তুমি হাতটা শুধু ধরো ২ পর্ব-২৮+২৯

0
388

#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো_২
#পর্বঃ২৮
#Jhorna_Islam

দায়ান তার স্যারের ক্যাবিন থেকে কাঁপা কাঁপা পায়ে বেরিয়ে আসে। পা গুলো যেমন কয়েকশো গুণ ভা’রি হয়ে আছে। দৃষ্টি তার এলোমেলো।

দায়ান কে ক্যাবিন থেকে বের হয়ে আসতে দেখে পরিবারের সকলেই দৌড়ে দায়ানের কাছে এগিয়ে আসে। জানতে চায় কি হয়েছে। সোহার কি অবস্থা?

সামান্য জ্ঞান হারিয়েছে তাতে কেন তাদের পরিবারের কাউকে এলাউ করছে না। আর সোহার কেনো এখনো জ্ঞান ফিরছে না।সকলেই বেশ চিন্তিত।

প্র’শ্না’ত্ত’ক দৃষ্টি দায়ানের দিকে আ’ব’দ্ধ।

দায়ান মাথা তুলে সকলের দিকে তাকায়।

সকলেই দায়ানের চেহারা দেখে আঁতকে উঠে। কেমন বি’দ্ধ’স্ত দেখাচ্ছে। চোখ মুখ লাল হয়ে আছে। চোখের কোণে পানি। শুকনো ঢুক গিলে দায়ান সকলকে সোহার কন্ডিশন জানায়। সকলের মুখে এবার আধার নেমে আসে। তাদের চঞ্চল হাসি খুশি মেয়েটার একি হলো?

এই মেয়ে টা নিজের ভিতরে একটা অসুখ নিয়ে ঘুরছে আর কেউ একটু টে’র ও পেলো না।

নোহা বোনের অবস্থা শুনে নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারে না। শব্দ করে কেঁদে দেয়। ফ্লোরে বসে পরে। সোহার নাম ধরে ডাকছে আর কাঁদছে। রুশ দৌড়ে নোহার কাছে যায়।

টেনে নিচ থেকে তুলে পাশের বেঞ্চে বসায়। শান্তনা দিতে থাকে। নোহা কিছুই মানছে না।তার পিচ্চি বোনের কিছু হতে পারে না।

নিজেকে খুব অপরাধী লাগছে নোহার।সারাক্ষণ বোনের পাশে থেকে ও একটু টের ও পেলো না। তার বোনটার সাথে কেনো এমন হতে হলো?

সকলেরই মন খারাপ হয়ে গেলো। সোহাকে তারা খুব ভালোবাসে।এই পরিবারের সবার ছোটো সদস্য হচ্ছে সোহা। ওর পরিবারের ও ছোটো সদস্য ছিলো তাই ভালোবাসা আদর স্নেহ সব কিছু বেশি পেতো।

নোহা নিজের কান্না কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। এতোদিন ধরে এতো কাছে থেকেও সে জানতে পারলো না তার কলিজার বোনটা ভালো নেই।ভিতরে ভিতরে একটু একটু করে শেষ হয়ে যাচ্ছিল। এতো ব্যাথা একা একাই সহ্য করে গেছে। আজ নিজেকে বড় বোন হিসেবে ব্যর্থ মনে হচ্ছে।

সোহার বাবা মা কে ও আসতে বলা হয়েছে। উনাদের এখনো সোহার অসুস্থতার কথা যদিও জানানো হয়নি। বলা হয়েছে দরকার আছে উনারা যেনো আসে।

আসার কথা বলায় নানান ধরনের প্রশ্ন করেছে উনারা।সব ঠিক আছে কি না। কোনো সমস্যা হয়েছে কিনা। নোহা আর সোহা ঠিক আছে কিনা।

ওদের ইনিয়ে বিনিয়ে বলা হয়েছে উনারা যেনো আসে সব ঠিক আছে। জরুরি কাজের জন্য ডাকা হয়েছে।

