তুমি আসবে বলে পর্ব-২১+২২

0
390

#তুমি_আসবে_বলে
#হুমাইরা_হাসান
পর্ব- ২১

-দেখলি? এখন দেখলি তোহ আমি যা বলেছিলাম তাই ই,আমার কথা না হয় বিশ্বাস না করলি,শিমু যা বলছে তা তো ঠিক ওকে পালক নিজে বলেছে সব

-হ্যাঁ আমিও আরুর সাথে একমত

-তো এখন কি করবি বলছিস

আদ্রিশের কথায় গালে হাত দিয়ে কিছুক্ষণ ভেবে আরশি বলে

-আমাদের ওদের দুজন কে এক করতে হবে, শোন আজ তো এখানে দুজন ই উপস্থিত থাকবে আমার মাথা ঝাক্কাস একটা প্ল্যান আসছে

-এহ আইছে ঝাক্কাস প্ল্যান, তোর প্ল্যান যে তোর মতোই উটকো ঝামেলা আনবে তা সবাই জানি

-রাইফাইত্তা,দেখ মুড টা ভালো আছে বিগরাইস না ছেমরা। তোর মাথা থেকে তো আজাইরা গল্প আর খাওয়া বাদে কিছুই আসে নাহ

-আমার মাথা যাই আসুক,তোর মতো উড়নচণ্ডী টাইপ চিন্তাভাবনা আসে নাহ

-থামবি তোরা দুইডা? না তো দুইডারেই এখন লাল পানিতে চুবায়া রাখুম খাইসটার দল

নিবিড়ের ধমকে আরশি আর রাফাত ঝগড়া থামিয়ে চুপ করলো। নিবিড় আবারও বললো
-আরশি তুই বল কি প্ল্যানের কথা বলছিস

বলেই পাচ জনের গোলমিটিং ফুসুরফাসুর শুরু করলো। আসে পাশে নানান লোকজন, কিন্তু এদের সেদিকে খেয়াল নেই,পাচটা মাথা এক করে শুরু করেছে মিসন মি.সিরিয়াস আর মিস.আফু।

সময়টা সন্ধ্যা সাতটা প্রায়। চৌধুরী বাড়িতে পার্টির আমেজ শুরু হয়েছে, রমজান চৌধুরী আর ইবনাত হোসেনের কলিগ,ফ্রেন্ডস আত্মীয়রা উপস্থিত হচ্ছে। সারা বাড়ি টিমটিমে আলোয় ঝলমল করছে। আর বড়ো ঘরটাতে নানান ফুল আর ঝিকিমিকি আলো আর অভিযাত্যের ছোয়ায় অসম্ভব সুন্দর লাগছে।
বড়ো ঘরটার এক কোনায় ডিভানে পাচটা মিলে ফুসুরফাসুর করছে

নিবিড় মাথা উচিয়ে বলে
-প্ল্যান টা মন্দ নাহ,কিন্তু সেটা ঠিকভাবে কার্যকর করতে পারলেই হলো।

আদ্রিশ পাশ থেকে মাছি তাড়ানোর মতো হাত ঝামটে বলে
-আরে ওসব ভাবিস নে,আফুরানীর জন্য এইটুকু তো করাই যাই

আরশি সবগুলোকে থামিয়ে বললো
-সে করা যাবে,আপাতত ভাষন দিতে গিয়ে আমার গলা শুকিয়ে কাঠ, শিগগির কোল্ড ড্রিংকস খাওয়া।

-তোরা এক তো কিসব রিস্কি প্ল্যানিং করছিস,আবার খাওয়ার কথাও বলছিস, পালক এসবের কথা শুনলে একটাকেও আস্ত রাখবে নাহ, সেদিন থেকে ওর সামনে মেঘ ভাইয়ার নাম নিলেও চেতে যাই, আর আজ সকাল থেকে তো মেজাজ চারশো চল্লিশ ভোল্টের হয়ে আছে, অলরেডি তিনটি থা’প্পড় খাওয়া হয়ে গেছে আমার, তোরা যা খুশি কর আমি ভাই এসবে নাই

বলেই উঠতে নিলে শিমুর চু’ল টে’নে ধরে থপ করে বসিয়ে দেয় রাফাত
-তোরে এমন একটা ব’ম মা’রুম ছেমরি তোর এসব প্যানপ্যানানি মঙ্গলে যাইবো গা,চুপচাপ যেমন প্ল্যানিং হয়েছে তেমন মতো চলবি

রাফাতের সাথে আদ্রিশ বলে
-এক্সাক্টলি, আর আপাতত এখন আমাগো গলা ভিজানোর ব্যবস্থা কর যাহ

-আমিই??

-হ্যাঁ তুই না তো কে, শুধু তো বই নিয়ে চিত হয়ে থাকিস,না তো আক্কাইসার বউয়ের মতো ভেটকাইয়া ঘুমাই থাকোস,কোনো কাজের নাহ তুই

আরশির কথায় মুখটা বলদের মতো করে আছে শিমু,ও এখন কি প্রশ্ন করবে তা সবার জানা,তাই ওকে আগেই থামিয়ে নিবিড় বললো

-আক্কাইসা কেডা সেটা তোর জানা লাগবে নাহ, আপাতত ড্রিংকস নিয়াই যাহ

চুপচাপ মাথা চুলকে ওখান থেকে উঠে আসলো,একেবারে বাম পাশের কর্ণারের দিকে সব খাবারের ব্যবস্থা করা,সেখানে গিয়েই সার্ভেন্ট কে বলে পাচটা গ্লাস ট্রে তে নিয়ে হাটা ধরলো।
সাত পাচ ভেবে ভেবে হাটতে গিয়েই কিছু একটার সাথে ধাক্কা লেগে হোচট খেয়ে পরতে নিলেই হাতের গ্লাস গুলো সহ শিমুকে কেও ধরে ফেললো

-ভূত প্রেত আত্মা!!

