তুমি নামক অনুভূতি পর্ব-২৩+২৪

0
1008

#তুমি_নামক_অনুভূতি
#পর্ব:২৩
#Lutful_Mehijabin (লেখা)
[কপি করা নিষিদ্ধ]

–কোথায় যাচ্ছ তুমি? আমি কি তোমাকে যাবার অনুমতি দিয়েছি! কিছু বলি না বলে, অনেক সাহস হয়েছে তোমার তাই তো? আমি এখনি তোমার সাহস ঘুচিয়ে দিচ্ছে। ওয়েট,,

কথাটা বলেই ইয়াদ জারার অত্যধিক কাছে এসে হঠাৎ অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটিয়ে বসল। সে জারার পায়ের সামনে হাঁটু ভেঙে বসে পড়ল। অতঃপর ডান হাত ধাবিত করল জারার পায়ের গোড়ালির নিকট। তৎক্ষণাৎ আলতো ছুঁয়ে দিল জারার পায়ের গোড়ালিতে। মুহূর্তেই জারার কন্ঠস্বর হতে ব্যথায় অস্কুটস্বরে আর্তনাদ নির্গত হলো।

লহমায় ইয়াদ জারার মুখশ্রীতে দৃষ্টিপাত নিক্ষেপ করল। জারার মুখশ্রীতে ব্যথাতুর ভাবটা স্পষ্ট! সঙ্গে সঙ্গে রাগে ইয়াদে চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। দাঁতে দাঁত চেপে রাগ নিয়ন্ত্রণের প্রয়াস চালাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল সে। তাও যেন তা মস্তিষ্ক শীতল হতে নারাজ। অবশেষে মস্তিষ্ক শীতল করার প্রয়াসে নয়ন যুগল বন্ধ করে লম্বা, শীতল বায়ু টেনে নিলো। রাগ খানিকটা কন্ট্রোল হতেই দাঁড়িয়ে পড়ল সে। ঘন ঘন নিশ্বাস নির্গত করতে করতে কঠোর কন্ঠে বলে উঠল,

–কাম উইথ মি।

ইয়াদের কন্ঠস্বর কর্ণপাত হতেই জারা স্তম্ভিত হয়ে পড়ল। ভয়ে চোখ বুজে থমকে দাঁড়ায়ি রইলো খানিকক্ষণ। হঠাৎ তার হাতে ইয়াদের বলিষ্ঠ হাতের স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠল সে। জারার মস্তিষ্ক কিছু বুঝে উঠার পূর্বেই ইয়াদ তাকে হাত ধরে নিজের রুমে নিয়ে এলো। রুমে ঢুকে সজোরে সোফার উপর ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল জারাকে। ড্রয়ার হতে ফার্স্ট এইড বক্স বের করে সোফার পাশে অবস্থিত ট্রি টেবিলের উপর রাখল। পুনরায় সে জারার পায়ের নিকটবর্তী হাঁটু ভেঙে বসে পড়ল। অতঃপর জারার আঘাত প্রাপ্ত পা ট্রি টেবিলের উপর স্থাপন করে, খানিকক্ষণ মনোযোগ সহকারে ক্ষত এর দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। ইয়াদ ক্ষোভে ফুসতে ফুসতে পায়ের ক্ষত স্থান ব্যান্ডেজ করে দিল। ব্যান্ডের শেষে দৃষ্টিপাত নিক্ষেপ করল জারার মুখশ্রীতে। ঠোঁট যুগল সংকুচিত করে উচ্চ স্বরে বলে উঠল,

–হেই ইডিয়েট গার্ল! নিজের খেয়ার রাখতে পার না? চোখ কী উপরে রেখে হাঁটতে থাক?

ইয়াদের ভর্ৎসনা শুনে জারা থরথর করে কাঁপতে আরম্ভ করল। এতক্ষণ তার সঙ্গে কী ঘটলে বিষয়টা আন্দাজ করতে ব্যর্থ হচ্ছে সে। ইয়াদ যে অত্যধিক যত্ন সহকারে তার পায়ের ক্ষত স্থানে ব্যান্ডেজ করে দিল সেই বিশেষ মুহূর্তটাও জারা অনুভব করতে পারল না। সবকিছু তার অস্বাভাবিক লাগল। চোখ বন্ধ করে কম্পনিত অবস্থায় কর্ণপাত হলো ইয়াদের কন্ঠস্বর। ইয়াদ তাকে দাঁত চেপে ধমকের সহিত বলছে,

–এই মেয়ে চোখ বন্ধ করে রয়েছে কেন? লুক এ্যাট মি!

