তুমি_শুধু_গল্প_না_আমার_ভালোবাসা পর্ব-৩৬+৩৭+৩৮

0
70

#তুমি_শুধু_গল্প_না_আমার_ভালোবাসা
#আমেনা_আক্তার
#পর্ব_৩৬

পুরো ভার্সিটি তন্নতন্ন করে খোঁজার পরেও রুদ্ররা নূরকে কোথাও খুঁজে পেলো না। নূর কে অনেকবার ফোন ও করেছে তারা কিন্তু নূর নিজের ফোন ও ধরছে না। সকলের অনেক বেশি চিন্তা হচ্ছে নূরের জন্য তাই সকলে মিলে নূরের বাড়ি আসার সিদ্ধান্ত নেই। রুদ্র, রাজ, হৃদিতা, আরশাদ, আব্রাহাম এখন নূরের বাড়ির দরজার সামনে একাধারে কলিং বেল বাজিয়ে চলেছে। তাদের দেখে মনে হবে এখন যদি নূর দরজা না খুলে তাহলে ওদের ট্রেন ছুটে যাবে।

দরজাটি খুলতেই নূর রাজের গালে একটি চর মেরে বলল।

শয়তান আমি কি মরে গেছি এভাবে কলিং বেল বাজাচ্ছিস কেনো দরজা খোলার সময় তো দিবি।

রাজের গালে থাপ্পড় পরেছে কারণ এতক্ষণ অধৈর্য হয়ে কলিং বেল ও বাজাচ্ছিল।নূরের কথা শেষ হতেই হৃদিতা ওকে জাপটে ধরে বলল।

তোর কি হয়েছে জান, তুই ভার্সিটি থেকে এভাবে চলে আসলি কেনো?

হৃদিতার কথা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য ওকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে ভিতরে যেতে যেতে বলল।

কি হবে আবার, আমার ভালো লাগছিল না তাই চলে এসেছি।

নূরের কথায় রুদ্র বলল।

তুই মিথ্যা কথা বলছিস, অবশ্যই তোর কিছু হয়েছে।নাহলে তুই আমাদের না বলে কখনো আসতি না।আর দ্বিতীয়ত তুই দরজা খুলতেই রাজ কে থাপ্পড় মারতি না।

রুদ্রের কথার সাথে তাল মিলিয়ে রাজ বলল।

ঠিকই বলেছিস এই হারামিতে আমার গাল লাল করে ফেলেছে মেরে।

ভাইয়ার শরীর একটু অসুস্থ হয়ে পরেছিল,তাই আমি তোদের বলে আসতে পারিনি।তোরা তো জানিস আমি ভাইয়াকে নিয়ে কতটা কঠোর। ভাইয়ার কথা যখন আসে আমার কিছুই মনে থাকে না।

নূরের কথা সকলে খুব সহজে বিশ্বাস করে নিলো। কারণ ওরা ভালোভাবেই জানে নূরের ভাইয়ের কোনো সমস্যার কথা শুনলে ও সব ছেড়েছুড়ে চলে আসে।নূর ও মিথ্যা কথা বলছে না। কেননা আদিত্য রুম থেকে বের হয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই নূরের মোবাইলে ওর বাড়ির কাজের লোক ফোন করে জানায় নিলয়ের শরীর অসুস্থ।

নূর আদিত্যের করা ব্যবহারের কথা ওর বন্ধুদের জানাতে চাইছে না। নূর চাই ও একা এই বিষয় সামলাতে।তাই নূর ওদের কিছু জানায়নি।
___________________________________
রাত এখন ১টা বাজে পুরো শহর পারি দিয়েছে ঘুমের রাজ্যে।রাস্তা ঘাটে দেখা মানুষের ছায়া অবধি দেখা যাচ্ছে না।না শোনা যাচ্ছে কোনো কোলাহল পুরো রাস্তায় ছেয়ে আছে শুনশান নিরবতা। অবশ্য মাঝে মধ্যে কুকুরের ঘেউ ঘেউ শব্দ শোনা যাচ্ছে।পুরো শহর যখন নিদ্রায় শায়িত আছে। তখন জেগে আছে আয়নার চোখ।ও অনেক চেষ্টা করার পরেও কিছুতেই ওর দুটো চোখে ঘুম আসছে না।এটি অবশ্য নতুন না মাঝে মাঝেই আয়নার সাথে এইরকম হয়।বেশি তখন হয় যখন পুরোনো বিষাক্ত স্মৃতিগুলো মাথা চারা দিয়ে উঠে।

আয়না নিজেকে শান্ত করার জন্য বারান্দায় এসে দাঁড়ায়। এবং কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে আকাশের দিকে। অনুভব করার চেষ্টা করে এই শান্ত পরিবেশ কে। আয়নার কাছে রাত অনেক প্রিয় কারণ এই রাতেই তো মানুষ তাদের প্রিয় মানুষদের সাথে কিছুটা সময় কাটাতে পারে। সকাল হতেই তো আবার মানুষ ফিরে যায় নিজের যান্ত্রিক জীবনে। যেখানে আপন মানুষগুলোর জন্য সময় থাকে না। কিন্তু মানুষ সেই আপন মানুষগুলোর জন্যই কাজ করে।

