তুমি আমার সেই প্রিয়শী পর্ব-২২+২৩

0
217

#তুমি_আমার_সেই_প্রিয়শী
লেখিকা:#শ্যামলী_রহমান
পর্ব:২২

রাত গভীর, কিন্তু রুহি চোখে ঘুম নেই। রুহি বিছানায় শুয়ে বারবার ফোন হাতে নিচ্ছে, কিন্তু রিশাদ তাকে এখনো কোনো মেসেজ দেয়নি। একধরনের অস্থিরতা তার ভেতরে বিরাজ করছে। নিজের ভুল বুঝতে পেরেও কেমন যেন লজ্জা আর অপরাধবোধে ভুগছে সে। মনে মনে সে ভাবছে, “কেন যে ওর ওপর এমন সন্দেহ করলাম! এতটা ভুল না করলেও চলত।” ভেতরে ভেতরে অপরাধবোধে জর্জরিত রুহি আবারও ভাইয়ের কথা মনে করে — কাল গিয়ে সবকিছু মিটিয়ে আসতে হবে।

অন্যদিকে, রিশাদ শান্তিতে ঘুমানোর চেষ্টা করেও ঘুমাতে পারে না রুহির জন্য তার মনে অনেক আবেগ, কিন্তু সেই সাথে একটু ক্ষোভও। “এভাবে কেন আমাকে সন্দেহ করল?” নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে। রিশাদ জানে, সে রুহিকে খুব ভালোবাসে, আর সেই ভালোবাসা তাকে একদম শেষ পর্যন্ত ধরে রাখবে। তবুও, রুহির প্রতি একটু রাগ তার ভেতরে আছে। রিশাদ চায় রুহি একা এসে তাকে বুঝতে শেখে, তার ভালোবাসার মর্মটা উপলব্ধি করুক তাই ও আসলে একটু অবহেলা করবে ওকে ভুল বোঝার শাস্তি দিবে ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে।

সকালে রুহির ঘুম ভাঙল খুব ভোরে বলতে গেলে রাতে ঘুম হয়নি তিনটায় ঘুমিয়েছিলো এখন ওঠেছে ছয়টায় মাত্র তিন ঘন্টা ঘুম হয়েছে এজন্য চোখ ঘুমের রেস আছে কিন্তু রুহি ঘুম পাত্তা না দিয়ে ওঠে পড়ে ও অপেক্ষায় আছে কখন রিশাদের কাছে যাবে মনকে স্থির করবে সেই নিয়ে অস্থিরতা। তাড়াতাড়ি উঠে রেডি হয়ে নিচে নামতে গেলে প্রথমেই দেখল রোহান নিচে যাচ্ছে রুহি ভাইয়ের সামনে গিয়ে দাঁড়াল,
চোখ দিয়ে ইশারা করে বলছে,

“আব্বু কোথাই?

-বাগানে গাছে পানি দিতে গেছে মনে হয়। আব্বুর অভ্যাস আছে সকাল হলে বাগানে গিয়ে ফল,ফুলের গাছে পানি দেওয়া।

রুহি আর রোহান দুই ভাই বোন এক সাথে নিচে নামলো রান্নাঘর থেকে রুজিনা বেগম আসলে রুহিকে রেডি হতে দেখে প্রশ্ন করে,

‘তুই কোথাই যাচ্ছিস?

” আমি আমার শশুড় বাড়ি যাচ্ছি আম্মু।

:অসম্ভব তুমি ওই বাড়ি কখনো যাবে না।

পিছন থেকে মিজানুর চৌধুরী কথা শুনে রুহি সহ রোহান ওর সকলে তাকায় মিজানুর চৌধুরী দরজা থেকে কথাটা বলেছেন দরজা থেকে ভিতরে এসে রুহির সামনে দাঁড়ায়।

:তোমায় আমি কালকে কি বললাম?তুমি ওই বাড়ি যেতে চাচ্ছো কিভাব?যে তোমার বাবাকে অসম্মান করে তোমার বাবার ক্ষতি চায় তার কাছে যাবে?

