তুমি থেকো দাঁড়িয়ে খোলা বারান্দায় পর্ব-২৪+২৫+২৬

0
14

#তুমি_থেকো_দাঁড়িয়ে_খোলা_বারান্দায়
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ২৪

নাকের উপর খুব আদরে একটা ড্রেসিং করে দিল বাহারাজ। সেনসিটিভ জায়গা হওয়ার কারণে স্বল্পেই এই অবস্থা হয়েছে। আমি তিন আঙুলে নাক ধরে ঘনঘন শ্বাস নিচ্ছি সোফায় বসে। বাহারাজ আমার পাশ থেকে উঠে অন্য সোফায় গিয়ে বসল। আমার দিকে তাকিয়ে আপুকে উদ্দেশ্য করে বলল, “ভাবি, হানিকে কিছু খেতে দাও।”

অবিলম্বে আপু রান্নাঘরের দিকে অগ্রসর হলো। ফিরত এলো রুটি ও সবজি ভাজি নিয়ে। নিঃশব্দে প্লেটটা টি টেবিলের উপর রেখে দূরে গিয়ে দাঁড়াল। আমি রিমোট নিয়ে নিক চ্যানেলে দিয়ে সিভা দেখতে লাগলাম। দেখার মাঝে রুটি টুকরো করে মুখে দিলাম।
বাহারাজ একটা শপিং ব্যাগে করে কিছু কার্ড নিয়ে‌ এসেছে। তার মধ্যে থেকে একটা কার্ড বাবার হাতে দিয়ে বলল, “বাবা বিয়ের প্রথম কার্ডটা আপনাকে দিতে বলেছে।”

বাবা কার্ডটা নিয়ে খুলে দেখলেন ভেতরটা। টিভি দেখার বাহানায় বারবার চেয়ে দেখলাম কার্ডটা। আনকমন থিম। কবে যে আমাদের বিয়ের কার্ড হবে? মনের দুঃখে আমি আরেক টুকরো রুটি মুখে দিলাম। বাবা হেসে বললেন, “বেয়াই মশাই সবকিছুতে এগিয়ে। বিয়ের কার্ড অবধি পৌঁছে দিয়েছে। অথচ আমি গতকাল বিয়ের কার্ড করতে দিয়েছি।”

“বাবা যতই এগিয়ে থাকুক না কেন? অনুষ্ঠান কিন্তু আপনার বাড়িতেই আগে হবে।” মজার ছলে বাহারাজ বলে ফেলল। বাবাও অট্টহাসিতে মেতে উঠলেন। ঠিকই তো! বরপক্ষ যতই লাফালাফি করুক, কনেপক্ষের অনুষ্ঠানই তো আগে হবে।
মেয়ের হবু শ্বশুরবাড়ি থেকে দেবর এসেছে, তাকে ফাঁকা মুখে বসিয়ে রাখা বেমানান বিষয়। মা তার জন্য এক ট্রে খাবার সাজিয়ে নিয়ে এলো। শরবত থেকে শুরু করে সেমাইয়ের পাতে মিষ্টি। বাহারাজ মাথায় হাত দিয়ে বলল, “করেছেন টা কী? এত খাবার কেন দিয়েছেন?”

বাবা বললেন, “এখনই তো খাওয়ার সময়। খাও খাও।”

প্রত্যুত্তরে বাহারাজ বলল, “সবাইকে দিন।”

মা গম্ভীর গলায় বলল, “সবার চিন্তা তোমাকে করতে হবেনা। তুমি খাও বাবা। (পরপর আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল) হানি লাউয়ের বাড়ি খেতে না চাইলে ভলিউম কমা।”

তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মায়ের দিকে তাকিয়ে মিউট করে দিলাম টিভি। বাহারাজ আড়ষ্ট হয়ে খাবার মুখে তুলছে। কেউ না জানলেও বাহারাজ জানে- সে এ বাড়ির জামাই। স্বল্প পরিসরে খেয়ে বলল, “আরেকটা কথা বলব?”

“হ্যাঁ বলো।”

“পরশুদিন আমাদের ভার্সিটি থেকে শিক্ষাসফরের বাস ছাড়ছে। প্রতিবার আমি দায়িত্ব নিয়ে সবাইকে নিয়ে যাই। হানিকে…

বাহারাজ সমাপ্ত না করেই তার মনের কথাগুলো বাবার নিকট উপস্থাপন করল। বাবা আমার দিকে তাকিয়ে নরম গলায় বলল, “হানি কখনো স্কুল-কলেজ থেকে শিক্ষাসফরে যায়নি। ওরা বন্ধুবান্ধবরা মিলে আনন্দভ্রমণে বহু গেছে। ও যদি যেতে চায় আমার সমস্যা নেই।”