ইয়াদের ভয়ঙ্কর কন্ঠস্বর জারার কর্ণে পৌঁছেতে ভয় যেন তীব্র হতে তীব্রতর হয়ে উঠল তার হৃদয়মনে। ধীরে ধীরে নেত্র জোড়া উন্মুক্ত করল সে। অতঃপর তার ভীত দৃষ্টিপাত নিক্ষেপ করল ইয়াদের অন্চলপ্রান্ত চোখ যুগলে। মুহূর্তেই শিউরে উঠল জারা। ইয়াদের ধূসর বর্ণের মনির চোখ জোড়া হতে ক্রোধের আগুন নিঃসৃত হচ্ছে। প্রচন্ড রেগে গিয়েছে ইয়াদ। অতিরিক্ত রাগে ইয়াদের ধূসর মনির অধিকারী চোখ যুগলে রক্তিম বর্ণের আবির্ভাব ঘটেছে। ইয়াদের চোখে দৃষ্টি অটল রাখতে ব্যর্থ হলো জারা। ঠোঁট জোড়া হাল্কা প্রসারিত করে অস্কুটস্বরে মিনমিন গলায় বলে উঠল,

–সরি,। আমা,কে তো রা,,ন্না করতে হবে। আমি এখন যাই কেমন? আপনি একটু সরুন।

জারার বলা বাক্যগুলো শুনে ইয়াদের রাগ দ্বিগুন হারে বৃদ্ধি পেলো। সঙ্গে সঙ্গে টেবিলের উপর সজোরে হাত দিয়ে বারি মারল সে। কন্ঠে রাগের উপস্থিত ঘটিয়ে কর্কশ গলায় বলে উঠল,

–কী বললে আবার বলো তো? তুমি আমার মুখের উপর কথা বলার সাহস পাও কোথায় থেকে? একে তো ভুল করেছ অথচ আমাকে একবারও বল নি।

ইয়াদ কথাগুলো বলে কিছুটা থেমে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফির কর্কশ গলায় বলতে লাগল,

— আমি নিশ্চিত তোমার পায়ে আলপিন বিঁধছে! ক্ষত থেকে যদি ইনফেকশ্যন হয়, তাহলে কি হবে জান?

জারা ইয়াদের কথা মনোযোগ সহকারে শুনে অতঃপর মলিন কন্ঠে বলে উঠল,

–সরি তো,,,

জারার কথার প্রেক্ষিতে ইয়াদের কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনি তার ফোনর কর্কশ রিংটং বেজে উঠল। সঙ্গে সঙ্গে সঙ্গে ইয়াদে কন্ঠস্বর হতে বিরক্তির ‘চ’ শব্দ বেরিয়ে এলো। কিছুটা শান্ত হয়ে উঠে দাঁড়াল সে। অতঃপর ফোনের স্কিনে দৃষ্টিপাতে স্থাপন করল। লক্ষ্য করল তার আর্জেন্টি কল এসেছে। তাই ইয়াদ পরাপর দুটো নিশ্বাস ত্যাগ করে জারার দিকে একপলক তাকিয়ে পা জোড়া ধাবিত করল বেলকনির উদ্দেশ্যে। ইয়াদ রুম থেকে প্রস্থান করতেই জারা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। সুযোগ বুঝে পালিয়ে গেল ইয়াদের রুম থেকে। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো আজ ইয়াদের সামনে ভুলেও উপস্থিত হবে না। জারা আন্দাজ করতে পারছে ইয়াদের ব্যবহার ভর্ৎসনা স্বরূপ হলেই তার কৃতকর্মে তার প্রতি অধিকার ফলানো স্পষ্ট ফুটে উঠছে। কারণ এই ধরণীর বুকে কোন ব্যক্তি যাকে সবচেয়ে নিকটবর্তী মানুষ ভাবে ঠিক তার উপর দুনিয়ার যত প্রকার অধিকার রয়েছে সবগুলোই প্রয়োগ করে।
_______________

