তুমি_শুধু_গল্প_না_আমার_ভালোবাসা পর্ব-১৫+১৬

0
70

#তুমি_শুধু_গল্প_না_আমার_ভালোবাসা
#আমেনা_আক্তার
#পর্ব_১৫

বেশ কিছুদিন যাবত সাইরা রাজকে ইগনোর করছে। সাধারণ যেই দিন থেকে রাজ ছেলেটিকে মেরেছে সেই দিন থেকেই সাইরা রাজ কে এড়িয়ে চলছে।সাইরার এভাবে এড়িয়ে চলা রাজের ভিতর ক্ষোভের সৃষ্টি করছে।রাজ যে সকল কিছু সাইরার জন্য করেছে তা জানা সত্ত্বেও সাইরা রাজের সাথে কথা বলতে অনিচ্ছুক। সাধারণ সাইরা ওইদিন খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিল কারণ সাইরা এইসবে অভ্যাস নয়। সাইরা গ্রামে থাকতে যদি শুনতে পেতো কোথাও মারামারি হয়েছে তাহলে তিন চারদিন পর্যন্ত ওই রাস্তা দিয়েও কোথাও যেতো না।আর এখানে তো ওর সামনে একটি ছেলেকে নির্দয় ভাবে মারা হয়েছে।

সাইরা উদাস মনে ক্লাসের বাইরে তাকিয়ে আছে জানালা দিয়ে। রাজের সাথে কথা না বলে সাইরার ও ভালো লাগছে না। কিন্তু ওর যে এই সকল মারামারি ভালো লাগে না। সাইরা কলেজের স্টুডেন্ট থেকে শুনেছে রাজ ও তার বন্ধুরা প্রায় এইসব মারামারি করে বেড়ায় তাই কলেজের সবাই তাদের থেকে দূরে থাকে।কেউ তাদের বিরুদ্ধে কিছু বলে না এর একটি কারণ হলো তাদের ফ্যামিলি স্ট্যাটাস। সকলের পরিবারের অবস্থায় অনেক ভালো।ছয় বন্ধুদের মাঝে সবচেয়ে বড়লোক হলো আব্রাহামের পরিবার। এবং আব্রাহাম তাদের বাড়ির সবচেয়ে আদরের সন্তান।রাজ ও কিছু কম যায়না রাজ আব্রাহামের মতো এত বড়লোক না হলেও বাড়ির একমাত্র ছেলে।রাজের বাবা মা রাজের সকল আবদার পূর্ণ করে।সতো গুন্ডামি করার পরেও বাড়ি থেকে তাকে এতটা শাসন করা হয়না।

তাই সাইরা সিদ্ধান্ত নিয়েছে সব সময় রাজের থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখবে। রাজের জন্য ওর মনে যেই অনুভূতি কাজ করে তা এখানেই ধামা চাপা দিবে নয়তো ভবিষ্যতে অনেক প্রস্তাতে হবে তাকে। কারন রাজ ও তার মধ্যে বিস্তর ফারাক।রাজ ও তার মধ্যে কিছু হতে পারেনা।

সাইরা এই সকল কথা ভাবতে ভাবতে কখন ক্লাস ছুটি হয়ে গেছে টের পাইনি। যখন বুঝতে পারলো ক্লাস ছুটি হয়ে গেছে সাইরা নিজের ব্যাগ নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। নীলিমা আজ অর্ধেক ক্লাস করে বাড়িতে চলে গিয়েছে তাই সাইরার বাকি ক্লাস একা একা করতে হয়েছ।সাইরা যখনি দরজা দিয়ে বের হবে তখনি রাজ এসে দরজার সামনে দাঁড়ায়।রাজ দরজার মাঝ বরাবর দাঁড়ানোর কারনে সাইরা ক্লাস রুম থেকে বের হতে পারছে না।

কিছুক্ষণ অতিবাহিত হওয়ার পরেও যখন রাজের কেনো হেলদোল দেখা যাচ্ছে না। তখন সাইরা মনে সাহস যুগিয়ে রাজকে জিজ্ঞেস করলো।

সমস্যা কি আপনার?

