তুমি রবে নীরবে পর্ব-৩৩+৩৪

0
15
তুমি রবে নীরবে

#তুমি_রবে_নীরবে (৩৩)
~নাদিয়া সাউদ

দুপুরের খাবার খাইয়ে তবেই বেয়ানকে ছেড়েছেন শারমিন বেগম। সবটা রান্না করেছে কুহু। জুলেখা এটাসেটা এগিয়ে দিয়েছে। শাশুড়িকে রান্নাঘরে উঁকি পর্যন্ত দিতে দেয়নি। কুহুর এই আঁটসাঁট বেঁধে সংসারী হওয়াটা ভীষণ ভালো লেগেছে শারমিন বেগমের। অনেকদিন বাদে আজ মন খুলে গল্প করেছেন তিনি। সারাক্ষণ কাজ আর চার দেওয়ালে বন্ধীই কাটে। খাওয়া শেষ করেই রুমে এসে শুয়ে আছে কুহু। জ্বরটা আবারো বোধহয় মাথাচাড়া দিতে চাচ্ছে। দূর্বল লাগছে গা। অত্যল্পকালে নিদ্রার সায়রে ডুবল সে।

,

সন্ধ্যা পেরিয়েছে কিছুক্ষণ পূর্বে। অনেকটা মন খারাপ নিয়েই বাড়ি ফিরেছে রিশা। ফ্ল্যাটে রাতিম ভাইয়ের বন্ধুদের থেকে যতদূর জানতে পেরেছিল সে হুট করেই কাউকে কিছু না জানিয়ে গ্রামে চলে গেছে। রিশার মতো তারাও ফোন করে বন্ধ পাচ্ছে। চিন্তায় ভেতর অস্থির হয়ে উঠলো। কোনো অঘটন ঘটেছে ভেবে দুশ্চিন্তা বাড়লো। সম্ভব হলে গ্রামেই ছুটে চলে যেত রিশা। এই প্রথম অনুভব করলো কেমন দমবন্ধ লাগছে তার। খাটে বসে ছিল কুহু। দরজার পাশ দিয়ে রিশাকে যেতে দেখে ডাকলো জোড়ালো স্বরে। অন্যমনস্ক রিশা বোধহয় খেয়ালই করেনি। পাল্টা আর ডাকলো না কুহু। জ্বরের ঔষধ নেওয়ার জন্য উঠলো। রওনক ভাই ফিরে যদি দেখে তার গা গরম তাহলে নির্ঘাত লঙ্কাকাণ্ড ঘটিয়ে দেবে। দ্রুত ঔষধ খেয়ে বেরিয়ে আসলো রুম থেকে। রিশার রুমের কাছে আসতেই দেখলো ফোনে গভীর মনোযোগী।

“কিরে রিশু? ডাকলাম শুনলি না কেন? আমি কখন থেকে তোর অপেক্ষা করছি। আজকে ভার্সিটিতে কি কি হলো শুনবো বলে।

কুহুর রিনরিনে স্বর শুনে দৃষ্টি তুলে তাকালো রিশা। থতমত খেল খানিক। কি জবাব দেবে এখন? সে তো গুছিয়ে মিথ্যাও বলতে জানে না। তাছাড়া রূপসা, নয়ন, আরিয়ান আর সোহাকে ফোন করলেই জানতে পারবে রিশা আজ যায়নি। হাসার চেষ্টা করে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় রিশা। ফ্রেশ হওয়ার জন্য ড্রয়ার থেকে জামা বের করতে করতে বলে,

” কি জানিসতো কুহু, পরোপকারী করতে গিয়ে ঝামেলার মধ্যে ফেঁসে গেছি। একটু শিশু আশ্রমে গিয়েছিলাম। বাচ্চাদের সঙ্গে সময় কাটাতে গিয়ে ভার্সিটির কথা ভুলে গেলাম।

কুহুর খুশি মুখখানা চুপসে গেল মুহূর্তে। রিশাকে প্রায়ই দেখত রাস্তায় অসহায় বাচ্চাদের সাহায্য করতে। টাকা, খাবার যা দিয়ে সম্ভব হতো। কথাটা বিশ্বাস করে প্রস্থান করলো সে। রিশা স্বস্তির শ্বাস ফেলল। মিথ্যা টা বলতে রীতিমতো ঘাম ঝরে গেছে। রাতিমের কথাটা কুহুকে বলতে না পেরেও শান্তি পাচ্ছে না। যদি এতসব ঝামেলা না থাকতো তবে কবেই জানিয়ে দিত রিশা।