আয়না বোধহয় জানেনা,ও যেমন আকাশের দিকে তাকিয়ে চাঁদ কে দেখে চলেছে।তোমনি আয়নাকেও পলকহীন ভাবে কেউ গাছের আড়াল থেকে দেখছে।

আব্রাহাম রোজ রাতে আয়নার বাড়ির সামনের গাছের পিছনে লুকিয়ে থাকে উদ্দেশ্যে হলো প্রিয়শিকে এক নজর দেখা। এখন তো আয়না আব্রাহামের ছায়াও দেখতে পছন্দ করে না। অবশ্য এটা আব্রাহামের করা ভুলের জন্য।তাই আব্রাহাম সব সময় আয়নাকে দূর থেকেই লুকিয়ে দেখে। আব্রাহাম যত পারে আয়নার থেকে নিজেকে লুকিয়ে রাখে। কিন্তু যখন নিজের আবেগের কাছে হেরে যায় তখন আব্রাহাম চলে যায় আয়নার সাথে একটু কথা বলার আশায়।

আচ্ছা যখন আব্রাহাম আয়না কে বকতো ওর ভালোবাসা গ্রহণ করতো না।ওকে বারবার ফিরিয়ে দিতো তখন আয়নার ও তো খুব কষ্ট হতো। আব্রাহাম কয়েক সময় ভাবে আয়না ওর সাথে যা করছে একদম ঠিকই ও এই সকল কিছুর যোগ্য আয়নাকে কষ্ট দেওয়ার শাস্তি, ওর আরও পাওয়া উচিত।ওর আরো এই ভালোবাসার আগুনে জ্বলে দগ্ধ হতে হবে তখন হয়তো নিজের করা ভুল কিছুটা হলেও মোচন হবে। হয়তোবা ও অনুভব করতে পারবে আয়নাকে দেওয়া কষ্টগুলো। কিন্তু এই কষ্টগুলো যে অনেক কষ্টকর শ্বাস আটকে যাওয়ার মতো অনুভূতি হয়।

আব্রাহাম এভাবে প্রিয়সির দিকে তাকিয়ে পুরো রাত পার করে দিতে চায়। কিন্তু হায় আব্রাহামের ভাগ্য কি এতটাই ভালো?তাই তো আব্রাহামের তাকিয়ে থাকার মধ্যেই আয়না রুমের মধ্যে চলে গেল। আব্রাহাম আয়নার যাওয়ার পানে আরও কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চলে গেলো নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে।
___________________________________
মহিমার পেটের বাচ্চা নড়াচড়া করছে। মহিমা নিজের পেটের উপর হাত দিয়ে নিজের বাচ্চাকে একটু ছুঁয়ে অনুভব করার চেষ্টা করছে।যখনি ওর বাচ্চা নড়াচড়া করে তখনি মহিমা এখন এই কাজটি করে। নিজের বাচ্চাকে অনুভব করা কি কম সুখের ব্যাপার।এই একটি বাচ্চা জন্ম দিতে একটি মায়ের কত কষ্ট করতে হয় তা কেবল একজন মা জানে।

কিন্তু এই কষ্টের মাঝেই লুকিয়ে থাকে এক আকাশ পরিমাণ আনন্দ। সন্তান কে নয় মাস গর্ভে ধারণ করে অপেক্ষা করে তার ছোট ছোট দুটি হাত স্পর্শ করার।চোখ ভরে তার সন্তান কে দেখার। নিজের সন্তানের ছোট ছোট ঠোঁট দিয়ে উচ্চারিত মা ডাক শোনার জন্য ব্যাকুল হয়ে থাকে সকল মায়ের মন।

মহিমা নিজের পেটে হাত বুলাতে বুলাতে চলে যায় রেহানা বেগমের রুমে। মহিমা বেগম বসে বসে কাঁথা সেলাই করছেন। রেহানা বেগম কিছুদিন যাবত কাঁথা সেলাইয়ের কাজ শুরু করেছেন। কাঁথা সেলাই করে রেহানা বেগম অনলাইনে বিক্রি করেন।

মহিমা রেহানা বেগমের কাছে এসে রেহানা বেগমের পাশে বসলো। এবং রেহানা বেগম কে উদ্দেশ্য করে বলল।

মা জানো বাবু আজকাল আগের থেকে বেশি নড়াচড়া করে।

মহিমার কথা শুনে হাসে রেহানা বেগম। মহিমা আজকাল একটু সময় পর পরই এসে এই সকল কথা বলতে থাকে উনার কাছে।এতে রেহানা বেগম বিরক্ত হোন না। মহিমা কে দেখে রেহানা বেগমের মনে পরে যায়,ওনার প্রথম প্রেগন্যান্সির কথা। কারণ সকল মেয়েরাই প্রথম মা হওয়ার সময় অনেক বেশি আনন্দে থাকে। দ্বিতীয় বা তৃতীয় সন্তানের সময় আনন্দে থাকে না এমন না। কিন্তু প্রথম বাচ্চার সময় মেয়েরা যতটা বাচ্চা নিয়ে আনন্দিত হয়। তা প্রকাশ করার মতো ক্ষমতা হয়তো কারো কাছে নেই।

