তুমি থেকো দাঁড়িয়ে খোলা বারান্দায় পর্ব-১২+১৩+১৪

0
1

#তুমি_থেকো_দাঁড়িয়ে_খোলা_বারান্দায়
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ১২

সময় নিয়ে গোসল সেরে বেরিয়ে এলাম ওয়াশ রুম থেকে। বাহারাজ তখন কক্ষে নেই। তোয়ালে মাথায় প্যাঁচিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ালাম। লোশন, ক্রিমের উপর ম্যান লেখা দেখে মুখ বাকালাম। শুষ্ক ত্বক নিয়ে আমি থাকতে পারি না। বাহারাজকে বলে আন্টি লোশন ও ক্রিম দিয়ে আজকের রাতটা পার করতে হবে- সেই ভেবে বাহারাজের সন্ধানে বের হলাম। নিচতলায় রসুইঘর থেকে মৃদু শব্দ শুনে সেদিক অগ্রসর হলাম। বাহারাজ যত্ন করে রান্না করছে। ছেলেটার রান্নার গুণ আছে ভেবে অবাক না হয়ে পারলাম না। বুকে হাত গুজে বললাম, “আপনি রান্না করতে পারেন?”

আপাদমস্তক পর্যবেক্ষণ করে বলল, “শুধু স্যুপ বানাতে পারি। সেটাই করছি।”

“ওহ্।”

“তোমার এত তাড়াতাড়ি গোসল হয়ে গেছে? আমি যতদূর জানি, মেয়েদের গোসল করতে সময় লাগে।”

“হ্যাঁ। সময় লাগে। কিন্তু আপনার মেয়েদের থেকেও বেশি লাগে। চল্লিশ মিনিট ওয়াশ রুমে বসে কী করেন?” পিঞ্চ করে বলে বাহারাজের পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। রান্নায় তার প্রতিটি স্টেপ কণ্ঠস্থ করছি। ডেক্সি থেকে স্যুপ বাটিতে পরিবেশন করে বাহারাজ বলল, “পঁয়তাল্লিশ মিনিট হবে। পঁয়তাল্লিশ মিনিটের কমে আমি গোসল করতে পারি না।”

পঁয়তাল্লিশ মিনিট, সাতাশ শত সেকেন্ড! বাহ্! বাহারাজ টেবিলে খাবার পরিবেশন করে রান্নাঘর পরিস্কার করছে। ‘গোসলের পর ক্ষুধা লাগা’ আমার কাছে এক প্রকার জটিল ব্যাধি। যতই আমার পেট ভরা থাকুক না কেন! চেয়ার টেনে বাটি টেনে এক চামচ মুখে দিলাম। মনে হলো, আগুনের তৈরি কোনো খাবার মুখে প্রবেশ করেছে। গিলে নেওয়ার বিপরীতে সেই বাটিতেই পিক ফেললাম। তপ্ত ধোঁয়া নির্গত হচ্ছে সেই স্যুপের বাটি থেকে। ফ্রিজ থেকে পানি বের করে মুখে নিয়ে বসে রইলাম। অবশ হয়ে আসছে, আরাম অনুভব করছি মুখের অভ্যন্তরে। নিজের বাটিটা টেনে বসল বাহারাজ। ফুৎকার দিয়ে এক চামচ মুখে তুলে বলল, “কেমন লেগেছে?”

সৌজন্য হাসতেই মুখের ঠান্ডা পানিটুকু নিচের দিকে ধাবিত হলো। মুহুর্তেই জ্বলে উঠল মুখ। নিজেকে ধাতস্থ রেখে বললাম, “খাইনি।”

“রান্নার মধ্যে এটাই ভালো জানি, সবাই বলে আমি খুব ভালো স্যুপ বানাতে পারি। খেয়েই দেখো একবার।” বাহারাজ ও বাটির দিকে দৃষ্টি অদলবদল করে উপায় খুঁজছি। বাহারাজ ফিচেল হেসে বাটিটা ওলট-পালট করে বলল, “ফাঁকা বাড়িতে সুযোগ নিতে চাইলে, কিছু মেশানোর প্রয়োজন নেই। স্বাভাবিকভাবে তুমি আমার শক্তির সাথে পেয়ে উঠবে না। খাও।”

বাহারাজের পান করা বাটি থেকে আমি ধীরে ধীরে খেতে লাগলাম। বাহারাজ স্বাভাবিক ভাবে খাচ্ছে। না পারছি সত্যিটা বলতে, না পারছি দৃশ্যটা গিলতে। জড়তা নিয়ে চামচ দিয়ে বাটিতে আঁচড় কেটে যাচ্ছি।
___

