#তুমি_থেকো_দাঁড়িয়ে_খোলা_বারান্দায়
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ১৫
“আমি আপনাকে ভালোবাসি তাহসান ভাই।” ভরা ক্যাম্পাসে দাঁড়িয়ে অবলিলায় তাহসানকে প্রপোজ করে বসলাম। তাহসান মস্তিষ্ক শূন্য দৃষ্টিতে আমার পানে চেয়ে আছে। আশেপাশের শিক্ষার্থীরাও চেয়ে আছে এদিক। শরীরটা থরথরিয়ে কাঁপছে। বেশ দূরে দাঁড়িয়ে আছে আমার বন্ধুমহল। ওদের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ফের তাহসানের দিকে তাকালাম। তাহসান বসে ছিল সিমেন্টের আস্তরনে। লাফ দিয়ে নেমে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল, “এতদিন আসোনি? তোমাকে কী পরিমান খুঁজেছি জানো?”
ডানহাত দিয়ে বামহাতের নক খুটছি। তাহসান আমাকে খুঁজেছে? কেন খুঁজেছে। খোঁজার মতো সম্পর্ক এখনো আমাদের মাঝে গড়ে ওঠেনি। ক্লাসের সময় ঘনিয়ে আসার কারণে বেল বাজল। আমি ভাবলাম, এই বুঝি সবাই ক্লাসের উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়! কিন্তু সেগুড়ে বালি। ঠাঁয় দাঁড়িয়ে উপভোগ করতে লাগল আমার প্রেম নিবেদন। আমার জড়তার ষোলোকলা পূর্ণ করে বাহারাজ এলো সেখানে। বেশ গম্ভীর গলায় বলল, “হোয়াট হ্যাপেন্ড? কী হচ্ছে এখানে? তোমরা ক্লাসে না গিয়ে এখানে দাঁড়িয়ে কী দেখছ?”
রসগোল্লার ন্যায় চোখজোড়া গোলগোল হয়ে গেল। দ্বিতীয় বর্ষের আদিব বলল, “বাহারাজ ভাই, আপনাকে সেদিন যে মেয়েটা চুমু খেয়েছিল না? সে তাহসান ভাইকে প্রপোজ করছে।”
বাহারাজের বিশ্বাস হলো না। বিলম্বে আমার দিকে তাকাল। চোখ দিয়ে দেওয়া আগুন আমাকে উড়িয়ে নিবে বহুদূর। আমি তার দিকে চেয়ে থাকতে পারলাম না। লহমায় দৃষ্টি নামিয়ে নিলাম। দুজনকে কাছাকাছি দেখে পরিস্থিতি আঁচ করল সে। পায়ের শব্দে অনুভব করলাম সে এসে দাঁড়িয়েছে সন্নিকটে। উঁচু হয়ে দাঁড়াল দুজনের মাঝে। চোখ তোলার পূর্বেই জ্বলে যাওয়ার মতো ব্যথা অনুভব করলাম। আপনাআপনি হাত গিয়ে থামল গালে। জীবনে প্রথম খাওয়া চড়ে আমার মন মস্তিষ্কে প্রভাব পড়ল। অতঃপর সবার উদ্দেশ্যে বলল, “এখানে সার্কাস চলছে? বেল বাজার পরেও সবাই ভীড় করে দেখছ। যার যার ক্লাসে যাও।”
উপস্থিত শিক্ষার্থীরা যাওয়ার জন্য পা বাড়াতে গিয়েও থেমে গেল তাহসানের হাসিতে। হাসতে হাসতে বাহারাজকে উদ্দেশ্য করে বলল, “যথেষ্ট সুদর্শন হওয়ার পরেও ও তোকে না প্রপোজ করে আমাকে করছে, এজন্য তোর হিংসা হচ্ছে?”
