তুমি থেকো দাঁড়িয়ে খোলা বারান্দায় পর্ব-২১+২২+২৩

0
4

#তুমি_থেকো_দাঁড়িয়ে_খোলা_বারান্দায়
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ২১

আজকের সকালটা বেশ‌ অন্যরকম। বেশ ফুরফুরে মেজাজ। জানালা থেকে উঁকি দেওয়া মিষ্টি রোদ আমার নিদ্রা ভঙ্গ করেছে। এজন্য রোদ্দুরকে বিশাল একটা ধন্যবাদ জানানো দরকার। খোশমেজাজে উঠে ফোনটা চেক করলাম। অচেনা নাম্বার থেকে ফোর মিসড কল। যার প্রয়োজন তার ভরসায় রেখে বিছানা ছাড়লাম আমি। ব্রাশে পেস্ট লাগিয়ে ছাদের দিকে পা বাড়ালাম। বাবা প্রতিদিন সকালে ছাদে বসে খবরের কাগজ পড়ে। প্রকৃতির সাথে মিশে খবরের কাগজ পড়ার মজাই আলাদা – তার মন্তব্য এটা। তবে খবরের কাগজ পড়া আমার কাছে বোরিং একটা বিষয়। আমি দৃষ্টি সরিয়ে রেলিংয়ের কাছে দাঁড়িয়ে দাঁত ব্রাশ করছি। মা চায়ের কাপ নিয়ে এলো। বাবাকে দিয়ে বলল, “তোমার মেয়ের কাছে এখন পড়াশোনা পার্ট টাইম জবের মতো। অবসরে আছে।”

আমি মায়ের দিকে তাকালাম। মা তা লক্ষ্য করে বলল, “চোখ গোল গোল করে কী দেখছিস? সত্যিটাই বলেছি। পড়াশোনা ঠিকমতো কর। পিএসসিতে গোল্ডেন, জিএসসিতে গোল্ডেন, এসএসসিতে গোল্ডেন, এইচএসসিতে গোল্ডেন। অর্নাসে এসে ফেল করে বসিস না।”

বাবা প্রতিবাদ করে‌ বলল, “এভাবে‌ বলছ কেন মেয়েটাকে? এখন একটু চিল করতে দাও। কয়েকদিন পর চাইলেও তো পড়াশোনা থেকে টলাতে পারব না।”

“ততদিন কি টিচাররা বসে থাকবে? পড়া এগিয়ে যাবে না?” মা ধীর গলায় বলল। আমি পেস্টের পিক ছাদ দিয়ে নিচে ফেলে বললাম, “আমার জন্য ভালো ব্যাচ দেখো বাবা। আমি পড়াশোনায় মনোযোগী হতে চাই।”

মা তেলেবেগুনে জ্বলে বলল, “তোর জন্য কী এবার কাজকর্ম ফেলে তোর বাবা ভালো টিচার খুঁজবে? নিজে খুঁজে নে।”

“ধুর।” বলে ছাদ থেকে নেমে এলাম আমি। কাবার্ড থেকে টপস্ ও জিন্স বের করে ওয়াশরুমে ঢুকলাম।
__
আজ ক্যাম্পাসে তেমন শিক্ষার্থী নেই। বিশ্ব ভালোবাসা দিবস পালন করে ক্লান্ত তারা। তাই বোধ হয় আজ তারা অনুপস্থিত। আমারও তো তবে অনুপস্থিত থাকার কথা ছিল। আমিও তো! মস্তিষ্ক বিচরণ করল আমার বিয়ের বিষয়টা। গতকাল সাদামাটা ভাবে আমার বিয়ে হয়েছিল, সেটা কীভাবে ভুলে গেলাম আমি? কীভাবে ভুলে গেলাম? এসব ভাবতে ভাবতে ক্যাম্পাসে গিয়ে দাঁড়ালাম। হুট করে অজানা থেকে সামনে এসে দাঁড়াল তাহসান। আমাকে প্রদক্ষিণ করে সুর তুলল গলায়, “সঙ্গী, আমরা ওমর সঙ্গী।”

আমি বিরক্তির সাথে বললাম, “প্লীজ বন্ধ করুন এসব, ভালো লাগছে না।”

আমার দুগালে হাত রেখে বলল, “ভালো লাগছে না মানে কী? আমি তোমার বয়ফ্রেন্ড। কালকে ভালোবাসা দিবস ছিল। তোমাকে নিয়ে আমি ঘুরতে যাব। প্রেম করব। কত কী! অথচ তুমি আমার ফোনই ধরলে না। তাহলে কেন আমাকে বয়ফ্রেন্ড বানিয়েছ?”