ঘড়ির কাঁটা দুইটার ঘরে পৌঁছেছে। বাহারাজের ঘরে শুয়ে এপাশ ওপাশ করছি আমি। দুপুরের দীর্ঘ একটা ঘুমের কারণে এখন নির্ঘুম রাত অতিবাহিত হচ্ছে আমার। টেবিল ল্যাম্পটা জ্বলছে তখন থেকে। অদূর থেকে ভেসে আসছে কুকুরের ডাক। বিছানা ছেড়ে উঠে গেলাম আমি। বাহারাজের শার্টটা স্পর্শ করে লাজুক হাসলাম আমি। ওর প্রতি তৈরি হওয়া আবেগ ও মোহ আমার মনে মস্তিষ্ক দখল করে নিচ্ছে কেবল। এই মাঝরাতে ওর সাথে জমিয়ে আড্ডা দিতে ইচ্ছে করছে। কক্ষ ত্যাগ করে নিবিড় ভাইয়ের কক্ষে গেলাম। বাহারাজ সেখানে ঘুমে বিভোর। দরজায় কয়েকবার করাঘাত করতেই বাহারাজ ঢুলতে ঢুলতে বেরিয়ে এলো। ‘সারাদিনের ক্লান্তি’ বিশ্রাম খুঁজে নিয়েছে রাতের ঘুমে। কাঁচা ঘুমে চোখদুটো লালচে হয়ে এসেছে। তৈলাক্ত ভাবটা ফুটে উঠেছে মুখমণ্ডলে। বাহারাজ খানিক বিরক্ত হয়ে বলল, “এখনো জেগে আছ, ঘুমাওনি?”

তার সঙ্গ পেতে মিথ্যা বললাম, “অচেনা জায়গায় ঘুমানো যায় নাকি? ভয় করছে।”

“তো! আমার ঘুম নষ্ট করে তোমার কাছে গিয়ে বসে থাকব স্টুপিড? আলো জ্বালিয়ে শোও, ভয় করবে না।”

‘স্টুপিড’ শব্দটা আমার মস্তিষ্ক আওড়ালো। দ্বিতীয়বার বাহারাজের দিকে না তাকিয়ে মন খারাপ করে ঘরে ফিরে এলাম। চোখের কোণে পানি এসে ভিড় করেছে। কেউ কখনো আমার সাথে ধমকে কথা বলেনি। পরিবারের ছোট কন্যা তো তাই। সত্যিই তো, ঘুম রেখে রাত জেগে কেন আমার কাছে বসে থাকবে বাহারাজ। যদি গার্লফ্রেন্ড হতাম, তাহলে ভিন্ন কথা। পার্স ব্যাগ থেকে ফোন বের করে ফেসবুকে ঢুকলাম। কতশত ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এসেছে। চেনা অচেনা বহু মানুষ আমাকে ট্যাগ করে গানটি পোস্ট করেছে। আমার গান নিয়ে তাদের উন্মাদনার শেষ নেই। অথচ আমার মনের কোনে শান্তি নেই। নামহীন আইডির মানুষটাও মেসেজ দেয়নি আর। এক্টিভ নেই বহুক্ষণ। জানভির কথা মনে পড়ল। অফিস থেকে ফিরতে রাত হয়ে যেত। কখনো যদি আমার ঘুম না আসছে ওকে জাগিয়ে লুডু বাজি খেলতাম। আচ্ছা! জানভিও কি গ্ৰামে গেছে?
আমার আকাশ-পাতাল ভাবনার মাঝে কোনো আগন্তুক ঘরে প্রবেশ করল। কৌতূহলবশত ঘরে উঁকি দিতেই দেখলাম সে বাহারাজ। মলিন হেসে কিছু বলার পূর্বেই সে বলে উঠল, “তোমার না ভয় করছে, বারান্দায় কী করছ?”

বারান্দায় দরজার ছিটকিনি তুলে বললাম, “ঘুম আসছে না তাই সময় পার করছি। আপনি গিয়ে ঘুমান।”

বাহারাজ ঘুম বিদায় দিয়ে যেন চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। স্বাভাবিকভাবে বলল, “একবার ঘুম ভেঙ্গে গেলে আমার আর ঘুমে ধরে না।”

অনুতপ্ত হলাম আমি। নিজের সাথে আরেকজনকেও নির্ঘুম করেছি। অনুশোচনা মাখা গলায় বললাম, “এক্সটেইমলি সরি। বুঝতে পারিনি।”

“সরি তো আমার বলা উচিত, অতিথি এনে ঘরে ফেলে রেখেছি। দুমুঠো খাওয়াতেও পারিনি, সঙ্গও দিতে পারিনি।”

“ইটস ওকে। আপনি গিয়ে শুয়ে থাকুন। একটু পর ঘুম চলে আসবে।” বাহারাজ হাসল চড়া করে। চিবুক খানিক উঁচু করে বলল, “রেগেছি বলে রাগ করেছ? কাঁচা ঘুম থেকে উঠলে আমার মাথা ব্যথা করে। তাই তোমাকে বকে ফেলেছি। সরি।”

“আমি কিছু মনে করিনি।”