-স্টপ স্টপ,,কোনো ভূত নেই,আমি মানুষ

পুরুষালি ভরাট গলা টা শুনে শিমু ভয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া চোখ খুলে তাকালো।
সাদা কালোর একটা ফরমাল ড্রেসাপ এ একটা সুদর্শন চেহারা তার সামনে দাড়িয়ে, উজ্জ্বল শ্যামলা গড়নের রঙ ঘন ভ্রু,সুগভীর চোখে তার দিকে চেয়ে আছে, লোকটা বেশ লম্বা,শিমুর হাইট ঠিকঠাক হওয়ার পর ও তার গলা সমান।
কিন্তু এই সুদর্শন চেহারার লোকটাকে শিমুর ভীষণ চেনা চেনা লাগলো। কিন্তু কোথায় দেখেছে কিছুতেই মনে কর‍তে পারছে নাহ

-আর ইউ ওকে?

আগন্তুক হতে আগত প্রশ্নে শিমু চমকে ওঠে, নিজেকে ঠিক করে সোজা হয়ে দাঁড়ায়।

-আ,ব..হ্যাঁ ঠিক আছি,থ্যাংকস

-এতো লোক সমাগমে একটু দেখে চলাফেরা করবেন, তাহলে আসবে না

শিমু ভ্রু কুচকে জিগায়
-কে?

লোকটা খানিক ঝুকে বেশ ভাবুক মুখ করে ফিসফিস করে বলে

-ভূত প্রেত আর আত্মা

শিমু চোখ বড়ো করে তাকায়, অন্যান্য কথা তার ঘটে পৌঁছাতে দেরি হলেও এই লোকটা যে তাকে একটু আগের কথা নিয়ে খোচা দিলো তা সে বেশ বুঝতে পেরেছে।
কোনো রূপ উত্তর না করেই হাতের ট্রে টা শক্ত করে ধরে গটগটিয়ে হাটা ধরলো

ওদের কাছে যেয়েই নিবিড় বললো
-তুই কি কোম্পানি থেকে অর্ডার দিয়ে আনাইলি যে এতো দেরি লাগলো

শিমু কিছু বলতেই নিবে তখন আরশি পাশ থেকে খোচা দিয়ে সিড়ির দিকে ইশারা করতেই দেখলো
দ্যা ওয়ান এন্ড অনলি সিরিয়াস উপস মেঘালয় চৌধুরী নেমে আসছেন
কালো রঙের শার্ট আর প্যান্ট এর ফরমাল ড্রেসের উপর নেভি ব্লু রঙের ব্লেজার টায় একটু বেশিই দারুণ লাগছে। স্পাইক করা চুল গুলো জেল দিয়ে সেট করা, কালো রঙের জুতা টা পায়ে গটগট করে নেমে আসছেন সিড়ি বেয়ে।

-ইয়ার,আমি ছেলে হয়েই ক্রাশ খেয়ে গেলাম,মেঘালয় ভাইরে পুরাই আগুন লাগতাছে, মাইয়াগো লাইন পইরা যাইবো আজ।

নিবিড়ের কথার পৃষ্ঠে আরশি বলে

-আর সেই লাইন কা’ট করে শালীদের লাইনে যাতে শুধু আমরাই থাকতে পারি সেই ব্যবস্থায় করতে হবে।

তখন আদ্রিশ বলে, যার বিয়ে তার খোঁজ নাই পাড়া আরশির,মানে পড়শির ঘুম নাই

আর ঠাস করে এক ঘা বসিয়ে দিলো আরশি। দিয়ে বললো
-থাম,আমাগো হিরোইন রে ধইরা আনি,ওই গাধা টা মানুষ হলে এতো খাটনি করা লাগতো নাহ।

বলেই ডিভান থেকে উঠে হাটা ধরে, কিছুক্ষণ যেতেই পা দুটো আটকে যায়,আরশির। চোখ দু’টো আপনা আপনি বড়ো হয়ে যায়। মুখ টা হা হয়ে যায়, ও পারে নাহ ঠা’স করে পরে যেতে।
ডিপ অ্যাশ কালার শার্ট পরায় আরাব কে যেনো আরেক ধাপ বেশি হ্যান্ডসাম লাগছে। আরশি মন্ত্রমুগ্ধের মতো এগিয়ে গেলো

-গুড ইভিনিং

রিনরিনিয়ে বলা কণ্ঠস্বর পেয়ে আরাব পিছে তাকায়

-গুড ইভিনিং, আরে আরশি যে। হোয়াট’স আপ

-গুড,আপনাকে দেখার পর একটু বেশিই গুড।

আরশি এহেন কথায় আরাব ফিক করে হেসে দিয়ে বলে

-তাই নাকি মিস আরশি?

আরশি তো খুশিতে গদগদ হয়ে পরে,আরাবের দেখা পেয়ে,পালকের কথা ভুলে ও আরাবের সাথেই গল্প জুড়ে বসে

-লেও,ঠেলা হইছে এবার,আরশি তো গায়া,সাথ মে উসকা প্ল্যান ভি

আদ্রিশ এর কথা নিবিড় বলে

-ইয়ার রাফাত? আরাব ভাই নাহ? উনি এখানে যে,তোদের পরিচিত?

-হ্যাঁ, মামুর বিজনেস এ আরাব ভাইয়ের বাবার সাথে ভালো সম্পর্ক প্রায় অনেক বছর ধরে,সেই সুবাদেই উনাদের বন্ধুত্ব, আজকে মামু আর বাবার সব কাছের বন্ধুরাই এসেছে তাই।

-তুই জানতি যে তোদের ফ্যামিলির সাথে কানেকশন আছে আরাব ভাইয়ের?