“বাহারাজ রাস্তার জিনিস নিয়ে ঈর্ষা প্রকাশ করে না। তার কাছে এই মেয়ের দুটাকারও মূল্য নেই।” বাহারাজ সবার সামনে আমাকে রাস্তার মেয়ে উপাধি দিল- তা শুনে আমার মাথা ঘুরে যাচ্ছে। দৃষ্টি ভ্রম লাগছে। তাহসান তার তীব্র প্রতিবাদ করল, “বাহারাজ মুখ সামলে কথা বল। আমার আর তোর মাঝে ওকে টেনে আনিস না।”
“টেনে আনলাম কোথায়? সত্যিটা বললাম। আমাকে চুমু খেয়ে নিজের প্রেমে ফেলতে পারেনি, তাই তোর কাছে গেছে। বাড়িতে তার জান আছে, কলেজে তুই, আশেপাশে এমন দুই চারটা আরও আছে। কোনোদিন গলায় ওড়না পরেনি, আজ পরেছে। নিশ্চয়ই রুমডেট করে বয়ফ্রেন্ডের থেকে দাগ নিয়ে এসেছে।”
অতঃপর টেনে ওড়না আমার গা থেকে খুলে ফেলল। প্রকট হলো গতরাতের দাগ। বিদ্রুপ করে বলল, “দেখেছিস? এমন মেয়ে তোর জন্যই পারফেক্ট।”
মাথাটা ভোঁ ভোঁ করে ঘুরে উঠল। চোখদুটো ঝাঁপসা হলো অচিরে। পৃথিবীর একটু অক্সিজেন পেলাম না শ্বাস নেওয়ার জন্য। ইতোমধ্যে কানাঘুষো শুরু হয়ে গেল। তাহসান ওড়না নিয়ে আমার গায়ে জড়িয়ে দিল। যাকে ভালোবাসি সে প্রকাশ্যে আমাকে হেনস্থা করতে ছাড়ে না, অথচ অন্যজন হেনস্থা থেকে আগলে রাখছে। তাহসান উত্তেজিত হয়ে বলল, “বাহারাজ আমাদের মাঝে মাঝে পোকা দমন করে, তারমানে এই নয় আমরা মেয়েদের সাথে রাত্রিযাপন করি। তোর কাছে কলঙ্কিত মেয়েটাকেই আমার ভালো লাগে। হানি আই লাভ ইউ টু।”
ধপাধপ পা ফেলে বাহারাজ চলে গেল।
অশান্ত পা নিয়ে ভার্সিটির ভেতরের জনশূন্য স্থানে গেলাম। আমার পিছুপিছু ছুটে এলো ওরা সবাই। শরীর হেলিয়ে বসে পড়লাম সেখানে। মৃদু আওয়াজে কেঁপে উঠলাম আমি। ইচ্ছে করে চিৎকার করে কাঁদি। তবে যে সবাই ছুটে এসে আমাকে উপহাস করবে। জয় সান্ত্বনা দিয়ে বলল, “হানি, কাঁদিস না।”
“হাসব না তো কাঁদব? তোরা তো চাসই আমি কাঁদি। এবার বিশ্বাস হয়েছে, আমি জানভিকে ভালোবাসি না। তোরা শুধু আমার নামের বন্ধুবান্ধব। বাহারাজ এতগুলো কথা শোনাল, পারলি না ওকে কিছু বলতে?”
“ওতো সিনিয়র।”
“আর আমি তোদের কেউ না? ঠিক আছে।” ওদের বলে রাগ দেখিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। কিন্তু মাঝপথে মনে পড়ল, ভূতের কথা। যদি সাক্ষাত না করি, আজ রাতে আমাকে খেয়ে ফেলবে। আর ওকে বলে বাহারাজের একটা কড়া ব্যবস্থা করতে হবে।
আমি লাইব্রেরিতে প্রবেশ করতেই মেয়েরা আচমকা বেরিয়ে গেল। বোধ হয় আমাকে ওদের আশেপাশে চায় না। ভেতরে ঢুকে একটা বই হাতে নিয়ে চোখ বুলাতেই অন্ধকার হয়ে এলো লাইব্রেরি। অনুভব করলাম তার আগমন। আমি না নড়ে বইটা সেখানে রেখে দিলাম। আগন্তুক তখন আমার সন্নিকটে। কাঁধে হাত রেখে বলল, “মধুরানি কেঁদো না।”
“আপনার জন্য কাঁদছি। কেন কাল রাতে এখানে ব্যথা দিলেন? জানেন, এজন্য ওই বাহার বাচ্চা আমাকে কত নোংরা নোংরা কথা বলেছে। আমাকে চড় মেরেছে।” বলতে গিয়ে আরেক দফা কেঁদে উঠলাম। অতঃপর আলিঙ্গন করে নিলাম তাকে। বিপরীত মানুষটাও আমাকে আগলে নিল। পরম শান্তি অনুভব করলাম তার বুকে। আদুরে গলায় বলল, “বলো, তোমার জন্য কী করতে পারি?”
“সব করতে পারবেন?”
“বলেই তো দেখো।”
“বাহারাজের হাতটা ভেঙে দিন। ও আপনার মধুরানিকে মে/রেছে।” বুক থেকে মুখ না তুলেই বললাম। তিনিও আমাকে ছাড়লেন না। বুকে রেখেই বলল, “যথা আজ্ঞা মহারানি। তুমি তো বাহারাজকে ভালোবাসো, তাহলে তাহসানকে প্রপোজ করতে গেলে কেন?”
