#তুমি_শুধু_গল্প_না_আমার_ভালোবাসা
#আমেনা_আক্তার
#পর্ব_৩৯
রুদ্র হঠাৎ সিরাতের উদ্দেশ্যে বলল।
তোমার মাথায় এটা কি?
সিরাত প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকায় রুদ্রের দিকে। রুদ্র তখনি আবার বলল।
তুমি নড়ো না,আমি দেখছি কথাটি বলেই রুদ্র খাট থেকে নেমে পরে। এবং সিরাতের কাছে এসে ওর মাথার চুলে হাত বুলিয়ে। সিরাতের মাথা থেকে কিছু একটা ছাড়ানোর নাটক করতে থাকে।সিরাতের কাছ থেকে মিষ্টি একটি ঘ্রাণ আসছে।যা রুদ্রের নাকে এসে বারি খাচ্ছে।এর আগে রুদ্র কখনো সিরাতের কাছ থেকে এমন মিষ্টি ঘ্রাণ পায়নি। কারণ আজ পর্যন্ত রুদ্র সিরাতের এত কাছে আসেনি।রুদ্রের মন চাইছে না সিরাতের কাছ থেকে দূরে যেতে। এভাবেই সিরাতের চুলে হাত বুলাতে চাইছে রুদ্র।
সিরাত রুদ্রের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ওর কর্মকাণ্ড গুলো দেখছে। রুদ্র সিরাতের চুলে হাত বুলাতে বুলাতে তার চোখ যায় সিরাতের দিকে।সিরাতের চোখের দিকে রুদ্র তাকাতেই ওর চোখ যেনো সিরাতের উপরেই থেমে যায়। রুদ্র ও সিরাত একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে আছে এক পলকে। দুজনের মধ্যেই অন্য রকম অনুভুতি হচ্ছে। এতক্ষণ সিরাত রুদ্রের দিকে জহুরি দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলেও এখন সিরাতের দৃষ্টি শান্ত ও শিতল হয়ে পরেছে।মনে হচ্ছে ওকে রুদ্রের দিকে কেউ চুম্বকের মতো টানছে।
দুজন দুজনের দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ রুদ্র ও সিরাত দু’জনেরই ধ্যান ভাঙ্গে। এবং রুদ্র সাথে সিরাতের কাছ থেকে দূরে সরে যায়। রুদ্র সিরাতকে কিছু না বলে ওর হাতে থাকা নকল টিকটিকিটা দূরে ছুড়ে মেরে হনহনিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়।
রুদ্র কিছুই বুঝতে পারছে না আজ কাল ওর সাথে কি হচ্ছে।আগে তো রুদ্রের ভিতরে এমন কোনো অনুভুতি সৃষ্টি হয়নি।অথচ রুদ্রের মতে ও সোফিয়াকে ভালোবাসে।তাহলে এখন সিরাতের জন্য ওর অদ্ভুত অনুভূতি জাগ্রত হওয়ার কারণ কি।না ও কিছুই ভাবতে পারছে না। সব কেমন যেনো ঘোলাটে মনে হচ্ছে রুদ্রের।
___________________________________
দুই বন্ধু একজোট হয়ে একের পর এক ড্রিংক করে যাচ্ছে। দুনিয়ার সকল চিন্তা ভাবনা বাদ দিয়ে ওরা মগ্ন এখন নেশার ঘরে। দুজনকে আটকানোর মতো ও তাদের সামনে কেউ নেই এখন।তাই এই সুযোগে এক বন্ধু নিজের ভালোবাসা যন্ত্রণা পুরছে আরেকজন পুরছে নিজের নতুন অনুভূতি কে বুঝার ধমানোর প্রচেষ্টা। আব্রাহাম আজ পর্যন্ত এত বেশি ড্রিংক ও কখনো করেনি।যদি দুই একবার ড্রিংক করেও থাকে তাহলেও ওটা শুধু বন্ধুদের সাথে মজা করে অল্প একটু আধটু করা হয়েছে। কিন্তু আজ যেনো আব্রাহাম ও নেশার সাগরে ডুবে যেতে চাইছে।
আব্রাহাম যে আর সহ্য করতে পারছে না প্রিয়সির অবহেলা। আব্রাহাম আজ আবার গিয়েছিল আয়নার সাথে দেখা করতে আয়নার কাছে নিজের ভুলের জন্য ক্ষমা ভিক্ষা চাইতে। কিন্তু ওর প্রিয়সির মান ভাঙ্গানো কি এত সহজ না ওর প্রিয়সি যেনো ওর দেওয়া কষ্টগুলো পেয়ে পাথর বনে গিয়েছে। সবসময়ের মতো আজও আয়না আব্রাহমকে প্রত্যাখ্যান করেছে।আজ আবার আব্রাহামের মন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গিয়েছে।কি করবে আব্রাহাম কিভাবে ক্ষমা চাইলে আয়না ওকে মাফ করবে।কিছুই বুঝতে পারছে না আব্রাহাম।
আরেকদিকে রুদ্র যে নিজের নতুন জাগ্রত অনুভূতির জন্য নিজেই বিরক্ত।ওর চোখ কেনো সিরাতকে বারবার দেখতে চাইবে।সিরাত আর ওর বিয়ে হওয়া সত্তেও তো ওদের মাঝে ও রকম কোনো সম্পর্ক স্থাপন হয়নি।তাহলে এই অনুভূতি গুলো কেনো হচ্ছে। নিজের সাথে যুদ্ধ করছে রুদ্র এক অদৃশ্য যুদ্ধ।যেই যুদ্ধে রুদ্র যেই কোনো ভাবে জয় হতে চায়।
দুই বন্ধু পুরো দমে মাতাল হয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হয়েছে।রাত বাজে এখন