“তোমার চোখমুখ তা বলছে না।” যতটা উৎসাহ নিয়ে বাহারাজের কাছে থাকতে চেয়েছিলাম, এখন আর সেই স্পৃহা নেই। আমি পুনরায় বারান্দার দিকে অগ্রসর হতেই বাহারাজ হাতটা ধরে ফেলল। ভ্রু কুঁচকে বলল, “আমাকে ঘুমহীন করে ঘুমানোর উপদেশ দেওয়া হচ্ছে বুঝি? লুডু খেলব।”

অভিমান দূর করে হেসে ফেললাম আমি। অতঃপর বাহারাজ একটা লুডু কোট ও গুটি নিয়ে এলো। আগ্রহ নিয়ে উভয়ে খেলতে বসলাম। প্রথম রাউন্ডে কৌশলপ্রয়োগ ছাড়াই বিজয়ী হলাম। তবে দ্বিতীয় রাউন্ড খেলার পূর্বে শর্ত দিলাম, “যদি আমি জিতি, তাহলে আমার সাথে ভূতের সিনেমা দেখতে হবে আপনাকে।”

একা একা ভূতের সিনেমা দেখা আমার কাছে দুঃস্বপ্নের মতো একটা বিষয়! আপু ও ভাইয়ার সাথে সিনেমা দেখলে ওরা আমাকে শুধু ভয় দেখায়। উত্তরের আশায় বাহারাজের দিকে চেয়ে আছি। বাহারাজ নিজেও শর্ত রাখল, “ঠিক আছে। যদি আমি জিতি তবে একদিন আমাকে রান্না করে খাওয়াতে হবে।”

“ওকে ডিল ডান।”
এই রাউন্ডে বাহারাজ ঝড়ের বেগে গুটিগুলো পাকিয়ে ফেলল। বসে বসে দেখা ছাড়া উপায় নেই। বিশাল ব্যবধানে হেরে সিনেমা দেখার ইচ্ছা বিসর্জন দিতে হলো। চিত হয়ে শুয়ে পা দেয়ালের সাথে ঠেকিয়ে বললাম, “একদিন আপনাকে রান্না করে খাওয়াব। কী কী খেতে চান, লিস্ট করে জানিয়েন!”

“আচ্ছা। ভোর হতে দেরি আছে। এইটুকু সময় হরর মুভি দেখে কাটিয়ে দেই।” বাহারাজের কথায় আমার উত্তেজনা বেড়ে গেল। বাহারাজ উঠে চলে গেল। তিন মিনিট বাদে ফিরে এলো ল্যাপটপ নিয়ে। হরর মুভি চালিয়ে ঘরের আলো নিভিয়ে দিল। তৈরি করল হরর এক পরিবেশ। ভয়ানক চরিত্রগুলো দেখে আমার রক্ত শীতল হয়ে যাচ্ছে। চোখ বন্ধ করে বাহারাজের হাত ধরে বললাম, “আপনি একটু কাহিনীগুলো আমাকে বলুন। চরিত্রগুলো দেখলেই লোম দাঁড়িয়ে যাচ্ছে।”

বাহারাজ প্রতিটি দৃষ্টি আমাকে বলছে। পল্লব ঢেকে বাহারাজের এক্সপ্লেইন শুনতে শুনতে পাড়ি দিলাম ঘুমের রাজ্যে!

[চলবে… ইন শা আল্লাহ]

#তুমি_থেকো_দাঁড়িয়ে_খোলা_বারান্দায়
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ১৩

ঘুম থেকে উঠে বাহারাজকে নিজের খুব কাছে আবিষ্কার করলাম। দুজনের ব্যবধান হবে হয়তো দু ইঞ্চি। আমি নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে বাহারাজের দিকে চেয়ে রইলাম। ঘুমন্ত অবস্থায় তাকে বাচ্চাদের মতো মনে হচ্ছে। যে সদ্য জন্ম নেওয়া এক নবজাতক। উপুড় হয়ে শোয়ার কারণে বাহারাজের বাবরি চুলগুলো সম্পূর্ণ মুখে ছড়িয়ে আছে। আমি খানিক এগিয়ে বাহারাজের চুলগুলো ডানহাতে সরিয়ে ফস করে এক চুমু খেয়ে বসলাম। পরক্ষণে নিজেই নির্বাক হলাম। আচমকা এ কী করে বসলাম আমি? বাহারাজ জেগে থাকলে নির্ঘাত আমাকে বিদ্রুপ করত। তড়িঘড়ি করে উঠতে গিয়ে ঠাস করে মাটিতে পড়লাম। বাহারাজ ধরফরিয়ে উঠে বসল। এদিকে-ওদিকে চেয়ে শব্দের উৎস খোঁজার চেষ্টা করছে। আমি খানিক ঝুঁকে গড়িয়ে গড়িয়ে বিছানার নিচে চলে গেলাম। বাহারাজ বিছানা ছেড়ে নামল। ধপাধপ পা ফেলে কক্ষ ত্যাগ করল। সেই সুযোগে আমি বিছানার নিচে বেরিয়ে আসার প্রয়াস করলাম। কিন্তু হায়! নিরুপায়! তখন কোমরে ব্যথা না লাগলেও এখন ব্যথা অনুভব করছি। উঠে দাঁড়ানোর জো নেই। বাহারাজ ফিরে এসেছে ততক্ষণে। বড়ো বড়ো পা ফেলে একদম সামনাসামনি এসে দাঁড়াল। বুকে হাত গুজে বলল, “হানি, নিচ থেকে বেরিয়ে এসো।”

