তুমি আমার প্রেয়সী পর্ব-১৮

0
1835

#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#পর্ব_১৮
#তাসনিম_জাহান_রিয়া

লোকটি চেয়ার ছেড়ে এসে অমিতের গলা চেপে ধরলো। লাইট জ্বলে ওঠায় রুম আলোকিত হয়ে গেলো। অমিত চোখ বন্ধ করে ফেললো। চোখ খুলে নিজের মুখের সামনে একটা অপরিচিত মুখ দেখতে পেলো। লোকটির চোখ দেখে অমিত ভয় পেয়ে যায়। লাল টকটকে চোখ জুড়ায় রয়েছে শুধু হিংস্রতা।

লোকটির চোখ দেখে ভয়ানক ভাবে কাঁপছে অমিতের শরীর। এর আগে এমন চোখ সে কখনো দেখেনি। রাগে ছেলেটার নাক লাল হয়ে গেছে। নাক লাল হয়ে যাওয়ায় ছেলেটিকে অনেক সুন্দর লাগছে। অমিতের গলা এতো জুড়ে চেপে ধরেছে যে অমিতের ধম আটকে আসছে। কথা বলতে চেয়েও পারছে না।

এখন মুখ বন্ধ হয়ে গেলো কেনো? তোর শরীরের তেজ কই গেলো? তুই আমার কলিজায় হাত দেওয়ার চেষ্টা করেছিস। আমার ধূলিকণাকে বাজে ভাবে স্পর্শ করার চেষ্টা করেছিস। তার জন্য তোকে শাস্তি পেতে হবে। ভয়ঙ্কর শাস্তি পেতে হবে।

লোকটি অমিতের গলা ছেড়ে দেয়। অমিত কাশতে শুরু করে দেয়। লোকটি আবার চেয়ারে পায়ের ওপর পা তুলে বসে।

তোকে আমি এতো সহজে মারবো না। তোকে আমি তিলে তিলে মারবো। তোর জন্য আমার ধূলিকণার চোখ থেকে যত ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। তার সব সুধ আমি তুলবো।

অমিত কাঁপা কাঁপা গলায় বলে, কে আপনি? আমি আপনার কী ক্ষতি করেছি যে আপনি আমাকে তুলে নিয়ে আসছেন?

আমাকে তুই চিনিস না?

অমিত এবার লোকটিকে ভালো করে খেয়াল করে। লোকটিকে চিনতে পেরে অমিত চমকে ওঠে। চমকে গিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই লোকটি অমিতের ঠোঁটে নাইফ চেপে ধরে বলে,

হুসসসসস। আমার নাম উচ্চারণ করার চেষ্টাও করবি না। আমি যার তার মুখে নিজের নাম শুনতে পছন্দ করি না। তুই আমার অনেক বড় ক্ষতি করার চেষ্টা করেছিলি। আমার কলিজা আমার ধূলিকণার দিকে লালসার দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলি। তাকে বাজে ভাবে স্পর্শ করার চেষ্টা করেছিলি।

এতো জুড়ে নাইফ চেপে ধরেছে যে অমিতের ঠোঁট কেটে রক্ত বের হচ্ছে। অমিতের কানে বাজছে ‘ আমার ধূলিকণা ‘ কথাটা। ধূলিকণা কী তাহলে কণা? নিজের পরিণতির কথা ভেবে অমিতের আত্না কেঁপে ওঠে।

তা বল তুই কীভাবে মরতে চাস?

স্যার প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দিন। এমন ভুল আর হবে না। কণার দিকে কোনো দিন চোখ তুলেও তাকাবো না। কণাকে এখন থেকে নিজের ছোট বোন মনে করবো।

আমার ডিকশেনারিতে ক্ষমা বলতে কোনো শব্দ নাই। কেউ ভুল করলে আমি ক্ষমা নয় শাস্তি দেই। এমন ভুল করার সুযোগ দিলে তো তুই ভুল করবি। তুই কণার দিকে চোখ তুলে তাকাবি কী কোনোদিন আর বাইরের আলোই
দেখবি না? তুই বলেছিলি না কণার এমন অবস্থা করবি যে কণার দিকে চোখ তুলে তাকালেও সবার আত্না কেঁপে ওঠবে। আমি তোর এমন অবস্থা করবো যে ঘৃণায় কুকুরও তোর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবি।

স্যার প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দিন।

তোকে ক্ষমা করে দিলে ১১ টা মেয়ের অভিশাপ লাগবে আমার জীবনে।

অমিত ভয়ে ভয়ে বলে, মানে?