“আব্বু তুমি ভুল বুঝছো সেদিন উনি তোমায় ধ্বাক্কা দয়নি আমিও তোমার মতো ভেবেছিলাম উনি ধ্বাক্কা দিয়েছিলেন ভেবে ভুল ও বুঝেছিলাম কিন্তু আমি ভুল তুমিও ভুল সব সময় চোখে দেখা জিনিস ও সত্যি হয়না তার সামনে যা দেখি তাই বিশ্বাস করি কিন্তু আমরা তার পিছনের সত্যিটা দেখিনা বা বুঝতে চেষ্টা করি না।

:তোমাকে ওই বেয়াদব ছেলেটা নিশ্চয়ই ভুলভাল বুঝিয়েছে এজন্য এসব বলছো তাই না?

“না আব্বু আমি ছোট বাচ্চা না যে ভুলভাল বুঝানে আর আমি বুঝবো আমার কাছে যথেষ্ট প্রমান আছে।

মিজানুর চৌধুরী মুখে গাম্ভীর্য রেখে বলে,

:কি প্রমান দেখি যেটা তোমাকে দেখিয়ে ভুলিয়েছে।

রুহি রোহানের কাছে যায় হাত বাড়িয়ে ওর থেকে ফোনটা চায় রোহান ওর আব্বুর দিকে একবার তাকিয়ে ফোন থেকপ ভিডিওটা বাহির করে দেয়। রুহি ভিডিওটা ওর আব্বুর সামনে ধরে মিজানুর চৌধুরী ভিডিওটা দেখে স্তব্ধ হয়ে যায় যেন নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না খোরশেদ এমন করতে পারে কল্পনাতে ছিলো না ওকে কত বিশ্বাস করতো কিন্তু খোরশেদ কেন এমন করলো?
মিজানুর চৌধুরী বলে,

:খোরশেদ আমার বিশ্বস্ত লোক ছিলো ও কেন এসব করবে?এসব করে ওর কি লাভ?হতেও পারে ওই রশিদ মির্জার বেয়াদব ছেলে টাকা দিয়ে এসব করিয়েছে আর তোকে ভুল বুঝেয়েছে আর তুমিও ভিডিও দেখে নিজের বাবার কথা শুনবে না বিরুদ্ধে যাবে।

” আব্বু আমি তোমার বিরুদ্ধে যাইনি শুধু নিজের ভুলটা বুঝতে পেরেছি তাই আমার ঠিকানায় চলে যাচ্ছি। তুমিও নিজের ভুলটা বুঝতে পারলে এতো কিছু হতো না।

:মেনে নিলাম এই ঘটনা সে করেনি কিন্তু অতীত মিথ্যা নয় আমি কখনো মির্জা পরিবারকে বিশ্বাস করিনা ওরা জীবন্ত মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঢেলে দেয় এবং সফল হয়।

রোহান রুহি দুজনে চমকে তাকায় রুহি জিজ্ঞেস করে,

“অতীতে কি হয়েছিলো আব্বু?

:আমি সেসব বলতে রাজি নই তুমি যদি ওই বাড়ি যেতে চাও তবে যেতে পারো তবে এই বাড়ির দরজা তোমার জন্য বন্ধ হয়ে যাবে কখনো পা দিতে পারবে না এই চৌধুরী বাড়ির সীমানায়।

রুহি টলমল চোখে নিজের বাবার দিকে তাকায় মিজানুর চৌধুরীর কাছে যেতেই তিনি সোজা উপরে ওঠে যান উনার চোখে ছিলো পানি।
রুহি নিজের মাকে জড়িয়ে ধরে বলে,

