তুমি থেকো দাঁড়িয়ে খোলা বারান্দায় পর্ব-১৮+১৯+২০

0
1

#তুমি_থেকো_দাঁড়িয়ে_খোলা_বারান্দায়
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ১৮

এক টেবিলে বসে আছি বাহারাজ ও আমি। লেখার ফাঁকে ঘনঘন তাকাচ্ছি ওর দিকে। বাহারাজ এক গাল বাঁকিয়ে আছে। দেখে বোঝা যাচ্ছে ব্যঙ্গাত্মক হাসছে। ভেতরে ভেতরে হাঁসফাঁস করে কলম রেখে উঠে দাঁড়ালাম। বাহারাজ ভনিতা ছাড়াই বলল, “শেষ হয়নি তো, অনেকটা বাকি আছে।”

“শাওয়ার নিয়েই তো লিখতে বসেছি। পেটের ভেতরে ইঁদুরগুলো নাচানাচি করছে। অন্তত খেয়ে আসি।” বলেই হনহন করে বেরিয়ে এলাম। ইতোমধ্যে সবাই খেয়ে টিভি দেখছে। আমি খাবার বেড়ে বসতেই বাহারাজের কথা আঁখি পটে ভেসে উঠল। ছেলেটা খায়নি, আমি কীভাবে খাব? অস্বস্তি বলেও তো একটা কথা আছে। পুনরায় আরেক প্লেট খাবার সাজিয়ে নিলাম। পানি ঢালতে ঢালতে বললাম, “আপু, দেবরের জন্য তোর ভালোবাসা একদম উথলে উঠছে। এদিকে দেবর না খেয়ে আমার ঘরে বসে আছে। তাকে খাবার দিয়েছিস?”

চার জোড়া চোখ বিস্মিত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকাল। মনে হলো, উকিলের চোখে আসামি ধরা পড়েছে। মা মাথায় হাত দিয়ে বলল, “হায় হায়। বাহারাজের কথা কীভাবে ভুলে গেলাম। ভার্সিটি থেকে সোজা এখানে এসেছে। আমি ওকে খেতে ডাকি নি। ছেলেটা মনে মনে কী ভেবেছে! হিয়া, দ্রুত খাবার নিয়ে যা।”

অবিলম্বে আপু হাজির হলো সেথায়। আমার থেকে খাবারের থালা নিয়ে ট্রেতে পরিবেশন করল। অতঃপর আমার রুমের দিকে নিয়ে গেল। আমি সামনে ও আপু পেছনে আসছে। নিজেকে প্রিন্সেস আর আপুকে কাজের বেটি রহিমা মনে হচ্ছে। আমি চাপা হেসে কক্ষে প্রবেশ করলাম। বাহারাজ বাঁ হাতে ফোন ঘাঁটাঘাঁটি করছে। পায়ের শব্দে আমাদের দিকে তাকিয়ে বলল, “এসবের কী দরকার ভাবি? আমি বাড়িতে গিয়ে খেয়ে নিতাম।”

“আমাদের বাড়িতে এসেছ, আর বাইরে খাবে। তা হবে না। চুপচাপ খাও।” আপু পড়ার টেবিলে খাবার সাজিয়ে বলল। বাহারাজ ফোন রেখে হাত ধুতে যেতেও ফিরে এলো। ডানহাতে তার ব্যান্ডেজ, বাঁ হাতে খাবে কীভাবে? আমি রঙ্গ করে বললাম, “চিন্তা নেই বেয়াই মশাই, আপনার একমাত্র ভাবি আপনাকে খাইয়ে দিবে। ভাবি .. থুক্কু আপু খাইয়ে দাও।”

আমার হাসি যথারীতি থামছে না। বাহারাজের চোখমুখে অসহায়ত্ব ফুটে উঠেছে। আপুও দ্বিধাবোধ করছে। বেশ কিছুদিন পেরিয়ে গেল নীরবতায়। বাহারাজ ইতস্তত করে বলল, “ভাবি আমাকে একটা চামচ দেওয়া যাবে? নাহলে সমস্যা নেই, আমি বাড়িতে গিয়ে খেয়ে নিব।”

“হানি একটা ব্রেনল্যাস মানুষ, ওর কথা কেউ গোনায় ধরে? যা মনে আসে তাই বলে দেয়। তুমি ওর কথা ধরো না। ওকে তো রাস্তা থেকে কুড়িয়ে এনে মা আশ্রয় দিয়েছে।” সুন্দর ভাবে বাহারাজকে মানাতে আমাকে পালিত মেয়ে হিসেবে চিহ্নিত করল আপু। আমি বোকা বনে গেলাম। বাহারাজ তা মেনে নিয়ে ফিচেল হাসছে। এ কেমন কথা! দেবরকে মানাতে বোনের বেইজ্জতি। বোনের থেকে দেবর এগিয়ে। দুজনের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে খাবার গ্ৰহণ না করেই জামা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে গেলাম। আপু পেছনে থেকে ডেকে বলল, “খাবার রেখে কোথায় যাচ্ছিস হানি?”

