তুমি আমার সেই প্রিয়শী পর্ব-২৬ এবং শেষ পর্ব

0
391

#তুমি_আমার_সেই_প্রিয়শী
লেখিকা:#শ্যামলী_রহমান
#অন্তিম পর্ব

সূর্য ডুবছে ধরণীতে নেমে এসেছে ঘোর অন্ধকার। রাতের নিস্তব্ধ চারপাশ দূর থেকে ভেঁসে আসছে কুকুরের ডাক, ঝি ঝি পোকার সুর। পথে নেই কোনো মানুষ শূন্য রাস্তায় বাতাসে ওড়ে যাচ্ছে কিছু গাছের পাতা।

এক অন্ধকার রুমে বন্ধী করে রাখা হয়েছে একটা কে।তার হাত মুখ বাঁধা হাত খোলার জন্য খোলার জন্য ছটফট করছে কিন্তু পারছে না মুখ দিয়ে গোঙানির শব্দ আসছে হয়তো বলতে চাচ্ছে আমায় কেন বেঁধে রাখা হয়েছে?

“আরে এতো ছটফট করছিস কেন?একটু স্থির হো তোর খাতির যত্ন করার জন্য রেডি হয়ে নেই।

হঠাৎ কারো কন্ঠ শুনে চমকে তাকায়। নিজের সামনে রিশাদ কে দেখে চমকে যায়।

রিশাদ আকাশ কে ইশারায় বাঁধন খুলতে বলে,
সে কথা মতো বাঁধন খুলে দেয়।

এদিকে লোকটার অবস্থা খারাপ ভয়ে শরীর কাঁপছে।
রিশাদ কিছু বলার আগে ওর পা য়ে পড়ে কান্নারত অবস্থায় বলতে থাকে,

‘আমি কিছু করিনি, আমি কিছু জানিনা।

রিশাদ পাশের চেয়ারে বসে কুটিল হেঁসে ওঠে।

” তোকে কি আমি বলেছি তুই কিছু জানিস, তুই কিছু করেছিস?
বলিনি তো তাহলে ভয় পাচ্ছিস কেন?আর পা ধরছিস কেন?
তাহলে কি কিছু করেছিস,কিছু জানিস?

লোকটার ভয়ে ঘাম ছুটছে শুষ্ক ঢোক গিলছে দেখে রিশাদ মুখের ভঙ্গিমা চেঞ্জ করে কঠিন রূপ ধারণ আচমকা দাঁড়িয়ে লাঠি নিয়ে এলোপাতাড়ি মারতে থাকে আর মুখে বলে,

” এসব কে করতে বলেছে তোকে বল? কার কথা শুনে রশিদ মির্জা ও তার স্ত্রী কে ট্রাক চাঁপা দিয়েছিস? তোর জন্য আমার বাবা কে হারিয়ে মা আইসিউতে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। বল কে করতে বলেছে?
যদিও আমি বুঝতে পারছি তবুও তোর মুখে শুনবো।

ট্রাক ডাইভার মারের চোটে সত্যি বলে দেয় কার নির্দেশে এসব করছে সেটা বলে দেয় আর রিশাদের পা ধরে বলে আমায় ছেড়ে দিন আমার কোনো দোষ নেই।

আকাশ একে দেখ আমি আসছি বলে রিশাদ বাহিরে আসে রোহানকে ফোন করে।

” কাজ হয়েছে ধরতে পেরেছিস?

ওপাশে কি বলে শোনা যায় না রিশাদ আবার বলে,

“গুড আমি আসছি।

_______________

রাত পেরিয়ে সকাল হয়েছে সাদিব ও তার বাবা সানোয়ার চৌধুরী একটু থেকে ঘুম থেকে ওঠেছে সামনে চা’য়ের কাপ রয়েছে হাতে নিয়ে সবে মুখে দিতে যাবে তখনি কলিং বেল বাজে কাজের মহিলা দরজা খুলে দেন।

সানোয়ার চৌধুরী আর সাদিব রিশাদ ও সাথে থাকা পুলিশদের দেখে দাঁড়িয়ে যায় সাথে ভয় পায় মনে মনে ভাবে কেন এসেছে তারা?

