#তুমি_শুধু_গল্প_না_আমার_ভালোবাসা
#আমেনা_আক্তার
#পর্ব_২৪
লোকটির চিৎকার শুনে গ্রামের অনেক মানুষ হাজির হয় সেখানে। রুদ্র নূরকে দ্রুত যুবকটির নিচ থেকে উঠিয়ে নেই। গ্রামের লোক তাদের দেখে ছিঃ ছিঃ করছে।সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নেই রুদ্রের কে পঞ্চায়েত প্রধানের কাছে নিয়ে যাবে ওদের যে শাস্তি দেওয়ার আছে পঞ্চায়েত প্রধান দিবে।রুদ্ররাও কিছু বলে না তারা পঞ্চায়েত প্রধানের কাছে যেতে রাজি হয়ে যায়। কারণ রুদ্র ও নূর ভেবেছে গ্রামের মানুষ অশিক্ষিত হলেও পঞ্চায়েত প্রধান হয়তো শিক্ষিত হবে।তাই রুদ্র পঞ্চায়েত প্রধানকে বুঝিয়ে বললে হয়তো রুদ্রদের পরিস্থিতি উনি বুঝবেন। এত রাতে গ্রাম ঘুরতে আসলে বিপদ হতে পারে এটি সিরাত খুব ভালোভাবে জানতো।তাই সিরাত তখন ওদের কে এত রাতে বের হতে না করেছিল। কিন্তু রুদ্র ও নূর ওর কেনো কথা শুনে নি।
নূর,সিরাত ও রুদ্র কে নিয়ে আসা হয়েছে পঞ্চায়েত প্রধানের কাছে। পঞ্চায়েত প্রধানকে গ্রামের সকলেই ঘটনাটি বলেছে কিন্তু তার মধ্যে অর্ধেক ছিল বানোয়াট। অবশ্য পঞ্চায়েত প্রধান রুদ্র কেও তাদের পক্ষ নিয়ে বলার পূর্ণ সুযোগ দিয়েছে। রুদ্র পঞ্চায়েত প্রধানকে সব খুলে বলল। রুদ্রের কথা শুনে পঞ্চায়েত গম্ভীর গলায় বলে উঠলেন।
আমি তোমার কথা বুঝতে পারছি। কিন্তু আমাদের গ্রামের ও কিছু নিয়ম আছে।এত রাতে আমাদের গ্রামে যুবক যুবতী ঘুড়াফিরা তো দূরের কথা কেউ কারও দিকে তাকানোর সাহস ও করে না। কিন্তু তোমরা অবিবাহিত শহরের ছেলে মেয়েরা আমাদের গ্রামের নিয়ম না মেনে আমাদের অপমান করেছ। তার উপর গ্রামের লোক তোমাদের বাজে অবস্থায় পেয়েছে।তাই তোমাদের শাস্তি পেতে হবে।
পঞ্চায়েত কথা শুনে রুদ্রের মুখে কাঠিন্যতা ফুটে উঠল রুদ্র রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল।
শাস্তি, আমরা যখন কেনো দোষ করিনি তখন কেনো কোনো শাস্তি ভোগ করবো। আপনাদের গ্রামের এই সকল ফালতু নিয়ম না আমরা মানবো আর না কেনো প্রকার শাস্তি আমরা ভোগ করবো।তাই এটাই ভালো হবে আপনি আমাদের যেতে দিন।আর ওই লোকটিকে হসপিটালে ভর্তি করানোর ব্যবস্থা করুন।
রুদ্রের কথা শুনে হাসলেন পঞ্চায়েত প্রধান তিনি বললেন।
গরম রক্ত এই বয়সে মাথা একটু আধটু গরম থাকবে এটিই স্বাভাবিক। কিন্তু তুমি এই ভেবো না তোমার এই ত্যজ দেখে আমরা ভয় পেয়ে যাবো। আমাদের গ্রামের নিয়ম ভঙ্গ করার শাস্তি তোমাদের ভোগ করতেই হবে।আর তোমাদের শাস্তি হলো।
পঞ্চায়েত প্রধান আর কিছু বলার আগে একটু ছেলে এসে পঞ্চায়েতের কানে কানে কিছু বলতেই পঞ্চায়েত নিজ যায়গা থেকে উঠে ওই ঘরে চলে যায় যেখানে আহত যুবকটিকে রাখা হয়েছে। পঞ্চায়েত প্রধান যুবকটিকে দেখে কিছুটা বিচলিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো।
ইনি এখানে কি করছেন,ওই ছেলে মেয়েগুলো এই ছেলেটির কথা বলছিল।ইনাকে দেখে আমার শাস্তি পরিবর্তন করতে হবে। ওদের আমার অন্য শাস্তি দিতে হবে।
পঞ্চায়েতের কথা শুনে তার পাশে থাকা ছেলেটি বলল।
উনাকে দেখার পরেও কি আমাদের ওদের শাস্তি দেওয়া ঠিক হবে। আপনার এই সিদ্ধান্তের ফল পরবর্তীতে ভয়ংকর হতে পারে।এর প্রভাব পুরো গ্রামের উপর পড়তে পারে।
ছেলেটির কথার প্রতি উত্তরে পঞ্চায়েত প্রধান বলল।
আমাদের গ্রামের নিয়ম কেনো একজনের জন্য বদলাতে পারে না।আর ভবিষ্যতের কথা পরে চিন্তা করা যাবে।