আমি সরে এলাম তার বুকের মধ্যিখানে থেকে। বুকশেলফের সাথে হেলান দিয়ে বললাম, “সব জানেন আর এটা জানেন না? ওটা তো চ্যালেঞ্জ ছিল। আর বাহারাজ এসে সবার সামনে… আমি আর বাহারাজকে ভালোবাসি না। ওর আশেপাশেও যেতে চাইনা। আপনি এবার গিয়ে ওর হাত ভেঙে ফেলুন।”
আগন্তুকের ছায়া সরে গেল। আমি হতভম্ব হলাম, তানাদের ছায়াও বুঝি হয়? কিছুক্ষণের মধ্যেই লাইব্রেরি আলোকিত হলো। ছাত্রীরা ঢুকতে শুরু করেছে এখানে। তাই আলগোছে বেরিয়ে এলাম ভার্সিটি থেকে।
নিবিড় ভাইকে দেখে বিয়ের তারিখ পাকাপোক্ত করতে সবাই তৈরি হচ্ছে। সবার এই আনন্দ আমার শরীরে কাঁটা হয়ে ফুটছে। ইচ্ছে করছে সবাইকে গিয়ে বাহারাজের কৃতির কথা বলি। ভেঙে যাক বিয়ে। পরক্ষণে আপু কথা ভেবে খারাপ লাগল। মেয়েটা এতদিন ধরে যাকে ভালোবাসে, তাকে পাবে না! ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে নিজের কক্ষে গেলাম। ব্যাগটা বিছানায় রেখে ওয়াশ রুমে গেলাম। ট্যাব ছেড়ে পানির নিচে বসে রইলাম। সবকিছু বিষাদ পূর্ণ লাগছে আমার নিকট। এই মুখ নিয়ে কীভাবে ওই ভার্সিটিতে যাব? সবাই তো আমাকে ট্যাগ দিয়ে দিয়েছে। জানিনা কতক্ষন পানির কাছে বসে নিজের কষ্ট বিসর্জন দিলাম। তবে দীর্ঘক্ষণ পর দরজার করা নেড়ে আপু ডাকল, “হানি, এই হানি। কতক্ষণ ওয়াশরুমে বসে থাকবি? বের হ।”
দরজা খুলে উঁকি দিয়ে বললাম, “তোর শ্বশুর বাড়ি তুই যাবি, আমাকে এত তেল দিচ্ছিস কেন? নিজে তো যাবি না, আমাকে শুধু ফোর্স করবি।”
“সোনা বোনু আমার। আমি যেতে পারলে তোকে কি বলতাম? তাদের বাড়ি দেখতে কেমন, নিবিড়ের ঘর কেমন সবকিছু এসে আমাকে বলবি। এগুলো তো অন্যদের থেকে জিজ্ঞেস করতে পারি না।”
“এসব বলতে আমাকে ওই বাড়িতে যেতে হবে না। নিবিড় ভাইয়ের ঘর দোতলায়, কোণার আগেরটা। কোনারটা বাহারাজ ভাইয়ের। আর কিছু?” ভ্রু কুঁচকে বললাম। আপু বিরক্ত হয়ে চলে গেল। আমি দরজার ছিটকিনি তুলে হাসতে লাগলাম। কিছুতেই আমি ওই বাড়িতে যাব না। পরক্ষণেই মুখমণ্ডল কালো করে ফেললাম, শান্তিতে একটু কাঁদতেও পারিনা। চেয়েও আর আর চোখে পানি এলো না। তাই আপুকে বকুনি দিতে দিতে ওয়াশ রুম ত্যাগ করলাম।
চলবে… ইন শা আল্লাহ
#তুমি_থেকো_দাঁড়িয়ে_খোলা_বারান্দায়
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ১৬
সোফায় বসে দুই বোন পপকর্ন খাচ্ছি ও টিভি দেখছি। আমার ফেবারিট কার্টুন চলছে টিভিতে। আপুর মন ভীষণ ভার। শত রিকোয়েস্ট করার পরেও তার শ্বশুরবাড়িতে আমি যাইনি। বাটির শেষ পপকর্ন মুখে দিয়ে বললাম, “আর কয়টা ভেজে নিয়ে আয়।”
আপু তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে উঠে গেল। আমার ওপর বিশাল অভিমান তার। সোফা পুরোটা খালি হতেই হাত-পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়লাম। পরনে আমার টি শার্ট ও শর্ট প্যান্ট। রিমোট নিয়ে চ্যানেল পাল্টে বললাম, “এত চিন্তা কীসের তোর? চিন্তা বাদ দিয়ে ওদের সাথে গেলেই পারতি। আজকাল কত মেয়ে যায় শ্বশুর বাড়ি দেখতে।”
বিনিময়ে ঝাঁঝালো গলায় বলল, “আমার চিন্তা তোকে করতে হবে না। তুই আমার থেকে শত ইঞ্চি দূরে থাকবি। আমাকে একদম আপু বলে ডাকবি না।”
“ওই রাইসার মেয়ে, কয়টা পপকর্ন ভেজে দে।” চাপা হেসে আপুকে উদ্দেশ্য করে বললাম। আপুর চোখমুখে তীব্র রাগ। আমাকে কাঁচাই খেয়ে ফেলবে যেন। আমার হাসির পরিমাণ তরতর করে বেড়ে গেল। বিষয়টা সহ্য করতে না পেরে আপু ঘরে চলে গেল। হাসতে হাসতে সোফা থেকে গড়িয়ে পড়ার মতো অবস্থা আমার। ল্যান্ড ফোন বেজে উঠল। সোফা ছেড়ে ফোন তোলা ভীষণ আলসেমির বিষয় হয়ে দাঁড়াল আমার কাছে। এই অনিহা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উপায় না পেয়ে শুয়েই রইলাম। আমাকে যার প্রয়োজন মুঠোফোনে কল করুক। রিং কেটে পুনরায় বাজল। বিতৃষ্ণা নিয়ে ফোন রিসিভ করলাম। হ্যালো বলতেই জানভি ওপাশ থেকে বলল, “হানি তোর ফোন কোথায়? কতবার ধরে ডায়াল করছি।”
আমি চারদিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে অনুধাবন করলাম, ফোন আমার কক্ষে। আমতা-আমতা করে বললাম, “মনে হয়, ফোনটা ঘরে। আমি ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখছি। ওখানকার অবস্থা কেমন? আপ্যায়ন কেমন করছে জান?”