আমি নিচে থেকে উঁকি দিয়ে বাহারাজের মুখশ্রী দর্শন করলাম। হাতটা তার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললাম, “উঠতে পারব না। ধরে উঠান।”

“ওখানে গেলে কীভাবে?” বাহারাজের কথায় মিথ্যা বললাম, “আপনি ছক করে আমাকে বিছানা থেকে ফেলে দিয়েছেন। মেঝেতে পড়ে গড়াতে গড়াতে ভেতরে চলে গেছি, বুঝেছেন?”

“সরি।”
আমি লাজুক হাসলাম। বাহারাজ আমাকে টেনে বিছানার নিচ থেকে বের করে আনল। আমার স্মার্টফোনটা ভোঁ ভোঁ করে উঠল। ফোনটা নিয়ে দেখলাম জানভি কল করেছে। সাইলেন্ট মোডে রেখেছিলাম রাতে। উদ্বিগ্ন হয়ে ফোন রিসিভ করতেই জানভি কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে বলল, “হানি, ডাক্তার বাবাকে ঢাকাতে ট্রান্সফার করে দিয়েছে। আমরা অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়েছি। তুই একটু মাকে বুঝিয়ে বাড়িতে নিয়ে যাস। মায়ের কান্না থামছে না।”

বুলি খোয়া গেল আমার। স্থির পলকে মেঝের দিকে তাকিয়ে আছি। ফুফার কী এমন হয়েছে যে তাকে ঢাকাতে ট্রান্সফার করা হয়েছে? আমি প্রশ্ন করলাম, “ফুফার কী হয়েছে জান? তোমরা সবাই আমাকে না বলে কোথায় গিয়েছিলে?”

কাতরকণ্ঠে বলল, “বাবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে হানি। বাবার অবস্থা ভালো নয়।”

“এখন কোথায় আছো তোমরা?”

“হসপিটালের কাছাকাছি।” জানভির থেকে ঠিকানা নিয়ে ফোন রাখলাম আমি। বাহারাজ কৌতূহলী দৃষ্টিতে আমার পানে চেয়ে আছে। আমার চোখে বর্ষণ শুরু হলো। হেঁচকি তুলে বললাম,”ফুফা খুব অসুস্থ। তাকে ঢাকাতে শিফট করা হয়েছে। জান খুব কাঁদছিল। আমার খুব ভয় করছে বাহারাজ ভাই।”

বাহারাজ আমার মাথায় হাত রেখে নিজের উদরে ঠেকিয়ে দিল আমায়। আমার চোখের নোনাজলে বাফারাজের টিশার্ট ভিজে যাচ্ছে।
আইসিইউ বাইরে বসে আছে প্রিয়জনেরা। ফুফু তখনও প্রিয়তমর অসুখে কেঁদে চলেছে। সেখানে উপস্থিত হয়ে মাকে রাগ দেখিয়ে বললাম, “এতবড় একটা ঘটনা, আমাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করোনি তোমরা।”

মা শান্ত গলায় বলল, “তোর শরীরটা তো ভালো নেই মা, তাই তোর ফুফু-ই জানাতে বারণ করেছে।”

“বারণ করলেই হবে? আমি মেনে নেব?” ঝাঁঝালো গলায় বললাম আমি। আশেপাশের মানুষ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে এদিকে তাকাল। আমার তাকে কিছু যায় আসেনা। তবে অন্যদের যায় আসে। আপু নত গলায় বলল, “হানি, এটা হাসপাতাল। সিনক্রেট করিস না।”

দমে গেলাম আমি। চোখ বন্ধ করে কয়েকবার শ্বাস টেনে নিজেকে ক্ষান্ত করলাম। একদিন আমিও বড়োসড়ো কোনো অঘটন ঘটিয়ে কাউকে কিছু জানাব না, দেখে নিও!
খানিক দূরে মাথায় হাত রেখে বসে আছে জানভি। আমি জানভির কাঁধে হাত ছোঁয়াতেই ও ফিরে চাইল। চোখের পল্লব ভিজে আছে অশ্রুতে। হাঁটু মুড়ে ওর দুগালে হাত রেখে বললাম, “জান প্লীজ কেঁদো না। সব ঠিক হয়ে যাবে।”

জানভির চোখ বিরতি দিল না। ফোঁটার পর ফোঁটা ঝরতে লাগল চোখ থেকে। আচমকা আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল, “কবে এসব ঠিক হবে হানি? কবে? আমি আর অপেক্ষা করতে পারছি না।”

“ধৈর্য ধরতে হবে তোমায়।” জানভির মাথায় হাত বুলিতে দিতে লাগলাম। জানভি আমাকে ছাড়ল না। দৃঢ় করে ধরে রাখল। জানভির কান্না দেখে ফুফুও কেঁদে দিল। ক্রন্দনরত অবস্থায় বলল, “কী এমন দোষ করেছিলাম, যার জন্য ওনাকে এতবড় একটা শাস্তি পেতে হচ্ছে?”