◼️
কুহু রুমে আসতেই দেখলো ফোন বাজছে খাটের উপর। সোহার ফোন। অবশ্য সকালের দিকে আরিয়ান ফোন করেছিল যাওয়ার জন্য। অসুস্থতার দোহাই দিয়ে না করে দিয়েছিল কুহু। এগিয়ে এসে ফোন রিসিভ করে কানে জড়াল। ওপাশ থেকে ঝড়ের গতিতে ধেঁয়ে আসলো কতগুলো কথা। সবাই কুহুর উপর ভীষণ অভিমান করেছে। বিশেষ করে সোহা। সে এই প্রথম নৃত্য করেছিল। স্টেজে এত মানুষের মাঝে নার্ভাসনেস বেড়ে গিয়েছিল খুব। আরিয়ান খুব সুন্দর ভাবেই সামলে নিয়েছে। অথচ কুহু দেখতে পারেনি ভেবে খারাপ লাগছে তার। কুহু স্বান্তনা দিল। আফসোস করলো খুব। সোহার কথা শুনে সত্যিই মনস্তাপ হচ্ছে। হুট করেই সোহা জানালো তারা সবাই কুহুর বাড়ি যাচ্ছে। সবার পারফরম্যান্সের ভিডিও দেখাতে। আর অসুস্থ কুহুকে দেখতে। সোহার কথা শুনে আৎকে উঠলো কুহু। সে তো শশুড় বাড়িতে! সবাই জানে না তার বিয়ে হয়ে গেছে! বাড়িতে গেলেই জানাজানি হয়ে যাবে! কোনোরকম তুতলে বলল কুহু,

“শো,,,,শোন সোহা। আমি তো হসপিটালে। বাসায় কেউ নেই।দুদিন পর যাচ্ছিই তো ভার্সিটিতে। তখনই না হয় দেখব। আর সব গল্পও শুনবো।

কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বলল সোহা,

” আচ্ছা। দেখলি তোকে ফোন না করলে জানতেই পারতাম না তুই বাড়িতে নেই। অযথা খালি বাড়িতে যেতাম! এদিকে আরিয়ান বলছিল তোকে সারপ্রাইজ দিবে। ভাগ্যিস যাইনি। নয়তো আমরাই সারপ্রাইজড হয়ে যেতাম।

“হু,,হ্যাঁ হ্যাঁ।

খানিক গলা খাঁকারি দিয়ে বলল সোহা,

” আরেকটা কথা কুহু। তুই তো বিশাল কিছু মিস করে ফেললি রে! আজকে রওনক স্যারের স্বাগত ভাষণ টা খুব সুন্দর ছিল। সাথে তাল মেলাচ্ছিল শাহিনূর মাহি ম্যাম। তারপর শেষে দু’জন নৃত্যও করেছিল। কি দারুণ মানিয়েছিল তাদের! দুঃখের বিষয় হচ্ছে এটা ভিডিও করতে পারিনি।

শেষের কথা শুনে কুহু ভয়ানক রেগে গেল। তেলেবেগুনে জ্বলে উঠল।

“কি বলছিস? রওনক স্যার নেচেছে? ওই শাঁকচুন্নির সাথে? আজকে আমি খবর করে ফেলবো।

” কি বললি? কার খবর করবি? তাছাড়া তুই হঠাৎ এমন রেগে গেলি কেন?

কুহুর টনক নড়লো সে কি বলে ফেলেছে। “কিছুনা” বলে ফোন কেটে দিল। খাটে ফোন ছুঁড়ে ফেলে ফ্যাচফ্যাচ করে কেঁদে ফেলল। ফোন হাতে নিয়ে চারজন অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো। কোমড়ে হাত রেখে বলল রূপসা,

“দেখলি মহারানী ডুবে ডুবে জল খাচ্ছে আর আমরা কেউ টেরই পেলাম না! একেবারে বিয়ে করে ফেলল। আর ভার্সিটিতে আসলে একেবারে যেন স্যারের ছাত্রী হয়ে যেত।

আরিয়ান বলল,

” তোরা তো কুহুকে আগে ফোন করে তারপর আসতে চেয়েছিলি। যদি না বলে আসতাম তাহলে কি এত বড় খবরটা জানতে পারতাম বল?

নয়ন বলল,

“আমি ভাবছি ওই রাগী স্যারের সঙ্গে আমাদের কুহু দিনের পর কাটাচ্ছে কিভাবে? স্যারকে দেখলেই তো সবাই সেঁধিয়ে থাকে। আর আজকে সোহা যেই ঝামেলা বাঁধিয়ে দিয়েছে দুজনের মধ্যে না জানি কি হয়।

সোহা বলল,

” তুই চুপ থাকতো। আমরা কি জানি নাকি কুহুর হাসবেন্ড যে রওনক স্যার? তাই একটু মিথ্যে বলে জগড়া বাঁধিয়ে দিলাম।

নয়ন বলল,

“স্যারের মুখের উপর জবাব দিতে পারবে তো কুহু?

