তুমি নামক অনুভূতি পর্ব-১৩+১৪

0
999

#তুমি_নামক_অনুভূতি
#পর্ব:১৩
#Lutful_Mehijabin (লেখা)
[কপি করা নিষিদ্ধ]

মেহের অস্থির মাখা দেহ নিয়ে নিজেকে রক্ষা করতে পাগলের ন্যায় ছুটতে লাগল। ছেলেগুলো মেহেরের পায়ের সাথে তালেতাল মিলিয়ে ছুটতে লাগল মেহেরকে পাকড়াও করার উদ্দেশ্যে। একপর্যায়ে ছেলেগুলো সফল হলো। ঘিরে ফেলল মেহেরকে। লহমায় একটা ছেলে ধারাল ছুরি নিক্ষেপ করল মেহেরের নিকট। ধারল ছুরিটা অল্পের জন্যে মেহেরের পায়ে লাগল না। কিন্তু ছুঁয়ে দিল মেহেরের বা হাতে আঙুল গুলোতে। সঙ্গে সঙ্গে মেহেরের চলন্ত পা দুটো থেমে গেল। ধারল ছুরির আঘাতে মেহেরের হাতের সরু চামড়া ভেদ করে, রক্ত গ্রন্থি হতে টপটপ করে রক্ত ঝরে পড়তে আরম্ভ করল। প্রচন্ড ব্যথায় তার মুখশ্রী নীলাভ বর্ণ ধারণ করে উঠল। কন্ঠস্বর হতে ব্যথাতুর কিঞ্চিৎ আওয়াজ বের হয়ে এলো। মেহের নিজ ডান হাত দিয়ে রক্ত মাখা অন্য হাতটি শক্ত করে চেপে ধরল। অস্থির হয়ে বসে পড়ল রাস্তার মাঝখানে। ভয়ে তার দম বন্ধ হয়ে আসছে। গলার কোথায় যেন কান্না দলা পাকিয়ে আটকে রয়েছে। সে চেষ্টা করেও মুখ দিয়ে টু শব্দও বের করতে সক্ষম হচ্ছে না। তার লঘু মস্তিষ্ক ভয়ে কার্যকর ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে।

ছেলেগুলো মেহেরের অবস্থা দেখে ভয়ঙ্কর ভাবে হাসতে আরম্ভ করল। দলের একটা ছেলে পকেট হতে ছুরি বের করে মেহেরের চোখের সামনে নিয়ে এসে বলে উঠল,

–এই মেয়ে সত্যি সত্যি বল সমুদ্র তোর কী হয়?

দলের মধ্যেকার অন্য একটি ছেলে বলে উঠল,

–সমুদ্রের বউ হোক বা বোন হোক। কোন কথা না, নিয়ে চল আমাদের সাথে। তবেই তো সমুদ্র বুঝবে কত ধানে কত চাল!

বলেই দলের সবগুলো ছেলে একত্রে অট্টহাসিতে মেতে উঠল। মেহেরের দৃষ্টির সামনে ছুরি তাক করা ছেলেটি ধীরে ধীরে হাত ধাবিত করল। লহমায় ছুরির উপর দৃষ্টিপাত পড়তে মেহেরের শরীর ভয়ে কাঁপতে আরম্ভ করল। নিমিষেই শঙ্কিত উন্মুক্ত নেত্র যুগল বন্ধ করে ফেলল।সে যেন জবাব দেওয়ার বাক শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। ছেলেটার প্রত্যুত্তর সে নিশ্চুপ হয়ে রইল। ফলে ছেলেটা মেহেরের উপর রেগে গিয়ে ছুরিটা তার গলার দিকে ধাবিত করল।

মুহূর্তেই দ্রুত গতিতে বাইক নিয়ে, হেলমেট পরিহিত দু জন সুদর্শন যুবক উপস্থিত হলো। বাইক হতে প্রস্থান করে মেহেরের নিকটবর্তী এসে পড়ল। তাদের মধ্যে একজন পকেট হতে রিভালবার বের করল। যে লোকটা মেহেরের গলায় ছুরি তাক করেছে, কোন চিন্তা ভাবনা না করেই লোকটার মাথার সীমান্তে রিভালবার ঠেকাল। অন্য লোকটা যুবক বাদ বাকি ছেলেগুলোকে এলোপাথাড়ি মারতে আরম্ভ করল। অতঃপর দলের ছেলে গুলো ভয় পেয়ে কনোমতে পালিয়ে গেল। যাওয়া আগে একটা ছেলে বলল,

–ঠিক করলি না আকাশ। এর হিসেব তোকে হাতে নাতে চুকাতে হবে। তোর আর সমুদ্রের কপালে দুঃখ আছে বলে গেলাম।

লোকগুলো ভয়ে প্রস্থান করার পর আকাশ নামের ছেলেটা মেহেরকে হাত ধরে দাঁড় করল। অন্য ছেলেটাকে বলল,

–বিহান কুইক, পানি নিয়ে আস।

বিহান ছেলেটা জলদি গিয়ে দোকান হতে পানির বোতল ক্রয় করে নিয়ে এলো। আকাশ মেহেরকে গাড়িতে তুলল। পকেট হতে রুমাল বের করে মেহেরের হাত বেঁধে দিল। অতঃপর পানির বোতলটা মেহেরের দিকে এগিয়ে বলল,

–আর ইউ ওকে?