সাদিব ভয় পেলেও শক্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,

-কি ব্যাপার আপনারা এখানে কেন?

পুলিশ অফিসার ও তার কনস্টেবলরা ভিতরে আসে বাবা ছেলেকে ঘিরে ধরে বলে,

‘মিস্টার সানোয়ার চৌধুরী ও সাদিব চৌধুরী আপনাদের কে রশিদ মির্জা কে হত্যা করার দায়ে এরেস্ট করা হচ্ছে।

পুলিশ অফিসের কথা বাবা ছেলে আরো ভয় পেয়ে যায় তবু তোতলানো কন্ঠে বলে,

-কি বলছেন আমরা কেন হত্যা করতে যাবো রশিদ মির্জা এক্সিডেন্টে মারা গেছেন আপনি শুনেননি আর কি প্রমাণ আছে আমরা করেছি।

এদিকে আসো।
পুলিশ অফিসারের হুকুমে ট্রাক ডাইভার ও খোরশেদ কে আনা হয়।

ওদের দেখে সাদিব ও তার বাবা দুজনের ভয়ে ঘাম পড়তে থাকে বুঝতে পারে আর কিছু করার নেই।

তবুও মুখের জোরে বলে ওরা মিথ্যা বলছে আমরা কিছু করিনি আর না হত্যা করতে বলেছি আমাদের ভাসানোর চেষ্টা করছে।
রিশাদ কে বলে দেখো আমরা কিছু করিনি তোমাদের শত্রু তো মিজানুর চৌধুরী হতে পারে সে এসব করছে।

রিশাদ রাগে ছুটে যায় মারতে গিয়ে সাদিব কে মারতে থাকে আর বলে,

“শত্রু তারা নয় তোরা শত্রুতা বাড়িয়েছিস সেই ১৫ বছর আগে তোর বাবা সানোয়ার চৌধুরী বাড়ির মেয়ে মৌমিতা চৌধুরী যে মিজানুর চৌধুরীর ছোট বোন ছিলো তাকে কে মিথ্যা ভালোবাসার জ্বালে ফেলে সম্পতির জন্য চুপ করে বিয়ে করেন। সানোয়ার চৌধুরী তখন মৌমিতা চৌধুরীকে তার ভাইকে জানাতে মানা করেন তিনি ভালোবাসার মানুষের কথা অনুযায়ী কাজ করেন। মিজানুর চৌধুরীকে জানালে সে মানতো না কারণ মিজানুর চৌধুরী চাইতেন আমার ছোট চাচ্চু রাইসুল মির্জার সঙ্গে তার বিয়ে দিয়ে সম্পর্ক আরো মজমুত করবেন এতে সম্মতি ছিলেন রশিদ মির্জা।

এভাবে চলছিলো কেটে যায় প্রায় পাঁচ সাত মাস। একদিন মিজানুর চৌধুরী ও রশিদ মির্জা বিয়ের দিন ঠিক করেন বিয়েতে মৌমিতার মত জানতে চাইলে চুপ করে থাকে হ্যাঁ না কিছু বলতে পারে না। ঘরে এসে সানোয়ার কে কল দিতে থাকে সে কল ধরেনা একদিকে বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসছে।

বিয়ের তিন দিন আগে মৌমিতা জানতে পারে সানোয়ার বিয়ে করে নতুন বউ নিয়ে আসছে তখন তার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে দৌড়ে চলে যায় সানোয়ারের কাছে কান্না করতে করতে বলে কেন করলে এমন?