রূপসা বলল,

” জামাই যদি অন্য মেয়েদের সাথে হাসিমুখে কথা বলে তাহলে কোনো বউ সেটা সহ্য করবে না বুঝলি। আমাদের কাছে সে স্যার। কিন্তু কুহুর তো জামাই! তার নিশ্চয়ই ভয়টয় নেই অত।

আরিয়ান তপ্ত শ্বাস ফেলে বলল,

“আমি তো ভাবছি আমরা কেউই বুঝতে পারলাম না? ভার্সিটিতে স্যার তো এমন ভাব করে থাকতো যেন কুহু তার ছাত্রী ছাড়া কিছুই না। মাঝেমধ্যে কুহুর সাথে কথা বললে স্যার তখনই হাজির হয়ে যেত। যেই না আমরা একসঙ্গে নৃত্য করবো বলেছি তখনই স্যার এসে একগাদা কথা শোনালো আমাকে! তখনো আমার মোটা মাথায় কিছু প্রবেশ করেনি।

সোহা বলল,

” কিভাবে প্রবেশ করবে বল? আমরা তো স্বপ্নেও ভাবিনি রওনক স্যার কুহুকে বিয়ে করবে! ভাই এখনো স্বপ্ন মনে হচ্ছে। এত রাগী স্যার, প্রেমের বিয়ে হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না।

নয়ন বলল,

“ভাব একবার। বাসর রাতে কুহু যদি স্যারের কথা না শুনে থাকে তাহলে নির্ঘাত ধমকে দিয়েছে! নয়তো পানিশমেন্ট!

আরিয়ান বলল,

” তোরা কি গবেষণা করে যাবি নাকি বাসায় যাবি? বাকিটা আমাদের বুঝে নিতে হবে। কথা কিভাবে বের করতে হয় সেটাও জানা আছে। তোরা শুধু দ্যাখ আগে আগে কি হয়।

কুহুর বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে চারজন গোল মিটিং করছিল এতক্ষণ যাবৎ। কখন রাত হয়েছে কারোরই বোধহয় খেয়াল নেই। আজকে কুহুর বাড়িতে এসে সত্যিই সারপ্রাইজড সবাই।

◼️
জানালার কাছে বসে আছে কুহু। ঘরের আলো নেভানো। অন্যদিনের তুলনায় আজকে যেন একটু বেশিই দেরি করছে রওনক ভাই। মনে সন্দেহ পাহাড় সম আকার ধারণ করছে। ভাবনার মাঝেই ঘরের আলো জ্বলে উঠল। কুহু ঘাড় ঘুরালো না। চেনা পারফিউমের ঘ্রাণে অনুভব করে নিল রওনকের উপস্থিতি। হাত ঘড়ি খুলতে খুলতে কুহুর দিকে একপলক তাকাল রওনক। গলা ঝেড়ে কেশে নিজের উপস্থিতি জানান দিল। কুহুর কোনো ভাবান্তর হলো না। মন খারাপ এটুকু যেন চট করেই বুঝে ফেলল রওনক। কারণ কি বুঝে উঠতে পারলো না। ফ্রেশ হতে চলে গেল সে। কুহু ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল। রওনক তাকে এড়িয়ে গেল ভাবতেই অবাক হলো! ড্রেসিং টেবিলের কাছে রওনকের ফোনটা বেজে উঠলো। তড়িঘড়ি করে নেমে গেল কুহু। স্ক্রিনে শাহিনূর মাহি ম্যামের নাম। ততক্ষণে রওনক চলে আসলো খোলা শার্ট নিয়ে। কুহুর কাছে জানতে চাইলো কে কল করেছে। ফোন নিজের হাতে রেখেই বলল কুহু,

“আপনার কোনো শুভাকাঙ্ক্ষী হবে হয়তো। পছন্দের মানুষও হতে পারে।

কুহুর কথায় ভ্রু কুঁচকে গেল রওনকের। কথার লাইন বাঁকা মনে হচ্ছে। আজকেই শাহিনূর মাহি তার ফোন নাম্বারটা নিয়েছিল। আগাম ঝড়ের পূর্বাভাস আঁচ করতে পারলো রওনক। একটুখানি বাঁকা হেসে কুহুকে টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল। চোখ জুড়ে এক অন্যরকম ঘোর! শক্ত চোখেমুখে রওনকের পানে তাকিয়ে রইল কুহু। তার দু’হাতে ঠেকলো লোমশ বুকে। কুহুর কপালে পড়ে থাকা চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে দিয়ে বলল রওনক,

” আমার শুভাকাঙ্ক্ষী, পছন্দের মানুষ সবটাই তো তুমি বউ! অন্য কোথাও চোখ দেওয়ার সময় আছে নাকি আমার? সারাদিন খুব মিস করেছি।

রওনকের উন্মুক্ত বুকে আঘাত করে বলল কুহু,

“তাই? তা আজকের দিনটি কেমন কাঁটলো? বিশেষ করে শাহিনূর মাহি ম্যামের সঙ্গে যখন নেচেছেন?