-আমি জানলে কি তোরা জানতে পারতি নাহ,আমিই সেদিন বাবার সাথে ইনভাইটেশন দিতে গিয়ে জানলাম

“লেডিস এ্যন্ড জেন্টেলম্যানস, আজকের পার্টিটা তাহলে শুরু করা যাক।”

রমজান চৌধুরীর কথায় সকলে,সেদিকে ফিরে মনোযোগী হলো, উনি মাঝখানে দাড়িয়ে আবারও বললেন

“আজকে আপনাদের মাঝে দুজনকে পরিচিত করিয়ে দেবো,যদিও একজন কে আপনারা আগে থেকেই চেনেন আমাদের বাড়ির একমাত্র জামাতা, ইশতিয়াক মাহমুদ তিয়াস, আরেকজন হলো আমার একমাত্র ছেলে মেঘালয় চৌধুরী যে দীর্ঘ ছয় বছর পর দেশে ফিরেছে, মূলত ছেলেকে ওয়েলকাম করতে আর নাতনির জন্মদিন উপলক্ষে পার্টি, পারিবারিক কিছু ঘটনার কারণে বার্থডের দিন সম্ভব হয়নি, বাট হোপ এভরিওয়ান ইউল ইঞ্জয় টুডে”
বলেই সকলে করতালি দিয়ে ওয়েলকাম জানালো।

রাফাত আদ্রিশ নিবিড় শিমু সবাই গিয়ে তিয়াস এর সাথে কথোপকথন শুরু করলো। তিয়াস হলো রুচিতার স্বামী, তিয়াস ব্যবসায়ীক কাজে দেশের বাইরেই বেশিটা সময় কাটায়। যার দরুন রুচিতা এ বাড়িতেই বেশি থাকে। তিয়াসের সাথে বাকিরা পূর্বপরিচিত হলেও মেঘের সাথে এই প্রথম পরিচয়, রুচিতার বিয়ের সময় টাতে মেঘ সুদূর প্রবাসী ছিলো। এর মাঝেই আরেকজন এসে মেঘের পাশে দাড়ালেই শিমুর মুখ কালো হয়ে যায়
মেঘ তাকে তিয়াসের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলে

” হি’স মাই ফ্রেন্ড আহিয়ান ধ্রুব, আমরা সুইজারল্যান্ড একসাথেই স্টাডি কমপ্লিট করেছি,নাউ হি’স আ লেকচারার অফ এন এস ইউ”

ধ্রুব সকলের সাথে বেশ কিছুক্ষণ কথা বললো,শিমুর দিকে তাকাতেই ও চোখ নামিয়ে নিলো। এইবার মনে পরেছে শিমুর,এই লোকটাকে তো সেদিন দেখেছিলো মেঘ ভাইয়ের সাথে সেদিন মেঘ ভুল বুঝে পালক কে থা’প্পড় দিয়েছিলো, এই লোকটাই মেঘ কে নিয়ে গেছিলো।

বেশ কিছুক্ষণ কথার মাঝে তিয়াস বললো
-তা আমার আরেকজন শালী কোথায়, তাকে তো দেখতে পেলাম না এসে থেকে

রাফাত উত্তর দিয়ে বললো

-পালক তো সেই সকালে গেছে, এই পর্যন্ত আসলো নাহ,ওকে আনতে গিয়ে রুচি আপুও দু ঘন্টা পার করে দিলো।

শিমু পাশ থেকে বললো
-আচ্ছা আমি যাই,গিয়ে ধরে আনছি দুটোকে

-তার আর প্রয়োজন হবে নাহ। এইতো আমরা এসে গেছি
পেছন থেকে রুচিতার কণ্ঠে ফিরে তাকায়। মেঘ তাকাতেই যেনো হার্টবিট মিস করে গেলো।
রুচিতার পাশের পালক দাঁড়িয়ে আছে।
পরনে কালো রঙের লং ফুল স্লিভ গাউন, যার উপর ছোটো ছোট নীল রঙের পাথর গুলো ঝিলমিল করছে, আলগা করে খোপা করা চুলের ভাজ থেকে এলোমেলো চুল গুলো ছড়িয়ে আছে কাধ আর কপালে, চিকন চেইন টা গলায় চিকচিক করে সোভা আরও এক ধাপ বাড়িয়ে দিচ্ছে। মেঘালয় বুঝছে না এতোটা সুন্দর কেনো লাগছে মেয়েটাকে, মেঘের চোখে পালক কে যেনো পরী লাগছে

-আরে আপু,এতো দেরি করলে কেনো।
-আর বলিস না নিবিড় ,আমি গিয়ে দেখি তোর এই বান্ধবী রেডি না হয়ে মুখ ফুলিয়ে বসে আছে, শাড়ি সে পরবে নাহ,হাজার বার বলা সত্ত্বেও পরবে নাহ,ওর নাকি ভালো লাগছে না কিছু। আর কি করার তাও জোর করে এই গাউন পরিয়েই আনলাম।

-আজ বউ কে দেখবো না শালিকে আমিতো এই নিয়েই কনফিউজড, কারো দিক থেকেই তো চোখ ফেরানো যাচ্ছে নাহ

তিয়াসের কথায় গাল প্রসারিত করে হেসে দেয় সবাই। এবার রাফাত বলে ওঠে
“সবাই যখন উপস্থিত তাইলে পার্টি শুরু করা যাক”

সবাই একসাথে বলে “সিউর”
রাফাত একদম সেন্টারে গিয়ে দাড়িয়ে মাইক টা হাতে নিয়ে বলে

-এ্যাটেনশন এভরিবডি। অনেক তো হলো পরিচয় গ্রেটিংস। এবার একটু এন্টারটেইনমেন্ট হোক। সো আজকের পার্টির মেইন চার্ম শুরু হবে একটা দুর্দান্ত ডান্স পার্ফম্যান্স দিয়ে। এখানে সবাই এটেন্ড করতে পারবে, এস আ কাপল।
বলেই হাততালি দিলো সবাই একসাথে

-মিউসিক,,লাইটস অফফ

বলতেই জ্বলজ্বল করা আলো বন্ধ হয়ে গেলো, মুহুর্তেই জ্বলে উঠলো লাল নীল রঙের হরেক রকমের টিমটিমে আলো, আর ব্যাকগ্রাউন্ড এ সফট মিউসিক। সবার আগে তিয়াস রুচিতার সামনে হাটু গেড়ে বসে হাত বাড়িয়ে বললো
-সো মাই বিলভড মে উই?