“ও না গেলে আমার জন্য সমস্যা হয়ে যাবে।” বাহারাজ আমতা-আমতা করে বলল। তার মুখটা শুকনো, শুষ্ক। যেন হানির না যাওয়াতে তার বিশাল ক্ষতি হয়ে যাবে। আপুর মনে উদয় হলো হবু দেবরের প্রতি ভালোবাসা। হেসে বলল, “অবশ্যই হানি যাবে। প্রতিবার বন্ধুদের সাথে যায়। এবার নাহয় শিক্ষকদের সাথে গেল।
হানি তোর কী কী লাগবে লিস্ট কর। বিকেলে কেনাকাটা করে আনব। কালকে তো আবার গোছগাছ করতে হবে।”

উত্তরের আশায় প্রতিটি মুখ আমার দিকে তৃষ্ণার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তাদের নিরাশ না করে বললাম, “যে আমার এতবড় উপকার করল, তার অপকার করি কীভাবে? কেনাকাটার খরচ তুই দিস।”

“আচ্ছা।” আপু খুশিতে গদগদ। বাবা ফের বললেন, “কত লাগবে?”

“ওটা আমি দিয়ে দিব।”

“পরে কোনো সময় তুমি দিও। এখন আমি দেই। দূরে যাচ্ছো, কখন কত টাকা লাগে- বলা তো যায় না।” বলেই বাবা ওয়ালেট হাতে নিলেন। বাহারাজ আর বসে রইল না। একপ্রকার ছুটে বেরিয়ে গেল বাড়ি থেকে। বউয়ের খরচ সম্পূর্ণ তার। তাছাড়া তারা তো ভার্সিটি থেকে যাচ্ছে না, নবদম্পতি যাচ্ছে মধুচন্দ্রিমায়।
রুটি মেলে সবজি ভাজিটুকু ঢেলে রোল করে নিলাম আমি। অতঃপর ছুটে এলাম নিজের কক্ষে। বাহারাজ বারান্দার নিচে দাঁড়িয়ে আছে। দূর থেকে ফ্লাইং কিস ছুড়ে দিয়ে গান ধরল, “ও মধু, ও মধু। আই লাভ ইউ, আই লাভ ইউ।”

মুখে পরোটা থাকার কারণে আমি ঠিকমতো কথা বলতে পারছি না। আড়ষ্ট হয়ে রেলিং মুঠো করে নিলাম। বাহারাজ তখন ছুটতে ছুটতে বেরিয়ে গেল। রেলিং থেকে হাত ছাড়িয়ে বাহারাজের উড়ন্ত চুমু মুঠো করে গালে নিলাম। বারান্দার দরজার সাথে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলাম। কানে বেজে চলেছে বাহারাজের কণ্ঠের গান। আমাদের মুহুর্তের সাক্ষী থাকা গাছ, দরজা, জানালা যেন বলে চলেছে- মধু সংগ্রহ করতে মৌয়াল চলেছে…

___
ব্যাগপত্র গুছিয়ে বিছানার ওপরে রাখা। ভার্সিটির বাস ছাড়বে আটটা পঁয়ত্রিশে। বাহারাজের প্লান অনুযায়ী আমরা দুজনে বাসে উঠে কিছুদূর গিয়ে অসুস্থতার বাহানা দিয়ে নেমে যাব। এই প্রথমবার আমার বন্ধুরা ভার্সিটির ভ্রমণে অংশগ্রহণ করছে। আসলে আমি যেখানে যেতে চাই, ওরাও সেখানেই যেতে চায়। ওদের কথা ভাবতে ভাবতে আয়নার দিকে তাকালাম। বিগতদিনে স্কিন কেয়ারে নিজেকে ঝাকানাকা করেছি। নিজের দিকে তাকালে আর চোখ সরাতে ইচ্ছে করে না। এসব ভাবতে ভাবতে আপু ঘরে এলো। বিছানা থেকে ট্রাভেলিং ব্যাগ নামিয়ে বলল, “হয়েছে বোনু, আর সাজিস না।”

“আমাকে কেমন লাগছে আপু? নিজেই চোখ ফেরাতে পারছি না। হানি তুই এত সুন্দর কেন?”

“সুন্দর?তোকে পুরো পেতনি লাগছে। রাতের অন্ধকারে তোকে দেখে সবাই ভয় পাবে।”

“তুই যতই বলিস। আমি জানি, হানি সবার সেরা।”

আচমকা আপু আমাকে জড়িয়ে ধরল। তার চোখমুখে ফুটে উঠল মাতৃত্ব। তিনি আমার দ্বিতীয় মা‌। আমার কোনো আবদার সে অপূর্ণ রাখেনি। ছোটো থেকে আমাকে আগলে রেখেছে। আমি ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে আপুকে জড়িয়ে ধরলাম। আপু আদুরে গলায় বলল, “হানি ট্যুরে গেলে এত সাজতে নেই। তুই যেদিকে যাচ্ছিস, ওই পথগুলো ভালো নয়। ওরা দূর থেকে সুন্দরী মেয়েদের টার্গেট করে ধরে নিয়ে যায়। ওরা এতটা খারাপ যে প্রকাশ্যে তোকে নিয়ে যেতে চাইলেও কেউ বাধা দিবে না।”

“ধুয়ে ফেলব?”

