#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#পর্ব_১৬
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
উনি খপ করে আমার শাড়ির আঁচল ধরে ফেলেন।
যত ইচ্ছা চিৎকার করো। তোমার চিৎকার কেউ শুনবে না। সবাই লাঞ্চ করে যে যার রুমে রেস্ট নিচ্ছে। আর এ বাড়ির প্রত্যেকটা রুম সাউন্ড প্রুফ তুমি তো জানোই। তাই যত ইচ্ছা চিল্লাও কোনো লাভ নেই।
আমি আমার শাড়ির আঁচল ধরে টানছি। উনি আমার শাড়ির আঁচল হাতে পেচিয়ে পেচিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসছেন। উনি আমার দিকে এগিয়ে আসতেই আমি উনার গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেই। আমার হাতে থাপ্পড় খেয়ে যেনো উনি আরো বেশি হিংস্র হয়ে গেলেন।
তোর এতো বড় সাহস তুই আমাকে থাপ্পড় মারলি। এই অমিতের দিকে চোখ তুলে তাকানোর সাহস কারোর নেই। আর তুই আমার গায়ে দুই দুইবার হাত তুললি। এর শাস্তি তো তোকে পেতেই হবে। আজকে তোর তেজ আর রুপের অহংকার আমি চিরতরে গুছিয়ে দিবো। আজকে তোর এমন অবস্থা করবে যে তোর দিকে চোখ তুলে তাকাতেও সবার আত্না কেঁপে ওঠবে। তুই বেঁচে থাকলি নাকি মরে গেলি তাতে কারো কিছু আসে যায়। তুই মরে গেলেও কেউ এটা নিয়ে বেশি ভাবতে যাবে না। যেখানে নিজের মা ভাববে না সেখানে অন্য কেউ কেনো ভাবতে যাবে।
কথাটা বলে উনি আমার আরেকটু কাছে চলে এলেন।
দেখুন আমার কাছ থেকে দুরে যান। একদম আমার কাছে আসার চেষ্টা করবেন নাহ। আমার কাছে আসার চেষ্টা করলে আমি আপনাকে জানে মেরে দিবো।
আমি হাতের কাছে একটা ফুলদানি পেলাম। ফুলদানি দিয়ে উনাকে আঘাত করতে যাব তার আগেই উনি আমার হাত মোচড়ে ফুলদানিটা নিচে ফেলে দেন। আজকে মনে মনে খুব করে চাইছি এই চিঠি প্রেরক এসে যেনো সুপারম্যানের মতো আমাকে এই সয়তানের কাছ থেকে বাঁচিয়ে নেয়।
উনি আমাকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দেন। আমি ওঠার চেষ্টা করতেই অমিত ভাইয়া আমার হাত দুটো বিছানার সাথে চেপে ধরেন। আমার চোখে দু ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। আজকের পর থেকে এই সমাজের সবার কাছে ঘৃণার পাত্রী হয়ে আমাকে বেঁচে থাকতে হবে। আদোও কী বেঁচে থাকবো? না আমি আর ভাবতে পারছি না।
আমি এভাবে হার মানতে পারি না। নিজেকে এই সয়তানের হাত থেকে বাঁচাতে হবে আমাকে। আমি উনার হাতে একটা কামড় দেই। অমিত ভাইয়া আমার হাত ছেড়ে দিতেই আমি দুই হাত দিয়ে ধাক্কা দিয়ে উনাকে নিচে ফেলে দেই। তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে নেমে দরজা খোলার জন্য লক ঘুরাই তখনি অমিত ভাইয়া আমার হাত ধরে টেনে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে।
এতো জুড়ে চেপে ধরেছে যে আমি নড়তেও পারছি না। অমিত ভাইয়া হাত দিয়ে ঘষে আমার ঠোঁটের লিপস্টিক এলোমেলো করে দেয়। অমিত ভাইয়া আমার গলায় কামড় বসিয়ে দেয়। আমার ঠোঁটের সাথে যখনি ঠোঁট মিলাতে যাবেন তার আগেই কেউ উনাকে স্বজুড়ে লাথি মারে। তাকিয়ে দেখি আভিয়ান ভাইয়া। আভিয়ান ভাইয়াকে দেখে আমার দেহে প্রাণ ফিরে আসে।
আভিয়ান ভাইয়া এসে অমিত ভাইয়াকে এলোপাতাড়ি মারতে শুরু করেন। অমিত ভাইয়াকে মারতে মারতে প্রায় আধমরা করে ফেলছে। আমি কিছু বলতে যাব তার আগেই আভিয়ান ভাইয়া অমিত ভাইয়ার কলার ধরে টানতে টানতে উনাকে নিয়ে আমার রুম থেকে বের হয়ে যান।
আমি দেয়াল ঘেষে বসে পড়ি। আমার বুক ফেটে কান্না আসছে। দু চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে অজস্র অশ্রু।
বাবা দেখো তোমার মেয়ে কাঁদছে। তুমি তো এটাই চেয়েছিলে তাই না? বাবা তুমি কেনো আমাকে একলা ফেলে চলে গেলে? কেনো আমার জীবনটা অন্ধকারে ভরিয়ে দিয়ে গেলে? তুমি থাকলে হয়তো আমার জীবনটাও আর পাঁচটা মেয়ের মতো হতো। আমার সবকিছু থেকে কিছুই নেই। দেখো বাবা সবকিছু থেকেও তোমার মেয়ে এতিমের মতো বড় হচ্ছে। এই শহরে আমার আপন বলতে কেউ নেই। বাবা তোমার মেয়ে এই পৃথিবীতে বড্ড একা।