“আমি খাব না। তোর দেবরের লাগলে তাকে দে। আমাকে ভুলেও সাদবি না। আমি তো রাস্তার ধারে পড়ে ছিলাম। দয়া করে কুড়িয়ে এনেছিস। থাকতে দিয়েছিস এই বেশি।”
রাগ দেখিয়ে ধাড়াম করে দরজা বন্ধ করে দিলাম ওয়াশরুমের। সবসময় আমাকে ক্ষ্যাপায় আমাকে কুড়িয়ে এনেছে। কেন এনেছিল আমাকে কুড়িয়ে? আমি তো কখনো বলি, আমাকে কুড়িয়ে নিয়ে যা। তাহলে কেন কুড়িয়ে নিয়েছিস? এখন বাইরের লোকের সামনে কেন আমাকে ছোটো করছিস।

বাহারাজের নোটস অসম্পূর্ণ রেখে আমি টেবিল ছেড়ে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম। অনশনে বসেছি, যতক্ষণ না আপুর বিচার হয়। আমি এর বিচার চাই। তুমুল শব্দে আমার মুঠোফোন বেজে উঠল। আমি ফোনের দিকে আড়চোখে চেয়ে দৃষ্টি সরিয়ে ফেললাম। স্ক্রিনে ভাসছে ‘মাই লাভ’ লেখাটা। তাহসান কেন ফোন দিল এখন? দিবে নাই বা কেন? গার্লফ্রেন্ডের সাথে তার কত আলাপ আলোচনা! সাইড বাটনে ক্লিক করে নিঃশব্দ মুড করলাম। কল কেটে যেতেই সাইলেন্ট মুড অন করলাম। গোছানো বালিশ মাথায় নিচে দিয়ে শুতেই আপু ঘরে এলো। বেশ‌ শৌখিন তার পোশাক। কোথাও যাওয়ার জন্য তৈরি সে। আমি দেখেও না দেখার ভান ধরলাম। আপু পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, “হানি রাগ করেছিস বোনু।”

রাগ না হলেও যেন এবার রাগ করে ফেললাম আমি। উল্টো দিকে কাত হয়ে বললাম, “হানি কারো ওপরে রাগ করেনা।”

“আচ্ছা রাগ করতে হবেনা, চল ঘুরে আসি। তোর পছন্দের সব খাবার খাওয়াব।”

“তোর দেবরকে নিয়ে যা। এরপরে পেট ভরে খাওয়া ওকে।” অভিমানী গলায় বললাম আমি। আপু ঘুরে এসে আমার সামনে বসল। আমার গাল দুটো টিপে দিয়ে বলল, “নিবিড় তার শ্যালিকাকে খাওয়াবে।”

আমি ভ্রু কুঁচকে তাকালাম। আপু কল করে ফোনটা আমার হাতে ধরিয়ে দিল। আমি কানে ধরতেই নিবিড় ভাই বলল, “আমার আধি ঘরওয়ালি নাকি রাগ করে খায়নি। তাই ওকে পেট ভরে খাওয়াব আমি।”

“আমি‌ খাব না। ওদের খাওয়ান আপনি।” বলেই ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলাম আমি। নিবিড় ভাই সান্ত্বনা দিয়ে বলল, “হানি, ওরা তোমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে খেয়েছে না? আমরাও ওদের এনে দেখিয়ে দেখিয়ে খাওয়াব। ঠিক আছে?”

আমি মুচকি হেসে বললাম, “ঠিক আছে।”