একই প্রশ্ন তো আমার, তোমার সমস্যা কি?

রাজের কথার সারমর্ম বুঝতে না পারায় সাইরা রাজ কে বলল।

আপনি দরজার মাঝ বরাবর দাঁড়িয়ে আছেন আমি না।তাই সমস্যা আমার না আপনার।

সাইরা রাজের কথা বুঝতে না পারায় রাজ সরাসরি সাইরা কে বলল।

আমাকে ইগনোর করছো কেনো?

আমি আপনাকে ইগনোর করব কেনো কে হোন আপনি আমার?

সাইরার কথার প্রতি উত্তরে রাজ কিছু না বলে আসতে আসতে আগে বাড়তে লাগলো।সাইরা রাজের এভাবে আগানো দেখে শুকনো একটি ঢোক গিলে আস্তে আস্তে পিছে যেতে থাকলো।সাইরা পিছে যেতে যেতে হঠাৎ বেঞ্চের সাথে বারি খেতে থেমে গেল।সাইরা থেকে যাওয়ায় রাজ সাইরার দিকে একটু ঝুঁকে যায় সাইরার দিকে । সাইরা রাজের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে । সাইরার মনে হচ্ছে রাজের চোখের মাঝে কেনো যাদু আছে। রাজের চোখের থেকে নিজের চোখ ফিরাতে পারছে না। যেনো আটকে গেছে এই চোখে।সাইরার চোখে চোখ রেখেই রাজ সাইরার উদ্দেশ্যে বলল।

এই প্রশ্ন করার সাহস দ্বিতীয় বার করো না।আর যদি একবারও আমাকে ইগনোর করো তাহলে তোমাকে দেখাবো আমি তোমার কে। তোমার মোবাইল দেও।

শেষের কথাটি রাজ কিছুটা ধমকের স্বরে বলে উঠলো।

সাইরা কাঁপা কাঁপা হাতে নিজের মোবাইল রাজের হাতে তুলে দিলো।রাজ সাইরার নাম্বার নিজের মোবাইলে ও নিজের নাম্বার সাইরার মোবাইলে সেফ করে বলল।

প্রতিদিন ঘুমানোর আগে আমাকে ফোন করবে। আমার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে তারপর ঘুমাবে।বুঝেছ?

সাইরা কাঁপা কাঁপা গলায় বলল।

হ্যা বুঝেছি,

গুড,

কথাটি বলেই রাজ চলে যায় সেখান থেকে। এদিকে সাইরা থরথর করে কাঁপছে রাজের এরুপ আচরণে।
___________________________________
রুদ্র মুখে শয়তানি হাসি নিয়ে বসে আছে নিজের কেবিনে। রুদ্রের এই হাসির প্রধান কারণ হলো সে সিরাত কে অনেক বেশি কাজ দিয়েছে।যা করতে করতে সিরাত হাঁপিয়ে উঠছে তবুও সিরাত রুদ্রকে কিছু বলছে না। কারন কিছু নতুন নতুন ডিল সাইন করায় কাজের চাপ একটু বেশি। এমনিতেও রুদ্র সিরাত কে খাটানোর সুযোগ খুজছিল। নতুন ডিল সাইন করায় মোক্ষম সুযোগ পেয়ে গেছে।সিরাত রুদ্রের কেবিনে কাউচ এর উপর বসে বসে নতুন ডিজাইন তৈরি করছে।সিরাত কে নিজের কেবিনে বসিয়ে কাজ করানোর একটি কারণ হলো সিরাত কষ্ট পাবে আর রুদ্র তা দেখে আনন্দ পাবে। রুদ্র একটু মজা নেওয়ার জন্য সিরাত কে প্রশ্ন করলো।

তো মিস.সিরাত কাজ করতে কেমন লাগছে?