সবার সামনে তিয়াসের এমন আচরণে রুচি বেশ লজ্জা পেয়ে গেলো। আদ্রিশ আর নিবিড় বললো
-কাম’ওন আপু, গো ফর ইট

দ্বিধাবোধ কাটিয়ে রুচিও হাত বাড়িয়ে দিলো। তিয়াস ওর হাত ধরে এগিয়ে নিয়ে ধীরে নাচতে শুরু করলো।
একে একে সবাই পার্টনার বেছে নিয়ে নাচা শুরু করেছে, রাফাত-শিমু, আদ্রিশ-পালক, নিবিড়-আরশি সবাই যুগল ভাবে নাচা শুরু করেছে। থিম টা ঠিক এমন যে, প্রায় দুই মিনিট পরপর গান চেঞ্জ হবে,আর তার সাথে পার্টনার।
গানের তালে যুটি পরিবর্তন হয়ে নাচ চলতে থাকবে একইভাবে।

প্রথম কিছু মিনিট একইভাবে চলার পর পার্টনার চেঞ্জ হয়ে রাফাত আর আরশি নিবিড়ের সাথে শিমু আর আদ্রিশের কাছে রুচি আপু আসে, সবাই বেশ আনন্দের সাথেই নাচতে থাকে, এর মাঝে পালক পরে বিপদে। পার্টনার চেঞ্জ হয়ে ও এসেছে আরাবের কাছে, এখন চলে যাওয়া টা অপমান করা হবে,আর নাচাটাও কেমন দ্বিধা বোধ করছে।
-তোমার কি আমার পার্টনার হতে খুব প্রবলেম হবে,মিস?

আরাবের কথায় কিছুক্ষণ তাকিয়ে পালক না সূচক ঘাড় নারায়।
আরাব হাত বাড়িয়ে দিলে আস্তে করে হাতটা এগিয়ে দেয় পালক। আরব এক হাতে ওর হাত রেখে বেশ দূরত্ব রেখেই নাচতে থাকে।

কিন্তু এদিক কারো চোখ মুখ শক্ত হয়ে এসেছে, পালককে এভাবে অন্য কোনো ছেলের সাথে নাচতে দেখে মেঘালের প্রচন্ড রাগ হচ্ছে,চুপচাপ হাত মুঠো করে এক কোনায় দাড়িয়ে আছে, ও পারছে না পালককে টে’নে হিচ’রে নিয়ে আসতে।
বেশ কয়েক মুহূর্ত ওভাবে দেখার পর মেঘালয় এর মেজাজ টা যেনো নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে গেলো। সাত পাচ না ভেবে বড়ো বড়ো পায়ে এগিয়ে গেলো পালকের দিকে।
আর তখনি মিউসিক আর লাইট চেঞ্জ হলো, তার সাথে পার্টনার ও। পালক এসে কারো বুকের সাথে ধাক্কা লাগলো, দ্রুত সরে যেতে নিলেই একটা বলিষ্ঠ হাত তার কোমড় ধরে টেনে নিজের কাছে নিলো। এহেন কাজে পালক অবাক হয়ে ঘাড় উচিয়ে তাকাতেই নীলাভ চোখ জোড়ার মালিকের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে নয়ন মিললো। বেশ রেশ পূর্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে আছে মেঘালয় তার দিকে। পালকের সকালের কথা মনে হতেই নিজেকে ছাড়িয়ে সরতে নিলেই মেঘ দু’হাতে আর দৃঢ় ভাবে জড়িয়ে ধরে পালকের কোমড়।
কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিসিয়ে বলে
-এক চুল নড়াচড়া করা চেষ্টা করলেই কোলে তুলে নেবো

মেঘের মুখ থেকে এ কথা পালক কল্পনাতেও শুনবে বলে ভাবেনি। হা করে চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছে মেঘের দিকে,পা দুটো জমে গেছে। মেঘ আস্তে করে নিজের এক হাতের মাঝে পালকের চিকন আঙুল গলিয়ে দিলো। আরেক হাতে পালকের হাত নিয়ে নিজের কাধের উপর রেখে তার কোমড় টা শক্ত করে ধরে মৃদু তালে নাচা শুরু করলো
পালক চোখ মুখ খিচে নিচে তাকিয়ে আছে,হৃদস্পন্দন অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে, শীতল স্পর্শে পালকের সমস্ত কায়া জুড়ে শিহরণ বয়ে যাচ্ছে। জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে, কিন্তু কিছুতেই থামছে না ভেতরের তোলপাড়,, কিছুতেই নাহ

এদিকে শিমু নিবিড়ের থেকে সরে এবার পরেছে অপ্রিতিকর জায়গায়, ধ্রুব নামক লোকটা খুব স্বাভাবিক ভাবে তার সাথে নাচলেও তার হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেছে, সরে যাওয়ার শক্তি টুকুও পাচ্ছে নাহ, কিন্তু বলবে কাকে ওই আরশি বেয়াদব টা এবার পার্টনারে আরাব ভাইকে পেয়ে যেনো চাঁদ হাতে পেয়েছে অন্য কোনো দিকে তাকাচ্ছেই নাহ।

গান আবারও পরিবর্তন হলো,এই সুযোগে পালক নিজেকে ছাড়িয়ে সরতে নিলেই মেঘালয় শক্ত করে ঝাপটে ধরে দুহাতে৷ পালকের শরীরে রীতিমতো কম্পন ধরেছে, এই গরমের সময়েও তার শীত করছে ভীষণ, কাপা কাপা চোখে নিচের দিকে চেয়ে আছে। মেঘালয় তার আঙুল টা পালকের থুতনিতে রেখে মুখটা উচু করে নিজের মুখ বরাবর নিয়ে আরেকটু ঝুকে এলো। গানের তালে আবারও নাচা শুরু করে সাথে মৃদু স্বরে তাল মিলিয়ে গাইতে লাগলো
” dekha hajaro dafa apko,phir bekarari kaisi hain,sambhale sambhalta nhi ye dil kuch ap mein baat aisi hain ”