১ টা আব্রাহামের মা ড্রইংরুমে বসে এখনো আব্রাহামের জন্য অপেক্ষা করছে। আব্রাহামের মা এখন খুবই চিন্তিত হয়ে বসে আছে কারণ আব্রাহাম এর আগে অনেক বার বাড়িতে লেট করে ফিরলেও আব্রাহাম অন্তত ওর মাকে একবার হলেও ফোন করে জানিয়েছে। কিন্তু আজ আব্রাহাম ওর মাকে কিছুই বলেনি।তাই চিন্তাই খারাপ অবস্থা আব্রাহামের মায়ের।তার উপর উনি আব্রাহামের মোবাইলে কয়েকবার ফোন ও দিয়েছে কিন্তু আব্রাহাম একবারের জন্যও ফোন রিসিভ করে নি।এতে যেনো দিগুন চিন্তা বেড়ে গিয়েছে উনার।
আব্রাহাম নেশায় টলতে টলতে ওদের বাড়িতে প্রবেশ করল। আব্রাহামের মা এতক্ষণ দরজার দিকেই তাকিয়ে ছিল। ছেলেকে দেখে সোফা থেকে উঠে আব্রাহামের কাছে গেল আব্রাহামের মা।
আব্রাহাম অধিক পরিমাণে নেশা করার জন্য ঢলে পড়ে যাচ্ছে। আব্রাহামর মা ছেলের অবস্থা দেখে আব্রাহাম যেয়ে ধরলেন। আব্রাহামের মায়ের বিশ্বাস হচ্ছে না আব্রাহাম এত ড্রিংক করে বাসায় ফিরেছে। আব্রাহাম তো কখনো এমন করে না। তাহলে আজ এমন কি হয়ে গেল আব্রাহাম এই অবস্থায় বাড়ি ফিরেছে।
আব্রাহাম কে সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে ওর মা। উনার একার পক্ষে সম্ভব না আব্রাহাম কে একা সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠা।তাই আব্রাহামের মা আব্রাহাম কে সোফায় বসিয়ে দিয়ে উনি নিজের রুমে চলে গেলেন।রুমে গিয়ে আব্রাহামের বাবাকে ঘুমাতে দেখে আব্রাহামের মা কান্না করতে করতে আব্রাহামের বাবাকে জাগাতে লাগলেন।
আব্রাহামের বাবা স্ত্রী কান্না জড়িত কণ্ঠ শুনে ধরফরিয়ে ঘুম থেকে উঠে গেলেন। এবং বললেন।
কি হয়েছে তুমি এত রাতে কান্না করছ কেনো ?
আব্রাহামের মা কান্না করতে করতে বললেন।
এসে দেখেন আমার ছেলে কি অবস্থায় বাড়ি ফিরেছে।ওর এই অবস্থা আমার সহ্য হচ্ছে না।
কোথায় আব্রাহাম?আর কি হয়েছে ওর। তুমি এভাবে কান্না করছো কেনো।
ড্রয়িং রুমে,
স্ত্রী কথা শুনে আব্রাহামের বাবা দেড়ি না করে ড্রয়িং রুমে চলে যায়। এবং দেখে আব্রাহাম মাতাল হয়ে সোফায় পরে আছে। আব্রাহামের বাবা ও আব্রাহাম কে এই অবস্থায় দেখে অবাক হয়ে যায়। সাথে উনার প্রচুর রাগ উঠে।উনি রাগ মিশ্রিত গলায় বলল।
ওর এত বড় সাহস ও এত রাতে বাড়িতে নেশা করে ফিরেছে। আবার ওর জন্য তুমি কান্না করছো।
স্বামীর কথা শুনে আব্রাহামের মা বললেন।
ওর নিশ্চয়ই কিছু হয়েছে, নাহলে আপনিও তো আব্রাহাম কে ভালোভাবে চিনেন ও কখনো এত নেশা করে না। ওকে উপরে নিয়ে চলুন।
আব্রাহামের মায়ের কথা শুনে ওর বাবা আর কিছু না বলে আব্রাহাম কে উপরে নিয়ে যায় ওর রুমে। এবং আব্রাহাম কে ওর বাবা বিছানায় সুইয়ে দেয়। আব্রাহামের মা আব্রাহামের জন্য কিচেন থেকে কিছু লেবুর রস নিয়ে আসে। আব্রাহাম কে সেই লেবুর রস গুলো খাইয়ে দেওয়া হয়।যেনো ওর নেশা কিছুটা হলেও হালকা হয়।
আব্রাহাম কে লেবুর রস খাওয়ানোর কিছু সময় বাধেয় আব্রাহাম নড়ে চড়ে উঠে। এতক্ষণ ও বেহুঁশের মতো পরে ছিল এখন বিরবির করে কি যেনো বলছে। আব্রাহামের মা আব্রাহামের কাছে বসে ওকে জিজ্ঞেস করলো ও কেনো এত নেশা করেছে। আব্রাহামের বাবা ও সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে। আব্রাহাম ওর মায়ের প্রশ্নে পিটপিট করে ওর মায়ের দিকে তাকায়। আব্রাহাম ওর মাকে দেখে জাপটে ধরে হাউমাউ কেঁদে উঠলো।
আব্রাহামের বাবা মা দুজনেই হতভম্ব হয়ে গেল ছেলের এই অবস্থা দেখে। আব্রাহাম কে উনারা আজ অনেক বছর ধরে কাঁদতে দেখেনি।বলতে গেলে আব্রাহামের বুঝ হবার পর থেকে ও কখনো যত কষ্টই হোক না কখনো কারও সামনে নিজের অশ্রু বিসর্জন দেয়নি আব্রাহাম। তাই আজ ছেলেকে এভাবে কাঁদতে দেখে আব্রাহামের বাবা মায়ের কলিজায় যেনো পাথর দিয়ে বারি দেওয়ার মতো যন্ত্রণা হচ্ছে। উনারা বিচলিত হয়ে পরলেন আব্রাহামের মা অধৈর্য গলায় জিজ্ঞেস করলেন।
তোর কি হয়েছে বাবা, তুই এভাবে কাদছিস কেনো?