রওনকের কপাল ভাজ পরলো। কি সব উল্টাপাল্টা কথা বলছে এই নির্বোধ মেয়ে? নাকি রওনককে বাজাতে চাইছে?

“আচ্ছা রানী সাহেবা এবার বলুন তো আপনি রাগ কেন? আজকে ভার্সিটিতে যেতে দেইনি তাই? এই জন্য নির্দোষ আমাকে আপনি ভুলভাল বলে ফাঁসিয়ে দিতে চাচ্ছেন?

” কথা একদম ঘোরাবেন না রওনক ভাই! কি ভেবেছেন আমি খোঁজ পাব না?

“কাল রাতের জ্বরে কি মাথার স্ক্রু ঢিলে হয়ে গেছে তোমার? কি সব বলছো তখন থেকে?

” আপনি শাহিনূর মাহি ম্যামের সঙ্গে কেন নাচলেন তার কৈফিয়ত দিন।

তপ্ত শ্বাস ফেলে বলল রওনক,

“তুমি আসলেই একটা মাথা মোটা মেয়ে। কোথাও দেখেছ এমন অনুষ্ঠানে স্যার আর ম্যামেরা নাচে? আমাকে ফাঁসানোর আর কোনো বুদ্ধি পেলে না? অবশ্য ঘটে বুদ্ধি থাকলে তো!

কুহু ভাবনায় পরলো। ঠিকই তো! এটা তো সে ভাবেইনি। সে আজকে ভার্সিটিতে যায়নি তাই হয়তো সোহা ওরা মিথ্যে বলেছে। এমন কিছু ঘটলে অবশ্যই ভিডিও করে রাখতো তারা। ভাবুক কুহুর দিকে কিয়ৎক্ষণ তাকিয়ে থেকে অধরোষ্ঠ দখল করে নিল রওনক। চমকে উঠলো কুহু। রওনকের ভারী নিশ্বাস ছড়িয়ে গেল তার সম্পূর্ণ মুখাবয়বে। মনে মনে সোহাদের প্রতি ভীষণ রাগ হলো। সবকয়টাকে একবার সামনে পেলে উচিত শিক্ষা দিয়ে ছাড়বে! এদিকে অযথাই চোখের জল ফেলেছে কুহু। গলায় গভীর স্পর্শ পেতেই ভাবনার জাল ছিন্ন হলো কুহুর। রওনক যেন মুহূর্তেই হারিয়ে যেতে থাকলো কুহুর মাঝে। ভয়ানক এক অনুভূতি মেরুদণ্ড শীতল করে দিল কুহুর। অত্যল্পকালে রওনককে জড়িয়ে নিল সে। হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেল তার। শক্তপোক্ত পুরুষালি স্পর্শে শিরশির করে উঠলো পায়ের তলানি। কোনোরকম বলল সে,

” ফ্রেশ হয়ে আসুন। আমি খাবার দিচ্ছি। দরজা কিন্তু খোলা!

ধাক্কা দিয়ে রওনককে সরিয়ে দিতে চাইলো। একটুও হেলাতে পারলো না। দরজার দিকে তাকিয়ে বলল কুহু,

“আরে রিশু তুই?

মুহূর্তে ছেড়ে দিল রওনক। দরজার কাছে তাকাতেই মনে পরলো সে রুমে ঢোকার সময় দরজা লাগিয়েছিল। কুহু হাসতে হাসতে নুইয়ে গেল। চুলে হাত চালিয়ে নিয়ে বলল রওনক,

” রাত আবি বাকি হ্যায়। সবটা তো সুদেআসলে পূরণ করেই ছাড়বো। তুমি শুধু সময় গুনতে থাকো। আসছি আমি।

