তুমি থেকো দাঁড়িয়ে খোলা বারান্দায় পর্ব-৩০+৩১+৩২

0
10

#তুমি_থেকো_দাঁড়িয়ে_খোলা_বারান্দায়
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ৩০

বাহারাজ একাই হাঁটতে বেরিয়েছিল।
আমি বিছানা ছেড়েই উঠিনি।
শরীরের অজস্র ব্যথা যেন আমাকে মাটির সঙ্গে গেঁথে রেখেছিল।
ওকে কিছু বলিনি, শুধু নিরবে চেয়ে দেখেছিলাম জানালার ফাঁক দিয়ে ওর সরে যাওয়া।

প্রায় ঘণ্টাখানেক পর বাহারাজ ফিরে এলো। আমি বিড়ালের মতো নিঃশব্দে শুয়ে রইলাম। চোখ বুজে থাকলেও বুঝতে পারছিলাম, ও আমার পাশে এসে বসেছে।হালকা করে কপালের মাঝখানে একটি চুমু দিল। তারপর জড়িয়ে ধরল কোমলভাবে- যেন ব্যথাকে ছুঁয়ে সে মুছে ফেলতে চায়।

কিন্তু আমি বিরক্ত হয়ে গেলাম। জেদ ধরে উঠে বসলাম, ওর কাছ থেকে দূরত্ব তৈরি করলাম ইচ্ছে করেই। বাহারাজ আরেকটু এগিয়ে এলো। নরম করে দুহাতে আমার কোমর জড়িয়ে ধরল।
“কী হয়েছে?”
আমি স্পষ্ট, রূঢ় গলায় বললাম, “প্লীজ ছাড়ুন। আমার ভালো লাগছে না।”

ও একটু থেমে বলল, “আমার ছোঁয়া বুঝি তোমার ভালো লাগছে না?”

আমি নির্লিপ্ত স্বরে উত্তর দিলাম, “সারাদিন আমার এসব ভালো লাগছে না। আপনি কি এসবের জন্যই আমাকে সুন্দরবনে নিয়ে এসেছেন, বাহারাজ?”

বাহারাজ থেমে গেল আমার কথায়।
তার চোখে ভেসে উঠল আহত বিস্ময়।
নরম কণ্ঠে বলল, “তুমি আমার স্পর্শটাই দেখতে পারছ, আমার ভালোবাসাটা তোমার চোখে পড়ছে না, হানি?”

আমি শ্বাস ফেলে উত্তর দিলাম, “আমি খুব ক্লান্ত, বাহারাজ। আপনার এই স্পর্শটা এখন আমার কাছে বিষের মতো লাগছে। এই প্রথম কারো এত কাছে এলাম।
আপনার কী মনে হয় না, আমার অবস্থাটা কেমন?”

কণ্ঠ নরম হলেও শব্দগুলো কঠিন ছিল, “একদিকে শরীরজুড়ে তীব্র ব্যথা, আরেকদিকে বাড়ির কথা মাথায় এসে ঘুরপাক খাচ্ছে। সবকিছু অসহ্য লাগছে,
এই সুন্দর বন, এই ঘর, এমনকি আপনার উপস্থিতিও। প্লীজ, আমাকে একা থাকতে দিন একটু।”

বাহারাজের মুখমণ্ডলে কুয়াশা নেমে এলো। নিঃশব্দে আমার কোমর থেকে হাতটা সরিয়ে নিল। পকেট থেকে দুটো ওষুধের পাতা বের করে, সাবধানে খুলে আমার হাতে দিল। আরেক হাতে পানির গ্লাস তুলে বলল, “ওষুধগুলো খেয়ে ব্যাগপত্র গুছিয়ে নাও। আমরা বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।”

তারপর কোনো কথা না বলে চঞ্চল পায়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। আমি রাগে ফুসে উঠলাম। ওষুধগুলো ছুড়ে দিলাম জানালার বাইরে। ইচ্ছে করছিল নিজের মাথা দেয়ালে ঠুকে ভেঙে ফেলি সব।বাহারাজ তো আমার জন্যই ওষুধ আনতে গিয়েছিল, আর আমি তাকে কীভাবে কথার কাঁটার মতো আঁচড় দিয়েছি। আমি অপেক্ষা করতে লাগলাম কেবল তার ফিরে আসার প্রতীক্ষায়।

বাহারাজ ফিরল। চোখে কোনো প্রশ্ন নেই, নেই কোনো অভিযোগ। চুপচাপ জামাকাপড় ভাঁজ করে নিজেই ব্যাগে গুছাতে লাগল। যেন কিছুই হয়নি, সবটাই স্বাভাবিক। আমি দাঁত চেপে ওর প্রতিটা কাণ্ড দেখছিলাম। অবশেষে অধৈর্য হয়ে বলে ফেললাম, “আপনি এমন ঠাণ্ডা হয়ে আছেন কীভাবে?
একবারও জিজ্ঞেস করবেন না, আমি কেন এমন করলাম? কোনো রাগ, অভিমান- কিছুই নেই আপনার মধ্যে?”

