তুমি আমি দুজনে পর্ব-৫৩+৫৪

0
608

#তুমি_আমি_দুজনে
#লেখিকা_হুমাইরা_হাসান
পর্ব- ৫৩

-ফারিহা?

চলার গতি মন্থর হলো, পা দুটো থামালেও পিছু ফিরে তাকালো নাহ। সাদমান এগিয়ে গেলো কয়েক কদম, খানিক উশখুশ করে ভরাট গলার কণ্ঠের খাদ নামিয়ে বলল

-আব..বাসায় যাচ্ছিস?

-তো শ্বশুরবাড়ি তো নেই যে সেখানে যাব

বাজখাঁই গলায় বলল ফারিহা। সাদমান থতমত খেলো। কিন্তু বহিঃপ্রকাশ না করে খানিক জড়তা সমেত উশখুশ করে পকেট থেকে কতগুলো হাজার টাকার নোট বের করে ফারিহার সামনে ধরে বলল,

-আম্মু হসপিটালে থাকতে আমাকে টাকা ধার দিয়েছিলি, সেটা..

চমকপ্রদ চাহনিতে তাকাল ফারিহা, যেন চোখ থেকে অগ্নিবর্ষণ হবে। তার চেয়েও অধিক বেশি পীড়ন দেখতে পেল যেন সাদমান ফারিহার চোখে। এক মুহূর্তের জন্য ভেতর টা ধক করে উঠলো। থমকে গেলো সাদমান। কিন্তু পরমুহূর্তেই ফারিহার অভিব্যক্তি পরিবর্তন হয়ে গেলো। আশপাশে নজর বুলিয়ে যেন ধাতস্থ করলো নিজেকে। সাদমানের জড়াতাপূর্ণ দৃষ্টিতে চোখ রেখে বলল

-এই টাকা আমি নিতে পারব নাহ

-কেনো?

সাদমানকে পুরোপুরি তার বাক্য সম্পূর্ণ করতে না দিয়েই ফারিহা বলে উঠলো

-তোকে আমি টাকা দিয়েছিলাম কবে? কম হলেও মাস খানেক? আর যখন দিয়েছি তখন তোর প্রয়োজনের সময় ছিল। তখন তোকে দেওয়া একশ টাকার ভ্যালিউ ও হাজার টাকার সমান। তাই আমি এভাবে নেব নাহ

পুরো কথা টাই সাদমানের মাথার উপর দিয়ে গেলো। কি দিয়ে কি বলছে কিছুই বুঝল না সে। বিভ্রান্তিকর চেহারা করে বলল

-মানে?

-মানে তোকে আমি পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছি। ইন্টারেস্ট সহ চাই আমার। দিন প্রতি ইন্টারেস্ট এ্যাড করে তবে দিতে আসবি। আর হ্যাঁ দিন প্রতি বাড়তে থাকবে অ্যামাউন্ট। এক চুল ছাড় দেব নাহ,মাইন্ড ইট!

বলেই হনহন করে হাঁটা ধরলো ফারিহা। সাদমান ওর যাওয়ার পানে কিছুক্ষণ থ মেরে দাঁড়িয়ে থেকে ব্যাপারটা উপলব্ধি করতে করতেই ফারিহা বেশ অনেকক্ষানি দূরে চলে গেছে।

-ফারিহা, দারা?

সাদমান উচ্চস্বরে পেছন থেকে ডাকল ফারিহাকে। ফারিহা একবার তাকিয়েই মুখ ফিরিয়ে নিলো। রিকশা থামিয়ে তাতে উঠে নিমিষেই দৃষ্টি সীমানার বাহিরে চলে গেলো
সাদমান চলার দুরন্ত গতি থামালো,বড় বড় শ্বাস ফেলে স্থির দাঁড়িয়ে দেখল ফারিহার চলে যাওয়া। বুকের ভেতরে আচানক চিনচিন ব্যথার আবির্ভাব স্পষ্ট টের পেলো সে। হৃদবক্ষের প্রদাহ টা যেনো ক্রমেই ছড়াচ্ছে সর্বাঙ্গে। বারবার পলক ঝাপটালো। ঘাড়ের পেছনে হাত দিয়ে এদিক ওদিক ঘুরালো

-নাহ, যেই দেওয়াল আমি সর্বাত্মক চেষ্টায় গড়েছি,সেটা ভাঙতে পারে না। এটা অন্যায়! যা কিছু হোক,আমি কিছুতেই এরূপ ধৃষ্টতা দেখাতে পারিনা

আপনমনেই বিড়বিড়ালো সাদমান। হাতের টাকা গুলো মুষ্টিবদ্ধ হাতে মুছড়ে গেলো। এক পা এক পা করে পিছিয়ে গেলো দৃষ্টি সামনেরই স্থির রেখে। এক সময় পিছু ঘুরে হাঁটা ধরলো, চশমা খুলে ঝাপসা হওয়া চোখ ডলে নিলো, হয়তো রাস্তায় বিচরিত ধুলোবালি মুছতে,হয়তোবা অবাধ্য আবেগ!

•••••

দুপুরে লোক সমাগমে ভরা বাড়িটা, গুনগুন গল্পের কলরব, খিলখিলানি হাসি আর রান্নার মো মো গন্ধে মুখরিত বাড়ির উৎসবমুখর ব্যস্ত পরিবেশটা।

বৃত্তাকার আকৃতি নকশার বাড়িটার একদম মাঝখানে উঠোন। তার একদম মাঝ বরাবর মাদুর, পাটি বিছিয়ে বসেছে রুহি জায়মা,তনু,তুরা সহ সকলে। হাতে হাতে গায়ে হলুদের ডালা, ত্বত্ত্ব সাজাতে ব্যস্ত সকলে। শাড়ি,গহনা,ফুল আরও নানা রকমের ব্যাবহার্য সামগ্রিতে সাজানো বর্গাকার,গোলাকার ডালা গুলোতে একে একে রঙিন ফিতা দিয়ে বেঁধে রাখছে সবাই

-আহ্ শুধু মানুষের বিয়ে দেখেই গেলাম। কবে যে নিজের বিয়ের ফুল ফুটবে আর সেই ফুল কানে তুলে আমি উড়াধুড়া লুঙ্গি ডান্স দেব

তনুর গায়ে হেলে পরে টেনে টেনে কথা গুলো বলল রুহি, তনু এক ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে রুহির বাহুতে চিমটি দিয়ে বলল

-নিজের বিয়েতে কে লুঙ্গি ডান্স দেয় বে? বিয়ে পাগলা হয়ে কি সব গুলিয়ে খেয়েছিস?