মেহের নিশ্চুপ হয়ে স্তম্ভিত হয়ে পলকহীন নয়নে নতজানু হয়ে রয়েছে। এমন ঘটনার ফলে সে যেন কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। নেত্র যুগল হতে দুর্বোধ্য রহস্য টপটপ করে তার গাল যুগল মাখিয়ে ফেলেছে। বক্ষ পিন্জরের হৃদয় স্পন্দন ভয়ে জরে জরে ধ্বনি তুলছে। গভীর গভীর নিশ্বাস ফেলছে সে। এক কথাই তার নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। আকাশ মেহেরের পরিস্থিতি বোধগম্য করে, পকেট হতে ফোন বের করে কাউকে কল দিল। কিছুক্ষণ পর মেহেরের দিকে দৃষ্টি আবদ্ধ করে মুচকি হেসে বলে উঠল,

–কিছু হয়নি তো। কাঁদছ কেন? ভয় পেও না। দেখি, আমার দিকে তাকাও।

মেহের কান্নারত অবস্থায় টলমল নয়নে আকাশের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। আকাশ চোখের দিকে দৃঢ় দৃষ্টি তাকিয়ে বলে উঠল,

–ওলে বাবা, দেখেছ কেঁদে নিজের মুখের কি হাল করেছে। আচ্ছা তোমার নামই তো অজানা রয়ে গেল। নাম কি তোমার?

মেহের কম্পনিত কন্ঠে অস্কুটস্বরে বলে উঠল,

–মেহের।

________

সোফার উপর নিজের ভর ফেলে, বিষাদগ্রস্ত হৃদয় নিয়ে পেপারে গল্প পড়ছে জারা। একরাশ বিরক্তি বিদ্যমান তার অন্তরালে। সেই সকাল বেলা ইয়াদ কোথায় যে গিয়েছি, মহাশয় আর আসার নাম নেই। ইয়াদের জন্য প্রচুর পরিমাণে কষ্ট হচ্ছে তার। লোকটা কত ব্যথা পেয়েছে, ইশ! ওষুধ ঠিক মতো খেয়েছি কী সন্দেহ! রাতে তো তাকে ধারের কাছেও চাপতে দিল না। এইরূপ নানান চিন্তা ভাবনা মত্ত জারা। গল্পে মন বসছে না। ইয়াদের প্রতি অদৃশ্য টান অনুভব করছে । অত্যধিক বাজে অনুভূতি বয়ে চলছে হৃদয় গহীনে। কী বলে অনুভূতিটাকে? এই অস্থির মাখা অশান্ত অনুভূতির নামই কি ‘তুমি নামক অনুভূতি’? যে অনুভূতিতে আক্রান্ত হলে ধরণীর প্রত্যহ বস্তু বিষাদময় লাগে অন্তরালে! শুধু মাত্র অন্তরাল জুড়ে গ্রাস করা ব্যক্তিকে একপলক দেখার প্রয়াসে চাতক পাখির ন্যায় অপেক্ষার প্রহর গুনতে হয়। নাকি একেই বলে পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধের মায়জাল। কি আছে ওই কবুল নামক শব্দে? কী আছে যা তিনবার কন্ঠস্বর হতে নির্গত করলেই, একে অপরেকে ছাড়া বাঁচা অসম্ভব হয়ে পড়ে?
কিছুই বুঝতে পারছে না জারা। শুধু মাত্র তার নেত্র যুগল ছটফট করছে ইয়াদের মুখশ্রী দর্শনের জন্য। হাজার বকা দিলেও এখন ইয়াদকে সে ভয় পাবে না। তার উপর প্রয়োগকৃত ভর্ৎসনাকে ভালোবাসার দৃষ্টিতে দেখবে। মাথা নিচু করে ইচ্ছে মতো ইয়াদের রাগের সঙ্গে পরিচিত হয়ে উঠবে। ইয়াদের বকুনিকে অতিরিক্ত চিনি মিশ্রিত জল ভেবে খেয়ে ফেলবে। কথাগুলো ভেবে মিটমিট করে হেসে দিল সে। তার উদ্দেশ্য যে করেই হোক ইয়াদকে সে ভালোবাসবে। তৎক্ষণাৎ কলিং বেলের আওয়াজ কর্ণপাত হতেই জারার বুকের ভেতর ধ্বক করে উঠল। নিশ্চয়ই ইয়াদ চলে এসেছে ভেবে খুশির বন্যা বইয়ে গেল অন্তরালে। নিজেকে পরিপাটি করে দ্রুত গতিতে ড্রোর খুলে দিল। ইয়াদ জারাকে এক প্রকার উপেক্ষা করে কোট খুলতে খুলতে নিজের রুমের উদ্দেশ্য ধাবিত হলো। চলন্ত পা যুগল খানিক থামিয়ে বলে উঠল,