” আব্বুর খেয়াল রেখো আমি এ বাড়ি আবার আসবো যেদিন দুই বাড়ির শত্রুতা শেষ হবে আর সেটা খুব শিগগিরই হবে তার আগে অতীতের কারণটা জানতে হবে।
অতীতে কি হয়েছিলো আম্মু তুমি তো জানো।

রুজিনা বেগম আমতা আমতা করে করে বলে,

;আমি কিছু বলতে পারবো না রে মা তোর আব্বুর নির্দেশ কাউকে বলা বারণ।তিনি চান অতীত সামনে আসুক ভুলে যাক সবাই কিন্তু নিজে চাইলেও ভুলতে পারেন না।

রুহি হতাশ হয়ে রোহানের কাছে যায় বিদায় নেয় ভাইয়ের থেকে।
“আসি ভাইয়া আব্বু আম্মু খেয়াল রেখো আর আমি খোঁজ খবর নিবো।

রোহান হেসে বলল,
-আমি সবার খেয়াল রাখবো তুই নিজের আর ওই বাড়ির সবার খেয়াল রাখিস, রিশাদের মান ভাঙিয়ে সব কিছু ঠিক করে নিস।

রুহি মাথা নেড়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে রোহান নিয়ে যেতে চাইলেও রুহি মানা করে কারণ যদি মিজানুর চৌধুরী দেখে তাহলে সমস্যা হবে তাই একাই বেরিয়ে পড়ে।

মির্জা বাড়ির সামনে রুহি রিকশা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে গেটের সামনে আসতে দারোয়ান গেট খুলে দেয় রুহি ধীর পায়ে ভিতরে আসছে রিশাদ ছাঁদ থেকে সব কিছু দেখছে আর মুচকি হাঁসছে।

রুহি দরজায় এসে কলিং বেল বাজাচ্ছে কিন্তু কেউ দরজা খুলছে না দেখে হতাশ হয় তার পর দরজা কড়া নাড়লে গেলে দরজা খুলে যায়।
দরজা কে খুলে রাখলো বাসায় কেউ নাই নাকি?
নিচে উঁকি দিয়ে কাউকে দেখতে পেল না রান্না ঘরে কেউ নেই তাই নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো কিন্তু রুমে গিয়ে দেখে কেউ নেই রুহি আরো হতাশ হয় মনে মনে বলে,

” বাড়ির সবাই কোথায় গেছে কেউ নেই অথচ দরজা সব খোলা।
রুহির ভাবনায় মাঝে দরজা ঠেলে রুমে আসার শব্দে রুহি পিছনে চায় দেখে রিশাদ ব্রাশ করতে করতে বাহির থেকে এসে সোজা ওয়াস রুমে গেল রুহির দিকে টকবার তাকালো না এমন ভাব করলো ঢ়েন রুমে আর কেউ নেই।

রুহি রিশাদের বাহির হওয়ার অপেক্ষা করছে তখনি ওয়াস রুম থেকে বাহির হয় রিশাদ এখনো রুহির দিকে তাকায়নি রুহি ধীরে ধীরে রিশাদের সামনে যায় যাতে ওর নজরে পড়ে কিন্তু রিশাদ সেখান থেকে সরে বেলকনিতে যায়।

রিশাদের এমন ব্যবহারে একটু খারাপ লাগছে তার পর ভাবে উনি তো ঠিকই করছেন আমি তো কম করিনি এই ভেবে বেলকুনিতে রিশাদের কাছে গিয়ে দাঁড়ায় চোখে ছিলো অপরাধ বোধের ছাপ রিশাদ আবার রুহিকে এড়িয়ে আসতে নিলে হাত ধরে আটকে দেয় মাথা নিচু করে করে বলে,

“সরি! আমি আপনাকে ভুল বুঝে ভুল করেছি এমন আর কখনো করবো না আমার উচিত ছিলো আপনার কথা শোনা কিন্তু চোখের সামনে যা দেখেছি এতে যে কেউ ভুল বুঝবে।