মহিমা রেহানা বেগমের কাঁধে মাথা রেখে বলল।

মা বাবু কবে দুনিয়াতে আসবে,

রেহানা বেগম মুচকি হেসে বলল।

যেদিন আল্লাহর ইচ্ছে হবে তাকে দুনিয়াতে পাঠানোর সেদিন আসবে।

আমি অপেক্ষা করছিতো ওর দুনিয়াতে আসার।

এটা সকল মায়েরাই করে,

রেহানা বেগমের কথা শুনে মহিমা আর কিছু বলে না।আর রেহানা বেগম কাঁথা ও সুই সুতা একপাশে সরিয়ে মহিমার মাথা নিজের কুলের উপর রাখে এবং মমতাময় হাত বুলিয়ে দেয় ওর মাথায়।
___________________________________
অনেক কষ্টে দিন অতিক্রম করছে শামসুজ্জামান। ওনার বাড়ির ভিতরে এখন অশান্তি লেগেই থাকে। শামসুজ্জামান বাড়িতে এক মুহুর্তের জন্যও শান্তি পান না। অবশ্য পাবেন বা কি করে যার স্ত্রী এমন চরিত্রহীন হয়।তার কপালে আর যাই জুটুক শান্তি জুটে না। যেমন শামসুজ্জামানের কপালে জুটছে না। শামসুজ্জামান নিজের স্ত্রী কে একশবার সাবধান করার পরেও ওনার স্ত্রী শুধরাচ্ছে না।

শামসুজ্জামান এখন প্রায় প্রতিদিন তার দ্বিতীয় স্ত্রীর গায়ে হাত তুলে। প্রায় আধমরা করে ফেলে মেরে তবুও মনে শান্তি পায়না শামসুজ্জামান মনে হয় যেনো আবার ওনার দ্বিতীয় স্ত্রী ওনার অনুপস্থিতিতে অন্য লোকের সাথে রাত কাটিয়েছে। শামসুজ্জামান সারাক্ষণ এখন তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে সন্দেহ করে। ওনার এখন খুব মনে পরে রেহানা বেগম ও নিজের সন্তানদের কথা। মনে পড়বেই বা না কেনো যখন রেহানা বেগম ছিল তখন তো সুখের কেনো কমতি ছিল না। মানুষ বলে না সুখে থাকতে ভূতে কিলায় তাই হয়েছে শামসুজ্জামানের সাথে।

বেশি সুখ শামসুজ্জামানের সহ্য হয়নি তাই তো উনি এমন পথ বেছে নিয়েছে। কিন্তু এখন উনি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে।উনি উনার দ্বিতীয় স্ত্রী কে তালাক দিয়ে রেহানা বেগম ও নিজের সন্তানদের খুঁজে বের করবেন। এবং দরকার পরলে রেহানা বেগমের পা ধরে ক্ষমা চেয়ে ফিরিয়ে নিয়ে আসবেন যে কোনো মূল্যে।

#চলবে…

#তুমি_শুধু_গল্প_না_আমার_ভালোবাসা
#আমেনা_আক্তার
#পর্ব_৩৭

আজ মির্জা বাড়িতে হরেক রকমের রান্না হচ্ছে। মির্জা বাড়ি যেনো নতুন করে সেজে উঠেছে।সকল কিছু একবার নয় তিন চারবার করে পরিষ্কার করানো হয়েছে।যেনো কোনো যায়গায় সামান্য পরিমাণও কমতি না থাকে।পুরো বাড়ি চকচক ঝকঝক করছে।সাহানারা মির্জা ব্যস্ত রান্না ঘরে অবশ্য সিরাত ও উনাকে সাহায্য করছে। তবুও যেনো ব্যস্ততা কমতেই চাইছে না সাহানারা মির্জার।সকল কিছু উনি পারফেক্ট ভাবে করতে চাইছেন।তাই সকাল থেকে কাজের লোকগুলো ও বিশ্রাম নিতে পারছে না।আজ রুদ্রের দাদি বেড়াতে আসবে। তার জন্যই সকল আয়োজন।উনি আবার একটু না একটু বেশিই খুঁতখুঁতে স্বভাবের।কোনো কাজে সামান্য পরিমাণও কমতি দেখলে সাহানারা মির্জাকে কথা শুনাতে ছাড়বে না।পারলে দু চারটে কথা বাড়িয়ে শোনাবে।

এইসকল কিছুর মাঝে সিরাত বুঝতে পারছে না একজন মানুষের জন্য এত আয়োজন করার প্রয়োজন কি। শাহানারা মির্জা যেভাবে কাজ করছে মনে হচ্ছে কাজে যদি একটুও ভুল ত্রুটি হয় তাহলে সাহানারা মির্জার শাশুড়ি বোধহয় উনাকে গুলি করে মেরে দিবে।

সিরাত সাহানারা মির্জার কাছে এসে নরম স্বরে বলল।

মা আপনি সকাল থেকে কাজ করছেন এখন একটু বিশ্রাম নিন। বাকি কাজ গুলো আমি দেখে নিচ্ছি।

সিরাতের কথায় সাহানারা মির্জা মুচকি হেসে সিরাতের গালে হাত রেখে বলল।

তুমিও আমার সাথে সকাল থেকে কাজ করছো। তুমি নাহয় এখন বিশ্রাম করো আমার অভ্যেস আছে। এমনিতেও আমার শাশুড়ি এসে যদি দেখে আমি কাজ না করে বিশ্রাম করছি তাহলে বাড়িতে কুরুক্ষেত্র বাঁধিয়ে ফেলবে।