“আমি এমনই। আপনি ব্রেকআপ করে দিন।” দুহাত বুকে গুজে স্পষ্ট গলায় বললাম। মনেপ্রাণে চাই তাহসান ব্রেকআপ করে দিক। তাহসানের সম্বোধন তুমি থেকো নেমে এলো তুই-এ। ধমকে বলল, “ব্রেকআপ করে দিব? এত সোজা ব্রেকআপ? এত সোজা? আমি তো তোকে প্রপোজ করিনি। তোর সাথে প্রেম করছি আর তোকেই বিয়ে করব। এট এনি কসট্।”

“আমি কখনো রিলেশনে যাইনি। ডেটে যাওয়া, টাইম দেওয়া, ফোনালাপ করা- এসব আমার জন্য নয়। আমাকে প্লীজ ক্ষমা করুন। আমি কারো গার্লফ্রেন্ড হতে চাইনা।”

“গার্লফ্রেন্ড হতে চাস না, পতিতা হতে চাস? বাহারাজ সেদিন ঠিক বলেছে। আমি তোকে চিনতে পারিনি। তোর মতো মেয়েরা দেহব্যবসা করে টাকা চিনেছে, তারা সত্যিকারের ভালবাসা চিনে না।” আমি মাথা নিচু করে আশেপাশে লক্ষ করলাম। সবাই আমাকে দেখে মজা নিচ্ছে। সবই আমার কর্মফল। এটা আমার নিয়তি। তাহসানের মন ভাঙার শা/স্তি। দ্বিতীয়বার ভরা ক্যাম্পাসে চড় দেওয়া জন্য তাহসান হাত বাড়াল। কিন্তু তার পূর্বেই হাজির হলো বাহারাজ। আমার মরুভূমির ন্যায় তৃষ্ণার্ত মনটা যেন জলের আভাস পেল। বাহারাজ তাহসানের হাতটা‌ নামিয়ে নিতেই সে বলল, “আমার হাত ধরলি কেন? এই মেয়েটাকে আজ আমি…

দাঁত পিষে অসমাপ্ত করল কথা। বাহারাজ ফিচেল হেসে বলল, “আগেই সাবধান করেছিলাম তোকে, তুই তো আমার কথা পাত্তাই দিলি না।”

“ভুল করেছি আমি। অনেক বড়ো ভুল করেছি। অন্য কারো সাথে এমন করার আগেই ভার্সিটি থেকে বের করে দিব ওকে।”
তাহসানের কথায় ভয় পেয়ে গেলাম আমি। অনেক কষ্টে এখানে চান্স পেয়েছি, যদি বের করে দেয়? আমার শরীর ভয়ে থরথর করে কাঁপছে। এই মুহুর্তে কী করা উচিত বুঝতে পারলাম না। বাহারাজ তাহসানকে নিয়ে পেছন দিকটায় গেল। তাদের মধ্যে যেন গলাগলি ভাব। টুং করে মেসেজ এলো ফোনে। জিন্সের পকেট থেকে ফোন বের করে দেখলাম অচেনা নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে।

‘লাইব্রেরি যাও, আমি আসছি।’

এই অচেনা নাম্বার থেকে সকালেও কল এসেছে! নাম্বার কার? এসব ভাবতে ভাবতে লাইব্রেরির দিকে অগ্রসর হলাম। আমার ভূত মহাশয়ের সাথে এখনো দেখা হয়নি।
দশ মিনিট যাবত অপেক্ষা করছি আগুন্তকের। এখনো আসার নাম নেই তার। এদিকে ভূত মহাশয়ের খবর নেই। বিরক্ত হয়ে মেসেজ পাঠানো নাম্বারে কল করলাম। একবার রিং হয়ে কেটে গেল। দ্বিতীয় কল দেওয়ার পূর্বেই দরজার ফাঁক থেকে বাহারাজের মুখমণ্ডল ভেসে উঠল। কল ঢুকল। রিংটোন বাজল তার মুঠোফোনে। এটা যে বাহারাজের নাম্বার অবশেষে বুঝলাম। মুখোমুখি দাঁড়াল, কী দিয়ে শুরু করা উচিত? আমি আমতা-আমতা করে বললাম, “এটা আপনার নাম্বার? আপনি সকালে আমাকে কল দিয়েছিলেন?”

“হুঁ। ধরো নি কেন?”

“ঘুমিয়ে ছিলাম।”

“পরে কল করোনি কেন?”

“আপনার নাম্বার তো নেই? আপনি কল করেছেন, জানব কীভাবে? তাই ব্যাক করিনি।”

“নাম্বারটা সেভ করে রেখ। এখন কারণে অকারণে, প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে, যখনতখন তোমাকে কল করব। কল যাতে মিস না হয়।”

আমি আলতো করে মাথা নাড়লাম। বাহারাজ আমার পাশে এসে বসল। আমাকে তার বুকে টেনে নিল। বাম হাতে আগলে বলল, “আজ নয়তো কাল এটার হওয়ারই ছিল হানি। মানুষের মন ভাঙা ভয়াবহ অ/ন্যা/য়, অ/প/রা/ধ। তবে তাহসানকে না করার আগে আমাকে জানানোর প্রয়োজন ছিল। আমি পরিস্থিতিটা সুন্দর করে সামলে নিতাম।”

আমি বাহারাজের বুকে বিড়ালছানার মতো লেপ্টে রইলাম। পবিত্র সম্পর্ক আমাদের। নরম গলায় বললাম, “ও আমাকে এত কথা বলল, আপনি ওকে কিছু করবেন না?”