রিশাদ রাগে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

‘সবাই না তোমার মতো গাঁধারা ভুল বুঝবে। তুমি কি করে সুইটির সাথে ছবি গুলো বিশ্বাস করলে?
আমাকে এই চিনেছিলে?
এডিট করা ছবি দেখে বুঝতে পারো না?
মাথায় কোনো বুদ্ধি নেই আছে শুধু বাবার মতো জেদ আর রাগ।

রুহি মাথা উপর করে রিশাদের দিকে তাকিয়ে বলে,

” আমার কি দোষ সব দোষ আপনার কারণ সবাই বলে বিয়ের পর মাথার ব্রেন কমে যায় আমারো তাই হয়েছে।

রুহির কথায় রিশাদ হাঁসবে নাকি বকবে বুঝতে পারে না সিরিয়াস সময়ে কি বলে।

‘আমার দোষ কেন?

“কারণ বিয়ে আপনি করেছেন।

‘ওকে আমি করেছি তুই করিসনি তোর বাপের মতে জোর করে বিয়ে করেছি তাহলে আসলি কেন?চলে গেছিলি থাকতি বাবার পছন্দ মতো ওই সাদিবকে বিয়ে করতি এখনো সময় আছে যা।

” রুহির চোখ টলমল করছে দেখে রিশাদ মনে মনে বলে,

‘এভাবে বলা ঠিক হয়নি বোধহয় এই ভেবে বলে,

‘কান্না থামাও আর সরি এভাবে বলা ঠিক হয়নি।

রুহি কান্না থামায় আর বলে,

“আপনি আমায় মাফ করে দিয়েছেন?

‘মাফ করেছি কিনা তা এখন বলতে পারছি না যখন করতে পারবো তখন বলতো মাফ করেছি।

এই কথা শুনে রুহির মুখ চুপসে যায়,
তার মানে মাফ করেননি?

রিশাদ কিছু বলেনা সেভাবে দাড়িয়ে থাকে রুহি হঠাৎ বলে,

” মাফ না হয় পরে কইরেন এখন একটু জড়িয়ে ধরি প্লিজ।
আপনাকে ভুল বুঝার তাড়না আর আফসোসের কারণে সারারাত ঘুমাতে পারিনি আমার মন মস্তিষ্ক সব এলোমেলো মনে হচ্ছে আব্বুর কথার অবাধ্য হয়ে এসেছি ওই বাড়ি যেতে নিষেধ করেছেন।

রুহি রিশাদের উত্তরের অপেক্ষা না করে হুট করে জড়িয়ে ধরে।
রিশাদ ও আলতো হাতে রুহিকে জড়িয়ে নেয়।
রিশাদ মনে মনে এমন কিছু চেয়েছিলো কিন্তু শাস্তি দেওয়ার জন্য পারছিলো রুহি নিজে বলে ভালো করলো ভেবে রিশাদ মুচকি হাঁসছে রুহি চোখ বন্ধ করে আছে প্রিয় মানুষের আলিঙ্গনে আবদ্ধ হয়ে পৃথিবীর সমস্ত ক্লান্তি দূর হয়ে যায়।
কিছুক্ষণ পর রুহি বলে দুই বাড়ির অতীতের শত্রুতার কারণ জানতে হবে তার পর শত্রুতা শেষ করতে হবে সে বিষয়ে আপনি কিছু জানেন?

রিশাদ কোনো উত্তর দিলো না।
তখন রিশাদের ফোনে কল আসায় রুহিকে ছেড়ে দেয় ওর দিকে তাকিয়ে ফোন নিয়ে রুম থেকে বাহির হয়ে যায়।

রুহি মনে মনে ভাবে হয়তো জরুলি ফোন রুমে নেটওয়ার্ক সমস্যা তাই ছাঁদে গেল।

রিসিভ করতে ফোনের অপরপাশ থেকে কি বললো শোনা গেল না রিশাদ কল কেটে ফোনের স্কিনে তাকিয়ে হেঁসে বলে,

‘তাকে পেয়ে গেছি এবার রাঘব বুয়ালের খবর পেতে সময় লাগবে না ওদের নেক্সট প্ল্যান যাই হোক তা সফল হওয়ার আগে আমি বম ব্লাস্ট করবো যাকে বলে ধুমধুমার ধামাকা।

চলবে…………..?