-আগে বিয়েটা হোক, পাবলিকে লুঙ্গি আর প্রাইভেটে অভদ্র প্রেম সব ডান্স দিব

বলে খিলখিল করে হেসে উঠলো রুহি, ওর কথা শুনে উপস্থিত সকলে হেসে দিল উচ্চস্বরে। তুরা চোখ রাঙিয়ে চুপ করতে বলে ইশারায় মিনু ফুফুকে দেখালো।

-চুপ কর তোমরা, এসব ফুফু আম্মা শুনলে প্রত্যেকটাকেই কান মলা খেতে হবে বুঝলে

ফুলের মালা গুলো সাজিয়ে রাখতে রাখতে বলল তুরা। রুহিও তুরার মতো করে গলার স্বর নামিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল

-কি করব বলো। আমাকে তো কেও একটু পরপর বউ বউ বলে ডেকে পাঠাই না তোমার উনির মতো। তাই একটু উনির শখ হচ্ছে আরকি।

আবারও আরেক দফা হেসে উঠলো সকলে। তুরা রুহির কথায় লজ্জা পেলেও হাসি থামিয়ে রাখতে পারল নাহ। এর মাঝে তনু এগিয়ে এসে বলল

-ফুয়াদ ভাইয়ার বউয়ের বয়স খুব বেশি নাহ। ওই আমাদের মতই হবে শুনলাম।এত বড় পরিবারে এসে সংসার গোছাতে পারবে তো

-কেনো পারবে না? তুরা কি পারেনি? ওউ তো বাপের এক মেয়েই,আদরের দুলারি তো ওউ ছিল। অল্প বয়সে বিয়ে, তাও হঠকারিতায়।ও কি মানিয়ে নেয়নি? এই তো লক্ষি মেয়ের মতো সংসার ও করছে,পড়াশোনাও করছে। না ওবাড়ির লোকের না আমার বাবুর কারোরই কোনো অভিযোগ নেই বউমাকে নিয়ে

মিনু এসে এক এক করে ডালা গুলো হাতে তুলে নিতে নিতে বলল। তুরা হাসলো স্মিত মিনুর কথায়। কিন্তু তার মাঝে ফোড়ন কেটে রুহি বলল

-হ্যাঁ তাই তো। আর তোমার বাবু অভিযোগ কি করবে সে তো বউকে দেখতে না পারলে এক ঘন্টায় ছয়বার ডাকে।

-সেটাই তো। তা ভাবিজান কি যাদু করিয়া দেওয়ানা বানাইলেন আমাদের প্রফেসর সাহেবকে একটু আমাদেরও বলুন

রুহির সুর ধরে তনুও বলল।তুরা বেশ শরম পেলো ওদের এহেন কথায়। তাও আবার বড়দের মাঝে। এর মাঝেই মিনুর জা অর্থাৎ সিয়াম,সায়মার মা এসে বলল

-হয়েছে, কখন থেকে মেয়েটাকে জালাচ্ছ তোমরা বলো তো। খুব দুষ্টু হয়েছ।ও কিন্তু সকলের বড় ভাবি, আর তুমিও বলিহারি দুটো বসিয়ে দাও এগুলোকে ঠিকই চুপ করে যাবে

তুরা জবাবে শুধু হাসলো। সকলে খোশগল্পতে মশগুল থাকলেও তুরার চোখ গেলো জায়মার দিকে। কাল এসে থেকেই লক্ষ্য করছে তুরা ব্যাপারটা,,মেয়েটা কেমন চুপচাপ থাকছে। কেমন একটা বিচলিত, অস্থির দেখাচ্ছে ওকে।
সকলের মাঝে থেকেও যেন নেই। ওর পায়ের দিকে তাকাতেই তড়িৎ চমকপ্রদ চাহনি দিল তুরা,বিস্ফোরিত চাহনিতে তাকাল ওর পায়ের দিকে, জায়মার দিকে চেয়ে দেখল ও আনমনা হয়ে একটা গাঁদা ফুল হাতে নিয়ে পাপড়ি ছিড়ছে একটা একটা করে। তুরা এগিয়ে কিছু বলবে তার আগেই বাড়ির চৌহদ্দি থেকে ছেলে গুলোর কণ্ঠস্বর ভেসে আসতেই সেদিকে চোখ গেলো। সকাল বেলা করেই সব ছেলেগুলো একসাথে বেড়িয়েছিল বাজার করতে, সন্ধ্যায় ই ফুয়াদের গায়ে হলুদ। সেই সুবাদে বাজারে গেছিল সব ছেলেরা, আহান তো গেছিলই সাথে মাহিদ ও বাদ যায়নি

বাজারের ব্যাগ গুলো রেখেই তড়িঘড়ি করে ঘরে ঢুকলো আহান। সকালে গোসল করেই বেড়িয়েছিল কিন্তু এমন ঠান্ডা আবহাওয়াতেও ঘেমে গেছে বাজারের ভীড়ে। ওয়াশরুমে ঢুকে হাত পা ধুয়ে চোখে মুখে পানি দিয়ে বেরলো।
ওয়াশরুম থেকে বেরিয়েই দেখল তুরা দাঁড়িয়ে, হাতে শরবতের গ্লাস। তোয়ালে টা হাতে নিতে গিয়েও নিলো না আহান, চোখ মুদে তাকালো তুরার দিকে।
পরনে গোলাপি রঙের একটা পাতলা সুতির শাড়ি। হুট করেই আহান উপলব্ধি করল,তুরা আর সেই কিশোরীদের মতো দেখতে নেই, তার চেহারায় কেমন পরিপূর্ণতার ছাপ পরেছে, গায়ের গড়ন চেহারার উজ্জ্বলতার বৃদ্ধি সব মিলিয়ে তাকে দেখলে বউ বউ লাগে,আহানের বউ! ধক করে উঠলো আহানের হৃদয়স্থল। এক পা এক পা করে এগিয়ে গেলো, তবে এবার তুরা নিজেও এগিয়ে এলো। মাঝামাঝি দূরত্ব ঘুচিয়ে বা হাতে শাড়ির আঁচল তুলে আহানের কপাল মুছে দিতে দিতে বলল

-বাজার করার অভ্যাস তো নেই, নিশ্চয় ক্লান্ত হয়ে পরেছেন। আপনি শরবত খান আমি খাবার আনছি

আহান প্রত্যুত্তর করলো নাহ। তুরাত হাত সমেত গ্লাসটা ধরে মুখে নিয়ে ঢকঢক করে অর্ধেকটা শরবত খেয়ে বাকিটা তুরার মুখের সামনে ধরলো

-এটা আমি আপনার জন্য এনেছি। আমাকে দিচ্ছেন কেনো

-চুপ, খাও চুপচাপ

বলে তুরা না চাইতেও জোর করে খাইয়ে দিলো আহান। গ্লাসটা পাশে রেখে দুহাতে তুরার কোমর বন্ধনে জড়িয়ে বলল

-স্বামীর সাথে শেয়ার করে খেলে পেয়ার মহব্বত বাড়ে,জানো নাহ?

