তুমি আমার সেই প্রিয়শী পর্ব-১১

0
227

#তুমি_আমার_সেই_প্রিয়শী
লেখিকা:#শ্যামলী_রহমান
পর্ব:১১

সময় সমুদ্রের স্রোতের মতো বয়ে চলে। সেদিনের পর কেটে গিয়েছে বেশ কয়েকদিন। রিশাদ ব্যস্ত ছিলো অফিস নিয়ে কয়েকদিনের মধ্যে নতুন একটা প্রজেক্ট শেষ করে বিদেশি ক্লাইন্টের সাথে ডিল করতে হবে এজন্য ব্যস্ততা আরো বেশি ছিলো বিধায় দেখা কিংবা কথা কোনোটাই হয়নি।

রিশাদ আজকে শস্তির নিশ্বাস নেয়, টানা এক সপ্তাহ পর প্রজেক্টের কাজ আজ শেষ হলো পরশু বিদেশি ক্লাইন্টের সাথে ডিল ফাইনাল করতে মিটিং করতে হবে।
নিজের রুমে বসে ছিলো রিশাদ হাতে ছিলো ল্যাপটপ কাজ শেষ হওয়া মাত্র সাইডে রেখে দিলো।ফোনে স্কিনে টাইম দেখে সকাল সাতটা বাজে সেই ভোরবেলা ওঠেছিলো এখন ফ্রেশ হতে হবে বলে বেড থেকে ওঠতে গেলে নজর যায় বেডের পাশে থাকা টেবিলের উপর ডর্জন কয়েক চুড়ি। কালকে একটা কাজে শপিং কমপ্লেক্সে যেতে হয়েছিলো সেখান থেকে আসার সময় হঠাৎ নজর পড়ে পাশের চুরির দোকানে রঙ বেরঙের কাঁচের চুড়ি।
“কোথাও দেখেছিলাম মেয়েরা কাঁচের চুড়ি অনেক পছন্দ করে। তাছাড়া আমার প্রিয়শী কে বাহারি রঙের চুড়ি পড়লে হাত দুটো ভরে যাবে দেখতে লাগবে সুন্দর।
রিশাদের সাথে সুইটি ছিলো ওকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে,

‘দাঁড়িয়ে গেলেন কেন স্যার?

‘একটা কাজ আছে আমি পাঁচ মিনিটে আসছি বলে যায়।
সুইটু পিছি ডাকে আমিও যাবো?

” তোমাকে বলেছি না পিছু ডাকবে না আর তোমাকে দরকার হলে নিজে আসতে বলতাম। তুমি এখানেই থাকো বলে হনহন করে চলে গেল সুইটি রাগে হাতে থাকা টিসুটা ছুঁড়ে মারে যেন টিসুর উপর রাগ ঝাড়লো।

‘তোমার এতো এটিটিউট খুব তাড়াতাড়ি ভেঙে দিবো তার ব্যবস্থা করতেছি মিস্টার রিশাদ মির্জা। রফিক মির্জার উপর আমার ভরসা নেই উনি ছেলের কথার বিরুদ্ধে যেতে পারবেন না আমাকে কিছু করতে হবে।

পাঁচ মিনিটের মধ্যে রিশাদ চলে আসে হাতে ছিলো একটা কসমেটিক প্যাকেট। সুইটি জিজ্ঞেস করে বসে এটাতে কি আছে স্যার?

রিশাদ সহসা উত্তর দেয়।
“চুড়ি আছে।

‘কার জন্য?

এবার রিশাদের চোখে মুখে বিরক্তি প্রকাশ করে।
” চুড়ি যখন নিশ্চয়ই কোনো মেয়ের জন্য আর কার জন্য সেসব তোমার না জানলেও চলবে।

রিশাদের কথায় সুইটি চুপ হয়ে যায়। মনে মনে ফোসফাস করলেও উপরে হাঁসি মুখে থাকে।

“-ভাইয়া তুমি রেডি হবে না এখনো বসে আছো?

রাফিয়ার কথায় চুড়ির দিক থেকে নজর সরিয়ে ওর দিকে তাকায়। জিজ্ঞেস করে কি জন্য রেডি হবো?

“- ও মাই গড ভাইয়া এই কথা ভুলে গেলে?