লোকটি আবার এসে অমিতের গলা চেপে ধরে বলে, মনে পড়ছে না বুঝি? এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেলি। ঐ ১১ জন মেয়ের কথা। যাদের মাঝে ৬ জনকে রেপ করেছিলি আর ৫ জনকে রেপ করার চেষ্টা করেছিলি। ৬ জন হয়তো সুইসাইড করে জীবন নামক যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পেয়ে গেছে। আর ৫ জন কীভাবে বেঁচে আছে জানিস? নরক যন্ত্রনা নিয়ে বেঁচে আছে। বেঁচে আছে বললে ভুল হবে ওরা তো জীবিত হয়েও লাশের মতো বেঁচে আছে। আমি শুধু তোকে আমার ধূলিকনার প্রতি যে অন্যায় করেছিস তার শাস্তি দিবো। আর বাকি শাস্তি দিবে ঐ ৫ জন মেয়ে। তোর জন্য যাদের জীবন নরক হয়ে গেছে। ( চিৎকার করে )

৪০

ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আসতেই আমার ফোনটা বেঁজে ওঠলো। ফোন হাতে নিয়ে দেখি সাফাত ভাইয়া কল দিয়েছে। কলটা রিসিভ করি।

আসসালামু আলাইকুম ।

ওয়ালাইকুম সালাম ।

কেমন আছেন জিজু?

ইশ বউ এভাবে বলো না বুকে ব্যথা করে। নিজের বউয়ের মুখে জিজু শুনতে ভালো লাগে না।

আমি সাফাত ভাইয়ার কথা শুনে খিলখিলিয়ে হেসে দিলাম।

এভাবে হেসো না তো বউ বুকে বড্ড ব্যথা করে।

হইছে ভাইয়া আর ফ্লাট করতে হবে না।

আমি কী অন্য কারোর সাথে ফ্লাট করছি? নিজের বউয়ের সাথেই তো ফ্লাট করছি।

হয়ছে ভাইয়া আর ঢং করতে হবে না। এখানে অহি নাই যে তুমি অহিকে জেলাস ফিল করানোর জন্য আমার সাথে এভাবে কথা বলবে। শালিকার সাথে ফ্লাট করা ঘোর অন্যায় বউয়ের সাথে গিয়ে ফ্লাট করো।

বউয়ের সাথে কীভাবে ফ্লাট করবো? আমার বউতো আমারে বুজে না। আহা কী কষ্ট?

আমি আবার হেসে দিলাম।

একদম হাসবি না। আমার কষ্ট দেখে তোর হাসি পাচ্ছে। আমি দুঃখের সাগরে ভাইসা গেলাম। তোর গাধা বোন তো এখনো বুঝতেই পারেনি আমি তারে ভালোবাসি।

তুমি কখনো আমার বোনকে বলেছো যে তুমি তাকে ভালোবাসো। তার সামনে সব সময় বলো কণা তোরে অনেক সুন্দর লাগছে। একেবারে কিউট লাগছে। অহির সাথে ঝগড়া করার সময় বলো তোমার থেকে বেশি আমি কণাকে ভালোবাসি।

আমি তো ওরে জেলাস ফিল করানোর জন্য বলি। কিন্তু ও তোকে ভালোবাসি কথাটা বললেই চুপ করে যায়। ঐ গাধী তো বুঝে না আমি তোরে প্রেমিকা হিসেবে না বোন হিসাবে ভালোবাসি। আমি ওকে কেমনে বুঝায় যে আমি ওরে ভালোবাসি।

প্রপোজ করে দেও।

যদি থাপ্পড় মারে তখন।

আরে মারবে না।

তুই এতো শিউর কী করে?

আমি জানি অহি তোমাকে ভালোবাসে।

প্রপোজ কী করে করবো? আমার মাথায় কোনো আইডিয়া আসছে না।

আমার কাছে একটা প্লেন আছে।

কী?

