#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো_২
#পর্বঃ২৪(বোনাস)
#Jhorna_Islam
দায়ানের চলে যাওয়ার দিকে এক দৃষ্টিতে সোহা তাকিয়ে রয়। তার কি করা উচিত কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না।
সোহা নিজের চোখকে প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারে নি যে এইটা তিশা।ভেবে ছিলো হয়তো চোখে ভুল দেখছে।
কিন্তু দায়ান কে তিশার নাম ধরে ডাক দিতে দেখেই বোঝে গেছে যে সে ভুল না।সত্যিই তিশা কে দেখেছে। কিন্তু একটা কথা সোহার মাথায় কিছুতেই ঢুকছে না। সেটা হলো তিশা যদি মরেই যায় তাহলে এখানে আসলো কেমন করে।
আদৌ কি দুইজন এক রকম দেখতে হতেই পারে আলাদা আলাদা? হলেও একটু ও কি ভিন্নতা থাকবে না তাদের মধ্যে? এটা কি ভাবে সম্ভব!
একেইতো সোহার শরীরের উপর দিয়ে আজ অনেক ধ’কল গেছে তার উপর এমন ঝ’টকা খেয়েছে তিশা কে দেখে।
নিজের শরীর আর চলছে না সোহার।দায়ানের ক্যাবিন পর্যন্ত ও যাওয়ার আর ক্ষমতা নেই সোহার। তাই পাশে তাকিয়ে একটা বে’ঞ্চ দেখতে পায় ঐখান বসেই নিজের শরীরটা এলিয়ে দেয়।
চোখ বন্ধ করতেই কিছু সময়ের আগের মুহূর্ত গুলো চোখের পাতায় এসে হা’না দেয়। চোখের কোণ বেয়ে অবিরাম ধারায় অশ্রু বেরিয়েই যাচ্ছে।
দায়ান তিশা আপুকে দেখেই তার হাতটা কিভাবে আলগোছে ছেড়ে দিলো।
দায়ানের মুখে তিশা নামটা সোহা কিছুতেই সহ্য করতে পারছে না। দায়ান যখন তিশা তিশা বলে ডাকছিল তখন সোহার খুব কষ্ট হচ্ছিল।
সোহা কে ফেলেই বেরিয়ে গেলো দায়ান।
সোহা এক জায়গায় প্রায় দুই ঘন্টা যাবত বসে আছে। হাসপাতালের গেইটের দিকে তাকিয়ে। এই বুঝি দায়ান আসবে এসে স’রি বলবে। এখন সন্ধা সাতটা বা’জে।
অথচ দায়ানের কোনো খবর নেই। সোহার শরীর যেনো ধীরে ধীরে আরো খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আবার বুক ব্যাথা করছে।
আরো আধা ঘণ্টা বসে থাকে দায়ানের অপেক্ষায়। কিন্ত হায় দায়ানের তো কোনো খবর নেই। সোহার মোবাইল টা ও দায়ানের গাড়িতেই ফেলে রেখে এসেছিলো।
হাসপাতালে আর কোনো ভাবেই থাকা সম্ভব নয় সোহার জন্য। ফি’না’ই’লের গন্ধে আর কিছু সময় থাকলে নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারবে না।
সোহার ভিতর এখন ঝ”ড় বয়ে চলেছে। নিজের আপন ফোপাঁতো বোন ফিরে আসবে হয়তো।তবুও মনের মাঝে বিন্দু মাত্র আনন্দ খুজে পাচ্ছে না। নিজের ভালোবাসার মানুষ টা কে হাড়ানোর ভ’য় পেয়ে বসেছে মনে।
সোহা আস্তে করে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। দায়ান হয়তো সোহার কথা ভুলেই গেছে। নয়তো তিশা আপুর সাথে কথা বলছে হয়তো।
আচ্ছা এটা কি সত্যি ই তিশা আপু? নাকি অন্য কেউ। পৃথিবীতে কি সত্যি এক রকম দেখতে মানুষ আছে? তাদের মধ্যে কি এতোটা ও মিল থাকে?