কথাটি বলেই পঞ্চায়েত প্রধান ঘর থেকে বের হয়ে আবার নিজস্থানে বসে বলা শুরু করলো।
তোমাদের শাস্তি হলো তোমাদের মধ্যে যেই মেয়েটিকে ওই আহত যুবকটির সাথে দেখা হয়েছে তার সাথে এই মেয়ের বিয়ে হবে।আর এই যুবককে(রুদ্রের দিকে ইশারা করে) পঞ্চায়েত প্রধানের সাথে বেয়াদবি ও যুবতি মেয়েদের নিয়ে এত রাতে রাস্তায় ঘুড়াফেরা করার জন্য তার পাশের মেয়ে (সিরাতের দিকে ইশারা করে)কে বিয়ে করতে হবে।
পঞ্চায়েত প্রধানের কথা শুনে রুদ্র,সিরাত ও নূরের মাথায় যেনো আকাশ ভেঙ্গে পড়লো।এই লোকগুলো ছোট একটি কথাকে কথাটা বড় বানিয়ে দিয়েছে। নূর এতক্ষণ চুপ থাকলেও এইবার যেনো ওর ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেল। নূর গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে বলল।
পাগল হয়ে গেছেন আপনারা,আপনারা কি বলছেন বুঝতে পারছেন এতটুকু একটি কথাকে কোথা থেকে আপনারা কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন।একটি মেয়ে ও ছেলেকে রাতে একা দেখা মানেই আপনাদের চোখে তারা খারাপ কিছু করছিল। আপনাদের সকলের মাথার চিকিৎসা করানো উচিৎ।আর আপনাদের এই ফালতু শাস্তি আমরা কিছুতেই মানবো না।এখন যা করার এখানে পুলিশ এসে করবে।
কথাটি বলেই নূর ফোনটি বের করে।ফোন বের করেই গ্রামের এক মহিলা এসে তা কেড়ে নেই নূর থেকে।মহিলাটি কর্কশ গলায় বলল।
এই মেয়ে তোমার দেখতাছি অনেক সাহস আমাগো সামনে দাঁড়াইয়া আমাগোরে পুলিশের ডর দেহাও।আমাগো এই গ্রামে একবার যা পঞ্চায়েত প্রধান সিদ্ধান্ত নেই হেইডা কেনো আইন আদালত বদলাইতে পারে না বুঝছো।তাই বিয়া তোমাগো করতেই হবে।
মহিলাটির কথার প্রতি উত্তরে নূর কিছু বলার আগেই রুদ্র তার সামনে থাকা একটি চেয়ার কে লাথি মেরে ফেলে দেয়। তারপর রাগে গজগজ করতে করতে বলল।
আপনাদের সাহস কিভাবে হয় আমাদের সাথে এরুপ আচরণ করার। আপনি জানেন আমি কে আপনাদের সাথে কি করতে পারি। আপনারা চাইলেই আমাদের উপর জোড় করে নিজেদের ইচ্ছে চাপিয়ে দিতে পারেন না।
রুদ্রের কথা শেষ হতেই গ্রামের মানুষ সিরাত, নূর ও রুদ্র কে ঘিড়ে ধরে।যেনো তারা পালাতে না পারে। রুদ্রের এখন মন চাইছে সকলকে মেরে উচিত শিক্ষা দিতে। কিন্তু তবুও রুদ্র নিজেকে সংযত করতে চাইছে কারণ তার সাথে সিরাত ও নূর আছে গ্রামের লোক ওদের কেনো ক্ষতি করতে পারে।
পঞ্চায়েত প্রধান নূর ও সিরাত কে একটি রুমে ও রুদ্র কে আলাদা একটি রুমে বন্দি করে দিলো। এবং তাদের মোবাইল ও তাদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে।যেনো ওরা কিছু করতে না পারে।
এইসকল কিছুর মাঝে সিরাত ছিল নির্বোধ সে নূর ও রুদ্রের মতো এতটা উত্তেজিত হয়নি।সিরাত ভালো ভাবে জানেন এখন শুধু শুধু রাগ দেখিয়ে লাভ নেই এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। গ্রামের মানুষ কিছুতেই ওদের কথা শুনবে না।তাই যা হচ্ছে চুপচাপ মেনে নেওয়া ছাড়া কেনো উপায় নেই।
কাজী এসেছে বিয়ে পড়াতে,কাজী সর্বপ্রথম রুদ্রের কাছে গিয়েছে বিয়ে পড়ানোর জন্য। কিন্তু রুদ্র কবুল বলা তো দূরের কথা কাজের দিকে এমনভাবে তাকায় রুদ্রের চাওনি দেখে কাজীর অন্তর আত্মা যেনো কেঁপে গেল।কাজী রুদ্রের এরুপ চাওনি দেখে রুদ্র কে আর কিছু না বলে পঞ্চায়েত প্রধানের কাছে এসে নালিশ করলো। পঞ্চায়েত প্রধান কাজীর কথা শুনে গ্রামের লোকদের রুদ্র নূর সিরাত ও ওই যুবকটিকে বাহিরে আনতে বলল।
