদিবা এবার নিজেকে কিছুটা শান্ত করলো। আদনান আদিবাকে খাটের উপরে বসিয়ে দিয়ে বলল।

— কি হইছে আমাকে সব বলুন। কোনো সমস্যা হয়েছে কি?

— অনেক বড় একটা সমস্যা হয়ে গিয়েছে। পিয়াস আমার সাথে বেঈমানী করছে।

— মানে? কি বলছেন এসব?

— ও আমাকে আজেবাজে কথা বলছে। তোমাকে আর আমাকে নিয়ে অনেক খারাপ মন্তব্য করছে।

— আরে সে আপনাকে ভুল বুঝেছে। আমরা দুজন একি রুমে থাকি। খারাপ চিন্তা ওনার মনে আসতেই পারে। চলুন আমি যাবো আপনার সাথে।

— সবাই আপনার মতো হয়না আদনান। সবার মন এক রকম হয়না। এখানে গিয়ে কোনো লাভ নেই আর।

— প্লিজ আপনি আমাকে সব খোলাসা করুন।

— তাহলে শুনুন,, গতকাল রাতে আপনি ঘুমিয়ে যাওয়ার পরে পিয়াস আমাকে ফোন দিয়ে বলে ওর বাসায় যাওয়ার জন্য। আমি ভাবলাম আপনাকে কথাটা সকালে বলব। কিন্তু ঘুম থেকে উঠে দেখি আপনি নেই। তাই আপনাকে না বলেই আমি পিয়াসের বাসায় চলে যাই। পিয়াসের বাসায় গিয়ে পিয়াসের সাথে দেখা করি। পিয়াস আমাকে আমার ফোন অফ করে দিতে বলে। আমিও তার কথায় রাজি হয়ে ফোন অফ করে দিলাম। একটু পরে পিয়াস আমাকে তার রুমে নিয়ে যায়। আর আমার সাথে খারাপ আচরণ করতে শুরু করে।

— পিয়াস তুমি এসব কি শুরু করলে?

— একটু আদর করতে দাও প্লিজ। কতো দিন পরে আজ তোমাকে আমি কাছে পেলাম। চলো দু’জন একটু আনন্দ করি।

— দেখো পিয়াস আমি বিয়ের আগে এসব করতে চাইনা। আর তোমার মনে এসব বাজে চিন্তা আসে কীভাবে?

— বাজে চিন্তা মানে কি? হাহাহা, আর তুই কি বললি বিয়ে? আমি তোকে বিয়ে করব?

— পিয়াস তুমি আমার সাথে এভাবে কথা কেন বলছ কি হইছে তোমার?

— তুই আসলেই খুব ভালো অভিনয় করতে পারিস। বাসায় জামাই রেখে আমার সাথে প্রেম! কেন রে তোর কি ওকে দিয়ে হয়না আর কতো জন লাগবে তোর?

— মুখ সামলে কথা বলো পিয়াস। এসব কি বলছ তুমি? তুমি না আমাকে ভালোবাস?

— তোকে আমি ভালোবাসি? হাহাহা। আমি তোকে না আমি তোর দেহ টাকে ভালোবাসি। আর এই দেহ ভোগ করার জন্য এতো নাটক করছি। আরে তোর মতো কত মেয়ে আমার পিছনে পড়ে থাকে।

কথাটা শুনেই আদিবা পিয়াসের গালে ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। পিয়াস এতে অনেক বেশি রেগে যায়। আর সে আদিবার দিকে এগিয়ে যায়।

— আমার গায়ে হাত তোলা! তুই দেখ আমি এখন তোর কি অবস্থা করি।

আদিবা দৌড় দিতে চাইলে পিয়াস আদিবাকে ধরে খাটের উপরে শুইয়ে দেয়। আদিবা অনেক কষ্ট করে পিয়াসের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বিছানা থেকে উঠে যখন আবার বের হতে যাবে তখনই পিয়াস আবার আদিবাকে ধরে পেলে। এবার পিয়াস আদিবাকে দেওয়ালের সাথে ধরে। পিয়াস আদিবার ঠোঁটে কিস করতে যাবে এমন সময় আদিবা একটা ফুলের টপ নিয়ে পিয়াসের মাথায় বাড়ি মেরে কোনো রকমে চলে আসে।

কথা গুলো বলছে আর আদিবা কান্না করছে। আদনান চুপচাপ হয়ে আছে। আদনান ভাবছে ডিভোর্স প্যাপার টা কি এখন দেওয়া ঠিক হবে? আদিবার মনের অবস্থা তো ভালো না।

— আচ্ছা এখন গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসেন। আমি আপনার জন্য কিছু খাবার নিয়ে আসি।

তারপর আদনান বাহিরে চলে গেলো। আদিবা ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসে। আদনান কিছুক্ষণ পরে খাবার নিয়ে আসে। আদিবা খাবার খেতে থাকে। খাবার খাওয়ার মাঝে আদিবা আবার কান্না করতে শুরু করে।