ওয়ার্ডবয় স্ট্রেচারে করে একজন রোগীকে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের কেবিন দেখিয়ে দিচ্ছিল এক নার্স। তিনি ফুফুকে কাঁদতে দেখে উঁচু গলায় বললেন, “কী হচ্ছে এখানে? হাসপাতাল কোনো কান্নার জায়গা নয়। হাসপাতালে এত লোক কেন? বাড়িতে যান আপনারা।”

ফুফু আঁচল মুখে দিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে চলেছে। বাবা সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “বেয়াই সাহেব, অনেকক্ষণ তো আমাদের পাশে ছিলেন। এবার বাড়িতে গিয়ে রেস্ট নিন। আমরা এখানে আছি।”

মাহবুব আলম সায় দিলেন বাবার কথায়। স্ত্রী হাসি ও নিবিড়ের উদ্দেশ্যে বলল, “এখানে বেশি মানুষ থাকা যায় না। আমরা বরং বাড়িতে‌ ফিরে যাই। পরে এসে একবার দেখে যাব।”

বাহারাজ বলল, “হিয়ান এখানে নেই। ওর অবর্তমানে একজন ছেলে এখানে দরকার। আমি এখানে থাকি। ভাই তুই বিশ্রাম নিয়ে আয়।”
অগত্যা রান্নার জন্য আমাকে বাড়িতে যেত হলো। আমার রান্নাহাত যতটা পাক্কা পোক্ত, ততটা আপুর নেই। পড়াশোনায় মেধাবী হওয়ার কারণে ও সবসময় ঘরকন্নার কাজ থেকে দূরে ছিল।
পুরো রাস্তা জানভি আমার কাঁধে মাথা রেখে ছিল। আমার কাছে ও যতটা প্রিয়, তারথেকে বেশি প্রিয় আমি ওর কাছে।

জানভিকে বিছানায় শুইয়ে কম্বলটা টেনে দিয়েছি ওর দেহে। অতঃপর কড়া আদেশ দিয়ে রান্নাঘরে ঢুকলাম। ক্লান্ত আপু আমাকে কাজে যথেষ্ট সাহায্য করতে চাইল, নাকচ করে ওকে ঘুমাতে পাঠিয়ে দিলাম। ফ্রিজ থেকে মুরগি বের করে পানিতে ভিজিয়ে রাখলাম। ভাত বসিয়ে দিয়ে লক্ষ করলাম বাহারাজ রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে আছে। ভ্রু কুঁচকে বললাম, “বসে আছেন কেন? আপনাকে গতরাতে অনেক বিরক্ত করেছি। আমার ঘরে যেয়ে ঘুমান।”

“পরে ঘুমান যাবে, তোমার কোনো হেল্প লাগলে বলো।”

“আপনি তো স্যুপ ছাড়া কিছু পারেন না। আমাকে হেল্প করবেন কীভাবে?” বলেই ব্যঙ্গাত্মক হাসলাম। বাহারাজ লাফ দিয়ে ওপরে বসল। নাইফ নিয়ে পেঁয়াজ কাটতে কাটতে বলল, “রান্না আমি পারি না, কিন্তু পেঁয়াজ কুচি করতে পারি।”

আমি জবাব দিলাম না। মেঝেতে বসে মুরগি টুকরো করতে লাগলাম। ফুফার জন্য চোখ থেকে পানি ঝরতে শুরু করল। আমার ফুফা বেশ সরল মনের মানুষ। তিনি জানভিকে নিয়ে দুশ্চিন্তা করেন বেশি। ইতোমধ্যে দুবার হার্ট ব্লক করেছে। তবে গুরুত্বর কোনো সমস্যা হয়নি। কান্নার পরে মৃদু কেঁপে উঠছে আমার শরীর। বাহারাজের দৃষ্টি থেকে বিষয়টি নড়চড় হলো না। আমার দু কাঁধে হাত রেখে আদুরে গলায় বললেন, “মধুরানী সবাই সামলে এখানে এসে ভেঙে পড়েছে?”

“বাহারাজ ভাই, আমার ভেতরটা উথালপাথাল করছে। যদি কিছু হয়ে যায়!”