–কাম উইথ মি।

জারা নতজানু হয়ে ইয়াদের পিছু পিছু যেতে লাগল। অবশেষে ইয়াদ ঘররে ভেতর প্রবেশ করে নিজের কোটটা বিছানার উপর নিক্ষেপ করল। ওয়াশরুমে যাওয়ার পূর্বে জারার আদেশের স্বরে বলল,

–অনেক খিদে পেয়েছে। আমি ফ্রেশ হতে হতে যেন খাবার রেডি হয়। নাহলে তোমার খবর আছে। গো।

জারার ইয়াদের কথার প্রত্যুত্তরে মাথা দু দিকে হেলিয়ে রান্না ঘরে চলে এলো। মুখশ্রীতে একরাশ ভয় আবির্ভাব রেখে, মনে মনে পুলকিত হয়ে রান্না ঘরে এসে নাচতে আরম্ভ করল। কারন রান্না কাজটা খুব ভালো ভাবেই সমাপ্ত করতে পারে সে। বই প্রেমি হওয়ার সত্বেও তার রান্নার দারুণ চমৎকার। বারংবার যে তার হাতের তৈরি রান্না খাবে, সে ব্যক্তি প্রশংসা করতে বাধ্য হবে।
________

বিছানার এক কণে গুটিয়ে আধশোয়া হয়ে বসে রয়েছে মেহের। তার সামনে অবস্থিত দুটো সোফার উপর আকাশ এবং সমুদ্র বসে আছে। আকাশের সঙ্গে থাকা বিহান নামের ছেলেটি খানিক পূর্বে বিদায় নিয়েছে। সমুদ্রের মুখশ্রীতে একরাশ চিন্তা বিদ্যমান। আজ সঠিক সময় আকাশ না এলে মেহেরের সঙ্গে বাজে কিছু ঘটে যেত। আকাশ প্রশ্নোত্তর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে সমুদ্রের নিকট। তার চোখে যুলগে ফুটে উঠেছে কঠোরতা। আকাশ সমুদ্রের জবাবের উদ্দেশ্য দ্বিতীয় বার সে প্রশ্ন করল,

–আমি কী তোকে কিছু জিজ্ঞেস করেছি! মেহের তোর কী হয় সমুদ্র?

সমুদ্র একপলক মেহেরের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। অতঃপর পরাপর দুটো নিশ্বাস ফেলে। কপাল যুগল কুঁচকে, আকাশকে বলে উঠল,

–আমার ওয়াইফ। শুনেছিস? এবার খুশি তো।

আকাশ সোফা থেকে থমথম হয়ে উঠে দাঁড়াল। অবাক নামক দৃষ্টিপাত নিক্ষেপ করল সমুদ্রের মুখশ্রীতে। কপাল কিঞ্চিৎ ভাঁজ ফেলে টেনে টেনে বলল,

–হুয়াট! এই এতটুকু বেবি তোর বউ! আমার বিশ্বাস হচ্ছে না, এই মেয়ে আমার ভাবি?

আকাশের কথা বলার ধরণ দেখে সমুদ্র ভ্রূ কুঁচকে বিরক্তিকর দৃষ্টি আবদ্ধ করল। দাঁতে দাঁত চেপে আকাশের উদ্দেশ্য বলল,

–হয়েছে? এবার চলে যা। ধন্যবাদ।

মুহূর্তে আকাশ দ্রুত পায়ে সমুদ্রের পাশে ঘেঁষে বসে পড়ল। সমুদ্রের কাধে হাত দিয়ে ভ্রূ স্বল্প বারি দিয়ে, সতর্ক কন্ঠে বলে উঠল,

–তুই এই বাচ্চা মেয়েটাকে কেন বিয়ে করলি? আর আমাকে এবারও জানানোর প্রয়োজন বোধ মনে করলি না। এই তোর বন্ধুত্ব!

সমুদ্র কিছুটা চুপসে গেল আকাশকে সব ঘটনা খুলে বলল। সবটা মনোযোগ সহকারে শুনে আকাশ বলল,

–এত কিছু হয়ে গেল তুই আমাকে বললি না ! আমি তো জানতাম তুই ইয়াদের বিয়েতে গিয়েছিস। কিন্তু তুই ও যে পরিস্থিতির চাপে বিয়েটা করবি একবারও আমাকে জানালি না কেন?