“কী করব?”

তাই তো! বাহারাজ কী করবে? করবে তো ভূত মহাশয়। ওকে দিয়ে তাহসানের পা ভাঙাব। আহ্! কী শান্তি লাগছে। বাহারাজ আদুরে গলায় বলল, “কী ভাবছ এত?”

“কিছু না।”

“একটা কথা ভেবেছ?”

“কী?”

“গতকাল আমার বাসর রাত ছিল। এটা আমাদের বিয়ের প্রথম সকাল।” বাহারাজের কথায় আমি লজ্জায় রাঙা হলাম। মুখটা তার বুকে আরেকটু লুকিয়ে ফেললাম। বাহারাজ টেনেও আমাকে সরাতে পারল না। আচমকা একটা হাত টপসের বাটনের ফাঁক দিয়ে পেটে পৌঁছে গেল। আমি লাফ দিয়ে সরে এলাম। আচমকা আ/ক্রমণে টপসের দুটো বাটন ছিঁড়ে গেল। আমি ভীত গলায় বললাম, “দেখুন এটা লাইব্রেরি, এখানে ওসব করবেন না। এখানে সিসি ক্যামেরা আছে। সব রেকর্ড হচ্ছে।”

“ওটা নষ্ট।”

আমি ক্যামেরার দিকে তাকালাম। কোনো অ্যাঙ্গেলে বোঝা যাচ্ছে না, এটা নষ্ট। অটল গলায় বললাম, ” তবুও না। কেউ দেখে ফেলবে।”

বাহারাজ জবাব না দিয়ে হেসে ফেলল। একপা একপা‌ করে এগিয়ে এলো আমার নিকট। আমি সেঁটে গেলাম বুকশেলফের সাথে। এক চোখ বন্ধ করে রাখলাম। তার দুহাত তখন আমার কোমরে বিচরণ করছে। দুপায়ের নখ মাটিতে ভাঁজ করে রেখেছি। মুঠো করে রেখেছি বুকশেলফ। তার ওষ্ঠদ্বয়ের অবাধ্য ছোঁয়া লাগল আমার উদরে। পুরোপুরি ভর ছেড়ে দিলাম বুকশেলফে। শ্বাস-প্রশ্বাস ভারি হয়ে আসছে ক্রমশ। কিছুক্ষণ পর চোখ মেলে দেখলাম বাহারাজ লাইব্রেরির বিপরীতে পা ফেলছে। অথচ তখনও একটা ঠান্ডা স্পর্শ আমার উদরে ছড়িয়ে আছে। আমি হাত দিয়ে অনুভব করলাম চেইন। উল্টো ঘুরে বুকশেলফে মুখ লুকিয়ে ফেললাম। আমি কি না কি ভেবে ছিলাম।

চলবে.. ইন শা আল্লাহ

#তুমি_থেকো_দাঁড়িয়ে_খোলা_বারান্দায়
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ২২

বাবার পরিচিত একটা ভালো কোচিং সেন্টারে আমাকে ভর্তি করে দিয়েছে। সপ্তাহে তিনদিন পড়ব সেখানে। পড়াশোনা বিষয়টাকে এবার সিরিয়াস হিসেবে নিয়েছি। কিছুতেই গাফিলতি হতে দেব না। বিকাল তখন চারটা পঁয়তাল্লিশ। কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে বের হয়েছি বাড়ি থেকে। আমাকে সেন্টার চিনিয়ে ও স্যারের সাথে পরিচয় করাতে বাবা নিজেও এলেন সাথে। পায়ে হেঁটে সেখানে পৌঁছাতে মিনিট দশেক লাগল। বাবাকে দেখে স্যার বেরিয়ে এলেন ক্লাস থেকে। বাবা তাকে সালাম দিয়ে বললেন, “ও আমার মেয়ে হানি। ওর কথাই আপনাকে বলেছিলাম।”

“দেখতে তো আপনার মতোই হয়েছে।”

“হ্যাঁ। এজন্য আমার ভালোবাসার বেশিভাগটা ও পায়।”

দুজনেই হাসলেন। সর্বদা সবাই আমাকে বাবার সাথে তুলনা করে। ভাইয়া ও আপু মায়ের মতো দেখতে হলেও আমি তার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। সবাই বলে আমি বাবার মেয়ে। বাবা আমাকে রেখে চলে গেলেন। ক্লাস ভরা ছাত্র-ছাত্রীতে। সবাই আমার ব্যাচমেট। স্যার প্রথম বেঞ্চের প্রথম সিটটা আমার জন্য ছেড়ে দিতে বললেন এক ছাত্রীকে। তিনি ছাড়লেন না, পাশে সেঁটে আমাকে বসার জায়গা করে দিলেন। মন দিয়ে স্যার পড়া শুনছি ও বুঝছি।

কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে বাড়ির পথে অগ্রসর হতেই দেখা মিলল বাহাবাজের। রিকশায় চেপে কোথাও যাচ্ছে সে। আমাকে দূর থেকে লক্ষ করে রিকশা ওয়ালাকে বলল রিকশা থামাতে। আমার সামনে এসে রিকশা থামল। আমি সামান্য হেসে বললাম, “কোথায় যাচ্ছেন?”