সিরাতের ত্যারা উত্তর,

এত ভালো লাগছে যে, তোমাকে এই বিল্ডিং থেকে নিচে ফেলে দিতে মন চাইছে।

রুদ্র সিরাতের কথায় রাগ করলো না। মজা পেলো কারণ রুদ্রের মনে হলো বেশি কাজের চাপ সহ্য করতে না পারার কারণে সিরাত এই কথা বলছে।রুদ্র সিরাতকে বলল।

আমাকে ছাদ থেকে ফেলে দিতে মন চাইছে কেনো।কাজ করতে করতে কি হাড় গুড় সব বাঁকা হয়ে গেছে?

না আল্লাহ আমাকে এতটুকু কাজ করার ক্ষমতা দিয়েছে। কিন্তু আমার ভিতর অকর্মা মানুষদের চোখের সামনে সহ্য করার ক্ষমতা একটু কম।

কি? তুমি আমাকে ইনডাইরেক্টলি অকর্মা বলছো।

ছিঃ ছিঃ কি বলছো,আমি তোমাকে ইনডাইরেক্টলি অকর্মা বলবো আমার এত বড় সাহস।আমি তোমাকে ইনডাইরেক্টলি অকর্মা বলছি না। বরং ডাইরেক্টলি অকর্মা বলছি।

রুদ্র কিছু বলার আগেই সিরাত তার ব্যাগ নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে রুদ্র কে উদ্দেশ্য করে বলল।

আমার কাজ শেষ আমি এখন বাসায় যাবো।

রুদ্র সিরাত এর উদ্দেশ্যে বোধহয় কিছু বলতে চাইলো কিন্তু তার আগেই সিরাত রুদ্র কে আবার বলল।

তুমি নিজেই বলেছিলে কাজ শেষ করলেই আমার ছুটি তাই আমার কাজ শেষ আমি বাড়ি যাচ্ছি।ঠিক আছে বাই।

কথাগুলো বলেই সিরাত বের হয়ে যায় অফিস থেকে। রুদ্র রাগে তার হাতের কাছে থাকা জিনিসপত্র ছুড়ে মারে। তারপর সেও অফিস থেকে হনহন করে বেড়িয়ে যা যায়।
___________________________________
রাজিব নিজের চুল ধরে খামচে বসে আছে বিছানায়। এদিকে তিতির বকবক করে যাচ্ছে। রাজিব তিতিরের উপর মহা বিরক্ত। তার একটি কারণ হলো তিতিরের অধিক চাহিদা আর দ্বিতীয় অশ্লীল ভাবে চলাফেরা করা ও ছেলেদের সাথে কথা বলার সময় তাদের গায়ে এক প্রকার ঢলে পড়া।

অন্যদিকে রাজিবের মায়ের চিল্লাচিল্লির আওয়াজ আসছে বাইরে থেকে। রাজিবের মায়ের চিল্লাচিল্লি করার যথেষ্ট কারণ আছে। তিতির ঘরের কেনো কাজে হাত লাগায় না।সব সময় নিজের রুপ চর্চা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। আবার রাজিব বাইরে থেকে আসলেই তাকে নিয়ে নামিদামি রেস্টুরেন্টে খেতে যেতে চায়। তার নাকি বাড়ির খাবার একদম ভালো লাগে না। তিতির কে এখন রাজিবের বিরক্ত লাগে যখন প্রেমিকা ছিল তখন মনে হতো তিতির এর মতো স্মার্ট মেয়ে তার জীবনে আসলে জীবন হয়তো অনেক সুন্দর হয়ে যাবে। বন্ধুদের সাথে নিজের বউকে দেখা করানোর সময় গর্বে বুক ফুলে উঠবে। কিন্তু এখন সব বিপরীত দেখছে কারণ তিতির কে বন্ধুবান্ধবদের সামনে নিয়ে গেলে আরো লজ্জায় পড়তে হয়। রাজিবের বন্ধুরা ঠাট্টার স্বরে রাজীবকে বলে।

