#তুমি_শুধু_গল্প_না_আমার_ভালোবাসা
#আমেনা_আক্তার
#পর্ব_৩০
নূরের ধ্যান ভাঙ্গে যেই ছেলেটি পালানোর চেষ্টা করছিল সেই ছেলেটির আর্তনাদ শুনে।নূর ঝটপট সরে যায় আদিত্যের কাছ থেকে। আদিত্যর গার্ডরা ছেলেটিকে অনেক খারাপ ভাবে মারছে।আর আদিত্য ভাব অলসহীন ভাবে দাড়িয়ে আছে যেনো এখানে কিছুই হয়নি।এর মধ্যে আরিফ আদিত্যের কাছে এসে বলল।
ভাই এখন কি ওদের মারা বন্ধ করব, ওদের অবস্থা তো খারাপ হয়ে গেছে।
আদিত্য গরম চোখে আরিফের দিকে তাকিয়ে বলল।
আমি তোকে ওদের মারা বন্ধ করতে বলেছি।
আদিত্যর কথা শুনে নূর ঘৃণা ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে কিছুটা উচ্চ স্বরে বলল।
গুন্ডা কোথাকার, এ কি অবস্থা করেছ এদেরকে মেরে। তোমার মনে একটুও মায়া দয়া নেই। লোকগুলো কিভাবে নিজের প্রাণের ভিক্ষা চাইছে।তবুও কি তোমার একটুও মায়া লাগছে না ওদের জন্য।আমি ভাবতাম রাজনীতি যারা করে তারা সকলে হয়তো খারাপ হয়না।আমার ভাবনা হয়তো বা ভুল। কিন্তু না তোমাকে দেখে আমার বিশ্বাস হয়ে গেল রাজনীতি যারা করে তারা সকলেই তোমার মতো জানোয়ার। তুমি একটা জঘন্য লোক।
নূর কথাগুলো বলে রাগে থরথর করে কাঁপছে।তার সাথে কাঁপছে নূরের দুটো ঠোঁট।নূর রাগের বশে কি বলছে ও বোধহয় নিজেও বুঝতে পারছে না।আদিত্য তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে নূরের কথাগুলো শ্রবণ করছে। এদিকে আরিফ ভয়ে থরথর করে কাঁপছে।এই ভেবে এই মেয়ের অবস্থা আদিত্য কি করতে পারে।এই মেয়ের কি প্রাণের মায়া নেই ও আদিত্যের সামনে দাঁড়িয়ে এক তো উচু গলায় কথা বলছে।তার উপর ওকে গুন্ডা ও জানোয়ার বলছে।এর পরিনতি কতটা ভয়াবহ হতে পারে তা আরিফ বেশ ভালোভাবে জানে।আরিফ ভালোভাবে জানে আদিত্যেকে এখন যতটা শান্ত দেখাচ্ছে আদিত্য ভিতর থেকে ঠিক ততটাই ভয়ংকর। আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলো।
তুমি আমাকে চিনো, আমার সম্পর্কে জেনে শুনে কথা বলছো তো।
না চিনি না আর চিনার প্রয়োজন ও বোধ করছি না।না আসলে চিনার প্রয়োজন ছিল।তাহলে দয়া দেখাতে গিয়ে আমার জীবনটাতো আর নষ্ট হতো না।আমি ভেবেছিলাম তোমার কেনো দোষ নেই কিন্তু না এখন দেখছি সব দোষ তোমার। তোমার জন্য সব কিছু হয়েছে।সব কিছুর মুলে তুমিই ছিলে। তুমি আমার জীবন নষ্ট করেছ আর এখন। তোমার সাথে আমার কেনো সম্পর্ক নেই বুঝেছ। তুমি আমার কিছু হও না। তোমার সাথে আমার কেনো সম্পর্ক নেই। আমার জীবনে কখনো ইন্টারফেয়ার করার চেষ্টা করবে না।আর যদি করো আমি তোমার জান নিয়ে নিবো।
কথাটি বলেই নূর সেখান থেকে দ্রুত পায়ে হেঁটে চলে যায়।
নূরের কথাটি সকলের কানেই পৌঁছেছে,আরিফ ভয়ে ভয়ে তাকায় আদিত্যের দিকে। কারণ আদিত্যের দিকে কেউ চোখ তুলে তাকালেও আদিত্য তা পছন্দ করে না। কিন্তু একতো এই মেয়ে আদিত্যের উপর এসে পরেছে। আবার আদিত্যের সামনে গুন্ডা বলে তাকে আখ্যায়িত করে আবার হাবিজাবি কি কথা বলে গেল।তার থেকে বড় কথা আদিত্য কে মারার হুমকি দিয়ে গিয়েছে এই মেয়ে। কিন্তু আদিত্য একদম শান্ত চোখে তাকিয়ে আছে নূরের যাওয়ার পথে। শুধু আদিত্য জানে ওর মনে কি চলছে। আদিত্য নূরের যাওয়ার পানে তাকিয়ে বাঁকা হাসে।এই হাসির রহস্য শুধু মাত্র আদিত্য জানে। আদিত্যর হাসি অন্য মানুষের কাছে যতটা স্বাভাবিক লাগবে।ঠিক ততটাই অস্বাভাবিক আরিফের কাছে।আরিফ আদিত্যের দিকে তাকিয়ে শুকনো এক ঢোক গিলে।