“তাহলে ভালো মেয়ের মতো তৈরি হয়ে চলে এসো।”
নিবিড় ভাইয়ের কথা মেনে আমি উঠে বসলাম। কাবার্ড থেকে থ্রিপিস বের করে ওয়াশরুমে ঢুকলাম। মিনিট দশেক পর ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলাম। বাহারাজ তখনও আমাদের বাড়িতে অবস্থান করছিল। আমি ওদের ছাড়িয়ে হনহন করে বাইরে এসে দাঁড়ালাম। স্কুটির কাছে গিয়েও দাঁড়িয়ে গেলাম। তিনজন স্কুটিতে করে যাওয়া যতটা না সম্ভব, তার থেকে অসম্ভব পুরুষ মানুষকে মাঝে বসিয়ে নিয়ে যাওয়া। তাই স্কুটি ছাড়াই আমাদের যাত্রা শুরু করতে হবে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে রিকশার অপেক্ষায়। যাত্রীবাহী রিকশার দেখা মিললেও, দেখা নেই ফাঁকা রিকশার। কিছু সময় অপেক্ষার পর আপু ও বাহারাজ দুজনেই আমার পাশে এসে দাঁড়াল। ওমনি একটা ফাঁকা রিকশা এদিক এলো। লোকটা কি রিকশা ঠিক করে রেখেছিল? মনে হয় না, আবার হতেও পারে। আমি কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম বাহারাজের পাশে। রিকশা ওয়ালাকে গন্তব্য ঠিক করে আমরা পড়লাম মহা ফ্যাসাদে। পাশাপাশি দুটো সিটে কীভাবে তিনজনে যাব? অবশ্যই একজনকে ওপরে উঠতে হবে। সর্বদা আমাকে আপু ওপরে বসালেও আজ আগেভাগেই আমি রিকশায় উঠে বললাম, “আমি ওপরে বসব না। না মানে না।”

আপু বলল, “হানি আমি বড়ো হয়ে ওপরে বসব, এটা ভালো দেখায় না। তাছাড়া বাহারাজের হাত ভাঙা। ও ওপরে বসতে পারবে না। তুই একটু বস।”

বাহারাজ নাকোচ করে বলল, “না ভাবি, ওকে আর জোর করো না। তাহলে যাবে না। তোমরা বরং চলে যাও। আমি পরের রিকশায় আসছি।”

“ভাবির প্রতি দরদ উথলে উঠছে। আমার প্রতি যদি উথলে উঠত, তাহলেই হতো।” বলেই আমি রিকশার ওপরে বসলাম। আপু সিটে বসল। বাহারাজ উঠে বসতেই গতিশীল হলো রিকশা। আমাকে পিঞ্চ করে বলল, “তোমার প্রতি আমার দরদ উথলে উঠবে কেন? তোমার প্রতি দরদ উথলে উঠবে ‘মাই লাভ’- এর।”

“মানে?” বলেই আপু পেছনে ফিরল। বাহারাজ আমার দিকে একপলক চেয়ে ওষ্ঠদ্বয় ঈষৎ ফাঁক করতেই আমি পেছন থেকে ওর মুখ চেপে ধরলাম। রাগান্বিত গলায় বললাম, “মুখ থেকে একটা বা/জে কথা বের হলে রিকশা থেকে ফেলে দিব। আগেরবার তো শুধু হাত ভেঙেছে, এবার হাত-পা দুই-ই ভাঙবে।”

আপুর দৃষ্টিতে কৌতূহল। আমি বাহারাজের ওষ্ঠদ্বয় হতে হাত সরালাম না। তার নির্গত করা উষ্ণ নিঃশ্বাস আমার হাতে পতিত হচ্ছে। আমি ভীষণ কেঁপে উঠলাম। তড়িঘড়ি করে হাত সরিয়ে নিলাম বাহারাজের থেকে।

চলবে… ইন শা আল্লাহ

#তুমি_থেকো_দাঁড়িয়ে_খোলা_বারান্দায়
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ১৯

রিকশা এসে থামল রেস্তোরাঁর সামনে। আপু ধীর পায়ে নেমে ভাড়া মিটিয়ে দিল। আমি ওপর থেকে নেমে রাস্তার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। বাহারাজও ততক্ষণে নেমে এসেছে। আমি লক্ষ করলাম, আশেপাশের যুগলদের, ফুলওয়ালাদের। ধীর মস্তিষ্কে ভাবতেই মনে পড়ল আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। অথচ এত বছরে এসেও আমি সিঙ্গেল। এই দিনটা প্রতিবার আমি ঘরে বসেই কাটাই। অন্যদের মতো পাবলিক প্লেসে ঢং আমার স্বভাবে যায় না। আমার ভাবনার মাঝেই আপু হাত ধরে ভেতরে নিয়ে গেল। বাড়ির ভেতরে আপু যেমনই হোক, বাইরে সে প্রচুর কেয়ারিং। রেস্তোরাঁর কর্নারের টেবিলে নিবিড় ভাই বসে আমাদের আসার অপেক্ষায় ছিলেন। আমরা পৌঁছাতেই দাঁড়িয়ে গেল। নিবিড় ভাইয়ের হাতের জোড়া লাল গোলাপ টা আমার নজর থেকে এড়িয়ে গেল না। চেয়ারে বসতেই নিবিড় ভাই মেনুকার্ডে হাতে দিয়ে বললেন, “হানি তোমার পছন্দমতো‌ অর্ডার করো।”