তোর নতুন বউ এর কথা বলার ম্যানারস নেই। আগের বউ এর থেকে অনেক ভালো ছিল।

রাজিব তিতিরের কথা মতো মহিমাকে ডিভোর্স পেপার ও পাঠিয়ে দিয়েছে। এখন মনে হচ্ছে অনেক বড় ভুল করেছে সে মহিমাকে ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে। এতদিন না ইচ্ছে করলেও এখন মহিমাকে দেখার খুব ইচ্ছে জাগ্রত হয় রাজিবের মধ্যে।সব কিছুতে শুধু মহিমাকে খুঁজে। রাজিব এখন কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না দ্বিধায় পরে গেছে রাজিব।
___________________________________
আয়নার পুরো মন দিয়ে এখন পড়াশোনা করছে।রাত এখন প্রায় ১ টার মতো বাজবে।এত রাত জেগে পড়াশোনা করার প্রয়োজন না থাকলেও আয়না পড়ছে।হয়তো মনের কষ্ট ভুলে থাকার মাধ্যম হিসেবে আয়না এই পড়াশোনাকে বেছে নিয়েছে।

রাজ অনেক রাত করে বাড়ি ফিরেছে। বন্ধুদের সাথে এতক্ষণ আড্ডায় ব্যস্ত ছিল। রাজের রুমে যাওয়ায় সময় আয়নার রুমের লাইট জ্বালানো দেখে আয়নার রুমে নক করে রাজ। আয়না জানে এই সময় তার ভাই ছাড়া আর কেউ হবে না কারণ ভাই যে বাড়ি ফিরেনি আয়না এটি বেশ ভালোভাবে জানে।তাই রাজ নক করার সাথে সাথে আয়না ভিতরে প্রবেশ করার অনুমতি দিয়ে দেয়।রাজ আয়নার রুমে প্রবেশ করেই তাকে জিজ্ঞেস করলো।

তোকে না বলেছি,এত রাত জেগে পড়াশোনা করতে না।

রাজের কথার প্রতি উত্তরে আয়না কিছু বলার আগেই আয়নার ফোনটি বিকট শব্দে বেজে উঠল।ফোনটি টেবিলের উপরে থাকায় স্পষ্ট ভাবে দেখা যাচ্ছে আব্রাহামের নাম্বার থেকে ফোন এসেছে।রাজ আয়নার ফোন টেবিলের থেকে তুলে কানের কাছে ধরতেই..

#চলবে…

#তুমি_শুধু_গল্প_না_আমার_ভালোবাসা
#আমেনা_আক্তার
#পর্ব_১৬

রাজ ফোনটি রিসিভ করে বলল।

তুই এত রাতে আমার বোনের মোবাইলে ফোন করেছিস কেনো।

রাজের কথায় আব্রাহাম ভাব অলসহীন ভাবে উত্তর দিলো।

তোর বোনের সাথে প্রেম করার জন্য।

আব্রাহামের কথায় রাজ মুহূর্তের মাঝে শব্দ করে হেসে উঠলো। এবং আব্রাহামের কথার প্রতি উত্তরে বলল।

শালা তোর আমার বোনের সাথে প্রেম করার যোগ্যতা আছে। তোর আমার বোনের সাথে তো দূরের কথা কারো সাথে প্রেম করার যোগ্যতা নেই।যার মেয়েদের সাথে কথা বলতেও এলার্জি সে নাকি করবে প্রেম। আগে মেয়েদের সাথে প্রেমের কথা বলা শিখ তারপর প্রেমের কথা বলতে আসিস।