___________________________________
নূর রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে ভার্সিটিতে পৌছায়। সেখানে রুদ্র, হৃদিতা, আরশাদ,রাজ, আব্রাহাম ও আয়না সকলে উপস্থিত ছিল। নূরের অবস্থা দেখে হৃদিতা প্রশ্ন করলো।
কি হয়েছে তোর তুই এমন করছিস কেনো।
নূর কর্কশ গলায় উত্তরে বলল।
পরে বলবো, এখন আমার মুড ঠিক নেই। কোথায় যাবি চল।
নূরের কথা শুনে কেউ আর কিছু বললো না। কারণ নূরের বন্ধুরা বেশ ভালোভাবে জানে নূরের মুড ঠিক না হতে ও কিছু বলবে না। সকলে মিলে গাড়ির ভিতরে বসেছে।আয়না বসেছে জানালার পাশে নূর ও হৃদিতা বসেছে আয়নার পাশের সিটে। তাদের সামনের সিটে বসেছে রাজ, আব্রাহাম ও আরশাদ আর ড্রাইভারের সাথে বসেছে রুদ্র।রাজ সিরাতকে সাথে নিয়ে আসতে বলেছিল রুদ্রকে। কিন্তু রুদ্র তো রুদ্র ও কি কারও কথা শোনার মতো মানুষ।
গাড়ি চলছে নিজ গতিতে,সকলে মিলে আড্ডা দিচ্ছে।আর আয়না জানালার বাইরে তাকিয়ে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে ব্যস্ত হয়ে আছে। তখনি রাজ আব্রাহামের উদ্দেশ্যে করে বলে উঠলো।
আব্রাহাম নুসাইব কেমন আছে। অনেকদিন যাবত তোদের বাড়িতে যাওয়া হয়না।
আদিত্য জবাবে বলল,
ও ভালো আছে, ভাবি তোদের বাড়িতে যেতে বলেছে। কিন্তু কিছুদিন যাবত অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটনা ঘটার জন্য তোদের বলা হয়নি।
আব্রাহামের কথার প্রতি উত্তরে রাজ বলল।
হ্যাঁ ভাবি আমাকেও অনেকবার ফোন করে বলেছে তোদের বাড়িতে আয়নাকে নিয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু ওকে কিছুতেই তোদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য রাজি করাতে পারি না।আগি সারাদিন তোদের বাড়িতে যাওয়ার জন্য আমার কাছে বাইনা করত।আর এখন ওকে কিছুতেই তোদের বাড়ি যেতে চাই না।
রাজের কথায় সকলে আয়নার দিকে তাকায়।আয়না চোখ মুখ শক্ত করে বসে আছে।রাজ আয়নাকে উদ্দেশ্যে করে বলল।
ভাবি তোর কথা অনেকদিন যাবত বলছে,আমরা অন্য আরেকদিন ঘুরতে যাবো।আজ নাহয় আব্রাহামদের বাড়িতে যাওয়া যাক।
না ,আমি অন্য কোথাও যাবো না,আমাকে হয়তো ঘুরতে নিয়ে যাও, নাহলে গাড়ি থেকে এখনি নামিয়ে দাও।আমি বাড়ি চলে যাবো।
আয়নার ত্যাড়ামি কথা শুনে রাজ কিছু বলার আগেই হৃদিতা বলল।
থাক আমরা ভাবির সাথে অন্য কোনদিন দেখা করে নিবো,আজ আয়নার ঘুরতে যেতে মন চাইছে তাই ওইখানেই যাওয়া যাক।
হৃদিতার কথার প্রতি উত্তরে আর কেউ কিছু বলে না। কারণ রাজ বাদে সকলেই যানে আয়নার ও বাড়িতে না যাওয়ার কারণ। এদিকে আব্রাহামের বুকে জেনো অনুশোচনার আগুনে ঝলছে।আয়না নিচের চোখ বন্ধ করে সিটের সাথে হেলান দিয়ে বসে হারিয়ে যায় নিজের সেই বিষাক্ত অতীতে।যেই অতীতে ঘটে যাওয়া ঘটনা আয়নার জীবনের অস্তিত্ব বদলে দিয়েছে। বাধ্য করেছে আব্রাহামের প্রতি তার এত কঠোর হওয়ার।
অতীত,
আয়না আব্রাহাম এর সামনে বসে হাঁটু গেড়ে বসে কান্না করছে। আব্রাহামের সামনে বসে নিজের ভালোবাসার ভিক্ষা চাইছে আয়না। কিন্তু আব্রাহাম ওর কেনো কথা শুনতে চাইছে না। আয়না কান্না করতে করতে বলল।
প্লিজ আব্রাহাম ভাই আমাকে একটু ভালোবাসুন।আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি। আমাকে ফিরিয়ে দিবেন না।আমি আপনার এই অবজ্ঞা আর সহ্য করতে পারছি না।আমি শেষ হয়ে যাচ্ছি। আমাকে একবার গ্রহণ করে দেখুন আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসব।আমি কখনো আপনাকে নিজের কাছ থেকে দূরে যেতে দিবো না। শুধু একবার আমাকে সুযোগ দিন একবার।