“আশা করে সেজেছিস, থাক। স্টেশনে বাস থামলে ধুয়ে নিস।”

“আচ্ছা।”

অতঃপর নিচে নামলাম। মা আমার সাথে তেমন কথা বলল না। ভাইয়া ও জান আমার হাতের মুঠো টাকা গুঁজে দিল। প্রতিবার আমি ঘুরতে গেলে, ওরা এই কাজটাই করে। সবার থেকে বিদায় নিয়ে ভার্সিটির দিকে রওনা হলাম।
ভার্সিটির সামনে পরপর তিনটা বাস দাঁড়িয়ে আছে। অনেকে এসে সামনের সিটগুলো দখল করে রেখেছে। আহাদ, জয়, ঋতু ও তাসফি পাশাপাশি পাঁচটা সিটে ব্যাগ রেখে বুক করেছে। আমি যেতেই আহাদ বলল, “কীরে ঘুরতে যাচ্ছিস নাকি বিয়ে খেতে যাচ্ছিস হানি?”

“মানে?”

“তুই যেভাবে সেজেছিস, মনে হচ্ছে বিয়েতে এসেছিস। দেখ তো, কাউকে পছন্দ হয় কি-না। তবে এখানেই সানাই বাজিয়ে দেই। প্যা প্যা প্যা প্যা…”

আমিও বেশ ভাব নিয়ে বললাম, “আমার বিয়ে হবে খুব সাদামাটা। খরচ করব খুবই কম। এখানে বিয়ে করে এত মানুষকে খাওয়ানোর প্রশ্নই আসেনা।”

ঋতু মাথায় হাত দিয়ে বলল, “কী বলিস? আগে তো বলতি তুই বিয়ে করবি পাঁচতারা হোটেলে। সবাই জানবে তোর বিয়ে হচ্ছে। হানিমুনে নাকি আমাদের নিয়ে যাবি।”

মুখ ফসকে বলে ফেললাম, “নিয়েই তো যাচ্ছি।”

“মানে?” চারটা কণ্ঠ একসাথে বলল। থতমত খেলাম আমি। নিজেকে সামলে বললাম, “তোদের নিয়েই যাব। চিন্তা করিস না।”

তিনজন স্যার বাসে উঠলেন। সবার উদ্দেশ্যে লম্বা একটা বক্তব্য রাখলেন। যেহেতু আমি এই বাসের যাত্রী নই, তাই মন দিয়ে শুনলাম না। আমার মনটা রয়েছে বাবার কাছে। সবার থেকে সত্যিটা লুকিয়ে আমি কোনো ভুল করছি নাতো?

চলবে… ইন শা আল্লাহ

#তুমি_থেকো_দাঁড়িয়ে_খোলা_বারান্দায়
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ২৫

বাস চলছে তার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। ঋতু ও তাসফির পাশে বসে ইতস্তত করছি আমি। ড্রাইভারের পাশের সিটে বসে আছে বাহারাজ। ক্ষণে ক্ষণে পেছনে তাকিয়ে আমাকে ইশারা করছে সে। নিজেকে কিছুক্ষণ ধাতস্থ করে সিটে গা হেলিয়ে দিলাম। ঋতুর হাতটা চেপে ধরে অস্ফুট স্বরে বললাম, “ঋতু আমার শরীরটা ভীষণ খারাপ লাগছে।”

জানালার বাইরে উঁকি দিয়ে আনন্দ উপভোগ করছে ঋতু। আমার কথায় চমকে উঠল। আমার গালে হাত রেখে উদ্বিগ্ন হয়ে বলল, “হানি কী হয়েছে তোর? বমি পাচ্ছে?
এই তাসফি, পানি এনেছিস সাথে?”

আনন্দ ভ্রমণে সবাই বেশ উত্তেজিত। কেউ গান ধরেছে, কেউবা সেই গানের তালে নাচছে। সেই সাথে যোগ দিয়েছে তাসফি, জয়, আহাদ। কোলাহলের মাঝে ঋতুর ডাক শুনতে পেল না তাসফি। ঋতু দ্রুত সিট থেকে বেরিয়ে জয়ের শার্ট টেনে ধরল। ও পেছনে তাকিয়ে বলল, “দোস্ত থামাস না প্লীজ, প্রথমবার ভার্সিটি থেকে যাচ্ছি। আনন্দ তিনগুণ বেড়ে গেছে।”

“রাখ তোর আনন্দ। হানি এই কোলাহল সহ্য করতে না পেরে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।”

