#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#পর্ব_২০
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
আর কিছু না ভেবে আমি রাজি হয়ে গেলাম। যদি সত্যিই অহির মন ভালো হয়ে যায়। ভয়ে ভয়ে নদীর পাড়ের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি। রাস্তাটা জনমানব শূন্য। ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে আসছে। আচমকা আমাদের সামনে একটা গাড়ি থামলো। গাড়ি থেকে বেশ কিছু ছেলে বের হয়ে এলো। ছেলেগুলো মুখ মাস্ক লাগানো থাকায় চিনতে পারছি না এরা কারা।
অহি ভয়ে থরথর করে কাঁপছে। অহি আমার হাতটা জুড়ে চেপে ধরে।আমরা কিছু বলার আগেই আমাদের মুখে রুমাল চেপে ধরে। অহি সাথে সাথেই অঙ্গান হয়ে যায়। অহি পড়ে যেতে নিলে সাফাত ভাইয়া এসে ধরে ফেলে। আমি নোমান ভাইয়ার পেটে কুনুই দিয়ে গুতা দিলাম।
আরে ভাই তুই কী আমার শালিকারে মারার প্লেন করছস নাকি?
সাফাত ভাইয়ার কথায় নোমান ভাইয়া আমার মুখ থেকে রুমাল সরিয়ে দেয়। মুখ থেকে রুমাল সরাতেই আমি জুরে শ্বাস নেই।
নোমান ভাই আমি তোমার কোন জীবনের শত্রু ছিলাম? যেভাবে মুখে রুমাল চেপে ধরেছিলে আরেকটু হলেই তো ধম বন্ধ হয়ে মারা যেতাম।
সরি শালিকা বুঝতে পারি নাই।
আজকে কী শালিকা ডে?
কেনো? ( দুইজন একসাথে বলে)
না মানে তোমরা কখন থেকে আমাকে শালিকা ডাকছো। সে যাই হোক তুমি এখন অহিকে নিয়ে যাও। আর আমাদের ট্রিটটা কিন্তু পাওনা রইল।
কীসের ট্রিট? ( সাফাত ভাইয়া ভ্রু কুচকে বলে)
নোমান ভাইয়া সাফাত ভাইয়ার পিঠে ধুম করে কিল মেরে বলে, হারামি তোর জন্য আমরা এতকিছু করলাম। আর তুই আমাদের ট্রিট দিবি না। এই যে জুনিয়র ভাইরা ( নোমান ভাইয়া তাদের সাথের ছেলেগুলোর উদ্দেশ্যে বলে।) তোমরা কী তোমাদের ভাইকে এমনি এমনি ছেড়ে দিবে?
না না একদমি না। আমাদের ট্রিট চাই। ( সবাই একসাথে বলে ওঠে। )
তোমাদের ভাবি যদি আমার ভালোবাসা গ্রহণ করে তাহলে আগামীকাল সন্ধায় পার্টি হবে।
সাফাত ভাইয়া কথাটা বলে অহিকে কোলে তুলে নেয়। সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সাফাত ভাইয়া চলে যায়। আমিও সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসি। রাস্তা দিয়ে একা একা হেঁটে বাসায় আসছি। হঠাৎ মনে হলো কেউ আমাকে ফলো করছে। পিছনে তাকালাম কিন্তু কাউকে দেখতে পেলাম না। আবার নিজের মতো করে হাঁটতে শুরু করি।
অহিকে কিডন্যাপিংয়ের প্লেনটা আমারি ছিল। অহি এখানে আসা ফুচকা খাওয়া সবকিছু আমাদের প্লেনের অংশ ছিল।
৪৫
অহি চোখ খুলে নিজের অবস্থান বুঝার চেষ্টা করে। সে একটা বিছানার ওপর শুয়ে আছে। ভালো করে তাকিয়ে দেখে এটা একটা রুম। আশেপাশে ভালো করে চোখ বুলিয়ে বুঝতে পারে এটা কারো ফার্ম হাউজ। অহি মাথা চেপে ধরে শুয়া থেকে ওঠে বসে। মাথাটা চিন চিন ব্যথা করছে। কণার কথা মনে হতেই তড়িঘড়ি করে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ায়। পা বাড়ায় দরজার দিকে।