উনাদের সোহার কথা কিছু বলা হয়নি কারণ,, এতদূরের পথ আসবে। যদি সোহার অবস্থা যানে তাহলে আরো ভেঙে পরবে।তাই যা জানানোর আসলেই জানানো যাবে।

উনারা ও বেরিয়ে পরেছে। স্টেশনে পৌঁছে ফোন দিবে। তারপর রুশ গিয়ে নিয়ে আসবে।

সোহার এখনো জ্ঞান ফিরার কোনো লক্ষন নেই মূলত সে চাইছে না। ভালো হতে চাইছে না।

দায়ান গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে যায় সোহাকে রাখা ক্যাবিনের দিকে।

সোহার চোখ মুখ শুকিয়ে আছে। কেমন করে শুয়ে আছে মেয়েটা।

খুবই সাবধানে গিয়ে একটা টুল টেনে বসে পরে দায়ান সোহার পাশে। তারপর সোহার হাতে ক্যানুলা লাগানো হাতটা খুবই সাবধানে নিজের হাতের মুঠোয় নেয়।খুব আলতো করে যেনো দায়ানের হাতের একটু ছোয়ায় ও ব্যাথা পাবে মেয়েটা।

চোখের সামনে সোহার দুষ্টুমি গুলো ভাসছে।গ্রামে এক সাথে ঘুরে বেড়ানো সব মনে পরছে।

হাতটা একটু কাছে এনে মাথাটা নিচু করে আলতো করে হাতের উল্টো পিঠে চুমু খায়। একবার খেয়ে মন ভরে না আরো কয়েকবার খায়।

চোখ তুলে সোহার দিকে তাকিয়ে আলতো স্বরে সোহাকে ডাকে। পর পর কয়েকবার ডাক দেয়।

সোহা চোখ খুলো জা’ন আমি জানি তুমি আমার কথা শুনতে পাচ্ছো। এমন ভাবে কষ্ট দিওনা প্লিজ আমায়।

তুমি কেনো এভাবে পরে আছো? দেখো বাইরে বাড়ির সকলে কতো কষ্ট পাচ্ছে সকলে তোমার জন্য। সকলকে কষ্ট দিয়ে তোমার কি এভাবে হা’ল ছেড়ে দেওয়া উচিৎ? ওদের কথা টা একবার ভাববে না?

জানো নোহা সেই কখন থেকে কেঁদে চলেছে। সে নাকি বোন হিসেবে ব্যর্থ। তুমি উঠে ওকে বলে দাওতো। উঠে পরো আমাদের তো বাড়িতে যেতে হবে তাই না? এইবার তোমায় একটা সুন্দর জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যাবো ঠিক আছে?

তোমার মনে অনেক প্রশ্ন ছিলো আমাকে নিয়ে তাই না? আমি সব দূর করে দেবো।যা যা জানতে চাও সব কিছুর উত্তর দিবো আমি।

তোমাকে একদম এমন ভাবে শুয়ে থাকা মানায় না।

” আমার পাখি তো মুক্ত আকাশে ডানা ঝাপটে উড়ে বেড়াবে।
সারক্ষন কিচিরমিচির শব্দ তুলে চারিপাশ মুখরিত করেবে।”

সে কেনো চুপচাপ এমন করে শুয়ে থাকবে? সব পাখিকে কি বন্দি খাঁচায় মানায় নাকি? কিছু পাখি কে খোলা আকাশে উড়তে দেখতেই মনে শান্তি লাগে।তুমিতো আমার সেই উড়ন্ত পাখি।তোমাকে এভাবে মানায় না একদম মানায় না।