“হাসপাতালে যাচ্ছি ব্যান্ডেজ খুলতে‌। ভরসন্ধ্যায় ব্যাগ নিয়ে তুমি কোথায় যাচ্ছো?”

“বাবা কোচিং সেন্টার ঠিক করে দিয়েছে। পড়ে বাড়িতে যাচ্ছি।”

“ফ্রি থাকলে আমার সাথে এসো।”
গন্তব্য ঠিক করতে চুপ করে রইলাম। বাহারাজ ততক্ষণে পাশে সেঁটে বসার বার্তা দিয়েছে। বাড়িয়ে দিয়েছে বাম হাত। তাকে নিরাশ না করে হাতে হাত রেখে রিকশায় চেপে বসলাম। পেছন থেকে ব্যাগটা এনে সামলে ঝুলালাম। বাহারাজ হুড ফেলে দিল। তড়িঘড়ি করে তার দিকে তাকাতেই বলল, “অসময়ে তোমাকে আমাকে একসাথে দেখে ফেললে সমস্যা হবে, তাই হুড ফেলে দিলাম। (বিরতি দিয়ে বলল) উপহার পছন্দ হয়েছে? বিয়ের পর স্বামীর দেওয়া প্রথম উপহার।”

“হুঁ।”

“শুধু হুঁ? আমার ইচ্ছে ছিল নাকফুল পরতে দিব। কিন্তু আপাতত সেটা সম্ভব হচ্ছে না। অবিবাহিত মেয়েরা নাকফুল পরলে কী ভাববে সবাই। তাই আড়ালে রাখলাম আমার ভালোবাসার চিহ্ন।”

“ভালোবাসার চিহ্ন?”

“বেড়ি। এই চিহ্ন তোমাকে অন্য পুরুষদের থেকে আলাদা রাখবে। তার স্পর্শ তোমাকে মনে রাখবে তুমি বিবাহিত। তোমার ব্যক্তিগত এক পুরুষ আছে।”

বাইরে থেকে আসা কৃত্রিম আলোতে আমি বাহারাজের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। এই পুরুষটা আমার? শুধু আমার? আর আমিও কেবল তার? শুধু তার? আমার ভাবনার মাঝে সে আবার বলে উঠল, “শিক্ষাসফরে যাচ্ছ?”

“কীসের শিক্ষাসফর?”

“তুমি নোটিশ বোর্ড দেখোনি?”

“নাতো?”

“আমাদের ভার্সিটি থেকে প্রতিবছর শিক্ষাসফরে বের হয়। আমি যাই।”

“ওহ্। দেখা হয়নি।”

“যাবে না?”

“আমরা কখনো শিক্ষাসফরে যাইনা। আমরা বন্ধুরা মিলে ট্যুর দিয়ে আসি। ভার্সিটি থেকে গেলে একটা নির্দিষ্ট গণ্ডি দেওয়া থাকে। আমরা গেলে যেটা খুশি সেটা করি। মজাই আলাদা।” আমি বেশ আগ্রহ নিয়ে বললাম।

“এবার তুমি আমার সাথে ঘুরতে যাবে।”

বাহারাজের কথায় আমার চক্ষু চড়কগাছ হয়ে গেল। ওষ্ঠদ্বয় বৃত্তের আকৃতি করে নিষ্পলক করে রইলাম। আমার চিবুক ধরে সামনে ঘুরিয়ে বলল, “নিজেকে সংযত করো, হানিমুনে গিয়ে মন ভরে আমাকে দেখো।”

‘হানিমুন?’ যে মেয়ে এখনো বিয়েটা মন থেকে মেনে নিতে হিমশিম খাচ্ছে সে যাবে হানিমুনে। সেখানে গিয়ে বাহার যদি উলটাপালটা কিছু করে বসে? অকপটে বললাম, “এবার কোথাও যাব না। সামনে আপুর বিয়ে তো বাড়ি থেকে যেতে দিবে না।”

“আমি গিয়ে বাবা মায়ের সাথে কথা বলে তোমার যাওয়া কনফার্ম করব।”