— কি হলো আবার কান্না করছেন কেন? চিন্তা করবেন না সব ঠিক হয়ে যাবে।

— জানেন আমি এই পিয়াসের জন্য আমার বাবার সাথে কতো খারাপ আচরণ করছি। বাবা আমাকে সব সময় ঠিক কথাই বলতেন।

— মা-বাবা কখনও সন্তানের খারাপ চায়না। খাবার গুলো খান সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি একটু আসছি।

এই কথা বলে আদনান বেরিয়ে আসে। আর দেরি না করে আদিবার বাবাকে ফোন দিয়ে এখানে আসতে বলে। আদনান চাইছেনা মেয়েটা আর কষ্ট করুক। কিছুক্ষণের মধ্যেই আদিবার বাবা চলে আসে। আর উনি সোজা আদিবার রুমে চলে আসে। আদিবা তার বাবাকে দেখে অনেক বেশি খুশি হয়। সে তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে শুরু করে।

— কিরে মা কান্না করছিস কেন?

— সরি বাবা আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও। আমি তোমার সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করছি।

— বোকা মেয়ে আমি রাগ করিনি। আমি জানি আমার মেয়েটা একদিন সঠিক জিনিস টা বুঝতে পারবে।

বাবা-মেয়ের মধ্যে অনেক্ষন কথা হয়। এভাবে কিছুদিন কেটে যায়। আদিবা ও আগের থেকে অনেক পরিবর্তন হয়ে যায়। আদনানের এমন ব্যবহারে আদিবা আদনানের প্রেমে পড়ে যায়। একদিন রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ করে আদনান যখন সোফায় যায় তখন আদিবা আদনানকে ডাক দেয়।

— আদনান আপনার সাথে কিছু কথা বলার ছিলো।

— আমি জানি আপনি কি বলবেন। চিন্তা করবেন না আমি সব রেডি করে রেখেছি। আপনার মন খারাপ ছিলো তাই এতোদিন বলিনি।

আদনানের কথা শুনে অবাক হলো।

— কি জানেন আপনি?

— আপনি ডিভোর্স চাইছেন। আর আমি ডিভোর্স প্যাপার সেদিনই নিয়ে আসছি। দাড়ান আপনাকে আমি ডিভোর্স প্যাপার দিচ্ছি।

এই কথা বলে আদনান উঠে আলমারির কাছে চলে গেলো। আদিবা হা হয়ে তাকিয়ে আছে। আদিবা কি বলতে চাইল আর আদনান কি বলছে? আদনান এবার আদিবার দিকে ডিভোর্স প্যাপার এগিয়ে দিয়ে বলল।

— এইযে আপনার ডিভোর্স প্যাপার। এখানে সিগনেচার করে দিয়েন। তারপর আপনি মুক্ত।

আদিবা আদনানের হাত থেকে ডিভোর্স প্যাপারের দিকে একবার তাকায় আরেকবার আদনানের দিকে তাকায়। আদিবা এবার ডিভোর্স প্যাপার একটা টান মেরে ছিড়ে ফেলে।

— এটা কি করলেন আপনি?

— দেখতেই পাইছেন।

— কিন্তু!

— একদম চুপ কীসের কিন্তু হ্যাঁ? তুই আমার স্বামী আমি তোকে ছাড়া কোথাও যাবো না।

— স্বামীকে কেউ তুই করে বলে?

— বলবনা সুন্দর করে আমাকে প্রপোজ কর।

আদনান আদিবার কথা শুনে অনেক বেশি খুশি হয়ে যায়। আদনান এবার আদিবার সামনে হাটু গেড়ে বসে বলল,

— আপনাকে যেদিন,

— এই আপনি কি? তুমি করে বল।

— তোমাকে যেদিন প্রথম দেখেছি আমি সেদিনই তোমার প্রেমে পড়েছি। কিন্তু বলার সাহস হয়নি। আজ আমি বলতে আমি তোমাকে ভালো বাসি। তুমি দাড়ি আমি কমা হবে কি তুমি আমার প্রিয়তমা?

— হুম। আমি হতে চাই তোমার প্রিয়তমা।

চলুন অনেক রাত হইছে এবার ঘুমিয়ে পড়ি।

আদনান সোফার দিকে এগিয়ে যাবে তখনই আদিবা আদনানের হাত ধরে টেনে খাটের উপরে শুইয়ে দেয়।

— কোথায় যাও বাবু?

— ঘুমাব না নাকি?

— আজ থেকে আমার সাথে ঘুমাবে। আর এখন আমাকে আদর করবে।

— ইশ আমার লজ্জা করছে।

— আজ লজ্জা বের করব বাবু।

এই কথা বলে আদিবা আদনানের উপরে উঠে বসে। কিছুক্ষণের মধ্যেই দু’জনের ঠোঁট এক হয়ে যায়। তারপর আর কি বাকিটা ইতিহাস। কারণ পরে কি হবে আমিও জানিনা।

তারপর থেকে শুরু হয় দু’জনে নতুন সংসার।

সমাপ্ত।