যোহরের আযান দিয়েছে খানিক পূর্বে। ঘরির কাটাতে ছুঁইছুঁই দুটো। মাত্র শাওয়ার নিয়ে মেহেরের রুমে উপস্থিত হয়েছে সমুদ্র। সাড়ে বারোটার নাগাদ মেহেরের জ্বর কিছুটা কমেছিল। সেই সুযোগে সমুদ্র নিজে রান্না করে শাওয়ার নিয়ে পরিপাটি হয়ে এসেছে। এর মাঝে অবশ্য মেহেরের মা সিরাত বেগমের নাম্বারে অনেক বার কল করেছে সে। কিন্তু কেউ কল রিসিভ করেনি। এতে খানিকটা বিরক্ত সমুদ্র। বর্তমানে তার মস্তিষ্ক কার্যকর ক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে বসেছে। কী করবে সে? মেহেরকে কোথায় রাখবে? বিষয়গুলো সমুদ্রের মস্তিষ্কে বারংবার ঘুরপাক খাচ্ছে।
অবশেষে সব চিন্তা ক্ষণিকের জন্য ঝেড়ে ফেলে মেহেরের জন্য খাবার রান্না করেছে সে। প্রথমে মেহেরকে দুপুরের লান্চে কী খাওয়াবে তা বোধগম্য হয়নি সমুদ্রের। পরিশেষে পুনরায় সুপ তৈরি করেছে মেহেরকে খাওয়ানোর জন্য।

বিছানার এক কোণে অবস্থিত ট্রি টেবিলের উপর সুপের বাটিটা রেখে দিল সমুদ্র। মেহেরের পাশে বসে খানিকটা সময় অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো মেহেরের মুখশ্রীতে। ইশ! কী অবস্থা হয়েছে মেয়েটার। সমুদ্র মস্তিষ্ক এখানো অবধি মেহেরকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করতে পারছে না। বারংবার সমুদ্রের কর্ণপাত হচ্ছে ‘এই পুচকির কখনোই তার স্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা নেই’। কিন্তু সমুদ্রের অন্তরাল বলে উঠছে একদম বিপরীত কথা। মেহের যেন সমুদ্রের অন্তারার জুড়ে নিজের মায়াজাল বিছিয়ে দিয়েছে। নাম না জান এক ভয়ঙ্কর অনুভূতি আবির্ভাব ঘটছে সমুদ্রের হৃদয় গহীনে। কি করবে সমুদ্র ভেবে পাচ্ছে না। ধীরে ধীরে অনুভূতিটা পুরোপুরি ভাবে গ্রাস করে নিচ্ছে তাকে। ফলে ভয়াবহ রণক্ষেত্রের উপস্থিত ঘটেছে তার অন্তারালে। এ যেন সমুদ্রের স্টং মস্তিষ্ক এবং তার অবুঝ মনের যুদ্ধ। এর ফলে ব্যাপক দিশেহারা হয়ে উঠছে সে।
___
বর্তমানে মেহেরকে সুপ খাওয়াতে ব্যস্ত সমুদ্র। মেহেরের জ্বর খানিকটা কমেছে। ডাগর ডাগর চোখ বড্ড কষ্ট করে উন্মুক্ত রেখেছে মেহের। সে এতোটাই দুর্বল যে চোখ খুলে রাখতেও কষ্ট হচ্ছে। সকালে বেলা সমুদ্র যে তাকে খাইয়ে দিয়েছে বিষয়টা তখন অনুভব করতে না পারলে এখন ঠিকই বুঝতে পারছে। সমুদ্র যে তাকে খাইয়ে দিচ্ছে বিষয়টা তার নিকট অত্যধিক বিষ্ময়কর লাগছে। সে ভাবছে হয়তো এই ঘটনাটা তার অবুঝ কল্পনা। আদৌ কী কখনওই সম্ভব যে সমুদ্র তাকে খাইয়ে দিবে ! স্বপ্ন ভেবে মেহের খাবার প্রয়াস চালাচ্ছে। খেতে তার খুব কষ্ট হচ্ছে। এক কথাই প্রচুর বমি পাচ্ছে। কিন্তু তার মস্তিষ্ক বলে উঠছে ‘আর খাব না ‘এই বাক্যটা মুখ দিয়ে নির্গত করলে তার স্বপ্ন চিরতরে বিদায় নিবে। এতো সুন্দর মুহূর্ত যে মেহের হারাতে চাই না। তাই কষ্ট করে সুপ গিলছে। জোর করে নেত্রপলব উন্মুক্ত রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে সে। সমুদ্রকে দেখে বেহায়াতে পরিনত হয়েছে তার চোখ জোড়া। অবাধ্য দৃষ্টিপাত পড়ে রয়েছে সমুদ্রের মুখশ্রীতে। কতোই না মাধুর্যপূর্ণ রুপ ধারণ করেছে সমুদ্রের মুখশ্রী। আজ যেন সমুদ্রের নিত্যদিনের ভয়ঙ্কর গম্ভীর মুখের সন্ধান মিলছে না। মেহের এই বিশেষ মুহূর্তটা ধরে রাখতে ব্যর্থ হলো। খাওয়া মাঝেই অদ্ভুত ঘটনা ঘটিয়ে বসল। একটা সময় সে আর গলা দিয়ে সুপ নামাতে পারল না। তার পাকস্হলীর পরিপাক রত সুপ সজোরে মুখ দিয়ে বাইরে নিক্ষেপ করে ফেলল। সম্পূর্ণ বমি ফ্লোরে কিংবা বিছানার উপর না পড়ে একেবারে সমুদ্রের গায়ের উপরে পড়ল। সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্র বিছানা উঠে দাঁড়াল। নিজের অবস্থা লক্ষ্য না করে দ্রুত মেহেরের কপালে হাত দিয়ে আঁকড়ে ধরল। আরের ডলক গলগল করে বমি করল মেহের। এবার সমুদ্র গায়ে পড়ে নি। অতঃপর বমি শেষ হওয়ার পর সমুদ্র মেহেরকে স্বল্প পানি খাইয়ে দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে দিল। মেহেরের গায়ে কম্বল দিয়ে আবৃত করে উঠে দাঁড়াল সে।