শুনো তাহলে ( ………………………………)

আমি তোর কথা মতো সব ব্যবস্থা করে রাখবো।

ওকে বাই।

বাই।

৪১

আমি ব্রেকফাস্ট করছি। এখনো ব্রেকফাস্ট করতে কেউ আসে নাই। অহি এখনো ঘুম থেকে ওঠেনি। আজকে আমি একটু আগে ভার্সিটি যাবো কারণ আমাদের অনেক প্লেন করা বাকি। বড় আব্বু এসে ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে। পত্রিকা পড়তে শুরু করে। আম্মু এসে বড় আব্বুর সামনে এসে দাঁড়ায়। কিছু বলার জন্য উশখুশ করছে। কিন্তু বলতে পারছে না। হয়তো কোথায় আটকাচ্ছে। বড় আব্বু বিরক্তি নিয়ে পত্রিকা থেকে মুখ তুলে বলে,

কিছু বলবা? বললে বলো না বললে যাও। একদম ডিস্টার্ভ করবা না। আমি পত্রিকা পড়ার সময় কোনো প্রকার ডিস্টার্ভনেস পছন্দ করি না।

আম্মু বলতে চেয়েও বলতে পারছে না। আমি আমার খাওয়ায় মনোযোগ দিলাম। আমি জানি এখন কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবে পরে ফট করে কথাটা বলে দিবে। কিছুক্ষণ পরে আম্মু যা বললো তা শোনার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। হাত থেকে ব্রেডটা পড়ে গেলো।

ভাইজান কালকে রাত থেকে অমিত খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অমিত পুলিশ স্টেশন থেকে পালিয়েছে। এর পর থেকে অমিতের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। ভাইয়া ভাবি কালকে রাত থেকে খুঁজছে কিন্তু পায়নি। পুলিশও খোঁজ পায়নি। আপনি যদি একটু খোঁজার চেষ্টা করতেন।

বড় আব্বু কী বলে? সেটা শোনার জন্য ঘাড় ঘুরিয়ে বড় আব্বুর দিকে তাকালাম। আমি অধির আগ্রহ নিয়ে বড় আব্বুর দিকে তাকিয়ে আছি।

আমাকে কী তোমার ম্যাজিশিয়ান মনে হয়? যেখানে কেউ খোঁজে পায়নি সেখানে আমি কী করে পাবো?

ভাইজান আপনার তো অনেক ক্ষমতা। আপনি চাইলেই খোঁজে বের করতে পারেন।

আমি একটা রেপিস্ট আর জেল পলাতক আসামীকে কেনো খোঁজতে যাবো? তুমি এই বিষয় নিয়ে আর কোনো কথা বলবে না আমাকে।

আমি ব্রেকফাস্ট শেষ করে ডাইনিং টৈবিল ছেড়ে ওঠে দাঁড়ালাম। তারপর ফোন বের করে ড্রাইভার আংকেলকে ফোন করি।

হ্যালো আংকেল।

হুম মামুনি বলো।

গাড়ি বের করুন আমি ভার্সিটি যাবো।

আচ্ছা মামুনি।

আমি ফোনটা কেটে দেই। সামনের দিকে যেতেই পিছন থেকে আম্মুর কথা শুনে থেমে যাই।

তুই ভার্সিটি যাবি যা তাহলে গাড়ি বের করতে বলছিস কেনো?

কারণ আমি গাড়ি করে ভার্সিটি যাবো।

তুই গাড়ি করে ভার্সিটি গেলে আভিয়ান বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে।

তাতে আমার কিছু আসে যায় না।

বড় আব্বু গম্ভীর কন্ঠ করে বলে, মহুয়া তোমার মেয়ে কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি করছে।

বাড়াবাড়ির কিছু দেখছি না তো বড় আব্বু। আভিয়ান ভাইয়ার যেমন এ বাড়ির সম্পত্তির ওপর অধিকার আছে তেমন আমারও আছে। ইনফ্যাক্ট আমার একটু বেশি অধিকার আছে কারণ আমি আমার বাবার একমাত্র সন্তান।

চলবে…..