সমুদ্র নেত্র যুগল বন্ধ করে মস্তিষ্ক শীতল করার প্রয়াসে পরাপর দুটো লম্বা, স্নিগ্ধ নিশ্বাস টেনে নিল। অতঃপর চোখ যুগল উন্মুক্ত করে বলল,

–দেখ, আমি বুঝতে পারি নি আম্মু আমাকে ব্ল্যাক ম্যান করে ওই মেয়েটির সঙ্গে গেঁথে দিবে। যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে আমি মেয়েটার জীবন নষ্ট হতে দিব না। ওর মা বাবাকে বুঝিয়ে ওকে নিয়ে যেতে বলল। কেয়ারলেস পেরেন্স এত ছোট একটা পুচকিকে বিয়ে দিল কীভাবে! যাইহোক তুই বিষয়টা কাউকে বলিস না। বিশেষ করে স্যারকে বলিস না। তাহলে নিশ্চয়ই তোকে সাসপেন্ড করবেন।

আকাশ মেহের দৃষ্টি হতে আড়ল করতে, সমুদ্রের হাত ধরে ড্রইং রুমে নিল এলো। সোফার উপর বসতে বসতে বলল,

–দেখ সমুদ্র আমি কাউকে বলব না। চিন্তা করিস না। কিন্তু,,,,

–কিন্তু কী?

সমুদ্র শক্ত দৃষ্টি নিবন্ধ করল আকাশের নয়ন যুগলে। আকাশ কিছুটা নড়েচড়ে বসে গভীর দৃষ্টিপাত ফেলে গুরুত্ব সহকারে বলে উঠল,

–কিন্তু তুই কেন ওকে তোর কাছে রাখতে চাস না? যা হবার তা তো হয়েই গিয়েছে। ভাবিটা ছোট হয়েছে তো কী হয়েছে। দেখেছিস কত্ত মিষ্টি কিউট ভাবিটা আমার!

আকাশের বলা বাক্যগুলো কর্ণপাত হতেই সমুদ্রের চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। রাগ নিয়ন্ত্রণের প্রয়াসে সমুদ্র নিজের হাত মুঠো করে তিক্ত দৃষ্টিপাত নিক্ষেপ করে ক্রোধ মাখা কন্ঠে বলল,

–আর ইউ স্টুপিড আকাশ ! তুই কী পাগল হয়েছিস। এমনই আমার জীবনের নিশ্চয়তা কতটুকু তা তুই ভাল করেই জানিস। তাছাড়া ওই পুঁচকি ফুছকি কে আমি ওয়াইফ হিসেবে গ্রহণ করতে পারব না। সো নট কল হিম ভাবি। আন্ডারস্টান্ড!

সমুদ্র কথা শুনে আকাশ স্বল্প বিরক্ত হয়ে উঠল। বিরক্ত মাখা কন্ঠে বলল,

–আচ্ছা রাগিস না। শুধু একটা কথা শুনে রাখ একদিন তুই আফসোস করবি। বাই দ্যা ওয়ে, আজকে ওই ছেলগুলো যারা মেহেরকে আক্রমণ করেছিল তারা বোধহয় সিয়াম গ্যাংয়ের। কিছুদিন আগে সিয়াম জেল থেকে মুক্তি পেয়েছে। আর তোর উপর তো সেই ক্ষোভ। এই পরিস্থিতিতে বুঝেও তুই মেহেরকে একা ছেড়েছিস কেন?

আকাশের প্রশ্নের প্রত্যুত্তর সমুদ্র বলল,

–আমি ভেবেছিলাম ওর উপর কোন ঝামেলা হবে না। কারন কেউ ওকে চিনতে পারবে না। কিন্তু বুঝলাম না ওরা বুঝল কীভাবে মেহের আমার কেউ! আমি মেহেরের সেফটির জন্য অহনাকে দিয়ে ওর ভর্তি করালাম। তাও এইরকম কীভাবে হলো বুঝলাম না। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি ওর ফ্যামিলিকে জানাব তারা ওকে যেন তাড়াতাড়ি নিয়ে যান। যে স্বল্প কয়দিন ও আমার কাছে আছে সে কয়দিন একবারের জন্যও ওকে দৃষ্টির আড়াল করব না। তুই এখন যা স্যার কল করেছিল। স্যারকে এই বিষয়ে কিছু বলিস না।

আকাশ সোফা থেকে উঠে দাঁড়াল। মুচকি মুচকি হেসে বলে উঠল,

–ওকে বাই। সাবধানে থাকিস। মেহেরের একটু যন্ত্র নিস। মেয়েটা প্রচন্ড ভয় পেয়েছে। ওর খেয়াল রাখিস। হাত কেটে গেছে মেয়েটার, কোন কাজ করতে দিস না। রাতে কিছু আবার খাইয়ে দিস। আমি আসি এখন।