বাহারাজ আমার কথার উত্তরে একবার চোখ তুলে তাকাল। চোখে আগুন ছিল না, বরফও না, ছিল শুধু একরকম ক্লান্তি।

সে ধীরে বলল, “তোমাকে বোঝানোর মতো ভাষা আমার নেই আর। তোমার যন্ত্রণার পাশে দাঁড়াতে গিয়েও যখন নিজেকেই অপরাধী মনে হয়, তখন চুপ থাকা ছাড়া কিছুই আর ঠিক মনে হয় না।”

আমি কথা হারিয়ে ফেললাম। ব্যাগের চেইন টেনে ধরে বাহারাজ বলল, “চলো, বাড়ি ফিরি। তোমার প্রিয় ঘরটা হয়তো তোমাকে একটু শান্তি দেবে।”

আমি বিছানা ছেড়ে নেমে পড়লাম। ওর ব্যাগটা ওর হাত থেকে নিয়ে সজোরে দূরে ছুঁড়ে দিলাম। তারপর, কোনো দ্বিধা না রেখে দুহাতে ওকে জড়িয়ে ধরলাম। কণ্ঠটা যেন কেঁপে উঠল নিজেরই অপরাধবোধে, “কী বলতে কী বলে ফেলেছি, টের পাইনি। আপনি রাগ করেছেন, তাই না?”

ও চোখ নামিয়ে নরম কণ্ঠে বলল, “রাগ করিনি। যেটা তোমার মনে হয়েছে, সেটাই বলেছ। তুমি বলেছ বলেই তো আমি বুঝলাম, আমার জন্য তোমার অনুভবটা কী রকম।”

আমি গলাটা আরো কোমল করলাম, “আমি ওটা বলতে চাইনি, বিশ্বাস করুন।”

ওর চোখে একটা গভীর অভিমান, কিন্তু কণ্ঠে ক্ষীণ আঘাতের দৃঢ়তা, “কিন্তু তুমি বলেছ! আমি আর এখানে এক মুহূর্তও থাকতে চাই না, হানি। তুমি কী ভেবেছো? তোমাকে পাওয়ার জন্য তোমাকে এখানে এনেছি?”

ও নিজেকে আমার বাহু থেকে ছাড়িয়ে নিল। আমার মাথা নিচু হয়ে গেল।

ও আবার বলতে লাগল, “এই জীবনে কোনো মেয়ের দিকে তাকাইনি আমি। সবসময় চেয়েছিলাম অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ করতে। কিন্তু সেদিন তুমি সবার সামনে আমাকে চুমু খেয়ে বসলে।
সেদিনই ভেবেছিলাম, এই মেয়েটাকেই বিয়ে করব। আমি ভালোবাসা নিয়ে যতটা সিরিয়াস, তুমি তার এক ভাগও নও। তুমি এখন পর্যন্ত কতজনকে ভালোবাসার কথা বলেছো, নিজেই জানো না। হুট করে বিয়ে না হলে, আমরা আরও আগে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতাম।”

আমি মাথা তুলে সাহস করে বললাম,
“হ্যাঁ, আমি অনেকের সাথে প্রাঙ্ক করে ভালোবাসি বলেছি। কিন্তু আপনাকে ভালোবাসি বলাটা… একেবারে মন থেকে এসেছে।”

“হানি, আমি তোমার কোনো সাফাই শুনতে চাই না। তৈরি হও। আমরা বের হব।”

বারবার বাহারাজের একই সুর আমার ভিতর জ্বালা ধরিয়ে দিল। আমি চুপচাপ এক হাতে ট্রাভেলিং ব্যাগ, অন্য হাতে পার্স ব্যাগ নিয়ে হনহন করে বেরিয়ে এলাম রিসোর্ট থেকে। পেছনে পায়ের শব্দে বুঝলাম ও আমার পিছু নিয়েছে।

আমি থামলাম। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ওর চোখে চোখ রাখলাম। “আমি যথেষ্ট এডাল্ট। আমাকে পৌঁছে দেওয়ার দরকার নেই। আমি একাই যেতে পারব।”