সিরাতের সাহানারা মির্জার কথায় অবাক হয়ে বলল।

উনি এত বদ,

সিরাতের কথায় সাহানারা মির্জা জিভে কামড় দিয়ে বলল।

কি বললে তুমি, এই কথা ভুলেও আমার শাশুড়ির সামনে বলো না।

সাহানারা মির্জার সিরাত মুচকি হেসে বিরবিরিয়ে বলল।

এটা তো উনি আসলেই দেখা যাবে,
___________________________________
ভাবি কেমন আছেন,

পুরুষালী কন্ঠে ভাবি ডাক শুনে নূর বিরক্ত হয়ে তাকায় সেই দিকে।তিন চারদিন ধরে এই ভাবি ডাক শুনতে শুনতে অতিষ্ঠ হয়ে গেছে নূর। রাস্তায় বের হতেই এখন কিছু দামড়া দামড়া ছেলেরা ভাবি ভাবি করে ডেকে মুখে ফেনা তুলে ফেলছে। শুধু কি তাই নূর এখন কোথাও গিয়েও শান্তি পায়না।আজ কাল রিক্সা চালাকরা ও নূরের কাছ থেকে টাকা নিতে চায়না। নূরের এই সকল বিষয় খুবই বিরক্ত লাগে।এটি তো খুব সাধারণ বিষয় নূরকে যদি কোনো ছেলে উত্যক্ত করে তাহলে কিছুক্ষণ পর সেই ছেলের নাম ও নিশানাও শহরে পাওয়া যায় না।নূর এটাই বুঝে উঠতে পারছে না।ও ওদের ভাবি হলো কি করে।আর এই সকল কিছু করছেই কে।

অবশ্যয় নূরের এই সকল কিছুর মাঝে এক দুবার আদিত্য কে সন্দেহ হয়েছে কিন্তু আদিত্যের ওই দিনের পর থেকে আর নূরের সাথে দেখা হয়নি।তাই আদিত্যের ব্যাপারটা নূর ভাবছে না। নূরের ভাবনার মাঝে আবার শোনা গেল

ভাবি,

এইবার আর নূর নিজেকে ঠিক রাখতে পারলো না।তাই সে ওই ছেলেটির সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো।

এই আমি তোর কোন কালের ভাবি রে?

ছেলেটি নির্দ্বিধায় উত্তরে বলল।

কোন ইহকাল ও পরকাল,এই দুই কালেরই তো আপনি আমাদের ভাবি।আর হ্যা ভাবি আমাদের ভাই কিন্তু আপনাকে খুব ভালোবাসে।তাই আপনার সকল সুবিধা অসুবিধার খেয়াল আমাদের রাখতে বলেছেন উনি।

ছেলেগুলোর কথা শুনে নূরের খারাপ হওয়া মাথা আরো খারাপ হয়ে গেল।সে রাগে গজগজ করতে করতে বলল।

তোদের ভাই কে?

ছেলেটি অবাক হয়ে নূরকে বলল।

ভাবি আপনি আপনার স্বামীর নাম জানেন না।এটা কিন্তু ঠিক না ভাই শুনলে কিন্তু অনেক কষ্ট পাবে।আর আমরা ভাইয়ের কষ্ট একদম সহ্য করতে পারি না। আপনার ও উচিত ভাইকে কষ্ট না দেওয়া।

সেট আপ,যা জিজ্ঞেস করেছি শুধু তার উত্তর চাই,ভাই কে তোমাদের?

নূরের কথা শুনে ছেলেটির মুখ কাচুমাচু করে ফেলল। এবং বলল।

আদিত্য ভাই ,

ও তাহলে ওই শয়তান তোমাদের কে আমার পিছনে লেলিয়ে দিয়েছে না।ও এখন কোথায় আছে? আমি ওর ঠিকানা চাই আমি ওর সাথে দেখা করব।

ভাবি আপনি যদি ভাইয়ের সাথে দেখা করতে চান তাহলে আপনার একটু অপেক্ষা করতে হবে।আগে ভাইকে ফোন করে ওনার পারমিশন নেওয়া লাগবে তারপর আপনাকে ঠিকানা বলতে পারবো।

সিরাত ছেলেটির কথা শুনে রাগের বশে চোখ বন্ধ করে ফেলে। এবং নিজেকে কিছুটা শান্ত করে বলল।

আচ্ছা ঠিক আছে,যা করার তাড়াতাড়ি করো,

নূরের কথা শেষ হতেই ছেলেটি এক কোণায় যেয়ে আরিফকে ফোন করলো।

আরিফের ফোন বাজতেই তড়িঘড়ি করে আরিফ ফোনটি তার পকেট থেকে বের করে।আজ আদিত্যর একটি গুরুত্বপূর্ণ মিটিং চলছে ফরেন ক্লাইন্টদের সাথে। মিটিংমে প্রবেশ করার সময় সকলের ফোন বন্ধ রাখতে হয়েছে শুধু আদিত্যের ফোন বাদে এটি বাধ্যতামূলক। কিন্তু আজ আরিফ ভুল বশত ওর ফোন বন্ধ করতে ভুলে গিয়েছে।তাই আরিফ ফোনটি কাঁটার আগেই ফোনে দেখা নাম্বরটি দেখে আদিত্যের দিকে তাকিয়ে শুকনো ঢোক গিলে।