◼️
আজকে যেন জুলেখার কাজের চাপ একটু বেশিই।কিছুক্ষণের মাঝেই রিশাকে দেখতে আসবে পাত্রপক্ষ। কুহু নিজের হাতে সবকিছু গুছিয়েছে আজ। রান্নার দিকটাও দেখেছে। ছেলের বউয়ের প্রতি আজ খুশিই শারমিন বেগম। তবে রিশাকে রুম থেকে তেমন বের হতে দেখা গেল না। রাশেদ জামাল ফোন হাতে বসে আছেন। ছেলের বাবা ফোন করলেই তিনি রাস্তা থেকে এগিয়ে নিয়ে আসবেন। বাড়িতে যেন বিয়ে বিয়ে আমেজ চলে এসেছে একটা। কুহু ইচ্ছে করেই রিশার রুমে বেশি একটা যায়নি। মেয়েটার মনে কি চলছে তার জানা। আশফিক ভাইয়ের ঘটনার পর থেকে রিশা কেমন নিশ্চুপ হয়ে গেছে। আগের মতো প্রাণ খুলে হাসে না, কথা বলে না। গুটিয়ে নিয়েছে সবকিছু থেকে নিজেকে। সবকিছু ভাবলে ভীষণ খারাপ লাগে কুহুর। কারো মনের উপর জোড় দেওয়া উচিত নয়। সে নিজেও তো রওনক ভাইকে বিয়ে করতে রাজি ছিল না। পরিস্থিতির কারণে হয়ে গেছে। অথচ এখন মনে হয় এই মানুষটা তার জীবনে না আসলে গোটা জীবনটাই অসম্পূর্ণ থেকে যেত। অনেক সাধনা করেও এমন মানুষ পায়না কেউ! কুহুর বিশ্বাস, রিশার জীবনটাও তার মতো আনন্দময় হয়ে উঠবে। মানুষের জীবনে একতরফা কষ্ট থাকে না। সুখও আসে। আর যা হয় ভালোর জন্যই হয়। সুন্দর সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। রাশেদ জামালের ফোন বেজে উঠতেই কুহুর ভাবনার ঘোর কাটলো। মহা আনন্দ নিয়ে বেরিয়ে গেলেন তিনি। তপ্ত শ্বাস ফেলে নিজের রুমে পা বাড়ালো কুহু। মনে মনে ভীষণ ভাবে চাইল স্বপ্নের মতোই রিশার জীবনটা পাল্টে যাক! ফিরে আসুক আশফিক ভাই। সব ঠিক হয়ে যাক।

,

বন্ধ দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রিশা। চোখ বেয়ে অনর্গল জল পরছে। নিঃশব্দে কাঁদছে আর রাতিমকে ফোন করে যাচ্ছে।বার বার বন্ধ বলছে। হাত দু’টোও অস্বাভাবিক কাঁপছে। বুক ধুকপুক করছে। শেষ মুহূর্তে রাতিম ভাইয়ের মুখ থেকে শুনুক সে তাকে ভালবাসে, তবে এক্ষুনি গিয়ে জোড় গলায় সবকিছু আঁটকে দিবে রিশা। যাবে না পাত্রপক্ষের সামনে। এসব আয়োজন তার দম বন্ধ করে দিচ্ছে। মনে হচ্ছে হাত পা বেঁধে কেউ অশান্ত নদীতে ফেলে দিয়েছে তাকে। ধৈর্য্য বাঁধ মানলো না। নিজ থেকেই রাতিমকে ম্যাসেজ পাঠালো_____

‘আপনার ফোন বন্ধ কেন রাতিম ভাই? আমাকে প্লিজ একবার ফোন করুন। জীবনের এক কঠিন মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আছি আমি। সেদিন কথা কেন অসম্পূর্ণ রেখে চলে গেলেন? আমি অতসব জানতে চাই না। শুধু একটা কথা জানাতে চাই, আমি আপনাকে ভালবেসে ফেলেছি।’

চলবে…….

#তুমি_রবে_নীরবে (৩৪)
~নাদিয়া সাউদ

রাশেদ জামালের হাঁকডাক শোনা গেল। বাড়িতে মেহমানদের পদধূলি পড়েছে বোঝা যাচ্ছে। আজকে বেশ পরিপাটি হয়ে আছেন শারমিন বেগম। সব কাজ জুলেখাকে দেখিয়ে দিয়েছেন। বেশিরভাগটা কুহুই সামলিয়েছে নিজ দায়িত্বে। শরবত হাতে বসার রুমে আসলো কুহু। ছেলের দিকে একবার দৃষ্টি বুলালো। মাথা নিচু করে বেশ ভদ্র ভঙ্গিতে বসে আছে। গালের একপাশে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি দেখা যাচ্ছে। চোখে চশমা এঁটে রাখা। উজ্জ্বল তামাটে গাত্রবর্ণ। সাদা শার্ট পরা। টেবিলের উপর শরবত রেখে চোরা দীর্ঘশ্বাস ফেলল কুহু। মনে একটুও শান্তি পাচ্ছে না। রিশাকে আজ একবারের জন্যও বেরোতে দেখেনি রুম থেকে। পরিস্থিতি শেষ পর্যন্ত কি হয় কে জানে। রাশেদ জামাল বেশ হাসিমুখেই ছেলের বউয়ের পরিচয় দিচ্ছেন। মধ্য বয়স্ক দম্পতিদের সালাম জানিয়ে চলে গেল কুহু। ততক্ষণে জুলেখা হাত ভর্তি খাবারের ট্রে নিয়ে চলে আসলো।