গানের সাথে মেঘের উষ্ণ শ্বাস পালকের সারা মুখে ছড়িয়ে পরছে, পালকের সারা শরীরের কম্পন মাত্রা বেরে যাচ্ছে,কিছুতেই সামলাতে পারছে নাহ, দাড়ানোর শক্তি পাচ্ছে নাহ,হাটু ভেঙে পরে যেতে নিলেই দু’হাতের বন্ধন আরও দৃঢ় হলো,তাল সামলাতে না পেরে এক হাতে খামচে ধরলো শার্ট, দূরত্ব একেবারে ঘুচে গেলো, নিজের গালে খোচা খোচা দাড়ির ঘসায় সারা বদনে বিদ্যুৎ খেলে গেলো
.
.
.
চলবে ইনশাআল্লাহ

#তুমি_আসবে_বলে
#হুমাইরা_হাসান
পর্ব- ২২

ধপ করে আলো গুলো জ্বলে উঠতেই পালক সরে দাড়ালো, হাত পা কাপছে, গাল দু’টো যেনো টকটকে হয়ে গেছে, এতো লজ্জা ওর কোনোদিন ও লাগেনি, বা পাশের গালটাই যেনো এখানো স্পর্শ লেগে আছে, কোনো দিক না তাকিয়েই এক ছুটে অন্যদিকে চলে গেলো।

-আরে আরে ছুটছিস কোথায়, পরে যাবি তো?
রুচির সাথে ধাক্কা লাগতেই পালককে দু হাতে ধরে রুচি। পালক কোনো রকম আমতাআমতা করে বলে

-আম..আসলে এমনেই,ওদিক টাই অনেক লোকজন তাই রাফাতদের কাছে যাচ্ছি।

-রাফাতের কাছে পরে যাস,ওরা বসছে ওদের আজাইরা গল্প নিয়ে, তুই একটু আমার সাথে আই নাহ আফু
বলেই পালকের হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো রান্নাঘরে, সেখানে মামনী আর আঞ্জু আন্টি খাবার বেড়ে সার্ভেন্ট দের খাবার এগিয়ে দিচ্ছে,তারা টেবিলে নিয়ে সাজাচ্ছে। আমি যেতেই মামনী বলে
-আফু, মা আইতো। আমাদের একটু সাহায্য কর।রুচিকেই বলতাম কিন্তু মিষ্টি খুব জালাচ্ছে,এতোদিন পর বাবাকে পেয়ে একটুও কাছ ছাড়া করছে নাহ,মা বাবা দুজনকেই ওর চাই।

মামনীর কথায় মিষ্টি হেসে বললাম
-আরে ঠিক আছে,কি করতে হবে দাও তো আমিই করছি। আর আপু তুমি যাও ভাইয়ার কাছে। এতোদিন পর এসেছে ভাইয়া এতো দূরে দূরে থেকোনা তোহ

শেষের কথা টা শয়’তানি করেই বললাম,আপু আমার পিঠে আসতে করে চাপ’ড়ে বললো
-এই তোরা সবগুলো ভীষণ পাজি হয়েছিস,তিয়াস এসে থেকেই এরা আমায় যা নয় তা বলছে

ঠিক তখনই রান্নাঘরের বাইরে থেকে তিয়াস ভাইয়ার ডাক আসে
-রুচি? এদিকে আসো তো

ভাইয়ার মতো করে আমিও টেনে টেনে বললাম।
-রুচিইই যাও তো তোমার বাবুর আব্বু ডাকছে

আপু আমার মাথায় আলতো থা’পরে চলে গেলো।
আঞ্জু আন্টি হেসে বললেন
-তোরা পারিস ও বাপু,এতো দুষ্টু হয়েছিস

আমি হেসে এগিয়ে গেলাম, হাতে হাতে এগিয়ে দিচ্ছি সবকিছু তখন মামনী বললেন

-তোর আংকেলের খুব স্পেশাল ফ্রেন্ড এসেছে কোরিয়া থেকে। উনি ঢাকার বাসিন্দা হলেও ব্যবসায়ীক কাজে উনার বসবাস ওখানেই বেশি। উনার ছোট মেয়ে আর স্ত্রী কে নিয়ে কোরিয়ার সিউল শহরে থাকেন। বন্ধুত্ব টা শুধু ব্যবসায়ীক ই নাহ। তোর আংকেল,ইবনাত,আর হিয়াজ ভাই সকলে একই কলেজে পড়াশোনা করেছিলেন,পরিচয়েত মাপকাঠিটা সুদূর বড়ো।

এইতো দিন দুয়েক হলো দেশে ফিরেছে হিয়াজ এহসান , তোর আংকেল বার বার বলে দিয়েছেন উনাকে আজ যেতে দিবেন নাহ,আজ উনি আমাদের সাথেই থাকবেন। আর উনার বড়ো ছেলে তো তোদের ভার্সিটিতেই পড়ে, চিনিস তো

মামনীর কথায় কপাল জড়ো করে বললাম
-কার কথা বলছো মামনী

-আরে আরাব, আরাবের বাবা হিয়াজ এহসান। উনিই তো তোর আংকেলের স্পেশাল ফ্রেন্ড।

ঠোঁট গোল করে ওও বললাম,আচ্ছা এবার বুঝলাম। রাফাতের থেকে শুনেছিলাম আরাব ভাইয়ের বাবা আর রমজান আংকেলের ব্যাবসায়ীক বন্ধন অনেক আগে থেকেই৷তাই তো আজকের পার্টির স্পেশাল গেস্ট উনারা।
মামনী দের সাথে কিছুক্ষণ সাহায্য করে বেরিয়ে এলাম,আমার হুরহুর দলের একটাকেও চোখে পরছে নাহ,গিয়ে কথায় পরে আছে ওরাই জানে

