তুমি ছুঁয়ে দিলে এ মন পর্ব-০৯

0
31

#তুমি_ছুঁয়ে_দিলে_এ_মন

পর্ব ৯

#জান্নাতুল_মাওয়া_লিজা

ক্লাশে আহনাফকে কেউ কোনোদিন ভাবুক হতে দেখে নি। হাস্যোজ্জল মুখে হাস্যরস মিশিয়ে গণিত বুঝায় সে। আজ সে ত্রিশার ভাবনা থেকে নিজের মনকে ছুটি দিতে পারছে না। ত্রিশার মাথার চুল দুটি সে আগের রাতে বহুক্ষণ দেখেছে। ত্রিশার নি:স্পাপ চাহুনি তাকে ভীষণ টানছে। সে কেমন জানি একটূ আনমনা হয়ে আছে দেখে ক্লাশের দুষ্টু মেয়েদের গ্যাংস্টার বিভা আহনাফকে বলে উঠলো,

” বিষয় কি স্যার? আজ আপনার মন খারাপ নাকি? ”

আহনাফ উত্তরটাকে একশ আশি ডিগ্রী ঘুরিয়ে বললো,

” হুউম, মন খারাপ! তবে, যেদিন তুমি ম্যাথে ‘এ প্লাস’ আনতে পারবে সেদিন আমার মন ভালো হবে”

স্যারের এ কথায় ক্লাশের সবাই হেসে দিলো।
কারন এই ক্লাশে বিভা অংকে সবচেয়ে কাঁচা। বিশ, পঁচিশ তুলতেই ওর হিমশিম খেতে হয়। একবার ডানে তাকায়, তো আরেকবার বামে আর না হয় নকল করে। পরীক্ষার দিন পিঠে চিমটি কাটতে কাটতে ও পার্থ নামের এক ছেলের পিঠের চামড়া পর্যন্ত তুলে দিয়েছিলো। পরে দায়িত্বরত স্যাররা ওর সিট চেইঞ্জ করে দেয়।

গত ক্লাশ পরীক্ষায় সে বিশে মাত্র পাঁচ পেয়েছিলো, তাও ক্লাশের ফার্স্ট বয় নিলয়েরটা দেখে লিখেছিলো বলে।
বিভার ঘনিষ্ঠ বান্ধবীরা সবাই ওকে বারবার বলেছিলো আর্টস নিতে। কিন্তু ও নিজের সিদ্ধান্তে অটল। একমাত্র আহনাফ সাইন্সের ম্যাথ ক্লাশ নেয় বলেই ও সাইন্স নিয়েছে সাথে ম্যাথ নিয়েছে। নইলে কৃষি, গার্হস্থ্য নিতো। দুর্বল বলে আহনাফ প্রথম দিকে ওকে একটু বিশেষ ভাবেই পড়া বুঝাতো। কিন্তু দুষ্টু বিভা এসবের সুযোগ নিতো। আহনাফ যখন অংক বুঝাতো তখন ইচ্ছে করেই এমনভাবে বসতো যেনো ওর শরীর আহনাফের সাথে ধাক্কা লাগে, অথবা আঙ্গুলের টাচ লাগে। আহনাফ দূরত্ব বজায় চললেও ইচ্ছাকৃতভাবে গায়ের উপর ঢলে পড়তো সে।

আর কয়েকদিন আহনাফের কাছে প্রাইভেট পড়ার পেছনে ধামাধরে ছিলো। কিন্তু আহনাফ প্রাইভেট পড়াবে না বলে সরাসরি মানা করে দিয়েছিলো। কিন্তু বিভা দমে যাওয়ার ছিলো না, নিজের বাবাকে দিয়ে আহনাফের কাছে প্রস্তাব পাঠায় প্রাইভেট পড়ানোর। প্রতি মাসে বিশ হাজার টাকার লোভনীয় অফার দেয় শুধু এই এক বিষয় পড়ানোর জন্য। কিন্তু আহনাফ সরাসরি মানা করে বলে দেয়,
” বিশ হাজার কেনো? বিশ লাখ দিলেও আমি প্রাইভেট পড়াবো না। আপনার মেয়েকে বলবেন, ক্লাশে মনোযোগী হতে, ক্লাশে আমি সবই পড়াই, পূর্ণ মনোযোগ দিলে ক্লাশের ঐ পঁয়তাল্লিশ মিনিটই এনাফ”