নিজের পরিস্থিতি বুঝে উঠতে পারি নি সমুদ্র। ফ্লোরের দিকে একপলক দৃষ্টি নিক্ষেপ করল সে। মুহূর্তেই তার মনে হলো তার গা চিপচিপে ভিজে উঠেছে। তৎক্ষণাৎ শার্টের দিকে দৃষ্টিপাত ফেলল সে। তার পুরো শার্ট মেহেরের বমি দ্বারা ভিজে উঠেছে। শুধু গা নয় গলা এবং মুখেও খানিকটা ছিটে এসে পড়েছে। নিজের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতেই স্তম্ভিত হয়ে উঠল সমুদ্র। সে একজন সিআইডি অফিসার হওয়ার সত্বেও তার ঘিনঘিন ভাবটা বরাবরই একটু বেশি। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে মেহেরের বমিতে একটু ঘিনঘিন ফিলিন্স হচ্ছে না তার! সমুদ্র মেহেরের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করল। অতঃপর ফ্লোর পরিস্কার করে নিজ রুমে চলো এলো। গায়ে শার্ট ওয়াশিং মেশিনে ফেলে আলমারি থেকে পরিষ্কার শার্ট বের করে পড়ে নিলো। বিষয়টা অদ্ভুত বৈকি বড্ড অদ্ভুত। সমুদ্র শাওয়ার ও নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করল না। কিন্তু কিছুদিন পূর্বে আকাশ তাকে ইচ্ছে করে কাঁদা দিয়ে বাজে ভাবে মাখিয়ে দিয়েছিল। সেদিন দু তিন বার শাওয়ার নিয়েছিল সমুদ্র। এমনকি দুই দিন কথা বলে নি আকাশের সঙ্গে। খোঁজ নিলে সমুদ্রে সেই শার্টা পৃথিবীতে পাওয়া যাবে কী সন্দেহ! সেদিনের এর পর আর ওই কাঁদা মাখা শার্ট সমুদ্র গায়ে দেয়নি।
_______________

