তুমি_শুধু_গল্প_না_আমার_ভালোবাসা পর্ব-৪২+৪৩+৪৪

0
43

#তুমি_শুধু_গল্প_না_আমার_ভালোবাসা
#আমেনা_আক্তার
#পর্ব_৪২

রুদ্রের কথা শুনে সবাই রুদ্রের দিকে তাকিয়ে তাকায়। এবং আরশাদ বিস্ফোরিত কন্ঠে রুদ্রকে বলর।

কাল পর্যন্ত তোর এই বিয়ে নিয়ে আফসোস হচ্ছিল।আর এখন তুই বাসরের জন্য আফসোস করছিস।আসলে তুই কি চাস বলবি।

আমি তো এখনও আফসোস করছি,তোরা জানিস সিরাত আজ সকালে আমার সাথে কি করেছে। একটুর জন্য আমি বেঁচে গিয়েছি।

নূর এতক্ষণ কান্না করলেও এখন ওর ধ্যান রুদ্রের দিকে। রুদ্রের কথা শুনে সকলে একসাথে বলল।

কি করেছে।

আমার গলায় আজ ছুড়ি ধরে বলল।আমি যদি কোনো দিন কোনো প্রকার নেশা করি তাহলে আমার গলা কেটে দিবে। চিন্তা করতে পারছিস কতটা সাংঘাতিক এই মেয়ে। অনেক কষ্টে আমি ওর হাত থেকে নিজেকে বাঁচিয়েছি।

রুদ্রের কথা শুনে আব্রাহাম বলল।

বাহ! বাহ!তোরা দুজন কি জীবন সঙ্গী পেয়েছিস রে। একজনের স্ত্রী গলায় ছুড়ি ধরে গলা কাটার হুমকি দেয়।আর আরেকজনের স্বামী পুলিশ ইস্টিশনের থেকে উঠিয়ে এনে চুমু খায়। বাহ!

সকলের কথা শুনে হৃদিতা বলল।

তোরা সবাই এই সকল কথা বাদ দে।জান তুই এইটা বল দুলাভাই তোকে বাংলা চুমু দিয়েছে নাকি ফ্রেন্স চুমু দিয়েছে যার জন্য তুই একদম বেহুঁশ হয়ে পরেছিলি।এমনি বলতে হবে দুলাভাইয়ের চুমুতে কিন্তু অনেক জোড় আছে দোস্ত।

হৃদিতার কথার সাথে সবাই তাল মিলিয়ে বলল।

হ্যাঁ হ্যাঁ বল আমরাও জানতে চাই, ভবিষ্যতে কাজে লাগবে।

হৃদিতার কথা শুনে রক্ত চক্ষু নিয়ে তাকায় নূর ওর দিকে। এবং দাঁতে দাঁত চেপে বলল।

তোদের এখনি দেখাচ্ছি ও আমাকে কি চুমু দিয়েছে।

কথাটি বলেই নূর একটি ঝাড়ু এনে সবাই কে ইচ্ছে মতো মারতে লাগলো। নূরের মার খেয়ে সবাই এদিক থেকে সেদিন পালাচ্ছে।আর নূর ওদের মারার জন্য পিছু পিছু ছুটছে।
___________________________________
বেশ বড়সড় কাচের তৈরি ডাইনিং টেবিলে বসে রাতের ডিনার করছে কিছু মানুষ। ডাইনিং টেবিলে এখন টুংটাং চামিচের শব্দ ছাড়া আর কিছুই শুনা যাচ্ছে না।এর মধ্যে একটি মেয়ে ও আরো দু তিনজন লোক এসে ডাইনিং টেবিলে বসে। মেয়েটি কান্না করছে।কাঁদতে কাঁদতে মেয়েটির হেঁচকি উঠে গিয়েছে।

এখন সকলের ধ্যান এখন সেই মেয়েটির উপর থাকলেও। আদিত্যর সকল ধ্যান খাবারের উপর। আদিত্য এমন ভাবে খাবারে মনোযোগ দিয়ে খাচ্ছে যেনো ওই মেয়েটির কান্না ওর কান পর্যন্ত পৌঁছায়নি। আদিত্য এক মনে খাবার খাচ্ছে তখনি আয়েশা চৌধুরী কিছুটা গম্ভীর গলায় উঠল।