“আর আপ্যায়ন। বাহারাজ অ্যাক্সিডেন্ট করে হাত ভেঙেছে। আমরা হাসপাতালে ছিলাম এতক্ষণ, এখন বাড়িতে যাব।”
আমার ওষ্ঠদ্বয় একে অপরের থেকে বিছিন্ন হয়ে গেল। এরমধ্যে আগন্তুক বাহারাজের হাত ভেঙে ফেলেছে। বড়ো কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি তো! ‘বাহারাজ ঠিক আছে?’- প্রশ্নটা গলা থেকে উপরে উঠছে না। বহুকষ্টে উচ্চারণ করলাম, “ও ঠিক আছেন?”
“এখন ঠিক আছে। বড়োসড়ো কিছু হয়নি। তুই তো নিবিড় ভাইদের বাড়ি চিনিস। হিয়াকে নিয়ে একটু চলে আয়, দেবর অসুস্থ না আসলে বিষয়টা দৃষ্টিকটু লাগবে।”
“আচ্ছা।” সংক্ষেপে বলে কল বিচ্ছিন্ন করে আপুর ঘরের দিকে পা ফেললাম। আপু ঘরের ভেতরে পায়চারি করছে আমাকে দেখেও না দেখার ভান করে পায়চারি চলমান রাখল। আমি ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে ভেতরে ঢুকে বললাম, “বাহারাজ ভাই এক্সিডেন্ট করেছে, সবাই এতক্ষণ হাসপাতালে ছিল। এখন বাড়িতে যাচ্ছে। জান বলেছে, তোকে নিয়ে যেতে।”
আপু যেন বিষয়টার জন্য তৈরি ছিল। অকপটে বলল, “অ্যাড্রেস দে।”
“আমি তৈরি হয়ে আসছি। একটু অপেক্ষা কর।”
আপাদমস্তক পর্যবেক্ষণ করে রাগান্বিত গলায় বলল, “আমার শ্বশুর বাড়িতে তোর কী কাজ? তোকে যেতে হবে না। তুই এড্রেস দে। আমি যাচ্ছি। বিয়ের পর ওই বাড়িতেই আমাকে একা থাকতে হবে। তুই তো থাকবি না।”
আমি অ্যাড্রেস বলতেই আপু হনহনিয়ে বেরিয়ে গেল। নিজের ওপর প্রচণ্ড রাগ হলো আমার। কেন বাহারাজের হাত ভাঙার অনুরোধ করলাম? নিশ্চয়ই ছেলেটা কষ্ট পাচ্ছে। টেবিলের ওপর রাখা কাঠের ফুলদানিটা তুলে দেয়ালের দিকে ছুড়ে ফেললাম। ফুলদানিটা দেয়ালের সাথে ধাক্কা লেগে আমার পায়ে এসে ধাক্কা খেল। আঘাত পেয়ে হাঁটু মুড়ে বসে পড়লাম। ফুলদানি ও ফুলগুলো তুলে ফুলদানিতে রেখে আপুর কক্ষ প্রস্থান করার চেষ্টা করলাম। তীব্র ব্যথায় ঠিক করে হাঁটতেও পারছি না। বাহারাজ তাহলে কীভাবে সহ্য করছে যাতনা।
স্কুটি নিয়ে নাইট ক্লাবের উদ্দেশ্যে বের হয়েছি। ঋতুরা সবাই ক্লাবে আছে। একা ঘরে থাকলে বারবার বাহারাজের কথা মনে পড়ছে, তাই ওকে ভুলতেই এই পথ অনুসরণ করা।
আমার চার বন্ধু গোল বৈঠকে বসে কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করছে। আমি যেতেই জয় উৎফুল্ল হয়ে বলল, “অভিনন্দন দোস্ত।”
পরপর সবাই এসে আমাকে অভিনন্দন জানাল। কারণ বিহীন অভিনন্দনে আমি কৌতূহল প্রকাশ করে বললাম, “কী হয়েছে বলতো! হঠাৎ অভিনন্দন জানাচ্ছিস কেন?”