#তুমি_আমার_সেই_প্রিয়শী
লেখিকা:#শ্যামলী_রহমান
পর্ব: ২৩

রুহি তখন রিশাদের পিছন পিছন এসেছিলো ছাঁদ এসে রিশাদকে ফোনে কথা বলা পুরোপুরি না শুনলেও শেষের টুকু শুনতে পেয়েছে। তার মনের ভেতর কৌতূহল আরও বাড়লো কি ধুমধুমার ধামাকা হবে। “রাঘব বুয়াল” বিষয়টা কী হতে পারে? রিশাদের কথায় মনে হচ্ছিল, সে যেন কোনো গোপন পরিকল্পনা করছে। রুহি জানে, দুই বাড়ির শত্রুতার কারণে রিশাদ হয়তো কোনো বড় পদক্ষেপ নিতে চলেছে।

রিশাদ ফেরার আগে রুহি রুমে ফিরে এল যাতে ওকে দেখতে না পায়।
রুহি মনে মনে ভাবছে,
এই শত্রুতা শেষ করতে গেলে আমাকে সত্যি অতীতটা জানতে হবে। কিন্তু আব্বু কিছুতেই বলবেন না, আর আম্মুও নিশ্চুপ। তবে রিশাদ হয়তো কিছু জানে! ওর কাছ থেকে আমাকে জানতে হবে।”

রিশাদ ছাঁদ থেকে নেমে এলো। রুহি রুমে বসে ছিল। তার মুখে চিন্তার ছাপ দেখে রিশাদ ভ্রু কুচকে তাকায় কিন্তু কিছু বলেনা।

রুহি গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,

“আমি কিছু জানতে চাই। সত্যি করে বলবেন?”

“রিশাদ রুহির চোখের দিকে তাকিয়ে দেখে চোখের এই চাহনি দেখে মনে হচ্ছে, কিছু জানার আকাঙ্খা তা বুঝতে পারছে।
গম্ভীর মুখে বলে,
” কি জানতে চাও বলো?

রুহি ধীর স্বরে বলল,

“দুই বাড়ির শত্রুতার কারণটা কী, আপনি জানেন?”

রিশাদ কিছুক্ষণ চুপ করে রুহির দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর বলল,

“জানার দরকার আছে?”

“হ্যাঁ, খুব। কারণ এই শত্রুতাই আমাদের সব সমস্যার মূল। এই শত্রুতার কারণ কি জানতে চাই আর শেষ করতে চাই।

রিশাদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
অতঃপর বলে,
“তুমি শত্রুতা শেষ করতে পারবে না?তুমি তো শুধু আমাকে শেষ করতে পারবে কারণ আমি তোমার শত্রু।

এখনো সব কিছু জানিনা আর তোমাকে জানাতেও পারবো না একটু অপেক্ষা করো ঠিক জানতে পারবে (মনে মনে)

রিশাদের কথায় রুহির মন খারাপ হয় ভুল করেছে বলে আজ এরকম কথা শুনতে হচ্ছে।

রুহি নিচে কাউকে দেখতে পায়নি কেউ নেই কোথাই গেছে এতো কিছুর মধ্যে জানা হয়নি তাই জিজ্ঞেস করে,

‘বাবা, মা কোথাই গেছে?

“তোমার বাবা মা বাসায় আছে আর কোথাই যাবে।

‘আমি আমার বাবা, মা ‘র কথা বলছি না আমি আপনার বাবা মা’র কথা বলছি।

রিশাদ একটু বাঁকা চোখে তাকায়।
” আব্বু, আম্মু মামার বাসায় গেছে।

‘আর রাফিয়া?