পরক্ষণেই আবারও নিজেই বলল

-অবশ্য জানবেও বা কি করে, এখন তো আর আমাকে আগের মতো স্বামী স্বামী ও বলো নাহ
আমাকে তো চোখেই পরেনা তোমার

আহানের মেকি অভিমান মিশ্রিত মুখ দেখে হাসলো তুরা। হাত তুলে চিকন আঙুল গুলো চালিয়ে দিলো আহানের কপালে লেপ্টে থাকা ভেজা চুলগুলোতে। নরম গলায় বলল

-আগে তো আমার স্বামীর মনেই থাকত না যে তার একটা বউ আছে,তাই বারবার ডেকে মনে করিয়ে দিতাম। এখন তো আর ভুলে যায়না তাই বারবার মনেও করিয়ে দিতে হয়না

আহান এগিয়ে এসে তুরার ললাটে অধর স্পর্শ করালো। বেশ খানিক সময় নিয়ে ঠোঁট দুটো চেপে ধরে রাখলো তুরার কপালে, পরম যত্নে ছোট্ট আদর দিয়ে তুরার গালে হাত রেখে বলল

-কি করব বলো,বউ আমায় এমন প্রেমে ফেলেছে যে বউ ছাড়া আর ভালই লাগে নাহ

ফিক করে হেসে দিলো তুরা, সাথে আহানও। আনন্দ আবেগে আপ্লুত হয়ে জড়িয়ে ধরলো তুরা আহানকে। বুকের মাঝে মাথাটা চেপে আঁকড়ে ধরলো পিঠ। আহানও দু’হাতে আগলে নিবে তখনই

-এইই সরি সরি সরি,,রং টাইমে এন্ট্রি করে ফেলেছি। কিন্তু আমি কিছুই দেখিনি হ্যাঁ? খালামনি ডাকছিল তোমাদের রোমান্স শেষ হলে চলে এসো

বলেই ঝড়ের বেগে এসে হাওয়ার বেগে উধাও হয়ে গেলো। তুরা মুখ তুলে চেহারাটা দেখার আগেই দৌড়ে চলে গেছে তনু। ভীষণ লজ্জা পেলো তুরা এহেন কান্ডে

-এ বাড়িতে এসে একটু বউকে আদর ও করতে পারিনা ছাতা। চুমু দিতে গেলে এ চলে আসে জড়িয়ে ধরলে ও চলে আসে। এভাবে চলতে দেওয়া যাবে না, তা না হলে হাবা আর গোবা আসবে কি করে বলোতো বউ

গাল ফুলিয়ে বলল আহান। তুরা হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো আহানের দিকে। লোকটা দিনদিন পাগল হয়ে যাচ্ছে, এর সামনেই থাকা যাবে নাহ। তাই কিছু না বলেই এক ছুটে বেড়িয়ে গেলো তুরা

•••

-কি হয়েছে, দরজা খুলবি তো! না হলে কি হয়েছে জানবো কি করে বলো তো?

-এই আপু দরজা খুলছিস না কেনো? কি হয়েছে বল নাহ

রিমঝিম আর তার মা অনিতা অনেকক্ষণ ধরে দরজা ধাক্কিয়ে যাচ্ছে ফারিহার ঘরের। খোলার নাম ও নিশান নেই মেয়েটার। দরজা খোলা তো দূর সাড়া পর্যন্ত দিচ্ছে নাহ। এ পর্যায়ে এসে অনিতার বেশ দুশ্চিন্তা হলো। বদ্ধ ঘরের ভেতর কোনো বিপদ হলো নাহ তো? মেয়েটা অসুস্থ হয়ে যায়নি তো?
ভাবতেই আতংকিত হয়ে আরও জোরে কড়াঘাত করল দরজায়

-ফারু, মা খোল না দরজাটা। ছোট মা কে বল কি হয়েছে? সারাদিন খাসনি অসুস্থ হয়ে যাবি তো

-কি হয়েছে অনিতা?

ফিরোজ ইসলামের গলা শুনে ঘুরে তাকালো অনিতা। সবেমাত্র ফিরেছেন ফিরোজ অফিস থেকে, হাতের ব্যাগটাও এখনো রাখেনি। পায়ের জুতো খুলে এগিয়ে এলো ফিরোজ। অনিতার চোখে মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ দেখে ঘন ভ্রু যুগল আরও কুঞ্চিত হলো তার।

-দেখুন না ভাই। কখন থেকে ডাকছি, দরজা খোলা তো দূর কথা অব্দি বলছে না মেয়েটা। কি হয়েছে কিছু তো বলবে। দুপুরের আগে বাড়ি এসে দরজা লাগিয়েছে,বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেছে অথচ বেরোবার নাম নেই।

অনিতার বিরতিহীন কথাগুলো শুনে ললাটের ভাঁজ তীব্র থেকে তীব্রতর হলো ফিরোজ ইসলামের। হাতের অফিস ব্যাগটা রিমঝিমের হাতে ধরিয়ে দিয়ে দরজাতে তিনটে টোকা দিলেন। নরম গলায় বললেন

-ফারু, কি হয়েছে মা। দরজা কেনো খুলছিস না দেখ বাবা এসেছি

ফিরোজ সাহেবের কথার শেষ হওয়ার মিনিট খানেকের মধ্যেই খুলে গেলো দরজা। অনিতা বেগম চিন্তিত হয়ে ঘরের ভেতরে তাকাতে দেখল ভার্সিটি থেকে এসে জামাটা অব্দি পাল্টাইনি। চুলগুলো এলোমেলো, চোখ দু’টোও কেমন ফোলা ফোলা

-ফারু কি হয়েছে তোর? এ অবস্থা কেনো?

জবাব না দিয়েই ঘরের ভেতর চলে গেলো ফারিহা। ফিরোজ চোখের ইশারায় অনিতাকে আস্বস্ত করলেন। নিজে ব্যাপারটা সামলে নেবে বলে ভেতরে গেলেন।ফারিহা চোখ মুখ কুচকে খাটের কোণায় বসে আছে, ভদ্রলোক এগিয়ে গিয়ে বসলো পাশে, ফারিহার মাথায় হাত রেখে বললেন

-কি হয়েছে বল তো মা। কিসের জন্যে এত আপসেট তুই। কে তোকে রাগিয়েছে শুধু বল আজ তার একদিন কি আমার একদিন

ভীষণ প্রত্যাশিত বাবার এতটুকু আদরেই মিইয়ে গেলো মেয়ের মন। ঝট করে জড়িয়ে ধরলো বাবাকে,ফুঁপিয়ে কেঁদে দিয়ে বলল

-ও খুব খারাপ বাবা, আমাকে কষ্ট দিয়েছে। ও আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে

কপালে বলিরেখার ভাঁজ পরলো অসংখ্য, তবুও শান্তকণ্ঠে বললেন

-কে কষ্ট দিয়েছে তোকে? ওই ভদ্দরলোকের ছা? চশমা পড়া চেঙ্গিস টা তোকে বকেছে?