আহনাফের স্ট্রেইট কাট কথার কাছে হার মানে বিভার বাবাও।
সে ও এ কথা স্বীকার করে মেয়েকে ভালোভাবে বুঝিয়ে সুঝিয়ে দেয়, যেনো ক্লাশেই মনোযোগী হয়।

কিন্তু বিভা বেঁকে বসে। কেঁদে কেঁটে বাড়ি ঘর এক করে আহনাফের জন্য।

যেনো আহনাফ কোনো খেলার পুতুল, আর বিভা এমনভাবে আবদার করে, যেমন ভাবে কোনো শিশু মেয়ে বাবার কাছে তার প্রিয় পুতুল টার বায়না করে।

বিভার বাবা রাহুল তালুকদার, শহরের বিত্তশালীদের মধ্যে অন্যতম। মেয়েকে এই বলে থামিয়ে রাখেন যে,

” আহনাফের কাছে শুধু প্রাইভেট পড়া নয়, গোটা আহনাফকেই তোকে প্রাইভেট ভাবে এনে দিবো, তোর জামাই করে”

বাবার কাছে এ আশ্বাস পাওয়ার পর বিভা খুশিতে লাফাতে থাকে। তাই পরে আর প্রাইভেট পড়ার বায়না করেনা। তবে আহনাফের সাথে শুধু নিজের সব মেলানোর চেষ্ঠা করে। আহনাফ মানা করলেও এটা সেটা গিফট দিতেই থাকে। সাজগোজ, বেশভূষায় বা কথাবার্তায় সে আহনাফকে বহু বার ইমপ্রেস করতে চেষ্ঠা করেছে, কিন্তু আহনাফ কোনোদিন ওকে পাত্তা দেয়নি।

এভাবে আহনাফকে পাওয়ার আশায় বিভার প্রতিটা ক্লাশই পার হয় শুধু হা করে আহনাফের দিকে চেয়ে চেয়েই।
কারন রাহুল তালুকদার ওকে এই বলে থামিয়ে রেখেছে যে, ” তোমার বয়স আগে আঠারো হোক, তারপরই আমি প্রস্তাব পাঠাবো”।

তবে বিভার যেনো আর তর সহে না।

বিভা নিজের এ বিয়ের বিষয় আগে কাউকে না বললেও আজ সে সবাইকে শাসিয়ে বললো,

“হ্যাকো ক্লাশ ইলিভেন, ক্লাশের মেয়েরা সব শুনে রাখো। আহনাফ স্যার শুধুই আমার, সে আমার ফিয়ন্সি, মানে বিয়ে ঠিক আমার তার সাথে। এতদিন কাউকে কিছু বলিনি, তবে আজ বলে রাখছি, ক্লাশের কেউ যদি আর কোনদিন আমার আহনাফকে নিজের বর বা প্রেমিক বানানোর ইচ্ছে মনেও আনে ,তারে আমি মে’রে আলুভর্তা বানাবো। যারা আমারে চেনো তারা যারা চেনেনা তাদের এ কথা বুঝায়া দিবা! ”

“বলে কি এ গুন্ডি?” বিভার এহেন কথাবার্তায় সব মেয়েরাই ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে গেলো।
এ মেয়ে সত্যিই অনেক ডেঞ্জারাস!
.
.

নিজেদের প্রিয় বান্ধবীকে কলেজে না দেখে বিকেলে ক্লাশ, প্রাইভেট শেষ করে ত্রিনা, ঊষা আর স্নিগ্ধা ছুটলো রেইনবো টাওয়ারে। রাত্রি কলেজে না গেলেও ওর সাথে সারাদিন ভিডিও কলে কথা হয় সবার।

তিনজনই সারাদিন এটাই ভেবেছিলো যে, কি হলো ত্রিশার? কারন ত্রিশাতো কলেজের ক্লাশ বাদ দেওয়ার মেয়ে নয়। যেহেতু ত্রিশার কোনো সেলফোন নেই সেহেতু ওর খবর নেওয়ারও কোনো উপায় নেই।

তাই তিনজনই একজোট হয়ে চললো ত্রিশার বাড়ি। মচকে যাওয়া পা নিয়েই ত্রিশা একটা বালিশ পিঠে দিয়ে আধশোয়া হয়ে পড়ছিলো।
বান্ধবীরা এসেই ওকে শাবাসি দিয়ে বললো,

” তুই পারিস ও ত্রিশা!”