তুমি বলেছিলে না? আমি পরিবারের চাপে পরে তোমাকে বিয়ে করেছি? কথাটা তুমি একদম ঠিক বলোনি। আমি না চাইলে এমন কোনো মানুষ নেই যে আমাকে দিয়ে কিছু জোর করে করাতে পারবে। তাও আবার বিয়ের মতো এতো বড় একটা ব্যাপার। আমার পরিবার ও আমার মতের বিরুদ্ধে গিয়ে কিছু করাতে পারবে না আমাকে দিয়ে।

আমি জানি কাল আমি তোমাকে একা ছেড়ে অনেক বড় ভুল করেছি। তিশাকে হঠাৎ করে চোখের সামনে দেখে খেই হাড়িয়ে ফেলেছিলাম। ও কিন্তু আমার ভালোবাসার মানুষ ছিলো না শুধু। কাজিন ও ছিলো।

ওর জন্য রাখা ভালোবাসা বুকের মাঝে মাটি চাপা দিয়ে দিয়েছিলাম ঐ দিনই যেই দিন তোমার সাথে বিয়ের জন্য হ্যা বলেছিলাম।

যদি আমি জানতাম তিশা ফিরে আসবে বেঁচে আছে তাহলে আমি কখনোই নিজের সাথে জড়াতামনা। মৃত মানুষ তো ফিরে আসে না।যদি তিশার ফিরার এক পার্সেনট ও চান্স থাকতো তাও তোমায় জড়াতাম না। কিন্তু এখন তিশা ফিরে এসেছে বলে ওর প্রতি আমার ভালোবাসা জেগে উঠবে এটা কিন্তু ভুল।

তিশা আমাকে ঠকিয়েছে বলে যে এখন তোমার প্রতি দরদ দেখাচ্ছি তা কিন্তু একদম ভুল ধারণা। এসব আমার আগে থেকেই ছিলো তোমার প্রতি শুধু দেখাইনি। দেখাতে চাই নি সঠিক সময়ের জন্য রেখে দিয়েছিলাম।

তিশা যদি আমায় না ও ঠকাতো আমি তাকে আমার লাইফে আনতাম না। তিশা আমার অতীত। আমার বর্তমান আর ভবিষ্যৎ তুমি। তিশা হতে পারে আমার প্রথম ভালোবাসা। ঐ ভালোবাসা আমি আমার মনের এক কোণেই দাফন করে রেখেছিলাম। এখন ওকে দেখে আর তা জেগে উঠবে না।

তুমি আমার প্রয়োজন বলেছিলে তাই না? হ্যা তুমি আমার প্রয়োজন।আমার বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন তুমি।
শুধু প্রয়োজন না তুমি আমার সবচেয়ে কাছের সবচেয়ে আপন জন। আমার প্রিয়জন ।

আমি তোমার জন্য কতো কিছু পরিকল্পনা করে রেখেছিলাম। তোমাকে নিজের মনের কথা জানানোর জন্য সব ঠিক করে রেখেছিলাম। কথা গুলো বলে দায়ান একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে।

সোহার মুখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়। তাকিয়ে থাকতে থাকতে সেকেন্ড গড়িয়ে মিনিটে যায়।কয়েক মিনির হয়ে যায়। সোহা এখনো একই ভাবে শুয়ে আছে। কোনো নড়াচড়া নেই।

দায়ান আলগোছে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। সোহার বেডের উপর গিয়ে বলে। সোহার দিকে ঝুঁকে কানের কাছে এগিয়ে গিয়ে ফিস ফিস করে বলে,,,,,,,,,

“আই লাভ ইউ সোহা।”
“আমি আমার এই চঞ্চল তোতা পাখি টা কে খুব ভালোবাসি।

এই তোতাপাখিটাকে ভালোবেসে তারপর ই বিয়ে করেছি।আমার নামে করেছি।তাকে আমি ঠাকাই নি।

“ভালোবাসি,ভালোবাসি,ভালোবাসি” আমার মিষ্টি তোতাপাখি।

#চলবে,,,,,,,,,,,,

#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো_২
#পর্বঃ২৯
#Jhorna_Islam

ভালোবাসা কখন কিভাবে এসে মনের মাঝে নিজের অজান্তেই ঘর বাঁধে বোঝা মুশকিল। মনের ঘরে কে কখন জায়গা করে নেয় তা আমরা বুঝতেই পারি না।ভালোবাসা নিয়ে মনের উপর জোর চলে না।