“আপনার বাবা মায়ের সাথে কথা বললে আমার লাভ কী? আমাদের বিয়ের বিষয়ে কাউকে কিছু জানাবেন না, বলে দিলাম।” বেশ জোরে বলে ফেললাম আমি। রিকশা ওয়ালা মামা আমার উঁচু কথা শুনে পেছনে তাকাল। বাহারাজও গম্ভীর চোখে তাকিয়ে আছে। আমার উচ্চৈঃস্বরে কথা বলার কারণে তাদের যে এমন রিঅ্যাকশন- তা বুঝতে বেগ পেতে হলো না। কিঞ্চিৎ লজ্জা এসে ভীড় করল আমার মুখে। তড়িঘড়ি করে রিকশা থেকে নামার প্রয়াস করতেই হাত টেনে ধরল বাহারাজ। উদ্বিগ্ন গলায় বলল, “পা/গ/ল হয়েছ নাকি? চলন্ত রিকশা থেকে নামছ কেন? হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার শখ আছে নাকি?”

“আছে। আপনার সাথে হানিমুনে যাওয়ার ইচ্ছে নেই।”

“দেখা যাবে।”
শক্ত গলায় বলল বাহারাজ। রিকশা ততক্ষণে হাসপাতালের সামনে এসে স্থির হলো। বাহারাজ নেমে ওয়ালেট বের করে আমার দিকে বাড়িয়ে দিল। আমি একবার ওয়ালেট তো একবার তার দিকে তাকাচ্ছি। বউ হওয়ার সাথে সাথে ওয়ালেট আমার হাতে তুলে দিয়েছে? বাহ্! মনমতো শপিং করা যাবে দেখছি। আমি ওয়ালেটটা নিয়ে হাসপাতালে দিকে পা বাড়াতেই টেনে ধরল হাত। বিরক্ত হয়ে পেছন ফিরে ভ্রু কুঁচকে বললাম, “হোয়ার্ট?”

“ভাড়া না দিয়ে ওয়ালেট নিয়ে কোথায় যাচ্ছো?”
কিংকর্তব্যবিমূঢ় হলাম। মামাও আমার দিকে চেয়ে লাল রঙের দাঁতগুলো বের করে হো হো হেসে উঠল। পান খেয়ে বেহাল দশা করেছে তার দাঁতের। আমি দ্রুত ওয়ালেট থেকে টাকা বের করে বললাম, “কত দিব?”

“পঞ্চাশ দাও।”

“কী? ভাড়া তো ত্রিশ টাকা হবে। কোথা থেকে উঠেছেন?”

“তোমার আর আমার কথা হজম করার জন্য হজমি কিনতে বাকি বিশ টাকা দাও।”
আমি নোটটা বাড়িয়ে দ্রুত পা ফেললাম। লোকটা তখনও হেসে চলেছে। আমার ইচ্ছে করেছিল মাটি ফাঁক করে নিচে ঢুকে যেতে।

চেম্বারের বাইরে বসে আছি আমি। পাশ দিয়ে দুই চার জন নার্স চলে যাচ্ছে। নাকে আসছে কড়া ঔষধের গন্ধ। বাহারাজ ঢুকেছে ডঃ মুহাম্মদ জাফরের কেবিনে। কাঁচের দরজার সামনে সাদা কাপড় টানানো তাই বাইরে থেকে উঁকিঝুঁকি দিয়েও দেখা যাচ্ছে না বাহারাজকে। সময় কাটাতে ফোন বের করলাম। ফোনের স্ক্রিনে বাবার নাম্বারটা শো করছে। রিং হচ্ছে, ফোন সাইলেন্ট থাকার কারণে রিংটোন বাজছে না। কল রিসিভ করে বিনীত সুরে সালাম দিতেই বাবা বললেন, “আর কতক্ষণ লাগবে রে মা? আমি বাইরে দাঁড়িয়ে আছি।”

ওষ্ঠদ্বয় চেপে শ্বাস নিলাম। বাবা অপেক্ষা করছে। আমার ফোন করে আগেই জানানো উচিত ছিল। নিভু গলায় বললাম, “বাবা আরও আগে ছুটি হয়ে গেছে। আমি চলে এসেছি। বুঝতে পারিনি তুমি আবার ওখানে যাবে। সরি বাবা।”

“ইটস্ ওকে। আমি তোকে নিতে আসব, সেটাও তো বলিনি। কোথায় আছিস মা? বাড়িতে?”

“না। একটু হাঁটতে এসেছি।”

“রাস্তাঘাটের অবস্থা ভালো নয়, তুই তাড়াতাড়ি বাড়িতে আয়।”

“আচ্ছা বাবা।”
কল রেখে পুনরায় বাহারাজের অপেক্ষায় রইলাম। কিছুক্ষণ পর বাহারাজ বেরিয়ে এলো। দীর্ঘদিন হাতে প্লাস্টার থাকার কারণে ওই অংশটা বেশি ফরসা। অবশ্য বাহারাজ একটু বেশিই ফরসা। কোল থেকে ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ওয়ালেট ফেরত দিলাম তাকে। ব্যাগের বেল্টটা শক্ত করে চেপে ধরে বললাম, “আমরা এখন কোথায় যাচ্ছি?”