“যা হবে, ভালোই হবে মধু। শান্ত হও।” বাহারাজ আমার পাশেই বসে আছি। আমি নিজের মাথাটা ওর কাঁধে রাখলাম। বাহারাজ একহাতে আমাকে আবদ্ধ করে নিল। ওকে যতবার দেখছি, অবাক হয়ে যাচ্ছি। রুষ্ট বাহারাজ এত ক্ষান্ত! দুজনে মিলেমিশে রান্না শেষ করলাম। বাহারাজ রান্না না করলেও পাশে থেকে আমাকে সঙ্গ দিয়েছে। টিফিন ক্যারিয়ারে খাবার পরিবেশন করতে করতে বললাম, “লুডুতে হেরে যে শর্ত দিয়েছিলেন, তা পালন করার সময় এসেছে বাহারাজ ভাই। আপনিই বরং খাবার টেস্ট করুন।”

“যেটা বাহারাজের, সেটা অন্যকারে হবে না হানি। সেটা শুধু বাহারাজের।” শক্ত গলায় বলে টিফিন ক্যারিয়ার সমেত বাহারাজ রান্নাঘর প্রস্থান করল। বাহারাজের দৃষ্টিতে আজ ভিন্ন কিছুর আভাস পেলাম। কী সেটা?
জানভির দেওয়া স্কুটির সামনে বসলাম আমি। বাহারাজ পেছনে বসে টিফিন ক্যারিয়ার ধরে আছে একহাতে। স্টার্ট দিয়ে বাহারাজকে উদ্দেশ্য করে বললাম, “ধরে বসুন।

বাহারাজ তার হাতটা আমার কোমরে রাখল। আমি কেঁপে উঠলাম ওর স্পর্শে। গলা শুকিয়ে মরুভূমি হয়ে এলো। আজ বাহারাজের শরীর থেকে কোনো পারফিউমের গন্ধ ভেসে আসছে না। ভেসে আসছে তার দেহের গন্ধ। অতি মিষ্টি সে গন্ধ। সুগন্ধ। যে সুগন্ধ আমাকে উথালপাথাল সমুদ্রের বুকে ফেলে দিয়েছে।

চলবে… ইন শা আল্লাহ

#তুমি_থেকো_দাঁড়িয়ে_খোলা_বারান্দায়
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ১৪

খাবার নিয়ে হাসপাতালে গিয়ে সবাইকে হাস্যোজ্জ্বল মুখে দেখে স্বস্তি পেলাম। ফুফু আমাকে জড়িয়ে ধরে খুশখবর দিল, “হানি, তোর ফুফার জ্ঞান ফিরেছে মা।”

আমি গদগদ হয়ে বললাম, “ফুফাকে গিয়ে বলব তার বউ ছিঁচকাদুনে। কেঁদে হাসপাতাল মাথায় তুলেছে।”

ফুফু লাজুক হাসল। পরক্ষণে মুখ বেজার করে ফেলল। আমি কৌতূহলী দৃষ্টিতে মায়ের দিকে তাকিয়ে কারণ জানতে চাইলাম। মা বলল, “ডাক্তার বলেছে তোর ফুফার হার্টে রিং বসাতে হবে। তোর ফুফু খরচ নিয়ে চিন্তা করছে।”

আগেরবার হার্ট ব্লক করার কারণে কার্মহীন থাকতে হয়েছে ফুফাকে। জানভি তখন পড়াশোনা জন্য আমাদের কাছে থাকত। পরবর্তীতে ভাইয়ার সাথে অফিসে যোগদান করেছে। বর্তমানে জানভিই তার পরিবারের ভরণপোষণে দায়িত্ব নিয়েছে। আমি ফুফুর হাত দুটো ধরে বললাম, “আমরা কি তোমার পর ফুফু? তোমার ভাইয়ের উপর ভরসা করতে পারছ না তুমি!”

“হানি, বিয়ের পর থেকে ভাইজান আমাদের পাশে আছে, জানভিকে পড়াশোনা শেখানো, চাকরি দেওয়া, মাসে মাসে স্যালারির নাম করে এক্সট্রা টাকা পাঠায়। আর কত সাহায্য নেব তার থেকে?” বলতে গিয়ে ফুফুর চোখ থেকে পানি ঝরে গেল। আমি ফুফুর চোখ মুছে দিয়ে বললাম, “দাদা-দাদির অবর্তমানে বাবাই তোমার অভিভাবক। তাই আমরণ পর্যন্ত বাবাই তোমাকে দেখবে। এমনকি ফুফার চিকিৎসার টাকাও দিবে। দেখি তুমি কীভাবে না করো।”

বলেই দুকদম পিছিয়ে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়ালাম। ফুফু দুহাত আমার মাথায় রেখে বলল, “ভাইজান তোমার এই মেয়েটা লক্ষ্মী। যেন কত বুঝে! সারাদিন একটা সুসংবাদ শুনলাম না। যেই ও এলো, ওনার জ্ঞান ফিরল। দোয়া করি মা, বাবার মতো হ।”

আমি হেসে উড়িয়ে দিলাম কথাগুলো। টিফিন ক্যারিয়ার থেকে বাটিগুলো খুলতে খুলতে কড়া গলায় বললাম, “অনেক কষ্টে খাবার রান্না করে এনেছি। সবাই ফ্রেশ হয়ে এসো। আমি খাবার বেরে দিচ্ছি।”

