তুমি_শুধু_গল্প_না_আমার_ভালোবাসা পর্ব-১৭+১৮

0
73

#তুমি_শুধু_গল্প_না_আমার_ভালোবাসা
#আমেনা_আক্তার
#পর্ব_১৭

নূর ফোনটি তুলতেই সিরাত নূরকে ডাইরেক্ট বলল। ফোনটি রুদ্রকে দিতে নূর সিরাতের কথায় বেশ অবাক হলো তবুও কিছু না বলে পাশে দাঁড়ানো রুদ্রকে বলল কথা বলতে রুদ্র ব্লু কুঁচকে নূরকে জিজ্ঞেস করলো ।

কে?

সিরাত তোর সাথে কথা বলবে।

সিরাতের নাম শুনে রুদ্রের চেহারা রাগে লাল হয়ে উঠলো।আর ভাবতে লাগলো এই মেয়ে ফোনে ওর সাথে কি কথা বলবে। রুদ্র ফোন কানে ধরে কিছু বলার আগেই সিরাত বলে উঠলো।

তোমার সাথে ফালতু কথা বা ঝগড়া করতে ফোন করিনি।

রুদ্র সিরাতের কথায় বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলো।

তাহলে কেনো ফোন করেছ?

সেটা অবশ্যই বলব কিন্তু তার আগে তুমি বলো,আন্কেলের রক্তের গ্রুপ কি।

বাবার রক্তের গ্রুপ দিয়ে তুমি কি করবে?

তুমি আগে আমার কথার জবাব দাও।

O পজিটিভ,

রুবেল মির্জার রক্তের গ্রুপ O পজিটিভ কথাটি শুনে সিরাত কিছুটা চিন্তিত হয়ে গেল। কারন এই রক্তের গ্রুপ তো জোগাড় করা খুব মুশকিল।যেই হারে রুবেল মির্জার রক্ত গিয়েছে সিরাত আন্দাজ করতে পারছে রক্তের প্রয়োজন হতে পারে।সিরাত কিছু একটা চিন্তা করে বলল।

তোমার রক্তের গ্রুপ কি?

রুদ্র এখন চরম বিরক্ত সিরাত তার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে একের পর এক প্রশ্ন করে যাচ্ছে। রুদ্র বিরক্ত ভঙ্গিতেই বলল।

আমার ও বাবার রক্তের গ্রুপ এক। আমারও O পজিটিভ এখন তো বলো কি হয়েছে?

তোমার বাবার এক্সিডেন্ট হয়েছে।আমি উনাকে নিয়ে হসপিটালে যাচ্ছি। নূরের ফোনে আমি এড্রেস পাঠিয়ে দিচ্ছি যত দ্রুত সম্ভব তুমি হসপিটালে চলে আসো। উনার যেই হারে রক্ত যাচ্ছে রক্তের প্রয়োজন পড়তে পারে তাই তাড়াতাড়ি আসো।
___________________________________
রুদ্র হসপিটালের করিডোরে মাথা নিচু করে কাঠের তৈরি চেয়ারে বসে আছে।তার সাথে বসে আছে নূর, আরশাদ, হৃদিতা ও আব্রাহাম।সিরাত একপাশে দাঁড়িয়ে আছে চুপচাপ। রুবেল মির্জার অপারেশন চলছে সিরাত যা ভেবেছিল তাই হয়েছে। রুবেল মির্জার রক্ত লেগেছে যা রুদ্র দিয়ে এসেছে কিছুক্ষণ আগে। হসপিটালে আসার পর পরই রক্ত দিতে হয়েছে রুদ্র কে।সব ফর্মালিটিজ সিরাত শেষ করে রেখেছিল তাই রুদ্র ও তার বন্ধুদের বেশি কিছু করতে হয় নি।

একজন মহিলা আর্তনাদ করতে করতে হসপিটালে প্রবেশ করলো। মহিলাটিকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে তার আপন মানুষদের হয়তো বিরাট বড়ো কেনো ক্ষতি হয়েছে। এলোমেলো পায়ে মহিলাটি এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে।