ধপ করে উঠে বসলো ফারিহা। বাবার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বলল

-বাবা! আমি কিন্তু তোমার সাথেও কথা বলব নাহ

-আচ্ছা ঠিকাছে। আমি কিছুই বলছি নাহ,তুই বল তো কি বলেছে তোকে

ফারিহা চোখের পানি মুছলো গলার ওড়না দিয়ে। খানিক ধাতস্থ হয়ে বলতে আরম্ভ করলো।
পুরোটা শুনে ফিরোজ ইসলাম খানিক চুপ রইলো। পরমুহূর্তেই চেহারায় গুরুগম্ভীর ছাপটা গমগমে স্পষ্টরূপে প্রকাশ করে রাগান্বিত গলায় বলল

-বিটকেল টার সাহস দেখে অবাক হচ্ছি। ওর বুকের পাটা কত বড় হয়েছে যে আমার মেয়েকে কষ্ট দেয়,কাঁদায়। ওর হাড় আর মাংস আর আমি আলাদা করবো

-বাবা,,,আবারও বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু। তুমি যাও তো যাও। তোমার সাথে কথা বলাই উচিত হয়নি আমার।

চেঁচিয়ে উঠে বলল ফারিহা। ফিরোজ ইসলাম হাসলেন গা দুলিয়ে। বাবার হাসি যেনো রাগের আগুনে ঘি ঢালার কাজ করলো। আবারও উত্তেজিত হয়ে কিছু বলবে তার আগেই ফিরোজ বললেন

-ঠিকাছে মা আর বলছি নাহ। নিজে যখন চৌদ্দ গুষ্টির নাম তুলে আনে তখন কিছু নাহ। আমি বললেই দোষ,ভালো এখনতো বাবা কিছুই নাহ

ফারিহা আবারও তেঁতে গেলো।তবুও অসহায় গলায় বলল

-তুমি অন্তত এমন বলো না বাবা। আমার মা বাবা দুজনই তো তুমি।

এক হাতে জড়িয়ে ধরলেন মেয়েকে। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল

-তুই ই তো আমার সব মা। তোর মা ছেড়ে যাবার পর তোকে নিয়েই তো বেঁচে আছি। তোর চোখে পানি আমি একদম সহ্য করতে পারবো নাহ। আমি কালই যাব। তুই আর একটুও মন খারাপ করবি নাহ। এখন চল তো, ছোট মা পুডিং বানিয়েছে তোর জন্য,রিমঝিম ও তোকে ছাড়া খাবেনা বলছে। এখন শিগগিরি উঠে ফ্রেশ হয়ে আই কেমন?

ফারিহাও লক্ষি মেয়ের মতো বাবার কথায় মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো। ফিরোজ ইসলাম উঠে গেলে ফারিহাও ওয়াশরুমের দিকে গেল ফ্রেশ হতে।

•••

রাত প্রায় সাড়ে বারোটা, গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে প্রায় এগারোটা বেজেছিল। খাওয়া দাওয়া গোছ গোছানো সকল পর্ব সেরে ঘরে যেতেই সকলে ঘুম। সারাদিন ভীষণ ব্যস্ততা আর ধকলের উপর কাটায় ক্লান্ত শরীরে ঘরে যেতেই সকলে ঘুমিয়ে গেছে।
তুরা ঘরে এসে শাড়ি পালটে নিলো, গালে মুখে হলুদ মেখে ছিল অনেকখানি। রুহি আর জায়মা তাকে ভূত বানিয়ে ফেলেছে পুরো। তাই বাধ্য হয়েই রাত বারোটায় ও তাকে গোসল করতে হলো। আহান অবশ্য ঘরে এসেই গোসল করে নিয়েছে, প্রফেসর সাহেবের একটু কিছু গায়ে লাগতে না লাগতেই গোসল করা লাগে, রোজকার নিয়ম।
গোসল সেড়ে অন্য একটা সুতির শাড়ি পরে বেরোলো তুরা। শাড়ি পরতে না চাইলেও পরতেই হবে। কারণ আসার সময় মা দিদুন ব্যাগ ভর্তি শাড়ি দিয়েছে, এখানে আসার পর মিনুও তাকে উপহার স্বরূপ তিনটে শাড়ি দিয়েছে। সালোয়ার কামিজ ও আনা হয়নি।
আধভেজা গায়ে বেগুনি রঙের শাড়িটা কোনোমতে জড়িয়ে বেরিয়ে এলো তুরা, আহান খাটে শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে। চুল মুছতে মুছতে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো তুরা। তোয়ালেটা চেয়ারের ওপর মেলে দিয়ে খাটে বসলে আহান এগিয়ে এসে থপ করে তুরার কোলে মাথা রেখে পেট জড়িয়ে ধরলো। ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বলল

-একটু চুলগুলো টেনে দাওনা,মাথা ব্যাথা করছে ভীষণ।

তুরা দ্বিমত না করে চুপচাপ শীতল হাতের স্পর্শে আহানের চুলে হাত গলিয়ে দিলো। বেশ অনেকখানি সময় ধরে চুল টেনে দিয়ে খেয়াল করলো আহানের নিঃশ্বাস ঘন হয়ে এসেছে।
কাছে এসে দেখল আহান সত্যিই ঘুমিয়ে গেছে। কোল থেকে মাথা টা তুলে খুব সাবধানে যত্নসহকারে বালিশে রাখলো যাতে আহানের ঘুম না ভাঙে।
ঘুমন্ত আহানের মায়া ভরা মুখটা খানিক তাকিয়ে থেকে ললাটে ছোট একটা চুম্বন এঁকে দিয়ে সরে এলো। ঘরে পানির জগটা হাতে নিয়ে দেখল তাতে পানি নেই। রাতে মাঝে মাঝেই ঘুম ভেঙে উঠে আহানের পানি খাওয়ার অভ্যাস আছে। তাই দরজা ভিড়িয়ে জগটা নিয়ে বেরোলো রান্নাঘরের দিকে।
পুরো বাড়ি জুড়ে পৌড়বাড়ির নিঃস্তব্ধতা। অদূর থেকে চলা যানবাহনের শব্দ আর ঝিঁঝি পোকার ডাক ছাড়া সামান্যতম শব্দের অস্তিত্ব নেই।
তুরা ও কোনো রকম শব্দ ছাড়া ধীর পায়ে রান্নাঘরের দিকে এগোতে লাগলো। হুট করেই অস্পষ্ট কিছু শব্দের উপস্থিতি কানে আসতেই হাঁটা থামিয়ে দাঁড়ালো তুরা। সজাগ কানে বুঝতে চেষ্টা করলো।
নাহ এটা তার মনের ভুল না স্পষ্ট শুনতে পেয়েছে সে কারো ফিসফিসানির শব্দ। পা টিপে টিপে এগোতে লাগলো রান্নাঘরের পাশের ঘরের দিকটাতে যেদিক থেকে শব্দটা আসছে, ধপ করে কিছু পরার শব্দ হলো আচানক, খুব শীঘ্রই তা মিলিয়েও গেলো।

-কি করছ টা কি?কেও টের পেয়ে যাবে তো?

-আরে আমি খেয়াল করিনাই অন্ধকারে। তুমি আগে বলো এত রাতে কেনো ডেকেছ কেও দেখে ফেললে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে

পুরুষ কণ্ঠের ফিসফিসানি টা আবারও শোনা গেলো। চাপা গলায় বলল

-সে এমনিতেও টের পেয়েই যাবে সকলে। সব তোমার দোষ! তুমি আমাকে আগে কেনো বলোনি যে আহান তোমার মামাতো ভাই হয়

-আরে আমি কি করে জানব তুমি আহান ভাইয়ের ই শ্যালক হবে। তুমিই কি আমাকে বলেছিলে তুমি তুরা ভাবির ভাই হও?