এই বলে আমি চলে এলাম…
তবু, বুকের ভেতর একটা কথা আটকে রইল।

বাহারাজের সাথে আমার দূরত্বটা সময়ের সাথে সাথে এমনভাবে বেড়ে গেছে, যেন আমরা দুটি ভিন্ন গ্রহের মানুষ।ভার্সিটিতে গেলে নিজেকে ব্যস্ত রাখি, পড়াশোনার ভারে নিজেকে চেপে রাখি, যেন মনের ভার ভুলে থাকতে পারি।ও কখনো পাশ দিয়ে হেঁটে যায়, যেন আমাকে চিনেই না। আমি চোখ রাখি, আর ও চোখ ফিরিয়ে নেয়। আমি মাঝে মাঝে ভাবি, আমরা কি সত্যিই ভালোবেসেছিলাম? দেখতে দেখতে আপুর বিয়ের দিনটাও এসে গেল। আজ আপু আর নিবিড় ভাইয়ের গায়ে হলুদ। কমিউনিটি সেন্টারজুড়ে আলো আর সাজসজ্জার ঝলকানি—একটা রূপকথার মতো। বাবা, পরিবারের বড়ো মেয়ে বিয়ে দিচ্ছেন বলে আত্মীয়স্বজনের কেউ বাদ রাখেননি। ভিড়ে, আলো আর গানের শব্দে সেন্টার যেন গরমে হাঁসফাঁস করছে।

ঠিক তখনই মা ডেকে বলল, “হানি, সবাই ছেলেকে হলুদ দিতে যাচ্ছে। একজন মেয়ে গেলে ভালো হয়। তুইও যা।”

আমি মুখ ছোট করে বললাম, “তুমি অন্য কাউকে পাঠাও না। তাসফিরা এসে আমাকে না পেলে রাগ করবে। আমি যাব না।”

মা বিরক্তির সুরে বলল, “এবার একটু বন্ধুদের আঁচল ছাড়। বোনের বিয়েতে একটু কাজে হাত লাগা।”

আমি বুঝলাম, যুক্তি দিয়ে মায়ের ভালোবাসাকে ঠেকানো যায় না। মুখ নামিয়ে চাপা গলায় বললাম,
“যাচ্ছি।”

মা আমার হাতে টাকা গুঁজে দিয়ে বলল, “এটা নিবিড়কে দিস। বলিস, আমি দূর থেকে দোয়া করেছি।”

ফুফা, জান, ভাইয়া, বাবা আর আমি রওনা দিলাম বাহারাজদের বাড়ির উদ্দেশ্যে। রাস্তাটা যেন আজ একটু বেশিই দীর্ঘ মনে হচ্ছে। গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে তাকাই, কিন্তু ভেতরের ধুকপুকানি যেন আর চাপা থাকে না।
সমস্ত অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে বাহারাজের দেখা পেলাম। হলুদ পাঞ্জাবি পরে নিবিড় ভাইয়ের পাশে বসে ছবি তুলছে। পাশে তীব্র ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখেই চমকে বলল, “হানি তুমি এখানে?”

“নিবিড় ভাই সম্পর্কে আমার দুলাভাই হন।”

চলবে.. ইন শা আল্লাহ

#তুমি_থেকো_দাঁড়িয়ে_খোলা_বারান্দায়
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ৩১

নিবিড় ভাইয়াকে হলুদ মাখিয়ে যখন স্টেজে তুললাম, চারপাশে যেন আলো ছড়িয়ে পড়ল। কয়েকটা মুহূর্ত ধরে রাখলাম ছবির ফ্রেমে। সবার অগোচরে তাঁর হাতে টাকা গুঁজে দিলাম। তারপর ভাইয়াকে মিষ্টি খাইয়ে বাহারাজের দিকে এগিয়ে দিলাম আরেকটা মিষ্টি। আমাদের সম্পর্ক’বেয়াই বেয়ানের’। সবাই যেন শুধু সেটাই দেখে, তাই সব কিছু স্বাভাবিক রাখার ভান করলাম। বাহারাজ এক পলক তাকাল। মিষ্টি নিলো। হঠাৎ সে আমার দিকে আরেকটা মিষ্টি বাড়িয়ে দিল। আমি যেন বুঝতেই পারছিলাম না কী করবো। পাশ কাটিয়ে যেতে চাইলে, ওর হাত আচমকা আমার মুখের কাছে এলো। মিষ্টিটা ঠেলে দিল ঠোঁটে। আমি থমকে গেলাম। ওর চোখে চোখ রেখে আমি মিষ্টিটায় দাঁত বসালাম। বাহারাজের মুখে তখন অদ্ভুত এক প্রশান্তি, আর আমার বুকজুড়ে শুধু ঝড়। প্রেমের স্বাদ নয়, যেন বিষময় এক অভিশাপ নামল শরীরে।

পেট ঘুরঘুর করে উঠল মুহূর্তেই। শরীর কেঁপে উঠল এক অজানা ভয় আর বেদনায়। মনে হলো, নিজেকে আর ধরে রাখতে পারব না। ভেতরের সবকিছু যেন উপচে পড়তে চাইছে। আমি মুখ চেপে, সম্মান আর আবেগ দুটোই আঁকড়ে ধরে ছুটে গেলাম ওয়াশরুমের দিকে। কিন্তু হায়! দরজা বন্ধ। পিছন থেকে ভেসে এলো বাহারাজের পায়ের শব্দ। আমার পিঠের কাছে ওর অস্তিত্ব। ধীর, চিন্তিত, আর কেমন যেন অপরাধবোধে ভেজা কণ্ঠে বলল, “তুমি ঠিক আছো?” ওর কণ্ঠটা স্পর্শ করল আমার কাঁধ। আমি পিছু ফিরে তাকানোর পূর্বে আরো একটা কণ্ঠ ভেসে এলো। তা জানের, “হানি কী হয়েছে তোর?”