রুদ্র ও সিরাত কে দুটো কাঠের চেয়ারে বসানো হয়েছে এক সাইডের ও নূর ও যুবকটিকে বসানো হয়েছে এক সাইডে। যুবকটিকে গ্রামের একটি লোক ধরে রেখেছে। যুবকটিকে কিছুটা ঙ্গানে আনা হয়েছে কিন্তু যুবকটি এখনো পুরোপুরি ঙ্গান ফিরে পাইনি।
রুদ্র এখনো ঠাই বসে আছে তার ভিতর কেনো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। রুদ্র পণ করেছে আজ কিছুতেই মুখ থেকে কবুল শব্দটি উচ্চারণ করবে না। পঞ্চায়েত প্রধান রুদ্রের কেনো হেলেদুল না দেখে পঞ্চায়েত প্রধান একটি লোককে কিছু ইশারা করলো।ইশারা পেতেই কিছু লোক বন্দুক তাক করে ধরলো নূর ও সিরাতের মাথায়।নূর ও সিরাতের মাথায় বন্দুক ধরতেই চমকে উঠলো নূর,সিরাত ও রুদ্র। হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে তারা পঞ্চায়েত প্রধানের দিকে ওরা এটা ভাবতেই পারছে না এই লোকগুলো এতটা বিপদজনক।
কাজী আবার বিয়ে পড়ানো শুরু করলো।কাজী এইবার বিনা ভয়ে রুদ্রকে বলল।
বলেন বাবা কবুল,
রুদ্র আর কোনো উপায় না পেয়ে তিনবার একসাথে বলে উঠল।
কবুল কবুল কবুল,
এইবার সিরাত কে কবুল বলতে বলা হলো।
সিরাত ও বিনা বাক্য তিনবার কবুল বলে দিলো।সিরাতের কবুল বলতেই নূর কে কবুল বলতে বলা হলো নূর ও বাকি সকলের মাথা এই সময় এতটাই খারাপ যে তারা যুবকটির নাম খেয়াল করলো না। এবং তার সাথে এটিও বুঝতে পারলো না এই যুবকটির পরিচয় পঞ্চায়েত প্রধান জানেন। নূর ও রাগে দুঃখে তিনবার কবুল বলে দিলো।যুবকটিও কাঁপা কাঁপা কন্ঠে কবুল বলতেই নূর ও সে বেঁধে গেল একটি নতুন সম্পর্কে।সিরাত ও রুদ্র যারা সব সময় একজন আরেকজনের সাথে ঝগড়া করতে থাকে। একজন আরেকজনকে খোঁচা মেরে কথা বলে তারা ও এখন স্বামী স্ত্রী।
এই চারজনের জীবন তাদের কোন মোড়ে এসে দাড় করালো। দুজন সম্পূর্ণ অজানা অচেনা ব্যাক্তিকে এক বন্ধনে বেঁধে দিলো।কে এই যুবক যার সাথে অপ্রত্যাশিত ভাবে বিয়ে হয়ে গিয়েছে।
রুদ্র ও সিরাত তারা দুজন তো দুই মেরুর প্রাণী ওরা কি মেনে নিতে পারবে এই বিয়ে।ওরা কিভাবে জানাবে ওদের পরিবারকে এই বিয়ে সম্পর্কে তারা কি কখনো মেনে নিব।
কি ঘটবে ওদের চারজনের জীবনে।কি ঘটতে চলেছে সামনে..
#চলবে…
#তুমি_শুধু_গল্প_না_আমার_ভালোবাসা
#আমেনা_আক্তার
#পর্ব_২৫
গাড়ি চলতে তার নিজ গতিতে। নূর, সিরাত ও রুদ্র হসপিটালে যাচ্ছে অচেনা যুবকটিকে নিয়ে যার সাথে কিছুক্ষণ আগেই নূর একটি নতুন বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে।যার নাম ঠিকানা কিছুই জানেনা নূর। নূরের একদম মন চাইছে না যুবকটিকে হসপিটালে নিয়ে গিয়ে তার চিকিৎসা করাতে। কারণ নূর মনে প্রাণে বিশ্বাস করে এই সকল কিছু এই যুবকটির জন্যই ঘটেছে। কিন্তু তবুও মানুষ বলেও তো একটি কথা আছে।
ওদের বিয়ে সম্পন্ন হয়ে যাওয়ার পরেই ওদের কে ছেড়ে দিয়েছে গ্রামবাসী। রুদ্র এখনো বসে বসে রাগে গজগজ করছে।ও এখনো নিজের জীবনের হিসেব মিলাতে পারছে না। রুদ্র এটি ভেবে অবাক হচ্ছে এতটুকু সাধারণ ব্যাপারে গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান তাদের এইরকম শাস্তি কেনো দিলো। এমন নিচ মানসিকতা মানুষের মাঝে এখনো আছে।তা এই লোকগুলোকে না দেখলে ও জানতে পারতো না।রুদ্রের ভাবনার মাঝে ওর মাথায় হঠাৎ একটি ভাবনা এসে হানা দিলো। রুদ্র নূর ও সিরাত কে উদ্দেশ্য করে বলল।