রুদ্র এতক্ষণ মাথা নিচু করে থাকলেও মায়ের আর্তনাদ ভরা কন্ঠ শুনে সামনে তাকাতেই দেখতে পেলো সাহানারা মির্জা কাঁদতে কাঁদতে এগিয়ে আসছে। রুদ্র মাকে দেখতে পেয়ে এগিয়ে যায় মায়ের কাছে। রুদ্র সাহানারা মির্জার কাছে যেতেই সাহানারা মির্জা রুদ্র কে জাপটে ধরে শব্দ করে কেঁদে ফেলে। এবং কাঁদতে কাঁদতে বলল।

তোর বাবা কেমন আছেন এখন?উনার বেশি আঘাত লাগেনি তো? তোর বাবা কোথায় আমি উনাকে দেখব?

রুদ্র সাহানারা মির্জা কে শান্ত করতে বললেন।

মা তুমি চিন্তা করো না, বাবার অপারেশন হচ্ছে ভিতরে।আল্লাহ চাইলে সব ঠিক হয়ে যাবে। তুমি একটু শান্ত হয়ে বসো।

রুদ্রের কথায় সাহানারা মির্জা শান্ত হতে পারলেন না। তিনি আবার কাঁদতে কাঁদতে বলল।

না আমি তোর বাবাকে দেখতে চাই, না জানি কি অবস্থায় আছে। উনাকে এই অবস্থায় রেখে আমি শান্ত হয়ে কিভাবে বসতে পারি।

সাহানারা মির্জার কথা ‌শেষ হতেই অপারেশন থিয়েটার থেকে ডাক্তার বের হয়ে আসলো। ডাক্তার কে বের হতে দেখে রুদ্র সাহানারা মির্জা কে নিয়ে চলে গেল ডাক্তারের কাছে এবং জিজ্ঞেস করলো।

বাবা এখন কেমন আছে?

ডাক্তার প্রতি উত্তরে বলল।

এখন মি.মির্জা ভালো আছে,একটু পরেই মি.মির্জাকে কেবিনে সিফ্ট করা হবে তখন আপনারা উনার সাথে দেখা করতে পারবেন।

ডাক্তারের কথা শুনে সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।

রুবেল মির্জাকে কেবিনে সিফ্ট করা হয়েছে বেশ কিছুক্ষণ আগে। সবাই রুবেল মির্জার সাথে দেখা করেছে এক এক করে। কিন্তু সিরাত এখনো এক কোণায় দাঁড়িয়ে আছে। এখনো সে রুবেল মির্জার সাথে দেখা করতে যায় নি।সকলের কথা শেষ হয়ে গেলে ও দেখা করে বাড়ি চলে যাবে। রুদ্র সিরাতের পাশে এসে দাঁড়ায়।রুদ্র সিরাতের পাশে দাঁড়িয়ে আস্তের উপরে বলল।

ধন্যবাদ,

সিরাত ব্লু কুঁচকে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল।

ধন্যবাদ কেনো?

আমার বাবাকে হসপিটালে আনার জন্য।

তোমার ধন্যবাদের জন্য আমি আন্কেল কে হসপিটালে নিয়ে আসিনি।

রুদ্র সিরাতের কথায় এইবার আর রাগ করলো না।সিরাতের উদ্দেশ্যে রুদ্র বলল।
ভিতরে চলো বাবার সাথে দেখা করবে। আয়াত রুদ্রের কথার প্রতি উত্তর না করে রুদ্রের সাথে কেবিনের বাইরে দাঁড়িয়ে দরজা নক করে। সাহানারা মির্জা স্বামীর বুকে মাথা রেখে এতক্ষণ কান্না করছিল। দরজায় টোকা পড়তেই তিনি মাথা উঠিয়ে ভিতরে প্রবেশ করার অনুমতি দেন। রুদ্র সিরাত কে নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে। সাহানারা মির্জা প্রশ্ন বোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সিরাত ও রুদ্রের দিকে। কারন তিনি সিরাত কে চিনেন না। রুবেল মির্জা ও সিরাত কে এখানে আশা করেননি কারণ উনি জানেন না রুবেল মির্জাকে হসপিটালে সিরাত নিয়ে এসেছে। সাহানারা মির্জা রুদ্র কে প্রশ্ন করলো।

ও কে?