এই যে মেয়েটা কে দেখলো পুরোপুরি তিশার মতো দেখতে।মেয়েটার হাঁটা ও।এমনকি হাসি ও তিশার মতোই।
মেয়েটা ফোনে কার সাথে যেন হেসে হেসে কথা বলতে বলতে চলে গেলো।তাইতো দায়ানের ডাক ও শুনতে পেলো না।
দায়ান কি তিশা আপুর সাথে এখন কথা বলছে। তিশা আপু কে পেয়েছে উনি? কতো কিছু মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। অথচ একটার উত্তর ও সোহার কাছে নেই।
এটা যদি সত্যি তিশা আপু হয় তখন? উনিকি তিশা আপুর কাছে ফিরে যাবে? আমাকে উনার জীবন থেকে বের হয়ে যেতে হবে।
নানা না কিছুতেই না।উনি শুধু আমার। আমি তিশা আপুকে দিবো না উনাকে। দরকার পরলে তিশা আপুর কাছে অনুরোধ করবো।
উনাকে ছাড়া আমি কি করে থাকবো? এক মুহূর্ত না দেখলে মনে শান্তি পাই না। উনি সারাজীবনর জন্য আমার কাছ থেকে চলে গেলে আমি মরেই যাবো।
দরকার পরলে তিশা আপু কে বলবো তুমি আমার সব নিয়ে নাও আপু।বিনিময়ে দায়ানকে আমায় দিয়ে দাও।
অনেক ভালোবাসি আমি উনাকে। এখনো আমাদের একে অপরের কাছে ভালোবাসি বলা বাকি।এক সাথে পথ চলা বাকি। আমি তো উনার চোখে আমার জন্য ভালোবাসা দেখেছি। চোখের ভাষা কখনো মিথ্যা হতে পারে না। আজও আমার অসুস্থতা নিয়ে কতোটা উতলা হয়ে উঠেছিল উনি।ভালোবাসা না থাকলে এটা কোনো ভাবেই সম্ভব না।
হাসপাতালের গেইটের দিকে হাঁটা দিতে দিতে বিরবির করে একটা কথাই বলছে সোহা।তুমি উনাকে কেড়ে নিও না তিশা আপু। উনি শুধু আমার। কেড়ে নিও না উনাকে।
পিছন থেকে একটা নার্স অনবরত ডেকে চলেছে সোহাকে সেই দিকে তার কোনো ধ্যা’নই নেই। সেতো এখন অন্য খেয়ালে আছে।
“ম্যাম আপনার রিপোর্ট গুলো এসে গেছে। ”
ম্যাম কোথায় যাচ্ছেন? রিপোর্ট গুলো নিন।
ম্যাম,,,,ম্যাম?
কে শুনে কার কথা ততক্ষণে সোহা হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে গেছে।
নার্স কে এমন ভাবে কাউকে ডাকতে দেখে দায়ানের স্যার+ সিনিয়র ডাক্তার এসে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে? এমন ভাবে কাকে ডাকছো?
আসলে স্যার ম্যাম এতক্ষন উনার টেস্টের রিপোর্ট গুলোর জন্যই অপেক্ষা করছিলো এখানে বসে। কিন্তু এখনই মাত্র রিপোর্ট না নিয়ে উঠে চলে গেলো।
দায়ান স্যারও উনার ক্যাবিনে নেই।আশে পাশে কোথাও দেখলাম না। উনি নিজে দাড়িয়ে থেকে ম্যামের সব টেস্ট করিয়েছে।
দায়ানের রিলেটিভ নাকি মেয়েটা?
উনার ওয়াইফ নাকি স্যার।
মানে? দায়ান বিয়ে করলো কবে? আর আমি ও জানি না?
আমিও উনাকে ম’জা করে বলেছিলাম স্যার।উনি বললেন অনুষ্ঠান এখনো হয়নি।পারিবারিক ভাবে শুধু আ’কদ সম্পন্ন হয়েছে।
ওহ আচ্ছা। রিপোর্ট গুলো আমার কাছে দাও আমি দিয়ে দিবো দায়ান কে।
নার্স টা ফাইল টা এগিয়ে দিতে দিতে বলে,, স্যার মনে হয় ম্যামের হার্টে কোনো সমস্যা।
তোমার কেন এটা মনে হলো?