বলেই আকাশ সমুদ্রের ফ্লাট হতে প্রস্থান করল। সমুদ্র মেইন ড্রোর লক করে রান্না ঘরের দিকে ধাবিত হলো।
———-

পোলাও, রোস্ট এবং ইলিশ মাছ ভাজা টেবিলের উপর সাভ করে রেখেছে। এতো কিছু রান্না করে পুরো ঘেমে গিয়েছে মেয়েটা। মুখশ্রীতে তেল চিকচিক করছে। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে পড়েছে। ইয়াদ তার চশমা ভেঙে ফেলেছে তাই দূরের বস্তু দেখতে স্বল্প কষ্ট হচ্ছে। ইয়াদ সেই যে রুমের ভেতর ঢুকেছে, এখন ও বের হওয়ার নামগন্ধ নেই। পরিশেষে জারা খানিকটি সাহস যুগিয়ে খাবার প্লেটে সাজিয়ে নিল। অতঃপর প্লেট ভর্তি খাবার নিয়ে ধাবিত হলো ইয়াদের রুমের সামনে।

বিছানার উপর আধশোয়া হয়ে মোবাইল স্কোল করছে ইয়াদ। হাতের বিচ্ছিরি ক্ষত দৃশ্যমান! টি শার্ট পরার ফলে ক্ষতগুলো স্পষ্ট ভাবে দেখা যাচ্ছে। এই শীতল পরিবেশেও লোকটা টি শার্ট পড়ে রয়েছে! বিষয়টা লক্ষ্য করে জারা কিছুটা অবাক হলো। ধীর গতিতে এগিয়ে গেল ইয়াদের বিছানার পাশে। টেবিলের উপর খাবার রেখে ভীত মুখশ্রীতে নিম্ন কন্ঠে বলল,

–আপনার খাবার। আমি যাচ্ছি।

ইয়াদ ফোন হতে দৃষ্টি সরিয়ে খাবারে দিকে তাকাল। জারা পালিয়ে যাবার জন্য ধাবিত হতেই ইয়াদ খোপ করে তার হাত টেনে ধরল। জারার হাত টান অনুভব করতে থমকে দাঁড়ায়ি পড়ল। তার হৃদয় স্পন্দন দ্রুত গতিতে ছুটতে আরম্ভ করল। ইয়াদ জারাকে ভর্ৎসনা কন্ঠেস্বরে বলে উঠল,

–কোথায় যাচ্ছেন মিসেস ইয়াদ। আপনার জন্য তো অনেক শাস্তি জমিয়ে আছে। সো চুপচাপ এখানে বসেন।

জারার চুপচাপ ভদ্র মেয়ের ন্যায় নতজানু হয়ে বসে পড়ল। শাস্তির কথা কর্ণপাত হওয়ার ফলে তার হাত পায়ে কাঁপুনি শুরু হয়ে গেল। ইয়াদ একপলক জারার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,

–আমাকে খাইয়ে দাও, কুইক।

ইয়াদের মুখ হতে অকল্পনীয় কথা শুনে জারা স্তম্ভিত হয়ে ফ্যালফ্যাল করে ইয়াদের মুখশ্রীতে দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। এমন কথা মোটেও আশা করেনি তার অন্তরাল। এতে তার পরিস্থিতি অনুভূতিহীন নির্বাক!

(চলবে)

#তুমি_নামক_অনুভূতি
#পর্ব:১৪
#Lutful_Mehijabin (লেখা)
[কপি করা নিষিদ্ধ]