“যথা আজ্ঞা মহারানি।” সবাই একই তালে বলে উঠে। আমি ব্রীড়ানত হয়ে খাবার রেখে ফুফার সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে পা বাড়ালাম।

মাঝে অতিবাহিত হয়েছে দিন ছয়েক। ফুফু ও ফুফা আমাদের বাড়িতে রয়েছেন। রাতের খাবার খেয়ে বৈঠকে বসেছি আমরা। টিভি দেখতে দেখতে ফুফা বললেন, “ভাইজান অনেকদিন হয়েছে বাড়ি ছেড়ে এসেছি। ঘরে আলো দেওয়ার মতো কেউ নেই। যদি অনুমতি দেন কালকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিব।”

মা টেবিল গুছাতে গুছাতে বলল, “দুলাভাই জানভিকে বিয়ে দিয়ে দেন। বৌমা ওখানে থাকবে আর আপনারা টোনাটুনি শুধু বেড়াবেন।”

ফুফা রঙ্গ করে বলল, “আজকালকার মেয়েরা স্বামী ছাড়া থাকতে পারে না। তাছাড়া জানভিও বিয়ে করতে চায় না।”

সিঙ্গেল সোফায় জানভি বসে ছিল। সোফার হাতলে বসে জানভির চুল টেনে বললাম, “আপনারা পাত্রী ঠিক করুন। ওকে বিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব আমার। খেয়ে খেয়ে হাতি তৈরি হচ্ছে। বিয়ে দিয়ে বউয়ের হাতের মা/রে যদি স্বাস্থ্য কমে।” পরপর ওকে উদ্দেশ্য করে বললাম, “ফুফুকে একটু রান্নাঘর থেকে মুক্তি দে। বিয়েটা কর। আমরাও একটু দাওয়াত খাই।”

“বোনগুলোকে তাড়িয়ে দুই ভাই বিয়ে করব। বিশেষ করে মধুকে তাড়িয়ে। এমন ডেঞ্জারাস বোন দেখলে কোনো মেয়েই বিয়ে করবে না।” বলেই একগাল হাসল। সবার সামনে বলাতে আমার প্রেস্টিজে লাগল। আমি মুখ ফুলিয়ে বসে রইলাম। জানভি একহাতে আমাকে ধরতে ওকে ছিটকে ফেলে দিলাম। বাবা নীরবতা ভেঙে বললেন, “নিবিড়কে দেখতে যাওয়ার কথা ছিল। এখনও যাওয়া হয়নি। কালকে সবাই একসাথে নিবিড়কে দেখে কিছু একটা পরিয়ে আসি, তারপরে যাস।”

ফুফু বলল, “ভাইজান, আমরা গিয়ে কী করব?”

বাবা তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই ফুফু থেমে গেল। অতঃপর সবাই নিজেদের শোবার ঘরের উদ্দেশ্য রওনা হলো। জানভি আমার পিছুপিছু ঘর পর্যন্ত এলো। আমি ওকে পাত্তা না দিয়ে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলাম। আলো নিভিয়ে ড্রিম আলো জ্বলিয়ে শুয়ে পড়লাম। তলিয়ে গেলাম ঘুমের অতল গহ্বরে। ঘাড়ে চিনচিন ব্যথায় ঘুম ছুটে গেল আমার। তখনও চারদিক ঘুটঘুটে অন্ধকার। চোখ মেলে কোনো আগুন্তকের উপস্থিতি অনুভব করলাম। আমার পড়ার টেবিলের ওপর কেউ পা তুলে বসে আছে। ড্রিম আলোতে তার মুখশ্রী দেখতে পেলাম না। ধরফরিয়ে উঠে বসে বললাম, “কে?”
আগন্তুকের হাসিতে আমিসহ ঘর কেঁপে উঠল। থরথরিয়ে কাঁপছে তখন দেহটা। গলা থেকে শব্দগুলো তখন ফুটছে না। পা নাচাতে নাচাতে সে বলল, “লাইব্রেরিতে তোমার দেখা করার কথা ছিল, মনে আছে?”

“ভূত!” কাঁপা কাঁপা গলায় দুটি শব্দ নির্গত করলাম। তিনি আমার বাড়ি চিনল কীভাবে? আমি তো ঠিকানা দেই নি! পরক্ষণেই নিজের মাথায় কাপড় মে/রে বলতে ইচ্ছে করল, আরে গাঁধী ওদের ঠিকানা দিতে হয়না। গন্ধ শুঁকে চলে আসে।
ফের হাসল সে।‌ গম্ভীর গলায় বলল, “তোমার ফুফা অসুস্থ আমি জানি। কিন্তু তিনি এখন অনেক সুস্থ। তাহলে ভার্সিটিতে না যাওয়ার কারণ কী?”

আমার ওষ্ঠদ্বয় ফাঁকা হয়ে এলো একে অপরের থেকে। চোখের পাতা স্থির হয়েছে বহু আগে। ঠোঁট উলটে বললাম, “আপনি তাও জানেন?”