“কী বলছিস। আহাদ, তাসফি এদিকে আয় তোরা।”

ওরা ছুটে এসে আমাকে ঘিরে ধরল। ওদের সাথে এমন অভিনয় করতে আমার হৃদয়টা ভেঙে যাচ্ছিল। আপনাআপনি চোখ থেকে ঝরে পড়ল অশ্রু। আহাদ চমকে উঠে বলল, “এই হানি, কোথায় কষ্ট হচ্ছে তোর? আমাকে বল। কাঁদিস না প্লীজ।”

তাসফি উপর থেকে তার পার্স ব্যাগটা নামিয়ে পানির বোতল বের করল। ছিপি খুলে পানি হাতে নিয়ে চোখমুখে ছিটিয়ে দিল। মুখের কাছে নিতেই এক ঢোক পান করলাম। বাহারাজ মুহুর্তেই সেখানে হাজির হলো। উদ্বিগ্ন গলায় সবাইকে বলল, “এখানে একজন অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তোমরা থামো।”

শান্ত হয়ে গেল পরিবেশ। সবাই উঁকি ঝুঁকি দিয়ে ভীড় করল সেখানে। আহাদ চিন্তিত হয়ে বলল, “আগে এমন পরিবেশে আমরা ঘুরতে যাইনি। প্রথম যাচ্ছি, তাই হানি অসুস্থ হয়ে পড়েছে।”

বাহারাজ মাথা জাঁকালো। খানিকটা ঝুকে বলল, “তোমার কি বেশি ক্লান্ত লাগছে হানি? তুমি যেতে পারবে, সিউর তো?”

আমি নেভানো গলায় বললাম, “আমি যাব না। প্লীজ আমাকে বাড়িতে দিয়ে আসুন।”

বাহারাজ চলে গেল। আহাদ, তাসফি, ঋতু ও জয় আমার কাছে বসে রইল। ওদের মুখগুলো দেখে আমি নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছি। আচমকা বাস থামল। বাহারাজ আমাদের কাছে এসে বলল, “হানি অসুস্থ। ওকে নিয়ে গেলে আরও অসুস্থ হয়ে যেতে পারে। তাই ওকে আমি বাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছি।”

চারটি কণ্ঠ একসাথে বলে উঠল, “আমরা যাব না ভাই। আমরা হানিকে ডাক্তার দেখিয়ে বাড়িতে দিয়ে আসব।”

“না। তোরা যা। আমার জন্য তোরা কেউ ট্রিপে মিস দিবি।”
আমি সিটের পর সিট ধরে বাস থেকে নেমে গেলাম। ফুটপাতে বসে মাথা হাঁটুতে গুটিয়ে নিলাম। বাহারাজ আমার পার্স ব্যাগ নিয়ে এলো। অতঃপর ট্রাভেলিং ব্যাগ বের করে রাস্তার পাশে দাঁড়াল। আমাদের থেকে বিদায় নিয়ে বাস এগিয়ে চলল সামনের দিকে। বাসটা সামনে বাঁক নিতেই বাহারাজ হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “বাহ্! দারুণ অভিনয় করেছ তুমি। এবার ওঠ।”

আমি উঠলাম না। হাউমাউ করে কেঁদে ফেললাম। বাহারাজ হতভম্ব হয়ে গেল। আমার পাশে বসে বলল, “কী হয়েছে মধু? কাঁদছ কেন? তোমার কী সত্যি অসুস্থ লাগছে?”

“বাহারাজ আমার বারবার মনে হচ্ছে, আমরা যেটা করছি সেটা ঠিক নয়।”

“আমাকে বিশ্বাস করো হানি?”

“নিজের থেকেও বেশি।”

“তাই?”
আমি লজ্জা পেয়ে গেলাম। বাহারাজের থেকে নিজে‌র ট্রাভেলিং ব্যাগটা টেনে নিয়ে হাঁটা দিলাম সামনের দিকে। বাহারাজ পেছন পেছনে আসতে আসতে ফাঁকা রাস্তায় গান ধরল, “চুমকি চলেছে একা পথে, সঙ্গী হলে দোষ কী তাতে? রাগ করোনা সুন্দরী গো, রাগলে তোমায় লাগে আরো ভালো।”
__
আমাদের বাস খুলনার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করবে ভোর পাঁচটার দিকে। এতটা সময় পার করার জন্য আমরা এলাম বাহারাজের জিমনেসিয়ামে। বাহারাজের জিমনেসিয়ামে আসতেই চমকে উঠলাম আমি। আমাদের জন্য সেই চারজন কর্মচারী অপেক্ষা করছে। বাহারাজ তাদের আগেই জানিয়ে রেখেছে আমরা আজ রাত্রিযাপন করব এখানে।
জিমনেসিয়ামের একদম পেছনে ছোটো একটি কামরা। আসবাবপত্র হিসেবে আছে একটা ছোটো খাট, সিঙ্গেল সোফা ও একটা আলমারি। ছোটো বিছানাটি হরেক রকম ফুলে সাজানো। গন্ধে ম-ম করছে চারিপাশ। বাহারাজ ভ্রু কুঁচকে সবার দিকে চেয়ে বলল, “এসব কী?”