হার্টের রু’গী’দের যা যা টেস্ট করানো হয়।ম্যামের ও করিয়েছে।
ঠিক আছে তুমি তোমার কাজে যাও।
নার্স টা চলে গেলে উনি ফাইল টা নিয়ে নিজের ক্যাবিনে এসে টেবিলের উপর রাখে। তারপর ফ্রেশ হতে যায়।পাঁচ মিনিট পর বেরিয়ে আসে।
তখনই টেবিলের উপরে রাখা ফোন টা বেজে উঠে। টেবিল থেকে ফোনটা নেওয়ার সময় অসাবধানতা ব’শত ফাইল টা নিচে পরে রিপোর্টের কাগজ গুলো বেরিয়ে আসে।
ফোনে কথা বলতে বলতেই রিপোর্ট গুলো উঠাতে থাকেন। কিন্তু একটা রিপোর্টে গিয়ে চোখ আটকে যায়। ভুল দেখছে ভেবে কল কেটে আবার রিপোর্ট টা দেখে।তারপর একে একে সব গুলো রিপোর্ট দেখে।
রিপোর্ট গুলো নিয়ে উঠে চেয়ারে বসে মনে মনে বলে উঠে,,, ওহ মাই গড।
পাঁচ মিনিট রিপোর্টের দিকে স্থির তাকিয়ে থেকে খুটিয়ে খুটিয়ে সব দেখে। তারপর দায়ানের নাম্বার বের করে কল লাগায়।
দায়ানের ফোন বন্ধ বলছে।আরো কয়েকবার লাগায় বার বার একই কথা বলছে। ফোনের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলেন।
———————
সোহা হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে দায়ানের গাড়ি দেখতে পায় না। হয়তো গাড়ি নিয়ে গেছে।
প্রায় অনেক সময় দাড়িয়ে থাকার পরে একটা সি এন জি পায়। তাও অনেক ভাড়া দিতে হবে নয়তো যাবে না। রাত হয়ে গেছে বলে সোহা কথা বাড়ায় না। লোকটার দাবিই মেনে নেয়। সে শুধু বাড়ি যেতে চায় এখন।
গেইটের সামনে এসে লোকটার ভাড়া দিতে গিয়ে মনে হলো ব্যাগটা তো গাড়িতেই আছে ফোনের সাথে। এখন টাকা দিতে হবে।লোকটা কে বলে বাড়ি থেকে এনে তারপর দিচ্ছে। লোকটা কিছুতেই মানতে নারাজ।এখন সোহাকে যেতে দিলে নাকি সোহা পালিয়ে যাবে।
লোকটা সোহাকে যেতেও দিচ্ছে না। আবার চি’ল্লা চি’ল্লি ও করছে।
দায়ানের উপর এবার সোহার অনেক রা’গ হলো। কি ভাবে সোহাকে এমন বিপদে ফেলে চলে গেলো? গেলো তো গেলো একটা বার ও কি ভাবলো না।রাতের বেলা কি হবে মেয়েটার।
তখনই দারোয়ান এগিয়ে এসে জানতে চায় কি হয়েছে?
ড্রাইভার লোকটা ভাড়া না দেওয়ার কথা বলল।সোহা নাকি মিথ্যা বলে কেটে পরতে চাইছে এগুলোও বলল।সব শুনে দারোয়ান ড্রাইভার কে ইচ্ছে মতো বকে তারপর নিজে টাকা দিয়ে দেয়। লোকটা কাচুমাচু করে সি এন জি নিয়ে কেটে পরে।
সোহা চুপচাপ বাড়ির ভিতর ঢুকে। সকলে তখন ড্রইং রুমে বসে বসে গল্প করছে। অবশ্য রুশ আর দায়ানের বাবা আরো পরে আসবে।
দায়ানের মা এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,,, কিরে মা তোর এতো দেরি হলো যে? আমরা তো ভেবেছি তুই দায়ানের সাথেই আছিস।
দায়ান কি এসেছে?