দরজার কাছে দাঁড়িয়ে দেখে সে যে রুমটাই আছে ঐ রুমটা ছাড়া সব জায়গা অন্ধকার। হয়তো রাত হয়ে গেছে। এই রুমটায় লাইট জ্বালানো তাই অন্ধকার নেই। অহির একটু ভয় করছে। কিন্তু এখন ভয়কে পাত্তা দিলে চলবে না তাকে কণাকে খুঁজতে হবে।
রুমের সামনের জায়গাটা হয়তো ড্রয়িংরুম। অহি এগিয়ে যায়। কিছু একটার সাথে অহির পা আটকে যায়। প্রায় সাথে সাথেই একটা স্পট লাইট এসে অহির ওপর পড়। অহি সামনে তাকিয়ে ভূত দেখার মতো চমকে যায়। কারণ তার সামনে সাফাত রিং হাতে হাঁটু গেড়ে বসে আছে।
তোমার মুখের হাসি টুকু লাগে আমার ভালো,তুমি আমার ভালবাসা বেঁচে থাকার আলো।রাজার যেমন রাজ্য আছে আমার আছ তুমি,তুমি ছাড়া আমার জীবন শূধু মরুভুমি।“আমি আমার থেকেও তোমাকেই বেশি ভালোবাসতে চাই, তুমি কি সেই অধিকারটুকু আমাকে দিবে?”
অহির মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না। সব কথা গলার মাঝে এসে দলা পাকিয়ে যাচ্ছে সবকিছু তার কাছে কল্পনার মতো মনে হচ্ছে। মুখে হাত দিয়ে কান্না থামানোর বৃথা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। চোখ দিয়ে অজশ্র অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।
এটা কষ্টের নয় সুখের কান্না। নিজের ভালোবাসাকে এভাবে নিজের করে পাবে এটা অহি আশাও করেনি। সে একদম বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে। সাফাতের দিকে নিজের হাতটা বাড়িয়ে দেয়। অহির হাত মৃদু কাঁপছে। সাফাত অহির হাতে রিংটা পড়িয়ে দেয়। তারপর অহির হাতের উল্টো পিঠে নিজের ঠোঁটের স্পর্শ দেয়। অহি নিজের হাতে সাফাতের ঠোঁটের স্পর্শ পেয়ে মৃদু কেঁপে ওঠে। সাফাত ওঠে দাঁড়াতেই অহি সাফাতের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সাফাতও দুই হাতে আগলে নেয় নিজের প্রেয়সীকে।
আপনি খুব খারাপ সাফাত ভাই।
কেনো?
আপনি আমাকে ভালোবাসেন তবু আমাকে বলেন নাই। উল্টো আমাকে কষ্ট দিয়ে গেছেন। আপনার সাথে কথা নাই সাফাত ভাইয়া।
আমি কেনো বলবো তুমি বুঝতে পারো না। যে আমি তোমাকে ভালোবাসি আর কণাকে তো আমি নিজের ছোট বোনের মতো ভালোবাসি। আমার বুঝি কষ্ট হয় না কথায় কথায় আমাকে ভাইয়া বলে ডাকো। তুমি হয়তো আভিয়ানকেও এতোবার ভাইয়া বল না যতবার আমাকে বলো। জানো তোমার মুখে ভাইয়া ডাক শুনলে আমার বুকে চিন চিন ব্যথা করে।
সাফাতের কথায় অহি খানিকটা লজ্জা পেয়ে যায়। নিজেকে সাফাতের কাছ থেকে ছাড়িয়ে একটু দূরে সরে যায়। তখনি ড্রয়িংরুমের লাইট জ্বলে ওঠে। সম্পূর্ণ ড্রয়িংরুমে চোখ বুলিয়ে অহি স্তব্ধ হয়ে যায়। ড্রয়িংরুমটা ফুল, লাভ শেইপ বেলুন আর মিনি লাইট দিয়ে সুন্দর করে সাজানো। ড্রয়িংরুমের মাঝখানে একটা ছোট টেবিল রাখা। টেবিলটাও সুন্দর করে ফুল দিয়ে ডেকোরেট করা। টেবিলের মাঝখানে একটা কেক রাখা।
কী ম্যাডাম সাজানো পছন্দ হয়নি?