আব্রাহাম ওর মায়ের কথায় কাঁদতে কাঁদতে বলল।
আমি মরে যাচ্ছি মা,আমি শেষ হয়ে যাচ্ছি।
কি বলছিস তুই, এমন কথা তুই মুখ থেকে বের করছিস কেনো। আম্মু আব্বু আছি না তোর কাছে।
আব্রাহামের মায়ের কথা শেষ হতেই, আব্রাহামের বাবা আব্রাহামের পাশে বসে অধৈর্য গলায় বলল।
আমাদের বল বাবা তোর কি হয়েছে,আমরা সব ঠিক করে দিবো। তোর কিছুই হবে না।
ও আমাকে মাফ করছে না বাবা,ওর অবহেলা আমাকে ভিতর থেকে নিঃশেষ করে দিচ্ছে।আমি মরে যাচ্ছি যানো তোমরা।ও যখন আমার দিকে ঘৃণা ভরা দৃষ্টিতে তাকায় তখন আমার মরে যেতে ইচ্ছে করে।ওকে একটু বলো না আমাকে মাফ করে দিতে। আমার ভুল হয়ে গেছে আমি আর কখনো ওকে কষ্ট দিবো না।আমি সত্যি বলছি প্লিজ তোমরা ওকে বুঝাও।
কথাগুলো বলে আবার কেঁদে উঠলো আব্রাহাম। আব্রাহামের কথা শুনে আব্রাহামের বাবা মায়ের বুক যেনো কেঁপে উঠলো। আব্রাহামের বাবা মা খুব ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছে আব্রাহাম অবশ্যই কেনো মেয়েকে প্রচন্ড ভালোবেসে ফেলেছে। এবং তার জন্যই ওনাদের ছেলে এত কষ্ট পাচ্ছে। কিন্তু কে ওই মেয়ে আর কেনো বা আব্রাহাম সেই মেয়েকে ক্ষমা করতে বলতে বলছে। আব্রাহাম তার কোন ভুলের মাফ চাইছে।কি করেছে ও।
আব্রাহাম যাই করুক না কেনো ওর ভুলের জন্য যে ও ভিশন কষ্ট পাচ্ছে তা খুব ভালোভাবে বুঝতে পারছে আব্রাহামের বাবা মা।আজ পর্যন্ত ছেলের কোনো ইচ্ছা অপূর্ণ রাখেননি ওনারা।আজ ছেলের এই অবস্থা যেই মেয়ের জন্য হয়েছে।সেই মেয়েকে যেই কোনো মূল্যে এনে দিবেন ওনারা।
আব্রাহামের মা আব্রাহাম কে জিজ্ঞেস করলেন।
কে সেই মেয়ে বাবা?
#চলবে..
#তুমি_শুধু_গল্প_না_আমার_ভালোবাসা
#আমেনা_আক্তার
#পর্ব_৪০
রুদ্র ও টলতে টলতে বাড়ি ফিরেছে।অন্য সকল দিন রুদ্রের মা ওর জন্য অপেক্ষা করলেও আজ সাহানারা মির্জা ঘুমিয়ে পরেছেন। মূলত সিরাত উনাকে ঘুমানোর জন্য জোড় করে পাঠিয়েছে।সিরাত চুপচাপ ড্রয়িং রুমে বসে রুদ্রের জন্য অপেক্ষা করছে। সাহানারা মির্জা সিরাতকে আগেই বলেছিল রুদ্র প্রায় মাতাল হয়ে বাড়িতে ফিরে। রুদ্র কে এই অবস্থায় দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে দেখেও সিরাত এগিয়ে গেল না ওকে সামলানোর জন্য।সিরাত যেই খানে ছিল সেখানেই বসে আছে। রুদ্র ও সিরাত কে খেয়াল না করে নিজের রুমের উদ্দেশ্যে চলে যায়।
রুদ্রকে রুমে যেতে দেখে সিরাত কোনো বাক্য ব্যয় না করে রুমে চলে যায়। রুদ্র রুমে এসে নিজের গায়ে থাকা জ্যাকেটটি ছুড়ে মারে বিছানার উপরে।তখনি সিরাত প্রবেশ করে রুমে। রুমে প্রবেশ করেই সিরাত রুদ্রের অবস্থা। উপলব্ধি করতে পারে রুদ্র ড্রিংক করে এসেছে।সিরাত এটিও খুব ভালো ভাবে জানে এখন রুদ্রকে কিছু জিজ্ঞেস করা বোকামি ছাড়া আর কিছুই না।তাই সিরাত রুদ্রের উদ্দেশ্যে বলল।
তুমি বসো আমি তোমার জন্য লেবুর শরবত নিয়ে আসছি। রুদ্র সিরাতের কথা শুনে পিটপিট করে সিরাতের দিকে তাকায়।আর সিরাত যখনি শরবত আনবে রুম থেকে বের হবে রুদ্র সিরাতের উদ্দেশ্যে বলল।
তুমি, তুমি আমার রুমে কি করছো,
রুদ্রের কথা শুনে সিরাত ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকায়। রুদ্র তখনি কিছু মনে করার ভান করে বলতে থাকে।
ও মনে পরেছে, তুমি তো এখন আমার বউ।
কথাটি বলেই রুদ্র বোকার মতো হাসতে থাকে।একটি সময়ে হাসি বন্ধ করে সিরাতের কাছে এসে বলল।