বড় ফুপি উনি আমার সাথে আসে নি।আমি একাই এসেছি।
ওহ আচ্ছা ভিতরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়।খাবার দিচ্ছি কি না কি খেয়েছিস সারাদিন।মুখ টা দেখ কিরকম শুকিয়ে আছে।
আমি কিছু খাবো না। খেয়ে এসেছি। আমি ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পরবো।আমাকে কেউ ডেকো না।আমার মাথা ব্যাথা করছে। বলেই কাউকে কিছু না বলতে দিয়ে উপরে উঠে নিজের রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দেয়।
তারপর ফ্রেশ না হয়েই গিয়ে বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে নিঃশব্দে কাঁদতে থাকে।
সোহাকে কেউ আর ঘাটায় নি।রাতে যে দায়ান বাড়ি ফিরে নি এটা নিয়েও তারা বেশি চিন্তা করে নি।হয়তো হাসপাতালে কাজ আছে।তাই মোবাইল বন্ধ রেখেছে। বাড়িতে জানাতে ভুলে গেছে এটাই ভেবে নেয় সকলে।
—————
সোহা কাঁদতে কাঁদতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছে নিজেও জানে না। পরের দিন চিৎকার চেচামেচি আর জিনিস পত্র ভাঙার আওয়াজ শুনে ঘুম ভেঙে যায়। উঠে বোঝার চেষ্টা করে কি হয়েছে।
দায়ানের গলার স্বর শুনে তারাতাড়ি রুম থেকে বের হয়ে আসে।নিচে আর নামেনি।উপর থেকেই দায়ানের জোরে জোরে বলা কথা গুলো শুনে স্ত’ব্ধ হয়ে রয়।
তিশা বেঁচে আছে তোমরা কেনো আমাকে বলোনি? কেন বলোনি? মিথ্যা কেন বলেছো আমায়?
চিৎকার করছে আর জিনিস পত্র ভাঙছে। হাত কেটে হাত দিয়ে র/ক্ত ঝড়ছে সেই দিকে তার খেয়াল নেই।
#চলবে,,,,,,,
#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো_২
#পর্বঃ২৫
#Jhorna_Islam
ড্রয়িংরুমের সব জিনিস পত্র একের পর এক ছুঁড়ে মারছে মেঝেতে। ভেঙে বি’কট শব্দের সৃষ্টি হচ্ছে। একেকটা শব্দে কেঁপে উঠছে উপস্থিত থাকা সকলে।কেউ এগিয়ে গিয়ে থামাতে ও পারছে না।
কাঁচে লেগে হা’ত কেটে গেছে। সেইটা দিয়ে গলগলিয়ে র/ক্ত ঝড়ছে।দায়ানের সেই দিকে কোনো খেয়াল নেই। এই ব্যাথা তাকে কাবু করতে পারছে না।তার মনের ভিতর যে দা’বানলের সৃষ্টি হয়েছে সেটা এই তুচ্ছ কেটে যাওয়া হাতের থেকে কয়েক গুণ বেশি যন্ত্রনা দায়ক।।।
এতো কিছু ভেঙে ও কোনো মতে নিজেকে শান্ত করতে পারছে না সে।রা’গে দুঃখে মাথা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
তোমরা কেনো বলোনি তিশা বেঁচে আছে?
কেনো বলোনি আমায়?
জ’লজ্যা’ন্ত একটা মানুষকে তোমরা আমার কাছে মৃ’ত বানিয়ে দিলে বাহ্ চমৎকার। এই না হলে আমার পরিবার?