রিশার দরজায় সবে একটা টোকা দিয়েছে কুহু, ওমনি দরজা খুলে গেল। রিশার গায়ে গাঢ় নীল রঙা তাঁতের শাড়ি। সাজসজ্জা ভালোই। কুহু তাজ্জব বনে গেল! স্বাভাবিকই লাগছে রিশাকে। তবে কি মেয়েটা মন থেকে সব মেনে নিয়েছে? হঠাৎ করেই কেমন লাগা ছুঁয়ে দিল কুহুকে। উচ্ছ্বসিত হয়ে রিশার হাত চেপে ধরলো সে। ছেলেটির বর্ননা দিতে লাগলো। কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না রিশা। একটুখানি হাসলো শুধু। মেকআপের আড়ালে কান্না মাখা বিধ্ব-স্ত মুখ কতখানি লুকাতে পেরেছে কে জানে। কিছুক্ষণের মাঝে শারমিন বেগম আসলেন মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। মাথায় বড়োসরো ঘোমটা টেনে নিশ্চুপ মায়ের সঙ্গে চলল রিশা। কন্ঠনালী শক্ত হয়ে আছে কেমন। চোখদুটো আবারও জ্বালা করছে। পেছন পেছন কুহুও আসলো। কিয়ৎক্ষণের মধ্যেই মন মেজাজ ফুরফুরে হয়ে গেল তার। সকলের কথার মাঝে কলিং বেল বেজে উঠলো। বাইরে প্রায় সন্ধ্যা নেমে এসেছে। রওনক এসেছে বুঝতে বাকি নেই কুহুর। দৌড়ে এসে দরজা খুলে দিল সে। রওনক চোখ তুলে তাকাতেই কয়েক সেকেন্ডের জন্য থমকে গেল! কালো রঙা সুতির শাড়ি পরে আছে কুহু। আজকে রিশাকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে বেশ ভালো করেই জানা তার। তবে কুহুকে শাড়ি অবস্থায় দেখবে ভাবেনি। উড়ন্ত চুমু ছুঁড়ে দিল। ইশারায় কুহুকে বোঝালো ভীষণ সুন্দর লাগছে। আচমকা অপ্রস্তুত হয়ে গেল কুহু। দরজা থেকে সরে দাঁড়াতেই ভেতরে প্রবেশ করলো রওনক। বসার ঘরে এসে সবাইকে সালাম দিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেল। দরজার কাছে গিয়ে কুহুকে ডাকলো। খানিক লজ্জা পেল কুহু। সেটুকু সঙ্গোপনে আড়াল করে চলে গেল রুমে। রিশার যেন বসে থাকা ধৈর্য্য কুলচ্ছে না আর। শরীর টলছে মনে হচ্ছে। ছেলের বাবা বললেন, দুজনকে যেন একত্রে কথা বলার সময় দেওয়া হয় একটু। কথাটা কর্নপাত হতেই স্বস্তির শ্বাস ফেলল রিশা। উঠে চলে যেতে যেতে বলল ছাদে আছে সে। মেয়ের এহেন কান্ডে থতমত খেলেন শারমিন বেগম। হাসার চেষ্টা করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলেন।

◼️
ড্রয়ার থেকে রওনকের জন্য শার্ট আর প্যান্ট বের করে নিল কুহু। হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে রওনক। কোমড়ে আঁচল গুঁজে নিয়েছে মেয়েটা। ফর্সা উদর অনেকখানি দেখা যাচ্ছে অনায়াসে! দৃষ্টি সেদিকেই কিয়ৎক্ষণ আঁটকে রইল রওনকের। বেশ ব্যস্ত হাতে এগিয়ে আসলো কুহু। রওনকের হাতে জামাকাপড় ধরিয়ে দিয়ে তাড়া দিল। বাসায় মেহমান বসে আছে। কোনো তোয়াক্কা করলো না রওনক। কুহুর চোখের দিকে দৃষ্টি রেখেই টেনে নিল কাছে। বারকয়েক চোখের পাতা ঝাপটালো কুহু। জিগ্যেসু দৃষ্টি তার। উন্মুক্ত কোমড়ে পেলব স্পর্শ পেতেই চমকে উঠলো! ভ্রু কুঁচকে এলো তার। রওনকের ঠোঁটে বাঁকা হাসি লেপ্টে আছে। তপ্ত শ্বাস ফেলে বলল সে,

“এই মুহূর্তে ভীষণ ভাবে জড়িয়ে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে তোমার সাথে। তোমার এই শাড়ি পরা রূপ আমাকে এলোমেলো করে দিচ্ছে কুহু! আমার পাগলামিতে সামিল হবে?

কথাটুকু বলে’ই কুহুর কাঁধ থেকে আঁচল নামিয়ে দিল রওনক। ভয়ানক চমকে উঠলো কুহু। তৎক্ষনাৎ শাড়ির আঁচল টেনে নিয়ে ঠিক করতে করতে বলল,

” বাইরে সবাই আপনার অপেক্ষায় আছে খেয়ালে আছে? এত প্রেম আসে কোথা থেকে আপনার?