বলতে বলতে আবার অঝোরে কান্না করছে আয়না। কিন্তু আব্রাহাম আয়নার কেনো কথা শুনতে রাজি নয়।ও আয়নার উদ্দেশ্যে বলল।
আমি তোমার কখনো হবো না আয়না তুমি আমাকে ভুলে যাও, ভুলে যাও আমাকে।
কথাটি বলতে বলতে আব্রাহাম কোথাও যেনো হারিয়ে যাচ্ছে । আয়না প্রাণ পণ দৌড়াচ্ছে আব্রাহাম কে ধরার জন্য। কিন্তু কিছুতেই ও আব্রাহাম কে ধরতে পারছে না। আব্রাহাম ওর থেকে বহু দূরে চলে যাচ্ছে।শুনতে পারছে না আয়নার আর্তনাদ।
ধরফরিয়ে ঘুম থেকে উঠে যায় আয়না, এতক্ষণ আয়না স্বপ্ন দেখছিল। আয়নার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছে।আয়না জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে ঢকঢক করে খেয়ে নেয়।নাহ এক গ্লাসে আয়নার পিপাসা মিটে নি।ও কাঁপা কাঁপা হাতে আরেক গ্লাস পানি ঢেলে পানি খেয়ে নেয় আয়না।ওর শরীর যেনো এখনো কাঁপছে। আয়নার মনে হচ্ছে আয়না আব্রাহাম কে চিরকালের জন্য হারিয়ে ফেলবে। স্বপ্নটা খুবই জঘন্য লেগেছে আয়নার।ওর মনে হচ্ছে এই রকম জঘন্য স্বপ্ন ও আগে কখনো দেখেনি।
আয়না ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত তিনটা পঁচিশ মিনিট।আয়না ফোনটি হাতে তুলে নেয় কেনো কিছু না ভেবে এত রাতে আব্রাহামের ফোনে কল দেয় আয়না। দুবার রিং বেজে কেটে যায়। আয়নার মনে হচ্ছে আব্রাহাম যদি এখন ওর কল না ধরে ও বোধহয় এখন মরেই যাবে। আয়নার মন চাইছে এক দৌড়ে আব্রাহামের কাছে ছুটে যেতে। কিন্তু এত রাতে তা সম্ভব না।তাই আব্রাহামের ফোন ধরার অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। তিনবারের সময় আব্রাহাম আয়নার ফোন রিসিভ করে ঘুমের ঘোরে বলল।
কে,
আব্রাহামের কন্ঠ শুনে যেনো আয়নার প্রাণে প্রাণ আসলো।সে একটি স্বস্তির নিশ্বাস ছেড়ে বলল।
আব্রাহাম ভাই আমি, আপনি কোথায় এখন,
আব্রাহামের মাথায় খারাপ হয়ে গেল আয়নার কথা শুনে এমনিতেই ও আজ রাত করে ঘুমিয়েছে তাই ঘুমটা এখন বেশ কাঁচা তার উপর এই মেয়ে এত রাতে ফোন করে জিজ্ঞেস করছে ও এখন কোথায়। আব্রাহাম আয়নার উদ্দেশ্যে চিল্লায়ে বলল।
আমি এখন বাড়িতে আছি ইডিয়ট, আমি না তোমাকে অনেকবার বলেছি।আমার সাথে ফালতু কেনো কথা বলার জন্য ফোন দিবে না। কিন্তু তুমি তো জন্মগত বেহায়া আমার কথা তোর কানে যায় না। তোমার কাছে ফালতু সময় থাকলেও আমার কাছে এত ফালতু সময় নেই।তাই পরবর্তীতে ফোন করার আগে একশো বার ভেবে নিবে। কারণ এতদিন ধরে তোমাকে কিছু না বললেও পরবর্তীতে আমি আর চুপ থাকবো না।
কথাগুলো বলেই ফোন কেটে দেয় আব্রাহাম। আব্রাহাম এত কথা বলার পরেও আয়নার এতটা কষ্ট লাগেনি যতটা না ভালো লাগছে। এখন আয়না ভাবছে কাল আব্রাহামদের বাড়িতে গিয়ে নিজের চোখের তৃষ্ণা মিটিয়ে আসবে। কারণ যেই পর্যন্ত আয়না সচোখে আব্রাহাম কে না দেখবে সেই পর্যন্ত শান্তি পাবে না।
#চলবে….
#তুমি_শুধু_গল্প_না_আমার_ভালোবাসা
#আমেনা_আক্তার
#পর্ব_৩১
আজ সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে গিয়েছে আয়না।বলতে গেলে কাল রাতে ওর ঘুমিই হয়নি।পুরো রাত বিছানার এপাস ওপাস করে কাটিয়ে দিয়েছে।এত ভয়ানক স্বপ্ন তাও নিজের ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে দেখলে কেই বা ঘুমাতে পারে।তেমনি আয়নার ও ঘুম হয়নি সারারাত সকাল হওয়ার অপেক্ষা করে গিয়েছে। সকাল হলেই আব্রাহামের বাড়িতে যেয়ে চোখ জুড়ে ওকে দেখে আসবে।
আয়নার মা আয়নাকে এত সকালে হলরুমে দেখে যেনো ভুত দেখার মতো চমকে গেল। আয়নার সামনে এসে বলল।
তুই এত সকালে এখানে কি করছিস?