আদিত্যর কানের কাছে গিয়ে কিছু বলতেই আদিত্য আরিফের ফোনটি নিজের হাতে তুলে নিয়ে কানে চেপে ধরে।তখনি মোবাইলের ওপর পাস থেকে ছেলেটি বলল।

ভাই ভাবি আপনার সাথে দেখা করতে চাইছে,উনি আপনার এড্রেস চাইছে।

আদিত্য কথাটি শুনে বাঁকা হাসি দিয়ে বলর।

ওকে নিয়ে আস,

ফোনটি কাটতেই ছেলেটি বলল।

চলেন ভাবি,আমি আপনাকে পৌঁছে দিচ্ছি।

ছেলেটির কথা শুনে নূর গম্ভীর গলায় বলল।

তার কোনো প্রয়োজন নেই, আমার শুধু এড্রেস চাই।

ভাবি ভাই যদি জানতে পারে আপনাকে আমরা একাই পাঠিয়েছি ভাই আমাদের আর আস্ত রাখবে না।

ছেলেটির কথা শুনে নূর ছেলেটির দিকে ভয়ংকর দৃষ্টিতে তাকায়।তা দেখে ছেলেটি ভয়ে ঢোক গিলে বলল।

ঠিক আছে ভাবি আপনার আমার সাথে যাওয়ার দরকার নেই কিন্তু প্লিজ আপনার জন্য অন্তত আমাকে একটি রিক্সা ঠিক করতে দিন। নাহলে আমার এই শহরে থাকা মুশকিল হয়ে যাবে।

ছেলেটির কথায় নূর কিছু বললো না।তাই ছেলেটি একটি রিক্সা ডেকে দিলো নূর ও সেই রিকশায় উঠে পরে। নূর মনে মনে ভেবে রেখেছে আদিত্য কে গিয়ে কি কি বলবে।আজ আদিত্য কে উচিত শিক্ষা দিয়ে আসবে বলে।মনে মনে শপথ গ্রহণ করলো নূর।
___________________________________
যেই ব্যক্তির জন্য এত আয়োজন সেই ব্যক্তি অর্থাৎ সাহানারা মির্জার শাশুড়ি মা সালেহা মির্জা বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করেছেন এবং ওনার সাথে এসেছেন ওনার ছেলের বউ সাথি। মূলত রুবেল মির্জা সালেহা মির্জাকে এগিয়ে আনতে গিয়েছিলেন। ওনার মায়ের জন্য রুবেল মির্জা আজ অফিস ও কর্মচারীদের ছুটি দিয়ে দিয়েছেন। রুবেল মির্জা তার মাকে খুব বেশি ভালোবাসে সেই কারনেই সাহানারা মির্জাকে যত যায় বলুক না কেনো ওনার শাশুড়ি আম্মা উনি চুপচাপ সহ্য করেন।

সালেহা মির্জা বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতেই সাহানারা মির্জা ওনাকে জিজ্ঞেস করলেন।

আম্মা কেমন আছেন?

সাহানারা মির্জার প্রশ্নের কোনো জবাব না দিয়ে এমন ভাবে চলে গেলেন যেনো সালেহা মির্জা সাহানারা মির্জার কথা শুনেনি। অতঃপর উনি গিয়ে বসলেন হলরুমে সোফার উপর। সাহানারা মির্জার কথায় জবাব না দেওয়ায় সাহানারা মির্জা একটু কষ্ট পেলেন কিন্তু মুখে তা ব্যক্ত করলেন না। কিন্তু সাহানারা মির্জার চুপসে যাওয়া মুখ আর কেউ না দেখলেও সিরাত ঠিকই দেখেছেন।

সিরাত ভালোভাবে লক্ষ্য করলেন সালেহা মির্জার দিকে। গভীর দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলেন ওনাকে। সালেহা মির্জার মুখের মাঝে দাম্ভিকতার ভাব স্পস্ট ভাবে ফুটে উঠেছে। ঠিক যেমন রুদ্রের চেহারাতে সব সময় দেখা যায়। এবং সিরাত সালেহা মির্জার মুখ দেখে এটাও খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন সালেহা মির্জা প্রচুর পরিমাণের কঠোর প্রাকৃতিক। কিন্তু ওনি কঠোর খারাপ দিক দিয়ে নাকি ভালো দিক দিয়ে তা বুঝতে হবে সিরাতের।

সিরাতের ভাবনার মাঝে সালেহা মির্জা সিরাতের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো।

কি নাত বউ এনেছিস আমি আসার পর থেকে দেখছি ও একই জায়গায় পাথরের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে।ওর তো উচিত ছিল আমি আসার সাথে সাথে আমার কিছু প্রয়োজন কিনা জিজ্ঞেস করা।নাত বউ কি তার বাবার বাড়ি থেকে কোনো শিক্ষা দেয়নি যে বড়দের সাথে কিভাবে আচরণ করতে হয়।