রাতের খাওয়া শেষ করে ড্রইং রুম গোছানো ব্যস্ত জারা। তার শাশুড়ি আম্মু এবং রাফু সোফার উপর বসে আছেন। রাফু বারংবার তাকে বলছে আজ রাতে ড্রইং রুমে তার জন্যে অপেক্ষা করতে। তার সাথে নাকি জরুরি কথা আছে রাফুর। রাফুর সঙ্গে পূর্ব পরিচিত হওয়ার ফলে জারা বিষয়টা স্বাভাবিক নিয়েছে। কথাটা রাফু ইসরাত বেগমে অগোচরে বলেছে। জারার হ্যাঁ বললেও ইয়াদকে জানানোর প্রয়োজন বোধ করেনি। ভেবে রেখেছি শাশুড়ি আম্মুকে রুমে রেখে একবার ড্রইং রুমে আসবে রাফুর সাথে দেখা করতে। তারও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার আছে রাফুকে। তাই ইসরাত বেগমকে রুমে দিতে জারা তার হুইল চেয়ার ধরে কিছুদূর ধাবিত হলো। কিন্তু রুমে পৌঁছানোর পূর্বে ই ইয়াদ দ্রুত পদে ড্রইং রুমে এসে হাজির হয়। তৎক্ষণাৎ টেবিলের উপর থেকে এক গ্লাস পানি খেয়ে জারার উদ্দেশ্য বলতে লাগল,

–জারা পাঁচ মিনিটের মধ্যে আমার রুমে এসো। আর হ্যাঁ আম্মু আজকে জারার আমার সঙ্গে থাকবে। দেরি যেন না হয়!

(চলবে)
[রিচেক দেইনি দেরি হওয়ায় জন্য দুঃখিত]

#তুমি_নামক_অনুভূতি
#পর্ব:২৪
#Lutful_Mehijabin (লেখা)

–জারা পাঁচ মিনিটের মধ্যে আমার রুমে এসো। আর হ্যাঁ আম্মু, আজকে জারা আমার সঙ্গে থাকবে। দেরি যেন না হয়!

ইয়াদের বলা বাক্যগুলো জারার কর্ণকুহরে পৌঁছান মাত্রই থতমত হয়ে পড়ল সে। ভয়ের ছাপ স্পষ্ট ফুটে উঠল জারার মুখশ্রীতে। কথাগুলো বলে এক মূহুর্তের জন্যও ড্রইং রুমে উপস্থিত থাকে নি ইয়াদ। সঙ্গে সঙ্গে নিজের রুমে যাবার উদ্দেশ্যে পা যুগল প্রসারিত করেছে ইয়াদ। ড্রইং রুম হতে ইয়াদ প্রস্থান করার পর, জারা একপলক রাফুর দিকে অসহায় দৃষ্টিপাত নিক্ষেপ করল। অতঃপর মলিন কন্ঠে রাফু উদ্দেশ্য বলে উঠল,

–ভাইয়া আপনি যান গিয়ে শুয়ে পড়ুন।

রাফু কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে গেল। জারার কথার সম্মতি জানিয়ে অতঃপর রাফু ড্রইং রুম হতে প্রস্থান করল। তৎক্ষণাৎ জারা পরাপর দুটো লম্বা নিশ্বাস ত্যাগ করে ইসরাত বেগমকে রুমে নিয়ে এলেন। শাশুড়ি মাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে, অপরাধীর ন্যায় নিজেও এক কোণে শুয়ে পড়ল। বিষয়টা পরিলক্ষিত করে ইসরাত বেগম জারার উপর খানিকটা রেগে গেলেন। তৎক্ষণাৎ তিনি আস্তে করে শুয়া থেকে উঠে বসলেন। নিজ মুখশ্রীতে একরাশ রাগের আবির্ভাব বজায় রেখে জারার দিকে মুখ ফিরে আধশোয়া হয়ে বসে পড়লেন। জারার মুখশ্রীতে কঠোর দৃষ্টিপাত আবদ্ধ করে, তাকে চোখের ইশারায় ইয়াদের রুমে যাওয়ার জন্য আদেশ করলেন। জারা শাশুড়ির অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে নিজেও উঠে বসল। অতঃপর নতজানু হয়ে ঠোঁট জোড়া হাল্কা সংকুচিত করে মিনমিন কন্ঠে বলে উঠল,