আচ্ছা আমাদের পরিচয় পঞ্চায়েত প্রধান আমাদের NID কার্ড থেকে সংগ্রহ করেছে। কিন্তু এই ছেলেটিকে তো আমরা আগেই চেক করে দেখেছি ওর সাথে কিছুই পাওয়া যায়নি।তাহলে ওই ছেলেটির পরিচয় পঞ্চায়েত প্রধান কোথায় পেলো।আর আমরা তো এমন কেনো ভুল করিনি যার জন্য উনি আমাদের বিয়ে পড়িয়ে দিয়েছে। আবার পঞ্চায়েত প্রধানের লোকদের কাছে বন্দুক ও ছিল। আমার মনে ইচ্ছে এই সকল কিছুর পিছনে অনেক বব বড় কেনো ষড়যন্ত্র আছে যা আমরা বুঝতে পারছি না।
রুদ্রকে কথা শুনে রুদ্রের সাথে সিরাত ও নূর ও চিন্তিত হয়ে পড়ে। নূর চিন্তিত স্বরে বলল।
পঞ্চায়েত প্রধান আমাদের সাথে কি ষড়যন্ত্র করতে পারে।উনি তো আমাদের কে ভালোভাবে চিনেন ও না।
নূরের কথার প্রতি উত্তরে সিরাত বলল।
হ্যাঁ উনি আমাদের চিনেন না কিন্তু এই উনাকে খুব ভালোভাবে চিনেন। আমার মনে হয় ইনাকে নিয়ে আমাদের এই গ্রামের হসপিটালে যাওয়া ঠিক হবে না। ওইখানে বড় কেনো ফাঁদ আমাদের চারজনের জন্য অপেক্ষা করছে।
সিরাতের কথার গভীরতা রুদ্র বুঝতে পারছে। রুদ্র ড্রাইভার কে গাড়ি ঘুড়িয়ে নিতে বলেছে রুদ্র। এবং ড্রাইভার কে উদ্দেশ্য করে বলল।
আপনি তো এই গ্রামে আগেও এসেছেন আপনি ।কি মেইন রোড ছাড়াও কেনো রাস্তা চিনেন যা দিয়ে সূর্যধারী গ্রামে যাওয়া যাবে।
হ্যা একটু রাস্তা আছে, কিন্তু ওই রাস্তা দিয়ে যেতে সময় লাগতে পারে।
সময় লাগলে সমস্যা নেই আপনি ওই রাস্তা দিয়েই গাড়ি ঘুড়ান।এখন গাড়ি শুধু সূর্যধারী গ্রামে গিয়ে থামবে।তার আগে গাড়ি কোথাও থামাবেন না।
রুদ্রের কথা মতো ড্রাইভার গাড়ি ঘুড়িয়ে সূর্যধারী গ্রামের দিকে নিয়ে যায়।অন্য একটি পথ দিয়ে।
___________________________________
রুদ্র,সিরাত ও নূর বসে আছে হসপিটালের করিডোরের একটি কাঠের তৈরি শক্ত চেয়ারে। রুদ্রের সাথে আনা যুবকটিকে হসপিটালে ভর্তি করানো হয়েছে। সকালের আলো এসে উঁকি মারছে হসপিটালের জানালা দিয়ে।সিরাত বিভোর চিন্তায় ব্যস্ত হয়ে আছে।ওকে এখন স্বাভাবিক দেখালেও সবচেয়ে বেশি চিন্তিত হয়ে আছে সিরাত।
সিরাতের কোনো ভুল না থাকা সত্ত্বেও আঙ্গুল যে ওর উপর উঠবে এটি বেশ ভালোভাবে জানে সিরাত।সিরাত রেহানা বেগম কে কি উত্তর দিবে এই কথাটি চিন্তা করেই যেনো সিরাতের মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। রেহানা বেগম সিরাতকে অনেক বিশ্বাস করে একা আসতে দিয়েছে কিন্তু সিরাত মায়ের বিশ্বাসের মর্যাদা রাখতে পারেনি।
সিরাতের ভাবনার মাঝে হসপিটালে হঠাৎ শোরগোল লেগে গেল। পনেরো বিশজন জন ছেলে একসাথে হসপিটালে প্রবেশ করে ও তাদের মধ্যে হসপিটালে প্রবেশ করেন মধ্য বয়স্ক একজন পুরুষ। পুরুষটি ব্যস্ত পায়ে হেঁটে আসছে করিডোরের দিকে। পুরুষটির মুখে গম্ভীরর্যতা স্পষ্টভাবে ফুটে ফুটে উঠেছে। পুরুষটি রুদ্রদের কাছে এসে ভরাট কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো।
তোমরা আদিত্যকে কোথায় পেয়েছ।
লোকটির কথা শুনে রুদ্র তাকায় তার দিকে। রুদ্র ঠিক বুঝতে পারেনি কার কথা জিজ্ঞেস করেছে।আর ওর বুঝার কথা ও না কারণ রুদ্র বা নূর, সিরাত ও ছেলেটির নাম জানে না।রুদ্র লোকটিকে পর্যবেক্ষণ করে পাল্টা প্রশ্ন করে।
কে আপনি আর কোন আদিত্যের কথা জিজ্ঞেস করছেন?
রুদ্রের পাল্টা প্রশ্ন লোকটির পছন্দ হলো না।লোকটি রুদ্রের দিকে তাকিয়ে ধারালো কন্ঠে বলল।
যাকে তোমরা মাঝ রাতে হসপিটালে ভর্তি করিয়েছ ওর নাম আদিত্যে চোধুরী।আর আমি ওর বাবা আফজাল চৌধুরী।
আফজাল চৌধুরীর কথা শেষ হতেই রুদ্র আবার তাকে প্রশ্ন করে বলল।
আপনি কি বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ আফজাল চৌধুরী?