দায়ান তার ভালোবাসার কথা গুলো সোহা কে আজ জানিয়েই দিলো।এই পা/গলি টা কে সে হাড়াতে চায় না। কোনো মতেই না মনের ঘরে যতন করে আগলে রেখে দিতে চায়।

তার পাখিটা তার আকাশে মুক্ত পাখির মতো উড়বে আর সে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে তা দেখবে। তার আর কিছু এখন চাওয়ার নেই শুধু এইটুকুই চাওয়া সোহা সুস্থ হয়ে তার জীবনে ফিরে আসুক।

সোহাকে জরিয়ে ধরে দায়ান মনে মনে এটাই প্রার্থনা করছিলো।

দায়ানের প্রতিটি কথা সোহার কানে গেছে। মস্তিষ্কে পৌঁছেছে।সে ইচ্ছে করেই সারা দিতে চায় নি।তার বাঁচতেই ইচ্ছে করেনি। মনের জোর হাড়িয়ে ফেলেছিলো।একটা কথাই শুধু মনে হয়েছে দায়ান কে জীবনে না পেলে এ জীবন তার চাই না।

সোহা নড়েচড়ে উঠে। দায়ান সোহার কাছেই ছিলো তখন ও। সোহা হাত পা নাড়িয়ে চোখ পিটপিট করে তাকায়।

সোহা তার ডাকে সারা দিয়েছে এটা ভেবে দায়ানের অন্তরে খুশির ঢেউ খেলে যায়।তার পাখি চোখ খুলেছে।

দায়ান খুশি হয়ে সোহার সারা মুখে চুমু খায়। চোখ দিয়ে তার পানি ঝড়ছে।যা সোহার মুখে ও পরছে সোহা নিজের মুখে পানির অস্তিত্ব টে’র পেয়ে বুঝতে পারে দায়ান কাঁদছে।

তার দায়ান তার জন্য কাঁদছে? ভাবতেই সোহার চোখের কোণেও পানি জমে।

লোকটার সারা মুখ লাল হয়ে আছে।কেমন অগোছালো লাগছে। সোহার খুব ইচ্ছে করছে দায়ান কে ঝাপটে ধরতে।কিন্তু সে ধরবে না।তাকে শাস্তি পেতে হবে।এতোদিন ভালোবেসেও না বলার জন্য শাস্তি।

সোহা মনে মনে ঠিক করে নেয় দায়ান কে সে পুরোপুরি ইগনোর করবে কথাই বলবে না। দেখুক কেমন লাগে। একটু শাস্তি পাওয়া দরকার।

দায়ান সোহার হাত ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। তুমি ঠিক আছো? কোথাও কষ্ট হচ্ছে? আমাকে বলো প্লিজ।

সোহা চুপচাপ শুয়ে রয় কিছুই বলে না। দায়ান সোহা কে ডাকে সে সারা দেয় না।

সোহা এইই সোহা কথা বলবানা আমার সাথে? আমার মনের ডাক্তার কি আমার উপর খুব রে’গে আছে? কথা কি বলা যায় না?
একটু ও কি বলা যায় না?