“ও গেছে তবে ওকে ফোন করেছি বিকেলে আসবে আর আব্বু আম্মু থাকবে।

রুহির আর কিছু বলার আগে রিশাদ ওয়াশ রুমে ঢুকে পড়লো রুহিও রুম থেকে বাহির হয়ে রান্না ঘরে রিশাদের জন্য খাবার বানাতে গেল।

রুহি খাবার বানানো শেষ করে এসে দেখে রিশাদ গোসল সেরে শার্ট কোর্ট পরে রেডি হয়েছে।
রুহি সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে,

‘কোথাও যাচ্ছেন?

“অফিসে যাই যানো না?

‘ওহ! তা জানি কিন্তু আমি বাড়িতে একা থাকবো?
কথাটা আস্তে বললেও রিশাদ শুনতে পায়।

“ওকে বাসা থেকে চলে যেতে পারো আর একা থাকতে পারবে না। তাছাড়া এখন দিন ভূত আসবে না আমার অফিসে কাজ আছে যেতে হবে আব্বু ও নেই।

রিশাদের কথায় রুহি বুঝতে পারছে ওকে খোটা দিয়ে বলছে আর এখনো কিছুটা রাগ,অভিমান আছে।

রিশাদ নিচে নামে রুহি খাবার খেতে টেবিলে ডাকলে ও তাড়াতাড়ি করে যেতে যেতে বলে,

” সময় নেই অফিসে খেয়ে নিবো বলে বেরিয়ে যায় রুহি দাঁড়িয়ে দেখে আর ভাবপ,
এসব ভুল বোঝাবুঝি না হলে আজকের সময়টা সুন্দর হতো অফিসে যাওয়ার আগে আমার হাতের খাবার খেত যাওয়ার আগে কপালে চুমো একে দিতো এই স্বপ্ন তো ছিলো রিশাদকে নিয়ে কিন্তু নিজের কারণে এমন হয়েছে চোখে হাল্কা পানিটুকু মুছে নেয়।

রিশাদ বাহির হয়ে এসে হেঁসে ফেলে আর বলে,

“তোমার শাস্তি এগুলো তবে বেশিদিন না একদিনই দিবো তুমি আমায় অনেকদিন কষ্ট দিয়েছো কিন্তু আমি দিতে পারবো না কারণ আমি তোমায় ছাড়া বেশি সময় দূরে থাকতে পারবো না।

রিশাদ বেরিয়ে যাওয়ার পর রুহি দরজা আটকে দিয়ে কিছু সময় ছাঁদ থেকে ঘুরে আসে একা একা ভালো লাগছেনা তাই ছাঁদ থেকে ফিরে ও মন খারাপ নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে কখন যে দুপুর গড়িয়ে যায় বুঝতে পারে না।

কলিং বেল বাজার শব্দে রুহির ঘুম ভাঙে তাড়াহুড়ো করে
নিচে দৌড়ে নামে দরজা খুলে দেয়।
দরজার সামনে রোহানকে দেখে অবাক হয়।

‘ভাইয়া তুমি এই সময়?

রোহান ভিতরে আসতে আসতে বলে,

-আমি হসপিটালে গিয়েছিলাম আজকে দুপুরের পর কাজ ছিলে না তাই বাসায় যাচ্ছিলাম কিন্তু পথে রিশাদ ফোন করে বললো তুই একা আছিস তোর জন্য আমাকে আসতে বললো তাই চলে আসলাম।

‘ওহ! আমি ভেবেছিলাম রাফিয়া আসছে ওর আসার কথা ছিলো।

-রাফিয়ার আসতে সন্ধ্যা হবে আর রিশাদের কাজ একটু বেশি হয়ে গেছে আসতে রাত হবে তাই আমাকপ আসতে হলো।

‘বাসায় আব্বু কি কিছু বলছে?