ক্ষুধা মরে গেছে। এখন খাওয়ার স্পৃহা নেই। নাকচ করে বললাম, “না ভাই, এখন খেতে ইচ্ছে করছে না।”

“ইচ্ছে নেই বললে তো হবে না। কিছু অন্তত খেতে হবে। কাচ্চি খাও। এখানকার কাচ্চি খুব মজার।” নিবিড় ভাইয়ের অনুরোধ আমি ফেলতে পারলাম না। তাই সায় দিয়ে বললাম, “ঠিক আছে।”

নিবিড় ভাই ওয়েটার ডেকে কেবল আমার জন্য খাবার অর্ডার দিলেন। নিবিড় ভাইকে খাওয়ার বিষয়ে জোর করে লাভ হলো না, সে খেয়ে এসেছে। আধ ঘণ্টা লাগল খাবার আসতে। হাত ধুয়ে এসে খেতে বসলাম। কাচ্চি মুখে দেওয়ার সাথে সাথেই ভীষণ অবাক হলাম। অন্যদের রেস্তোরাঁর থেকে এখানেরটায় ভীষণ ভালো স্বাদ। দু লোকমা মুখে তুলে চোখ পড়ল আপুর দিকে। গালে হাত দিয়ে আমার পানে চেয়ে আছে। দৃষ্টি সরিয়ে বাহারাজের দিকে নিবদ্ধ করতে দেখলাম সেও আমার দিকে তৃষ্ণার্ত দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। এভাবে তাকিয়ে থাকলে পেটে ব্রীড়া হবে নিশ্চিত। অন্যকে লোভ দেখাতে গিয়ে নিজের পেটে ব্যাধি বাঁধানো বোকাদের কাজ। খাবারে আঁকিবুঁকি করতে করতে বললাম, “তোমরা কেউ খাবে? খেলে খেতে পারো। আমার আবার দয়ার শরীর। অন্যকে না দিয়ে খেতে পারি না।”

বাহারাজ পানির গ্লাসে চুমুক দিয়ে বলল, “আমরা আবার কুড়িয়ে পাওয়া মানুষের খাবার খাই না। বড়োলোক্স কি-না।” বাহারাজের কথা আমি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম। পরবর্তী দৃষ্টি নিবিড় ভাইয়ের দিকে নিক্ষেপ করে বললাম, “আপনার এই ভাইকে এখান থেকে যেতে বলুন। নাহলে কিন্তু খুব খারাপ হবে।”

নিবিড় ভাই রাহারাজকে শান্ত গলায় বলল, “বাহারাজ থাক, আর চ্যাতাস না।”

“এইটুকু? দুই চারটা চড় দিয়ে বলবেন, ‘এই ধরনের কথা কেন বলছিস। ক্ষমা চা।’ আর আপনি কি-না আস্তে কথা বলছেন?”

“হানি ওর হাত ভাঙা, তাই শান্ত ভাবে বলেছি। ও ভালো হয়ে গেলে তোমার সামনে ওকে চড় দিব।”

আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম, “তাই! (থেমে বললাম) আজ সারাদিন একটু বিশ্রাম নিতে পারিনি। এখান থেকে সোজা বাড়িতে গিয়ে ঘুম দিব। আজ ভালোবাসা দিবস। আপনি বরং আপুকে নিয়ে ঘুরে আসুন।”

নিবিড় ভাই এতক্ষণ আমার থেকে এই মেসেজ পাওয়ার অপেক্ষায় ছিল। একগাল হেসে আপুর দিকে তাকাল। দুজনের দৃষ্টি প্রকাশ পেল অফুরন্ত ভালোবাসা। আপু ও নিবিড় ভাই চেয়ার ছেড়ে উঠতেই তড়িঘড়ি করে বললাম, “যাওয়ার আগে পে করে যান। আমার কাছে টাকা নেই।”

“বিলের রিসিট এখনো দিয়ে যায়নি। ওয়েটার বিল করে দিলে আবির দিয়ে দিস। আমি বাড়ি ফিরে তোকে দিয়ে দিব।” সেই কথাটা বাহারাজকে উদ্দেশ্য করে বলল নিবিড় ভাই। বামহাতে ফোন ঘাঁটতে ঘাঁটতে বলল, “যা, আমি বিল দিয়ে ওকে বাড়িতে পৌঁছে দেব।”

আপু যেন ভরসা পেল। বাহারাজকে ধন্যবাদ দিয়ে নিবিড় ভাইয়ের সাথে এগিয়ে গেল। আমি খেতে খেতে বললাম, “আমাকে বাড়িতে দিয়ে আসতে হবে না। আপনি বরং গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরে আসুন। আপনাদের মাঝে কাবাব মে হাড্ডি হতে চাই না।”

“সোজাসুজি বললেই তো হয়, তুমি এখন তাহসানের সাথে ঘুরতে যাবে।”
বাহারাজ ফোনে স্কল করতে করতে বলল। আমি নির্বাক হয়ে প্লেটে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলাম। বাহারাজ বোধ হয় আমার তরফ থেকে কোনো প্রশ্ন আশা করেছিল। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে নিজ থেকেই বলল, “কখন যাচ্ছো ঘুরতে?”