সেদিন তিনি জানিয়েছিলেন তার বাবা জোর করে বিয়ে দিয়েছেন তার কিছু করার ছিলো না। আসলে কথাটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ছিলো তার স্ত্রীর বাবা ছিলো চৌধুরীদের থেকে আরো সম্পদশালী সে দেখে বিয়ে করেন।
মৌমিতা ফিরে আসে বাড়ি তার অবস্থা পাগল মতো দেখে মিজানুর চৌধুরী জিজ্ঞেস করেন,

‘কি হয়েছে তোর?কিছু বলার আগে মেঝেতে পড়ে যায় মৌমিতা মিজানুর চৌধুরী দৌড়ে আসেন চোখে মুখে পানি দিয়েও জ্ঞান না ফিরলে ফোন করে ডাক্টারকে আসছে বলেন।

ডাক্তার আসার পর জানান মৌমিতা মা হতে চলেছে তার গর্ভে দুই মাসের বাচ্চা রয়েছে। একথা শুনে মিজানুর চৌধুরী চমকে ওঠেন পাশে ছিলেন রশিদ মির্জা ও রাইসুল মির্জা।
জ্ঞান৷ ফিরে মৌমিতাকে সব জানানো হয় তাকে জিজ্ঞেস করা হয় কার এই সন্তান?
সে কিছু বলেনা শুধু চোখের পানি ফেলতে থাকে।
রাগে বোনের গায়ে হাত তুললেও তিনি বলেন
নাম বলতে পারবে না এমন সিদ্ধান্তে নিবিড়।

মিজানুর চৌধুরী কি করবেন বুঝতে পারে না লোক জানা জানি হলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।

শেষে মিজানুর চৌধুরী রশিদ মির্জা ও রাইসুল মির্জা ডেকে রশিদ মির্জার কাছে হাত ধরে অনুরোধ করেন তার বোনকে বাঁচাতে বিয়ে করতে বাচ্চাটা তারা মানুষ করবে এডোপ নিয়েছে বলে। রাইসুল রাজি হলেও রশিদ মির্জা রাজি হয় না ওঠে দাঁড়ায় বলে,

‘না আমি মানবো না মির্জা বাড়ির ঐতিহ্য আছে সেটা কিছুতে ভাঙতে পারবো না। আপনার বোনের মতো মেয়েকে মির্জা বাড়ির বউ কিছুতেই করতে পারবো না বলে রশিদ মির্জা নিজের ভাইকে নিয়ে বেরিয়ে আসেন।

সেসব কথা মৌমিতা শুনে নিজের রুমে গিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন।
তার পর থেকে শুরু মির্জা বাড়ি আর চৌধুরী বাড়ির শত্রুতা মিজানুর চৌধুরী মনে করেন তার বোনের মৃত্যুর জন্য রশিদ মির্জার প্রতাখান দ্বায়ী।

এতোক্ষণের বলা সব কথা শুনছেন মিজানুর চৌধুরী তাকে রোহান এনেছে রিশাদ আনতে বলেছিলো। মিজানুর চৌধুরী দরজার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন পুরোনো কথা শুনে চোখের কোনো পানি আসে।

সাদিবকে মারতে থাকলেই পুলিশ অফিসার ও কনস্টেবল গিয়ে রিশাদ কে থামায়।
ওর মধ্যে প্রতিশোধের আগুন জ্বলছে বাবাকে হারানোর ব্যথা কি তা ওর মন জানে ইচ্ছে করছে সাদিব আর ওর বাবাকে খু*ন করতে পারলে আগুন নিভে যাবে কিন্তু পুলিশরা তা করতে দেয় না নিয়ে যায় থানায়।

রাইসুল মির্জা এবার সামনে আসে মিজানুর চৌধুরী সামনে দাঁড়িয়ে বলে,

‘আপনার বোনকে আমি পছন্দ করতাম কিন্তু সে ভালোবাসতো এই লোভী পশুটাকে আর তার নাম কাউকে না বলার কারণ এই সানোয়ার তাকে কসম দিয়েছিলো তাকে না জানিয়ে কাউকে না বলতে সেজন্য কাউকে বলেনি। সেদিন যদি ভাইয়া রাজি হতো তবুও আপনার বোন আমাকে বিয়ে করতো না অথচ তার মৃত্যুর জন্য ভাইয়াকে দোষী ভেবে শত্রু ভাবতেন।