বিছানার উপর আধশোয়া হয়ে শুয়ে রয়েছে মেহের। মুখশ্রীতে ব্যথাতুর ভাবটা স্পষ্ট। সে তার ডাগর ডাগর চোখে পলক হারিয়েছে। তার দৃঢ় দৃষ্টিপাত সামনে অবস্থিত স্বচ্ছ দেয়ালে। পলকহীন নয়নে সে ভেবে চলছে তখনকার ভয়ঙ্কর ঘটনা। চোখ বন্ধ করলে তার কর্ণপাত হচ্ছে ছেলেগুলোর হুমকি দেওয়া বাক্যগুলো। সমুদ্রের যদি কোন অঘটন হয় তাহলে সে কি নিয়ে বাঁচবে। প্রকান্ড সমুদ্রের বুকে অসীম জলের কণাগুলোর ক্ষুদ্র হতে ক্ষুদ্রতম কণার ন্যায় সুখ প্রত্যাশা করেছিল তার ছোট হৃদয় গহীন। যেদিন হতে সে সমুদ্র নামক পাষণ লোকটির সঙ্গে মায়ার বাঁধনে গেঁথে গিয়েছিল, সেদিন থেকে সে তার হৃদয়মনে হাজারো বাসনা এঁকেছিল সমুদ্রকে ঘিরে। শেওলার ওপর পানির ফোঁটার ন্যায় ক্ষণিকের জীবনে সে সমুদ্রকে নিয়ে বাঁচতে চেয়েছিল। অভিপ্রায় করেছিল সমুদ্র নামাক মানুষটার নামের নিজের পনেরো বছরের জীবনটা উৎসর্গ করে দিবে। কিন্তু সমুদ্রের বুকে যে সহস্রাব্দের নিষ্ঠুরতা বিদ্যমান। যা মেহেরকে অনুক্ষণ ক্ষত-বিক্ষত করে। সমুদ্রের এতো দিনের আচার আচরণ তার হৃদয় যতটুকু ক্ষত বিক্ষত করতে ব্যর্থ হয়েছে, তা আজ সমুদ্রের বলা একটা বাক্য করতে সক্ষম হয়েছে। তার বারংবার কর্ণপাত হচ্ছে, সমুদ্র তাকে আর নিজের কাছে আশ্রয় দিতে চাইছে না। চাইছে না তার সঙ্গে মায়াজালে আবদ্ধ হয়ে থাকতে। সমুদ্র কঠোর ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, মেহেরকে তার মায়ের কাছে পাঠিয়ে দিবে। আকাশের সঙ্গে কথাগুলো বলার মুহূর্তে ঠিকই সে শুনেছে চরম তিক্ত বাক্যগুলো। কথাটা কর্ণপাত হতেই তার দু চোখ সজল হয়ে উঠেছিল। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, তার চোখ গহীনে অবস্থিত দুর্বোধ্য রহস্য ধরণীর বুকে বিসর্জন হয়নি! কোথাও যেন আটকে ছিল। সমুদ্র কী তাকে কখনোই গ্রহণ করতে পারবে না? মেহের পারছে না তার হৃদয়ের রক্ত ক্ষণের কথা ব্যক্ত করতে। বারংবার সে ব্যর্থ হচ্ছে, চিৎকার করে কেঁদে বুকটা হাল্কা করতে। প্রতিবারের ন্যায় আজও সে বুকে পাথর চেপে সবটা সহ্য করে যাচ্ছে।

লহমায় সমুদ্র হাতে বৃত্তাকার বাটি নিয়ে ধীর পদে মেহেরের রুমে ধাবিত হলো। সে একপলক মেহেরের ব্যথায় মলিন হওয়ার মুখশ্রীতে দৃষ্টিপাত ফেলল। সঙ্গে সঙ্গে তার কেয়ার লেস হওয়ার কর্মে নিজের ওপর ক্ষোভ ও ধিক্কার জানাল সে। যতোই হোক বর্তমানে মেহের তার অধীনে। তাই মনে মনে সিদ্ধান্ত নিল কাল হতে সে মেহেরের খেয়াল রাখবে। কিঞ্চিৎ সংকোচ, দ্বিধা নিয়ে সে আস্তে করে মেহেরের বিছানার পাশে বসল। শতাধিক ইতস্তত বোধ হচ্ছে তার। সমুদ্রের যে কোনদিন কোন মেয়ের জন্য খাবার তৈরি করে খাওয়াতে আনবে বিষয়টা অকল্পনীয়!
সমুদ্র কিছুটা হলেও মেহেরের নিঃশব্দের কান্না আন্দাজ করতে পেরেছে। কিন্তু বিষয়টা উপেক্ষা করে শান্ত ও নিম্ন সুরে বলে উঠল,

–আর ইউ ওকে পুঁচকি?

সমুদ্রের কন্ঠস্বর কর্ণপাত হতেই মেহের নড়েচড়ে বসল। গায়ে অবস্থিত ওড়না মাথার সীমান্ত পর্যন্ত টেনে নিল। গায়ে থাকা উষ্ণ চাদরটার আড়ালে নিজেকে আবৃত করে নিল। নতজানু হয়ে একপলক বাটির দিকে লক্ষ্য করল সে। বাটি ভর্তি সুপ দেখে তার নাক মুখ কুঁচকে এলো। নিম্ন কন্ঠে অস্কুটস্বরে বলল,

–আমার খেতে ইচ্ছে করছে না। বমি পাচ্ছে। খাব না।

মেহেরের কথা শুনে সমুদ্রের চোখে মুখে বিরক্তের আবির্ভাব ঘটল। কিন্তু নিজেকে ধাতস্থ রেখে বলল,

–কোন কথা নয়। জলদি ফিনিস কর।

মেহের পুরণায় বলে উঠল,

–না খেলে হয় না। আমি খাব না। আপনি খান।

সমুদ্র এবার ফোন হতে দৃষ্টি সরিয়ে তিক্ত দৃষ্টিপাত নিক্ষেপ করল মেহেরের পানে। তৎক্ষণাৎ তার বুকটা ছ্যাত করে উঠল। এবার একটু কন্ঠে কঠোরতা এনে বলল,

–ফিনিস ইট ফার্স্ট । খাবে নাকি আমি অন্য ব্যবস্থা করব?