কুহুকে ছেড়ে দিয়ে ওয়াশরুমের দিকে যেতে যেতে বলল রওনক,

“একজীবনে যখন অনেক তপস্যা করে প্রিয় মানুষটাকে পাওয়া হয়, তখন প্রতিদিনই নব্য ভাবে প্রেম জাগে হৃদয়ে। ঠিক এমন ভাবেই!

কুহু যেন আচমকা থমকে গেল! কি বললেন রওনক ভাই? কুহুকে পেতে তো কোনো কষ্টই করেনি সে! উল্টো দায়ই নিয়েছে। এসব মনভুলানো কথাতে কি আর পূর্বের কথা ভুলে যাওয়া যায়? তাদের জীবনে তো কেবল ভালবাসার সূচনা হলো!

◼️
হাত ভাজ করে দূর আকাশে তাকিয়ে আছে রিশা। মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে আদনান। অম্বরে ঘটা করেই রাতের আয়োজন নেমেছে। অজস্র নক্ষত্রের মাঝে রিশাকে একফালি চাঁদ মনে হচ্ছে। আপন মনেই একটু হাসলো আদনান। তার মনের আকাশ রিশা নামক চাঁদ উঁকিঝুঁকি মারছে। কেমন একটু জড়তাই কাজ করছে। কি কথা বলবে বুঝতে পারছে না। গলা ঝেড়ে বলল,

” আপনি যে মৃগনয়না, সেটা কি জানেন মিস আইরিশ?

আইরিশ নামটা শুনতেই বুকের ভেতরটা ধ্বক করে উঠলো রিশার। এই নাম তো একজনের মুখেই মানায়! পাশ ফিরে তাকালো সে। অজানা এক ঝড় উঠলো বক্ষস্থল জুড়ে। বাবা, মার মুখের দিকে তাকিয়ে পাত্রপক্ষের সামনে এসেছে সে। রাতিম ভাইয়ের সাথে কথা না বলা পর্যন্ত শান্তিও লাগছে না। আদনান খুব ভালো ছেলে। কথাবার্তা, আচরণে সেরকমই প্রকাশ পায়। ছেলেটা তাকে খুব পছন্দ করেছে সেটুকুও বোঝা যাচ্ছে হাবভাবে। তবে এই মুহূর্তে আদনানকে না বলার একটামাত্র রাস্তা খোলা আছে রিশার কাছে।

“আপনার মুখ কেমন ভার হয়ে আছ। কোনো কারণে কি মন খারাপ আপনার? নাকি আমাকে আপনার ভালো লাগেনি?

রিশা কেন জানি কোনো উত্তর দিতে পারলো না। কি বলা উচিৎ বুঝতে পারলো না। নিনির্মেষ তাকিয়ে রইল বাদামি চোখের মণি বিশিষ্ট পুরুষের পানে। চশমা গলিয়ে চোখের হদিস করা যায় অনায়সে! কোনো উত্তর না পেয়ে ফের বলল আদনান,

” বুঝতে পেরেছি আমাকে আপনার পছন্দ নয় মিস আইরিশ। কারণটাও হয়তো আমার জানা। চোখের কারণে তাই তো? আমার মনে হয় গল্পটা আপনাকে বলা উচিত, ছোট বেলায় ক্রিকেট খেলার সময় ডান চোখে বল লাগে আমার। কর্নিয়ায় প্রচন্ড আঘাত পাই।হাইফিমা হয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছিল। চিকিৎসা হয়েছিল ঠিকই তবে চোখটাকে আর ভালো করতে পারিনি। অপটিক নার্ভের ক্ষতি হয়ে গিয়েছিল। এটা সত্য আমি এক চোখে কম দেখি। আর চোখের সমস্যাটা যে কেউ দেখেই বলে দিতে পারবে। জানেন এই চোখ নিয়ে খুব আফসোস হতো আমার। তাই একসময় সিদ্ধান্ত নিলাম অপথালমোলজিস্ট হবো। যতই হোক নিজের চোখটা তো আর ঠিক করতে পারবো না। অন্যের চোখ ভালো করে দিয়ে তাতে আনন্দ আর মানসিক শান্তি খুঁজে বেড়াই।

রিশা নির্বাক হয়ে শুনছিল আদনানের কথা। তামাটে গাত্রবর্ণ হলেও সুদর্শন সে শতভাগ! উচ্চতা বেশ ভালো। এই সামান্য চোখের ত্রুটি তার সৌন্দর্য, যোগ্যতার নিচে চাপা পড়ে রইল। রিশা মনে মনে ভেবেছিল আদনানের চোখের এই কারণ টা দেখিয়ে বিয়েতে ‘না’ বলে দিবে। তবে ছেলেটাকে এইভাবে ছোট করা মোটেও ঠিক হবে না বিবেক বলছে। রিশা নিরুপায়। কেন জানি কান্না পাচ্ছে তার। পরিস্থিতি কেন এত কঠিন মুহূর্তে দাঁড় করায় মানুষকে? শুকনো ঢোক গিলে বলল রিশা,