বাহারাজ নার্স ও বিভিন্ন মানুষদের পাশ কা/টিয়ে সামনে দিকে ধাবিত হচ্ছে। পেছনের দিকে তার মনোযোগ শূন্য। আমি দ্রুত এগিয়ে ফের বললাম, “শুনছেন, কোথায় যাচ্ছি আমরা? বাবা ফোন দিয়ে, বাড়িতে যেতে বলেছে।”

“প্রথমবার নিজেকে বিবাহিত পুরুষ লাগছে। আরেকবার ডাকো।”

“মজা করছেন কেন?”

“বাবাকে বলোনি কেন, স্বামীর সাথে আছো। চিন্তা না করতে।”

“ধুর, ধুর।”
বিরক্তির সাথে বলে তার সাথে হাঁটতে লাগলাম। জানিনা আমাদের গন্তব্য কোথায়, কতদূর। ব্যস্ত রাস্তার ফুটপাতে উঠে বাহারাজ আমার হাত ধরলেন। নিজে রাস্তার দিকটায় গিয়ে আমাকে নিরাপদ জায়গায় হাঁটতে দিলেন। প্রিয় মানুষের হাতে হাত রেখে হাঁটার যে তৃপ্তি তা আর কিছুতে নেই। গন্তব্য এসে থামল স্টুডিয়োর সামনে। অবশেষে থেমে থেমে বলল, “আমাদের কোর্ট ম্যারেজের জন্য কাপল ছবি লাগবে। তাই ছবি তুলতে এসেছি। তোমাকে আমার থেকে আলাদা হওয়ার কোনো অপশন আমি রাখব না হানি।”

আমি বাহারাজের দিকে তাকালাম। সেও অপলক চেয়ে আছে আমার দিকে। আমাকে আগলে রাখার যে স্পৃহা তার- তা বহাল থাকুক আমরণ।

চলবে.. ইন শা আল্লাহ

#তুমি_থেকো_দাঁড়িয়ে_খোলা_বারান্দায়
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ২৩

আজ শুক্রবার। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ার কারণে আজ বেলা করে ঘুম থেকে উঠেছি। হাই তুলে জানালার কাঁচ খুলে দিলাম। হাওয়া প্রবেশ করল আমার বদ্ধ ঘরে। সূর্য তখন মাথার ওপরে অবস্থান করছে। আমি হাই তুলে ব্রাশ হাত নিয়ে নিচে নামলাম। বৈঠকখানায় বাবা, ভাইয়া ও জান টিভি দেখছে। মা ও আপু রান্নাঘরে ব্যস্ত। আমাকে দেখে মা তরকারি কাটতে কাটতে বলল, “মহারানি উঠেছে তবে। হিয়ার বাপ, তোমার আদরের মেয়ে কাল এগারোটার পর বাড়িতে চোরের মতো ঢুকে না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। তোমার আশকারা পেয়ে ও মাথায় উঠে গেছে।”

এখানকার হাওয়া বেশ গরম। আমি কাঁচুমাচু করে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়ালাম। বাবা রিমোট টিপে টিভি মিউট করে গম্ভীর গলায় বলল, “হানি কী শুনছি এসব? রাতে খাবার খাসনি কেন? কতদিন বলেছি, রাত খাবার শরীরের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।”

মা রান্নাঘর থেকে লাউ নিয়ে তেড়ে এলো। বাবা যেন থতমত খেল। দ্বিগুণ তেজ নিয়ে বলল, “আমি তোমাকে খাওয়ার কথা বলিনি। রাত দশটায় কোন ভদ্র বাড়ির মেয়ে বাড়িতে আসে?”

“তাইতো। তাইতো। হানি এত রাত পর্যন্ত বাইরে কী করেছিস?” মায়ের কথার পরিপ্রেক্ষিতে বলে বাবা। আমরা মায়ের ধমকে যতটা না গুরুত্ব দেই, বাবার নম্র কথাকে ততটা ভয় পাই। ব্রাশটা পেছনে নিয়ে বললাম, “কীভাবে যে এগারোটা বেজে গেছে, বুঝতে পারিনি বাবা। আর কখনো এমন হবে না।”

“কীভাবে বাজল মানে? ঘড়ি কাঁটা তুই চিনিস না?” মা রেগে বলল। সচরাচর মা যখন রেগে যায়, বাবা তখন চুপসে যায়। মায়ের উঁচু গলায় সবাই এসে উপস্থিত হলো সেখানে। আপু সুইচ বোর্ড টিপে টিভি বন্ধ করে দিল। বাবা না থাকলে এতক্ষণে দুটো চারটে কথা মাকে শুনিয়ে ফেলতাম। হজম ক্যান্ডি ছাড়াই কথাগুলো হজম করে বললাম, “আর দেরি হবে না মা।”