এখন প্রশ্ন থাকতে পারে আমি কিভাবে জানলাম।

‘আমি সেদিন মৌমিতাকে দৌড়ে সানোয়ারদের বাড়ি যেতে দেখে পিছু নেই তখন সব জানতে পারি মৌমিতাকে জিজ্ঞেস করলে ও সব শিকার করে এবং আমার থেকে কথা নেয় আমিও যেন সানোয়ারের কথা কাউকে না বলি সে ভালো থাক।
কিন্তু আজ বলতে বাঁধ্য হলাম নিজের ভাইকে হারালাম এই জানোয়ারটার জন্য শেষ বারের মতো দেখতে পেলাম না সেই ১৫ বছর আগে সে ঘটনার পর চলে গেছিলাম আর আজ এসে দেখতে পেলাম না।

মিজানুর চৌধুরী শরীর কাঁপছে নিজের অবস্থান থেকে আরেক জায়গায় যেতে গেলে পড়ে যেতে চায় তবুও নিজেকে সামলে নেয় সানোয়ারের সামনে দাঁড়ায় ওর কলার ধরে বলে,

-কেন করলি এমন? তোর সম্পতির দরকার ছিলো সব দিতাম তোর জন্য আমার বোনকে হারিয়েছি।
আমার বোনের খুনির ছেলের সাথে কিনা আমার মেয়ের বিয়ে দিতে যাচ্ছিলাম।

সানোয়ার ঝটকা দিয়ে মিজানুর চৌধুরী কে ফেলে দেয়।
পুলিশের সাথে হুড়োহুড়ি করলে তাদের নিয়ে থানায় চলে
যায়।

সকলে চলে যায় মির্জা বাড়িতে মিজানুর চৌধুরী যায় বাড়ির পাশে রশিদ মির্জার কবরের কাছে গিয়ে মুনাজাত করে তার পর একা একা বলে,

-তোকে ভুল বুঝে থাকলাম কত বছর ক্ষমা চাওয়ার সুযোগটাও পেলাম না। সেদিন তোর জায়গায় আমি থাকলেও হয়তো সন্তান সম্ভবা মেয়েকে নিজের ভাইয়ের বউ করতাম না কিন্তু আমি বুঝিনি বোনের মৃত্যুতে তোকে দোষী ভেবে শেষ দেখাটা দেখতেও আসিনি পারলে ক্ষমা করে দিস।
মিজানুর চৌধুরী চোখ পানি রোহানকে আসতে দেখে সেটুকু মুছে নেয়। তার পর মির্জা বাড়ির ভিতরে যায় কতদিন পর পা রাখলো এই বাড়িতে চারপাশে তাকিয়ে দেখে আগে আসলে এখানে বসে রশিদ মির্জার সাথে কত গল্প করতো সেসব সামনে ভেসে ওঠছে কিন্তু আজ সে নেই সব স্মৃতি।

মির্জা বাড়িতে বসে আছে মিজানুর চৌধুরী পাশে রোহান ওপাশে রিশাদ আর রুহি দাঁড়িয়ে রাফিয়া হসপিটালের গেছে সাথে আকাশ ও আছে।

মিজানুর চৌধুরী ওঠে রিশাদের কাছে যায় হাত জোর করে বলে,

‘আমায় ক্ষমা করে দিও বাবা তোমাকে অনেক কিছু বলেঋি কত বকা দিয়েছি বেয়াদব ছেলে বলে আক্ষায়িত করেছি এজন্য আমার নিজের খারাপ লাগছে। তোমার বাবার কাছে ক্ষমা চাইতে পারিনি।

রিশাদ মিজানুর চৌধুরীর হাত ধরে বলে,

“না না আংকেল আমার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে না। এখানে কারো দোষ নাই সবই ভুল বোঝাবুঝির কারণে হয়েছে।