ও আমাদের অফিসে কাজ করে,ওর নাম সিরাত নূর তোমাকে ওর যেই ফ্রেন্ডের কথা বলেছিলো, যার জন্য আমরা বন্ধুরা সবাই বাড়ি খুঁজে তা ডেকোরেশন করেছিলাম।আর তার থেকে বড় কথা বাবাকে রাস্তা থেকে সিরাত হসপিটালে নিয়ে এসেছে।আমরা আসার আগে সিরাতই সকল ফর্মালিটিজ পূর্ণ করেছে।

রুদ্রের কথা শুনে সাহানারা মির্জা এগিয়ে এসে সিরাতের দু হাত ধরে অশ্রু সিক্ত নয়নে বলল।

তুমি জানো না তুমি শুধু রুদ্রের বাবার প্রাণ বাঁচাও নি আমার ও প্রাণ বাচিয়েছ। কথাটি বলেই সিরাতের মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে দেয় সাহানারা মির্জা।
___________________________________
শামসুজ্জামানের বাড়িতে আজ আবার অশান্তি হচ্ছে।যেই দিন থেকে শামসুজ্জামান তার দ্বিতীয় স্ত্রীর চরিত্র সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন সেই দিন থেকেই যেনো তার দ্বিতীয় স্ত্রী কে একদম সহ্য করতে পারেন না।এর মধ্যে আরো দুই তিনবার অন্য পুরুষ মানুষের সাথে ধরা খেয়েছে উনার দ্বিতীয় স্ত্রী। এখন লজ্জায় গ্রামে মুখ দেখাতে পারেন না উনি। শামসুজ্জামান বাজার করে বাড়িতে ফিরেছেন মাত্র। শামসুজ্জামান তার দ্বিতীয় স্ত্রীর কাছে গিয়ে বাজারের ব্যাগটি ছুড়ে মারলেন তার দিকে। শামসুজ্জামানের দ্বিতীয় স্ত্রী বাজার দেখে খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলেন। কারণ তিন দিন ধরে শামসুজ্জামান বাজার করে নিয়ে এসেছেন। তিনদিন আগে ঝগড়া করে বাড়ি ছেড়ে ছিলেন আর আজ একদম বাজার করে ঘরে ফিরেছেন।

শামসুজ্জামানের দ্বিতীয় স্ত্রী রান্না শেষ করে নিজের ও ছেলের জন্য খাবার বেড়ে যেই খেতে বসবেন তখনি শামসুজ্জামান রাগে গজগজ করতে করতে এসে তার দ্বিতীয় স্ত্রীর চুলের মুঠি ধরে বলল।

ছেলের জন্য ও নিজের জন্য তো ঠিকই গিলতে ভাত বেড়েছিস প্লেট ভরে।আর আমার কথা ভুলে গেছিস।ভুলে জাবি তো আমি যখন না ছিলাম তখন তো তোর নাগর এসে খাবার দিয়ে গেছে।ন*ষ্টা কোথাকার।

শামসুজ্জামানের দ্বিতীয় স্ত্রী আর সহ্য করতে না পেরে শামসুজ্জামানের হাত ছাড়িয়ে রাগের মাথায় বলল।