আমার মুখের তিক্ততা দেখে জান দরজায় অনবরত করাঘাত করতে লাগল। ভেতরের লোকটা বিরক্ত হয়ে দরজা খুলতেই আমি ঢুকে গেলাম ভেতরে। বেসিনে মুখ রেখে বমি করে ফেললাম। ট্যাপ ছেড়ে কিছুক্ষণ মাথায় পানি দিলাম। ইদানীং শরীরটা কারণে অকারণে কেঁপে উঠে। কোনো খাবার ঠিকমতো খেতে পারি না। বমি আমার রোজকার রুটিন হয়ে উঠছে। চোখমুখে পানি ছিটিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে জানকে দেখতে পেলাম। তবে আমার চোখদুটো বাহারাজকে খুঁজে চলেছে। জান একটু এগিয়ে এসে বলল, “তুই ঠিক আছিস?”

“হুঁ।”

“কী হয়েছিল?”

“হঠাৎ করে বমি এলো।”

“হঠাৎ কারো বমি পায়? ডাক্তারের কাছে চল।”

“ভালো লাগছে না। বাড়িতে চলো। আমি একটু ঘুমাতে চাই। ইদানীং ঘুমটা ঠিকমতো হচ্ছে না। তাই হয়তো বমি পাচ্ছে।”

“চল।”
সবাইকে রেখে জানের সাথে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।
___
সবাই কমিউনিটি সেন্টারে ব্যস্ত। আলো, শব্দ, মানুষে মুখর চারপাশ। আর আমি? আমি এই বাড়ির নিস্তব্ধতায় একা।

ঘরের সব আলো নিভিয়ে রেখেছি। ঘুমের কথা থাকলেও ঘুম আসেনি। জানালার গ্রিল ধরে বাইরের ল্যাম্পপোস্টের নরম আলোয় তাকিয়ে আছি। অদ্ভুত নিস্তব্ধতা যেন কানের ভেতর গুনগুন করে। বালিশের নিচে লুকিয়ে রাখা হোম কিটটা বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছে-কিছু একটা বদলাতে যাচ্ছে। কয়েকবার চেষ্টা করেও হাত এগোয়নি। বুকের ভেতর যেন কোনো অচেনা ঢোল বাজছে। ধুকধুক করে কাঁপছে ভিতরটা। একসময় নিজেকে সংবরণ করলাম। ধীরে, একেবারে নিঃশব্দে বালিশের নিচ থেকে কিটটা বের করলাম। ঠোঁট শুকিয়ে এসেছে। হাতের তালু ভিজে। আলো জ্বালালাম না। ফোনের ফ্ল্যাশ জ্বালিয়ে ওয়াশরুমের দিকে এগোলাম। ওয়াশরুমের দরজা বন্ধ করে আয়নার সামনে দাঁড়ালাম। সেই মুখটা দেখলাম—চেনা অথচ অচেনা। মনে হলো, সে কিছু লুকোচ্ছে। টেস্ট কিট হাতে নিলাম। নিয়ম মতো সব করলাম। তারপর অপেক্ষা…
সময় যেন আটকে গেল। আমি বসে পড়লাম টাইলসের মেঝেতে। আলো-ছায়ার খেলা পড়ে আমার কাঁধে। বাইরে তখনও নিঃশব্দ ল্যাম্পপোস্ট দাঁড়িয়ে, ঠিক আমার মতোই—একাকী, জেগে। এবং হঠাৎ… ফলাফল এল। দুটো দাগ। স্পষ্ট।
আমি নিঃশ্বাস নিতে ভুলে গেলাম। বাড়ি ভরতি মানুষের এত আয়োজন এক নিমিষেই মাটি হয়ে যাবে আমার এই কথা শুনে।
___
সকাল আটটা। আপু গোসল সেরে পার্লারের পথে রওনা দিল। আমাকেও সঙ্গে নিতে চেয়েছিল, কিন্তু মন সায় দেয়নি। ভেতরে একেবারে শুন্যতা— অনুভব নেই। কিছুই ভালো লাগছে না আজ। সময় থেমে থাকে না, সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে আসে। একে একে সবাই সেজে-গুজে কমিউনিটি সেন্টারের উদ্দেশে রওনা দেয়।
আমি বসে থাকি নিঃশব্দে। অবশেষে তাসফি আর ঋতুর অনুরোধে আলমারির কোণ থেকে একখানা শাড়ি বের করি। ওদের সাহায্যে জড়াই নিজেকে রঙিন কাপড়ে। ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক। চুলগুলো খুলে দেই। কানের পাশে গুঁজে দিই একটি লাল গোলাপ। আয়নায় তাকিয়ে দেখি, একটা ক্লান্ত মুখ, তবুও সজ্জিত। মন ভাঙা, তবে শরীর দায়িত্বে অনড়। তাই হাজির হই অনুষ্ঠানস্থলে। সেন্টারের এক কোণে বসে আছি নিঃশব্দে। হঠাৎ খবর আসে—বর এসে গেছে। তাসফি আমার হেলেদুলে না দেখে বলল, “তুই স্বাভাবিক আছিস কীভাবে হানি? আমার বড়ো বোনের বিয়ে হলে কী যে করতাম।”
“শরীর খারাপ থাকলে সবকিছুই বিষাক্ত লাগে।”
তাসফি ও ঋতু টেনে নিয়ে গেল আমাকে নিচে। সেন্টারের আলো-ছায়ায় দাঁড়িয়ে এক মুহূর্তে চোখ আটকে গেল, শেরওয়ানি পরা নিবিড় ভাইয়ের পাশে দাঁড়িয়ে থাক এক যুবকের দিকে। তাকে দেখেই বুকের ভেতর ধক করে কেঁপে উঠল কিছু। আমার হাতটা যেন নিজের অজান্তেই শাড়ি গলিয়ে পেটে গিয়ে থেমে গেল। বাহারাজকে কি জানানো উচিত তার নতুন অস্তিত্বের কথা? নাকি সেদিনের সেই ওষুধ… ওটাই ছিল আমাদের সম্পর্ক শেষ করার নীরব চুক্তি?
নিজেকে গুছিয়ে নিলাম। মুখে এক চওড়া হাসি এঁকে এগিয়ে গেলাম। দাঁড়িয়ে পড়লাম নিবিড় ভাইয়ের পাশে, ঠিক যেন সবকিছু স্বাভাবিক।