আহাদ অ্যালকোহল মিশ্রিত একটা গ্লাসে চুমুক দিয়ে বলল, “দলবল ভাড়া করে বাহারাজকে পিটুনি দিতে গিয়েছিলাম। গিয়ে শুনি শা/লায় হাত ভেঙে হাসপাতালে ভর্তি।”
“তোরা ওকে মারতে গিয়েছিলিস?”
“হুঁ। বন্ধু হয়ে আমরা নাকি তোর জন্য কিছু করছি না। তাই করলাম।
আমার সাবলীল প্রশ্নের জবাবে এসব বলল আহাদ। অতঃপর মাথা ঝাঁকিয়ে নাচতে চলে গেল। বাহারাজকে ভুলতে এখানে আসা অথচ ওকে কেন্দ্র করেই এখানে পার্টি দিয়েছে আহাদ। অ্যালকোহল বিহীন একটা সফ্ট ড্রিঙ্ক নিয়ে চুমুক দিলাম। এখানেও আজ আমার মন টানছে না। এক চুমুকে সফ্ট ড্রিঙ্ক শেষ করে অন্য একটা নিয়ে চুমুক দিলাম। ছেলেটার অসুস্থতা এভাবে উৎযাপন করা আমার কাছে দণ্ডনীয় অপরাধ মনে হচ্ছে। ওদের বিদায় দিয়ে স্কুটিতে চড়ে ভার্সিটির পথে এগিয়ে চললাম। বেশ কিছুক্ষণ পর ভার্সিটিতে পৌঁছে গেলাম। হাতঘড়িটার দিতে চেয়ে দেখলাম রাত তখন দশটার কাটা অতিক্রম করেছে। জিন্সের পকেট থেকে ফোনটা বের করে আলো জ্বালাতেই নজরে এলো ‘5 missed call’ লেখাটা। ফোন অ্যাপে ঢুকে দেখলাম বাবা কল দিয়েছে। আমি কল ব্যাক করে ছোটো করে জানালাম, দশ মিনিটের মধ্যে ফিরছি। কল কে/টে লাইব্রেরির দিকে অগ্রসর হলাম। লাইব্রেরিতে তালা ঝুলিয়ে চলে গেছে স্যার। উপায় শূন্য হয়ে বারান্দায় আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলাম। খা খা করছে ভেতরটা। চোখ বন্ধ করে বললাম, “আমার কথা শুনতে পারছেন আপনি? আমি হানি। আপনার মধুরানি। প্লীজ এদিকে আসুন। আমার সাথে একটু কথা বলুন।”
কেউ এলো না। বিনিময়ে পায়ের শব্দ শ্রবণ হলো। একদল ছেলে সিগারেট ধরিয়ে এদিকেই এগিয়ে আসছে। এরা নিঃসন্দেহে ব/খা/টে ছেলে। আমি সেখানে স্থির না থেকে দ্রুত বেরিয়ে এলাম। স্কুটিতে বসে ভাবছি, কোনদিকে যাব? বাড়িতে নাকি বাহারাজের কাছে। গন্তব্য স্থির করে রওনা দিলাম বাহারাজের বাড়ির দিকে। বাড়িটা কাছাকাছি হওয়ার কারণে স্কুটি নিয়ে পৌঁছাতে বেশি সময় লাগল না। বাহারাজদের বাড়ির প্রবেশদ্বার বন্ধ। রাতে নিশ্চয়ই আমার জন্য খোলা রাখবে না।
উঁচু পাঁচিল টপকে ভেতরে প্রবেশ করলাম। বাহারাজের ঘরে যাওয়ার কারণে বাইরে থেকে তার ঘরটা সহজেই ধারণা করতে পারলাম। বাহারাজের বারান্দার ঘেঁষে একটা সুপারি গাছ। বাইরে থেকে বোঝা যাচ্ছে বাহারাজ জেগে আছে। যদি উপরে উঠে ধরা পড়ি, লজ্জাজনক একটা পরিস্থিতিতে পড়তে হবে। কিন্তু দ্রুত আমাকেও বাড়িতে ফিরে যেতে হবে। সুপারি গাছ বেয়ে ওপরে উঠে গেলাম। পিচ্ছিল সুপারি গাছ বেয়ে উঠতে আমার ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে অনেক।
বাহারাজ খাটের সাথে হেলান দিয়ে একহাতে ফোন টিপছে। অন্যহাতে ব্যান্ডেজ। ওকে দেখেই আমার তুমুল রাগ লাগল। ফুঁ দিয়ে সামনের চুলগুলো উড়িয়ে দিয়ে টিপে বললাম, “হানির সাথে পাঙ্গা নিতে চেয়েছিস তুই? হানির সাথে। কেমন লাগছে গলায় হাত ঝুলিয়ে হাঁটতে? বেশ হয়েছে। যতটা ভেবেছিলাম, ওতটা আঘাত পাসনি। তাহলে তো পুরো শরীরে ব্যান্ডেজ থাকত।”