হ্যা আমি ন*ষ্টা একদম ঠিক বলেছেন,আমি ন*টা হলে কি আপনি দুধের দোয়া তুলশি পাতা আপনিও তো জঘন্য চরিত্রের। আপনি ও তো আপনার স্ত্রী সন্তান কে ধোঁকা দিয়ে আমার সাথে পরকীয়ায় জরিয়ে দিনের পর দিন আমার সাথে অবৈধ সম্পর্ক করেছেন।আমি আপনার কাছে শুধু টাইম পাস ছিলাম আপনার ভো*গেল বস্তু আপনার আর আমার অবৈধ সম্পর্কের জন্য যখন আমি গর্ভবতী হলাম তখন আপনি আমার খোঁজ খবর নেওয়া বন্ধ করে দিলেন। তখন আমাকে এই না*ষ্টামি করেই নিজেকে ও নিজের সন্তানকে বাঁচিয়ে রেখেছিলাম। কিন্তু যখনি আপনি জানতে পারলেন আমার ছেলে হবে তখনি আপনি আবার আমার কাছে আসতেন। শুধু মাত্র এই ছেলের জন্য আমাকে বিয়ে করেছিলেন। আপনার স্ত্রী আপনাকে এত ভালোবাসার পরেও আপনার একবারও বুক কাঁপেনি তাকে ধোঁকা দিতে।যে নিজেকে নিঃস্ব করে আপনাকে ভালোবেসে।যে আপনার জন্য নিজের সকল শখ আহ্লাদ বিসর্জন দিয়েছে। আমার থেকে বড় প্রতারক আপনি।আমার থেকে বড় জোচ্চর আপনি। আপনি আপনার স্ত্রীর সাথে আপনার মেয়েদের ও ধোঁকা দিয়েছেন।

শামসুজ্জামানের দ্বিতীয় স্ত্রী কথাগুলো বলেই হাঁপাতে থাকে। শামসুজ্জামান তার দ্বিতীয় স্ত্রীর কথাগুলো শুনে নিস্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রেহানা বেগম বাড়ি ছাড়ার পরে যেনো সকলে শামসুজ্জামানের চোখে আঙুল দিয়ে তার ভুল গুলো দেখিয়ে দিচ্ছে।

শামসুজ্জামান এখন আস্তে আস্তে বুঝতে পারছেন রেহানা বেগম তার জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল।প্রতি মুহূর্তে শামসুজ্জামান তার মেয়েদের এখন মিস করেন। শামসুজ্জামান সিরাত কে কখনো আদর না করলেও সাইরা ও মহিমা কে তিনি কম আদর করেননি। তিনি ওই দুজনকে খুব ভালোবেসেছেন। কিন্তু যৌবন কালে কিছু ভুলের জন্য এখন তাকে জ্বলতে হচ্ছে। শামসুজ্জামান এই তিনদিন রেহানা বেগম ও তার মেয়েদের অনেক খুঁজেছেন কিন্তু তাদের খোঁজ কোথাও না পেয়ে আবার বাড়ি ফিরে আসতে হয়েছে। এখন তিনি কি করবেন কিছুই বুঝতে পারছেন না। শামসুজ্জামানের মাথায় শুধু একটি কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে তিনি ভালো নেই তার ভালো থাকতে হলে নিজের স্ত্রী সন্তানদের প্রয়োজন। তাদের ছাড়া শামসুজ্জামান নিঃস্ব নিজের অহংকার ও চরিত্রের কারনে তাদের হাড়িয়েছে কিন্তু এখন শামসুজ্জামান নিজের ভুলের শিকার করে তাদের আবার ফিরত চায়। কিন্তু এখন কি তা আর সম্ভব আবার কি শামসুজ্জামান ফিরে পাবে তার সেই পরিবার যা শুধু মাত্র নিজের ভুলের জন্য হাড়িয়েছে।

#চলবে…

#তুমি_শুধু_গল্প_না_আমার_ভালোবাসা
#আমেনা_আক্তার
#পর্ব_১৮

সিরাত ক্লান্ত অবস্থায় বাড়িতে ফিরে এসেছে। হসপিটালে তার কম ছুটাছুটি করতে হয়নি। যখন হসপিটালে রুবেল মির্জার পরিবার পৌঁছায় নি তখন সিরাত রুবেল মির্জার পরিবারের সকল দায়িত্ব তাঁকেই পূর্ণ করতে হয়েছে। হসপিটালের ফর্মালিটিজ পূর্ণ করতে সিরাত বেশি সমস্যা পোহাতে হয়নি কারণ রুদ্র আগেই তাদের সকল ডিটেইলস পাঠিয়ে দিয়েছিল।

সিরাত বাড়ির ডোরবেল চাপতেই কিছুক্ষণের মাঝে সাইরা দরজা খুলে দেয়।সিরাত কে এই অবস্থায় দেখে সাইরা আঁতকে উঠে।

আপু তোর এই অবস্থা কিভাবে হলো তুই ঠিক আছিস তো?