“আপনি ভুল ভাবছেন আদনান সাহেব। আপনার চেয়েও অধিক অসহায় ভাবে অনেক মানুষ বেঁচে আছে পৃথিবীতে। সামান্য একটা দূর্ঘটনা তো আপনার জীবন পাল্টাতে পারে না। আমার চেয়েও যোগ্য আর ভালো মেয়ে পাবেন আপনি।

একটুখানি হেসে বলল আদনান,

” মিস, আপনি কি আমার অসহায়ত্বের কথা ভেবে মায়া দেখিয়ে সান্ত্বনা দিচ্ছেন? যদি এতটা ভেবে থাকেন তবে আমার জন্য কাঙ্ক্ষিত মানুষটা আপনিও হতে পারেন। আকাশ যেমন চাঁদকে প্রতিনিয়ত আগলে রাখে তার বুকে, আপনাকে ঠিক সেভাবেই রাখবো আমি।

রিশার কেমন অস্থির লাগা শুরু হয়ে গেল। কথার জালে জড়িয়ে যাচ্ছে না তো সে? মাথায় বিন্দু বিন্দু ঘাম জমলো। শুকনো ঢোক গিলে নিয়ে বলল,

“আমার আরো সময় চাই।

তপ্ত শ্বাস ফেলে দূর আকাশে দৃষ্টি রাখলো আদনান। প্যান্টের পকেটে হাত রেখে বলল,

” মুখে বলা যত সহজ, বাস্তবে সেটা মেনে নেওয়া ততটাই কঠিন। আমার জায়গায় আপনি নন। আপনার জায়গা থেকে আমার জন্য কেবল করুণা সৃষ্টি হয়েছে মিস। এর বেশি কিছু নয়। আর অতিরিক্ত আশা করিও না আমি। আপনার ভবিষ্যতের জন্য শুভকামনা রইল। আসছি আমি।

কথাটুকু বলেই ছাদ থেকে নেমে গেল আদনান। রিশা শব্দ করে কেঁদে ফেলল। তার জীবনের গতিপথ ঠিক কোনদিকে যাচ্ছে? মনটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে জানলে বোধহয় পৃথিবীতে সমস্যা বলে কিছু থাকতোই না। মন ছাড়া কি আদৌ বাঁচা যেত? আঁচলের তলা থেকে ফোন বের করে রাতিম ভাইকে কল করলো। রিং বাজতে দেখে চমকে উঠলো! হাত-পা কাঁপতে লাগলো। তারমানে ম্যাসেজটা তিনি পড়েছেন? জবাব দিতে দেরি কেন করলেন? ছটফটে মন হাজার প্রশ্নের ঝুড়ি খুলে বসলো।

,

আদনানের বাবা, মায়ের সঙ্গে বেশ অনেক্ক্ষণ কথা বলল রওনক। বিয়ে অবধি অনেক কথাই হয়ে গেল দুই পরিবারের মাঝে। চোখমুখ শক্ত করে এগিয়ে আসতে দেখা গেল আদনানকে। বাবা, মাকে যাওয়ার জন্য তাড়া দিল সে। রাশেদ জামাল ছেলেকে আদেশ করলেন যেন এগিয়ে দেয় রাস্তা পর্যন্ত। বাধ্য ছেলের মতো মেনে নিল রওনক।

◼️
নারকেল গাছের তলায় বসে আছে রাতিম। সামনে শানবাঁধানো পুকুর ঘাট। তার জলে স্পষ্ট চাঁদের ছায়া পড়েছে! অপরূপ সুন্দর লাগছে! চোখজোড়া তার অশ্রুশিক্ত হয়ে আছে। রিশার পাঠানো বার্তায় যতবার চোখ বুলাচ্ছে ততবার বুকের বা পাশে চিনচিনে ব্যাথা অনুভব হচ্ছে। নিষ্ঠুর ধরনীর সমস্ত নিয়ম বড্ড অদ্ভুত! নিশ্বাস আঁটকে আসার মতো কষ্ট হতে লাগলো রাতিমের। যে ভালবাসার জন্য চাতকের মতো বছরের পর বছর অপেক্ষা করেছিল, সে ভালবাসা যখন যেচে দুয়ারে এসে কড়া নাড়ছে তখন হাত-পা বাঁধা! যন্ত্রাণাদায়ক সে অনুভূতি! যেটা হয়তো ব্যক্ত করার মতো নয়! হাতের উল্টো পিঠে জলের ফোটা টপটপ করে পড়লো রাতিমের। মোবাইল অন করে ফের রিশার পাঠানো বার্তাটা দেখলো। পরক্ষণে আলতো চুমু খেলো তাতে।

চলবে…….