রাফিয়ার কথায় রিশাদ বাঁকা চোখে তাকায় আবার সুধায় আজ কি কোনো স্পেশাল দিন নাকি যে ভুলে গেলাম?

“-স্পেশাল দিন তো বটেই। আজকে না তোমার আমার সাথে কলেজে যাওয়ার কথা।

‘কলেজে গিয়ে কি করবো?

” তোমার কি স্মৃতি শক্তি চলে গেছে নাকি?সেদিন না বললাম রবিবারে মানে আজ আমাদের কলেজে একটা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে সেখানে স্টুডেন্টদের গার্জিয়ানদের ও ইনভাইট করা হয়েছে।

-‘ওহ হ্যাঁ মনে পড়েছে কাজে চাপে সব ভুলে যাই।

“বিয়ে করে নেও বউ আনো তাহলে সে মনে মনে করিয়ে দিবে।

“-ভাবি হিসাবে পছন্দের কেউ থাকলে বলতে পারিস আনবো।

এ কথা শুনে রাফিয়া খুশিতে রুহির নাম বলে দেয়।
” ভাইয়া রুহি তো তোমায় পছন্দ করে ওকে আনো না আমার ওকে ঋাবি হিসাবে অনেক পছন্দ।

রিশাদ মিথ্যা রাগের ভান করে বলে,
“-এক চড় মারবো তো ওই মেয়ের নাম নিবি না বলেছি না ওর সাথে সম্পর্ক হবে। ওই মেয়ের মতো তুই ও পাগল হলি নাকি।

রিশাদের রাগি কথা শুনে রাফিয়া ভয় পেয়ে যায় চোখে পানি চিকচিক করছে দেখে রিশাদ হেঁসে দেয়।
রাফিয়ার কাছে গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,

“-মিথ্যে রাগ দেখালাম তোর রিয়াকশন দেখার জন্য আর কথা দিলাম ওকে তোর ভাবি করে আনবো।

রিশাদের কথা শুনে রাফিয়া খুশিতে ভাইকে জড়িয়ে ধরে।
“-থ্যাঙ্কিউ ভাইয়া। এই কথাটা রুহি শুনলে সেই খুশি হবে ওকে বলতে হবে ভাইয়া রাজি।

“-রুহি জানে ওকে বলতে হবে না।

রাফিয়া ভ্রু কুচকে তাকায়,
” রুহি যানে মানে কি?তুমি কি বলে দিছো ওকে?

“-হুম কয়েকদিন আগে বলেছি তার পর প্রজেক্টের ব্যস্ততার জন্য কয়কদিন থেকে কথা হয়নি।

“সবই বুঝলাম উপরে উপরে রাগ দেখাও আবার তলে তলে ঠিকি প্রেম করছো এদিকে আমি জানিনা।

রিশাদ রাফিয়ার মাথায় একটা গাট্টা মারে।
” -তুই বেশি পাকনামি করিস না নয়তো ছেলে দেখে বিয়ে দিয়ে দিবো।

“ভাবি আসুক তার পরিচিত ভাই বা কাজিন থাকলে আমিও করে নিবো।

রিশাদ চোখ ছোট করে দেখে আছে।
রাফিয়া আমতা আমতা করে বলে,
আমি তো মজা করে বললাম ভাবির ভাই থাকলে বিয়াই হবে একটি আধটু মজা হবে।
তুমি রেডি হয়ে আসো কলেজে যাবো।

“আব্বু আম্মুকে নিয়ে যা আমার অফিস আছে।

‘আব্বু তো অফিসে যাবে আর আম্মু যাবে না। তুমি চলো রুহি থাকবে তুমি বললে না ওর সাথে কয়দিন থেকে দেখা হয়নি ওখানে গেলে দেখা হবে কথা হবে।

রিশাদ একমিনিট ভেবে উত্তর দেয় ঠিক আছে তুই গিয়ে রেডি হো আমি আসছি।

এদিকে রুহি রোহানকে আগে থেকে বলে রেখেছে কলেজে যেতে সে তো রাজি রাফিয়া থাকবে বলে তখনই হ্যাঁ বলে দিয়েছে। দুই ভাই বোন হয়ে নিচে নামে রুহিকে শাড়ি পড়ে দেখে মিজানুর চৌধুরী বলেন,
‘মাশাল্লাহ আমার মেয়েকে পরীর মতো লাগছে।

রুহিকে রাগাতে পিছন থেকে রোহান ফোড়ন কেটে বলে,

“পরী না পেতনী লাগছে একদম তেঁতুল গাছের পেতনী।

রোহানের কথায় রুহি রাগ হয়ে ওকে মারতো ছোটে আর বলে,
‘পেতনী আমাকে না তোকে লাগছে বুঝলে?