এত প্রশ্ন আমার পছন্দ না ছেলে আমি যা জিজ্ঞেস করেছি তুমি শুধু সেই প্রশ্নের উত্তর দাও।আর হ্যা তুমি যখন প্রশ্ন করেছ আমি তার উত্তর দিচ্ছি ।হ্যা আমি রাজনীতিবিদ আফজাল চৌধুরী।
আফজাল চৌধুরীর কথা শুনে রুদ্র নূরের দিকে তাকায়।নূর রাজনীতির কথা শুনে চোখ মুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে। নূর যেই জিনিসটিকে সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করে অবশেষে তাই জুটলো ওর কপালে। রুদ্রের এখন নিজের থেকে বেশি নূরের জন্য কষ্ট লাগছে।আহ বেচারি যেইটা থেকে সব সময় দূরে পালিয়েছে এখন সারাজীবন ওকে তাই বহন করে চলতে হবে। আসলে মানুষ ঠিকই বলে তুমি যেই জিনিসকে বেশি ঘৃণা করবে তাই তোমার জীবনের সাথে জড়িত যাবে।
তুমি এখনো আমার প্রশ্নের জবাব দাওনি।
আফজাল চৌধুরীর কথা শুনে রুদ্র কিছু বলার আগে নূর বলল।
এক তো আমরা আপনাদের সাহায্য করেছি তার উপর আপনি আমাদের সাথে এমন ব্যবহার করছেন। আমাদের ও কেনো আগ্রহ নেই আপনারা কে প্রশ্ন করার বা আপনার সাথে কথা বলার।তাই সোজা উত্তর দিচ্ছি।আপনার ছেলেকে আমরা সূর্যধারী গ্রামের পাশের গ্রামে রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় আধমরা পেয়েছি। কিন্তু ওর জন্য আমরা অনেক সাফার করেছি।এখন আপনি আপনার ছেলেকে সামলান আমাদের দায়িত্ব শেষ।
কথাগুলো বলে থামে নূর ওর শরীর কাঁপছে রাগে একতো ওই ছেলের জন্য তাদের এত কিছু সহ্য করতে হয়েছে তার উপর ওই ছেলের বাবা ওদের উপর জোড় দেখাচ্ছে। আলতাফ চৌধুরী তাকিয়ে নূরের আছে নূরের দিকে। নূর রাগে ফুঁসছে। তিনি ভাবতেও পারেননি মেয়েটি এত কঠিন কন্ঠে তার কথার জবাব দিবে। আলতাফ শিকদার নূরের দিকে তাকিয়ে সামান্য হেসে বলল।
তোমার কথায় তেজ আছে মেয়ে, সত্যি তোমরা আমার ছেলের জীবন বাঁচিয়েছ। এবং ভালো করেছ চাঁদপুর গ্রামের হসপিটালে তোমরা ওকে নিয়ে যাওনি ওইখানে শত্রুরা তোমাদের অপেক্ষায় ছিল বসে ছিল। এইজন্য তোমাদের ধন্যবাদ।আর আমার ব্যবহারের জন্য মাফ চাইছি। আদিত্যের অবস্থা দেখে আমার মাথা গরম হয়ে গিয়েছিল।
আলতাফ চৌধুরীর কথা শুনে নূর কিছুটা শান্ত হয়। এরপর আলতাফ চৌধুরী কে বলল।
আমাদের দায়িত্ব শেষ আপনার ছেলেকে আপনি সামলান এখন।
কথাটি বলেই নূর হসপিটাল থেকে বের হওয়ার উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরলো।তার পিছনে যাচ্ছে সিরাত ও রুদ্র।আলতাফ চৌধুরী তাঁদের নাম জিজ্ঞেস করতে চাইছিলেন কিন্তু তার আগেই নূর চলে যায়। আলতাফ চৌধুরী ও এ নিয়ে আর ভাবে না। কারণ উনি চাইলে ওদের পুরো ডিটেইলস বের করতে সময় লাগবে না। কিন্তু এখন আলতাফ চৌধুরীর চিন্তা হচ্ছে নিজের ছেলের জন্য।কার এত বড় সাহস যে আদিত্যের উপর হামলা করেছে।এই বিষয়ে অবশ্য উনার চিন্তা করার কেনো প্রয়োজন নেই। কারণ আদিত্য সুস্থ হওয়ার পর সে নিজেই সকল কিছু বের করে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি দিবে। কিন্তু সেই শাস্তি হবে ভয়াবহ আদিত্য তার শত্রুদের কি হাল করে তা আদিত্যের বাবা বেশ ভালোভাবে জানে।
___________________________________
গাড়ি চলছে ঢাকার উদ্দেশে। গাড়ির আশেপাশ খুব সুন্দর পরিবেশ দেখা যাচ্ছে। নূর,সিরাত রুদ্র তিনজনের মধ্যে একজনার ধ্যান সেই দিকে নেই তিনজন ডুবে আছে নিজ ভাবনায়। নূর নিজের সদ্য বিয়ে করা স্বামীকে ফেলে এসেছে একেবারের জন্য। এমনিতেই নূর এই বিয়ে মানতে পারছিল না।তার উপর যখন থেকে শুনেছে আদিত্যের বাবা এমপি তখন থেকে যেনো আরো বিতৃষ্ণা লেগে গিয়েছে নূরের আদিত্যের উপর। নূর আর যাই করুক না কেনো ওই লোককে কখনো স্বামী হিসেবে মেনে নিবে না।
গাড়ির নিরবতার মাঝে হঠাৎ রুদ্র সিরাতকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো।
তুমি বিয়ের জন্য একবারও না কেনো করোনি?
সিরাত রুদ্রের কথায় ভাব অলসহীন ভাবে উত্তর দিলো।
আমার মন চাইনি তাই?
সিরাতের জবাব শুনে রুদ্রের মাথা জেনো আরো গরম হয়ে গেল। রুদ্র দাঁতে দাঁত চেপে বলল।
ও তাহলে তোমার আমাকে বিয়ে করার অনেক শখ জেগেছিল তাই তুমি বিয়ের জন্য একবারও না করোনি।
প্রথমত,আমার হাতে যদি কিছু থাকতো আমি তোমাকে বিয়ে করার চেয়ে সারাজীবন কুমারী থাকতে পছন্দ করতাম আর দ্বিতীয়ত আমি যদি ওইখানে গলা ফাটিয়ে চিল্লিয়ে ও বললতাম তবুও ওরা আমার কথা শুনতো না যেমনটা তোমার শুনেনি।
রুদ্র সিরাতের কথা শুনে বলল।
ঢাকা গিয়ে আমি ডিভোর্স পেপার বানাতে দিবো ডিভোর্স পেপার বানানো হয়ে গেলে চুপচাপ সাইন করে দিবে।আমি তোমার সাথে থাকতে পারবো না।
রুদ্রের কথার প্রতি উত্তরে সিরাত কিছু বললো না। এখন শুধু ঢাকা পৌছাবার অপেক্ষা..