এরমধ্যে বাহারাজ ভেতরের আলো নিভিয়ে দিল। ফলে বারান্দাও তলিয়ে গেল অন্ধকারে। কোনটা সুপারি গাছ আর কোনটা গ্ৰিল বুঝতে পারছি না। ইচ্ছে করছে জানালা ভেঙ্গে ওর বাকি হাতটাও ভেঙ্গে দিতে। আপাতত ইচ্ছেটাকে চাপা দিয়ে নামার চেষ্টা করলাম। এই অন্ধকারে ফোনের আলো জ্বালালে চোর চোর বলে চ্যাঁচিয়ে উঠবে। তার থেকে অনুমান করে এখান থেকে বের হওয়াই বুদ্ধিমতীর কাজ। সুপারি গাছের শুকনো পাতা ধরে দোতলা থেকে লাফ দিলাম। মুখ থুবড়ে পড়ে গেলাম মাটিতে। হাঁটুতে টান পড়ল। শব্দ শুনে পাশের ঘরের দরজার খুলে বেরিয়ে এলো নিবিড় ভাই। চ্যাঁচিয়ে বলল, “কে ওখানে?”
আমাকে আর পায় কে? হাঁটু ব্যথা নিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে এলাম ওবাড়ি থেকে।
চলবে… ইন শা আল্লাহ
#তুমি_থেকো_দাঁড়িয়ে_খোলা_বারান্দায়
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ১৭
ভার্সিটির উদ্দেশ্যে তৈরি হয়ে বিছানায় বসে আছি। দুই হাঁটুতে দুটো ওয়ান টাইম লাগানো। হাঁটার সময় পায়ে টান পড়লেই তিরতির করে ব্যথা বেড়ে যায়। যাব কি যাব না সেই ধন্দে পড়েছি। আমাকে সহজ পথ দেখাতে হাজির হলো ভাইয়া। দরজা পেরিয়ে যাওয়ার সময় উঁকি দিয়ে বলল, “ব্যাগ কাঁধে নিয়ে শুয়ে আছিস কেন? ভার্সিটিতে যাবি না?”
ব্যথার কথা জানলে হাজারটা প্রশ্ন ছুড়ে দিবে। সেই প্রশ্নে সঠিক উত্তর না পেলে বাবা মাকেও জানাবে। তাই ব্যথার কথাটা লুকিয়ে বললাম, “যেতে ইচ্ছে করছে না।”
“ভণ্ডামি তো ভালোই শুরু করেছিস। এসব বাদ দিয়ে আমার সাথে আয়, যাওয়ার সময় নামিয়ে দিয়ে যাব তোকে।” চাবিটা ঘুরাতে ঘুরাতে আমাকে ইঙ্গিত করে কথাটা বলল ভাইয়া। ভাইয়ার কথাটা আমার আত্মসম্মানে গিয়ে আঘাত করল। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে নিজেকে যথেষ্ট ফিট প্রমাণ করে বললাম, “চল।”
অতঃপর ভাইয়ার সাথে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। ভাইয়া আমাকে বন্ধুদের হাতে তুলে দিয়ে অফিসে গেল। আমি যথেষ্ট কৌতূহল নিয়ে ভাইয়াকে পলখ করলাম যে আমাকে স্কুলে গণ্ডি পর্যন্ত পৌঁছে দেয়নি। সে বন্ধুদের কাছে ভার্সিটিতে পৌঁছে দিয়েছে। বেল বেজেছে অনেক আগে। আমি ওদের নিয়ে ক্লাসরুমে উদ্দেশ্যে পা বাড়াতেই বাহারাজকে দেখতে পেলাম। দ্বিতীয় দিনের মতো একই স্থানে একই ভঙ্গিমায় বসে আছে। ডানহাতে একটা ব্যান্ডেজ প্যাঁচিয়ে গলায় ঝুলিয়ে রাখা। আড়চোখে ওর দিকে চেয়ে পাশ কাটিয়ে ক্লাসরুমের উদ্দেশ্য পা ফেলতেই পেছন থেকে ডেকে উঠল তাহসান। আমি শুনেও না শোনার ভান ধরে ক্লাসরুমের দিকে এগিয়ে চললাম। দ্বিতীয় তলায় পৌঁছাতে পথ আটকে দাঁড়াল তাহসান। বিরক্তিকর দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই বলে উঠল, “কতবার ডাকলাম, শুনতে পাওনি?”