রাজের কথায় আব্রাহাম বিরবির করে ফোনের উপাস থেকে বলল।

প্রেমের কথা বলতে পারিনা দেখেই তো আজ মরন যন্ত্রণা ভোগ করতে হচ্ছে।

রাজ আব্রাহামের বিরবির করে বলা কথা বুঝতে না পেরে বলল।

কি বললি,

কিছু বলিনি, এখন ঘরে গিয়ে ঘুমা কাল সকালে আবার কলেজে যেতে হবে।

রাজ আব্রাহামের সাথে কথা শেষ করে ফোন রেখে দিয়ে আয়না কে বলল।

ও বোধহয় ভুলে তোকে ফোন দিয়ে দিয়েছে। তুই এখন পড়াশোনা বাদ দিয়ে ঘুমা।এত পড়াশোনা করলে মাথার তার সব ছিঁড়ে যাবে। এমনিতেও তো তোর সকল তার ছিড়া।

কথাটি বলেই রাজ আয়নার রুম থেকে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো তখনি আয়না রাজের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো।

তোমার বন্ধু যদি সত্যি আমার সাথে প্রেম করার জন্য ফোন দিয়ে থাকে তাহলে?

রাজ প্রতি উত্তরে বলল।

তাহলে আমি নিজে তোদের বিয়ে দিবো।

ভাইয়ের কথা শুনে আয়না দাঁতে দাঁত চেপে বলল।

আমি তোমার বন্ধুকে বিয়ে করব না।মরে গেলেও না।

তোর মরে আমার বন্ধুকে বিয়ে করতে হবে না।বেঁচে থেকে বিয়ে করলেই হবে।

কথাটি বলেই রাজ চলে যায়।

আর এদিকে আয়না রাগে দুঃখে বই বন্ধ করে ঘুমাতো চলে যায়।

বিছানায় শুয়ে রয়েছে আয়না কিন্তু কিছুতেই ঘুম চোখে ধরা দিচ্ছে না। আয়না অতীতের কথা বারবার মনে পরছে।সে কতটা পাগল ছিল আব্রাহামের জন্য ওই দিন আব্রাহাম তার বাড়িতে আয়না কে প্রত্যাখ্যান করার পরেও বেশরমের মতো প্রতি রাতে আব্রাহাম কে ফোন করে নিজের মনের কথা প্রকাশ করতো।

অতীত…

আয়না ফোন সামনে নিয়ে বসে আছে। আব্রাহাম কে ফোন করবে না করবে না ভেবেও ফোনটি হাতে তুলে নিয়ে আব্রাহামের নাম্বারে ফোন করে। কিছুক্ষণ ফোন বাজার পরে আব্রাহাম ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল।

হ্যালো ,

আব্রাহামের ঘুমময় কন্ঠ শুনে আয়না আব্রাহামের প্রেমে বোধহয় আরো একবার পরে গেল। নিজের চোখ বন্ধ করে আয়না বলে উঠলো।

আব্রাহাম ভাই,

ফোনের উপাসে আয়না বুঝতে কথাটি পেরে মুহূর্তের মাঝে আব্রাহামের ঘুম ছুটে গেল। এবং ক্রোধে আব্রাহামের রক্ত যেনো টগবগ করে উঠলো।এই মেয়েকে এত বুঝানোর পরেও এই মেয়ে ওর পিছু পরে আছে। আব্রাহাম রাগান্বিত কন্ঠে বলল।

কি বলবি? তাড়াতাড়ি বল।

তুমি যানো আমি কি বলতে ফোন করেছি তবুও জিজ্ঞেস করছো।

হ্যা জিজ্ঞেস করছি কারণ আমার সব সময় মনে হয় তুই হয়তো আমাকে গুরুত্বপূর্ণ কেনো কথা বলতে ফোন দিস। কিন্তু না প্রতিবার তোর আজেবাজে কথা আমার শুনতে হয়।