~

-আমি কিন্তু ঠিকই খেয়াল করেছি, পার্টনার চেঞ্জ হয়ে যখন আরাব ভাইয়ের সাথে পালকের টার্ন ছিলো,মেঘ ভাইয়ের মুখটা দেখার মতো ছিলো। উনার মুখ দেখে স্পষ্ট যে উনি জেলাস।

-হ্যাঁ আমিও দেখেছি

-এহ উনিও দেখেছে,তুই তো হা করে আরাব ভাইয়ে গিলতেছিলি,আর যখন ভাইয়ের সাথে তোর টার্ন আসলো তুই দিন দুনিয়া কিছুই দেখিস নি

আরশির কথায় ত্যানত্যান করে উত্তর দেয় শিমু।

-তোর সমস্যা কি,তুই নিজেও তো ধ্রুব ভাইয়ের সাথে ভালোই কোমড় দুলিয়ে নাচছিলি মুটকি

-ছিহ,এসব কি ধরনের ভাষা

এবার নিবিড় বলে

-তগো ভাষা ভাষি বাদ দেহ, আমি কিন্তু স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি আমাদের প্ল্যানিং পজিটিভ সাইন দিচ্ছে। মেঘ ভাই যেভাবে আফুরে নিয়ে নাচছিলো। পার্টনার চেঞ্জ এর সময় ও যেতে দেইনি আমি স্পষ্ট দেখেছি। তারপর আর দেখতে পারিনি। এই যে এই বলদ টাই ঢ্যাঙ ঢ্যাঙ করে আমার সামনে এসে পরেছে

বলেই ঠাস করে এক চাপ’ড় দেয় আরশির মাথায়।

-উফ আমাকে মারছিস কেনো তোরা,আমার প্ল্যানেই তো এতোটা হলো,তোদের উচিত আমাকে ধন্যবাদ দেওয়া।

-ধন্যবাদ? তোরে জুতা দেওয়া উচিত জুতা। শা’লি আরাব ভাইয়ে পায়ে ধিনধিন করা শুরু করেছিলি। তোর ধিন ধিন করার জন্য আমরা বাকি সিন টুকু দেখতে পারিনি। আফুকে কি ভাইয়ের সাথে সেট করবি,তুই নিজেই চুইনগামের মতো চিপকানোর প্ল্যানে আছিস আরাব ভাইয়ের সাথে।

রাফাতের কথায় পৃষ্ঠে উত্তর দিতে দিতে আরশি আর রাফাত দুটো মিলে আবারও ঝগড়া শুরু করে দেয়।

-আবে,,থাম তোরা। মেলা হইছে তগো ঘ্যানঘ্যান। এবার শোন আমার মাথায় একটা প্ল্যান আসছে,এদিক আই আই,আস্তে বলবো, নাহ তো কেও শুনে ফেলবে

আদ্রিশের কথায় সবাই দূরত্ব ঘুচিয়ে আরও কাছাকাছি এসে বসে,আদ্রিশ ফিসফিসিয়ে বলে

-শোন,রাফাত তো বেশ অনেক দিন ধরেই ঘুরতে যাওয়ার জন্য জিদ ধরেছে এটা সবাই জানি। এবার বড়োদের বলে চল একটা টুর দিয়ে দেই সবাই। ঘুরতে গেলে মেঘ ভাইয়া ও সময় পাবে আফুর সাথে আর আমাদের ও ঘুরাঘুরি টা হয়ে যাবে। নাহ তো এভাবে সারাদিন একজন অফিসে আরেকজন ক্যাম্পাসে বসে থাকলে ঘন্টা টাও হবে নাহ

আদ্রিশের কথায় পৃষ্ঠে রাফাত ও ফিসফিসিয়ে বলে
-হ্যাঁ এটা এক্কেরে হাচা কইসোস দোস্ত। আমাগো ঘুরাঘুরি ও হবে আর ওগো লাইন ও।

শিমু বেশ ভাবুক হয়ে ওদের মতোই ফিসফিসিয়ে বলে
-কিন্ত যাবি কি করে, আই মিন সবাইকে রাজি ও তো করাতে হবে, মেইন কথা মেঘালয় ভাইয়া যেতে চাইবে তোহ?

-আরে যাবে নাহ,আলবাত যাবে,আমিতো আগেই ভাইকে রাজি করিয়েছিলাম,আফুর অ্যাকসিডেন্ট আর এই পার্টির জন্য পিছিয়ে গেছে,এবার আবারও জিদ ধরবো যাওয়ার জন্য

-তাইলে তো হয়েই গেলো। এক্সাম টাও হয়ে গেছে,আপাতত রিলাক্সে আছি। এটাই বেস্ট টাইম হবে। ডান

আরশির কথায় সকলে একসাথে বলে ওঠে “ডানন”

“হোয়াট?”

পেছন থেকে আসা শব্দে পাচটা সরে বসে,রাফাত অপ্রস্তুত হেসে বলে

-আরে আফু,তোরেই তো খুজছিলাম কই ছিলি এতোক্ষণ আই আই বস।

-মামনী ডেকেছিলো একটু তাই গেছিলাম। তোরা কিসের প্ল্যানিং করছিস,কিসে ডান?