কিন্তু তুমি তো জানো না বউদের কিছু দায়িত্ব থাকে।তার থেকে সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হলো স্বামীর সেবা করা।আমি তোমার স্বামী তাই আজকের পর থেকে তুমি আমার সেবা করবে নো ঝগড়া।আমিই তোমার সব আজকের পর থেকে তুমি আমার কথা মতো চলবে।
কথাগুলো বলে রুদ্র বেডে ধপাস করে শুয়ে পরে এবং সিরাত কে উদ্দেশ্য করে বলল।
আমি শুয়ে পরেছি এখন তোমার স্ত্রীর দায়িত্ব পালন করো। আমার পা দুটো খুব ব্যাথা করছে। আমার পা দুটো তুমি টিপে দিবে।
রুদ্র এমনি আরো অনেক কথা বিরবির করে বলছে সিরাত কে।সিরাত একটি লম্বা শ্বাস ছেড়ে রুদ্রের পায়ের থেকে ওর জুতো জোড়া খুলে দিলো এবং রুদ্রের ছুড়ে মারা জ্যাকেট সঠিক স্থানে রাখল।সিরাত রুদ্রের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল।
কালকের পর থেকে তোমার সারাজীবনের জন্য নেশা করা আমি ছুটিয়ে দিবো। তুমি বুঝবে সিরাত কি জিনিস।
কথাটি বলেই সিরাত নিজের জায়গায় চলে যায় ঘুমানোর জন্য।
___________________________________
নতুন সকালের সূচনা ঘটেছে। সূর্যের আলো উঁকি ঝুঁকি দেওয়ার চেষ্টা করছে জানালার পর্দা ভেদ করে। কিন্তু সকাল নয়টা টা বাজার পরেও চোখ খুলতে চাইছে না রুদ্র। চাইবেই বা কি করে কাল তীব্র নেশার প্রভাব যে একটু আধটু আছে ওর মাঝে।তাই তো সূর্যের এই রশ্মি এখন বিরক্তের কারণ হচ্ছে রুদ্রের। রুদ্র বিরক্তি নিয়ে ওপাশ ফিরে ঘুমানোর প্রস্তুতি নেই। কিন্তু একি রুদ্র তো নড়তেও পারছে না।মনে হচ্ছে রুদ্রের উপরে ভারি কোনো জিনিস চেপে বসেছে।তাই না চাইতেও রুদ্র পিটপিট করে নিজের চোখ দুটো মেলে দেখার চেষ্টা করে কি আছে ওর উপরে।
রুদ্র চোখ মেলতেই ওর চোখ দুটো বড়বড় হয়ে যায়। কারণ সিরাত রুদ্রের পেটের উপর বসে আছে। চুল গুলো সিরাতের এলোমেলো আর হাতে একটি ধারালো ছুরি। রুদ্রের মনে হচ্ছে ও স্বপ্ন দেখছে নিশ্চয়ই এটি কাল প্রচুর পরিমাণে ড্রিংক করার প্রভাব। রুদ্র নিজের চোখ বন্ধ করে আবার সিরাতের দিকে তাকায়। কিন্তু নাহ সিরাত তো এক চুলও নড়ে নি। রুদ্র শুকনো একটি ঢোক গিলে এবং মনে মনে ভাবে। কাল রাতে নিশ্চয় নেশার ঘোরে ও এমন কোনো কাজ করেছে যার জন্য সিরাত আজ ওকে মারতে চাইছে।সিরাতের উদ্দেশ্যে কন্ঠ কিছুটা নরম করে বলল।
কি..কি হয়েছে তুমি এভাবে এই ছুড়ি নিয়ে আমার উপরে বসে আছো কেনো।
রুদ্রের কথা শুনে সিরাত বলল।
আমি আমার স্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছি। তুমিই তো কাল বলেছিলে স্ত্রীর কিছু কর্তব্য রয়েছে তা আমারও পালন করতে হবে।আমি সেই স্ত্রীর দায়িত্ব এখন পালন করব।
তুমি ছুরি দিয়ে কি দায়িত্ব পালন করতে এসেছে।এটি দিয়ে মানুষ মারা হয় কোনো দায়িত্ব পালন হয় না। তোমার কোনো দায়িত্ব পালনের প্রয়োজন নেই। তুমি শুধু দয়া করে আমার উপর থেকে এই ছুড়ি নিয়ে উঠো।
অবশ্যই দরকার আছে, স্ত্রীর দায়িত্ব পালন করার।আর এই ছুড়ি দিয়ে স্বামীকে সঠিক পথ দেখানোর দায়িত্ব পালন করতে হয়।
কথাটি বলেই সিরাত তার হাতে থাকা ছুরি ধরে রুদ্রের গলায়। রুদ্র সিরাত কে নিজের গলায় ছুরি ধরতে দেখে বড় বড় চোখ করে তাকায় সিরাতের দিকে। রুদ্র কে এভাবে তাকাতে দেখে সিরাত আবার বলল।
তুমি কি মনে করেছ, তুমি রাতে নেশা করে বাড়ি ফিরবে আর আমি বাংলা ছায়াছবির নায়কা শাবানার মতো ঘরের এক কোনায় বসে কান্না করব। আবার সকাল হতেই তোমার সেবা করার জন্য লেগে পরব।এতটা অবলা নারী মনে করেছ আমায়।
না না বিশ্বাস করো আমি তোমাকে কখনো এত অবলা নারী মনে করি নি।আমি তো প্রথম থেকেই জানি তুমি অবলা না হিটলার।
কি?