সাইরার আতঙ্কিত কন্ঠ শুনে মহিমা ও রেহানা বেগম রুম থেকে বের হয়ে এসে দেখে। সিরাতের শরীরে এখানো রক্ত লেগে আছে। রেহানা বেগম দৌড়ে সিরাতের কাছে এসে বলল।

তোর কি হয়েছে মা তোর শরীরে এত রক্ত কি করে আসলো?

মা শান্ত হও আগে আমাকে একটু বসতে তো দাও আমি অনেক কান্ত এখন।বসে ধীরে সুস্থে তোমার কথার জবাব দিচ্ছি।

সিরাত এসে বসে ড্রয়িং রুমের সোফায়। ততক্ষণে মহিমা তার জন্য পানি নিয়ে এসেছে। এখন তিনজনের চোখই সিরাতের দিকে আবদ্ধ।সিরাত পানি পান করে তাদের দিকে তাকিয়ে বলল।

আমার কিছুই হয়নি আমি সম্পূর্ণ ঠিক আছি।

সিরাতের কথায় সকলের প্রাণে প্রাণ আসলো যেনো। মহিমা সিরাত কে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করলো।

তাহলে তোর জামাতে যেই রক্ত লেগে আছে তা কোথা থেকে আসল।

আমার অফিসের বসের এক্সিডেন্ট হয়েছিল তাঁকেই হসপিটালে নিয়ে গিয়েছিলাম।

সিরাতের কথা শুনে সাইরা বলল।

তোমার অফিসের বস তো রুদ্র ভাইয়ার বাবা উনার এক্সিডেন্ট হয়েছে।

সাইরার কথা শুনে সিরাত তার দিকে প্রশ্ন বোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল।

আমি তো তোকে বলিনি, রুদ্রের বাবা আমার অফিসের বস তাহলে তুই কিভাবে জানলি?

সিরাতের প্রশ্ন শুনে সাইরা ভয়ে একটি ঢোক গিলল। কারন এই কথা যে রাজ তাকে বলেছে তা এখন সিরাতকে কিভাবে বলবে।

সাইরা কিছু বলার আগেই রেহানা বেগম বললেন।

এই সকল কথা ছাড়,উনি এখন কেমন আছেন তা বল?

এখন উনি ভালো আছেন আল্লাহর রহমতে।

আচ্ছা আমরা আজ তাহলে উনার সাথে দেখা করে আসবো। আমাদের ও তো একটি দায়িত্ব আছে। এমনিতেও রুদ্র ছেলেটা কত ভালো।

মায়ের কথায় সিরাত ব্লু কুঁচকে বলল।

তোমার রুদ্রকে কোনদিক দিয়ে ভালো মনে হয়?

তোর চোখে কি আজ পর্যন্ত কাওকে ভালো লেগেছে যে আজ লাগবে।

আচ্ছা যাই হোক আজ আর স্যারের সাথে দেখা করতে যেতে পারবো না।আমি এখন ফ্রেশ হয়ে অফিসে যাবো। অফিসে অনেক কাজ পড়ে আছে তার মধ্যে আবার স্যারের শরীর অসুস্থ।

কথাটি বলেই সিরাত নিজের রুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে। রেহানা বেগম ও আর কিছু বলেন না কারণ তিনি জানেন সিরাতকে কিছু বলেও এখন লাভ নেই।
___________________________________
কেটে গেছে একটি দিন। রুদ্র আর তার সকল বন্ধুরা কাল থেকে হসপিটালেই আছে কেউ বাড়ি ফিরে যায়নি। কেননা এই অবস্থায় নিজের প্রাণ প্রিয় বন্ধুকে একা ছেড়ে যেতে মন সাঁই দেয়নি।তাই সকলে কাটিয়েছে একটি নির্ঘুম রাত।আসলে সকলে বললে ভুল হবে হৃদিতা ও নূরের জন্য কেবিন ভাড়া করেছিল যাতে ওরা দুজন ঘুমাতে পারে।নূর ও হৃদিতা ও বিনা বাক্য রাজি হয়ে যায়। কারন যখনি এমন পরিস্থিতি আসে রুদ্র, আরশাদ,রাজ আব্রাহাম মিলে ঠেলে তাদের ঘুমানোর জন্য পাঠিয়ে দেয়।আর সাহানারা মির্জা সারারাত স্বামীর পাশেই ছিল। রুদ্র ও সাহানারা মির্জা কে বাড়ি যাওয়ার জন্য জোড় করেননি। কেননা সাহানারা মির্জা তার স্বামী কে এই পরিস্থিতিতে রেখে কোথাও যাবে না।