প্লিজ আমার তোতা পাখি একটু কথা বলো তোমার কথা শুনতে ইচ্ছে করছে খুব।

সোহা এবার অন্য পাশে মুখ ঘুরিয়ে শোয়।

দায়ান বুঝতে পারে সোহা এখনও তার উপর অভিমান করে আছে। কথা বলতে চায় না। তাই আর জোর করে নি।কিন্তু সোহার কাছ থেকে সরেও নি। এই যে বসে আছে সোহার একটি হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে। সোহা অবশ্য হাতটি ছাড়ানোর চেষ্টা করেছে।দায়ান ছাড়ে নি।

—————

বিকেলের মধ্যে সোহার বাবা মা এসে পরে। এসে থেকে সোহার মায়ের সে কি কান্না। কেউ থামাতে পারছেনা। বিলাপ করে করে কাঁদছে। সাথে নোহা ও আবার যুক্ত হয়েছে। দুই মা মেয়েকে কেউ শান্ত করতে পারছে না।

ক্যাবিনে ঢুকে সোহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর কাঁদছে।

আম্মু তুই আমার উপর রা’গ করে আছিস? সব নিজের মধ্যে কেনো চেপে রেখেছিলি মা? এতো ব্যাথা সহ্য করে গেছিস তাও আমাদের একটুও বুঝতে দিস নি কেন?

আমি তোর এতটাই পর হয়ে গেছি মা?

মা তোকে খুব বকতো বলে বলতি না তাই না মা? মায়ের উপর খুব অভিমান তোর?

সোহা মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,, এসব তুমি কি বলছো মা? প্লিজ এসব কথা বলো না। আমিতো জানি তুমি আমার ভালোর জন্যই বকতে।

সোহার বাবা মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। সোহার মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,, তোমার কাঁদা বন্ধ করবে? কি শুরু করেছো তোমরা মা মেয়ে?

আমার ছোট আম্মার কিছু হয়নি।সামান্য একটু অসুস্থ হয়েছে। কিছু দিনের মাঝেই ঠিক হয়ে যাবে। তোমরা ওর সামনে কেঁদে ওকে আরো অসুস্থ বানাচ্ছো।চুপ করে থাকো।কান্না বন্ধ করো বলছি।নয়তো এখান থেকে যাও তোমরা।একদম ওর সামনে কাঁদবে না।

আব্বু থাক ওদর বকো না। আমি একটু শোয়া থেকে উঠবো।আমাকে একটু ধরে বসাও তো!

সোহার বাবা মেয়েকে ধরে বসায়।পিঠের নিচে একটা বালিশ দিয়ে।সোহা হেলান দিয়ে বসে। চারদিকে তাকিয়ে দেখে দুই পরিবারের সকলেই এখানে উপস্থিত। সকলের মুখই শুকিয়ে গেছে।

তোমরা সবাই মুখ টা কে এমন করে রেখেছো কেনো বলোতো? আমার কিছু হয়নি আমি একদম ঠিক আছি।বলেই সোহা মিষ্টি করে হাসি দেয়।

দায়ান ক্যাবিনের এক পাশে দাড়িয়ে সোহার দিকেই তাকিয়ে আছে। সবার সাথে কথা বলছে অথচ তার সাথে কথা বলা তো দূর ফিরে ও তাকাচ্ছে না মেয়েটা। এতে যে দায়ানের বুকে হাহাকার করছে সেটা কি সোহা বুঝতে পারছে না?

বাড়ির সকলে সোহাকে আদর করে দিচ্ছে।

এমন সময় দায়ানের স্যার ডাক্তার খান আবার আসে ক্যাবিনে।

কি ব্যাপার শুনলাম মিসেস শেখের নাকি জ্ঞান ফিরেছে।

সকলেই উনার দিকে ঘুরে তাকায়।সোহা ও।

ডাক্তারের মুখে মিসেস শেখ শুনে সোহার বুক টা কেঁপে ওঠে। অন্তরে পরিতৃপ্তি পায়। ইশশ বার শুনতে ইচ্ছে করছে মিসেস শেখ।

ওর সাথে কথা শেষ হলে আপনারা একটু বাইরে যান। আমি একটু ওকে চে’ক আপ করবো।

উনার কথায় সকলেই বেরিয়ে যায়। শুধু দায়ান থেকে যায়।

কি ব্যাপার মামুনি কি অবস্থা এখন তোমার?