নিজেদের মেয়েকে নিজেরা জীবিত অবস্থায়ই মৃ’ত বানিয়ে দিলো। তোমাদের কে তো এওয়ার্ড দেওয়া দরকার। কি অভিনয় টাই না করলা।
আমি সত্যি ভাবতে ও পারিনি আমার পরিবারের লোকজন এতো বুদ্ধিমান। এতো সুন্দর অভিনয় জানো তোমরা।অভিনেতা অভিনেত্রীরা ও তোমাদের কাছে হা’র মানতে বাধ্য।
কথাটা বলেই সজোড়ে কাঁচের টেবিলের উপর থা’বা মারে।এতো জোড়েই ছিলো যে ফাটল ধরে গেছে টেবিলে। হাতে বারি খাওয়ায় এবার জন্য র/ক্তের স্রুত ধারা বয়ে চলেছে।
সোহা উপর থেকে এই দৃশ্য দেখে চোখ বন্ধ করে ফেলে। একেই র/ক্ত সহ্য করতে পারে না। তার উপর নিজের প্রিয় মানুষের শরীর থেকেই তা ঝড়ছে।
দায়ানের এসব কথার আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারছে না। ওর মা আর কাকি।
দায়ানের করা এমন পা/গলামি সহ্য হচ্ছে না তার মায়ের ব’দ্ধ উ”ন্মা’দ হয়ে গেছে ছেলেটা। কি বলছে তিশা নাকি বেঁচে আছে। এও কি সম্ভব?
দায়ানের মা দায়ানের হাতের দিকে তাকিয়ে দায়ানের দিকে এগিয়ে যায়। তারপর আকস্মিক ঠাস করে চ’ড় বসায় দায়ানের গালে।উপস্থিত সকলেই বি’স্ফো’রিত দৃষ্টিতে তাকায়।
এই প্রথম তিনি দায়ানের গায়ে হাত তুললেন।এতো সময় পাশে দাঁড়িয়ে থাকা রুশ ও অবাক দৃষ্টিতে তাকায়। যেই বড় মা কখনো দায়ানের গায়ে ফুলের টোকা ও দেয় নি আজ সেই কি না নিজে দায়ানের গায়ে হাত তুলেছে। বড় মা কারো গায়ে হাত তোলা বা মারা একদমই পছন্দ করে না।বরং রুশ কে আর তিশা কে যখন তাদের মা মারতে চাইতো বড় মা আটকাতো।মারতে দিতো না কখনো।
কি পেয়েছিস টা কি তুই? আমাদের তোর মানুষ মনে হয় না? এরকম তিলে তিলে না মেরে একবারে আমাদের মেরে তুই শান্তিতে থাক বাপ।আমাদের পক্ষে আর এসব সহ্য করা সম্ভব না।
এসব পা/গলামি আর দেখতে পারি না। না নিতে পারি।
আর কি যেনো বললি তুই তিশা বেঁচে আছে?
কি আশ্চর্য মরা মানুষ কিভাবে বেঁচে থাকে? আমায় বুঝা তুই। এখনো মাথা থেকে এসব সরে নি দেখছি।তিশার এক্সিডেন্ট হয়েছে সে আর নেই। আমাদের সকল কে ছেড়ে সে চলে গেছে। বুঝতে পারছিস তুই?
দায়ান অ’শ্রু’সিঃক্ত নয়নে মায়ের দিকে তাকায়।
দায়ানের মায়ের কথার সাথে তাল মিলিয়ে রুশের মা ও কাঁদতে কাঁদতে বলে তোর মা ঠিক বলছে দায়ান আমাদের তিশা তো নেই বাপ।চলে গেছে আমাদের ছেড়ে। আমার মেয়েটা আর কখনো ফিরে আসবে না রে।তুই এমন পা/গলামি আর করিস না। আমাদের দিকে ও৷ একটু তাকা এবার।
এসব কিছুর মাঝে রুশ আর দায়ানের বাবা নিরব দর্শক। দায়ানের বাবা সোফায় বসে নিচের দিকে তাকিয়ে কি যেনো ভাবছে।আর উনার পিছনেই রুশ দাড়িয়ে আছে।
দায়ান নিজের মা আর কাকির দিকে একবার ভালো করে তাকিয়ে। নিজের বাবা আর রুশের দিকে তাকায়। তারপর আস্তে করে ছোটো ছোটো পা ফেলে নিজের বাবার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে।
“এখনো তুমি চুপ থাকবে বাবা?”