সেন্টারে বর-কনের জন্য সাজানো আসনে এখন শুধু নিবিড় ভাই বসে আছেন। আপু এখনো ফেরেনি পার্লার থেকে। নিয়ন্ত্রিত কিছু অতিথি খেয়ে বিদায় নিয়েছেন, তবু অনেকেই রয়ে গেছেন বর-কনেকে একসাথে দেখবেন বলে। তীব্র গরমে নিবিড় ভাইয়ের জন্য এক গ্লাস শরবত করে আমার হাতে পাঠাল মা। নিবিড় ভাইয়ের হাতে গ্লাসটা তুলে দিয়ে যখন ফিরছি, তখনই হঠাৎ যেন পৃথিবী কাঁপতে লাগল পায়ের নিচে। চোখের সামনে ছায়া নামল। কানের পাশে শোঁ শোঁ শব্দ, আর মাথাটা যেন ঘূর্ণির মতো ঘুরে উঠল। লহমার মধ্যেই দৃষ্টির পরিধি ধূসর হয়ে এল। শরীরের ভার সামলে উঠতে পারলাম না। নিচে পড়ে যেতে যেতে একটিমাত্র কণ্ঠস্বর ভেসে এলো কানপথে “হানি।”

জানের গলা। কাঁপা, উদ্বিগ্ন, আর সেই কণ্ঠে ছিল এমন এক ব্যাকুলতা—যেটা ভুলে থাকা অসম্ভব। তারপর, অন্ধকার। চেতনা ফিরে এলো ধীরে ধীরে। চোখ খুলতেই প্রথমে শুনতে পেলাম নীরবতার কণ্ঠস্বর। কিছুক্ষণের জন্য বুঝতেই পারলাম না, আমি কোথায়।