“পেতনী তো মেয়েরা হয় ছেলেরা না।

‘তাহলে তুমি পেতনা।

” এ্যা পেতনা আবার কি?

‘ব্যাকরণ বুঝো?ব্যাকরণের ভাষায় মেয়ে পেতনী হলে ছেলেরা পেতনা হিসেব শেষ।

“না বইন ব্যাকরণ বুঝিনা তোকে কোন স্যার ব্যাকরণ শিখাইছে তার নামটা বলিস আমিও শিখতে যাবো বলে হাঁসতে থাকে।

এই তোরা দুজন থামবি? তোদের না দেরু হয়ে যাচ্ছে তাড়াতাড়ি যা।

” যাচ্ছিলাম তো আব্বু কিন্তু তোমার ছেলে আমার মতো সুন্দর একটা মেয়েকে পেতনী বললে রাগ ওঠিয়ে দিলো।

-হয়েছে নে তুই বিশ্ব সুন্দরী এবার আয় বলে রোহান বেরিয়ে গেল ওর পিছু পিছু রুহি চললো।

রিশাদ রাফিয়ার জন্য গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে।

“ভাইয়া এসে গেছি এবার চলো আমাদের দেরু হয়ে গেল রুহি নিশ্চয়ই আমাকে বকবে এতো দেরি করেছি ও একবার ফোন দিয়েছিলো ভয়ে ধরিনি।

রিশাদ রাফিয়াকে শাড়ি পড়া দেখে বলে,
‘ শাড়ি পরেছিস কেন? ওখানে কি বিয়ে বাড়ি?

“আমরা ক্লাসের সবাই শাড়ি পরবো এটাই প্ল্যান করেছিলাম তাই পরেছি।

রিশাদ কিছু বলে না গাড়িতে এসে বসে স্টাট দেয় মনে মনে ভাবে রুহিও তাহলে শাড়ি পড়বে।

রুহি সেই কখন কলেজে এসে পড়েছে রাফিয়া আসছে না দেখে রাগে গিজগিজ করছে। মনে মনে শো খানেক বকা দিচ্ছে।

” কি রে এভাবে মুখটা পেচার মতো করে আছিস কেন?

“-রাফিয়াটা এখনো আসছে না দেখে আমার মেজাজ গরম হয়ে যাচ্ছে ও বলেছিলো আমার আগে এসে দেখাবে এদিকে আমি এসেছি সেই কখন আর তার পাত্তা নেই।

রুহির কথার মাঝে রাফিয়া দৌঁড়ে এসে রুহি কে জড়িয়ে ধরে।
‘সরি, সরি! আগেই সরি বলেছি ভাইয়াকে নিয়ে আসতে গিয়ে দেরি হয়েছে রাগ করিস না। তোরে চুম্মা দিলাম রাগ কমা।

রুহি কয়েকটা কথা শুনাতে গিয়ে শুনায় না মেয়েটার মায়া ভরা কথায় যে কেউ ভুলে যাবে। রুহির রাত ও উড়ে হেঁসে ওঠে দুই বান্ধবী।

রোহান পাশে দাঁড়িয়ে তার মায়াবিনীকে দেখতে ব্যস্ত।
রাফিয়া এতোক্ষণ রোহানকে খেয়াল করেনি ওর দিকে চোখ পড়তে দেখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে দেখে লজ্জা পেয়ে যায়।

“ভাইয়া এদিকে আসো।

রুহি রাফিয়ার কথায় পিছনে তাকায় দেখে রিশাদ আসছে গাঁয়ে ব্ল্যাক শার্ট, চোখে সানগ্লাস পড়ে অসম্ভব সুন্দর লাগছে এমনিতে সুন্দর লাগে তবে আজ ব্ল্যাক ড্রেসআপে যেন মনে হচ্ছে অন্যদিনের তুলনায় একটু বেশি সুন্দর লাগছে।