মা এটা আমাদের বাড়ি,আমি কি সকালে উঠে অন্য কারও বাড়িতে থাকবো।
আয়নার কথা শুনে ওর মা থতমত খেয়ে যায় এবং বলল।
আমি এটি বলিনি, অন্যদিন তো তোকে মেরেও উঠানো যায় না ঘুম থেকে।আর আজ তুই নিজে নিজেই উঠে গিয়েছিস।
হ্যাঁ আজ উঠে গিয়েছি, কারণ আজ আমি আব্রাহাম ভাইয়ের বাড়িতে যাবো।মেহের ভাবি অনেকদিন ধরেই আমাকে বলছে ওনার সাথে দেখা করার কথা তাই আজ যেয়ে ভাবির সাথে দেখা করে আসবো।
আয়নার কোথায় ওর মা বলল।
তোকে না বলেছি উনারা বড়লোক মানুষ উনাদের বাড়িতে বেশি যাবি না।
উফ মা তুমি সবসময় আমার সাথে এইরকম টা করো। ভাইয়া যখন যাই তখন কিছু বলো না।আর আমি গেলেই তুমি আমাকে বিভিন্ন ধরনের কথা বলতে থাকো।
আয়নার কোথায় ওর মা আয়নার কাছে এসে গালে হাত দিয়ে বলল।
দেখ মা,ও হচ্ছে ছেলে মানুষ। ওকে কেউ কিছু বললে ওর এতটা গায়ে লাগবে না।আর আব্রাহামরা অনেক বড়লোক ওদের বাড়ি আমাদের বেশি যাওয়া ঠিক না।ওই বাড়িতে তোকে কখনো কেউ কিছু বললে তখন তুই কষ্ট পাবি।আমি জানি ওই বাড়ির লোকেরা অনেক ভালো তবুও আমি চাইনা ওনাদের কেনো ব্যবহারে তোকে কষ্ট দিক। তুই এই দুনিয়াটা যতটা সহজ ভাবিস এই দুনিয়া ততটাই কঠিন।
আয়না নিজের মায়ের সকল কথা নিরবে শ্রবণ করে। মায়ের কথা শেষ হতেই আয়না তার মাকে বলল।
কিন্তু মা ওখানে আমাকে কে কি বলবে,ওই বাড়ির সকলে তো আমাকে স্নেহ করে।
আয়নার কথা শুনে ওর মা বললো।
মানুষের মন বদলাতে সময় লাগে না মা। আকাশের রংয়ের থেকেও দ্রুত মানুষের মন বদলায়।থাক বাদদে এই সকল কথা তুই যাবি তো যা কিন্তু ওখানে গিয়ে বেশি বাঁদরামি করবি না। চুপচাপ শান্ত ও ভদ্র হয়ে থাকবি।
মায়ের কথায় আয়না মাথা নাড়ে।
আয়না তৈরি হয়ে বের হয়ে পরেছে আব্রাম দের বাড়ির উদ্দেশ্যে। কিন্তু অনেকক্ষণ ধরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকার পরেও একটি রিকশাও পাচ্ছে না।আর যেগুলো আসছে সেগুলোর ভিতরে আগে থেকেই যাত্রী আছে।তাই এখানে দাঁড়িয়ে খালি রিকশার অপেক্ষা করতে হচ্ছে। কিছুক্ষণের মাঝেই আয়না রিকশা পেয়ে যায়। রিকশা চলতে থাকে আয়নার প্রিয় মানুষটির বাড়ির উদ্দেশ্যে।
আয়না যতটা উৎসাহ নিয়ে আব্রাহামের বাড়িতে এসেছিল ঠিক ততটাই নিরাশ হয়ে আছে এখন। কারণ মেহেরের ছোট বোন এসেছে আব্রাহামের বাড়িতে।মেহেরের ছোট বোনের নাম শেহের।শেহের অনেক বেশি মর্ডান একটি মেয়ে।ও নিজেকে সবসময় পরিপাটি রাখতে পছন্দ করে মানুষের সামনে নিজের সর্বোচ্চ তুলে ধরার চেষ্টা করে।অন্য মানুষ কে কিভাবে ওর উপর আকৃষ্ট হবে সেই বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দেয় শেহের।এই সব কিছু নিয়ে আয়নার কোনো সমস্যা নেই।ওর সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে শেহের ও আব্রাহাম কে পছন্দ করে।তাই যখনি শেহের এই বাড়িতে আসে তখনি আব্রাহামের সাথে চিপকে থাকার চেষ্টা করে।যা আয়নার ধৈর্যের বাইরে।
শেহের ও এইটা ভালোভাবে জানে আয়না আব্রাহাম কে ভালোবাসে।তাই শেহের ও আয়না কে একদম সহ্য করতে পারে না। শেহের সব সময় চেষ্টা করে আব্রাহাম ও এই বাড়ির লোকদের চোখে কিভাবে আয়নাকে খারাপ বানাবে।আয়না হলরুমে এসে বসে বসে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে শেহের কে পর্যবেক্ষণ করছে ঠিক একই কাজ করছে শেহের। আব্রাহাম মা তখন উপস্থিত হয় হলরুমে আয়নাকে বসে থাকতে দেখে তিনি হাসি মুখে এগিয়ে এসে আয়নার উদ্দেশ্যে বলল।
আয়না তুই কখন আসলি,আর কেমন আছিস।এত দিন পর তোর আমাদের কথা মনে পড়লো।
আয়না আব্রাহামের মায়ের কাছে গিয়ে বলল।
কি করবো বলো কিছুদিন পর আমার h.s.c পরীক্ষা শুরু হবে।তাই আমাকে আম্মু কোথাও বের হতে দেয় না।
হুম বুঝেছি আয়না অনেক ব্যস্ত তাই আমাদের সাথে দেখা করার সুযোগ পর্যন্ত পায় না।
মেহের কথাগুলো বলে হলরুমে আয়নার সামনে এসে দাড়ালো।আয়না মেহেরের কথাগুলো শুনে মুচকি হেঁসে মেহেরের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে।ওর উচু পেট জাপটে ধরে বলল।
তোমাদের জন্য আমি মায়ের বকা শুনেও এখানে আসি।আর তোমরা আমাকে এত কথা বলো। এখন থেকে আমি তোমাদের আর সাথে কথা বলব না। শুধু মাত্র তোমার পেটের ভিতরে যে বসে আছে তার সাথে কথা বলব।
কথাগুলো বলেই আয়না নিজের কান মেহেরের পেটের সাথে চেপে ধরে বলল।
আমি শুধু তোমার বেবির সাথে কথা বলবো।
আয়াতের সকলের সাথে এত ভাব দেখে জ্বলছে শেহের।ওর কিছুতেই ভালোলাগছে না আয়নার সাথে সকলের এত ভালো সম্পর্ক দেখে।ওর মনে হচ্ছে আয়না সকলের সাথে ভাব জমিয়ে ওর থেকে আব্রাহাম কে কেড়ে নিবে।