–আম্মু না গেলে হয় না। প্লিজ,,, ভয় পাই তো।

জারার কথার প্রেক্ষিতে নিশ্চুপ হয়ে রইলেন ইসরাত বেগম। তৎক্ষণাৎ খাটের ড্রয়ার থেকে খাতা কলম বের করে কিছু একটা লিখতে আরম্ভ করল তিনি। লিখা শেষ হলে জারার হাতে খাতাটা ধরিয়ে দিয়ে উল্টে দিকে মুখ করে শুয়ে পড়লেন। জারা ইসরাত বেগমের ভাব ভঙ্গি দেখে বুঝতে পারল তার শাশুড়ি আম্মু তার উপর খুব রেগে গিয়েছেন । এতে কিছুটা দুঃখ পেল সে। মুহূর্তে খাতাটার দিকে লক্ষ্য করে দেখতে লাগল কী লিখেছেন ইসরাত বেগম। জারা তার শাশুড়ি আম্মুর সম্পূর্ণ লেখনী মনোযোগ সহকারে পড়তে লাগল। লেখনীর অক্ষরে অক্ষরে স্পষ্ট ভর্ৎসনা ফুটে উঠেছে। ইসরাত বেগম ক্রোধের সহিত লিখেছেন,

–তুমি তোমার স্বামীকে দেখে ভয় পাচ্ছে কেন! তুমি কি এখনো অবধি বড় হও নি? আমার তো মনে হয় তোমার চেয়ে মেহের বেশী বুদ্ধিমান। দেখ আমি কোন কথা শুনতে চাই না। তুমি এখন চুপচাপ ভদ্র মেয়ের মতো ইয়াদের রুমে যাবে এটা আমার অডার। তুমি যদি না যাও তাহলে আমার চেয়ে খারাপ আর কেউ হবে না।

লেখাগুলো পড়ে তার মনটা ভীষণ বিষণ্ণ হয়ে উঠল জারার। তার মুখশ্রী গভীর ভাবে মলিন হয়ে উঠল। শাশুড়ি মায়ের আদেশ পালন করতে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায়ে পড়ল সে। কপালের সীমান্ত পর্যন্ত ঘোমটা টেনে আবৃত করে ইয়াদের রুমে যাওয়ার উদ্দেশ্য পা জোড়া ধাবিত করল। রুম থেকে বের হওয়ার পূর্বে জারা নিজ ঠোঁট জোড়া সংকুচিত করে নিম্ন কন্ঠে শাশুড়ি মায়ের উদ্দেশ্য বলল,

–ঠিক আছে যাচ্ছি। রেগ না প্লিজ।

জারার রুম থেকে প্রস্থান করার পর ইসরাত বেগম স্বস্তির নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। ঠোঁটের কোণে কিঞ্চিৎ হাসির রেখা ফুটিয়ে রেখে নিশ্চিতে চোখ জোড়া বন্ধ করে ফেললেন।
______