“খেয়াল করিনি।”
“তোমরা যাও, আমার হানির সাথে কথা আছে।” সবাইকে হাতের ইশারায় আরও একবার যাওয়ার ইঙ্গিত করল তাহসান। নত মস্তকে ওরা প্রস্থান করল। আমি চুলগুলো ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে বললাম, “আরও আগে ক্লাসে স্যার চলে গেছে। আরও লেট করলে প্রথম ক্লাস মিস করব।”
“তুমি এখন প্রেমে পড়েছ হানি। তাই মিথ্যা বলা, ক্লাস মিস দেওয়া তোমার ডেইলি রুটিন হবে। চলো একটু প্রেম করে আসি।” বলেই আমার হাত মুঠো করে ধরল। অতঃপর এগিয়ে গেল ফাঁকা ক্লাসরুমের দিকে। ভেতরে এনে হাত ছেড়ে দিল। দরজা ভিড়িয়ে দিয়ে বলল, “কাল আমাদের লাভস্টোরি শুরু হলো অথচ তোমার ফোন নাম্বার আমার কাছে নেই, কোনো ছবি নেই, যোগাযোগের কোনো মাধ্যম নেই। এটা কি ঠিক হানি?”
আমার ভ্রু কুঁচকে এলো। একে ফোন নাম্বার দিয়ে কোন বিপদ নিজের ঘাড়ে টেনে আনব বুঝতে পারছি না। ফিচেল হাসি দিয়ে ফোনটা বাড়িয়ে দিলাম তার দিকে। ফোনটা নিয়ে ফোন অ্যাপে ক্লিক করল। কিছুক্ষণ ঘাঁটাঘাঁটি করে ফোনটা হাতে দিল। স্ক্রিনে সেভ করা ‘মাই লাভ’ নাম্বারটা দেখে হতবাক হলাম। খট করে খুলে গেল দরজাটা। বাহারাজ, রুদ্র ও তীব্র হাজির হলো সেখানে। তীব্র ব্যঙ্গাত্মক হাসি দিয়ে বলল, “বাহ্! এখানে তো দেখছি প্রেমালাপ চলছে মামা। আমরা রং সাইডে চলে এসেছি। চল অন্যদিকে যাই।”
বাহারাজ কথাগুলো কানে তুলল না। অটল থেকে জানালা পর্যন্ত হেঁটে গেল। জানালা খুলে হাওয়ার ব্যবস্থা করে বলল, “ভার্সিটির এই দিকটা আমার আন্ডারে রয়েছে। তাই কোনো খারাপ কাজ হলে তার দায়ভার আমার। তোমাদের প্রয়োজন হলে হোটেলে যাও। নতুবা আমি স্যারদের কাছে বিচার দিব।”
পিলে চমকে উঠল আমার। ফোনটা নিয়ে দ্রুত বেরিয়ে এলাম ক্লাস থেকে। গান গেয়ে যে সুনাম অর্জন করেছিলাম, তা এক নিমেষে দুর্নামে পরিণত হবে।
__
স্কুল শেষ করে লাইব্রেরিতে গেলাম আমার ভূত মহাশয়ের সাথে দেখা করতে। কিন্তু দেখা নেই তার। সেকি জানে না, তার মধুরানি তার জন্য অপেক্ষা করছে? আমি বই নিয়ে নাড়াচাড়া করছি। পায়ের শব্দ শ্রবণ হলো। আমার মহাশয়ের আগমন হয়েছে ভেবে পিছু ফিরলাম। না! এতো বাহারাজ। দুটো খাতা টেবিলের উপর রেখে টুলের ওপর বসল। আমি তাকে দেখেও দৃষ্টি বইয়ের দিকে পরিবর্তন করলাম। বাহারাজ বেশ নরম গলায় বলল, “এখানে কিছু নোটস আছে। হাত ভাঙার কারণে পেন ধরতে পারছি না। তুমি কি আমাকে নোটসগুলো লিখে দিবে?”
“পারব না। আমাকে আবার হোটেলে যেতে হবে। সবাইকে টাইম দিয়ে রেখেছি।” সরাসরি তাকে প্রিঞ্চ করলাম। না তাকিয়ে বুঝতে পারছি সে স্থির দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে আছে। আমি তার উত্তরের অপেক্ষায় আছি। বাহারাজ টুলের ওপর বসে বলল, “ওদের মতো আমার জন্য একটা টাইম ফিক্সড করো। আমি পে করে দিব।”
“আপনার তো আমার প্রতি কোনো ইন্টারেস্ট নেই, তাহলে?”