-না কিছু বলেননি শুধু গম্ভীর মুখে বসে ছিলেন। তোর আাসার একটু পর আমি তো হসপিটালে চলে আসছিলাম।

-রিশাদের রাগ অভিমান ভেঙেছে?

‘ক্ষমা তো চেয়েছি তবে মনে হচ্ছে রাগ করে আছেন।

-আচ্ছা শোন এমন কিছু কর যাতে রাগ করে থাকতে না পারে।

‘কি করবো?

-আমার এসব বিষয়ে তেমন ধারণা নেই তুই বরং রাফিয়াকে তাড়াতাড়ি আসতে বল ও মেয়ে মানুষ ওর কাছে আইডিয়া থাকতে পারে।

রোহানের কথায় রুহি রাজি হয়ে যায়।

‘আইডিয়া ওর কাছে ভালো থাকে তাহলে ওকে ফোন করি।

-ওকে কর কিন্তু আমি এসেছি এটা বলিস না।

‘কেন?

-এমনি বলতে হবে কেন?আমি তো চলে যাবো।

রুহি রাফিয়াকে ফোন করে সব কিছু বলে রাফিয়া কিছু প্ল্যান দেয় আর আসার সময় যা লাগবে নিয়ে আসবে বলে ফোন কেটে দেয়।
রোহান এসেছে এই কথাটা বলে না।

-কি প্ল্যান দিলো?

‘রুহি রোহানকে সব বললো।
রোহান শুনে মনে মনে বলে,

-মায়াবিনী তুমি অন্য কারো ভালোবাসার মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি শেষ করার উপায় বলে দিচ্ছো অথচ আমার ভুলের জন্য দূরে যাচ্ছো নাগালে পাচ্ছি না।

‘ভাইয়া কিছু ভাবছো?

রুহির কথায় রোহান ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে।
-না বল?আর রাফিয়া কখন আসবে?

‘আসতে সন্ধ্যা হবে বললো।

-ওকে আমার জন্য এক কাপ কফি নিয়ে আয় মাথাটা ধরেছে।

‘ভাইয়া এবার বিয়েটা করে নেও ভাবি আসলে ভালো হবে বলে রুহি রান্না ঘরে চলে যায়।

এদিকে রোহান বলে,

-ভাবি খুব শিগগিরই হবে শুধু তাকে একটু মানিয়ে নেই আর আজকে সেটা করবো।

দুই ভাই বোনের গল্প, আড্ডা, আলোচনা কি করবে না করবে এই নিয়ে বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা নামতে চললো।
গোধূলি বেলার সোনালী সূর্য পশ্চিম দিকে হেলে যাচ্ছে আর কিছুক্ষণের মধ্যে সন্ধ্যা নামবে চারদিক অন্ধকার হয়ে আসবে আর এখন রাফিয়া আসবে দেখে রোহান রুহিকে বলে,
-আমি একটু ছাঁদে যাচ্ছি বলে উপরে চলে যায়।

রুহি রাতের রান্না করছে তখন কলিং বেল বাজে রুহি গিয়ে দরজা খুলে দেয় রাফিয়া দৌঁড়ে এসে রুহি জড়িয়ে ধরে বলে,

;সেই আমার ভাইয়ের কাছে এলি তো,?আগেই বলেছিলাম ভাইয়াকে ভুল বুঝিস না এখন বুঝ মজা রাগ ভাঙা।

“তোর প্ল্যান হলেই হবে।

;কি দিন আসলো নিজের ভাইয়ের রাগ ভাঙগানোর জন্য আমাকে আইডিয়া দিতে হচ্ছে।

” আমি তোর হেল্প নিচ্ছি ননদ হিসাবে না আমার বান্ধবী হিসাবে হেল্প নিচ্ছি বুঝেছিস।

;তাহলে আমার ভাইকে দুলাভাই ডাকবো নাকি?