ধীরে মাথা ঘুরিয়ে চারপাশে তাকালাম।পুরো কমিউনিটি সেন্টার ফাঁকা। নেই কোনো অতিথি, নেই কোনো হাসির শব্দ, নেই সেই বিয়ের উৎসবের রঙিন কোলাহল। শুধু বিশাল হলঘরটায় ছড়িয়ে আছে শূন্যতা। নীরবতায় যেন একেকটা প্রশ্ন ঝুলে আছে বাতাসে। এক কোণে পিলার ঘেঁষে বসে আছে আপু।
সাজানো মুখ, অথচ চোখের নিচে ক্লান্তির ছায়া। চোখ দুটো নিচের দিকে, জানালার ধারে যেন কিছু খুঁজছে।
তার কিছুটা দূরে বসে আছে বাবা, মা, ফুফু, ফুফা, ভাইয়া আর জান। তারা সবাই একই জায়গায়, কিন্তু একে অপরের থেকে দূরে। কেউ কারও চোখে চোখ রাখছে না। মা ঠোঁট কামড়াচ্ছেন। বাবা সোজা সামনের দিকে তাকিয়ে আছেন, যেন কোনো কিছু না দেখার চেষ্টা করছেন। ফুফু ফিসফিস করে কিছু বলছেন ফুফাকে, কিন্তু ফুফার চোখ শুধু বাবার দিকে। ভাইয়া নীরব, চোখ নামিয়ে রেখেছে। আর… জান? সে তাকিয়ে আছে আমার দিকেই। আমি নিভু নিভু কণ্ঠে বললাম, “বিয়ে কী হয়ে গেছে?”
পরক্ষণেই মায়ের সেই হিংস্র দৃষ্টি। দানবের মতো ছুটে এলো আমার কাছে। দুহাতে চেপে ধরল আমার গলা। আমার শ্বাস আটকে এলো। দুহাত দিয়ে মাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু সে অপ্রতিরুদ্ধ। চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসার জোগাড়। ফুফু এসে মাকে আমার থেকে ছাড়ালো। ছাড়া পেতেই খকখক করুন খেলে উঠলাম আমি। মা আবার আক্রমণ করে বলল, “এই দিন দেখতে তোকে পেটে ধরেছিলাম আমি? ছি। ছি। শেষ পর্যন্ত তোর শরীরটাও বিলিয়ে দিয়ে পাপ নিয়ে এসেছিস? তোকে আজকে আমি শেষ করে ফেলব।”

মা আমার চুলগুলো দুই হাতে শক্ত করে টেনে ধরল। ব্যথায় আমি চিৎকার করে উঠলাম।
চলবে.. ইন শা আল্লাহ

#তুমি_থেকো_দাঁড়িয়ে_খোলা_বারান্দায়
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ৩২

“তোর জন্য আজ তোর বোনের বিয়েটা ভেঙে গেল। তোর জন্য মানসম্মান ধুলোয় মিশে গেল। এই দিন দেখার জন্য তোকে পেটে ধরেছিলাম হানি?” মায়ের কথা শুনে থমকে গেলাম আমি। আপুর বিয়ে ভেঙে গেছে মানে? বিয়ে না করেই আপুকে রেখে নিবিড় ভাই চলে গেছে? আর আমার জন্য বিয়ে ভেঙেছে মানে? আমি কী করেছি? আমি কাঁপতে কাঁপতে বললাম, “আমি কি করেছি মা‌। আমার জন্য বিয়ে ভেঙে গেছে মানে?”

“এখনো কিছু বুঝতে পারছিস না? পেটে বাচ্চা নিয়ে ঘুরছিস, আর কিছুই জানিস না?”
মায়ের কথায় এতক্ষণে বোধগম্য হলো সবটা। আপু উঠে আমার সামনে এসে দাঁড়াল। প্রিয় মানুষকে পেয়েও হারানোর যে তীব্র বেদনা তা তার মুখে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। আমি ঢোক গিলে বললাম, “আপু..

আপু পরপর কয়েকটা চড় বসিয়ে দিল আমার গালে। যে বোনের থেকে কখনো একটা কাঁটার আঘাত পাইনি, তার থেকে চড় পাওয়া দুষ্কর বিষয়। আমি মাথা নিচু করে নিলাম সাথে সাথে। আমাকে কিছু না বলে মাকে ইঙ্গিত করে বলল, “তোমার মেয়েকে কী করবে করো মা। নাহলে আমি গলায় দড়ি দিব বলে দিলাম। আজ ওর জন্য…

বলেই আপু কেঁদে উঠল। মা আপুকে আগলে নিয়ে বলল, “তুই কাঁদছিস কেন? তুই কেন গলায় দড়ি দিবি? যদি গলায় কেউ দড়ি দেয়। ও দিবে।”

সবকিছু পিছু ঠেলে ভাইয়া এগিয়ে এলো। আমার চোখের পানিটুকু খুব আদরে মুছিয়ে দিয়ে বলল, “হানি আমাকে বল, এই সন্তানের বাবা কে? আমি ওকে ধরে নিয়ে আসব।”

বাহারাজের নামটা বলতে গিয়েও আমি কেঁপে উঠলাম। যে বিয়ের আসরে নিজের স্ত্রী সন্তানের পরিচয় না দিয়ে চলে গেছে, তার নাম বলে কী হবে? ও যদি বিয়েটা পুরোপুরি অস্বীকার করে, তবে সবার চোখে আমি দোষী হয়ে যাব! আমার কাছে না আছে কাগজ, না আছে সাক্ষী। আমি চোখ নামিয়ে বললাম, “জানি না।”

আপুকে ছেড়ে মা আমার উপরে হামলে পড়ল। মারতে মারতে বলল, “কোন ছেলের সাথে শুয়েছে সেটাই জানেনা। একটা পতিতা হয়ে গেছে তোর বোন। তোর বাবার আশকারায় শাসন না পেয়ে এই অবস্থা হয়েছে ওর। আজকে তো।”

তার হাতের চড়ে আমার গাল পুড়ে যাচ্ছিল, কিন্তু তার চেয়েও জ্বলছিল বুক।
আমি কোনো প্রতিবাদ করিনি। শুধু চুপচাপ মার খেতে খেতে ভাবছিলাম,
যে কথা আমি বুকের ভেতর পাথরের মতো চেপে রেখেছি, সেটা জানালেই কি কেউ বিশ্বাস করবে?