এবার তো সকলকে তাদের ভুল ধারণা থেকে মুক্তি দাও।
বড় বাবা কে কিছু বলিস না দায়ান।যা জিজ্ঞেস করার তুই আমাকে কর।আমি উত্তর দিচ্ছি।
দায়ান চোখ তুলে রুশের দিকে তাকায়। রুশ এখনো নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
বাহ্ ভাই বাহ্। এই না হলে তুই ভাই? আবার বন্ধু!
এখন নিচের দিকে তাকিয়ে আছিস কেন? উপরের দিকে তাকা।আমার চোখে চোখ রেখে সব বল।একটা অক্ষর ও যেনো বাদ না যায়।এ টু জেট বলবি।যদি কিছু বাদ যায় তাহলে ভুলে যাবো তুই আমার ভাই। তোর সাথে আমার র/ক্তের সম্পর্ক আছে আমার।
রুশ একবার চোখ তুলে সকলের দিকে তাকায়। সকলে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। রুশ এবার বলতে শুরু হয়,,,,,,
হ্যা তুই ঠিকই বলেছিস তিশা মরে নি।
এটা শুনে সকলে অবাকের চরম সীমানায় পৌঁছে যায়।রুশের মা রুশের কাছে দৌড়ে এসে বলে,,বাবা তুই কি বলছিস? আমার তিশা বেঁচে আছে বাপ সত্যি বলছিস তুই?
আহ্ মা বলতে দাও আমায়।নোহা মা কে নিয়ে সোফায় বসাও।নোহা এতো সময় হা করে ওদের দিকেই তাকিয়ে ছিলো। রুশের কথায় উনাকে নিয়ে সোফায় বসায়।রুশ আবার বলতে শুরু করে,,,,,
তিশা মরে নি সে জীবিত এবং সুস্থ আছে। আর বেশ সুখেই আছে। সব দুঃখ তো সে আমাদের জন্য রেখে গেছে।
দায়ানের বিদেশ যাওয়ার পর সব ঠিকঠাকই ছিলো। তিশা দায়ান ওরা ও ভালোই ছিলো।দূর থেকে ফোনে কথা বলতো। সব ঠিক।
কিন্তু সব বদলাতে তো শুরু করে কয়েক মাস যাওয়ার পর।দায়ানের সাথে কথা বলতো না।কল রিসিভ করতো না।মাঝে মাঝে যা ও করতো দায়ানের সাথে খারাপ ব্যবহার করতো।কথা শুনাতো।আর আমার বোকা ভাই প্রেমে এতোটাই অন্ধ ছিলো যে সে সব মেনে নিতো।ভাবতো দূরে আছে বলে রা’গ আর অভিমান করে এমন করছে।
তারপর আস্তে আস্তে যোগাযোগ বন্ধ করে ব্লক লিস্টে ফেলে দিলো দায়ান কে। তাও এই বুদ্ধিমান ছেলেটা কিছুই বুঝলোনা। আমার থেকে খোঁজ নিতো।তোমরা তো জানোই দায়ান আমার কাছে সব শেয়ার করতো।
যদিও এসব খারাপ ব্যবহারের কথা কিছুই জানায় নি আমায়।শুধু বলেছে তিশা নাকি অভিমান করে ওকে ব্লক লিস্টে ফেলে রেখেছে। আমার থেকেই খোঁজ নিতো।মাঝে মাঝে ভিডিও কলে একটু দেখতো তাও লুকিয়ে।
এই ছেলেটা বুঝতেই পারে নি। তিশা ওর থেকে কতো টা দূরে চলে গেছে। ধোকা দিয়ে অন্য কারো সাথে নিজেকে জড়িয়েছে।
রুশের এই কথাটা শুনে দায়ান চোখ বন্ধ করে ঢুক গিলে।
সকলে পুরো ঘটনা শুনার জন্য অধির আগ্রহ নিয়ে আছে।
হ্যা তোমরা ঠিকই শুনেছো।দায়ান দেশে নেই সেই সুযোগে তিশা অন্য কারো সাথে নিজেকে জড়িয়েছে।নতুন সম্পর্কে গেছে। তাও জানো কার সাথে?