ত্রিশা হেসে বললো,

” বারে! পা দিয়ে তো আর পড়তে হয় না, পা মচকেছে তাতে কি?

কিন্তু প্রকৃত ঘটনা আর সে বান্ধবীদের সামনে খোলাসা করলো না।

ত্রিনা ত্রিশার দিকে গাঢ় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,

” দোস্ত ব্যাপার কি? কাজল দিয়েছিলি নাকি চোখে?”

ত্রিশা এবারো আগের দিনের ঘটনা চেপে গেলো যে, ওকে সাজিয়ে গুছিয়ে পাত্রপক্ষের সামনে প্রদর্শন করা হয়েছিলো।

এবার ত্রিশাকে সারাদিন কি কি হয়েছে তা জানাতে লাগলো স্নিগ্ধা আর ঊষা আর ত্রিনা।

বিভার সাবাধানী বার্তা থেকে শুরু করে রবির সাথে ত্রিনার ডেটিং বিষয়াদি সব আলোচনা শুরু হলো।

স্নিগ্ধা কাঁদো কাঁদো হয়ে বললো,

” ত্রিশা রে! এবার আমার আর ঊষার কি হবে রে? শা*লি বিভা আজকে সবাইকে শাসিয়ে দিয়েছে, কেউ যেনো আর আহনাফ স্যারের দিকে না তাকাই, আহনাফ নাকি ওর নিজের সম্পত্তি! ”

ত্রিনা বললো,

” ইশ! থাম তো স্নিগ্ধা, আমার মনে হয় শা*লি মিথ্যা বলছে, স্যার তো ওরে সেকেন্ডে সেকেন্ডে অপমান করে, ও কেমনে স্যারের ফিয়ন্সি হয়, সব বানোয়াট, ঢংগী মিথ্যাবাদীটা সব বানায়া বলে নিশ্চয়!”

স্নিগ্ধা তার কাঁদো কাঁদো ভাব বজায় রেখেই বললো,

” নারে দোস্ত! ওর কথার ধরন দেখে বুঝিস নাই? তুই বুঝবি কি রে! তোর তো আছে একজন, তুই সিঙ্গেল মানুষের দু:খ কি বুঝবি? রবি ভাই তো তোমারে উঠতে বসতে চাটে!”

ত্রিনা হাসতে হাসতে বলে,
“আর কইস না বান্ধবী”

ঊষা বলে উঠলো
” কি কমু না? তুই জানিস না তো ত্রিশা, এই ত্রিনা আজকে সকালে ঐ নদীর ধারে ডেইটে গেছিলো, যাওয়ার আগে দেখছিলাম, ওর ঠোঁট ভর্তি লিপস্টিক, আসার পর দেখি একদম ধলা ফুরফুরা ঠোঁট, তাইলে তুই ই বল, কি পরিমান চাটন চাটে রবি ভাই, যে সব লিপস্টিক সাবাড়!”

ত্রিশা হেসে বলে,

” এ আর নতুন কি? যত বারই তুই ডেটিং এ গেছিস, প্রতিবারই তোর ঠোঁটের লিপস্টিক গায়েব, এটা দেখে বেচারি ঊষার কি পরিমান কলিজা জ্বলে তা কি তুই বুঝিস?”

ত্রিনা হেসে বলে,

” আচ্ছা বাবা, বুঝলাম, বুঝলাম, এবার আমি যত দ্রুত পারি তোদের জন্য দুইটা বফ জোগাড় করবোই করবো, আর এমন বফ যারা চা’টার ক্ষেত্রে হয় এক্কেবারে ওস্তাদ!”

এই কথা বলার পর স্নিগ্ধা আর ঊষা দুজনেই ত্রিনাকে পেটানো শুরু করে,

” একটু রাখঢাক করে কথা কবি তো বে’হায়া”

তারপর সবাই হাসতে হাসতে বললো,

” তয় ত্রিশার বফকে আমরা কিচ্ছু বলতে পারমু না। কারন ত্রিশার ঠোঁট এমনিই লাল টুকটুকা, ওর ঠোঁট খাইলেও আমরা ধরতে পারমু না আর না খাইলেও ধরতে পারমু না”

এ কথা শুনে ত্রিশা যার পর নাই লজ্জা পেয়ে বললো,

” ইশ! তোদের মুখের কোনোই লাগাম নাই রে! দাদী শুনলে কি ভাববে?”