বাহারাজ তো পেছনে ফিরেই তাকায়নি।
সে শুধু আমার চোখে রেখে গিয়েছে একরাশ প্রশ্ন আর একরাশ অপমান।

মা থেমে গেলেন হঠাৎ। হাঁপাতে হাঁপাতে বললেন, “তোর মতো মেয়ে আমার ছিল, ভাবতেই গা জ্বলে যায়!”

আমি জানতাম, তিনি দুঃখে, অপমানে এসব বলছেন। তবুও প্রতিটা কথা কানে নয়, গিয়ে বিঁধছিল হৃদয়ে। আমি শুধু ফিসফিসিয়ে বললাম, “আমি কাউকে ঠকাইনি, মা। আমিই ঠকেছি।”

আমাকে কমিউনিটি সেন্টারে একা ফেলে সবাই চলে গেল। আলোর ঝলকানি, সাজসজ্জা, অতিথির কোলাহল—সব কিছু যেন মুহূর্তেই নিঃশেষ হয়ে গেল চারপাশ থেকে। একটা মুহূর্তে মনে হলো, গোটা হলঘরটা যেন নীরব শ্মশান।

আমি একা পড়ে রইলাম। হাঁটু ভেঙে আসছে ভারে, বুক ভেঙে আসছে কান্নায়। মাটিতে বসে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলাম। সব রং মিলিয়ে আমার চোখে এখন শুধু ধূসর। গভীর কষ্ট আর হাহাকারে ফুঁপিয়ে উঠলাম, “তোমাকে ভালোবাসা কি আমার অপরাধ ছিল, বাহারাজ?” তোমার একটুখানি বিশ্বাসের ভরসায় আমি আমার পুরোটা জীবন দিয়ে দিলাম। আর তুমি?

তুমি বিয়ের মালাটা ছিঁড়ে রেখে গেলে আমার গলায় কাঁটার মালা।
__
এত বড়ো একটা বাড়ি, অগণিত মানুষ—তবু আমার চারপাশে কেবলই নীরবতা। মানুষের ভিড়ে আমি কেমন অসহায়, কেমন একা। আমার সাথে দুটো মন খুলে কথা বলার মতো কেউ নেই। আর বাহারাজ? সেও একবারও ফোন করে জানতে চাইল না আমার খবর! সবার অভিমান আমি নীরবে সহ্য করতে পারি, কিন্তু বাহারাজের অভিমানের কারণটা আমার কাছে এখনও অজানা। চুপচাপ ফোনটা বের করে ওর নাম্বারে ডায়াল করলাম। একবার, দুইবার–কোনো সাড়া নেই। তৃতীয়বার সরাসরি কেটে দিল কলটা। নিঃশব্দে ভেতরে কিছু একটা চৌচির হয়ে গেল।
ক্ষোভে, অপমানে—তাসফিকে কল করলাম। বাহারাজের খোঁজ চাইতেই সে নির্লিপ্ত স্বরে জানাল, “ওকে একটু আগেই ক্যাম্পাসে দেখেছি।”

এক ঝলকে রক্ত যেন মাথায় উঠে গেল।
আলমারির উপর থেকে পার্সটা তুলে নিলাম। না বলে, কিছু না ভেবে সোজা ভার্সিটির দিকে রওনা দিলাম।

লাইব্রেরির দরজায় পৌঁছে দেখি, বাহারাজ বন্ধুদের সঙ্গে বসে নোট লিখছে। আমি দূর থেকেই ওর নাম্বারে আবার ফোন দিলাম।
এবারও কল কেটে দিল। তখন আর থামিনি। ধীরে ধীরে ভেতরে গিয়ে ওর সামনে দাঁড়িয়ে, ঠাণ্ডা হাতে ওর হাতের কলমটা ছুড়ে ফেলে দিলাম।

মুহূর্তেই পুরো লাইব্রেরি স্তব্ধ হয়ে গেল।
সব বন্ধুরা একে একে চেয়ার ছেড়ে চলে গেল। আমি গর্জে উঠলাম, “সমস্যা কী? ফোন ধরছেন না কেন? কী হয়েছে? আমাকে ইগনোর করছেন কেন?”