দায়ানের লাইফের একমাত্র শ’ত্রু ওমির সাথে। যে কিনা পদে পদে দায়ান কে ভার্সিটি লাইফ থেকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করেছে।নানান ভাবে ক্ষতি করতে চেয়েছে তার সাথে।
সারাদিন রাত কথা বলতো তিশা ওমির সাথে। অথচ তোমরা ভেবেছো দায়ানের সাথে। আমিও বিষয় টা তেমন গুরুত্ব দেই নি তখন। ভেবেছি হয়তো বন্ধু বান্ধবদের সাথে কথা বলে। নিজের মনে হাজার সন্দেহ থাকলেও নিজেকেই বুঝাতাম আমার বোন কখনো খারাপ কিছু করবে না।
আমার বন্ধুরা আমায় ফোন দিয়ে দিয়ে বলতো তিশা কে নাকি একটা ছেলের সাথে প্রায়ই দেখে হাত ধরে ঘুরে বেড়ায়।।তাদের কথায় ও তেমব পাত্তা দিতামনা বলতাম ভুল দেখেছিস হয়তো।
কিন্তু একদিন অফিসের মিটিং এর জন্য একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে আমার সব চোখের সামনে পরিষ্কার হয়ে গেছে। যখন নিজের চোখে সব দেখলাম।
একটা কর্ণার টেবিলে দুইজন পাশাপাশি হাত ধরে বসে হেসে হেসে কথা বলছে আর একে অপরকে খাইয়ে দিচ্ছে। আমি চোখ বন্ধ করে সব হজম করে চলে এসেছি। কোনো সিনক্রিয়েট করিনি।
তিশা বাড়িতে আসলে ওকে বুঝাই।দায়ান কে ঠকাস না বোন তোকে ও সত্যি ভালোবাসে।যা করার করেছিস সব এটা শেষ কর।ঐদিন তিশা সব চুপচাপ শুনে গেছে একটা টু শব্দ ও করেনি। ভেবেছিলাম এবার সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু না আমায় আবারো ভুল প্রমানিত করে ওমির সাথে প্রেম ঠিকই চালিয়ে গেছে। আবারও আমি বুঝালাম।
কিন্তু সে কি বলল জানো?
দায়ান কে সে কখনো ভালোবাসে নি।মোহে পরেছিলো।এক বাড়িতে থাকতে থাকতে চোখের মায়া পরেছিলো জাস্ট ভালোবাসা না।আর সে শুধু দায়ানের পা/গলামিতে রাজি হয়েছিল। ভালোবাসা ওমির কাছ থেকে শিখেছে। ওমি কে সে ভালোবাসে।
মা আর বড় মা যখন বড় মার কোনো আত্নীয়ের বাড়িতে গিয়েছিল বেড়াতে। ঐদিন ওরা দুই জন ঐ বাড়িতে থেকে গিয়েছে। আর এই সুযোগে তিশা তার সব কাপড় লাগেজে ভরে পালিয়ে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পরে। আমি আর বড় বাবা তখন বাড়ির নিচে দাড়িয়ে কথা বলছিলাম তিশা সেটা জানে না। দুইজন ই তিশাকে ধরে ফেলি।বুঝাই সে বুঝে না।ওমিকে ছাড়া সে থাকতে পারবে না। ওমির কাছে সে চলে যাবে। দরকার পরলে আমাদের সাথে সব সম্পর্ক শেষ করে দিবে তাও ওমির কাছে যাবে। ওর সাথে না পেরে বলেছিলাম সে যদি এখন চলে যায় তাহলে আমাদের কাছে সে মৃ’ত হয়ে যাবে। সব শেষ করে যেতে হবে। কারো সাথে কোনো দিন কোনো যোগাযোগ করতে পারবে না। পরিবারের সকলের কাছে আমরা তাকে মৃ’ত ঘোষণা করবো।তাই মেনে নেয়। চলে যায়। কারো কথা একটাবারের জন্য ও ভাবেনি।দায়ানের কথা তো বাদই দিলাম আমার আর মায়ের কথা ও ভাবে নি।