ভালো আছি ডাক্তার সাহেব।

উহু ডাক্তার সাহেব না।আংকেল বললে খুশি হবো। আমাকে তুমি আংকেলই ডাকবে। তোমার মতো মিষ্টি মেয়ের মুখে আংকেল ডাক টা শুনতে চাই।

সোহা মুচকি হেসে বলে,, ঠিক আছে আংকেল।

তারপর উনি সোহা কে চেক আপ করতে করতে বলে,,তোমার হাসবেন্ড দায়ান কিন্তু আমার ছাত্র। আমার সবচাইতে প্রিয় ছাত্র।

সোহা আর চোখে দায়ানের দিকে তাকায়। তখনই চোখাচোখি হয়ে যায়। কারণ দায়ান আগে থেকেই সোহার দিকে তাকিয়ে আছে। সোহা তারাতাড়ি চোখ সরিয়ে নেয়।

খাওয়া দাওয়া মনে হয় একদমই করো না।আর এই বয়সে কিসের এতো টেনশন?

ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করবা।একদম টেনশন নিবা না ঠিক আছে?

সোহা মাথা কাত করে। তারপর জিজ্ঞেস করে,,, আমার কি হয়েছে আংকেল?

বড় কোনো অসুখ করেছে? আমিকি আর বাঁচবো না? ধরা গলায় জানতে চায় সোহা।চোখ দুটো ছলছল করছে।

দায়ান তারাতাড়ি সোহার পাশে বসে হাত ধরে বলে,,এসব কি কথা সোহা? তেমন কিছুই হয়নি তোমার।একদম ঠিক আছো তুমি।আজেবাজে কথা একদম ভাবতে যাবে না।নয়তো মাইর লাগাবো।

তেমন কিছুই হয়নি তোমার মামনি।বু’কে তো তোমার পেইন হয় তাই জন্য ছোট্ট একটা অপারেশন করা লাগবে। দেন একদম সুস্থ হয়ে যাবে।আর ব্যাথা করবে না। তুমি রেস্ট নেও ওকে?

এসব নিয়ে চিন্তা করো না তুমি ঠিক আছো। চে’ক আপ শেষ করে উনি চলে যায়। যাওয়ার আগে বলে যায়।সময় করে যেনো দায়ান একটু দেখা করে।

—————
তারপর দায়ান ডক্টর খানের সাথে দেখা করলে উনি জানায়,,,এখনই অপারেশন টা করতে চাচ্ছে না। আরো এক সপ্তাহ পর করবেন।এখন সোহার শরীর খুবই দূর্বল।মানসিক অবস্থা ও ততোটা ভালো না। এই এক সপ্তাহ সোহাকে যেনো ভালো করে খাওয়া দাওয়া করানো হয়।মানসিক ভাবে সুস্থ হলে তারপর করবেন। নয়তো আরো রিস্কি হয়ে যাবে।

সোহা কে হাসিখুশি রাখতে হবে।

আর আজ যেনো সোহাকে হাসপাতালে রাখে।কাল বাড়িতে নিয়ে যেতে।

দায়ান সব শুনে সম্মতি জানায়।

বাড়ির সকলকে জোর করে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। দায়ান একাই সোহার সাথে থাকবে।সোহার মা কিছুতেই যেতে চেয়েছিলো না মেয়েকে ছেড়ে। সকলেই থাকতে চেয়েছিলো। দায়ান সকলেকে জোর করে বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছে। বলে দিয়েছে টেনশন না করতে।সোহার জন্য সে নিজেই যথেষ্ট।

দায়ানের জে’দের কাছে হার মেনে সকলেই বাড়ি চলে যায় সোহাকে একবার দেখে।সোহা ঐসময় ঘুমাচ্ছিলো তাই জানতে ও পারে নি সবাই চলে গেছে।

#চলবে,,,,,,