আরশি এসে পালকের পাশে বসে বললো
-আরে দোস্ত, তোরে বলছিলাম নাহ,সবাই মিলে এক্সামের পর একটা টুর দেবো,সেইটার ই প্ল্যানিং করছি।

-ইয়েস,আফু এইবার একটা ধুম ধাড়াক্কা টুর দেওয়া হবে,মেলা দিন ঘুরতে যাওয়া হয়না

আদ্রিশের কথায় সবগুলো একসাথে হইহট্টগোল করে উঠলো। আমি ওদের থামিয়ে দিয়ে বললাম

-তা ঠিক আছে, কিন্তু এই মাতাজি মুখটা এমন পাঁচশো পঁচিশ করে রেখেছে কেনো।

পালকের কথায় সবাই শিমুর দিকে তাকিয়ে দেখে ও মুখটা ঠিক এমন করে রেখেছে যেনো ওর হাতে ছু’ড়ি ধরিয়ে কেও খু’ন কর‍তে বলেছে।

“এই বলদের জন্য যদি প্ল্যানের চোটপাট হয়,আই সুয়্যার ওরে আমি মাঝ রাস্তায় ঝা’টা পি’টা করুম।”
বিড়বিড় করেই আরশি উঠে গেলো শিমুর পাশে,গিয়ে বললো

-আর কেনো, বুঝছিস নাহ? উনার পড়াশোনার ক্ষতি হয়ে যাবে, সেই চিন্তা করছেন উনি। শোন ভম্বল তুই যদি টুরে যাওয়া নিয়ে প্যানপ্যানানি করিস তোরে বো’ম মে’রে আগে আকাশ পথে পাঠাবো দ্যান আমরা যাবো স্থলপথে, মাইন্ড ইট

ওদের কে থামিয়ে দিয়ে বললাম।বেশ এসব নিয়ে পরে প্ল্যানিং করিস,আপাতত চল। আংকেল আন্টি সবাইকে ডাকছে। বলেই উঠে হাটা ধরলাম সকলে

~

বিশাল বড়ো ডাইনিং টেবিলটাতে হাজারো রকমের বাহারী খাবার সাজানো, দেশি বিদেশি চাইনিজ সব প্রকার আইটেপ ই আছে। আজকে সকলে একসাথে বসে ডিনার করবে বলে। সাথে দুজন মেহমান তো উপস্থিত।
ঘড়ির কাটা এগারোটা পেরিয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে এঞ্জয় করে,আলাপচারিতা করে শুভকামনা জানিয়ে সকল অতিথিরা বিদায় নিয়েছেন।শুধু হিয়াজ এহসান আর তার ছেলে আরাব এহসান উপস্থিত, অবশ্য তারা নিজ ইচ্ছাতে থাকেনি। আংকেল বন্ধুকে এতোদিন পর পেয়ে আর ছাড়তে চাইনি। তাই আজকের রাতটা এক প্রকার জোর করেই রেখেছেন উনাদের, তাই আরাব ভাইকেও বাধ্য হয়ে থাকতে হয়েছে।

খাবার টেবিলে যেনো আজ যাকজমক কানায় কানায় উপচে পরছে। চৌধুরী বাড়ির সকল সদস্য, মেহমান হিসেবে আরাব ভাই ও তার বাবা, আমরা ছয় বন্ধু আর মেঘালয় চৌধুরীর বন্ধু মানে ধ্রুব ভাই ও আছেন। সংসার, ব্যবসা, কাজ এসব ব্যস্ততায় সকলের একসাথে হওয়ার সুযোগ খুবই কম হয়,তাই আজকে এমন একত্রিত হওয়ার সুযোগ টা কেও ছাড়তে চাইনি। আংকেল আন্টি মামনী সবাই কাওকেই বাড়ি ফিরতে দেইনি।।

সকলের সাথে খোশগল্প আর পরিচয় আলাপচারিতা দিয়ে খাবার পর্ব শেষ করে, বড়োরা ড্রয়িং রুমেই বসেছে গল্প করতে, আর এদিকে রাফাত, আদ্রিশ, নিবিড় মিলে ছাদে ব্যাবস্থা করেছে বসার। আজকে রাত নাকি আড্ডা আর গল্প করেই পার করবে। আর তাদের সাথে আরাব ভাই আর ধ্রুব ভাই ও যোগ দিয়েছেন। তিয়াস ভাই অনেকটা ক্লান্ত থাকায় আগেই ঘুমিয়ে গেছে।
আর বাকি রইলো মেঘালয় চৌধুরী। উনার কথা আমি জানি নাহ। বলবোও নাহ। লোকটার দিকে আমি আর ভুলেও তাকায় নি।খাবার টেবিলেও একবার চোখ তুলে তাকায় নি। কি করে তাকাবো,লোকটা এমন বেহায়া হয়ে গেছেন যে উনার সামনে আসতেও ভয় হয়। আমাকে সব রকম অসস্থি আর অপ্রিতিকর পরিস্থিতি ফেলার ট্যালেন্ট ঠুসে ঠুসে ভরা উনার মধ্যে, এমন অসভ্য লোকের সাথে আমি কিছুতেই কথা বলতে চাইনাহ।

রাত প্রায় একটা, এমন মধ্যরাতের ও পরের সময়টা আমরা সকলে ছাদে ভূতের মতো আড্ডা দিতে বসেছি। আমাদের হুরহুর গ্যাঙ, আরাব ভাই,ধ্রুব ভাই আর ওই অসভ্য চৌধুরী টা মিলে আমরা নয়জন ছাদে মাদুর পেতে বসে আছি। এখানেও ট্যুর নিয়ে আলাপচারিতা শুরু করেছে রাফাইত্তা

-ভাই তুমি কিন্তু আমায় কথা দিয়েছিলে তুমি যাবে ট্যুরে,এখন তো ধ্রুব ভাই ও এসে গেছে, চলোনা চলোনা সবাই মিলে, খুউব মজা হবে। ধ্রুব ভাই,তুমি একটু বলোনা ভাইকে

রাফাতের এমন বাচ্চাদের মতো জিদ ধরায় ধ্রুব ভাই ও বললো
-হ্যাঁ যাবো তোহ। অবশ্যই যাবো। মেঘ দেখ না সবাই কেমন আশা করেছে একসাথে ঘুরতে যাবে তুই আর না করিস না ভাই চল যায়। দেশে ফিরলাম তো অর্ধেক যুগ পরে। সবুজের হাওয়া গায়ে লাগলে মন্দ হয়না

ধ্রুব ভাইয়ের কথায় মেঘালয় বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন।
-ঠিক আছে আমি বাবার সাথে কথা বলে দেখি।

-কোনো বলাবলি নাই মামুকে নিয়ে কোনো প্যারাই নাই। আমিতো মামুকে সবার আগে রাজি করিয়েছি।