না না মানে তুমি অনেক ভালো একটা মেয়ে।
আরে তুমি ভুল বুঝেছ আমাকে আমি ভালো মেয়ে না। আমি আসলেই হিটলার।আর অনেক খারাপ আমি বেশি খারাপ তখন হয়ে যাই যখন আমার স্বামী অন্য মেয়ের বিরহে নেশা করে বাড়ি ফিরে।
আমি কারও বিরহে নেশা করে বাড়ি ফিরিনি। আমার অভ্যেস হয়ে গেছে নেশা করতে করতে তাই ছোট খাটো বিষয়েও একটু আধটু নেশা করে ফেলি।
সিরাত ভ্রু কুঁচকে বলল।
একটু আধটু,
না মানে একটু বেশিই।
আজকের পর থেকে সব নেশা বন্ধ,আমি যেনো কখনো তোমার কাছ থেকে সিগারেটের গন্ধটাও না পাই।আর যদি পাই তাহলে তুমি তো থাকবে কিন্তু তোমার একটু আধটু নেশা করার জন্য মাথাটাই থাকবে না বুঝেছ।
হ্যাঁ হ্যাঁ বুঝেছি,আমি আর নেশা তো দূরের কথা নেশার আশে পাশেও থাকব না।
সিরাত রুদ্রের কথা শুনে মুচকি হেসে ওর উপর থেকে নেমে গেল। রুদ্র স্বস্তির নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো। এতক্ষণ ওর খারাপ অবস্থা হয়ে ছিল মনে হচ্ছিল এই মনে হয় সিরাত গলায় ছুরিটা চালিয়ে ওর কিচ্ছা খমত করে দিবে। আল্লাহ কি সাংঘাতিক বউ পেয়েছে ও।
সিরাত নিজেকে পরিপাটি করে রুম থেকে বের হয়ে আসে। ড্রয়িং রুমে আসতেই দেখতে পায় সালেহা মির্জা সোফায় বসে বসে পান চিবাচ্ছে।সিরাত কে দেখতেই সালেহা মির্জা বলে উঠলেন।
আমাদের বাড়ির বউরা এত বেলা করে ঘুম থেকে উঠে না। আমাদের সকালের নাস্তা খেয়ে হজম ও হয়ে গিয়েছে। তোমার শাশুড়ি সব একা একা করেছে।তুমি তোমার শাশুড়িকে সাহায্য না করে সকাল নয়টা বাজে ঘুম থেকে উঠেছো। তোমার মাঝে কি সামান্য পরিমাণও ঙ্গান নেই।
কি করব বলেন দাদি, আপনার নাতি যদি মাঝ রাতে মদ গিলে বাড়িতে ফিরে তাহলে তার জন্য তো আমাকেও তো অর্ধেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকতে হয়েছে।আর বলছেন ঙ্গানের কথা।আমি নাহলে দেড়ি করে ঘুম থেকে উঠেছি। আমার চাচি শাশুড়ি তো আপনার সাথেই উঠেছে উনি কি আম্মুর সাহায্য করতে পারতেন না। কিন্তু না আপনারা শুধু ঙ্গান দেওয়ার কথা মুখেই বলতে পারেন কিন্তু কাজের সময় শূন্য।
কথাটি বলেই সিরাত কিচেনে চলে যায় আর এদিক দিয়ে সালেহা মির্জা রাগে গজগজ করতে করতে বলল।
সাহানারা তোর ছেলের বউয়ের মুখে লাগাম লাগা।পরশু ওদের রিসিপসন। সেখানে অনেক বড় বড় মানুষ আসবে।তোর ছেলের বউ যদি এভাবেই বেয়াদবি করতে থাকে তাহলে সবার সামনে আমাদের নাক কাটা যাবে।
কথাটি বলেই সালেহা মির্জা বিরবির করে বলল।
রিসিপসন তো শুধু বাহানা পরশু এই মেয়ের আসল যায়গা দেখাবো আমি।
___________________________________
আব্রাহামের বাবা মা দুজনে চিন্তিত অবস্থায় আব্রাহামের রুমে বসে আছে। সারারাত দুজনে একসাথেই আব্রাহামের রুমে ছিল। ছেলের চিন্তায় কারও ঘুম হয় নি। আব্রাহাম ঘুম ঘুম চোখে তাকাতেই ওর বাবা মাকে নিজের রুমে দেখে চমকে উঠলো। এবং বলল।
বাবা মা তোমরা এই রুমে কি করছ,তাও এত সকালে।
আমরা সারারাত এখানেই ছিলাম,
মায়ের কথা শুনে আব্রাহাম অবাক হয়ে বলল।
তোমরা সারারাত এখানে ছিলে, কিন্তু কেনো?
তোর জন্য,তোর কি হয়েছে বল বাবা। তুই কাল রাতে আমাকে ধরে এভাবে কান্না করছিলি কেনো?আর তুই কোন মেয়ের কথা বলছিলি বল।
আব্রাহাম বুঝতে পারলো ও নেশার ঘরে হয়তো নিজের আবেগকে সামলাতে পারে নি। আব্রাহাম কথাটি এড়াতে বলল।
তোমরাও না,আমি নেশার ঘোরে কি না কি বলেছি।সেটা বিশ্বাস করে আবার আমাকে জিজ্ঞেস করছো কোন না কোন মেয়ের কথা। সিরিয়াসলি।
আব্রাহামের কথা শুনে ওর বাবা চোখ মুখ শক্ত করে বলল।
আমরা বাচ্চা নয় আব্রাহাম,আমরা খুব ভালো ভাবে বুঝতে পারি কোন কথা তোমার নেশার ঘোরে বলা।আর কোন কথা তোমার মন থেকে বলা।আর কাল রাতে তোমার কান্না দেখেই বুঝতে পেরেছি তুমি মেয়েটাকে প্রচুর পরিমাণে ভালোবাসো।
আব্রাহামের বাবার কথা শুনে আব্রাহামের মা বলল।
তোর বাবা ঠিকই বলছে,আর যদি আমরা ভুল হয়ে থাকি তাহলে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বল।
আব্রাহাম ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে পারে না।তাই ও এখান থেকে চলে যায়। আব্রাহামের বাবা মা শুধু তাকিয়ে ওর চলে যাওয়া দেখে।
___________________________________
নূর বসে আছে পুলিশ স্টেশনে।আজ নূর আদিত্যর নামে পুলিশ কাছে কমপ্লেন করতে এসেছে। নূর বসে আছে পুলিশ ইন্সপেক্টরের সামনে…
#চলবে…
#তুমি_শুধু_গল্প_না_আমার_ভালোবাসা
#আমেনা_আক্তার
#পর্ব_৪১