সারা তুমি কান্না বন্ধ করো,আমি আদিত্যর সাথে কথা বলছি। আমার কিন্তু নাকে কান্না করা মেয়ে একদম পছন্দ না।

আয়শা চৌধুরীর কথা শুনে সারা কান্না করা বন্ধ করে দেয়। কিন্তু এখনো সারা হেঁচকি তুলছে।সারা কান্না বন্ধ করতেই আয়েশা আদিত্যর উদ্দেশ্যে ভারি গলায় বলল।

শুনলাম আজ একটি মেয়ে তোমার নামে পুলিশ ইস্টিশনে রিপোর্ট লিখাতে গিয়েছিল।

আদিত্য মায়ের কথা শুনে খাবার খেতে খেতেই ছোট্ট করে বলল।

হুম,

আদিত্যর সম্মতি পেয়ে আয়েশা চৌধুরী আবার বলা শুরু করল।

সেই মেয়েকে তুমি কিছু না বলে, উল্টো সেই মেয়েকে নাকি স্ত্রীর পরিচয় দিয়েছ সবার সামনে।

মায়ের কথার প্রতি উত্তরে আদিত্য ভাব অলসহীন ভাবে বলে উঠলো।

হ্যা বলেছি,

আদিত্যর কথা শুনে সারা আবার কান্না করা শুরু করে দিলো। আয়েশা চৌধুরী আদিত্যর কথা শুনে রাগে ডাইনিং টেবিল থেকে একটি খালি প্লেট নিচে ছুড়ে মারল। এবং বলল।

তুমি কি আমাদের বাড়ির মানসম্মান কোনো ছেলে খেলা পেয়েছ। কিভাবে তুমি একটি রাস্তার মেয়েকে নিজের স্ত্রী বলে পরিচয় দিয়েছ। তুমি কি জানো না তোমার বিয়ে আমি সারার সাথে ঠিক করে রেখেছি।

আদিত্যর মায়ের কথা শুনে আদিত্য খাবার ছেড়ে দাঁড়িয়ে যায়। এবং নিজের সর্ব শক্তি দিয়ে ডাইনিং টেবিলে একটি ঘুসি মারতেই তা মুহূর্তের মাঝে চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যায়।

সকলে দ্রুত সেখান থেকে সরে দাড়াই।

আদিত্যর হাত থেকে রক্ত ঝড়ে পরছে। তবুও আদিত্য এমন ভাবে দাড়িয়ে আছে যেনো কিছুই হয়নি। আদিত্য খুব শান্ত ভাবে বলল।

তুমি যাকে রাস্তার মেয়ে বলে অবজ্ঞা করছ সে আদিত্য চৌধুরীর স্ত্রী।আমি কখনো আমার স্ত্রীর নামে কোনো বাজে কথা সহ্য করব না।তা যার মুখ থেকেই বের হোক না কেনো।

আদিত্যর কথা শুনে আয়েশা চৌধুরী উত্তেজিত হয়ে বলল।

তুমি বোধহয় ভুলে যাচ্ছ তোমার সাথে সারার বিয়ে অনেক আগে থেকেই আমরা ঠিক করে রেখেছি। তোমাকে ও কতটা ভালোবাসে তুমি এটা খুব ভালোভাবেই জানে।সব কিছু জেনেও তুমি কিভাবে এটা করতে পারো।

আমি তোমাকে বলেছিলাম ওর সাথে আমার বিয়ে ঠিক করতে।

তুমি কিছু বলো নি, কিন্তু তোমার সামনেই ওর সাথে তোমার বিয়ে কথা পাকা করেছি আমরা। তখন তুমি তো নাও করো নি।

তুমি আমাকে জিজ্ঞেস করছিলে? তুমি যখন আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করোনি তাহলে না বা হ্যাঁ করার কথা কোথা থেকে আসছে।

আদিত্যর কথা শুনে আয়েশা চৌধুরী দ্বিগুণ তেজি গলায় বলল।

হ্যা আমি তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করিনি। তোমার মা হিসেবে আমি তোমার বিয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া আমার অধিকার ও দায়িত্ব দুটোই।