বলতেই ত্রিনা ফিসফিস করা শুরু করলো,

” তুমি জানো নাগো বান্ধবী প্রেমের ছোঁয়া যে কত মধুর হয়, জানলে তুমিও প্রেম করার জন্য মাতাল হয়ে যাবা,”

স্নিগ্ধা ত্রিনাকে জেঁকে ধরলো,

” ইয়ার বল না, কেমন লাগে তোর, যখন সে তোর কাছে আসে, জড়িয়ে ধরে?”

ত্রিনা বলতে লাগলো,

” কি যে ভালো লাগে বান্ধবী, সারা শরীরে এক ধরনের প্রেমের ঢেউ খেলে যায়, যখন ওকে কাছে পাই, মনে হয় সারা জীবন ওকে ওভাবেই জাপ্টে ধরে থাকি”

ত্রিনার কথা শুনে ত্রিশার আহনাফের কথা মনে পড়ে গেলো। বৃষ্টির জলে দুজনের দেহ দুজনের সাথে লেপ্টে আছে, তখনকার স্মৃতি সে কোনোদিন ভুলতে পারবে না। যদিও প্রেম নেই ওদের মধ্যে কিন্তু এই দু’ দিনে আহনাফের জন্য কিছু একটা সৃষ্টি হয়েছে ওর মধ্যে। রাতে স্বপ্নেও দেখেছে সে আহনাফকে। ওর জন্য একটা লাল গোলাপ নিয়ে এসে ওর চুলে গুঁজে দিচ্ছে।

না! ত্রিশা আহনাফকে নিয়ে তার এ অনুভূতি কাউকে বলবে না, থাক না! এটা এক একান্ত অনুভূতি হিসেবেই!
.
.
দু’ দিন পর ত্রিশা আবার কলেজে এলো। আহনাফের কাছে এ দু’দিন দু যুগ মনে হলো। আহনাফের দু’ চক্ষু যেনো ত্রিশা নামক মনোহরিনীর অমায়িক শুভ্র সে রুপটা দেখার জন্য মুখিয়ে ছিলো।

ম্যাথ ক্লাশে এসেই সেজন্য সে ত্রিশাকে বারবার পড়া ধরতে শুরু করলো। এই ভেবে, যতবার পড়া ধরা যাবে, ততবার তাকানো যাবে ওর দিকে।

দুই দুই বার ডায়াসেও ডেকে নিয়ে মার্কার ধরিয়ে দিলো বিভিন্ন ইকুয়েশন সলভ করার জন্য।

কিন্তু ত্রিশা এমনিতেই দু’দিন ক্লাশে অনুপস্থিত ছিলো, তাছাড়া কোনো প্রাইভেটও পড়েনা বলে কিছুই করতে পারছিলো না।

তাই আহনাফ নিয়ম অনুযায়ী ত্রিশাকে দাঁড় করিয়ে রাখলো গোটা ক্লাশ জুড়ে।

এতে আহনাফের চক্ষু শীতল হলেও মনে মনে কষ্ট পাচ্ছিলো, ত্রিশাকে কষ্ট দিচ্ছে বলে।

টিফিনের সময় অন্য সবাই যখন ক্যাফেতে নাস্তা করতে গিয়েছে তখন আহনাফ তার পিয়নের দ্বারা ত্রিশার কাছে বার্তা পাঠালো, ” ছুটির পর কেবিনে এসো, প্লিজ কাম এলোন” এই লিখে।

ত্রিশার বুকের ভেতর ধুক্ ধুক্ করে উঠলো, এই বার্তা দেখে। অসংখ্য প্রশ্ন এসে ভীড় করলো মন ও মগজে। ভীতুরা একটু বেশিই কনফিউজড হয়ে থাকে। ত্রিশারও তাইই হলো। বুক কাঁপার সাথে সাথে হাত পা ও কাঁপতে শুরু করলো। স্যার কি পানিশমেন্ট দেওয়ার জন্য ডাকছে? নাকি? গোয়েন্দাগিরি? নাকি অন্য কিছু? বান্ধবীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে কিভাবে একা আহনাফের কেবিনে যাবে, এই ভেবে আরো ভয় পেতে লাগলো।

ছুটির আগে সে বান্ধবীদের মিথ্যে বললো, ” আজ বাসা থেকে গাড়ি পাঠাবে রে! তোরা আজ চলে যা, আমি গাড়িতে করেই যাবো”

একথা বলায় সবাই বেশ খুশি হয়ে গেলো, ” বারে! এতদিনে তাহলে ওর বাবার শুভ বুদ্ধি হলো তাহলে, যাদের ডজন খানেক গাড়ি তাদের মেয়ে যায় অটোরিক্সায়! হোয়াট আ আইরনি?”