রাফাতের কথায় এবার নিবিড় ও বলে উঠলো

-তাইলে আর কি। আমরা কাল পরশুর মধ্যেই যাচ্ছি।

-ইয়েসস, আমারতো তর ই সইছে নাহ মনে চাচ্ছে এক্ষুণি চলে যায়।

রাফাত নিবিড় আর আরশির এমন পাগলামি দেখে সবাই হাহা করে হেসে দেয়।
শুধু চুপচাপ দর্শক হয়ে দেখছি আমি আর শিমু। শিমু বলদের কথা না হয় বাদ দিলাম,ও সবসময়ই ওমন পেচা মুড অন করে রাখে। কিন্তু আমারতো ট্যুরে যাওয়ার খুশিতে একদিকে লুঙ্গি ডান্স দিতে ইচ্ছে করছে,আরেক দিকে এই সিরিয়াস চৌধুরীর সাথে যাওয়ার কথা মনে হতেই হাত পা ছড়িয়ে কাদতে ইচ্ছে করছে। উফ এই লোকটা এসে থেকে আমার জীবন টা অতিষ্ঠ করে রেখেছে। ভেতর বাহির কোথাও শান্তি পাচ্ছি নাহ ধ্যাতত..

আমার ভাবনার মাঝেই আদ্রিশ বলে
-এতো সুন্দর একটা ইনভাইরোনমেন্ট একটা গান হলে কিন্তু জমে যায়।

-একদম, মেঘ ভাই একটা গান ধরোনা প্লিজ, তোমার গান শুনি না বহুদিন

রাফাতের হুটহাট এমন আবদারে হকচকিয়ে ওঠে মেঘ, বেশ অপ্রস্তুত হয়ে বলে।
-আমি কেনো, ধ্রুব কে বল,আমি গান টান গাইতে পারবো নাহ

ধ্রুব পাশ থেকে বলে।
-কি বলিস,তুই আর আমি? তোর গানের গলা যে কতোটা চমৎকার সেটা আমরা সবাই জানি। কোনো কথা নাই, এখন একটা গান চাই ব্যাসস

-একদম,আমি এক্ষুনি গিটার আনছি

বলেই এক ছুটে গিয়ে গিটার নিয়ে হাজিস হলো দুই মিনিটের মধ্যে, এই গিটার টা রাফাতকে রুচি আপু গিফট করেছিলো ওর লাস্ট বার্থডে তে যদিও ও পারেনাহ এটা বাজাতে

-আমার হাতে একটু ইঞ্জুরি হয়েছে, আমিতো গিটার বাজাতে পারবো নাহ,

মেঘলায় বললো,একথা শুনে রাফাতের মনটা বেশ খারাপ হলো। বললো
-আচ্ছা গিটার বাদেই গাও ভাই

-ইফ ইউ গাইস ডোন্ট মাইন্ড,আই ক্যান প্লে দ্যাট

এতোক্ষণে আরাব ভাইয়ের মুখ থেকে একটা কথা শোনা গেলো, এতোক্ষণ উনি নিরব শ্রোতা হয়েই শুনছিলেন।

-তাইলে তো কোনো কথায় নাই,তুমিই বাজাও আরাব,আর মেঘ তুই গান ধর।

বলেই ধ্রুব ভাই গিটার টা আরাব ভাইয়ের হাতে ধরিয়ে দিলেন।
টুং টাং শব্দে গিটারের মৃদু শ্রুতিমধুর ধ্বনি শুরু করলো
আর তার সাথে পুরুষালি ভরাট কন্ঠের চমৎকার ধ্বনিত হলো চারপাশ, সেই কন্ঠস্বরে যেনো হিম বাতাস বয়ে গেলো শরীর জুড়ে,হাজারো সংযোম করে রাখা চোখটা বাধ ভেঙে মুখ তুলে তাকালো, চাঁদ এর জোৎস্না আর ল্যাম্পের মৃদু আলোয় মায়াভরা চেহারায় গেয়ে উঠলো,মেঘ স্থীর আমার দিকে চেয়েই গান গাইছেন,লজ্জায় সারা মুখে লালাভ ছড়িয়ে গেলো,তবুও চোখ সরাতে পারলাম নাহ,কেনো জানি নাহ,চোখ সরাতে ইচ্ছে করছে নাহ

” hasti rehti hu,tujhse milkar kyu ajkal
Badle badle hain mere tewar kyu ajkal
Ankhein meri..har jaga,dhunde tumhe bewaja,, ye mein hu ya koyi aur hain,meri tarhaaa……aa
Kaise huwa,kaise huwa tu itni jaruri kaise huwa(2)
..…………..(বাকিটা নিজ দ্বায়িত্বে শুনে নিয়েন)

ইসস,লোকটার গানের গলা এতোটা মোহনীয়,ইচ্ছে করছে সময়টা থেমে যাক, নীলাভ চোখ জোড়ায় চাহনি আমি হতে না সরুক। তার অপলক দৃষ্টি আমার দিকে বারবার আসুক। ওই চোখ দু’টোর অতল গহ্বরে আমি নিজেকে হারাই,বারবার হারাই।
এই যে গানের তালে তার ভাজ হওয়া গাল, ছোট হওয়া চোখ, শ্বাসনালীর কম্পন,সব কিছুতে যেনো অদ্ভুত তরঙ্গ বয়ে যাচ্ছে, এই উথাল পাথাল ঢেউয়ে আমি নিজেকে হারাচ্ছি। সুহৃদ পুরুষের কণ্ঠের এমন মোহনীয় গান,আর তার এমন আমার দিকে নিবন্ধিত বেহায়া দৃষ্টিতে যেনো মিইয়ে যায়। আশে পাশে কাওকে দেখতে পাচ্ছিনাহ,কিচ্ছু নেই। শুধু দু’হাত দূরে বসে থাকা সুদর্শন চেহারা টাই আমায় দুনিয়া জুড়ে ছেয়ে আছে
.
.
.
চলবে ইনশাআল্লাহ।