এর মধ্যে আব্রাহামের মা বলে উঠলো।
কয়টা বাজে এখনো ছেলেটা ঘুম থেকে উঠে নি।কাল কত রাত করে বাড়ি ফিরেছে।যাই ওকে ডাক দিয়ে আসি।আয়না তুই বস আমি আব্রাহাম কে ডাক দিয়ে আসছি।
আয়না আব্রাহামের মায়ের কথায় মাথা নাড়ে।যাকে দেখার জন্য আয়নার এই বাড়িতে আসা তাকে যদি না দেখতে পারে তাহলে তো ওর এখানে আসায় বৃথা হয়ে যাবে। মনের ভিতরের ব্যাকুলতা কমবে না আয়নার মন শান্ত করতে যে আব্রাহাম কে ওর প্রচুর প্রয়োজন। আব্রাহামের মা চলে যায় আব্রাহাম কে ডাকতে। মেহের ও আয়নাকে বলল।
তুমি একটু বসো আমি আসছি,
কথাটি বলেই মেহের কিচেনের উদ্দেশ্যে চলে যায় । মেহের নিশ্চয়ই ওর জন্য কিছু খাবার আনতে যাচ্ছে। কিন্তু এই সময় তো মেহেরের বেশি হাটা চলা করা ঠিক না।তাই আয়না মেহেরের পিছু পিছু যায় ওকে কিছু আনার জন্য না করার জন্য। কিন্তু আয়নার যাওয়ার আগেই মেহের কিচেনে চলে এসেছে।আয়না মেহের কে পিছন থেকে কিছু বলবে তার আগেই ও দেখতে পায় সামনে একটি বঁটি ধার করানো। মেহের যেই দিকে পা দিতে যাচ্ছে সেখানে পানি দিয়ে ছড়ানো ছিটানো।আয়না মেহের কে আটকানোর জন্য দৌড় দেয়। কিন্তু আয়না কিছু বলার বা করার আগেই মেহের সেই পানির উপর পা দিয়ে দেয়।
আয়না কিছু বুঝে উঠতে পারে না। এখন যদি মেহের নিচে পরে তাহলে সোজা বঁটির উপর পড়বে। কিন্তু আয়না যেই দুরুত্ব দাঁড়িয়ে আছে মেহের থেকে আয়না চাইলেও মেহের কে পরা থেকে আটকাতে পারবে না। কিচেনের এক সাইডে কার্পেট বিছানো।আয়না আর কিছু না ভেবে দৌড়ে এসে মেহের কে কার্পেটের উপর ধাক্কা মারে।
মেহের নিচে পরতেই ও মাগো বলে একটি চিৎকার করে উঠল। মেহেরের আর্তনাদ শুনে যেই কারও শরীর কাটা দিয়ে উঠবে।মেহেরের চিৎকার শুনে আব্রাহাম ও ওর মা নিচে নেমে আসে ও শেহের এসে বোনের পাশে বসে আহাজারি করছে। আয়নার শরীর এখনো কাঁপছে।কি থেকে কি হয়ে গেল ও ভেবে পাচ্ছে না। কার্পেট রক্তে লাল হয়ে গেছে। আব্রাহাম এসে ওর ভাবির এই অবস্থা দেখে পাশে বসে পরে তখনি শেহের আয়নার দিকে হাত তাক করে সকলের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো।
ও আপুকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছে,আমি নিজের চোখে দেখেছি।ও ইচ্ছে করে করেছে সব কিছু ও আপুকে মারতে চায়।
শেহেরের কথা শুনে আব্রাহাম আয়নার দিকে রক্তচক্ষু করে তাকিয়ে মেহের কে কুলে তুলে নিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
___________________________________
মেহেরের অপারেশন চলছে।ওর অবস্থা খুবই খারাপ ব্লাড ভেঙেছে অনেক।মেহেরের অবস্থার কথা অবগত হওয়ার পরেই মেহেরের স্বামী ও শ্বশুর ছুটে আসে হসপিটালে। মেহেরের স্বামী মিহির চোখ বন্ধ করে বসে আছে। ওর এখন খুব ভয় করছে নিজের প্রিয় মানুষকে হারানোর ভয় যেনো ওকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে।ওর এখন নিজেকে সবচেয়ে দুর্বল ব্যাক্তি মনে হচ্ছে যে নিজের স্ত্রীর এমন করুন অবস্থাতে কিছুই করতে পাচ্ছে না। নিজের ভালোবাসার মানুষ আজ মৃতুর সাথে লড়াই করছে কিন্তু ওর এখানে বসে থেকে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা ছাড়া আর কেনো উপায় নেই। ডাক্তার অপারেশন রুম থেকে বের হতেই সকলে তাকে ঘিরে ধরে। এবং মিহির ডাক্তারের উদ্দেশ্যে বলল।
মেহের এখন কেমন আছে, ও আর আমাদের বাচ্চা দুজনে সুস্থ আছে।ওর বেশি ক্ষতি হয়নি তো।
প্লিজ মি.মিহির শান্ত হন আমরা পুরো চেষ্টা করছি উনাকে ও আপনাদের বাচ্চাকে সুস্থ করে তুলবার। আপনি প্লিজ শান্ত হয়ে বসুন।
ডাক্তারের কথায় কেনো আশ্বাস পেল না মিহির ও পরাজিত সৈনিকের মতো বসে পড়লো। ডাক্তার কিছু ওষুধের নাম লিখে দিয়ে এগুলো আনতে বলল। আব্রাহাম ডাক্তারের কথা অনুযায়ী দ্রুত পায়ে চলে যায় ঔষধ আনার উদ্দেশ্যে। আব্রাহাম হসপিটাল থেকে বের হতেই দেখতে পায় আয়না হসপিটালের দিকে আসছে।আয়না ও আব্রাহাম কে দেখে দাঁড়িয়ে যায়। আয়নার চোখ মুখ লাল হয়ে আছে কান্না করতে করতে। মেহের কে যখন আব্রাহাম হসপিটালে নিয়ে আসছিল তখন আয়না পাথর বনে সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিল ও তখনি যেনো বিশ্বাস করতে পাচ্ছিল না কি ঘটেছে।যখন আয়না সকল ঘটনা ভালোভাবে বুঝতে পারে সেই পর্যন্ত আব্রাহাম মেহের কে নিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে গেছে।আয়না আব্রাহামের কাছে এসে মেহেরের কথা জিজ্ঞেস করার আগেই আব্রাহামের শক্ত পোক্ত হাতের চর পরে আয়নার গালে আয়না অবাক হয়ে তাকায় আব্রাহামের দিকে।তখনি আব্রাহাম আয়নাকে উদ্দেশ্যে করে বলল….