তাই সবাই যার যার মতো চলে গেলো ত্রিশাকে রেখে।

দুরুদুরু বুকে ত্রিশা আহনাফের কেবিনে গেলো।

আহনাফ তার সামনের সিট দেখিয়ে ঈশারায় ওকে বসতে বললো,

” থ্যাক্স স্যার”

আহনাফ বলা শুরু করলো, একটা প্রশ্ন দিয়ে,

” প্রাইভেট পড়বা তুমি?”

” জ্বী, মানে স্যার?”

” মানে, আমার কাছে প্রাইভেট পড়বে তুমি? তুমি ম্যাথ তো কিছুই পারো না, তাই ভাবলাম, হয়তো প্রাইভেট পড়ো না, তোমার মধ্যে পসেবিলিটি আছে, তাই স্ব-ইচ্ছায় পড়াতে চাচ্ছি”

ত্রিশার বুকের ভেতর এতক্ষণ যে পাথর জেঁকে বসে ছিলো, তা থেকে সে যেনো এক্ষণে মুক্তি পেলো। তবে তাকে প্রাইভেট পড়ানোর ফি কে দিবে, সেটা ভেবেই আমতা আমতা করে বলতে লাগলো,

” স্যার মা’কে বলতে হবে, মা বাবাকে বলবে, তারপর আরকি?”

আহনাফ হেসে বললো,

” আচ্ছা, বলো, বেশ! তবে কোনো ফি লাগবে না, আমি এমনিতেই পড়াবো, ভার্সিটি লাইফে কত স্টুডেন্ট পরিয়েছি এমনিতেই, তার ইয়ত্তা নেই, আর এখন তো মাশাল্লাহ সেল্ফ সাফিসিয়েন্ট, এখন আর প্রশ্নই আসে না”

ত্রিশা হাসিমুখে রাজী হয়ে গেলো। টাকা দেওয়া লাগবে না শুনলে মা ও অবশ্যই রাজী হবে। আর সে বাবাকেউ ম্যানেজ করে নেবে।

ত্রিশা জিজ্ঞেস করলো,
” আপনার বাসায় যাবো স্যার?”

আহনাফ হেসে উত্তর দিলো,

” নাহ! ঔ নদীর ধারে, ওখানটা বেশ নিরিবিলি? ভয় পেয়ো না আবার! বিশ্বাস হয় আমাকে? নানা জায়গায় ছাত্রীরা তো আবার শিক্ষকদের দ্বারা হ্যারাজ এর শিকার হচ্ছে তাই বললাম, আগেই বলে রাখছি, যদি ওরকম ভয় থাকে, তবে এসোনা”

ত্রিশা অবাক হলো, গোটা কলেজের ছাত্রীরা যাকে প্রতিনিয়ত হ্যারাজ করেই আসছে, আর সে নিরবে সব সহ্য করে আসছে। কখনো কোনো মেয়েকে যে পাত্তা দেয় না, সে হ্যারাজ করবে আমাকে?

ভেবে ত্রিশা একা একাই হাসতে লাগলো।

ত্রিশা আহনাফের কেবিন থেকে বের হওয়ার আগে সে বলে দিল,

” আগামীকাল বিকেল ঠিক পাঁচটায় দেখা হচ্ছে ঐ নদীর ধারে কূলগাছ তলায়, কেমন?”

ত্রিশা আস্তে করে ” ওকে ডান” বলে বিদায় নিলো।

আহনাফ ওর চলে যাওয়ার পানে চেয়ে রইলো।

হাত থেকে চুল দুটো বের করে পরম যত্নে গাইতে লাগলো,

” তোমার প্রেমে জ্বলবো আমি, যেনো এক মা’রণ চিতা, রুপে তোমার ভাসবো আমি, যেনো এক ছন্নছাড়া”

(চলবে)