আমার ভালোবাসা তোমার আজেবাজে কথা মনে হয়।

হ্যা হয় তবুও,এই কথাটি একশো বার বলার পরেও তো বেহায়ার মতো বারবার ফোন করিস।

আব্রাহামের কথায় আয়না একটি মলিন হাসি দিয়ে বলল।

এমন না হয়,এই বেহায়া আমাকে দেখার জন্য তুমি সব কিছু করতে রাজি থাকো। কিন্তু ওইদিন আমি তোমার দিকে ফিরেও না তাকায়। তখন তোমার অনেক কষ্ট হবে সত্যি বলছি। এখন যেমন তোমার অবহেলা আমাকে কষ্ট দিচ্ছে তোমনি আমি চাই না তোমার কথাগুলো আমাকে এতটা আঘাত করুক পরবর্তীতে আমি তোমার কষ্টের কারণ হয়ে যায়।

আমি তোর সাথে কথা বলতে চাই না ফোন রাখ।

কথাটি বলেই আব্রাহাম ফোন রেখে দেয় আর আয়না বিছানায় শুয়ে কান্না করতে থাকে।আজ আরেকটি রাত হয়তো তার নির্ঘুম কাটবে।

বর্তমান

আয়না নিজের অতীতের কথা ভাবা বন্ধ করে ঘুমানোর প্রস্তুতি নেয় এখন আর আয়নার এইসকল কথায় কেনো তফাৎ পরে না।এই কথাটি নিজের মনকে বুঝাতে বুঝতে ঘুমিয়ে পড়লো আয়না।
___________________________________
মহিমা বিরক্তিকর নজরে তাকিয়ে আছে নিলয়ের দিকে। যখন থেকে নিজের বাবা ও স্বামীর সত্য জেনেছে মহিমা সেদিন থেকেই তার পুরুষ মানুষের উপর এক ধরনের ঘৃনা চলে এসেছে।তার মধ্যে ওর মা দুদিন পর পরই এই আধ পাগল লোকটিকে ফোন করে বাড়িতে নিয়ে আসে। বাড়িতে আসার পরেই নিলয় মহিমার আসে পাশে ঘুরা ঘুরি করতে থাকে।যাতে মহিমা বরাবরের জন্যই বিরক্ত হয়।এত বুঝানোর পরেও রেহানা বেগম মহিমার কথা না শুনে তার বিরক্ত বাড়ানোর জন্য নূরকে বলে নিলয়কে বাড়িতে নিয়ে আসে।

নিলয় মহিমার দিকে তাকিয়ে একটির পর একটি কথা বলে যাচ্ছে। আসলে মহিমার দিকে তাকিয়ে বললে ভুল হবে মহিমার উঁচু পেটের দিকে তাকিয়ে তার বাবুর সাথে কথা বলছে।

মহিমার এখন প্রচুর রাগ লাগছে নিলয়ের উপর তবুও মুখ বুজে সব সহ্য করছে শুধু মাত্র মায়ের জন্য। রেহানা বেগম ওকে ভালোভাবে বলে দিয়েছে।ছেলেটি অসুস্থ ওর সাথে উঁচু গলায় কথা বলবি না। কিন্তু নিলয়ের কথায় মহিমা এতটাই বিরক্ত হলো যে তাকে একটি ধমক দিয়ে বসলো। নিলয় কে ধমক দিতেই নিলয় কিছুক্ষণ মহিমার দিকে তাকিয়ে সেখান থেকে উঠে চলে গেল।

দৃশ্যটি রেহানা বেগম দেখে মহিমার কাছে এসে বললো।

তুই সবসময় ছেলেটির সাথে এমন আচরন করিস কেনো? তুই কি দেখিস না ছেলেটা অসুস্থ।

অসুস্থ তো ওর হসপিটালে থাকা উচিত মা। ওকে তুমি আমাদের ঘরে নিয়ে এসেছিস কেনো। আমার সহ্য হয়না ওকে।