বাহারাজ শান্ত গলায় জবাব দিল, “ইগনোর আমি করছি, নাকি তুমি এতদিন করেছ? হঠাৎ কী দরকারে ফোন দিলে?”

আমি আর নিজেকে সামলাতে পারিনি। গলার রাগ আর চোখের জলের মাঝে কাঁপতে কাঁপতে বললাম, “আমার সবকিছু শেষ করে এখন জিজ্ঞেস করছেন দরকার ছিল কি না? আমার শরীরটার জন্য যত তাল-বাহানা ছিল, সব পেয়ে যাওয়ার পর আজ আমি অপ্রয়োজনীয়? তাই তো?”

বাহারাজ তীব্র চোখে তাকিয়ে বলল, “দুই পরিবারের সম্মান নষ্টের কারণ তুমি। ও যদি আমার অংশ হতো, তাহলে তুমি এতদিনে আমাকে জানাতে। যেহেতু করোনি—সেই বাচ্চা তোমার অন্য প্রেমিকের…”

বাহারাজের কথাগুলো শোনা মাত্রই যেন সমস্ত রক্ত জমে গেল আমার শরীরে।
চারপাশের শব্দ মিলিয়ে গেল এক ধ্বনিহীন বিস্ফোরণে। আমার চোখে জল এলো না! এতটা অপমান, এতটা অবিচারেও না। শুধু গলা শুকিয়ে এলো না, ঠোঁটও কাঁপতে থাকল।

আমি ঠান্ডা গলায় বললাম, “আপনি যা বললেন, তার একটাও সত্যি নয়। আমি আপনার থেকে কিছুই চাইনি। না দায়িত্ব, না ভালোবাসা।
শুধু একটু মানবিকতা, একটু শ্রদ্ধা— যেটা সম্পর্কের ভিত্তি। তুমি সেটাও দিতে পারোনি। এখন আর কোনো ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই।
আপনি একজন কাপুরুষ। শরীরের আগুন মেটানো ছাড়া ভালোবাসা শব্দটার মানে বোঝেননি কখনো।”
বাহারাজ কিছু বলার আগেই আমি ঘুরে দাঁড়ালাম। চারপাশে শত শত চোখ, কিন্তু তাতে আমার কিছুই যায় আসে না।
আমি কাঁদিনি, আমি থামিনি। বরং আমার ভেতরের মেয়েটা আজ একটু বেশি শক্ত, একটু বেশি দৃঢ় হয়ে উঠল।
মনটা যেন অদ্ভুত এক দোটানায় ডুবে ছিল। বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছিল না যে সব শেষ হয়ে যাচ্ছে। একদিকে বাহারাজের আচরণ, অন্যদিকে আপুর ভাঙা মন- সব মিলিয়ে নিঃশ্বাসটাই ভারী লাগছিল।
হঠাৎ মনে হলো, আর না। কাউকে তো বলতে হবে, কারও কাছে একটু আশ্রয় চাইতেই হবে। নিবিড় ভাইয়ার নাম্বারটা ডায়াল করলাম। বুক ধুকপুক করছিল, কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা কানে তুললাম।প্রথমবারেই কল রিসিভ করল ভাইয়া।

আমি একটু নরম গলায় বললাম, “আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া। আপনার সাথে আমার একটু কথা আছে।”

ভাইয়া সালামের জবাব না দিয়েই সরাসরি বলল, “বলো, শুনছি।”

আমি এক নিঃশ্বাসে বলে ফেললাম, “আমার আপু অনেক ভালো মেয়ে। ওর জীবনে আপনি ছাড়া আর কোনো পুরুষ নেই। ও শুধু আপনাকেই ভালোবাসে ভাইয়া। আপনি বিয়েটা ভেঙে দেওয়াতে ও খুব কষ্ট পেয়েছে…”

আমার কথার মাঝেই ভাইয়া ধীরে কিন্তু গম্ভীর গলায় বলল, “তোমার বোনের চরিত্র সম্পর্কে আমার যথেষ্ট ধারণা আছে। আর আমার ভালোবাসার ওপর বিশ্বাসটাও অটুট আছে হানি। তোমার জন্যই হয়তো আমার পরিবার সহজে মেনে নিতে পারছে না। তাই বলে আমি কখনোই ওকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবতে পারি না। এটা আমার ভালোবাসার অপমান হবে। পরিস্থিতি একটু শান্ত হোক, আমি নিজে সব ঠিক করে নেব।”

ভাইয়ার কথাগুলো শুনে যেন বুকের মধ্যে জমে থাকা কালো মেঘটা হালকা হয়ে গেল। মনের অস্থিরতা কেটে গেল। চোখে এক চিলতে প্রশান্তি। অন্তত এই মানুষটা আমার ভালোবাসার মতো না।

চলবে.. ইন শা আল্লাহ