ভীতি গ্রাস্ত মুখশ্রী নিয়ে ইয়াদের রুমে প্রবেশ করল জারা। তার বক্ষ পিন্জরের হৃদয় স্পন্দন তড়িৎ বেগে ছুটতে আরম্ভ করছে। বারংবার ইয়াদের নিকট উপস্থিত হলেই জারার হৃদয় স্পন্দন অবাধ্য হয়ে পড়ে! কেন যে সে এমন অস্থির অনুভূতিতে আক্রান্ত হয় তা তার নিকট অজানা। ইয়াদের রুমের ভেতর উপস্থিত হতেই জারার বুকের ভেতর ধ্বক করে উঠল। পুরো রুমে জুড়ে অন্ধকার বিরাজমান। কিন্তু বেলকনি হতে নির্গত স্বল্প আলোতে রুমে প্রতিটি বস্তুই দৃশ্যমান। জারা দৃষ্টি মেলে রুম রুম পর্যবেক্ষণ করতে লাগল। কিন্তু রুমের মধ্যে কোন জন মানবের চিহ্ন পেল না। ইয়াদের দেখা না পেয়ে, প্রায় মিনিট পাঁচেক দিশেহারা হয়ে চুপ করে রইল। খানিকক্ষণ পর তার দৃষ্টি পড়ল বেলকনির দিকে। বেলকনির ইয়াদের উপস্থিতি দেখে থতমত হয়ে পড়ল সে। ইশ! এতো শীতল পরিবেশেও লোকটা গায়ে শুধু মাত্র একটা টি শার্ট পড়ে রয়েছে। লোকটার শরীরে কী শীত লাগছে না? জারা আশ্চর্যের পাশাপাশি খানিকটা চিন্তিত হয়ে উঠল ইয়াদকে নিয়ে। বুকে একরাশ সাহস যুগিয়ে ধীর পায়ে বেলকনিতে উপস্থিত হলো। পরক্ষণেই তার মনে পড়ল, ইয়াদ একজন আর্মি। তাই হয়তো তার দেহে শীত অনুভব হয় না। কথাটা জারার মস্তিষ্কে ভেসে উঠতেই তার ঠোঁটের কোণে স্বল্প হাসির রেখে ফুটে উঠল। ইশ, কতোই না মাধুর্যপূর্ণ লাগছে তার আর্মি পুরুষকে! কিছুটা সময় অপলক দৃষ্টিতে ইয়াদের মুখশ্রীতে তাকিয়ে রইলো জারা। বেলকনির আবছা আলোতে অত্যধিক মহোনীয় লাগছে ইয়াদকে। বেলকনির গ্রীল হাত জোড়া দিয়ে স্পর্শ করে রয়েছে ইয়াদ। তার দৃষ্টি নিবন্ধ রয়েছে রাত্রির অন্ধকার আকাশ পানে। নিস্তব্ধ রুপ ধারণ করেছে কোলাহল পূর্ণ ব্যস্ত শহরটা। ইয়াদের বেলকনি থেকে আশেপাশে কয়েকটা উঁচু এপার্টমেন্টের বেলকনিতে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক বাতির উজ্জ্বলতার আলো দৃষ্টিমান হচ্ছে। প্রকৃতি তার সিদ্ধ শীতল বাতাসে গ্রাস করে নিয়েছে অন্ধকার শহরটাতে। ইয়াদের এপার্টমেন্টটা মেইন রোড হতে খানিকটা ভিতরে তাই চলন্ত গাড়ির দেখা মিলছে না। শীতার্দ্র প্রবাহে চারপাশ বিন্দু বিন্দু শিশির ভেজা স্নিগ্ধ জলে হাল্কা ভিজে উঠেছে। ঘন কুয়াশায় দুই হাত দূরের জিনিসও দেখা দুষ্কর। সবকিছু যেন কুয়াশার শুভ্র চাদরে ঢাকা পড়েছে। উষ্ণ চাদরে যখন সবাই আবৃত, ঠিক তখনই দুজন মানুষ পাশাপাশি দাঁড়িয়ে নিস্তবদ্ধতা বজায় রাখতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। জারার দৃঢ় দৃষ্টি এখনও অব্দি ইয়াদের মুখশ্রীতে নিবন্ধ। প্রায় মিনিট পাঁচেক পর হঠাৎ নিরবতা ভেঙে ফেলল ইয়াদ। আকাশের দিকে চোখ জোড়া আবদ্ধ রেখে গম্ভীর কন্ঠ বলে উঠল,

–জারা, আই নিড ইউয়ার টাইম।

আকস্মিক ইয়াদের মুখ হতে নির্গত ছোট বাক্যটা কর্ণপাত হতেই শিউরে উঠল জারা। আঁতকে উঠল সে। চরম বিষ্মম যেন তাকে চেপে ধরেছে। ইয়াদ যে তাকে এমন কোন কথা বলতে পারে বিষয়টা বিশ্বাস করতে পারছে না সে। বিষ্ময়ে তার ঠোঁট জোড়া ফাঁক হয়ে পড়েছে। জারা স্তম্ভিত নয়নে তাকিয়ে রয়েছে ইয়াদের দিকে। বিষ্ময়ের ধকল কেটে উঠার পূর্বেই ইয়াদ আবার বলে উঠল,

–তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে। কিন্তু উপহারটা পেতে হলে তোমাকে একটা শর্ত রাখতে হবে। রাজি তো?