“হয়েছে কেন দেরি? এটা তোর কাছে ক্লাব মনে হয়? বাড়ির ছেলেরা অফিস ছুটির সাথে সাথে বাড়িতে চলে এসেছে। অথচ বাড়ির আকাইমা মেয়ে এগারোটা অবধি বাইরে‌ থেকে ফুর্তি করে।” মায়ের শেষ কথাটা আমার শরীরে রুষ্টের জন্ম দিল। ব্রাশ ছুড়ে ফেলে বললাম, “তুমি কী বুঝবে? তুমি তো আদিকালের বদ্যি মানুষ। আমি দেরি করেই আসব।”

মা দু সেকেন্ড আমার দিকে তাকিয়ে থেকে হাতের লাউটা ছুড়ে দিল। লাউটা মাঝারি সাইজের। আমি নড়লাম না। লাউটা এসে লাগল আমার মুখমণ্ডলে। ধাক্কা খেয়ে চির না ধরলেও মাটিতে পড়ে ফেটে গেল। সাথে সাথে আমি নাক ধরলাম। মা ততক্ষণে হিংস্র হয়ে এগিয়ে এসেছে। ফাঁকা হাতে ক্রমাগত আমার পিঠে আঘাত করে চলেছে। ব্যথায় টু শব্দটি নির্গত হচ্ছে না মুখ থেকে। অশ্রু গড়িয়ে পড়ার পূর্বেই চোখের পাতা বন্ধ করে নিলাম। আমার ও মায়ের মাঝে বাঁধা হয়ে দাঁড়াল জানভি। মায়ের হাত ধরে বলল, “থামো মামি‌। সামর্থ্য মেয়ের গায়ে কেউ হাত দেয়?”

“জানভি আমাকে ছাড়। ওর এত তেজ আসে কোথা থেকে আজ আমি দেখব। কে তার মায়ের সাথে এমন ব্যবহার করে?” বলতে বলতে মা পুনরায় এগিয়ে এলো নিকটে। জানভি কিছুতেই মাকে সামলাতে পারছে না। বাধ্য সন্তানের মতো দাঁড়িয়ে আছে আপু ও ভাইয়া। বিতৃষ্ণা হয়ে জানভি বলল, “হিয়ান, মামিকে থামা।”

“তুই মাকে ছাড় জানভি। ওর ভদ্রতা, ব্যবহার দিনদিন অবনতি হচ্ছে। মাঝে মাঝে একটা দুইটা না খেলে আরও উচ্ছন্নে যাবে।” ভাইয়া বুকে হাত গুজে দাঁড়িয়ে রইল। আপুও স্থির। বহু প্রতিক্ষার পর বাবা মুখ খুললেন, “রাইসা, অনেক হয়েছে। এবার যাও।”

“আমাদের মাঝে তুমি আসবে না। তুমি টিভি দেখতে যাও। ও আজ ভদ্রভাবে বলবে, মগরিবের আজান সাথে সাথে ঘরে থাকবে। তাহলে এই বাড়ি ছাড়বে।”

আমি মাটিতে বসে পড়লাম। না দেখেও অনুভব করতে পারছি দুহাতের তালু রক্তে ভিজে গেছে। বাক্য বচন থামছে না। রান্নাঘরে যেয়েও সে চালিয়ে যাচ্ছে। জানভি হাঁটু মুড়ে পাশে বসে বলল, “হানি, ঘরে যা।”

আমি হাঁটুতে মুখ গুজে ফেলেছিলাম বহু আগে। সেখান থেকে মুখ বের করতে ইচ্ছে করছে না। আমার ভাবাবেগ না পেয়ে জানভি টেনে ধরল হাঁটু থেকে। জোর করে টেনে সরাল হাত। আমি ক্লান্ত চোখে জানের দিকে তাকালাম। সে স্থির দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। জানভির ভেতরটা মুহুর্তেই কেঁপে উঠল। কাঁপা কাঁপা হাতে স্পর্শ করল তাজা রক্ত গুলো। কেঁপে উঠলাম আমি। উদ্বিগ্ন গলায় বলল, “কীভাবে হলো এটা? কোথা থেকে রক্ত বেরিয়েছে?”

এবড়োখেবড়ো হয়ে আছে রক্ত গুলো। বোঝার জো নেই। আমি উত্তর না দিয়ে হাতের উলটো পিঠ দিয়ে মুছতে লাগলাম। বাবার অন্তরটাও এক মুহুর্তের জন্য কেঁপে উঠল। কয়েক কদম এগিয়ে এসে বলল, “হানি, মা। কীভাবে হলো এটা? হিয়ান ডাক্তারকে কল দে।”

বাবার বিচলিত ভাবটা চোখে পড়ার মতো। মাও রান্নাঘর থেকে ফিরে এলো। তবে কাছে এলো না, দূর থেকে তাকিয়ে রইল। আমরা মন চাইল, মা একটু কাছে আসুক। ক্ষতটা হাত দিয়ে ছুঁয়ে দিক। কিন্তু মা এলো না। মনের ভেতর দানা বাঁধা অভিমান ঠেলে উঠে দাঁড়ালাম। নিজেকে ধাতস্থ করে ঘরে দিকে বা বাড়াতেই বাবা বলল, “বস এখানে। ডাক্তারকে কল দিয়েছি। এখুনি চলে আসবে।”