অনেক অনেক পছন্দ হয়েছে। এসব কী আপনি একা করেছেন?
না। আমি, নোমান আর আমাদের ভার্সিটির জুনিয়র কিছু ছাত্র মিলে সাজিয়েছি।
এগুলো আগে থেকে প্লেন করা ছিল?
হুম।
আমাকে কিডন্যাপ করা এসব আয়োজন করা সবকিছু কণার প্লেন ছিল তাই না?
কেনো আমার প্লেন হতো পারে না?
আমি জানি এসব দুষ্টুমি বুদ্ধি কণার মাথা ছাড়া আর কারো মাথা থেকে বের হবে না। এখন আমার কাছে সবকিছু ক্লিয়ার। এসব প্লেন করার জন্যই কণা আমাকে রেখে আগে ভার্সিটি চলে এসেছিল। আর আমাকে কিডন্যাপ করার জন্যই আপনি বলেছিলেন, কণাকে নিয়ে যেনো নদীর পাড়ের রাস্তা দিয়ে আসি। আপনি কণাকে একটা সুন্দর সারপ্রাইজ দিতে চান।
হুম।
কণা কোথায়?
কণা বাসায় চলে গেছে। কণা বাসায় গিয়ে বলবে আজকে রাতে তুমি বন্যাদের বাসায় থাকবে।
৪৬
বেলকনিতে দাঁড়িয়ে মিদুর সাথে কথা বলছি। মিদুর সাথে প্রতিদিন কথা বলা যেনো আমার রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওর সাথে কথা না বললে আমার একদমই ভালো লাগে না। আমি যখন মিদুর সাথে কথা বলতে ব্যস্ত তখনি আমার হাতে থাকা ফোনটা বেজে ওঠে।
তাকিয়ে দেখি কাস্টমার কেয়ার থেকে ফোন আসছে।
এদের খায়া কোন কাজ নাই। সময় অসময় মানুষকে ফোন দিয়ে বিরক্ত করে। উফ অসহ্য।
ফোনটা কেটে দিলাম। ফোন কাটার সাথে সাথেই মেসেজ টোন বেজে ওঠলো। ঐ চিঠি প্রেরকের মেসেজ। চিঠি প্রেরকের মেসেজ দেখেই সকালের ঘটনাটা মনে পড়ে গেলো সাথে ঐ বজ্জাতের কথাটা মনে পড়ে গেলো।
আমার দ্বিতীয় কিসটা তোমার নামে করে দিলাম।
আগে আরেকটা মেয়ের সাথে লুতুপুতু করে। এখন আসছে আমার সাথে লাইন মারতে। আবার কী সুন্দর করে মেসেজ পাঠিয়েছে।
তোমার কি ভালবাসা চাই?কোন ভালবাসা? কতটা, কত গভীরতার?যা চাও সবই দিতে পারব আমি।ভালবাসার জন্য তাজমহল আমি বানাতে পারব না ঠিকই তবে আমার হৃদয়ে যে তাজমহল, তোমার জন্য তা কি দেখে কখনো শেষ করতে পারবে?
আমাকে রোমান্টিক মেসেজ পাঠানো তাই না? দাঁড়া তোকে দেখাচ্ছি মজা।
ঐ পোলা তোর লজ্জা করে না ঘরে বউ রেখে আমার সাথে লুতুপুতু করতে চাইছিস।
এখানে লজ্জার কী আছে? বউ বউয়ের জায়গায় গার্লফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ডের জায়গায়।
এই মেসেজটা দেখে কণার মাথায় ধপ করে আগুন জ্বলে। ছেলেটিকে কিছু গালি দিতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু এই মুহুর্তে কণার কোনো গালি মনে পড়ছে না। এখন কণার নিজের ওপর রাগ হচ্ছে। কেনো যে বন্যার কাছ থেকে কিছু গালি শিখে রাখলো না। মানুষ বলে, জীবনে সবকিছু শিখে রাখতে হয়। কারণ সময় মতো সবকিছু কাজে লাগে।
চলবে……..