“খেয়ে যাচ্ছি। তবে তাহসানের সাথে নয়। বাহারাজের সাথে।” আমার কথায় বাহারাজ কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকাল। আমি না তাকিয়েও তাকে অনুভব করতে পারছি। ততক্ষণে খাওয়া শেষ। ওঠে হাত ধুতে গেলাম। হাত ধুয়ে টেবিলের কাছে এসে ব্যাগ কাঁধে নিলাম। বাহারাজ তখন পে করে ফোন পকেটে ঢুকিয়ে নিল। দুহাত পকেটে নিয়ে রেস্তোরাঁ থেকে বেরিয়ে এলো।
রাস্তার পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে কপোত কপোতীরা। কেউবা রাস্তায় থেমে ফুল কিনছে প্রিয়তমার জন্য। এই বসন্তে বাহারাজের প্রতি ভালোবাসার টান পড়ল। ফুল কিনে নিজেকে আকর্ষণীয় প্রমাণ করতে গুজতে ইচ্ছে করল কানের পেছনে‌। আমার সেই ইচ্ছেকে অসম্পূর্ণ রেখে বাহারাজের সাথে গেলাম নদীর পাড়ে। সূর্য ডুবে তখন অস্ত যাওয়ার অবস্থা। আমি জুতো খুলে ছুটে গেলাম নদীর পানিতে পা ভেজাতে। বাহারাজ ধীরপায়ে হেঁটে এগিয়ে আসতে আসতে বলল, “হানি, সাবধানে যাও। ঢেউতে ব্যালেন্স হারিয়ে ফেলবে।”

আমি বাহারাজের কথায় থামলাম না। নদীতে পা ডুবিয়ে হাঁটতে লাগলাম। নদীর খরস্রোতা ঢেউ আমার হাঁটু অবধি ভিজিয়ে দিচ্ছে। মুক্ত হাওয়াতে আমার চুলগুলো উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে বহুদূরে। আমি দু হাত মেলে দিলাম শূন্যতায়। চোখ বন্ধ করে এই মুহুর্তটা অনুভব করতে লাগলাম। খানিকক্ষণ পর পিঠে এসে ধাক্কা খেল একটা দেহ। নাকে এলো কড়া পারফিউমের স্মেল। আমি চোখ মেলে ঘাড় কাত করে বাহারাজের মুখশ্রী দেখতে পেলাম। সরে আসার চেষ্টা করতে তার বামহাত আমার উদরে বাঁধা দিল। ধীরে ধীরে হাতটা ওপরে উঠে আঙুলের ভাঁজে আঙুল এলো। দমকা হাওয়াতে আমি হেলে পড়লাম তার বুকে। বাহারাজ চোখ বন্ধ করে নিল। তাকে অনুসরণ করে আমিও নেত্রপল্লব বুজে ফেললাম। পরম এক শান্তি অনুভব করলাম। নিজেকে ‘টাইটানিক’ সিনেমার রোজ মনে হলো। তাকে মনে হলো জ্যাক। হৃদয়ে জমিয়ে রাখা কথা প্রকাশ করলাম, “আমি আপনাকে ভালোবাসি বাহারাজ।”

আঙুলে বন্দি আঙুলগুলো টেনে আমাকে তার দিকে ফিরিয়ে নিয়ে এলো। বাম হাতটা গালে রেখে বলল, “নদীকে সাক্ষী রেখে বলছ?”