শফিক ভাই হেসে বলল, “আপনাদের বিয়ে হয়েছে বস। বাসর তো হয়নি। তাই আমাদের তরফ থেকে এই সামান্য আয়োজন।”

বাহারাজ হালকা হাসল। কপালের কাছে আঙুল দিয়ে স্লাইড করে বলল, “আমি তো চেয়েছিলাম বাসরটা ট্যুরে গিয়েই সারব। তোমরা দেখছি আমাকে অটল থাকতে দিচ্ছো না।”

পারুল আপা হেসে বলল, “বস, এখানে বাসর না করলে, ওখানে হানিমুন করবেন কীভাবে?”

বাহারাজ চোখ চোখ টিপে বলল, “হানি হবে নাকি?”

আমি লজ্জায় মাথা তুলতে পারলাম না। বাহারাজ হেসে ওয়ালেট বের করল। কিছুটা টাকা আলগোছে ধরিয়ে এলো শফিক ভাইয়ের হাতে। প্রসন্ন কণ্ঠে বলল, “আমাদের প্রথম রাতটাকে স্পেশাল করার জন্য তোমাদের সবাইকে ধন্যবাদ। এটা তোমাদের বকশিশ।”

রাত গভীর হওয়ার কারণে সবাই বিদায় নিয়ে চলে গেল। এত বড় জিমনেসিয়ামে মধ্যে আমরা দুজন রয়ে গেলাম কেবল। ফুলে সজ্জিত বিছানার দিকে তাকিয়ে সিঙ্গেল সোফায় বসলাম। বাহারাজ দরজা বন্ধ করে ফিরে এলো টিফিন ক্যারিয়ার নিয়ে। মেঝেতে রেখে বলল, “এসে রাতের খাবার খেয়ে নাও। কাল সকাল সকাল বের হতে হবে।”

বাহারাজ বিছানায় আসন পেতে বসে। আমি ইতস্তত করছি সেই বিছানার দিকে এগিয়ে যেতে। বাহারাজ ততক্ষণে টিফিন ক্যারিয়ার থেকে বাটিগুলো আলাদা করেছে। ভাতের সাথে পটল ভাজি ও মুরগির মাংস ভুনা। আমাকে নড়তে না দেখে বলল, “কী হলো, বসে আছো কেন?”

“বাইরে থেকে এলাম। হাতমুখ ধুবো না? আপনি আমার সাথে আসুন।”

“তোমাকে নিজের হাতে খেতে হবেনা। আমি খাইয়ে দিচ্ছি। এখানে এসো।” বলেই বাহারাজ বাটি তুমি নিল। আমি গুটিগুটি পায়ে তার পাশে বসলাম। বাহারাজ লোকমা তুলে দিয়ে বলল, “সবার চোখের আড়ালে তোমার জন্য রান্না করে নিয়ে এসেছি।”

ভাজিটাতে কাঁচা মরিচ বেশি হওয়াতে ঝাল লাগছে। আমি ঠোঁট কামড়ে নিজেকে সংযত করে বললাম, “আপনি রাঁধতে পারেন?”

“ইউটিউব থেকে ভিডিও দেখে রান্না করেছি। কেমন হয়েছে?”

“ভালো হয়েছে। আপনি আবার কষ্ট করতে গেলেন কেন?”

“কারণ তুমি কষ্ট করে রান্না করে আনোনি, তাই। শর্ত ছিল, আমাকে একদিন রান্না করে খাওয়াবে। কবে খাওয়াবে শুনি?”

“ফিরে এসে খাওয়াব।”
ভাজির পর মুরগির মাংস দিয়ে লোকমা তুলে দিল। মনে হলো, মরিচের গুঁড়া সব ঢেলে দিয়েছে তরকারিতে। ঝালে কান থেকে ধোঁয়া উড়ছে। ঝালে আমার এলার্জি, তাই মুখ ফুটে কিছু বলতে পারছি না। চুপচাপ খাবারগুলো গিলে যাচ্ছি। ক্ষণে ক্ষণে ঝাল বেড়ে যাচ্ছে। সহ্য করতে না পেরে পরপর কয়েকবার কেশে উঠলাম। বাহারাজ তড়িঘড়ি করে পানি ভরতি গ্লাস বাড়িয়ে দিল। একপ্রকার কেড়ে নিয়ে এক ঢোকে পানি শেষ করে ফেললাম। দুহাতে চুলগুলো মুঠো করে উন্মাদের মতো করতে লাগলাম। বাহারাজ আঁতকে উঠল। মাথায় হাত রেখে উত্তেজিত হয়ে বলল, “হানি, এই হানি। এমন করছ কেন?”