#চলবে…
#তুমি_শুধু_গল্প_না_আমার_ভালোবাসা
#আমেনা_আক্তার
#পর্ব_২৬
গাড়ি এসে থেমেছে সিরাতের বাড়ির সামনে।মূলত নূর বলেছিল সর্ব প্রথম সিরাতের বাড়িতে গাড়ি থামাতে এর কারণ অবশ্য সিরাত ও রুদ্র জানতে চাইনি।সিরাত গাড়ি থেকে নামতেই নূর রুদ্রকে উদ্দেশ্যে করে বলল।
তুই ও গাড়ি থেকে নাম।
নূরের কথা শুনে রুদ্র ব্লু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো।
আমি কেনো নামবো?
কারণ আমরাও সিরাতের বাসায় যাবো।
নূরের কথা শুনে রুদ্র ও নূর একসাথে বলে উঠল।
কেনো?
যাওয়ার পরেই বুঝতে পারবি।
নূরের কথা শুনে সিরাত ও রুদ্র আর কেনো কথা না বলে হাঁটা শুরু করে। কারণ তাদের মধ্যে এখন আর কিছু বলার মন মানসিকতা নেই। অনেক ধকল গিয়েছে সবার উপর দিয়ে। ওদের তিনজনেরই বিশ্রামের প্রয়োজন।সিরাতের পা যেনো কেনো মতেই চলছে না।ওর মনে হচ্ছে ও একপা আগাচ্ছে তো দু পা পিছিয়ে যাচ্ছে।ও বুঝতে পারছে না মাকে কি জবাব দিবে।মা ওকে কতটা বিশ্বাস করে কিন্তু সিরাত বিশ্বাসের মর্যাদা রাখতে পারলো না। নিজেকে আজ সিরাতের ব্যর্থ মনে হচ্ছে। নিজের তিন মেয়ের থেকে সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস রেহানা বেগম সিরাত কে করে।তাই সিরাতের বেশি ভয় লাগছে।ওর মায়ের বিশ্বাস না ভেঙ্গে যায়।
কথাগুলো ভাবতে ভাবতে সিরাত তাদের ফ্ল্যাটের সামনে পৌঁছালো।সিরাতের হাত কাঁপছে কলিং বেল বাজাতে।সিরাত নিজেকে ধাতস্থ করছে মায়ের সামনে যাওয়ার জন্য।সিরাত কলিং বেল বাজানোর আগে রুদ্র কলিং বেল বাজায়। এবং সিরাতকে উদ্দেশ্য করে বলল।
আমাদের কাছে সারাদিন নেই যে তুমি এখানে দাঁড়িয়ে নাটক করতে থাকবে।
রুদ্র কথাটি শেষ করতেই সিরাতদের ঘরের দরজা খুলে যায়।সকলে সেখানে তাকানোর আগেই থাস করে থাপ্পড়ের শব্দ বেজে উঠল সকলের কানে।সবাই হতভম্ব যায় কিন্তু থাপ্পড় তো সিরাতের গালে পড়ার কথা ছিল তাহলে থাপ্পড় টি রুদ্রের গালে পড়লো কিভাবে। রুদ্র হতভম্ব হয়ে সামনে তাকাতেই দেখতে পায় তার বাবা রুবেল মির্জা দাঁড়িয়ে আছে সামনে।
শুধু যে রুবেল মির্জাকে দেখে রুদ্র অবাক হয়েছে তা নয়।সিরাত ও প্রচুর অবাক হয়েছে।এটি ভেবে রুবেল মির্জা তাদের বাড়িতে কিভাবে আসলো কিংবা তিনি রুদ্রকে থাপ্পড়ই বা কেনো মারলেন।ওনারা সব জেনে গেলেন না তো। কিন্তু উনারা কিভাবে কিছু জানবেন।সিরাতের ভাবনার মাঝে নূর বলে উঠলো।
আমি জানিয়েছি সকলকে, নূরের কথা শুনে রুদ্র ও সিরাত দু’জনেই ওর দিকে তাকায় তখনি রুবেল মির্জা তাদের উদ্দেশ্য করে বলল।
আমি চাচ্ছি না বাইরের মানুষদের আমাদের ব্যক্তিগত কিছু জানাতে।তাই ভিতরে আসে তারপর কথা হবে।
রুবেল মির্জার কথা শুনে ওরা তিনজন ভিতরে প্রবেশ করল। ভিতরে প্রবেশ করে দেখে রুদ্র ও সিরাতের পরিবারের সাথে রুদ্র ও নূরের বন্ধুরাও এখানে আছে।সিরাত সকলকে এড়িয়ে মায়ের দিকে তাকায়। মায়ের দিকে তাকাতেই যেনো সিরাতের কলিজা ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে।
সিরাত আর নিজেকে সংযত করে রাখতে পারলো না।সে মায়ের কাছে গিয়ে মাকে জাপটে ধরে বলল।
মা তুমি কি আমাকে বিশ্বাস করো না। তুমি কি বিশ্বাস করো তোমার মেয়ে কিছু জেনে বুঝে কেনো ভুল কাজ করতে পারে।আমি তোমার মেয়ে মা আমি কখনো এমন কাজ করবো না যাতে তোমার মাথা নিচু করে থাকতে হয়।আমি যা কিছু করেছি বাধ্য হয়ে করেছি।
সিরাত এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে থামলো। কিন্তু রেহানা বেগম কেনো প্রতি উত্তর না করে আগের মতোই ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে।সিরাত মাকে ছেড়ে দেয় একবার মায়ের দিকে তাকিয়ে অতঃপর সকলের দিকে তাকিয়ে সকলের উদ্দেশ্যে বলল।
আমি কেনো দোষ করিনি তাই আমি কাওকে নিজের কেনো কাজের জন্য বর্ণনা দিবো না।সিরাতের কথা শুনে রুবেল মির্জা বলল।
তোমাদের কেনো কিছুর বর্ণনা দিতে হবে না।যা হয়েছে তা তোমরা ইচ্ছাকৃতভাবে না করলেও এতে তোমাদের ও দোষ ছিল। তাই এর সঠিক সমাধান আমাদের করতে হবে।
রুবেল মির্জার কথা শুনে রুদ্র সোজা সাপ্টা উত্তরে বলল।
কিছু করতে হবে না তোমাদের আমি আজই ডিভোর্স পেপার তৈরি….