সালেহা মির্জার কথার সাথে সাথি মির্জা একমত পোষণ করে বলল।

ঠিক বলেছেন আম্মা আজকাল মেয়েদের মাঝে কোনো শিক্ষাই নেই । ওদের বাবা মায়ের মনে হয় বিয়ে দিতে পারলেই ওদের বাবা মা বাঁচে।

বাবার বাড়ির শিক্ষার কথা শুনে সিরাত অনেক রাগ লাগছে তবুও সিরাত নিজেকে শান্ত করে হাসি মুখে সালেহা মির্জার কাছে গিয়ে বলল।

কি হয়েছে বলুনতো দাদি মা আপনাকে আপনি কেমন আছেন জিজ্ঞেস করার পরেও আপনি কোনো জবাব দেননি তাই আমি ভেবেছি আপনি হয়তো এতটা পথ এসে ভিশন ক্লান্ত হয়ে গিয়েছেন। তাই মায়ের কথার কোনো জবাব দেননি।তাই আমি আর আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করে বিরক্ত করতে চাইনি।

সালেহা মির্জা সিরাতের খোঁচা মারা কথা খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছে। এবং সেই খোঁচা খুব ভালোভাবে ওনার শরীরেও খুব ভালোভাবে লেগেছে। সালেহা মির্জা কিছু বলবে তখনি…

#চলবে…

#তুমি_শুধু_গল্প_না_আমার_ভালোবাসা
#আমেনা_আক্তার
#পর্ব_৩৮

দাদি,

ডাক শুনে সালেহা মির্জা সহ বাকি সকলে দরজার দিকে তাকাতেই দেখতে পায় সেখানে রুদ্র দাঁড়িয়ে আছে। রুদ্র কে দেখে সালেহা মির্জার মুখে হাসি ফুটে উঠে। সালেহা মির্জা নিজের জায়গা থেকে উঠে রুদ্রের কাছে গিয়ে রুদ্রের গালে স্নেহের হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করলো।

কেমন আছে আমার দাদুভাই,

ভালো কিন্তু তোমাকে দেখে আরো ভালো হয়ে গিয়েছি,

রুদ্রের কথায় সালেহা মির্জা বলল।

হ্যাঁ তাই তো দাদিকে একটুও ফোনও করো না তুমি। তোমার দাদির কথা তোমার একটু মনেও পরে না।

সালেহা মির্জার কথা শুনে রুদ্র বলল।

তোমার কথা আমার মনে পরবে কিভাবে,মনে তো পরে তাদের কথা যাদের ভুলা যায়। তুমি তো সবসময় আমার বুকের ভিতরে আমার হৃদপিন্ডে থাকো।

আমাকে তোমার হৃদপিন্ডে রাখলে তোমার নতুন বউকে কোথায় রাখবে।আবার তোমার নতুন বউয়ের জন্য আমাকে না আবার হৃদপিন্ড থেকে বের করে দাও।

উফ দাদি তুমি কি বলছো তোমার তুলনা কারো সাথে হয় বলো। তোমার স্থান কেউ নিতে পারবে না।মাই সুইট হার্ট,

আমার তুলনা কারও সাথে হয়না, আবার আমাকে না জানিয়ে তো বিয়েও করে ফেলেছ।

দাদি তুমি তো জানো ওটা একটা এক্সিডেন্ট ছিল।তখন আমার কিছুই করার ছিল না।

রুদ্রের কথা শুনে সালেহা মির্জা আর কিছু বললেন না। কিন্তু ওনার মনের মধ্যে চলছে অনেক কিছু। সিরাতকে সালেহা মির্জার পছন্দ হয়নি।ওনি চেয়েছিলেন রুদ্রের জন্য তাদের মতোই বড় ঘর থেকে মেয়ে আনতে। এবং অবশ্যই মেয়ে ওনার পছন্দের হতে হবে। এবং রুদ্র যেমন দেখতে শুনতে সব দিক দিয়ে পারফেক্ট তেমন মেয়ে রুদ্রের বউ হয়ে আসবে। কিন্তু সালেহা মির্জার চোখে সিরাতের না আছে আভিজাত্য আর না আছে রুপ।

যখন রুবেল মির্জা সালেহা মির্জাকে রুদ্রের বিয়ের কথা বলেছিল তখন সালেহা মির্জা অনেক রাগারাগী করেছেন রুবেল মির্জার সাথে।আর যখন সালেহা মির্জা সিরাতের একটি ছবি চাইলো দেখার জন্য তার নাতি কেমন সুন্দরী মেয়েকে বিয়ে করেছে দেখার জন্য।তখনি রুবেল মির্জা সিরাতের ছবি পাঠিয়ে দেয় ওনার কাছে।সিরাতের ছবি দেখে যেনো সালেহা মির্জার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরেছিল তখন। সালেহা মির্জা বিশ্বাস করতে পারছিলেন না ওনার এত সুন্দর নাতির স্ত্রী এত কালো মেয়ে।