-আমার মাথায় কি জট আছে যে আমি দিব্যদৃষ্টি দিয়ে জেনে যাব তুমি তুরার ননদ।

-তো আমার মাথায় কি জ্বিন আছে যে কানে কানে বলে যাবে তুমি আহান ভাইয়ের শ্যালক

দুজনের চাপা স্বরের ঝগড়া চলতেই আছে। একজন আরেক জনের উপরে দোষ চাপাতে ব্যস্ত তখনি শোনা গেলো আরেকটা কণ্ঠস্বর

-ইয়াজ ভাই! জায়মা! তোমরা..তোমরা দুজন??

অত্যন্ত শান্ত কণ্ঠের গলা শুনেও যেনো মাহিদের মাথায় বাজ পড়লো। চমকিত দৃষ্টিতে তাকালো জায়মাও। দুজনে হতবিহ্বলতার শীর্ষে। একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করে আবারও তাকালো তুরার দিকে।
উঠান থেকে আসা হলুদ লাইটের আলোতে তুরার বিস্মিত, চমকতৃত চেহারা স্পষ্ট।

-তোমরা দুজন!!
.
.
.
চলবে ইনশাআল্লাহ

#তুমি_আমি_দুজনে
#লেখিকা_হুমাইরা_হাসান
পর্ব- ৫৪

-ত্ তুরা ভাবি!

বিষম খাওয়ার মতো করে তুতলিয়ে বলল জায়মা। তুরা সেদিকে লক্ষ্য না দিয়ে মন্থর গতিতে এগিয়ে গেল মাহিদের দিকে। মাঝামাঝি এক হাত সমান দূরত্ব রেখে দাঁড়িয়ে বিস্মিত নয়নে একবার জায়মা আর মাহিদের দিকে তাকাল। মাহিদ ইতস্তত হয়ে

-আ..আব্ বুড়ি?

-তোমরা কবে থেকে চেনো একে অপরকে?

মাহিদের কথা থামিয়ে প্রশ্ন করল তুরা, মাহিদের বেশ অস্বস্তি লাগছে ছোট বোনের সামনে এহেন অবস্থায় পরে। কিছু বলতে গিয়েও গুলিয়ে ফেলছে। খানিক অপ্রস্তুত হয়ে আমতা-আমতা করে বলল

-দেড়..দেড় বছর

চমকিত দৃষ্টিতে তাকালো তুরা, চোখে মুখে উপচে পরা বিস্ময়। জায়মার দিকে তাকিয়ে বলল

-ঠিক বলছে?

-হ্যাঁ, হ্যাঁ ভাবি

প্রচণ্ড জড়তা, বিভ্রান্তি নিয়ে বলল জায়মা। ভয়ে চিন্তায় হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে ওর। এখন যদি সব জানাজানি হয়ে যায় তাহলে কারো সামনে দাঁড়াতে পারবে নাহ। মিনু, ফুয়াদ আর আহান! আহান ভাই যদি জানে? বাবা মায়ের কানে যদি যায়?

-ভাই দেশে ফিরেছে ছয় মাস হয়েছে হয়তো,,পরিচয় পর্বটা এত আগে থেকেই?

জায়মার আকাশ কুসুম দুশ্চিন্তার তার কেটে তুরার আবারও প্রশ্ন।

-সোশিয়াল সাইট থেকে পরিচয়, তারপর আস্তে আস্তে বন্ধুত্ব আর..

-আর ভালোবাসা তাই তো?

সম্মতি সূচক ঘাড় নাড়ালো মাহিদ। তুরা দুহাত বুকে গুঁজে ভ্রু উচিয়ে তাকিয়ে আছে। আর মাহিদ আর জায়মা পড়া না করা স্টুডেন্ট এর মতো আসামী চেহারায় হাসফাস করছে। বেশ কিছুক্ষণ ওদের অস্থিরতা, অস্বস্থি অবলোকন করে, উদ্বিগ্নতা বাড়িয়ে দিয়ে হঠাৎ করেই নিরবতা ভেঙে হাহা করে হেসে উঠলো তুরা।
বিস্মিতরূপে তাকাল জায়মা আর মাহিদ তুরার দিকে। ও রীতিমতো পেটে খিল ধরা হাসি দিয়ে যাচ্ছে। হাসির শব্দ জোরে হতেই মুখে নিজ হাতে চেপে ধরলো, তবুও হেসেই যাচ্ছে
মাহিদ আর জায়মা একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে, হচ্ছে টা কি!

-এই,শোনো ভাবিকে ভূত টুত ধরলো নাকি

-হোয়াট,কি যা তা বলছ

-যা তা না,সত্যিই। ভাবি এভাবে একা একাই হাসছে কেনো তাহলে

মাহিদ নিজেও বিব্রতকর চেহারায় দাঁড়িয়ে আছে। আগামাথা কিছুই বুঝছে নাহ।
তুরা বহু কষ্টে হাসি দমিয়ে থামলো। ওদের দুজনের ভীত শঙ্কিত মুখ দেখে আবারও হাসি পাচ্ছে কিন্তু তবুও সেটা দমিয়ে বেশ ভাব ধরে বলল

-সেদিন সকাল বেলা মামনীকে কাজের বাহানা দিয়ে জায়মার সাথেই দেখা করতে গেছিলে তাই না ইয়াজ ভাই?

মাহিদ হতভম্বিত হয়ে ঘাড় নাড়িয়ে উত্তর দিলো। তুরা আবারও একই স্বরে বলল

-আর আমার ননদিনীকে নিয়েই সারাদিন গাড়িতে করে ঘুরেছ তাই তো?

-তোকে এসব কে বলেছে বুড়ি? তুই কি করে জানলি?

তুরা মুখাবয়ব গম্ভীর করলো। জায়মা আর মাহিদের দিকে তাকিয়ে বলতে আরম্ভ করলো

-সেদিন তোমাদের রেস্টুরেন্টের বাইরে থেকে আমি দেখেছিলাম,জায়মা উল্টো দিকে মুখ করে ছিল বলে ওর চেহারা দেখতে পাইনি। আবার শেষ পরীক্ষার দিন আমাকে বাড়িতে ড্রপ করে দিয়েছিলে তুমি,মাঝ রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে পানি আনতে গেছিলে মনে আছে? সেদিন আমি তোমার গাড়িতে একটা পায়েল দেখেছিলাম। তোমাকে সে ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞাসা করিনি তবে ওটা আমার কাছেই ছিল। আর এ বাড়িতে এসে থেকে তোমার আর জায়মার কারো অস্বস্তি, আর উশখুশ করা আমার চোখ এড়ায়নি। আজ দুপুরে জায়মার পায়ের পায়েল দেখেই আমার প্রবল সন্দেহ হয়েছিল,কারণ ওটা হুবহু সেই পায়েলের মতই।
তোমাকে পায়েলটার কথা জিজ্ঞাসা করেছিলাম মনে আছে? তুমি বললে আরেক পায়েরটা হারিয়ে গেছে?