রুদ্র আর কিছু বলার আগেই রুদ্রের গালে পড়লো দ্বিতীয় থাপ্পড়।আর এটি দিয়েছে রুদ্রের মা। রুদ্র অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে আছে মায়ের দিকে। কেননা রুদ্রের মা রুদ্র কে একটি পিঁপড়া কামড়ালে ও যেখানে কষ্ট পায় সেখানে আজ রুদ্রের মা রুদ্র কে থাপ্পড় মেরেছে। রুদ্রের মা রুদ্র কে উদ্দেশ্য করে বলল।
বিয়ে কি কোনো ছেলেখেলা মনে করেছিস তুই।যে করলি আর ছেড়ে দিলি। তুই মানিস আর না মানিস এখন থেকে সিরাত তোর স্ত্রী আর মির্জা বাড়ির বউ এখন থেকে তোর ওর সাথেই সংসার করতে হবে।আজ থেকে তোরা দুজন সাধারণ স্বামী স্ত্রীর মতো সংসার করবি।
রুদ্রের মায়ের কথা শুনে রুদ্র ও সিরাত একসাথেই বলে উঠলো।
অসম্ভব,
কথাটি বলেই দুজন দুদিকে চলে যায়।
রুদ্র দাঁড়িয়ে আছে সিরাতদের ব্যালকনিতে শুধু সে দাঁড়িয়ে নেই রাগে ফুঁসছে রুদ্র।তখনি রুদ্রকে পিছন থেকে ঘিরে ধরে ওর বন্ধুরা আব্রাহাম রুদ্র কে উদ্দেশ্য করে বলল।
বিয়ে করে এখন কেমন লাগছে দোস্ত।
আব্রাহামের কথার সাথে তাল মিলিয়ে রাজ বলল।
অবশ্য খুব অসাধারণ অনুভূতি হচ্ছে। কারণ যেই মেয়েকে রুদ্র সবচেয়ে বেশি অপছন্দ করে তার সাথেই ওর বিয়ে হয়েছে।
রুদ্র তার বন্ধুদের কথা শুনে ওর রাগ যেনো কয়েক ধাপ আরো বেড়ে গেল।তখনি রুদ্র দেখলো নূর ও সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে । রুদ্র রাগে গজগজ করতে করতে নূরের কাছে গিয়ে বললো।
তুই তো ওদের আমার বিয়ের কথা বলে দিয়েছিস কিন্তু ওদের কি তোর কথা বলেছিস।যে শুধু আমার ও সিরাতের বিয়ে হয়নি।তোর ও বিয়ে হয়ে গিয়েছে একজন অচেনা ব্যাক্তির সাথে।
রুদ্রের কথা শুনে যেনো সকলে আকাশ থেকে পড়লো। হৃদিতা নূরের কাছে এসে বলল।
রুদ্র কি বলছে, আমাদের পাথরের বুকে ফুল ফুটালো কে।
হৃদিতার কথার সাথে তাল মিলিয়ে আরশাদ বলল।
তুই আমাদের থেকে এত বড় সত্য লুকাতে পারলি শয়তান,তুই কি চাস আমরা আমাদের দুলাভাইয়ের সাথে দেখা করতে না পারি।
আরশাদের কথা শুনে রুদ্র এবার হেসে বলল।
তোদের তো একটি ইন্টারেস্টিং কথা বলাই হয়নি, জানিস আমাদের দুলাভাই কি করে?
রুদ্রের কথা শুনে সকলে একসাথে বলে উঠল।
কি করে?
রাজনীতি.