সালেহা মির্জা এই নিয়েও রুবেল মির্জার সাথে অনেক রাগারাগী করেছেন। রুবেল মির্জা এই মেয়েকে কেনো বাড়িতে উঠতে দিয়েছেন। এই সকল কথা বলেও অনেক চিল্লাচিল্লি করেছেন। সালেহা মির্জা সিরাত কে বাড়ি থেকে বের করে দিতেও বলে ছিলেন।সিরাতকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার কথা শুনে রুবেল মির্জা সালেহা মির্জার ফোন কেটে দিয়েছিল দুদিন পর্যন্ত আর ফোন ধরেনি রুবেল মির্জা।তাই সালেহা মির্জা সিরাতের সম্পর্কে আর কিছু বলে নি রুবেল মির্জা কে কিন্তু মনে মনে ওনার ক্ষোভ ঠিকই রয়ে গেছে।
___________________________________
রিক্সা এসে থামে একটি নামি দামি রেস্টুরেন্টের সামনে। রেস্টুরেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে আছে চার পাঁচজন বডিগার্ড। নূর এগিয়ে যায় রেস্টুরেন্টের দিকে। নূর রেস্টুরেন্টের দরজার সামনে আসতেই একজন বডিগার্ড দরজা খুলে দেয়।এতে নূর একটুও অবাক হয়নি।নূর ভিতরে যেতেই দেখতে পায় আদিত্য চেয়ারে পায়ের উপর পা দিয়ে বসে আছে। দৃষ্টি নূরের দিকে।আরিফ আদিত্যর পাশে দাঁড়িয়ে কানের সামনে ফিসফিস করে কি যেনো বলছে।হয়তো ওদের কাজ সম্পর্কে কিছু আলোচনা করছে। আদিত্যর হাতের ইশারা পেতেই আরিফ থেমে যায়। এবং সামনে তাকিয়ে নূরকে দেখে সেখান থেকে বের হয়ে যায়। এখন আরিফের মাথায় নূরকে দেখে একটি কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে।

ভাবির মনে হয় জানেন মায়া নেই,তাই যেচে বাঘের কাছে এসেছে মরতে।না না বাঘ না ভাই তো বাঘের চেয়েও বেশি হিংস্র।

মনের কথা মনে রেখে বের হয়ে যায় আরিফ। আরিফের যাওয়ার পানে অবাক হয়ে তাকায় নূর।ও বুঝতে পারছে না আরিফ ওকে দেখতেই এখান থেকে বের হয়ে গেল কেনো।নূর পুরো রেস্টুরেন্টের দিকে একবার চোখ বুলিয়ে দেখলো। রেস্টুরেন্ট পুরোটা ফাঁকা এখানে এখন ও আর আদিত্য ছাড়া আর কেউ নেই। আদিত্যর সাথে নিজের একা রেস্টুরেন্টে দেখে নূরের গলা শুকিয়ে আসছে।ওর ভিতরে এখন কিছুটা ভয়ের সৃষ্টি হচ্ছে।নূর আদিত্যর দিকে তাকাতেই দেখতে পায় আদিত্য ওর দিকেই তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে।

আদিত্যকে নিজের দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে শুকনো একটি ঢোক গিলে। কিন্তু আবার পরের মুহূর্তে নিজেকে নিজে সাহস যোগানোর জন্য মনে মনে বলল।

এখন ভয় পেলে হবে না, এখানে যখন এসেই পরেছি আজ একটা হেস্তনেস্ত করেই যাবো। জীবনে কত কঠিন পরিস্থিতির সাথে লড়াই করে জয়ী হয়েছি তাহলে এই আদিত্য চৌধুরী কি জিনিস।

কথাগুলো নিজেকে নিজে মনে মনে বলে এগিয়ে যায় আদিত্যের দিকে নূউ। নূর আদিত্যর কাছে গিয়ে কপট রাগ দেখিয়ে বলল।

কি সমস্যা তোমার?

নূর প্রশ্নটি করার পর আর কিছু বলতে পারলো না।তার আগেই আদিত্য জবাবে বলল।

বউ কাছে নেই,এর থেকে বড় সমস্যা একজন পুরুষের আর কি হতে পারে।তেমনি আমার ও অনেক সমস্যা হচ্ছে নিজের বউ কে কাছে না পেয়ে। বউয়ের সাথে একটু রোমান্স করতে পারছি না।একটু না অনেকটাই রোমান্স করতে চাই আমি আমার বউয়ের সাথে। কিন্তু বউ সব সময় পালাই পালাই করে।

নূর আদিত্যের কথা শুনে কিছুটা রেগে যায় তবুও নিজেকে যথা সম্ভব শান্ত রাখার চেষ্টা করে বলল।

আমি তোমার সাথে মজা করতে আসিনি,তাই সোজাসুজি বলো কি চাই তোমার। তুমি এই সকল কিছু কেনো করছো?

নূরের কথাটি বলার সাথে সাথেই আদিত্য হেঁয়ালি করে বলল।

বাসর করতে চাই,

আদিত্যর বলা হেঁয়ালি করে কথাগুলো শুনে নূরের মাথা গরম হয়ে গেল। নূর রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে আদিত্যর সামনে এসে নিজের এক আঙ্গুল আদিত্যর দিকে তাক করে বলতে লাগলো।

অনেক হয়েছে অনেক শুনেছি তোমার ফালতু কথা।তুমি যদি পরবর্তীতে আমাকে জ্বালানো বন্ধ না করো তাহলে তার ফলাফল ভালো হবে না।আমি তোমার সাথে কি করব তুমি ভাবতেও পারবে না।