“দিন শেষে বেঈমান আর স্বার্থপর মানুষ গুলোই ভালো থাকে সুখে থাকে।”
বড় বাবা বলেছিলো সবাই কে সব বলে দিতে আমিই দেইনি।আমার ক’সম দিয়েছি।বলেছি আমি যা যা করবো সব চুপচাপ মেনে নিতে এতে সবারই লাভ। তারপর ঐদিন রাতেই একটা এক্সিডেন্ট হয়।ঐখানে একটা মেয়ের লা’শ চেনার উপায় ছিলো না। পরিবারের ও খুঁজ পাচ্ছিলো না। ঐটা কেই আমি তিশা সাজিয়ে নিয়ে আসি।আর বলি তিশা এক্সিডেন্টে মারা গেছে। বড় মা আর মাকে তিশার পাশে যেতে দেইনি তাদের তো মায়ের মন ঠিকই কোনো না কোনো ভাবে বুঝে যতো এটা তিশা না।
ঐ মেয়েটাকেই ভেবে নেয় সকলে তিশা হিসেবে।
তিশা ঐদিন যাওয়ার আগে যা কথা দিয়ে গিয়েছিলো সে রেখেছে।কারো সাথে যোগাযোগ বা সামনে আসার চেষ্টা করে নি। এখন কি ভাবে দায়ান দেখেছে আমি সত্যিই জানি না।
সবাই এখন আমায় দোষ দিতে পারো।কিন্তু আমি যা করেছি বেশ করেছি এতে আমার বিন্দু পরিমাণ আফসোস নাই। কারণ ঐ মেয়েটা এসবেরই যোগ্য। যে পরিবার ছোট থেকে বড় করেছে সেই পরিবারের কথা যখন ভাবলো না ওর কোনো দরকার নেই।
তারপর রুশ নিজের মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,, মা তোমার কি মনে হয় আমি ভুল কিছু করেছি? তুমি কি তিশা কে চাও?
না রুশ বাবা ঐ মেয়েটার নাম আর নিবিনা।আমার কোনো মেয়ে নেই।যে ছিলো সে মারা গেছে। তারপর নিজের চোখের পানি মুছে রুমে চলে যায় রুশের মা। পিছন পিছন নোহা ও যায় উনাকে সামলাতে হবে।যতোই শক্ত হোক নিজেরইতো মেয়ে।
সোহা ও আর দাঁড়ায় না।নিজের রুমে ঢুকে খাটের পাশে নিচে বসে খাটে মাথা হেলিয়ে চোখ বন্ধ করে রাখে।
দায়ান বসা থেকে উঠে রুশের কাছে এগিয়ে যায়। গিয়ে রুশের গালে ঠাস করে চ’ড় বসায়। খুব বড় হয়ে গেছো না।নিজের ভাই আর পরিবারের কথা এতো ভাবতে শিখে গেছো?
রুশ ছলছল চোখে তাকিয়ে ঝাপটে ধরে দায়ানকে।দুই ভাই আলিঙ্গন করতে দেখে এতো কিছুর পরও তৃপ্তির হাসি হাসে।তারপর দায়ানের বাবা মা ও চলে যায় নিজেদের রুমে। সকলেরই নিজেদের একটু সময় দেওয়া দরকার।
দায়ান ও রুশ কে ছেড়ে উপরে উঠে নিজের রুমে না ঢুকে সোজা সোহার রুমে ঢুকে।
তারপর সোহাকে চোখ বন্ধ করে নিচে বসে থাকতে দেখেও কিছু বলে না। চুপচাপ গিয়ে সোহার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরে।
সোহা বুঝতে পারে এটা দায়ান। তাই কিছু না ভেবেই এক ঝটকায় দায়ানকে নিজের কোল থেকে সরিয়ে দেয়। আচমকা হওয়ায় দায়ান টাল সামলাতে পারেনি কিছু টা দূরে গিয়ে পরে। কাটা হাতে আবারও ব্যাথা পায়। কিন্তু এসবে পাত্তা না দিয়ে সোহার দিকে তাকিয়ে কিছু বোঝার চেষ্টা চালায়।
“ডো’ন্ট ডে’য়ার টু টা’চ মি!”
বলেই সোহা চিললিয়ে উঠে।
#চলবে,,,,,,