মিজানুর চৌধুরী রিশাদ কে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত রাখে তার পর পাশে তাকিয়ে নিজের মেয়েকে কাছে টেনে নেয় রুহি কান্না করে দেয়।

তুই ঠিকই বলেছিলি আমি শুনিনি আজ বুঝতে পারছি তোর কথা ঠিক রিশাদের মতো ছেলে আর কোথাও পেতাম না বলে রুহির হাত রিশাদের হাতে তুলে দেয় তার পর বলে,

‘এই যে নিজের হাতে মেয়েকে তোমার হাতে তুলে দিলাম কখনো হাত ছাড়িও না যদিও আমারর বিশ্বাস আছে আজ তৈরি হয়েছে তুমি কখনো আমার মেয়েকে ছাড়বে না।

____________

দুই মাস পর…….

আজ মির্জা বাড়ি আর চৌধুরী বাড়ি সেজেছে নতুন রূপে পুরো বাড়ি আলোয় আলোময় এতো সাজের কারণ রোহান আর রাফিয়ার বিয়ে আজ চারদিকে মানুষের ছড়াছড়ি বিয়ে বলে কথা।

সেদিনের পর রাশেদা মির্জা সুস্থ হয়ে বাড়ি আসেন প্রায় ১ মাস পর পুরোপুরি সুস্থ হয় এসে যখন শুনে নিজের স্বামী বেঁচে নেই তখন তিনি ভীষণ ভেঙে পড়েন রুহি রাফিয়া আর রিশাদ উনাকে বুঝিয়েছে তার পর মন খারাপ করে থাকে যা হয়েছে তা ফিরে আসবে না ভেবে সময়ের সাথে মেনে নেয়।

এই তো কয়েকদিন আগে রিশাদ নিজে মিজানুর চৌধুরী সাথে রোহান আর রাফিয়ার কথাটা জানান তার পর রাশেদা মির্জার সাথে কথা বলে বিয়ে ঠিক করে।

রাফিয়াকে বিয়ের জন্য সাজাচ্ছে পার্লারের মানুষ রুহি পাশে বসে দেখছে।

রাফিয়া তোকে শাড়িতে অনেক সুন্দর লাগছে আমার ভাই তোকে দেখলে হার্ট অ্যাটাক করবে। ওই যে বিভিন্ন ভিডিওতে দেখায় বউকে দেখে জামাই চোখ বন্ধ করে বুকে হাত দিয়ে পড়ে যায় ওইরকম রিয়াকশন দিবে।

রাফিয়া লজ্জায় রাঙা হাঁসি দেয় তার পর বলে,

তুই কখন সাজবি?

“আমার সাজ লাগবে না

‘সাজতে হবে বলে পার্লালের একজনকে বলে,
‘ আপু ওকে একটু সাজিয়ে দেন তো.।

রাফিয়ার সাথে রুহিকেও সাজানো হয় তবে রুহি শাড়ির সাথে সাধারণ ভাবে সাজে।

তিন কবুল বলে রোহান আর রাফিয়ার বিয়ে সম্পূর্ণ হয়।
এবার বিদায়ের পালা রাফিয়া তো কান্নাকাটি করে শেষ নিজের মা কে জড়িয়ে ধরে কান্না করছে পাশে দাঁড়িয়ে আছে রুহি আশে পাশে তাকিয়ে ভাইকে দেখতে পায় না রাফিয়ার দৃষ্টি দেখে রুহি রিশাদকে ডেকে আনে রাফিয়া ভাইকে পেয়ে আরো কান্না শুরু করে আজ বাবাকে ভীষণ মিস করছে বিদায় বেলায় বাবা নেই এই তো কিছুদিন আগে ছিলো বাবার কাছে কত বায়না করতো।

সবার থেকে বিদায় নিয়ে রাফিয়াকে নিয়ে রোহান গাড়িতে ওঠে ড্রাইভার গাড়ি স্টাট দেয়।
রোহান ওর চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,