আমি বিরতিহীন কদম ফেলে সিঁড়িতে রাখলাম। কানে এলো পরিচিত একটা কণ্ঠস্বর। পেছন ফিরতে হাস্যোজ্জ্বল বাহারাজকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম। মিষ্টি হাতে জামাই এসেছে তার শ্বশুরবাড়িতে। আমি নিষ্পলক দৃষ্টিতে পাঁচ সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে ফের পা ফেললাম।
___
অগোছালোভাবে ফেলে যাওয়া কাঁথা টেনে গায়ে জড়িয়েছি। মন খারাপ নিয়ে দেখা হয়নি ক্ষতটা কতটা জোড়াল। তবে জোড়াল আঘাত পড়েছে দরজায়। শুনেছি বাবা, ভাইয়ে দরজার খোলার আদেশ। কিন্তু কোনোটিকে গুরুত্ব না দিয়ে ফাঁকা হয়ে বসে আছি। তৃতীয়বারের সময় জানভির গলা শুনলাম। করাঘাতের পাশাপাশি উঁচু গলায় বলল, “হানি, রাগ করে না ময়না। দরজাটা খোল।”

“খুলব না। তোমার মামি বেগুন নিয়ে আমার মাথা ফাটিয়ে দিলেও খুলব না। ভালো থাকো তোমরা।”
আমার স্পষ্ট গলা। কিছুক্ষণ পর বাহারাজের কণ্ঠ ভেসে এসো, “হানি দরজাটা খোলো। তোমার সাথে আমার কথা আছে।”

“কীসের কথা? কোনো কথা নেই। এখন থেকে যান।”

“দরজা খুলে বলতে দাও। তারপরে শুনো কীসের কথা।”

“ওখান থেকেই বলো।”

“মুখ না দেখে আমি আবার কথা বলতে পারিনা।”
এতক্ষণ মনে মনে কড়া একটা সিদ্ধান্ত ভেবেছিলাম- ব্যাগপত্র গুছিয়ে শ্বশুর বাড়িতে উঠব। তাই স্বামীকে বশে আনতে দরজা খুলে দিলাম। বিরক্তির সাথে বললাম, “বলুন কী বলবেন?”

“পার্সোনাল কথা। ভেতরে আসি।”
ভ্রু কুঁচকে এলো আমার। বাড়ির কেউ এতে বিন্দুমাত্র প্রতিক্রিয়া দেখাল না। আমি সরে এসে বাহারাজকে পথ করে দিলাম প্রবেশের। বাবাকে চোখের ইশারা করে ভেতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলেন। আমি ড্রেসিং টেবিলের উপর বসে বললাম, “কী কথা?”

বাহারাজ জবাব দিল না। এগিয়ে এলো নিকটে। দুহাত আমার চোয়ালে রেখে বৃদ্ধা আঙুলে রক্ত মুছিয়ে দিতে লাগল। পুরুষালি স্পর্শ পেয়ে শিউরে উঠল আমার শরীর। পরক্ষণে চোখ বুজে নিলাম। তিনি বেশ আদুরে গলায় বলল, “বেশি লেগেছে?”

চোখ বুজেই বললাম, “হুঁ।”

“এখনো ব্যথা করছে?”

“উঁহু। জ্বলছে।”

“আমার জন্যই তোমাকে ব্যথা পেতে হলো। সরি বউ।”

আমি লজ্জায় রাঙা হলাম। দুহাত সরিয়ে দিয়ে বললাম, “ধুর। আপনার জন্য না। মায়ের সাথে তর্ক করেছিলাম, তাই লাউ মে/রেছে।”

“কেন করেছ তর্ক? মায়ের সাথে কেউ এমন করে? মা তোমার ভালোর জন্যই বলেছে। আজকাল খবরের কাগজ খুললেই ধ/র্ষ/ণ, খু/নের খবর। সব পিতা-মাতাই তার সন্তানের সুস্থতা চায়। তুমি সুন্দরভাবে বলতে পারতে, মা এমন আর হবে না।”

“মাথায় ওসব ঢুকেনি। আসলে কেউ যদি চ্যাঁচিয়ে ভালো কথাও বলে, আমরা মনে হয় সে নি/কৃ/ষ্ট কথা বলছে।”
মুখ ভার করে বললাম। বাহারাজ আমাকে তার হৃদয়মাঝারে টেনে নিল। আহা কী শান্তি। এক মুহুর্তের ভেতরটা শান্ত হয়ে গেল। এটাই বুঝি আমার অর্ধাঙ্গর পাওয়ার?
চলবে.. ইন শা আল্লাহ