না আমি তোমাকে কখনো আমার দায়িত্ব বহন করতে বলেছি।আর না এই অধিকার আমি তোমাকে কখনো দিয়েছি। তাই জীবনে আর যাই করো না কোনো আমার উপর জোড় করে কখনো অধিকার খাটাতে এসো না।

আয়েশা চৌধুরী আর কিছু বলার আগেই আদিত্য বের হয়ে যেতে নেই বাড়ি থেকে। তখনি সারা আদিত্যর সামনে এসে কাঁদতে কাঁদতে বলল।

আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি, প্লিজ আদিত্য তুমি আমার সাথে এইরকম করো না। প্লিজ তুমি বলো এই সকল কিছু মিথ্যা।আমি সহ্য করতে পারব না।আমি মরে যাবো।

সারা কথাগুলো বলতে বলতেই আদিত্যর হাত চেপে ধরে।সারা আদিত্যর হাত ধরতেই আদিত্য সারার হাত এক ঝটকায় সরিয়ে দেয়। আদিত্য এত তীব্র গতিতে সারার হাত ঝাড়া দিয়ে ছাড়িয়েছে যে সারা নিচে পরে যায়। আদিত্যর চোখ লাল হয়ে আছে। আদিত্য কড়া কন্ঠে সারার উদ্দেশ্যে বলল।

আদিত্য চৌধুরী নিজের শরীর স্পর্শ করার অধিকার নিজের ওয়াইফ ছাড়া আর কাওকে দেয় না।তোর বোধহয় সত্যি মরার শখ জেগেছে তাই এমন পাগলামী করছিস।যদি পরবর্তীতে এমন কোনো ভুল তোর দ্বারা হয়…

কথাটি বলেই আদিত্য নিজের মায়ের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বলল।

তাহলে আমার মা খুব ভালোভাবেই জানে আদিত্য চৌধুরী ঠিক কি করতে পারে।

কথাটি বলেই আদিত্য বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়।

আদিত্য চলে যেতেই সারাকে আয়েশা চৌধুরী ফ্লোর থেকে তুলে নেয়।সারা আয়েশা চৌধুরী কে জাপটে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল।

খালামনি আদিত্য কি কখনো আমার হবে না।আমি আদিত্য কে ছাড়া বাঁচব না।

আয়েশা চৌধুরী সারার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে ওকে শান্তনা দিতে লাগলেন।আর মনে মনে শপথ গ্রহণ করলেন।যেই মেয়েই আদিত্যর জীবনে আসুক না কেনো।উনি ওই মেয়েকে আদিত্যর জীবন থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিবেন। ওনার ছেলে জেদি তো উনিও ওর মা।
___________________________________
রুদ্র মাত্র বাড়িতে ফিরেছে। বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে বাড়িতে আসতে আসতে রাত হয়ে গেছে।আজ সিরাতকে নিয়ে শপিং মলে যেতে বলেছিল রুদ্রের মা। কিন্তু রুদ্র বন্ধুদের পেয়ে সব ভুলে গিয়েছিল। রুদ্র বাড়িতে প্রবেশ করতেই রুদ্রের মা বলল।

রুদ্র তোকে না বলেছিলাম আজ সিরাত কে নিয়ে শপিং মলে যেতে।কাল বাড়িতে অনুষ্ঠান অনেক মানুষ আসবে সিরাত কে দেখতে ওর জন্য তো কিছু কিনা কাটা করা প্রয়োজন। কাল ও কি পরবে।

রুদ্র মায়ের কথার প্রতি উত্তরে কিছু বলবে তার আগেই সালেহা মির্জার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা রুদ্রের চাচি বলে উঠলো।

ওই মেয়ের যেই গায়ের রং ওর জন্য শপিং করলেও কি বা না করলেও কি? ওই মেয়ে কি কালো থেকে সুন্দর হয়ে যাবে?আর এমনিতেও তুমি তোমার ছেলের জন্য এমন কালো মেয়ে এনেছ যার জন্য তোমার ছেলে ঘৃণায় ওর সাথে এক বিছানায় ঘুমাও না।

রুদ্রের কথাটি যেনো গাঁয়ে লাগলো ওর এখন প্রচুর রাগ উঠছে। কিন্তু ও সালেহা মির্জার সামনে কিছু বলে নিজের চাচির সাথে বেয়াদবি করতে চাইছে না। তবুও রুদ্র রাগ নিয়ন্ত্রণ না করতে পেরে তার সামনে থাকা ফুলের তোড়া টি এক আছাড়ে ভেঙ্গে ফেলে। এবং কিছু না বলে নিজের রুমে চলে যায়।