রুহি দাঁত বের করে হাঁসতে হাঁসতে বলে,

“ডাকতে পারলে ডাকিস আমার কিন্তু সমস্যা নেই।
আমার রান্না পুড়ে যাচ্ছে বলে রুহি দৌড়ে দেয়।
রাফিয়া চিল্লিয়ে বলে,

;আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি তার পর সব প্ল্যান অনুযায়ী করবো।

” তাড়াতাড়ি আসিস তোর ভাই এক দু ঘন্টার মধ্যে চলে আসতে পারে।

রাফিয়া নিজের রুমে যায় খুব গরম লাগছে রুমের এসিটা দেয় রাস্তায় জ্যামে বসে থেকে অবস্থা শেষ ক্লান্ত লাগছে তাই ওয়াশ রুমে ফ্রেশ হতে যায়।

দশ মিনিট পর ফ্রেশ হয়ে বাহির হয়ে রোহানকে নিজের বেডে বসে থাকতে দেখে একটু চমকে যায়।
ওয়াশ রুমের দরজা খোলার শব্দে রোহান ও সেদিকে তাকায় রাফিয়া দৃঢ় কন্ঠে বলে,

;আপনি এখানে কি করছেন?আর আসলেন কিভাবে?

রোহান বেড থেকে ওঠে রাফিয়ার সামনে এসে দাঁড়ায় সদ্য ভেজা ঠান্ডা হাত দুটো নিজের হাতে নেয় অনুতপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,

-সরি!ভুল বোঝার জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত। আমি না বুঝে কত কি বলে ফেলেছি তখন মাথা ঠিক ছিলো না এবারে মাফ করে দেও কথা দিচ্ছি আর কখনো এমন ভুল হবে না।

রাফিয়া হাত দুটো ছাড়িয়ে নেয়।

;মিস্টার রোহান চৌধুরী আপনাকে আমি আগেই বলেছি আমি যদি একবার মুখ ফিরিয়ে নেই তাহলে আর ফিরবো না।

-ভালোবাসার ভুল বোঝাবুঝি থাকবে তাই বলে দূরে সরে যাবে?যোগাযোগ বন্ধ করে দিবে?
জানো তোমায় না পেয়ে আমার অবস্থা কেমন হয়েছিলো?

রাফিয়া উপহাস করে বলে,

;দূরে চলে গেলে, যোগাযোগ না করলে কেমন লাগে এবার বুঝতে পেরেছেন তো?
আমিও অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম কান্না করেছি র্নিঘুম রাত কাটিয়েছি।

রোহান রাফিয়ার হাত ধরে চোখ চোখ রাখে।
রাফিয়া হাত ছাড়াতে চাচ্ছে কিন্তু পারছে না।

-আমার ভালোবাসা ঠুনকো নয় যে একটা ভুল বোঝার কারণে শেষ করে দিবে আর আমি মেনে নিবো তুমি না চাইলে তোমার আমার হতে হবে পারলে তোমার ভাইয়ের মতো জোর করে হলেও নিজের করে নিবো আর হাত এতো মুচড়া মুচড়ি করছো কেন?
যেদিন প্রথম হাত ধরেছিলাম সেদিন কি বলেছিলাম মনে নেই?
সেদিন বলেছিলাম এই হাত একবার ধরেছি আর ছাড়বো না যত নিশ্বাস আছে ততদিন তুমিও আমার পাশে থাকবে।

রাফিয়া নিলুপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কিছু বলার আগে নিচ থেকে রুহির ডাক আসে রাফিয়া হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে চলে যায় রোহান একা রুমে রয়ে যায় মুখে তার হাঁসি এখন যেটুকু বলেছে বাকিটা পরে বলবে আর সব ভুল বোঝাবুঝি শেষ করে মায়াবিনীর মুখে হাঁসি ফুটিয়ে যাবে।

চলবে………….?