#চলবে…
#তুমি_শুধু_গল্প_না_আমার_ভালোবাসা
#আমেনা_আক্তার
#পর্ব_৩২
আব্রাহামের শক্ত হাতের থাপ্পড় আয়নার গালে পরতেই ও অবাক হয়ে তাকায় আব্রাহামের দিকে।আয়না তবুও নিজেকে শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করে।কারণ আব্রাহাম এখন রেগে আছে।আর আব্রাহাম মনে করছে আয়না বোধহয় ওর ভাবিকে ইচ্ছা করে ধাক্কা দিয়েছে।তাই আয়না আব্রাহাম কে সত্য কথা যেই না বলতে যাবে তার আগেই আব্রাহাম আয়নার উদ্দেশ্যে বলতে লাগলো।
তোমাকে এতদিন আমি কিছু বলিনি, কারণ আমি মনে করেছি তোমার বয়স কম। তুমি যা করছো তা কেবল তোমার আবেগের বশে করছে।তাই তোমাকে সব সবয় আমি বুঝানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু তুমি আজ কি করেছ তুমি। তোমাকে যে এতটা বেশি ভালোবাসা দিয়েছে তার সাথে এটা কি করে করতে পারলে তুমি? তার ও তার বাচ্চার এত বড় ক্ষতি করার আগে কি তোমার একটুও বুক কাঁপেনি। জবাব দাও আমার কথার,জবাব দাও।
আব্রাহাম শেষের কথাটি এত জোড়ে চিল্লায়ে বলে যে আয়নার অন্তত আত্মা যেনো কেঁপে উঠলো।আয়না কাঁপা কাঁপা গলায় বলল।
প্লি… প্লিজ আমার কথা শুনো.
আয়নার কথা সম্পূর্ণ হতে না দিয়ে আব্রাহাম নিজের ঝাঁজালো কন্ঠে বলল।
কি শুনবো আমি তোমার কথা আসলে আমি বুঝতে পেরেছি তুমি এই সকল কিছু কেনো করেছে
আব্রাহামের কথায় আয়না অবাক হয়ে তাকায় ওর দিকে। এবং অবাক হয়েই আব্রাহাম কে জিজ্ঞেস করলো।
কেনো করেছি,
টাকার জন্য করেছ,এই সকল কিছু তুমি টাকার জন্য করেছ। তুমি যেই দেখেছ তোমার ভাইয়ের বন্ধু এত বড়লোক সেই তুমি বেহায়ার মতো হাত ধুয়ে আমার পিছনে লেগে গেছো।আমি যত যাই বলি তোমার টার্গেট ছিল আমাকে বিয়ে করে আমাদের বাড়িতে রানী হয়ে পায়ের ওপর পা তুলে জীবন যাপন করা। আমাকে বিয়ে করলে তো তোমার টাকা পয়সার অভাব থাকবে না এবং তোমার জীবনে আর কেনো কষ্ট থাকবে না।যেই তোমার মনে হয়েছে এই সকল কিছুর মাঝে ভাবি তোমার পথের কাঁটা হতে পারে সেই তাকে নিজের পথ থেকে সরানোর জন্য তুমি এই সব করেছ তাই তো।
আয়না এতক্ষণ নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করলেও আব্রাহামের কথা শুনে আর নিজেকে ও শান্ত রাখতে পারছে না। একদিক দিয়ে আব্রাহাম ওকে কথা শুনাচ্ছে ওকে লোভী বলে আখ্যায়িত করছে আরেকদিকে দিয়ে আয়নার চোখ দিয়ে পানি ঝড়ছে ও এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আব্রাহামের দিকে।ও এইটা ভেবে পাচ্ছে না আব্রাহামের প্রতি ওর এত দিনের ভালোবাসা এত দিনের পাগলামো কিভাবে আব্রাহাম সেইগুলো কে লোভের নাম দিয়ে দিয়েছে।ও নিজের প্রতি ধিক্কার জানাচ্ছে এ কাকে ভালোবেসেছে ও আসলে ওই ভুল করেছে নিজের ইস্ট্যটাস দেখে ভালোবাসা উচিত ছিল।ভালোবাসার আগে ভাবা উচিত ছিল আব্রাহামের সাথে ওর যায়না।
আরাহামের আয়াতকে বকার মাঝেই সেখানে শেহের এসে উপস্থিত হলো এবং আব্রাহাম কে বললো।
ডাক্তার দ্রুত ঔষধ গুলো আনতে বলেছে,
শেহেরের কথা শুনে আব্রাহাম আয়নাকে বলল।
আমি যেনো আমার ও আমার পরিবারের ত্রিসীমানায় আর তোমাকে না দেখি।
আব্রাহামের কথা শুনে আয়না ব্যথিত গলায় বলল।
আর দেখবে না,
আয়নার কথাতে কি যেনো ছিল, আয়নার কথাটি আব্রাহামের বুকে গিয়ে লাগলো। আব্রাহামের মাঝে খারাপ লাগার সৃষ্টি হলেও ও এই খারাপ লাগাকে পাত্তা না দিয়ে চলে যায় ঔষধ আনতে।
আব্রাহামের পিছন পিছন শেহের ঐ চলে যায়।
এভাবে কেটে যায় একটি সপ্তাহ আয়না নিজের বাড়িতে এসে কিছুই বলেনি ওই দিন।এমন ভাবে সবার সামনে নিজেকে উপস্থাপন করেছে যেনো কিছুই হয়নি। কিন্তু আয়না ভিতর থেকে কতটা আঘাত প্রাপ্ত ছিল তা শুধু আয়নায় যানে।আব্রাহাম রাজ কে বলেনি এই সকল ঘটনা সম্পর্কে।রাজ শুধু জানে মেহের হঠাৎ করে পরে গিয়েছে। কিন্তু আব্রাহামের বন্ধুরা কিছু জানে না। আব্রাহাম এখনো খুব টেনশনে আছে তাই তারা আব্রাহাম কে এই ব্যাপারে আর বেশি কিছু জিজ্ঞেস করেনি।