দূর থেকে আসার সময় তখন থেকে রুহির দিকে তাকিয়ে ছিলো পিছন ঘুরে থাকার কারণে প্রথমে মুখ দেখা যাচ্ছিলো না এখন তাকানোর জন্য রুহিকে শাড়িতে দেখে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে রিশাদ নজর যেন সরছে না।
পাশে রোহান কে দেখে মুখে কিছু বলেনা শুধু কিছু সময় তাকিয়ে থেকে চলে যায়। রাফিয়াকে বলে অনেক মানুষ জন সাবধানে থাকিস আমি পাশে আছি কিছু দরকার হলে ডাক দিস।

অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে কয়েকটা মেয়ে লাল সবুজের শাড়ি পরে দেশাত্মবোধক গানে নাচছে সবাই নাচ দেখতে ব্যস্ত হলেও রিশাদ রেগে তাকিয়ে আছে রুহির দিকে তাকিয়ে থাকা ছেলে গুলোর উপর কি বাজে নজরে তাকাচ্ছে পাশের একজন তো বলে ওঠলো মামা সামনের সবুজ শাড়ি পড়া মেয়েটাকে যা লাগছে না কি বলবো।
এসব কথা শুনে রিশাদের রাগ বাড়তে থাকে অনেক মানুষ থাকার কারণে সিনক্রিয়েট করতে চায়না।

রুহি আর রাফিয়া মন দিয়ে নাচ দেখছিলো তখনি দশ বছরের একটা বাচ্চা মেয়ে এসে বলে,
আপু তোমাকে একটা ভাইয়া ডাকছে।

” কোন ভাইয়া?

‘তা তো জানিনা আপু তবে বললো তোমাকে ডেকে দিতে।

রুহি ভাবলো রোহান ডাকছে হয়তো এজন্য ওঠে আসে সাথে রাফিয়া আসতে চাইলে বলে তুই থাক আমি শুনে আসছি ভাইয়া ডাকছে হয়তো কোনো কারণে বলে রুহি একা চলে আসে বাচ্চাটার কথা অনুযায়ী ক্লাস রুমের দিকে এসেছে কিন্তু আশে পাশে কোথাও ভাইয়াকে দেখতে পাচ্ছি না।
কেউ নেই ভেবে আসতে গেলে কেউ হাত টান দেয়।
রুহি ভয় পেয়ে যায় কে হতে পারে অন্য কেউ ভেবে ভয়ে হাত পা কাঁপছে।
চোখের সামনে রিশাদের মুখ দেখে স্থির দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থাকে ভুলে যায় সব ভয়। সামনের মানুষটা সাথে থাকলে মরতেও ভয় পাবো না কখনো।

“শাড়ি পরে এসেছো কেন?

‘সবাই এসেছে তাই এসেছি আর এটা আমাদের প্ল্যান ছিলো শাড়ি পরবো। কেন শাড়িতে ভালো লাগছে না?

রিশাদ দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
সবাই পরলে তোকে পরতে হবে না। শাড়ি সামলাতে পারো না শাড়ির আঁচল সরে দিগে পেট দেখা যাচ্ছিলো সবাই কি রকম বাজে দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো সেদিকে খেয়াল আছে। তারা যে দেখে বাজে কথা বলছিলো সেগুলো শুনলে ভালো লাগবে।

রুহি মাথা নিচু করে নেয়।
“সরি আমার উচিত ছিলো ভালো করে শাড়ি পরা আর কখনো এমন হবে না।

” জানো তোমার উপর আমার কারো নজর সহ্য হয় না। আমি চাইনা কেউ তোমার দিকে বাজে নজরে তাকাক,কেউ তোমায় বাজে কথা বলুক।

“এমনিতেও তোমাকে অসম্ভব সুন্দর লাগে শাড়ি পরে লাগছে আরো বেশ,
তোমার এই রুপে মাতাল করে পাগল বানাবে শেষমেষ।

রুহি লজ্জায় মুখ লুকায়। মেয়েরা,প্রশংসা পেলে খুশি হয় সাথে লজ্জা পায়।

রিশাদ আবারো বলে শোনো প্রিয়শী,

–তোমার অভাবে হৃদয় আমার হয় ঝারখার,
এই মন শুধু পেতে চায় তোমারই ছোঁয়া বার বার।

চলবে…………?