ইয়াদের কথার প্রত্যুত্তরে নিশ্চুপ রইল জারা। ইয়াদ পুনরায় গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠল,

–আচ্ছা তোমাকে শর্ত পূরণ করতে হবে না। শুধু মাত্র আমার আদেশ মনে করে কথাটা রাখবে তুমি। তুমি মনে কর না এই সাহিল হোসাইন ইয়াদ কাউকে অনুরোধ করবে! আমি এতোটাও নিচু নই।

ইয়াদের শর্তের কথা ভেবেই খানিক অস্থির হয়ে উঠল জারা। ইয়াদের বলা প্রথম বাক্য শুনে সে ভেবেছিল ইয়াদ হাজারটা শর্ত দিলেও সে মান্য করবে। এর বিনিময়ে কোন উপহার চাই না তার। ইয়াদ বললে সে প্রাণ উজার করে দিতেই রাজি। কিন্তু শেষোক্ত কথাটা শুনে তার মনে হয়েছে তার আর্মি পুরুষ তাকে একদমই সহ্য করতে পারে না। বিষয়টা তার অন্তারালে ঝড় তুলতে সক্ষম হয়েছে। বিষণ্ণ মন নিয়ে জারা ঠোঁট জোড়া প্রসারিত করে মিনমিন কন্ঠে বলল,

–কী করতে হবে বলুন।

জারার কথাটা শুনে আকাশ পানে থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিল ইয়াদ। চোয়াল শক্ত করে চোখ যুগল বুঁজে রইলো। সেকেন্ড পাঁচেক নিরবা পালন করে অতঃপর তাচ্ছিল্য স্বরে বলে উঠল,

–না তোমাকে তেমন কিছুই করতে হবে না। শুধু মাত্র এই দুটো দিন তুমি আমার রুমে থাকবে।

এই যেন অনুরোধ নয় এক প্রকার ভর্ৎসনা। জারা বুঝতে পারল না লোকটা এমন আজব চরিত্রের কেন! সামান্য একটা বিষয় তাকে এভাবে বলল? জারা স্তব্ধ হয়ে ইয়াদের মুখ পানে তাকিয়ে রইল।
তার হৃদয় গহীন অদ্ভুত ভালোলাগার অনুভূতি হাজির হলো। যে লোকটা কিছুদিন আগেও তাকে রুমের আসে পাশে চাপতে দিন না আজ সেই তাকে রুমে থাকার কথা বলছে!

এভাবেই একরাশ অদ্ভুত অনুভূতি যুক্ত মুহূর্ত অতিক্রম করল জারা। তার মনটা আজ বড্ড আনন্দিত! খানিক বাদে ইয়াদ পকেট থেকে তার পকেটে হতে একটা পারসেল বের করল। অতঃপর প্যাকেটা জারার হাতে দিয়ে বলল,

–এটা নেও।

জারা মুখে আনন্দের ভাব স্পষ্ট ফুটে উঠেছে! স্বল্প পরিসরে ইতস্তত বোধ হচ্ছে তার। কিন্তু দ্বিধা, সংকোচ ঝেড়ে ফেলে আস্তে করে ইয়াদের হাত থেকে প্যাকেটটা নিয়ে নিলো। পারসেলটার আকার আকৃতি দেখে সে পরিষ্কার হলো এর মধ্যে নতুন কোন ফোন বিদ্যমান। পারসেলটা হাতে করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে মুচকি মুচকি হাসতে লাগল জারা। সময় যেন তাদের দুজনের মনের মতোই চলছিল। কিন্তু মাঝখানে একটা বিপত্তি ঘটে গেল। আকস্মিক ইয়াদ ভয়ঙ্কর দৃষ্টিতে জারার মুখশ্রীতে দৃষ্টিপাত ফেলল। হঠাৎ করে ইয়াদ তার চোখ জোড়া বড় বড় করে মুখ দিয়ে অস্কুটস্বরে,,,

(চলবে)

[ রিচেক দেই নি ।ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]