“তোমার সবকিছু আমার নখদর্পণে। তোমাকে একটা বিষয়ে সাবধান করতে এলাম, জানভির থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলবে। তোমার শরীরের মিষ্টি সুবাস আমি ছাড়া কারো কাছে যাবে না।”

আমি শর্ট টিশার্ট তুলে নাকের কাছে নিয়ে শুঁকলাম। ঘামের গন্ধ ছাড়া কোনো মিষ্টি গন্ধ আমার নাকে পৌঁছাল না। আবার বলল, “ওয়াশরুমের দেয়ালে তুমি বাহারাজ+হানি লিখছ?”

“আপনি এটাও জানেন?”

“ভার্সিটি সম্পূর্ণ আমার আয়ত্তে। না জানলে হবে? বাহারাজকে ভালোবাসো?”

“ভালোলাগে ওকে। জীবনের প্রথম ক্রাশ।” আমি নতজানু হয়ে বললাম। কিছুক্ষণ পর চোখ তুলে দেখলাম জায়গাটা ফাঁকা। কোথায় গেল সে? এই আছি তো এই নেই! আমি কাঁথা টেনে শুয়ে পড়লাম। ঘুম থেকে জেগে ঘাড়ে ব্যথা অনুভব করলাম। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখি, রক্ত জমাট বেঁধে আছে উক্ত জায়গায়। মনে হচ্ছে, কেউ কামড়ে দিয়েছে। খানিকক্ষণের জন্য গতকালের দৃশ্য বিস্মৃতি হয়েছে মস্তিষ্ক থেকে। ব্রাশ নিয়ে ওয়াশ রুমে ঢুকলাম।
আপুর থেকে ওড়না ধার নিয়ে গলায় প্যাঁচিয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্য বের হলাম । চারজন মানুষ বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, মনে হচ্ছে কোনো ভয়াবহ কাজ করে ফেলেছি আমি। জয় আমার চারদিকে ঘুরে বলল, “হানি, তোর গলায় আস্ত একটা সাপ ঝুলে আছে। ওমা তুই এখনো এটা ফেলিস নি!”

আহাদ ব্যঙ্গ করে বলল, “হবু শ্বশুর যত্ন করতে করতে বেচারি ক্লান্ত হয়ে গলায় দড়ি দিতে গিয়েছিল। কচুগাছ না পেয়ে ভুল করে ভার্সিটিতে চলে এসেছে।”

আমি তিরিক্ষি মেজাজে বললাম, “জান শুধু আমার জান। আমার খুব কাছের। ওকে জড়িয়ে কোনো বাজে কথা বলবি না বলে দিলাম।”

ঋতু বাদামের খোসা ছাড়িয়ে মুখে দিতে বলল, “হানি, তুই যতই বলিস। জানভিই তো ফিউচার হাসবেন্ড।”

“জানের প্রতি আমার ভালোবাসার কোনো অনুভূতি নেই। জান ও হিয়ান দুজনেই আমার ভাই।” আমার স্পষ্ট জবাব। তাসফি এবার বিপরীত সুরে বলল, “প্রমাণ করে দেখা।”

“প্রমাণ কীভাবে করব?”

“প্রপোজ করতে হবে। যদি কাউকে তোর মন থেকে ভালোলাগে, তবে চোখ বন্ধ করলে তুই কেবল ওকেই দেখতে পারবি। ভালোবাসার অনুভূতিগুলো শুধু ওর জন্যই বরাদ্দ থাকবে। যদি তোর মনে তেমন কিছু এখনো না আসে, তুই তাহলে যেকোনো কাউকে প্রপোজ করতে পারবি।” ঋতু আবেগপ্রবণ হয়ে বলল। ঋতুর প্রতিটি সংলাপ আমাকে আভাস দিচ্ছে ওর প্রেমের। পিঠে চাপড় মেরে বললাম, “বাহ্! এত অনুভূতি কার জন্য? নতুন প্রেমে পড়েছিস নাকি?”

“পড়েছি। কিন্তু না বলব না।” বুকে দুহাত গুজে বলল ঋতু। উপস্থিত সবাই আমাকে ছেড়ে ঋতুকে ধরে বসল। যাক অবশেষে আমাদের গ্ৰুপে কেউ প্রেমে পড়েছে। আমরা সবাই আগ্রহ নিয়ে বললাম, “সে ঋতুরাজটা কে? যে আমাদের ঋতুর মনে বসন্তের ছোঁয়া এনেছে?”

“তুই কিন্তু নিজের প্রেম কাহিনী লুকাচ্ছিস!” নিজের প্রেমিককে আড়াল করতে আমাকে ফাসিয়ে দিল ঋতু।

“ফলো মি।”- বলে সামনের দিকে এগিয়ে গেলাম। আমার পেছনে পেছনে আসছে ওরা। দেখা যাক, প্রপোজ করার মতো কাউকে পাওয়া যায় কি-না।

চলবে… ইন শা আল্লাহ