মেহের চমকে উঠল। একবার সমুদ্রকে আড়চোখে লক্ষ্য করে বলল,

–খাচ্ছি তো।

সুপের বাটিটা সামনে নিয়ে নাক মুখ কুঁচকে খেতে আরম্ভ করে দিল মেহের। সমুদ্র মেহেরের পরিস্থিতি দেখে বিহ্বল হয়ে পড়ল। কিছু না বলে খানিকক্ষণ নিরবতা পালন করল সে। অতঃপর মেহেরের খাবার ফিনিস হওয়ার পর, সমুদ্র নিজের ফোনে উপর দৃষ্টি আবদ্ধ রেখে বলে উঠল,

–তোমার বাবার নাম্বার বল। আমি আজই তোমার বাবাকে কল করতে চাই।

সমুদ্রের অনাদৃত বাক্যগুলো শুনে মেহেরের বুকটা ছ্যাত করে উঠল। খুব শীঘ্রই কী তাকে সমুদ্র নামক আশ্রয় হতে বিদায় নিতে হবে! অশ্রু স্নিগ্ধ নয়নে বুকে চাপা কষ্ট রেখে, কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,

–আমার তো বাবার নাম্বর মুখস্থ নেই। জিজুর কাছে আছে বোধহয়।

সমুদ্র কিঞ্চিৎ কপাল কুঁচলো। কেমন মেয়ে, নিজের বাবার নাম্বারটাই অজানা, আশ্চর্য! মেহেরের প্রত্যুত্তরে শুনে সমুদ্র নিম্ন সুরে বলল,

–ওকে।

মেহেরের কথার ছোট্ট প্রত্যুত্তর করে, লহমায় সমুদ্র মেহেরের ক্ষত হাতটা আস্তে টান দিয়ে নিজের হাতের উপর রাখল। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে নিখুঁত ভাবে দেখতে লাগল মেহেরের ক্ষত। আজ হতে সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, মেহেরের সঙ্গে যতটুকু সম্ভব ভালো আচরণ করবে। এই দু তিন দিন মেহেরকে আগলে রাখবে। যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব মেহেরকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দিবে।

হঠাৎ সমুদ্রের হাতের ছোঁয়া পেয়ে বিব্রত বোধ করছে মেহের। খানিক সংশয় হচ্ছে হৃদ গহীনে। সমুদ্র মেহেরের কুসুম কোমল হাত ধরে মনে মনে ভাবছে, এই হাত বোধহয় তুলো দিয়ে তৈরি। এতো নরম কোন মানুষের হাত হতে পারে তা সমুদ্রের নিকট অজানা! তৎক্ষণাৎ মেহেরের হাতের ক্ষত এর দিকে মনোযোগ নিক্ষেপ করতেই সমুদ্রের অন্তরালে কোন এক অজানা অনুভূতি জেগে উঠল। মুহূর্তে সে দ্রুত পায়ে মেহেরের কক্ষ হতে প্রস্থান করল। গড়গড় করে দ্রুত পদে রুমে এসে শব্দ করে দরজা ধাক্কা মারল। কপালে আলত করে দু আঙুল চেপে ধরে বিরবির করে বলে উঠল,

–সিয়াম তুই আজ একদমই ঠিক করিস নি। আমি তোকে এবার ছাড়াব না।

____________

নিজের অসহায় আঙুলের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে জারা। আজ তার হৃদ গহীন বড্ড পুলকিত। ইয়াদ তার হাতে খেয়েছে। মূলত তাকে শাস্তি দেবার প্রয়াসে ইয়াদ তাকে খাইয়ে দিতে বলেছিল। বারংবার সেই সুমধুর দৃশ্য কল্পনা করতেই জারার মনটা খুশিতে নেচে উঠছে। তার দৃষ্টি পড়ছে ইয়াদের দেওয়া উপহারে। নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে আপনাআপনি লজ্জায় রঞ্জিত হয়ে উঠছে তার গাল যুগল। চোখ ভেসে ওঠছে একরাশ লাজুকতা। তার আঙুল যেন দ্বিগুণ সৌন্দর্য ধারণ করেছে। ব্যথা পেয়েছে খানিক কিন্ত বারংবার সে প্রার্থনা করছে, এই দাগ যেন বিদায় না নেয় তার আঙুল হতে। যতোই হোক এই দাগ যে তার সর্বপ্রথম অনুভূতির সাক্ষী। লোকটা যদি তাকে ব্যথা দিয়ে আনন্দ পাই। তাহলে সে ইয়াদের সুখের কামনায় এই রকম হাজার ব্যথা পেতে রাজি।
ইয়াদকে নিয়ে হাজার এইরকম বাসনা দেখতে দেখতে জারা ঘুমের দেশে পারি দিল।
_______