সিরাত তার মাকে সাথে নিয়ে বের হয়েছে হসপিটালের উদ্দেশ্যে। সাইরা ও মহিমা বাড়িতেই রেখে এসেছে। মহিমার শরীর এখন বেশি ভাগই খারাপ থাকে আর মহিমার এখন জার্নি করাও নিষেধ কিছুদিন পরেই মহিমার প্রেগন্যান্সির আট মাস পূর্ণ হবে।

সিরাত তার মাকে নিয়ে হসপিটালে প্রবেশ করে। রুবেল মির্জাকে রাখা কেবিনের দিকে যেতেই দেখতে পায় কেবিনের বাইরে হৃদিতা,নূর, আব্রাহাম, আরশাদ,রাজ ও রুদ্র বসে আছে।

আন্কেল এখন কেমন আছেন?

সিরাতের প্রশ্নে সকলে চোখ তুলে তার দিকে তাকায়। এতক্ষণ কেউ সিরাতকে খেয়াল করেনি।সিরাতের পাশে রেহানা বেগম কে দেখে সকলের মুখে হাসি ফুটে উঠল। হৃদিতা রেহানা বেগম কে জাপটে ধরে বলল।

কেমন আছেন আন্টি?

আলহামদুলিল্লাহ,আমি তো ভালো আছি,কিন্তু এখন রুদ্রের বাবা কেমন আছেন?

জ্বী আন্টি আন্কেল ও এখন আল্লাহর রহমতে আগের থেকে অনেকটা সুস্থ আছেন।

হৃদিতার কথা শেষ হতেই, আরশাদ রেহানা বেগমের হাতে টিফিন বক্স রেহানা বেগমের হাতে দেখে জিজ্ঞেস করল।

আন্টি এই বক্সের ভিতর কি আছে?

আরশাদের কথায় রেহানা বেগম হাসি মুখে উত্তরে বলল।

এটাতে আমি তোমাদের জন্য খাবার রান্না করে নিয়ে এসেছি।সিরাত আমাকে কাল রাতেই বলেছিল তোমরা সকলে হসপিটালে থাকবে তাই ভোর সকালে উঠে আমি রান্না করেছি তোমাদের জন্য। হসপিটালের খাবার তো আবার সকলে পছন্দ করে না তাই।

রেহানা বেগমের কথা শুনে রাজ বলে উঠলো।

আন্টি আপনি একদম ঠিক বলেছেন ও একদম ঠিক কাজ করেছেন।আমরা হসপিটালের খাবার পছন্দ করি না।কাল থেকে শুধু রুটি কিনে খেয়ে থাকতে হচ্ছে। আশেপাশে ভালো কেনো দোকান বা রেস্টুরেন্ট নেই। পেটের ভিতর ইঁদুর দৌড়াচ্ছে আমার।

রেহানা বেগম ও সকলে রাজের কথা শুনে হেসে উঠলো।সকলে এটা ভালোভাবে জানে রাজ খুব খাবার প্রিয় মানুষ। এতক্ষণ যে রাজ খাবার ছাড়া থেকেছে তাই আশ্চর্যকর বিষয়।

রুদ্র সিরাত ও রেহানা বেগম কে নিয়ে রুবেল মির্জার কেবিনে প্রবেশ করে রেহানা বেগমের পরিচয় করিয়ে দেয় রুদ্রের বাবা মায়ের সাথে। সাহানারা রেহানা বেগমের উদ্দেশ্যে বলল।