“হ্যাঁ।”

“আমাকে ভালোবাসার পথে হাঁটিয়ে তুমি কিন্তু মাঝরাস্তায় ফেলে যেতে পারবে না হানি। এখনো ভেবে দেখ, তুমি হাঁটবে নাকি পিছুবে।”

“আমি হাঁটব। বহুদূর যাব। তেপান্তর পেরিয়ে যাব আপনার হাত ধরে।” বলেই বাহারাজকে জড়িয়ে ধরলাম। আচমকা আক্রমণে একহাতে আমাকে সামলাতে না পেরে আমিসহ চিত হয়ে পড়ল বালুতে। বাহারাজের বুকে মুখ লুকিয়ে খিলখিল করে হাসতে লাগলাম। বাহারাজ আমার মাথায় হাত রেখে বলল, “ওঠো। ঢেউ আসলে দুজনে ভিজে জবুথবু হয়ে যাব। তখন বাড়িতে যাওয়া নিন্দনীয় একটা বিষয় হয়ে দাঁড়াবে।”

ধরনীর বুকে তখন নেমে এসেছে অন্ধকার। বাহারাজের বুক থেকে মুখ তোলার আগেই একটা আলো এসে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলল। পরপর ছুটে এলো কয়েকজন যুবক। তড়িঘড়ি করে ওঠে দাঁড়ালাম আমি। বাহারাজের জন্য হাত বাড়িয়ে দিলাম। যুবকের দলেরা আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল। এলোপাথাড়ি আঘাত করতে লাগল বাহারাজের গায়ে। আমি পাথর হয়ে গেলাম। হঠাৎ ওরা কেন মা/র/ছে ওকে? আমি ওদের সরাতে সরাতে বলতে লাগলাম, “আপনারা ওকে মারছেন কেন? ওকে ছাড়ুন।”

ধমকে বলল, “চুপ। ন/ষ্টা মেয়ে কোথাকার। ওর ওই হাতে আমাদের ধরবি না। এত জায়গা থাকতে এই নদীর ধারে এসে এসব করছিস? তোদের জন্য এই নদীটা কলঙ্কিত হয়েছে। আজ তো তোদের মে/রেই ফেলব।”

আমার মস্তিষ্ক ফাঁকা হয়ে গেল। ওরা যে ভেবে নিয়েছে আমরা.. ছিঃ ছিঃ!

চলবে… ইন শা আল্লাহ

#তুমি_থেকো_দাঁড়িয়ে_খোলা_বারান্দায়
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ২০

এলোপাথাড়ি আঘাতে বাহারাজ নেতিয়ে পড়েছে। ভাঙা হাতটা বোধ হয় আরও ভেঙে গেছে। ওরা বাহারাজকে তুলে মুখে আঘাত করল। বাহারাজ পিছিয়ে গেল ‌দুকদম। বামহাত ললাট মুছে বলল, “কারণ ছাড়া আমার গায়ে হাত দিলেন কেন আপনারা?”

ছেলেগুলো এগিয়ে গেল। বাহারাজের কলার টেনে ধমকে বলতে লাগল, “তোরে এখন কারণ দেখাতে হবে? নদীর পাড়ে দুজনে শুয়ে কী করছিলিস বুঝি না আমরা। দুদু খাই?”

ছুটে গিয়ে বাহারাজের কলার ছাড়াতে ছাড়াতে বলল, “আপনারা আমাদের ভুল ভাবছেন। এখানে ওমন কিছু হয়নি।”

ছেলেটা আমার হাত ধরে বলল, “ওর সাথে যেমন করেছিস, আমার সাথেও একটু কর। আমি মাইন্ড করব না।”

ঘৃণায় আমার চোখ থেকে অবিরাম পানি ঝরতে লাগল। অন্ধকারে টর্চের আলোয় বাহারাজের ললাটে ভাঁজ দেখতে পেলাম। বাহারাজ শান্ত গলায় ওদের বলল, “কত টাকা লাগবে? কত দিলে আমাদের ছেড়ে দিবেন।”

ছেলেরা থেমে গেল। ফাঁকা ঢোক গিলে পরস্পরের দিকে দৃষ্টি আদান-প্রদান করে বলল, “নোংরামি করে আবার টাকা দিতে চাচ্ছিস?”

“আমি জিজ্ঞেস করেছি কত টাকা চাই? দশ হাজার? বিশ হাজার? নাকি পঞ্চাশ হাজার?” বাহারাজের কথায় থতমত খেয়ে গেল ওরা। তুই থেকে পৌঁছে গেল আপনিতে, “কীসব বলছেন ভাই, এত‌টাকা দিবেন আমাদের?”

“হ্যাঁ। আমাকে কিছুক্ষণ সময় দিন, আমি টাকা আনাচ্ছি। এত টাকা নিশ্চয়ই পকেটে নিয়ে ঘুরব না।” বলেই বাহারাজ ফোন করল তার পরিচিত ও কাছের কাউকে। তৎক্ষণাৎ পঞ্চাশ হাজার টাকা নিয়ে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিল। যুবকের দলেরা পারছে না বাহারাজকে মাথায় তুলে রাখতে। পরনের শার্ট খুলে বাহারাজের কপালের ঘাম গুলো মুছে দিচ্ছে। আমার মাথায় হাত রেখে বলছে, “আপু ব্যথা পেয়েছেন? এখানে দাঁড়াতে কষ্ট হচ্ছে, চেয়ার আনব?”