পুলিশ ইন্সপেক্টর নূরকে জিজ্ঞেস করলো।
আপনি যার নামে রিপোর্ট লেখাতে চান তার নাম বলুন।
নূর পুলিশের কথা শুনে বিনা সংকোচে বলে উঠল।
আদিত্য চৌধুরী,
পুলিশ আদিত্য চৌধুরী নামটি শুনে নূরের দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকায়। এবং নূরকে জিজ্ঞেস করলো।
আপনাকে এই লোকটি ডিস্টার্ব করে তার রিপোর্ট লেখাতে এসেছেন তাই না।
নূর আবার সংকোচে হীন ভাবে বলে উঠল।
হ্যাঁ,
পুলিশ নূরের কথা শুনে কিছু না বলে আবার রিপোর্ট লেখা শুরু করে।আপনি কি আদিত্য চৌধুরীর বাবার নাম জানেন।
হ্যাঁ, আফজাল চৌধুরী।
নূরের মুখে আফজাল চৌধুরী নামটি শুনে পুরো পুলিশ স্টেশন মুহূর্তের জন্য যেনো স্তব্ধ হয়ে গেল। পুলিশ ইন্সপেক্টর বিস্ফোরিত চোখে নূরের দিকে তাকিয়ে বলল।
আপনি বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ আফজাল চৌধুরীর ছেলে আদিত্য চৌধুরীর নামে রিপোর্ট লেখাতে এসেছেন।
নূর পুলিশের কথায় কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলল।
হ্যাঁ আমি বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ আফজাল চৌধুরীর ছেলে আদিত্য চৌধুরীর কথা বলছি। এখন দয়া করে রিপোর্ট লিখুন।
না আমরা রিপোর্ট লিখতে পারবো না।আপনি জানেন আপনি কার নামে রিপোর্ট লিখাতে এসেছেন। উনারা কতটা ক্ষমতাবান লোক।আর আদিত্য চৌধুরী উনাকে আপনি চিনেন উনি জানলে আপনি উনার নামে রিপোর্ট লেখাতে এসেছেন। আপনার সাথে কি কি করতে পারেন উনি। আপনাকে আর এই শহরে কি এই দুনিয়ায় আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।
পুলিশের কথায় নূর প্রচুর পরিমাণ বিরক্ত হয়ে বলল।
আমি আপনার কাছে কোনো জ্ঞান চেয়েছি। আপনার কাছে একজনের নামে রিপোর্ট লিখাতে এসেছি কিন্তু আপনারা রিপোর্ট তো লিখছেন না উল্টো আমাকে জ্ঞান দিচ্ছেন।
হ্যাঁ জ্ঞান দিচ্ছি কারণ আপনি আদিত্য চৌধুরীর নামে একটি মিথ্যা রিপোর্ট লিখাতে এসেছেন।উনি কোনো মেয়েকে ডিস্টার্ব করবে তো দূরের কথা কোনো মেয়ের দিকে তাকাতেও পছন্দ করে না। আপনার মতো হাজারটা মেয়ে আদিত্য চৌধুরীর আশে পাশে ঘুরে কিন্তু কারো দিকে উনি ফিরেও তাকায় না।আর আপনি বলছেন উনি আপনাকে ডিস্টার্ব করে।
আপনার কাছে আদিত্য চৌধুরীর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য চাইনি আমি।আমি এই কদিনে খুব ভালোভাবে বুঝে গিয়েছে ওই লোক কেমন।আপনি আমার রিপোর্ট লিখবেন কিনা তা বলুন।
নূর চিল্লিয়ে ইন্সপেক্টরের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো। নূরের কথা শুনে পুলিশ ইন্সপেক্টর কিছু বলার আগেই অন্য আরেকজন পুলিশ নূরের কাছে এসে বলল।
আরে ম্যাডাম আপনি তো উত্তেজিত হয়ে পরছেন। আমরা অবশ্যই আপনার রিপোর্ট লিখবো আপনি একটু বসুন। কথাটি বলেই পুলিশটি দ্বিতীয় পুলিশ কে চোখের ইশারায় কিছু বুঝাতেই উনি আর কিছু বললেন না। দ্বিতীয় পুলিশ নূরকে বসিয়ে চলে আসলো অন্য যায়গায় এবং ফোন মিলালো আরিফের নাম্বারে।
___________________________________
আদিত্য এখন তার গাড়িতে বসে আছে।গাড়ি চলছে আদিত্যের বাড়ির উদ্দেশ্যে। আদিত্যর মা কিছু জরুরী কাজের জন্য আদিত্য কে ডেকে পাঠিয়েছে। আরিফ বসে আছে গাড়ির সামনের সিটে। আরিফের ফোন বেজে উঠতেই ও ফোনের দিকে তাকায় আরিফ। ফোনে ভেসে উঠা নাম্বারটি দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেলে আরিফ। আদিত্যর দিকে তাকিয়ে আরিফ বলল।
ভাই থানার এসপি ফোন করেছে,
আদিত্য গম্ভীর গলায় বলর।
রিসিভ কর,
আরিফ ফোন রিসিভ করে কানে ধরতেই ওপাস থেকে বলা এসপির কথা শুনে শুকনো ঢোক গিলল আরিফ। এবং আদিত্যর দিকে তাকিয়ে বলল।
ভাই একটি মেয়ে নাকি থানায় গিয়ে আপনার নামে মামলা করতে চাইছে তাও আবার ওই মেয়ে বলছে আপনি নাকি ওই মেয়েকে ডিস্টার্ব করেছেন।
আদিত্য আরিফের কথা শুনে গম্ভীর গলায় বলল।
এসিপি কে বল,ও তোর ভাবি হয় ওর যেনো কোনো সমস্যা না হয় থানায়।ওর যদি কোনো সমস্যা হয় তাহলে পুরো পুলিশ স্টেশন গোরস্থান পরিনত হবে।আমি আসছি।
আদিত্যর কথা ওপাশে থাকা এসিপি সবই শুনেছে। এসিপি ফোনের ওপাশ থেকে কাঁপতে কাঁপতে বলল।
আপনি চিন্তা করবেন না ম্যাডামের কোনো সমস্যা হবে না। আমরা ওনার খেয়াল রাখব আদিত্য স্যার আসা পর্যন্ত।
আরিফ ফোন কেটে দিয়ে আদিত্যর দিকে তাকায়। অতঃপর অনেক কষ্টে মনে সাহস সঞ্চয় করে আদিত্যর উদ্দেশ্যে বলল।
ভাই যদি আপনার অনুমতি হয় তাহলে একটি কথা জিজ্ঞেস করব।
কর?