“তোমার প্রতি ইন্টারেস্ট আছে কে বলল, আমি লিখে দেওয়ার বিপরীতে পে করব।” আমি প্রত্যুত্তরে কিছু না বলে চেয়ার ছেড়ে অগ্রসর হলাম সামনের দিকে। পেছন থেকে হাতটা টেনে ধরল বাহারাজ। একহাতে বল প্রয়োগ করে টেনে নিল তার নিকটে। দুজনের মাঝে তখন অল্পবিস্তর দূরত্ব। নিজেকে ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে বললাম, “আমার ওপরে একদম জোর খাটাবেন না। আমি আপনার কোনো লেখা লিখে দিতে পারব না। হাত ভাঙা বলে একটু করুণা করতাম যদি আপনি অনুরোধ করতেন। আপাতত অনুগ্রহ করতে পারছি না।”
“লিখবে কি-না সেটা বলো।” শক্ত করে ধরল হাত। রক্তিম হয়ে উঠেছে জায়গাটা। ভেতরে তীব্র রাগ নিয়ে বললাম, “পারব না। আপনি অন্য কাউকে দিয়ে করান।”
“এটা তোমাকেই করতে হবে।”
“পারব না, করব না। দেখি কীভাবে আমাকে দিয়ে এটা করান।”
“চ্যালেঞ্জ করছ আমাকে?”
“ধরে নিন তাই। আর চ্যালেঞ্জে হানিই জেতে। কারণ হানি সবার সেরা।” ফুঁ দিয়ে সমুখের চুলগুলো উড়িয়ে দিয়ে বেশ ‘কনফিডেন্ট’ এর সাথে কথাগুলো বললাম। বাহারাজ ভ্রু কুঁচকে আমাকে ছেড়ে দিল। আমিও গর্বের সাথে প্রস্থান করলাম। বাড়িতে ঢুকে আশ্চর্যান্বিত হয়ে গেলাম। সিঙ্গেল সোফায় আয়েস করে বসে আপেলের টুকরো মুখে তুলছে। অসময়ে ও ভরদুপুরে বাহারাজকে বাড়িতে দেখে আমি ভীষণ চমকে গেলাম। তার কু বুদ্ধি খানিকটা মস্তিষ্কে ঢুকেছে আমার। সবার অগোচরে বড়ো বড়ো কদমে রুমের দিকে পা ফেলতেই মা ডেকে বলল, “হানি এদিকে আয় মা।”
পেঁচা মুখ করে দাঁড়িয়ে গেলাম। অতঃপর ধীরপায়ে এসে দাঁড়াতেই আপু বলল, “বাহারাজ তোর কাছে একটা সাহায্যের জন্য এসেছে। তুই একটু ওকে হেল্প করে দে।”
একহাতে মাথা চুলকে অন্যহাতে ব্যাগের ফিতাটা টেনে বললাম, “আজকে আমার অনেক পড়া আছে, এরপরে আবার জিমে যেতে হবে। ওখান থেকে কল এসেছে। আজ আমার পক্ষে সম্ভব নয়।”
বাহারাজ চোখমুখ কালো করে ফেলল। মা তা লক্ষ করে ধমকাল, “হানি একদম বে/য়া/দ/বি করবি না। ছেলেটার হাত ভাঙা তাই তোর কাছে সাহায্যের জন্য এসেছে। ওকে আগে সাহায্য করবি তারপরে তোর বাকি কাজ।”
বিরক্ত হয়ে আমি বললাম, “মা প্লীজ, হেল্প আপুও করতে পারে। তাহলে আমি কেন?”
“হিয়াই করতে চেয়েছিল। কিন্তু ও পারবে না। তোরা এক ভার্সিটিতে পড়িস। রুলস একই। হিয়া করলে না হওয়ার সম্ভাবনা অনেক।”
“আন্টি হানি না করতে চাইলে সমস্যা নেই। আমি অন্য কাউকে দিয়ে করিয়ে নিব।” বাহারাজ বামহাতে খাতা দুটো নিয়ে বলল। ফের আপু খাতা টেনে নিয়ে বলল, “ও করবে না, ওর ঘাড় করবে। এগুলো নিয়ে যা।”
লোকসমাগমে বড়ো বোনের মুখের ওপর কথা বলার স্পর্ধা হলো না আমার। খাতা দুটো নিয়ে বাহারাজের দিকে রক্তচক্ষু করে তাকালাম। প্রথমবার বাহারাজের কাছে কোনো চ্যালেঞ্জে হারতে বসেছি। ইচ্ছে করছে ভূত হয়ে ওর ঘাড়টা মটকে দেই। শা/লা। হাত ভেঙেও আমার পিছনে লেগে আছে।
চলবে… ইন শা আল্লাহ