বাহারাজ ঘুরে এসে আমাকে আগলে নিল ওদের থেকে। সবার থেকে আড়াল করে মহারাজের ভঙ্গিতে বলল, “নো। আমি ছাড়া ওকে কেউ স্পর্শ করবি না। মহারানিকে ছোঁয়ার ক্ষমতা সবাই রাখে না।”

আধ ঘণ্টা অপেক্ষার পর চারজন এলো। ছোটো একটা ব্যাগ তুলে দিল বাহারাজের হাতে।‌ বাহারাজ চেইন খুলে একপলক চেয়ে যুবকদের হাতে তুলে দিয়ে বলল, “নিন। চেক করে দেখুন, নকল আছে কিনা। থাকলে চেঞ্জ করে দিব।”

দুজন চলে গেল ব্যাগ নিয়ে। কিছুক্ষণ পরে তারা ফিরে এসে বাকিদের নিয়ে গেল। সম্পূর্ণ সময়ে আমি স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। বাহারাজ আমার হাতটা ধরে বলল, “হানি, মনখারাপ কোরো না। কিচ্ছু হয়নি।”

“ওরা আমাদের সাথে এমন কেন করল? আমরা তো এমন কিছু করিনি। তাছাড়া টাকা নিয়ে চলে গেল কেন?”

“ওরা হচ্ছে এলাকার পাতি নেতা। ওদের টার্গেট হচ্ছে ভালোবাসা দিবসে কাপলদের দেখলে ফিটিং দিয়ে টাকা কামানো। আমাদের সাথেও তাই হয়েছে। ওরা খারাপ বললেই তো আমরা খারাপ হয়ে যাব না, তাই না?” বাহারাজের কথায় আমি মাথা দোলালাম। এখানে দাঁড়িয়ে সময় অপচয় করার চেয়ে প্রস্থান করাই শ্রেয়। তাই সবাইকে নিয়ে আলোর পথে অগ্রসর হলাম।
___

‘কাজি অফিস’ দুটি শব্দ দুটি মানুষকে একত্রিত করতে পারে। সেখানে এসে বিস্মিত না হয়ে পারলাম না। এখানে আমার কখনো আসা হয়নি। আজ হঠাৎ কেন এসেছি? আমি দুজন মেয়ের সাথে এক কোনে দাঁড়িয়ে আছি। এদের আমি চিনি, এরা জিমনেশিয়ামের কর্মচারী। বাহারাজ তার ছোটো আয়ের উৎস দিয়েই এই ঝামেলা সমাধান করেছে। আমাদের প্রবেশের মিনিট দশ‌ পর বাহারাজ হলো। কপালে তার ওয়ান টাইম লাগানো। মুখশ্রীর অবস্থা দেখে মা/রধ/রের গভীরতা পরিমাণ করা যাচ্ছে। আমি ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেললাম। আজকে আমার ভালোবাসা প্রকাশ করলাম, আর আজই ওর এই অবস্থা। আমরা কি একে অন্যের ভাগ্যে নেই। ভাবতে ভাবতে বাহারাজ এগিয়ে এসে বলল, “সব ঠিক আছে। দশ মিনিটেই বিয়ের কাজ শেষ হয়ে যাবে। সাক্ষী থাকবে কারা?”

চারজন কর্মীই হাত তুলল বাহারাজের কথায়। আমি চারপাশে তাকিয়ে আপু ও নিবিড় ভাইকে খুঁজতে লাগলাম। কিন্তু দেখা পেলাম না। তবুও হাত তুলে বললাম, “আমিও সাক্ষী থাকব।”

“নিজের বিয়েতে নিজে কীভাবে সাক্ষী থাকে?”
ভ্রু কুঁচকে গেল আমার। নিজের বিয়ে শব্দটা মস্তিষ্ক নিতে পারছে না। মিনিট পাঁচ বাদে বললাম, “কাকে বিয়ে করব? আমি বিয়ে করব না।”

বাহারাজ আমার হাত ধরে পাশের একটা ছোটো ঘরে নিয়ে এলো। দরজাটা ভিড়িয়ে মৃদু আওয়াজে বলল, “হানি এটাই তোমার জন্য সম্মানজনক।”

“হোয়াট সম্মানজনক? আমি আমার পরিবারের সাথে এমন করতে পারব না। ওদের অনুমতি ছাড়া কিছুতেই আমি বিয়ে করতে পারব না।”

“তুমি আমাকে ভালোবাসো না? আমাকে চাও না?”