আদিত্যর অনুমতি পেয়ে আরিফ একটি ঢোক গিলে বলল।
ভাই এসপি তো কোনো মেয়ের নাম বলেনি। তাহলে আপনি বুঝলেন কিভাবে ভাবি আপনার নামে রিপোর্ট লিখাতে গিয়েছে।
তোর কি মনে হয়,তোর ভাবি ছাড়া এই শহরে আর কোনো মেয়ের এত বড়ো সাহস আছে যে আদিত্য চৌধুরীর নামে পুলিশ ইস্টিশনে রিপোর্ট লিখাতে যাবে।
আরিফ মাথা নেড়ে না সম্মতি দিয়ে আবার বলল।
কিন্তু ভাই বড়ো ম্যাম যে আপনাকে বাড়িতে জরুরিভিত্তিতে যেতে বলেছে। এখন বাড়িতে না গেলে তো বড় ম্যাম..
কথাটি সম্পূর্ণ করতে পারল না আরিফ আদিত্যর লাল হয়ে যাওয়া চোখ দুটো দেখে থেকে যায়। আদিত্য আরিফের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল।
আমি কি করব এর কৈফিয়ত এখন আমার তোকে দিতে হবে। আদিত্য চৌধুরী এক আল্লাহ কে ছাড়া আর কাওকে ভয় পায় না। সেটা ওর বাবা মা যেই হোক না কেনো।আর আমি আমার কাজের জবাব ও কাওকে দিতে পছন্দ করি না।
আরিফ মাথা নিচু করে বলল জ্বি ভাই,
___________________________________
এসিপি ফোনে কথা শেষ করে এসে নূরের সামনে বসে থাকা ইন্সপেক্টর কে কিছু বলতেই ইন্সপেক্টরের কপাল পেয়ে ঘাম ঝড়তে থাকে। নূর হঠাৎ ইন্সপেক্টরের এই অবস্থার কারণ বুঝতে পারছে না। নূর চোখ ছোট ছোট করে ইন্সপেক্টরের উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করল।
কি হয়েছে আপনার আপনি এভাবে ঘামছেন কেনো। আপনার শরীর অসুস্থ মনে হচ্ছে।
ইন্সপেক্টর নূরের কথার জবাবে বলল।
কিছু না, আপনি বসুন ম্যাম আপনি কিছু খাবেন।
কথাটি বলেই ইন্সপেক্টর একজনকে উদ্দেশ্য করে বলল।
এই ম্যামের জন্য চা নাস্তা নিয়ে আস। ইন্সপেক্টর কথাটি বলে নূরের উদ্দেশ্যে আবার বলল।
ম্যাম আপনার কি সমস্যা হচ্ছে এই পুরোনো চেয়ারে বসতে যদি সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে আমাকে বলুন আমি এখনি এটা বদলে নতুন চেয়ার এনে দিচ্ছি।
নূর অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে পুলিশ ইন্সপেক্টরের দিকে একটু আগে যেই লোক তাকে কথা শুনাচ্ছিল এখন কিনা সেই লোক নূরের সুবিধা অসুবিধা জানার জন্য পাগল হয়ে যাচ্ছে। নূরের কাছে ভালো ঠেকলো না বিষয়টি তাই নূর বলল।
কি হয়েছে আপনার একটু আগেও তো আপনি আমাকে আদিত্য চৌধুরীর নামে রিপোর্ট লিখাতে না করছিলেন।আর এখন আপনি আমার সুবিধা অসুবিধা জানার জন্য ব্যাকুল হয়ে পরছেন কেনো?
নূরের কথায় পুলিশ ইন্সপেক্টর বলল।
ম্যাম তখনকার ব্যবহারের জন্য আমি মাফ চাইছি আপনার কাছে। তখন তো আমি জানতাম না আপনি আসলে আদিত্য চৌধুরীর স্ত্রী।
পুলিশ ইন্সপেক্টরের কথা শুনে নূর রাগান্বিত হয়ে বলল।
আপনাকে কে বলেছে?আমি আদিত্য চৌধুরীর স্ত্রী।
নূর কথাটি বলার সাথে সাথে পিছন থেকে আদিত্য বলে উঠলো।
আমি বলেছি,
নূর পরিচিত কন্ঠস্বর শুনে পিছনে তাকাতেই আদিত্য কে দেখে কিছুটা অবাক হলো। আদিত্য এই সময় এখানে কি করছে। সাথে নূর কিছুটা রাগান্বিত হয়ে আদিত্য কে জিজ্ঞেস করল।
তুমি এখানে কি করছো?