“ঝাল। ঝাল লাগছে।”

অনবরত চোখ থেকে পানি ঝরতে লাগল। আমার ছটফটানি ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে। বাহারাজ দাঁড়িয়ে গেল। আশেপাশে তাকিয়ে পর্যবেক্ষণ করে ফিরে এলো কাছে। আচমকা আমার ঘাড়ে হাত রেখে নিজের ওষ্ঠদ্বয় স্পষ্ট করে আমার ওষ্ঠে। চলল অধর সুধা পান। তিনি আরেকটু এগিয়ে আসতেই আমার মাথা ঠেকে গেল পেছনে। ধাড়াম করে বাড়ি খেলাম পেছনের দেয়ালে। অবিলম্বে আমার চোখজোড়া বুজে এলো। তবে সেদিন ভ্রু ক্ষেপ নেই আমার। ঝাল কমানোর এখন আমার মূল লক্ষ্য। বাহারাজ সরে যাওয়ার চেষ্টা করতেই দুহাতে আকড়ে ধরলাম ওর গলা। দুজনের দূরত্ব এই প্রথম ঘুচল। তবে কেবল তা তৃষ্ণা নিবারণের দায়ে।

চলবে… ইন শা আল্লাহ

#তুমি_থেকো_দাঁড়িয়ে_খোলা_বারান্দায়
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ২৬

চোখমুখের বিধ্বস্ত অবস্থা। ঘরটি নীরবতায় ছেয়ে গেছে। বাহারাজ ও আমার মাঝে অদৃশ্য এক দেয়াল বিরাজমান। অনুতাপের ঢেউ তার মনের দুতীরে আঁচড়ে পড়ছে। নীরবতা ভেঙে বললাম,
“ওভাবে বসে আছেন কেন?”
বাহারাজ কথা বলল না। তার একহাতে এখনো এঁটো লেগে আছে। শীতল চাহনি খাবারের দিকে নিবদ্ধ। আমি তাকে ধাক্কা দিয়ে বললাম,
“এই কী হলো? এভাবে চুপসে গেলেন কেন? আমার দিকে তাকান।”
তবুও বাহারাজ তাকাল না, করল না একটা শব্দ। আমি তার চোয়াল টেনে ‘টেনে টেনে’ বললাম,
“কী হয়েছে? এমন করছেন কেন?”
“সরি হানি। তাড়াহুড়ো হলেও আমার চেক করে আনা উচিত ছিল। কেন যে করলাম না। আর তুমিও কেন বললে না ঝাল হয়েছে?”
“কোন স্বামী তার বউয়ের জন্য এত ভালোবেসে রান্না করে নিয়ে আসে, বলুন তো? সেখানে আপনি রান্না করে নিয়ে এসেছেন। বি/ষ হলেও আমি পান করে‌ নিতাম।”
বাহারাজের চোখে চেয়ে আমার নির্লিপ্ত কণ্ঠ। বাহারাজ খাবারের থালায় হাত ধুয়ে নিলেন। গ্লাস ও থালা দুটোই সরিয়ে রেখে বলল, “নিজেকে সিনেমার নায়িকা মনে হয়? তুমি বি/ষ খেলে আর আমি তোমাকে কোলে করে‌ নিয়ে বাঁচাব? শোনো বি/ষ দেওয়ার হলে পুরো চ্যাপ্টার ক্লোজ করে দিব। বেঁচে আশার চান্স জিরো পার্সেন্ট।”
আমি হাসলাম। বাহারাজ ট্রাভেলিং ব্যাগ থেকে সুতি থ্রিপিস বের করে ফের বলল, “গোসলটা করে নাও, আমি ফার্মেসী থেকে ওষুধ নিয়ে আসছি।”
আমি ব্যঙ্গ করে বললাম,
“এই জিমনেসিয়ামে একা আমি থাকব? জাস্ট ইম-পসিবল। আমি গোসল করব, আপনি বাইরে দাঁড়িয়ে থাকবেন। গোসল হলে একসাথে গিয়ে ওষুধ কিনে আনব।”
“বাইরে কেন দাঁড়াব? ভেতরে নিয়ে নাও। তোমার সব দেখার লাইসেন্স আমার আছে।”
অবিলম্বে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম। বাহারাজ হো হো করে হাসছে। জামাকাপড় নিয়ে দ্রুত হেঁটে এলাম। পায়ের শব্দে বুঝলাম সে পেছনে পেছনে আসছে। পেছনে দৃষ্টিপাত করে দরজার ছিটকিনি তুলে দিলাম। বাহারাজ পেছন থেকে দরজা ধাক্কা দিতে দিতে বলছে, “হানি দরজা খুলো।”
আমি ট্যাপ ছেড়ে দুহাত কোমরে দিয়ে ভাবছি, কেন এর সাথে ঘুরতে এসেছি। ট্যাপ বন্ধ করতে কানে ভেসে এলো গানের লিরিক্স,
যৌবন একটা গোল্ডলিপ সিগারেট
যৌবনের আগুনের ধূয়া নিভে গেলে সবই ভূয়া
জীবন হয় খালি পকেট.।
যৌবনে দুর্বল নাকি হয়ে ওঠে বীর,
যৌবনে কানার চোখেও স্বপ্ন করে ভীড়,
এই যৌবনে পোপো করে
বোবায়ও প্রেমের গান ধরে হইয়া লাইলি ক্যানডিডেট…