মেহের কে যেই দিন হসপিটালে আনা হয়েছে সেই দিনই ওর ছেলে সন্তান জন্মগ্রহণ করলেও ও ঙ্গান ফিরেনি পুরো দুদিন। দুদিন পর মেহেরের হুস ঠিকই ফিরেছে কিন্তু এ কদিন ও কথা বলতে পারেনি।এক কথায় বলতে গেলে ওর জবান পুরোপুরিভাবে বন্ধ ছিল।আজ মেহের সবার সাথে কথা বলতে পারছে।
মেহেরের সাথে সকলের কথা হয়ে যাওয়ার পর কেবিনে প্রবেশ করে আব্রাহাম ও তার বন্ধুরা। মেহের ওদেরকে দেখে একটি হাসি উপহার দেয়। কিন্তু ভালোভাবে চোখ ঘুড়িয়ে যখন দেখলো আয়না আসেনি তার মুখ থেকে হাসি গায়েব হয়ে যায়। মেহের রাজকে উদ্দেশ্যে করে বলল।
আয়না কোথায় ওকে নিয়ে আসো নি সাথে করে।
মেহেরের কথার জবাবে রাজ বলল।
ওর কিছুদিন পর থেকে পরীক্ষা আরম্ভ হবে।তাই ও নিজের রুম থেকেও বের হয় না।আর মাও ওকে কোথাও যেতে দেয় না। কিন্তু আপনার কথা ও আমাকে প্রতিদিন জিজ্ঞেস করে।
রাজের কথায় মেহের বলল।
ও আমার এত বড় উপকার করলো, এখন আমি ও আমার বাচ্চা আয়নার জন্যই এখনো শ্বাস নিতে পারছি।আয়না না থাকলে আমরা বেঁচে থাকতে পারতাম না।
মেহেরের কথা শুনে আব্রাহাম বলল।
ভাবি কি বলছো আয়না তোমাকে বাঁচিয়েছে।ও তোমাকে কিভাবে বাচালো।
আব্রাহামের কথা শুনে মেহের ওকে সকল ঘটনা খুলে বলল। সকল কিছু শুনে আব্রাহামের মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল।ও বুঝতে পারছে যে ও কত বড় ভুল করেছে। আব্রাহামের ফ্যাকাশে চেহারা আর কেউ লক্ষ্য না করলেও হৃদিতা ঠিকই লক্ষ্য করেছে। কিন্তু ও এখন কিছু জিজ্ঞেস করলো না আব্রাহাম কে।
সকলে কেবিন থেকে বের হতেই হৃদিতা রাজের উদ্দেশ্যে বলল।
আমার ভালো লাগছে না, আমার জন্য কফি নিয়ে আসবি?
হৃদিতার কথা শুনে রাজ বলল।
তোর আবার ভালো লাগে কবে সারাদিন একটা না একটা কিছু খেতেই থাকিস
রাজের কথায় হৃদিতা হাত বের করে হাসে।আর ও একটি হাসি দিয়ে সবার জন্য কফি আনতে চলে যায়।।রাজ যেতেই হৃদিতা আব্রাহামের উদ্দেশ্যে বলল।
কি হয়েছে তোর,ভাবি আয়নার কথা বলার পর থেকে দেখছি তোর চেহারার রং বদলে গিয়েছে।
হৃদিতার কথায় সকলে ব্লু কুঁচকে আব্রাহামের দিকে তাকায়।
আব্রাহাম হৃদিতার কথা শুনে দু হাত দিয়ে নিজের চুল খামচে ধরে একটি চেয়ারে বসে পরে বলল।
আমি অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি,আমি না বুঝে আয়নার উপর ভাবির এই অবস্থার দোষ চাপিয়ে দিয়েছি।আর রাগের মাথায় ওকে অনেক কথা শুনিয়েছি।ও আমার জন্যই হয়তো ভাবির সাথে দেখা করতে হসপিটালে আসেনি।
আব্রাহামের কথা শুনে নূর অনেক রেগে যায় এবং আব্রাহাম কে বলল।
তুই সবসময় আয়নাকে কষ্ট দিস, মেয়েটি তোকে কতটা ভালোবাসে তুই ওকে এত কথা বলার পরেও ও তোকে ভালোবাসে বলে তোর কাছে ফিরে আসে। কিন্তু তুই মেয়েটিকে প্রতিবারের মতো এইবার ও কষ্ট দিয়েছিস তার উপর ওর উপর মিথ্যা দোষ চাপিয়ে দিয়েছিস।
আমার ভুল হয়ে গেছে,আমি ভাবির অবস্থা দেখে অনেক রেগে গিয়েছিলাম তাই আমি সত্য জানার চেষ্টা না করেই ওকে বকেছি ওকে কাঁদিয়েছি।আমি মাফ চাইতে চায় ওর কাছে।
আব্রাহামের কথা শুনে রুদ্র বলল।
যা করেছিস তা চলে গিয়েছে, তোর সত্যিই আয়নার কাছে মাফ চাওয়া উচিত।রাজ বলল কাল নাকি আয়না ওর কলেজে যাবে এডমিড কার্ড উঠাতে তখন তুই ওর কলেজে গিয়ে ওর থেকে মাফ চেয়ে নিস।
___________________________________
কেটে গিয়েছে আরও একটি দিন আব্রাহাম সকাল হওয়ার অপেক্ষায় করছিল কাল থেকে।ওর ভিতরের অপরাধ বোধ কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে যেই পর্যন্ত ও আয়না থেকে মাফ না চেয়ে নিবে ও আয়না ওকে যেই পর্যন্ত মাফ না করবে সেই পর্যন্ত যেনো শান্তি মিলবে না ওর।