আপনার মেয়েটা খুবই ভালো,ওইখানে এত মানুষ থাকা সত্ত্বেও উনাকে সিরাত হসপিটালে নিয়ে এসেছে যদি ও না থাকতো তাহলে কি হতো কথাটি ভাবতেই আমার বুক কেঁপে উঠে।

যা হয়নি তা ভেবে মন খারাপ করবেন না।যা এখন আপনার কাছে আছে তাকে সামলে রাখুন।

রেহানা বেগম ও সাহানারা মির্জা সমান তালে গল্প করে যাচ্ছে। রুদ্র ও সিরাত চুপচাপ এক কোণায় দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু রুবেল মির্জাকে বেশ কিছুক্ষণ যাবত চিন্তিত দেখাচ্ছে। সাহানারা মির্জা রুবেল মির্জা কে প্রশ্ন করলেন।

আপনাকে এত চিন্তিত দেখাচ্ছে কেনো। ডাক্তার না আপনাকে কেনো প্রকার চিন্তা করতে না করেছে।

সাহানারা মির্জার কথার প্রতি উত্তরে
রুবেল মির্জা বলল।

চিন্তা করব না কিভাবে, কিছুদিন হলো নতুন ডিল সাইন করেছি এখন আমি বিছানায় পরে থাকলে সেই সকল কিছু কে সামলাবে।

রুবেল মির্জার কথা শুনে সিরাত বলল।

আপনার এমন দামড়া একটি ছেলে থাকতে আপনার আবার কিসের চিন্তা। রুদ্র আছে তো আপনার সব দায়িত্ব নিজের কাঁধে নেওয়ার জন্য।

কথাটি বলেই সিরাত মুচকি হাসি দিয়ে রুদ্রের দিকে তাকালো সিরাতের হাসি দেখে রুদ্রের ভিতরে যেনো দাঊ দাঊ করে আগুন জ্বলে উঠলো।যেই ছেলে অফিসের নাম শুনলেও নাম সিঁটকায়। শুধু মাত্র সিরাতকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য কিছুদিনের জন্য অফিসে যেতে রাজি হয়েছে।সেই ছেলে নাকি সব দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিবে।সিরাত কে এতদিন খাটানোর সোধ যেনো একেবারে উসুল করে নিলো সিরাত।

সকলে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রুদ্রের দিকে রুদ্রের বাবা মায়ের ধারণা রুদ্র কখনো তার বাবার দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিবে না।তাই রুবেল মির্জা হতাশা জনক শ্বাস ছেড়ে বলল।

রুদ্র কখনো কোম্পানির দায়িত্ব নিবে না।

রুবেল মির্জার কথা শুনে সিরাত সাথে সাথে বলল।

কেনো আন্কেল রুদ্রের কি এই যোগ্যতা নেই যে ও আপনার পরে কোম্পানির সকল দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিবে। ওকে কি আপনার এতোই অযোগ্য মনে হয়।

সিরাতের কথাটি যেনো ভালোভাবে রুদ্রের গায়ে এসে লাগলো। এখন তার আত্মসম্মানের বিষয় যদি রুদ্র দায়িত্ব নিতে না করে দেয় সিরাত জিতে যাবে। কিন্তু রুদ্র সিরাতকে কিছুতেই জিততে দিবে না।

রুবেল মির্জা কিছু বলার আগেই রুদ্র বলে উঠলো।

আমি অফিসে যাবো এবং বাবা যেই পর্যন্ত সুস্থ না হয় অফিসের সকল দায়িত্ব আমি নিবো।

রুদ্রের কথাটি বলার সাথে সাথে যেনো কেবিনের ভিতরে বড় ধরনের বিষ্ফোরণ ঘটলো। রুদ্রের বাবা মা অবিশ্বাস্য চাওনিতে তাকিয়ে আছে রুদ্রের দিকে।নূর, আব্রাহাম, হৃদিতা, আরশাদ ও রাজ এই মাত্র কেবিনের ভিতরে প্রবেশ করেছিল রুদ্রের কথা শুনে সকলে থ মেরে সেখানেই দাঁড়িয়ে যায়।

অতঃপর হৃদিতা রুদ্রের কাছে এসে আশ্চর্যকর একটি কান্ড ঘটিয়ে বসলো..

#চলবে…