জায়মাকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞাসা করলো তুরা,উত্তরে জায়মা শুধু ঘাড় উঠা নামা করিয়ে সম্মতি দিলো। তুরা আবারও বলল

-তখন তো কড়া সন্দেহ হয়েছিলই। গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে দুজনের চোখাচোখি ও এড়ায়নি আমার নজরে । আর এখন তো হাতে নাতে ধরলাম ই

এক দমে শেষ করে থামলো তুরা। মাহিদ আর জায়মা হা করে শুনলো তুরার সম্পূর্ণ কথাটা। তার মানে তুরা ইনডাইরেক্টলি সবটাই জানে শুরু থেকে!
মাহিদ কিঞ্চিৎ অবাক হলেও ভার গলায় বলল

-হাতে নাতে ধরা আবার কেমন কথা হলো। চুরি করেছি নাকি যে হাতে নাতে ধরেছিস

ভ্রু কুচকে মাহিদ বলল। তুরা তার উত্তরে ঝাঝালো গলায় মৃদু চেঁচিয়ে উঠে বলল

-তুমি তো মুখটা বন্ধই রাখো ভাইয়া। এক তো চোরের মতো প্রেম করেছ,দেখা করেছ। এখন ধরা
পরেও তোমার প্রেসটিজ কমেনা। বাড়ি আগে যাই দাঁড়াও, মামনীর কানে দেই,,চুরি করে প্রেম, দেখা সব বাহাদুরি ঘুচিয়ে দেবে খুন্তি পেটা করে

মাহিদ থতমত খেলো, তবুও এগিয়ে এসে তুরার হাত ধরে একটু এগিয়ে এনে ফিসফিসিয়ে বলল

-কি করছিস বোন, গার্লফ্রেন্ড হয় আমার! ওর সামনে একটু মান সম্মান দে। এমনেই তো সারাদিন নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরায়

-বেশ করে বেশ। তোমারই গার্লফ্রেন্ড, বেশ করেছে। তুমি আমাকেও বললে না ভাই! আমি এত পর হয়ে গেছি

শেষের কথাটা তীব্র আফসোস মিশিয়ে বলল তুরা। আহান তুরার গাল ধরে আদুরে গলায় বলল

-আহা,তুই না আমার বুড়ি। আমার ছোট বনু,ডল। তুই কেন পর হবি। আসলে আমার একটু হেজিটেশন হচ্ছিল তোকে বলতে, আর তাছাড়াও আমিতো জানতাম নাহ জায়মা তোর ননদ। ও আমি দুজনেই অজ্ঞাত ছিলাম এই আত্মীয়তার ব্যাপার টাই। প্রথমে ওকে এই বাড়িতে দেখে তো আমারই বিশ্বাস হয়নি,তোকে কিভাবে বলতাম

আড়চোখে তাকালো তুরা, মাহিদ মেকি হেসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল

-হেহে,তুই যা চাইবি দেব। বাট প্লিজ মায়ের কাছে পিন লাগাইস না বইন আমার

-দেখি সরো, তোমার আর কোনো কথাই শুনতে চাচ্ছি না

বলে মাহিদ কে সরিয়ে ঘুরে এসে জায়মার সামনে দাঁড়িয়ে বলল

-আর এই যে ননদিনী, ভালই তো ইটিস পিটিস করছ তলে তলে। এত কিছু বলো অথচ এইটুকু আমাকে বললে নাহ

-আম..ভাবি আসলে লং ডিস্টেন্স রিলেশনশিপ ছিল তো,আমি নিজেই তো দোটানায় ছিলাম কখন ছেকা মেকা দিয়ে চলে যায় নাকি। ওই সেদিন ই ওর সাথে আমার প্রথম সামনা-সামনি দেখা রেস্টুরেন্টে। আমি নিজেই সম্পর্ক টা নিয়ে ভয়ে ভয়ে ছিলাম

-আচ্ছা সেসব পরে দেখা যাবে। এখন তোমরা যে যার ঘরে যাও।এভাবে রাত বিরেতে চিপায় দাঁড়িয়ে ফুসুরফাসুর করতে শুনলে চোর ভেবে তক্তা পেটা করবে দুজনকেই

জায়মা ঘাড় নাড়িয়ে, একবার মাহিদের দিকে আড়চোখে তাকালো, তারপর এক ছুটে ঘর থেকে বেরিয়ে দৌড়ে রুমে চলে গেলো। মাহিদ ও আর দাঁড়ালো নাহ। তুরা পানি নিয়ে ঘরে গেলে সেও ফিরে গেলো।

•••

বেশ পুরাতন আমলের মতো দেখতে দোতালা বাড়িটা।নিচের তালা ভাড়া দেওয়া, দুই সন্তান সহ বাবা মায়ের একটা পরিবার থাকে। আর উপরের তালাতে ওরা তিনজন। মোট পাঁচটা ঘর উপরে। তিনটে শোবার ঘর,একটা রান্নাঘর আরেকটা স্টোর রুম হিসেবে ব্যবহৃত হয়তোবা।
ঘরে আসবাবপত্র খুব বেশি নেই, তবে যা আছে তা বেশ পুরোনো বলেই মনে হচ্ছে। কিন্তু সব গুলো জিনিসপত্রই দেখতে বেশ অন্যরকম, সৌখিনতার সাথেই যে সবগুলো বানানো তা স্পষ্ট।
অল্প কিছু আসবাবপত্রে সাজানো ঘরটা বেশ পরিপাটি করে গোছানো। বসার ঘরে একটা সিঙ্গেল আর একটা ডাবল সেটের কাঠের সোফা, তার সামনেই টি-টেবিল। সামনে টিভি, এক পাশে ফ্রিজ। সবকিছুতে নজর বুলিয়ে বুলিয়ে দেখছিলেন এর মাঝেই মাঝ বয়স্ক মহিলার কন্ঠস্বর কানে এলো

-ভাই সাহেব, গরীবের ঘরের এতটুকু আতিথেয়তা গ্রহণ করলে ভীষণ খুশি হবো

ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই, বাদামি রঙের সুতি শাড়ি পরিহিতা মাঝারি গড়নের মহিলাটিকে দেখতে পেল। চায়ের কাপ তুলে ফিরোজ ইসলামের সামনে ধরতেই উনি সাদরে গ্রহণ করলেন

-এমা সে কেমন কথা। আপনার ঘর দেখে তো আমারই হিংসে হচ্ছে। এত সুন্দর ঘর আর এত ভালো মানুষের বসবাস যেখানে তারা কি করে গরীব হয়।

বলেই চায়ের কাপে চুমুক দিলেন। পাশেই দাঁড়ানো ফ্রক পরনে চিকন শরীরের ছোট খাটো একটা মেয়ে। বয়স কতই বা,হয়তো সাত কি আট! ফিরোজ ইসলাম ইশারায় কাছে আসতে বললেন। মেয়েটি এগিয়ে এলে তার মাথায় হাত রেখে বললেন

-তোমার নাম কি মামনী?

-সুহানা ওয়াহিদ

-বাহ,খুব সুন্দর নাম তো, কোন ক্লাসে পড়ো তুমি?

-ক্লাস টু

-বাহ বাহ,কোন স্কুলে মামনী?