-কাঁদছো কেন? মেকআপ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে পরে মানুষ বউ দেখতে এসে পেতনী ভেবে ভয় পাবে।

রাফিয়া কান্নার মাঝে হেঁসে ওঠে।
রোহান রাফিয়াকে হাঁসাতে এই কথাটা বলেছিলো।

‘সব সময় আপনার ফাজলামো করা লাগবে।

রোহান একদৃষ্টিতে রাফিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে ওর হাত দুটো বলে,

-এই যে পারমানেন্ট হাত ধরলাম আর ছাড়বোনা আগে ভয় পেতাম হারানোর আজ সে ভয় নেই কারণ পবিত্র বন্ধনে জড়িয়ে নিজের করে নিজেছি মরণ ছাড়া আলাদা হবো না।

রাফিয়া ও রোহান দুজনের চোখে মুখে আজ পূর্ণতার হাঁসি।
ভালোবাসায় পূর্ণতা পাওয়ার অনেক কঠিনশত ঝড় ঝাপটা পেরিয়ে এই আনন্দের পূর্ণতা পেয়েছে দুজন ভালোবাসার মানুষ।

রিশাদ এখনো গেটের সামনে দিয়ে রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে সবাই চলে গেছে রুহি ও ওর পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো
ওর ঘাড়ে হাত দিতে রিশাদ রুহির দিকে চায়।

“চলো আজকে রাস্তায় হাঁটতে যাই।

রুহি রিশাদের ইচ্ছেটা পূরণ করতে রাজি হয়ে যায় তার পর দুজনে বেরিয়ে পড়ে নির্জন রাস্তায় হাতে হাত রেখে হেঁটে চলেছে দুজন রাস্তায় মানুষ নেই তেমন একটা তবে মাঝে মধ্যে দু একটা রিকশা যাচ্ছে।
রাতের আকাশে চাঁদ ওঠেছে অন্ধকার রাস্তায় চাঁদের আলোয় হালকা আলোকিত রুহির মুখে চাঁদের আলো পড়েছে সেদিকে তাকিয়ে আছে রুহির সেদিকে খেয়াল নেই।

হঠাৎ রিশাদ বলে ওঠে,

তুমি কি আমার ক্লান্তি লগ্নের এক ফোঁটা বৃষ্টি হবে?
যে বৃষ্টির স্পর্শে, আমি ভিজে যাব,
তোমার কোমলতা গায়ে মেখে, আমি হারিয়ে ফেলব
সব শোক, সব ব্যথা—দুঃখ হয়ে যাবে স্মৃতি।

তুমি কি আমার একলা আকাশের, চাঁদ হবে?
যার আলোয় আমি হারিয়ে গিয়ে,
নিজেকে আবার খুঁজে পাব, তোমার আলোর মাঝে,
যে আলো আমাকে গন্তব্য দেখাবে, পথ হারাতে দেবেনা।

তুমি কি আমার নীরব রাত্রিতে, মন খারাপের সঙ্গী হবে?
যার কাছে আমি সব কথা খুলে বলব,
যে কথা বলা হয়নি, তাও বুঝে নেবে,
তোমার পাশে, এই রাতটা অন্ধকার হবেনা আর।

তুমি কি আমার তপ্ত দিনের একটুখানি সমীরণ হবে?
যার শীতল পরশে আমি প্রাণ ফিরে পাব,
তোমার স্পর্শে ক্লান্তি উড়ে যাবে,
আর আমি এক নতুন প্রাণের মতো জেগে উঠব।

রুহি রিশাদের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে পুরোটা শোনার পর সেও মুচকি হেঁসে বলে ওঠে।

আমি আপনার জন্য সব কিছু হতে রাজি আর আমি তো পুরোটাই আপনার আর আপনাতে মিশে থাকতে চাই আজীবন।

দুজনে তৃপ্তির হাঁসি হেঁসে হেঁটে চলে যায় নির্জন পথে।

_____সমাপ্ত _____