রেহানা বেগম মহিমার পাশে বসে ওর হাত ধরে বললো।

আমি জানি তোর সাথে যা হয়েছে তাতে তুই অনেক ভেঙ্গে পরেছিস। কারো উপর বিশ্বাস করা তোর জন্য অনেক কঠিন। কিন্তু এর মানে এই না তুই তোর মনের কষ্ট অন্য জনের উপর প্রয়োগ করবি। নিলয়ের মানসিক সমস্যা হওয়ার পরেও কিন্তু ও কখনো তোর সাথে খারাপ আচরণ করেনি।আমি জানি প্রথম দিন ও যা করেছে তা ঠিক ছিল না। কিন্তু দেখ তার পরে আমি ওকে বুঝিয়েছি ও তারপরে এমন আর কেনো আচরণ করে নি।

রেহানা বেগমের কথা মহিমা চুপচাপ শুনে তার দিকে তাকিয়ে বলল।

মা ওকে বলে দিবে আমার সামনে আসতে আমার কেনো জানি ওকে সহ্য হয়না।

কথাটি বলেই মহিমা নিজের রুমে চলে যায়।আর রেহানা বেগম তাকিয়ে থাকে মেয়ের যাওয়ার পানে।
___________________________________
সিরাত অফিসের উদ্দেশ্যে আজ একটু তাড়াতাড়ি বের হয়েছে। প্রতিদিন বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত হেঁটে যায় সিরাত।তাই আজ ও হেঁটে হেঁটে যাচ্ছে বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত। সিরাত থেকে বাস স্ট্যান্ড থেকে বাস এখন দুই মিনিটের দূরত্বে আছে।সিরাত হঠাৎ লক্ষ্য করলো একটি জায়গায় কিছু লোকের জটলা লেগে আছে। অধীর আগ্রহে লোকগুলো কিছু একটা দেখছে।সিরাত সেখানে থেকে বাস স্ট্যান্ড এর উদ্দেশ্যে আগে বাড়ার জন্য পা বাড়তেই শুনতে পেলো মানুষ বলাবলি করছে।

কিছুক্ষণ আগেই এক্সিডেন্ট হয়েছে।লোকটি বোধহয় এখনো বেঁচে আছে।

লোকগুলোর কথা শুনে সিরাতের পা থেকে যায় সে কৌতুহল বশত আগে বাড়ে কি হয়েছে দেখার জন্য।সিরাত মানুষ ঠেলে আগে বাড়তেই দেখতে পায় একটি গাড়ির এক্সিডেন্ট হয়েছে।সিরাতের গাড়িটি পরিচিত মনে হলো।সিরাত একটু আগে বাড়তেই দেখতে পেলো গাড়িটির ভিতরে রুবেল মির্জা রক্তাক্ত অবস্থায় পরে আছে।সিরাত রুবেল মির্জাকে এই অবস্থায় দেখে প্রথমে নিজেকে শান্ত করে। এখন ঠান্ডা মাথায় কাজ করতে হবে। নিজেকে শান্ত করার পর সিরাত কিছু লোকের সাহায্য রুবেল মির্জাকে নিয়ে একটি ট্যাক্সিতে উঠে হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।সিরাত গাড়ির ভিতর বসে আছে। রুবেল মির্জার মাথা সিরাতের কুলে।সিরাত ফোন লাগায় নূরের ফোনে রুদ্রের নাম্বার সিরাতের কাছে নেই।আর এই সময় রুদ্র তার বন্ধুদের সাথেই আছে হয়তো।

সকল বন্ধুরা মিলে একসঙ্গে আড্ডা দিচ্ছে তখনি নূরের ফোন বেজে উঠলো। নূর ব্যাগ থেকে ফোন বের করে দেখতে পেলো সিরাত ফোন করেছে।নূর ফোনটি রিসিভ করতেই…

#চলবে..