-এই পাশেরই একটা স্কুলে পড়াই। ছোট তো বেশি দূর যেতে পারে নাহ। আর আমিও তো হাটা চলা তেমন করতে পারিনা

সায়েরা বেগম উত্তর করলেন। সুহানা তাদের কথার মাঝেই উঠে চলে গেলো। ফিরোজ ইসলাম চায়ের কাপটা রেখে স্পষ্ট গলায় বললেন

-আপা,সবটাই তো শুনলেন। ফারিহা বড্ড আদরের মেয়ে আমার, ওর মা মারা যাওয়ার পর সেই ছোট্ট থেকে নিজে বাবা মায়ের আদরে মানুষ করেছি ওকে। কখনো কোনো ইচ্ছেই অপূর্ণ রাখিনি। সবসময় বন্ধুর মতই সম্পর্ক ওর আর আমার। তাই তো কোনো কিছুই আমার থেকে গোপন করেনি ও। আপনি সাদমানের মা,আমি যতই বলি সবার আগে আপনার অনুমতিটাই প্রয়োজন। সম্পর্ক তো শুধু দুটো মানুষে নাহ। দুটো মন,দুটো পরিবারেও, এ ব্যাপারে আপনার সহমত আমার একান্তই প্রয়োজন আপা

সবিনয়ে বললেন ফিরোজ, সায়েরা বেগম সবটা শুনে তার নরম গলার স্বরে জবাব দিলো

-আমার কাছে আমার ছেলে মেয়ের খুশির চেয়ে বেশি কিছুই নেই ভাই। ওর বাবা গত হওয়ার পর থেকে ছেলেটা আমার নিজের উপর সমস্ত দ্বায়িত্ব নিয়ে সংসার সামলে যাচ্ছে। আপনার মেয়ে রাজরানীর মতো মানুষ হয়েছে আমাদের মধ্যবিত্ত পরিবারে কি সে খুশি হতে পারবে?

-কেনো পারব না আন্টি? আমি তো বেশি খাইনা, দু বেলা ভাত আর এক বেলা রুটি দিলেই হবে। আপনারা যেটুকু খাবেন ওখান থেকেই নাহয় দিয়েন

ফারিহা এসে বাবার পাশে বসতে বসতে বলল। ফিরোজ হাসলেন মেয়ের কথায়। সায়েরা হাসলেও পরমুহূর্তে মলিন গলায় বলল

-মারে, তোমার ওত ভালো বাড়ি গাড়ি ছেড়ে তুমি কি আর এখানে মানিয়ে থাকতে পারবে

-অবশ্যই পারব আন্টি। আর কে বলেছে এখানে কেও নেই। এই যে কত সুন্দর ঘর,বারান্দা, ছাদ। আর একটা মা আর বোন আছে তোহ! এর চেয়ে বেশি কি হতে পারে!

সায়েরা বেগমের হাতের উপর হাত রেখে বলল ফারিহা।

-আমাকে নিজের মেয়ে করে নিতে পারবেন না?

ভরা চোখে হাসলো সায়েরা বেগম। এক হাতে জড়িয়ে ধরলো ফারিহাকে।

-তোমার মতো লক্ষিকে আমার মেয়ে করতে পারার চেয়ে বেশি খুশির কি আছে বলো,কিন্তু

-আবার কেনো কিন্তু

-সাদমান? ও কি জানে?

সাদমানের নাম শুনতেই মুখ কালো করে ফেলল ফারিহা। চুপসে যাওয়া মুখে চুপ করে বসে রইলো।
/
সিড়ি বেয়ে ধুপধাপ পায়ে উপরে উঠছে, আজ রিমঝিমকে একটু তাড়াতাড়িই ছুটি দিয়েছে। পড়ানোর মন মানসিকতা আসছে নাহ। তার উপর সকাল করে ফারিহাকেও বাসায় পেলো নাহ,সব মিলিয়ে মেজাজ টা কেমন দুম ধরে আছে।
দরজা খুলে ঘরে ঢুকে কোনো দিকে না তাকিয়ে হনহন করে ঘরের দিকে যাচ্ছিল সাদমান

-সাদমান ওয়াহিদ?

চেনা একটি কন্ঠের ডাকে ঘুরে দাঁড়ালো সাদমান। নিজের ঘরে সোফাতে ফিরোজ ইসলামকে বসে থাকতে দেখে ভূত দেখার মতো চমকালো। দিনে দুপুরে জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছে না তো?

-ফারিহার বাবা এসেছে তোর সাথে দেখা করতে

মায়ের কথায় ঘোর ভাংলো সাদমানের। মন্থর পায়ে এগিয়ে এসে সালাম দিলো ফিরোজ ইসলামকে। উনি উত্তর দিয়ে বললেন

-তেমন কিছু নাহ, তোমার বাড়ি একটু দেখতে ইচ্ছে হলো তাই এসে পরলাম, তুমি অসন্তুষ্ট হওনি তো?

হতবিহ্বল হয়ে ঘনঘন মাথা নাড়ালো সাদমান।

-না না, আপনি এসেছেন এটা তো অনেক ভালো কথা, আমি কেনো অসন্তুষ্ট হলাম। আমি তো ঝুমঝুমকে পড়াতে গেছিলাম। ওখানে আপনাকে দেখিনি, বাড়ি এসে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে আপনাকে দেখে একটু চমকে গেছি আরকি

-ব্যাপার নাহ, আগে ফ্রেশ হয়ে আসো, আজ তোমার সাথে ব্রেকফাস্ট করব।

সবকিছু মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে সাদমানের। কি দিয়ে কি হচ্ছে,কিছুই তো বুঝতে পারছে নাহ। তবুও মায়ের ইশারায় হতবুদ্ধির মতো মাথা নাড়িয়ে ঘরের ভেতর গেলো। ফোনটা পকেট থেকে বের করে আনমনা হয়ে শার্টের বোতাম খুলছিল

-আরে কি করছিস কি। মেয়ে মানুষের সামনে নির্লজ্জের মতো জামা কাপড় খুলছিস ক্যান

একের পর এক চমক পেয়ে সাদমান কথার খেই হারিয়ে ফেলেছে, হা করে তাকিয়ে আছে বারান্দার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ফারিহাকে দেখে। হচ্ছে টা কি, সকাল বেলা করে বাপ বেটি দুজনেই হাজির!

-হা করে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো। তোর বডি দেখতে আমি মোটেও ইন্টারেস্টেড নাহ। বোতাম লাগা

ফারিহার কাঠ কাঠ কথা শুনে সাদমান হড়বড়িয়ে বোতাম লাগালো শার্টের। বিব্রতকর চেহারা নিয়ে ওর কাছে এগিয়ে গিয়ে বলল

-কি হচ্ছে টা কি, তুই কি করছিস আমার ঘরে?

-আমার ইচ্ছা

-তোর ইচ্ছা মানে কি,এভাবে হুট করেই একটা ছেলের ঘরে ঢুকে বসে থাকতে পারিস না তুই

-আলবাৎ পারি, ফারিহা কি পারে কি না সেটা তোর থেকে শুনতে হবে নাহ। আমি টাকা পাই তোর কাছে আমাকে কথা শোনাবি নাহ

-তো তুই কি সকাল বেলা করে বাপসহ তাগাদা দিতে এসেছিস আমার বাড়ি?