নূরের কথায় আদিত্য বলল।
শুনলাম তুমি আমার নামে থানায় রিপোর্ট লিখাতে এসেছ।তাই ভাবলাম আমি যদি তোমার সামনে থাকি তাহলে তোমার কিছুটা সহজ হবে রিপোর্ট লিখাতে।
আদিত্যর কথায় নূর জেনো জ্বলে উঠলো। এবং পুলিশ কে বলল।
আপনারা জানিয়েছেন না ওকে,
নূর আর কিছু বলার আগেই আদিত্য নূরকে কুলে তুলে নেয়। নূর হতভম্ব হয়ে যায় আদিত্যর আচরণে ও কিছু বুঝে উঠার আগেই আদিত্য নূরকে নিয়ে পুলিশ স্টেশন থেকে বের হয়ে যায়। পুলিশগুলো পিছন থেকে মুচকি মুচকি হাসছে। তাদের মধ্যে একজন পুলিশ বলে উঠলো।
আদিত্য চৌধুরীর মনে হয় ওনার স্ত্রী নূর চৌধুরীর সাথে ঝগড়া হয়েছে তাই ওনার স্ত্রী রাগ করে ওনার নামে রিপোর্ট লিখাতে এসেছিলেন।
এদিকে নূর যখনি বুঝতে পারে ও এখন আদিত্যর কুলে রয়েছে তখনি নূর মুচড়া মুচড়ি শুরু করে দেয়। আদিত্য গাড়ির সামনে আসতেই আরিফ দরজা খুলে দেয় আদিত্য নূরকে জোড় করে গাড়ির ভিতরে ঢুকিয়ে নিজেও বসে পরে নূরের সাথে।আরিফ সামনে বসতে নিলে আদিত্য কড়া কন্ঠে বলে উঠলো।
আমার বউয়ের সাথে রোমান্স কি আমি তোর সামনে করব ইডিয়েট।
আদিত্যর কথায় আরিফ শুকনো একটি ঢোক গিলে অন্য গাড়িতে উঠে বসে।গাড়ি ছেড়ে দিয়েছে গাড়ি চলছে নূরের অজানা গন্তব্যে।এদিকে নূর আদিত্যের উদ্দেশ্যে বলল।
ছাড় শয়তান আমাকে,আমাকে তুই এভাবে ধরে এনেছিস কোনো ছাড় আমাকে।
নূরের কথা শুনে আদিত্য ভ্রু কুঁচকে নূরের উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করল।
By any chance,তুমি কি বাংলা সিনেমার নায়কা হতে চাচ্ছো।তাই নায়িকাদের মতো ছেড়ে দে শয়তান ডায়লগ বলছ।
আদিত্যর কথা শুনে নূর কি বলবে বুঝতে পারে না।ও এই মুহূর্তে আদিত্যর মুখ থেকে এমন কেনো কথা আশা করেনি।তাই নূর অবাক হয়েই আদিত্য কে জিজ্ঞেস করলো।
কি?
আদিত্য মুচকি হেসে বলল।
তুমি যখন বাংলা সিনেমার নায়কা হতে চাইছো তাহলে আমারও তো ভিলেন হয়ে দেখাতে হবে।
আদিত্যর কথা আবার বুঝতে পারল না নূর। নূর কিছু বলার আগেই আদিত্য ড্রাইভার ও ওদের মধ্যে থাকা পর্দাটা টেনে দিলো। এবং নিজের দুটো ঠোঁট নূরের দুটি ঠোঁটের সাথে এক করে দিলো। নূর হতভম্ব হয়ে গেছে আদিত্যর আচরণে। নূর নিজের পুরো দম দিয়ে আদিত্য থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে নূর। কিন্তু নূরকে ব্যর্থ করে নিজের আরো কাছে চেপে ধরে আদিত্য। নূরের নিঃশ্বাস যেনো আটকে আসছে।
কিছুক্ষণ অতিবাহিত হওয়ার পর আদিত্য নূরের কোনো রেসপন্স না পেয়ে আদিত্য নূরকে ছেড়ে দিয়ে নূরের দিকে তাকাতেই দেখতে পায় নূর অচেতন হয়ে গেছে। আদিত্য নূরকে নিজের বুকে আগলে ধরে মুচকি হেসে বলল।
এত দূর্বল হলে চলবে কি করে বউ, তুমি আদিত্য চৌধুরীর স্ত্রী তোমার আরো অনেক কিছু সহ্য করতে হবে।আরও অনেক কিছু যে এখনও বাকি রয়েছে।
___________________________________
ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে একাধারে কেঁদে চলেছে নূর। নূরকে ঘিরে আছে ওর বন্ধুরা।সকলে নূরকে এভাবে কাঁদতে দেখে বেশ অবাক হয়েছে।আর অবাক হওয়ারই বিষয় কেননা আজ পর্যন্ত ওরা সকলে কঠিন থেকে কঠিনতর পরিস্থিতিতে নূরকে শক্ত থাকতে দেখেছে।আর আজ সেই নূর কিনা এভাবে বাচ্চাদের মতো কান্না করছে।রাজ নূরকে এভাবে কান্না করতে দেখে বলল।
কি হয়েছে পাথর কখন থেকে কান্না করছিস। এখন তো বল কি হয়েছে?
রাজের কথার সাথে সহমত প্রকাশ করে হৃদিতা বলল।
হ্যাঁ জান প্লিজ বল, তোর কান্না দেখে আমারও কান্না এসে পরছে।
হৃদিতার কথায় নূর নিজের মাথা তুলে তাকায় এবং সকলের উদ্দেশ্যে বলল।
আমার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে দেখ।
নূরের কথা অনুযায়ী সকলে ওর ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে আতংকে উঠলো এবং রুদ্র বলল।
তোর ঠোঁটের এই অবস্থা করেছে কে এতটা ফুলে রয়েছে। সত্যি কথা বল জান আমাদের না জানিয়ে কাকে চুমু দিয়ে এসেছিস।
আমি কাওকে চুমু দেয়নি আমাকে চুমু দিয়েছে।
নূরের কথা শুনে সকলে একসাথে বলে উঠল।
কে,
আদিত্য, আদিত্য চৌধুরী আমাকে জোড় করে চুমু দিয়েছে আমাকে।
কথাটি বলেই তার সাথে ঘটে যাওয়া সকল ঘটনা নূর ওদের খুলে বলল।
সকল ঘটনা শুনে রুদ্র অবাক হয়ে বলল।
আমি বিয়ে করে এখনো বউয়ের সাথে এক বিছানায় ঘুমাতে পারলাম না।আর ও বাসরের প্রসেসিং ও শুরু করে দিয়েছে।
#চলবে..