ট্যাপের দিকে চেয়ে দীর্ঘশ্বাস নিলাম। সবার সামনে ভেজা বিড়াল ও একা পেয়েই বেলাজ পুরুষ।
গোসল সেরে চুলে তোয়ালে প্যাঁচিয়ে অনেকক্ষণ ইতস্তত করছি। বাহারাজের গান শেষ হওয়ার নাম নেই। বের হতেও পারছি না। নিজের সাথে খানিকক্ষণ যুদ্ধ করে দরজা খুলে বের হলাম। জিমনেসিয়ামে যতদূর চোখ যায় বাহারাজের অস্তিত্ব নেই। অথচ তখনও গানের সুর শোনা যাচ্ছে। গানের উৎস খুঁজতে মরিয়া হয়ে উঠলাম। ক-কদম এগুতেই বাহারাজের ফোন দেখতে পেলাম। ফোনটা হাতে নিতেই দেখলাম, প্লে লিস্ট থেকে রেকর্ড করা একটা গান বাজছে। অথচ লাজ লজ্জার আড়ষ্ট হয়ে দীর্ঘক্ষণ ওয়াশরুমে দাঁড়িয়ে ছিলাম।
তিন মিনিট বাদে দৌড়াতে দৌড়াতে এলো বাহারাজ। আমাকে স্ব-শরীরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ফিচেল হেসে বলল, “তুমি বেরিয়ে গেছ?”
“তো কি ওখানেই বসে থাকব সারাজীবন?” চোখমুখ শক্ত করে কথাটা বলে ঘরে গেলাম আমি। ট্রাভেলিং ব্যাগ থেকে লোশন বের করে গায়ে মাখতে মাখতে বললাম, “আমাকে পা/গ/ল ভেবেছে! আমি কিছুই বুঝব না।”
বাহারাজ ঠোঁট কামড়ে বলল, “তুমি সত্যি বুঝেছিলে তো হানি?”

লোশনের কৌটা মাথায় ছুড়ে দিলাম। বাহারাজ ক্যাচ ধরে বলল, “বুঝোনি তাই না? আসলে অনেক রাত তো, তাই দোকানপাট সব বন্ধ। অনেক কষ্টে ওষুধের ব্যবস্থা করেছি। একদম হাঁপিয়ে গেছি।”
আমি লক্ষ করে দেখলাম বাহারাজ ঘনঘন শ্বাস টানছে। জগ থেকে পানি ঢেলে এগিয়ে দিলাম। বাহারাজ আধ গ্লাস পানি পান করে ওষুধের খোসা থেকে ওষুধ ছাড়িয়ে দিয়ে বলল, “ওষুধ খেয়ে তৈরি হয়ে নাও।”

ভ্রু কুঁচকে বললাম, “তৈরি হব মানে? বাস কি এখন ছাড়বে?”

“জুনিয়ররা এত সুন্দর করে বাসর সাজিয়েছে, তাদের কষ্ট বিফলে যেতে দেই কীভাবে?”
বাহারাজের কণ্ঠ নির্বিকার। তরতর করে ঘামছি আমি। বুকের ভেতরটা ধুকধুক করছে। বাহারাজ উঠে দাঁড়াল। একপা একপা‌ করে এগিয়ে এলো নিকটে। বিনিময়ে আমিও একপা একপা‌ করে পিছিয়ে গেলাম। দেয়ালটা বাধা হয়ে দাঁড়ায় আমার পথে। ঠেকে গেলাম দেয়ালের সাথে। বাহারাজ তবুও এগিয়ে এলো। দুজনের দূরত্ব তখন শূন্যতায় নেমে গেছে। আমি দেয়ালের সাথে মাথায় ঠেস দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলাম। গলায় পুরুষালি ঠান্ডা স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠলাম। পরনের জামাটা খামচে ধরলাম। পর মুহুর্তে স্পর্শ পেলাম ডান কানে, এরপর বাম কানে। সর্বশেষ নাকে সূচ ফোটানোর মতো ব্যথা অনুভূত হতেই চোখ মেলে তাকালাম। তড়িঘড়ি করে বললাম, “কী করছেন?”
বাহারাজ মনোযোগ দিয়ে আমার নাকে কিছু একটা পরিয়ে দিচ্ছেন। নাকের ওপর চাপ পড়তেই চিৎকার করে উঠলাম, “বাবারে।”
তলসা লাগিয়ে বলল, “স্বামী সামনে দাঁড়ানো। স্বামীরে বলতে পারো না?”