রুদ্রের কথা শুনে অশান্ত পরিবেশটি মুহূর্তের মধ্যে শান্ত রুপে পরিনত হলো। ওদের সকলের মনে হচ্ছে কানে কিছু ভুল শুনেছে। নূরের স্বামী তাও রাজনীতি এ কি আধো সম্ভব।সকলে নূরের দিকে বড়বড় চোখ করে তাকায় নূর ওদের এভাবে তাকানো দেখে বলল।
ও আমার কিছু লাগে না, আমাদের সাথে যাই কিছু ঘটেছে ওর জন্যই ঘটেছে।আমি আর একবার ওর কথা শুনতে চাই না। কথাটি বলেই নূর চলে যায় সেখান থেকে।
সিরাত নিজের রুমে চোখ বন্ধ করে খাটের সাথে আধশোয়া হয়ে শুয়ে আছে। ভিশন ক্লান্ত এখন ও রাত এক ফোঁটাও ঘুমাতে পারেনি। শুধু সিরাত কেনো রুদ্র ও নূর ও তো এক মুহুর্তের জন্যও ঘুমাইনি।রাতে যেনো ঘুম ওদের চোখ থেকে উড়ে গিয়েছিল। কিন্তু এখন যেনো কেনো মতে চোখ দুটোকে খুলে রাখতে পারছে না।
সিরাতের দরজায় নক করে রেহানা বেগম।সিরাতের অনুমতি পেয়ে উনি রুমে প্রবেশ করে।সিরাত নিজের দুর্বল চোখ দুটো জোড় করে মেলে তাকায় মায়ের দিকে।মাকে দেখে সিরাত একটি শুষ্ক হাসি দেয় তখনি রেহানা বেগম এসে জাপটে ধরে রেহানা বেগম।
সিরাত আর নিজেকে সামলাতে পারে না।সেও মাকে জাপটে ধরে কেঁদে ফেললো। এতক্ষণ সকলের সামনে নিজেকে শক্ত রাখলেও মায়ের সামনে যেনো সকল কষ্ট চোখের অশ্রুর মাধ্যমে প্রকাশ করছে। রেহানা বেগম স্নেহের হাত বুলিয়ে দিতে দিতে সিরাতকে বলল।
কাল সারারাত আমার মেয়েটার উপর দিয়ে অনেক কিছু গিয়েছে আমি জানি। কিন্তু আমার মেয়ে নিজের কষ্ট কারও সামনে প্রকাশ করবে না।এটিও আমি ভালোভাবে জানি।আমার আম্মু তুই চিন্তা করিস না আমি ভালোভাবে জানি তুই কখনো নিজের ইচ্ছায় এমন কিছু করবি না যাতে আমি কষ্ট পাই।
সিরাত কান্না করতে থাকে তার মাকে ধরে তখন রেহানা বেগম আবার সিরাতের উদ্দেশ্যে বলল।
এই জীবন অনেক কঠিনরে মা,আমরা যতই বলি আমাদের কারও প্রয়োজন নেই কিন্তু সকলেরই জীবনে একজন হাত ধরার মতো কারও প্রয়োজন হয়।আমি জানি তোদের বিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে হয়েছে। কিন্তু আমি চাই তুই এই বিয়েটাকে একবার সুযোগ দিয়ে দেখ।বিয়ে কেনো ছেলে খেলা না তাই আল্লাহ তায়ালা যখন তোর ভাগ্য রুদ্র কে লিখে দিয়েছে তখন নিশ্চয়ই উনি উত্তম পরিকল্পনা করেই তোদের এক বন্ধনে আবদ্ধ করেছে।তাই নিজের ভাগ্যকে একটি সুযোগ দিয়ে দেখ।
সিরাত মায়ের কথা শান্ত হয়ে শুনে মা ওকে যা বলতে চাইছে তা সিরাত ভালোভাবে বুঝতে পারছে।সিরাত বুঝতে পারছে ওর মা চাইছে ও যেনো রুদ্রের সাথে নতুন জীবন শুরু করে।সিরাতের মা সিরাতের কাছে কখনো বেশি কিছু চাইনা তাই সিরাত এটি মায়ের ইচ্ছা ভেবে মেনে নিলো। কিন্তু মনে মনে এই ওয়াদা ও করলো ওই বদ মেজাজি রুদ্র কে ও সোজা করে ছাড়বে।
রেহানা বেগম সিরাতকে রাজি করাতে পেরে একটি শান্তির নিশ্বাস ছাড়লো। এদিকে নূর একা এক ধ্যানে আকাশের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ।তখনি নূরের পিছন থেকে হৃদিতা এসে ওকে জাপটে ধরে বলল।
আমরা আছি তো জান,আমরা যতই তোকে নিয়ে ঠাট্টা করি আমরা জানি তুই এখন কতটা কষ্টে আছিস। তোর আরো বেশি কষ্ট লাগছে এটা ভেবে তোর পাশে তোর পরিবার নেই। কিন্তু আমরা আছি না আমরা সবাই তো একটি পরিবার।
নূরের কথার সাথে তাল মিলিয়ে রুদ্র বলল।
হৃদয় ঠিকই বলেছে, তোর কিছু চিন্তা করার প্রয়োজন নেই আমরা সব সময় তোর সাথে আছি। পরিস্থিতি যেই রকম হোক না কেনো। সকল পরিস্থিতিতে তুই আমাদের পাশে পাবি।
বন্ধুদের কথায় নূর কিছুটা আশ্বাস পায়। এখন কে আছে ওকে সামলানোর ওর বন্ধুরা ছাড়া। তবুও যে মনের ভিতর যেই ঝড়ে হাওয়া বয়ে চলেছে তা থামছে না।একই পরিস্থিতির সাথে লড়াই করছে সিরাত ও রুদ্র।
___________________________________
রুদ্র ও সিরাত দাঁড়িয়ে আছে রুদ্রদের বাড়ির দরজার বাইরে। শাহানারা মির্জা বরণ ডালা তৈরি করছে। রুবেল মির্জা ও রুদ্রের বন্ধুরা ভিতরে দাঁড়িয়ে মুখ টিপে হাসছে।আর রুদ্র তাই করছে যা ও সবসময় করে রাগে গজগজ।সিরাতের মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে না ও খুশি হয়েছে নাকি কষ্ট পেয়েছ। শাহানারা মির্জা রুদ্র ও সিরাত কে বরণ করা শেষে রুদ্র কে উদ্দেশ্য করে বলল।
এখন বউকে কুলে তুলে ঘরের ভিতরে প্রবেশ কর।
শাহানারা মির্জার কথায় রুদ্র…
#চলবে…