নূরের কথা শেষ হতেই আদিত্য নূরের হাতটি খপ করে ধরে ফেললো। এবং নূরের হাত ধরে নিজের দিকে টান দিতেই নূর গিয়ে পরলো আদিত্যর কুলের উপর। আদিত্য তার দু হাত দিয়ে নূরকে এক প্রকার সাপের মতো পেঁচিয়ে ধরে। নূর হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে আদিত্যর দিকে। আদিত্য ও নূরের ঠোঁট প্রায় ছুঁইছুঁই। নূরের যেনো শ্বাস আটকিয়ে আসছে। আদিত্য নূরকে এমন ভাবে ধরে রেখেছে যে নূর নড়তেও পারছে না।

আমি ভবিষ্যৎ না বর্তমানে বিশ্বাসী তাই যা করার এখন এখানে করো।আমি একদম তৈরি আছি বউয়ের সাথে রোমান্স করার জন্য।

কথাটি বলেই আদিত্য নূরকে তার আর একটু কাছে টেনে নেয়। এদিকে নূরের দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার যোগাড়। নূর আজ পর্যন্ত কখনো কেনো পুরুষের এত কাছে আসেনি বা বলতে গেলে কেউ নূরকে আজ পর্যন্ত নিজের এত কাছে নিয়ে আসতে পারেনি। নূর আর সহ্য করতে না পেরে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল।

আ..আমা… আমাকে ছাড়ো আমি শ্বাস নিতে পারছি না। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।আ..আমি মরে যাবো।

আদিত্য নূরের কথা শুনে বাঁকা হাসি দিয়ে বলল।

এখনো তো আমি কিছু করিনি এতেই তোমার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বউ। যখন আমি কিছু করবো তখন তো তোমাকে খুজেও পাওয়া যাবে না।

কথাটি বলেই আদিত্য ছেড়ে দেয় নূরকে। আদিত্যর থেকে ছাড়া পেয়ে নূর ছিটকে ওর থেকে দূরে সরে যায় এবং জোরে জোরে শ্বাস ছাড়তে থাকে। নূর এমন ভাবে শ্বাস নিচ্ছে ওকে দেখে মনে হচ্ছে যেনো এতক্ষণ কেউ ওর গলা চেপে ধরে রেখেছিল। নূর নিজেকে কিছু সময়ের ব্যবধানে স্বাভাবিক করে। এবং আদিত্যর দিকে ক্ষুব্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল।

এর পরিণাম অনেক খারাপ হবে,

কথাটি বলেই নূর রেস্টুরেন্ট ত্যাগ করার আগেই নূরের কানে আসে আদিত্যর বলা কথা। আদিত্য নূরের উদ্দেশ্যে বলল।

I am waiting বউ

নূর আদিত্যের কথা শুনে বিরবির করে বলল।

বেহায়া..
___________________________________
রুদ্র রুমে বসে মোবাইলে ওর বন্ধুদের সাথে চ্যাটিং করছে।সিরাত সারাদিন সাহানারা মির্জার সাথে কাজ করার পর সাওয়ার নিতে ঢুকে।সকালে একবার সাওয়ার নেওয়ার পরেও দুপুরে আবার সাওয়ার নিয়ে বের হয়েছে সিরাত।সিরাতের চুল থেকে পানি টপটপ করে পরছে।সিরাত সাওয়ার নিয়ে বের হতেই রুদ্রের চোখ যায় সিরাতের দিকে।সিরাতের দিকে তাকাতেই রুদ্রের চোখ যেনো সিরাতের উপরে থেকে যায়। রুদ্র জানেনা আজ কাল রুদ্রের চোখ দুটো সিরাতের দিকেই থেমে যায় কেনো।ও যেনো চোখ ফিরাতে পারে না সিরাত থেকে।আর যখন সিরাত নিজের হিজাব খুলে ওর রেশমী লম্বা চুল খুলে সিরাত রুদ্রের সামনে আসে তখন রুদ্রের চোখ যেনো সিরাতের দিকেই থেমে থাকে। রুদ্রের কাছে এখন সিরাতকে অপ্সরা মনে হচ্ছে।

রুদ্র সিরাত থেকে নিজের চোখ সরিয়ে নেয়।চোখ সরিয়ে নেওয়ার পরেও বেহায়া চোখ বারবার সিরাতের দিকেই যাচ্ছে।সিরাত নিজের চুল আঁচড়াচ্ছে রুদ্রের এখন মন চাইছে সিরাতের চুলে হাত বুলিয়ে দিতে। কিন্তু সিরাতের দিকে সরাসরি তাকানোও যেনো ওর জন্য ঘোর অপরাধ। কিন্তু নিজের মনের ইচ্ছা কে কিছুতেই দমাতে পারছে না রুদ্র।তাই রুদ্রের মাথায় ফট করে একটি বুদ্ধি উদয় হলো। রুদ্র হঠাৎ নূরকে বলে উঠলো।

রুদ্র বেডের থেকে উঠে কাভার্ড এর কাছে গিয়ে কাভার্ড টি খুললো এবং আস্তে করে ওটার ভিতর থেকে কিছু একটা বের করলো। এবং আবার চুপচাপ গিয়ে নিজের জায়গায় বসে পরলো। রুদ্র সিরাতের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠার মতো ভাব করে বলল…

#চলবে…