আব্রাহাম গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আয়নার কলেজের সামনে। আয়নার কলেজে থেকে বের হওয়ার অপেক্ষা করছে।
কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পরেও আব্রাহাম দেখতে পেলো আয়না কলেজ থেকে বের হয়ে আসছে। আব্রাহাম সময় ব্যয় না করে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।আয়না আব্রাহামের দিকে খুব স্বাভাবিক ভাবে তাকিয়ে আছে। তখন আব্রাহাম আয়নাকে উদ্দেশ্যে করে বলল।
তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে,
আয়নাও খুব স্বাভাবিক ভাবে বলল।
হুম বলো,
আই এম সরি,আমি তোমার কথা না শুনে তোমাকে অনেক কথা শুনিয়েছি। আমার আগে তোমার কথা শোনা উচিত ছিল।
আয়না আব্রাহামের কথা শুনে খুব স্বাভাবিক ভাবে বলল।
আমার কাছে মাফ চাওয়ার প্রয়োজন নেই, তোমার জায়গায় অন্য কেউ হলেও হয়তো এইরকম কিছুই করতো। ওইরকম পরিস্থিতিতে কারো মাথা ঠিক থাকে না তোমনি তোমার ও ঠিক ছিল না। কিন্তু আমি তোমার কাছে মাফ চাইতে চায় আই এম সরি।
আয়নার কথায় আব্রাহামের অপরাধ বোধ কিছুটা কমে আসলো। কিন্তু আয়নার সরি বলার কারণ বুঝতে না পেরে বলল।
তুমি সরি বলছো কেনো?
আমার ভুল তাই আমি সরি বলছি,আমি তোমাকে এতদিন অনেক বিরক্ত করেছি। তুমি বারবার আমাকে বলেছ তুমি আমাকে ভালোবাসো না তবুও আমি তোমার কথা না শুনে তোমাকে অনেক জ্বালিয়েছি। বারবার ভালোবাসি ভালোবাসি বলে তোমাকে কষ্ট দিয়েছি।এই সকল কিছুর জন্য সরি। তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি কিন্তু এখন আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি।তাই তোমাকে আজকের পর থেকে আমি আর ডিস্টার্ব করব না।আর না আজকের পর থেকে বলবো ভালোবাসি।
আয়না নিজের কথা রেখেছে ওইদিনের পর থেকে আয়না আব্রাহামের সাথে কথা বলা তো দূরের কথা ফিরে তাকায় ওনি। আব্রাহাম তো এইটাই চেয়েছিল আয়না যেনো ওকে ডিস্টার্ব না করে। কিন্তু আব্রাহামের এখন খারাপ লাগছে।ও বুঝতে পেরেছে আয়না ওইদিন ওর কথাতে ভিশন আঘাত পেয়েছে। আব্রাহাম আরো অনেকবার আয়নার কাছে মাফ চেয়েছে কিন্তু আয়নার উত্তর ছিল একই।আব্রাহাম এখন আয়নার ফোনের জন্য অপেক্ষা করে কিন্তু আয়না তাকে ফোন দেয় না।এর মধ্যে আয়নার পরীক্ষা আজকেই শেষ একটি পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা শেষ করে আয়না কলেজ থেকে বের হয়ে রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছে।ওর একটি পরীক্ষা ও ভালো হয়নি। কিভাবেই বা ভালো হবে ওর যে নিজেকে সামলাতেই হিমসিম খাচ্ছে।ও কাওকে না দেখালেও ওর ভিতরটা ও তো জ্বলে যাচ্ছে।ওই ঘটনার পর আয়না কিছুতেই নিজের পড়াশোনায় মন বসাতে পারেনি। কিন্তু এখন আয়না ধীরে ধীরে নিজেকে সামলে নিচ্ছে। আব্রাহাম থেকে নিজেকে দূর করা কষ্টকর হলেও আয়না সেটি করে দেখিয়েছে। এবং নিজেকে ওয়াদা করেছে যে ওর আত্মসম্মানে আঘাত করেছে যে ওর ভালোবাসাকে এত তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছে।যে ওকে লোভী বলে আখ্যায়িত করেছে সেই ব্যাক্তির দিকে কখনো ফিরেও তাকাবে না।
আয়না নিজের কথা ঠিকই রেখেছে, আব্রাহামের দিকে আয়না আর ফিরেও তাকায় নি। কিন্তু আয়না যতই আব্রাহাম থেকে দূরে সরে গেছে ততই আব্রাহাম বুঝেছে আয়না তার জন্য ঠিক কতটা গুরুত্বপূর্ণ।আয়নার জন্য তার মনে থাকা অনুভূতি সম্পর্কে অবগত হয়েছে। কিন্তু সেই অনুভূতি সম্পর্কে অবগত তখনই হয়েছে আব্রাহাম যখন আয়না ওর থেকে বহু দূর চলে গিয়েছে। আব্রাহাম অনেকভাবে আয়নার কাছে মাফ চেয়েছে। কিন্তু নিজের জায়গায় অনড়।আর কেনো দিন আয়না আব্রাহামদের বাড়িতে যায়নি। এখন আয়নার জন্য আব্রাহাম জ্বলছে খুব করে জ্বলছে। আব্রাহাম শুধু আয়নার কাছে একটি সুযোগ চায় কিন্তু সেই সুযোগটুকু আয়না তাকে দিচ্ছে না।
#চলবে..