বিদ্রুপ করে কথাটা বলে বাহারাজ চঞ্চল পায়ে চলে গেল। হাত স্পর্শ করলাম গলায়, নাকে ও কানে। অপ্রত্যাশিত কিছুর স্পর্শ পেতে কেঁপে উঠলাম। ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে ক্যামেরায় নিজেকে দেখলাম। নিজেকে বধূ লাগছে। দুহাতে মুখ ঢেকে লজ্জাবনত কণ্ঠে বললাম, “বাহারাজের বাহারানি।”
___
বাস অগ্ৰসর হচ্ছে খুলনার উদ্দেশ্যে। অবশেষে জানতে পারলাম আমাদের গন্তব্য সুন্দরবন। এখান থেকে খুলনার তিন ঘণ্টার রাস্তা। রাস্তায় জ্যাম বা বিরতি না থাকলে আটটা নাগাদ পৌঁছে যাব খুলনায়। অবশ্য আমরা খুলনা বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত যাব না। কাটাখালী পর্যন্ত যাব। বাইরে তখনও ভোরের আলো পুরোপুরি ফোটেনি। বাসের সবাই চোখ বন্ধ করে আছে। জানালার পাশে সবসময় আমি বসলেও আজ বাহারাজ বসেছে। পথঘাটে ছিনতাইকারীদের অভাব নেই। চলন্ত বাস থেকে স্বর্ণের জিনিস টেনে নিতে দুবার ভাববে না।
এলার্জি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া স্বরুপ আমার ঘুম বেড়েছে। সিটে হেলান দিয়ে বললাম, “পাঁচটায় টিকেট না কেটে আটটায় কাটতে পারতেন। তাহলে অন্তত শান্তিতে ঘুমিয়ে নেওয়া যেত।”
“আমি তো ঠিকই ঘুমিয়ে নিয়েছি। তোমাকে কে বলেছে, একটু পর পর উঠে আয়না দেখতে?”
“এত সুন্দর জিনিস দিয়েছেন। একটু মন ভরে দেখব না?”
“যে দিয়েছে তার দিকে তো তাকাও না।”
“আপনার দিকে তাকালে আপনিও তাকিয়ে থাকেন, আমার খুব লজ্জা লাগে তখন‌।” বলেই চোখ বন্ধ করে নিলাম আমি। বাহারাজ পেছন থেকে হাত এনে নিজেকে আমার সাথে জড়িয়ে নিল। ফিসফিস করে বলে, “লজ্জা ভাঙানোর জন্যই তো নিয়ে যাচ্ছি। লজ্জাবতীর এত লজ্জা আসে কোথা থেকে আমিও সেটাই দেখতে চাই।”
আমি আর চোখ মেললাম না। বাহারাজের বাহুডোরে চুপটি করে ঘুমিয়ে রইলাম। আমার ঘুম ভাঙল বাহারাজের ডাকে। তখন সকাল আটটা বিশ। বাস তখন কাটাখালীর মোড়ে থেমেছে। বাস কন্ট্রাকটার বাস থেকে নামার পায়তারা দিচ্ছে। বাস থেকে নেমে আমাকে একপাশে দাঁড় করিয়ে ট্রাভেলিং ব্যাগগুলো বুঝে নিল বাহারাজ। আশেপাশের মানুষগুলো দেখে বোঝা যাচ্ছে, অনেকেই ট্যুরে এসেছে। বাহারাজ কৌতূহল নিয়ে বলল, “আশেপাশের কোনো রেস্তোরাঁ থেকে খেয়ে নিবে নাকি রিসোর্টে পৌঁছে খাবে?”
পেটের মধ্যে ক্ষুধায় আওয়াজ হচ্ছে। কিন্তু এই মুহুর্তে রিসোর্টে পৌঁছে ফ্রেশ হয়ে খাওয়াটাই আমার কাছে বেস্ট অপশন মনে হলো। বাহারাজ উত্তরের আশায় চেয়ে আছে। আমি শান্ত কণ্ঠে বললাম, “রিসোর্টে গিয়ে খাব।”

বাহারাজ কাটাখালী থেকে মোংলা ঘাটের উদ্দেশ্য সিএনজি ভাড়া করল। সিএনজিতে উঠে আরেক দফা অপেক্ষা করতে হলো মোংলা পৌঁছানোর।

চলবে.. ইন শা আল্লাহ