কণার এমন বুক ফাটা আর্তনাদে আরেকজন কাঁদছে তার সাথে। তার চোখ থেকেও অজস্র অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।
৩৭
আভিয়ান অমিতের কলার ধরে টানতে টানতে এনে ড্রয়িংরুমে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। অমিত গিয়ে পড়ে তিশান আহম্মেদের ( আভিয়ানের আব্বু )পায়ের কাছে। তিশান আহম্মেদ আর হেলাল রহমান ( অমিতের বাবা ) ড্রয়িংরুমে একসাথে বসে কথা বলছিলেন। অমিতকে এভাবে নিজের পায়ের কাছে পড়তে দেখে দাঁড়িয়ে যায় তিশান আহম্মেদ।
অমিতের এই অবস্থা কী করে হলো আভিয়ান? অমিত আমাদের গেস্ট। তুমি তার কলার ধরে টেনে এনে এভাবে ফেলতে পারো না। ( চিৎকার করে )
তিশান আহম্মেদের চিৎকার শুনে কিচেন থেকে দৌড়ে আসে আফিফা বেগম, মহুয়া জাহান আর রেশমি রহমান ( অমিতের মা )। অমিতের এমন অবস্থা দেখে তিন জনই থমকে যায়। রুম থেকে আসে ছোঁয়া। নিজের ভাইয়ের এমন করুন অবস্থা দেখে দৌড়ে আসে অমিতের কাছে ছোঁয়া। অমিতের মাথাটা নিজের কোলে তুলে নেয়।
ঐ কুত্তার বাচ্চা যে এখনো জীবিত আছে এটা ওর বাপের ভাগ্য। ইচ্ছে করছে জানে মেরে দেই।
কথাটা বলে আভিয়ান আরেকটা লাথি মারে অমিতকে।
আভিয়ান এসব কী হচ্ছে? তুমি আভিয়ানকে মারছো কেনো?
বাবা কি হয়নি বলো? এই বাড়িতে এতোগুলো মানুষ থাকা সত্ত্বেও এই কুত্তার বাচ্চা কণার রুমে কী করে ঢুকে?
মানে।
সবাই লাঞ্চ করে যে যার রুমে চলে যায় রেস্ট নিতে। আমি ড্রয়িংরুমে বসে কিছুক্ষণ টিভি দেখি। কণার রুমে পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় মনে হলো কণা রুমে আটকে গেছে। রুমের দরজা ধরে টানছে কিন্তু খুলছে না এমন মনে হলো। আমি কণাকে হেল্প করার জন্য দরজা ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে যায়। আমি রুমের ভিতর ঢুকে এমন একটা দৃশ্য দেখবো তা কল্পনাও ভাবতে পারিনি। আমি রুমে ঢুকে দেখি এই অমিতের বাচ্চা জোর করে কণার সাথে অসভ্যতামু করার চেষ্টা করছে।
মহুয়া জাহান এগিয়ে এসে বলেন, আমি বিশ্বাস করি না অমিত কণার সাথে এমন করেছে।
কণা,, কণা,, কণা তাড়াতাড়ি নিচে নেমে আয়।
আভিয়ান চিৎকার করে কণাকে ডাকে। কিছুক্ষণ পরে অহি কণাকে নিয়ে ড্রয়িংরুমে আসে। কণার এমন বিধ্বস্ত অবস্থা দেখে হঠাৎই তিশান আহম্মেদের বুকে মোচড় দিয়ে ওঠে। সেকি তার ভাইয়ের অংশকে ঠিকভাবে দেখে রাখতে পারেনি। পরক্ষণেই তার মনে হলো এই মেয়ের জন্যই তার ভাই আজকে তার সাথে নেই। তিশান আহম্মেদ মুখ ফিরিয়ে নেয় কণার থেকে।
ছোট মা তুমি কী এখনো বলবে তোমার ভাইয়ের ছেলে নির্দোষ?
হ্যাঁ বলবো। আমি জানি আমার অমিত সোনা এমন কিছু করতেই পারে না। এই মেয়ে এমন সং সেজে হয়তো অমিতকে সিডিউস করার চেষ্টা করার চেষ্টা করছে। যতই হোক পুরুষ মানুষ তো নারীতে তো আসক্ত হবে।
ছোট মা তুমি কী সত্যিই কণার মা? নিজের মেয়ে সম্পর্কে এমন কথা বলতে তোমার একটুও লজ্জা করছে না।
না লজ্জা করছে না। এ আমার মেয়ে হতেই পারে না। ওর মতো নির্লজ্জ মেয়ের আমার দরকার নেই।
আম্মু।
চুপ একদম চুপ। তুই আমাকে আম্মু বলে ডাকবি না । শুধু মাত্র তোর জন্য আমি আমার স্বামী সংসার সব হারিয়েছি।
ব্যাস আম্মু অনেক বলে ফেলেছো। এতো বছর ধরে তোমাদের এক অভিযোগ শুনতে শুনতে আমি বিরক্ত হয়ে গেছি। আমার তো মনে হয় আব্বু আমার জন্য নয় তোমার জন্য এই বাসা থেকে চলে গেছে। তোমার মতো একটা মানুষের সাথে আর যাই হোক সংসার করা যায় না। আব্বু এই বাসা থেকে চলে গিয়ে ভালোই করেছে। নাহলে তোমার মতো একটা মহিলার সাথে সংসার করে আব্বুর জীবন নরক হয়ে যেতো।
চলবে…..