-সে আমি যাই করতে আসি আমার ইচ্ছে।

বলেই থপ করে খাটের উপর বসে পরলো। সাদমানের দিকে তাকিয়ে বলল

-ভালই তো মেয়েবা’জি করে বেড়াস ইদানীং

-হোয়াট ননসেন্স, এসব কোন ধরণের কথা!

-যা সত্যি তাই তো বলছি, ওই ধিঙ্গি মেয়েটার সাথে তো ভালই আলাপ তোর প্রায় ই দেখি একসাথে

-হ্যাঁ তাই৷ এ্যানি প্রবলেম?

-উহু, যা খুশি করে বেড়া।আমিও যা মন তাই করব

বলেই সাদমানের টেবিলের উপর থেকে একটা ডায়রি হাতে নিয়ে খুলতে গেলেই খপ করে কেড়ে নিলো সাদমান। উত্তেজিত হয়ে বলল

-কারো পারসোনাল জিনিসে অনুমতি ছাড়া হাত দিতে নেই জানিস নাহ। ম্যানারলেস। বের হ আমার ঘর থেকে আমি চেঞ্জ করব

ফারিহা চোখ রাঙিয়ে উঠে দাঁড়ালো। টেবিলের উপরে রাখা বই খাতা এলোমেলো করে ছিটিয়ে খিটমিট করে বলল

-তোকে আমি দেখে নেবো ভদ্দরলোকের ছা

বলেই গজগজ করতে করতে বেড়িয়ে গেলো, সাদমান হা করে তাকিয়ে রইলো। কি হচ্ছে টা কি! এই মেয়ে কি পাগল হয়ে গেছে!

•••

আয়নার সামনে চরম বিরক্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তুরা, নিজের গলার কাছে দাগটা বারবার দেখছে আর কঠিন চাহনি দিয়ে তাকাচ্ছে আহানের দিকে। কিন্তু তাতে তার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই, আরামসে পায়ের উপর পা তুলে বসে কফির কাপে চুমুক দিচ্ছে।
এই অসময়ে কফি খাওয়ার মানে টা কিছুতেই বোঝে না তুরা, তবে সেটা নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় নেই এখন,তার চেয়েও বেশি চিন্তিত তুরা তার গলার দাগটা নিয়ে। এটা নিয়ে মানুষের সামনে যাবে কি করে

-এই আপনি মানুষ নাকি রাক্ষস, খেয়ে ফেলতে চান আমাকে? ঘুমের মধ্যে কি আমাকে আপনার চকলেট মনে হলো যে বাইট দিয়ে দিলেন

ঝাঝালো গলায় বলল তুরা,তবে তাতে আহানের কি! সে এমন একটা ভাব ধরে আছে যেন নিষ্পাপ শিশু,কিছুই যানেনা। হাতের কাপটা পাশে রাখতে রাখতে বলল

-মনে হওয়ার কি আছে, তুমি তো চকলেট ই। ছোট খাটো একটা চকলেট উইদ এক্সট্রা সুইটনেস

তরতর করে তুরার রাগ বেরে গেলো। এক তো ঘুমের মাঝে তুরার গলায় কামড় বসিয়ে দাগ করে দিয়েছে আবার বেপরোয়া কথাবার্তা। এখন এসব নিয়ে বেরবে কি করে তুরা। একটু পরেই সকলে বেরবে ফুয়াদের বউ আনতে। আর তুরা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে গলার দাগ ঢাকার ব্যর্থ প্রচেষ্টা করেই যাচ্ছে।
আহান উঠে দাঁড়ালো। সুটকেস থেকে নেভি ব্লু রঙের একটা পাঞ্জাবি বের করে সেটা পরে তুরার পেছনে এসে দাঁড়িয়ে চুলে হাত দিয়ে ব্যাক ব্রাশ করতে করতে বলল

-এত ঢাকাঢাকির কি আছে, ওভাবেই রাখো কেও দেখলে বলবে স্বামীর ভালোবাসার চিহ্ন। না তো এমনিতে যেই পিচ্চি তোমাকে দেখে যদি সিঙ্গেল ভেবে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসবে

আহানের অযাচিত কথা শুনে তুরা রীতিমতো বিরক্ত হচ্ছে। একটা লোক কতটা ঠোঁট কাটা হতে পারে, মিচকা শয়তান পুরো। আহানের কথায় কান না দিয়ে একটা চোকার নেকলেস গলায় পরে নিলো, নেভি ব্লু রঙের জরজেট শাড়ির সাথে সিলভার নেকলেস টাতে মন্দ লাগছে নাহ।
রেডি হয়ে বেরতে নিলেই আহান হাত ধরে বলল

-কোথায় যাচ্ছ

-কোথায় আবার সবাই যেদিকে যাচ্ছে

-তুমি আমার সাথে যাবে,চুপচাপ বসো

-আপনার সাথে যাব মানে কি। সবাই তো বেরচ্ছে পরে গাড়ি ছেড়ে দিলে যাব কিসে

বলে আবারও পা বাড়াতে নিলে খপ করে হাত ধরে ধমকে বলল

-বলছি না আমার সাথে যাবে। কথা শোনো না কেনো তুমি। কতগুলো ছেলে আছে ওদের সাথে যাওয়ার কোনো দরকার নেই

মুহুর্তেই মেজাজ গরম হয়ে গেলো? এই লোকটাকে কিছুতেই বুঝতে পারেনা তুরা, এই তো ভালো ছিলো। আবারও গোমড়ামুখো হলো। আহান আয়নার দিক থেকে ফিরে আবারও কিছু বলবে তুরা ফট করে আহানের ঠোঁটে আলতো ভাবে একটা চুমু দিয়ে দিলো, আহান বিস্মিত হয়ে গেলে তুরা ছোট করে বলল

-সরি, রেগে যাচ্ছেন কেনো

-এখন তো দেখছি কিছু বলাও যাবে নাহ, এই জন্য উইকনেস দেখাতে নেই,সবাই সুযোগ নেয়

একা একাই বিড়বিড় করতে করতে হাতের ঘড়িটা পরলো। আরও একবার চুলে আঙুল চালিয়ে বলল

-হু চলো এবার, আর হ্যাঁ ওখানে গিয়ে মুরব্বিদের সাথে সাথে থাকবা বেশি করে। ভাবি আর আন্টি টাইপ মহিলাদের আশেপাশেও ভিড়বে নাহ, ওরা এক একটা চলন্ত শাদি ডট কম। যেখানেই সুন্দরী মেয়ে দেখবে সেখানেই ওদের দেবর,ভাই,ছেলে,নাতনীর কথা মনে পরে যাবে।

বলে তুরার হাত ধরে বেরোলো। সকলে ইতিমধ্যে বেরিয়ে গেছে। বাড়িটা প্রায় ফাঁকা। হয়তো আহান বলেই রেখেছিলো আলাদা যাবে। তাই আর ডাকেনি
.
.
.
চলবে ইনশাআল্লাহ

#Humu_❤️