শীতের রাত্রি। পুরো শহরের প্রায়ই সব জন মানব নিজ শরীর উষ্ণ চাদরে ঢেকে গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে রয়েছে। কিন্তু এই গভীর রাত হওয়া সত্ত্বেও ঘুমের চিটে ফোটাও নেই ইয়াদের চোখে মুখে। নিদ্রা যেন তার হাতে ধরা দিতে লজ্জা পাচ্ছে। এই শীতল পরিবেশে ইয়াদ বেলকনিতে দাঁড়িয়ে প্রকৃতি বিলাশ করতে ব্যস্ত। তার ধারণা রাতের নৈসগিক পরিবেশ যেমন দৃষ্টিনন্দন, চিত্তাকর্ষক তেমনি উপভােগ্য। কিন্তু আজ প্রকৃতির ইন্দ্রজাল তাকে মুগ্ধ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। তার হৃদয় পড়ে রয়েছে জারা নামক প্রাণীটির উপর। বারংবার সে কেন জারাতে গিয়ে আটকে পড়ে? জারা তো অপরাধী! সে তো তার হৃদয়ে কঠিন ভাবে ব্যথা দিয়েছে। দিয়েছে বললে ভুল হবে এখনো দিচ্ছে। ইয়াদ কোনদিনও জারাকে ক্ষমা করতে পারবে না। ইয়াদ এবার দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিয়েছে জারাকে শাস্তি দেবে। হ্যাঁ প্রচুর শাস্তি দেবে। ভেবেই ইয়াদের বুক ব্যথিত হয়ে উঠল। চোখের কণে পানি এসে আশ্রয় নিল। ইয়াদ সজল চোখে বলতে লাগল,

–আই হেইট ইউ। তোমাকে তো অনেক শাস্তি পেতে হবে মিসেস ইয়াদ।
__________________

নিত্যদিনের মতোন আজও মেহের সকালে উঠেছে। সালাত আদায় করে পড়তেও বসেছিল সে। আজ সকালে সে সমুদ্রের মুখ দর্শন পেয়েছে। কোন কথা বলেনি তার সঙ্গে। কিন্তু ব্রেকফাস্ট আজকে সমুদ্র বাইরে থেকে নিয়ে এসেছে। মেহেরকে খাইয়ে সে নিজ দায়িত্বে আজ মেহেরকে স্কুলে নিয়ে এসেছে এবং তারই গাড়িতে করে। আজ মেহেরকে মাস্ক পড়তে বলেনি। সে প্রথম ভেবেছিল মেহেরকে আর স্কুলে নিবে না। পরিশেষে তার মস্তিষ্ক বলে উঠে, মেহেরকে বাসায় একা রেখে যাওয়াটা বোকামি ছাড়া অন্য কিছু নয়। তাই সে মেহেরকে স্কুলে নিয়ে এসেছে।

বর্তমানে মেহের তিতাস এবং দিশানি একই বেন্চে বসে খেজুরে আলাপে মত্ত হয়ে রয়েছে। মেহেরকে মাঝখানে বসিয়ে তারা দু জন দু কণে বসে আছে। দুজনের কথাবার্তায় একে অপরের প্রতি অভিযোগ, অভিমান বিদ্যমান। মেহের তাদের ছোট ছোট ঝগড়া দেখে হাসিতে ভেঙে পড়েছে। এই মূহুর্তে মেহের নিজেকে দুনিয়ার সবচেয়ে ভাগ্যবান মনে হচ্ছে। দিশানি খানিকক্ষণ পরপর গাল ফুলিয়ে বলছে,

–দেখ মেহের তিতাসের সাপোর্ট নিবি না। ওর সঙ্গে আমি কথা বলব না।

মেহের দিশেহারা মতোন বসে তাদের বক্তব্য শুনছে। লহমায় ক্লাসে সমুদ্র প্রবেশ করল। সঙ্গে সঙ্গে সবাই চুপ হয়ে গেল। দিশানি মেহেরের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,

–মেহের স্যারকে দেখছিস উনি অনেক রাগী। জানিস আমাদের ক্লাসের আদিবা আছে না। স্যারকে অনেক পছন্দ করে। স্যারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে নানান রূপে স্যারকে মুগ্ধ করার চেষ্টা করে ।

দিশানির কথা কর্ণপাত হতেই মেহেরের বুকের মাঝে ব্যথা করে উঠল। দিশানির কথাই বোকার ন্যায় হেসে উঠল।

সমুদ্র ক্লাসে প্রবেশ করতেই সর্বপ্রথম তার দৃষ্টি পড়ল মেহেরের উপর। সঙ্গে সঙ্গে তার শরীর রাগে গিরগির করে উঠল। আকস্মিক দাঁতে দাঁত চেপে ধমকের স্বরে চিৎকার করে বলে উঠল,

–মেহের, তিতাস, দিশানি স্টান্ড আপ! পুরো ক্লাস তোমারা তিনজন কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকবে।

(চলবে)