“বাহারাজ ভাই, আপনাকে ভালোবাসি আমি। পরিবারকেও তো আমি ভালোবাসি। তাদের প্রতি আমার একটা দায়িত্ব আছে। আমাদের ভালোবাসার কথাটা ওদের জানাই, দেখবেন আমাদেরও ধুমধাম করে বিয়ে হবে।”
বিয়ের বিষয়ে আমার দ্বিমত। বাহারাজ ভাই আমার দু গালে হাত রেখে নরম গলায় বলল, “হানি আমি তোমার সম্মান রক্ষার্থে এসব করছি। আমার কর্মী আমাকে বিশ্বাস করলেও ওদের মনেও একটা সন্দেহ আছে। মুখে প্রকাশ না করলেও ওদের মনে হতে পাবে আমরা ওই কাজটা করেছি। চাই ওদের সাক্ষী রেখেই তোমাকে কলঙ্ক মুক্ত করতে চাই। তুমি রাজি হয়ে যাও সোনা।”

“বাবা মা জানলে ভীষণ কষ্ট পাবে।”

“জানবে না। বিয়ের বিষয়টা আমাদের মধ্যে থাকবে। পরবর্তীতে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিয়ে করে সবাইকে জানাব।”
মন না মানলেও মস্তিষ্ক বাহারাজকে সমর্থন করছে। মন ও মস্তিষ্কের মাঝে অবশেষে মস্তিষ্কের জয় হলো। থ্রিপিস পরে বসতে হলো বিয়ের পিঁড়িতে। কাজি সাহেব আগেই সব লিখে রেখেছিলাম। ছোট করে কবুল বলে বাবার রাজকন্যা থেকে বাহারাজের ঘরণি হয়ে গেলাম।

গাড়ি চলছে বাহারাজের দেওয়া গতিতে। আমি ফন্ট‌ সিটে বাহারাজের পাশে বসে অপেক্ষা করছি গন্তব্যের। এখানে থাকতে ইচ্ছে করছে না। সিটে হেলান বিগত ঘটনার কথা মনে করছি। বাহারাজ ড্রাইভিংয়ের মাঝে আমার হাতে হাত রাখল। আমি তাকিয়েও দৃষ্টি সরিয়ে ফেললাম। হাতটা শক্ত করে ধরে বলল, “হানি, কেঁদো না। সব ঠিক হয়ে যাবে।”

আমাকে তার বক্ষ মাঝে টেনে নিল। চোখের পানিতে বাহারাজের শার্ট ভিজে যাচ্ছে। বাহারাজ সেদিকে লক্ষ করল না। অবিরাম আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল। গাড়ির ভেতরে পুনরায় নীরবতায় ছেয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর আমরা এসে পৌঁছালাম বাড়ির সামনে। নত দৃষ্টিতে বাহারাজকে ছেড়ে গাড়ি থেকে নামলাম। বাহারাজ গাড়ি থেকে নেমে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। আমি মৃদু স্বরে বললাম, “যাই তবে?”

“এসো। আমার মনে রাজ্যে রানি হয়ে এসো।”
ল্যাম্পপোস্টের আলো তার মুখে পতিত হচ্ছে। তার ক্লান্ত মুখশ্রী আমাকে ব্যাথিত করছে। প্রত্যুত্তর না করে ছুটে এলাম বাড়ির ভেতরে। বাবা, মা, আপু, ভাইয়া, জান সবাই ড্রয়িং রুমে বসে ছিল। আপু আমাকে দেখে বিরক্তির সাথে বলল, “এতক্ষণ তোর আসার সময় হয়েছে? তোর জন্য আমাকে কত কথা শুনতে হয়েছে জানিস? কোথায় ছিলিস তুই?”

আমি স্থির দৃষ্টিতে আপুর দিকে তাকিয়ে বললাম, “ভালো লাগছিল না, নদীর পাড়ে গিয়েছিলাম।”

“ফোন ধরিসনি কেন?”

“খেয়াল করিনি।”
বলেই গুটিগুটি পায়ে নিজের ঘরে চলে এলাম। পেছন থেকে সবাই আমাকে ডাকল। আমি সাড়া দিতে পারলাম না। মনে হচ্ছিল, কেউ আমার গলা চেপে ধরে আছে। দরজার ছিটকিনি তুলে দিলাম। বালিশটা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলাম। কেন এমন হলো আমার সাথে? প্রিয় মানুষদের চোখের দিকে তাকাতেও আমার কেমন লাগছে। কেন লাগছে এমন? আমি ওদের থেকে সত্যিটা লুকিয়েছি তাই। বুক ছিঁড়ে বেরিয়ে এলো এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস।

চলবে… ইন শা আল্লাহ