রুদ্রের চলে যেতেই সালেহা মির্জা পান চিবুতে চিবুতে বলল।

দেখেছিস ওর বউয়ের কথা শুনতেই ও কত রেগে গেল। আল্লাহ যানে এই কালো মেয়ের সাথে রুদ্র কিভাবে সংসার করবে।

সিরাত কিচেনে দাঁড়িয়ে সকল কিছুই শুনেছে। রুদ্রকে এভাবে চলে যেতে দেখে তাচ্ছিল্যের একটি হাসি দেয় সিরাত।সিরাতের মনে হচ্ছে রুদ্রের মনে হয় এখন খুব আফসোস হচ্ছে ওর বাবার কথা শুনে ওর মতো একটি কালো মেয়ের সাথে সংসার করার কথায় রাজি হওয়ায়।তাই হয়তো কিছু না বলতে পেরে ফুলের তোড়া টি ভেঙ্গে ফেলেছে। আচ্ছা ওকি রুদ্রের জীবনের বোঝা হয়ে যাচ্ছে।ও কোনো ভুল করছে না তো এখানে থেকে।বা এই সম্পর্ক কে একটি সুযোগ দিয়ে।আর যাই হোক সিরাত কারও জীবনে বোঝা হয়ে থাকবে না ওর আত্মসম্মান খুবই প্রখর।

সিরাত নিজের সকল কাজ শেষ করে রুমে যেতেই দেখতে পায় রুদ্র নিজের চুল খামচে ধরে এদিক থেকে ওদিক পায়চারি করছে।মূলত রুদ্র নিজের রাগ কমানোর চেষ্টা করছে।সিরাত অনেক ক্লান্ত তাই কিছু না বলে ফ্রেশ হতে চলে যায়।সিরাত ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে দেখে রুদ্র আগের মতোই পায়চারি করছে।তাই সিরাত বলল।

তুমি এভাবে পায়চারি করছ কোনো, সমস্যা কি তোমার?

সিরাতের কথা শুনে,রুদ্র কিছু না বলে ঘর থেকে বের হয়ে যায়।সিরাত এতে খুব অবাক হয় কিন্তু কিছু না বলে নিজের কাজে ব্যাস্ত হয়ে পরে।

রাত বারোটায় রুদ্র বাড়ি ফিরে, রুদ্র বাড়ি আসতেই দেখে সিরাত ওর জন্য ড্রয়িং টেবিলে খাবার নিয়ে বসে আছে। রুদ্র সিরাত কে বসে থাকতে দেখে ওর কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো।

তুমি না খেয়ে এখনো আমার জন্য খাবার নিয়ে বসে আছো?

রুদ্রের কথায় সিরাত ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকিয়ে বলল।

তোমার কি আমাকে দেখে এতটা মহান মনে হয়। যে, আমি না খেয়ে বসে বসে তোমার জন্য অপেক্ষা করব।আমি আমার খাবার খেয়ে নিয়েছি। আম্মু তোমার জন্য অপেক্ষা করছিল তাই ওনাকে রুমে পাঠিয়ে দিয়ে আমি বসে আছি।

সিরাতের কথার প্রতি উত্তরে রুদ্র কিছু না বলে চুপচাপ নিজের খাবার শেষ করে রুমে চলে যায়। রুদ্রের পিছু পিছু সিরাত ও রুমে চলে যায়।সিরাত বিছানা থেকে নিজের জন্য বালিশ ও কম্বল নিতে চাইলে রুদ্র সিরাতের হাত ধরে ওকে থামিয়ে দেয়।সিরাত রুদ্রের এই আচরণে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকায়।

রুদ্র সিরাতের দৃষ্টি দেখে ভালো ভাবে বুঝতে পারছে সিরাত কি বলতে চায়।তাই রুদ্র সিরাতের দিকে তাকিয়ে বলল।

তুমি আজ থেকে আমার সাথে বিছানায় ঘুমাবে।

সিরাত বিস্ফোরিত নয়নে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল।

আমি তোমার সাথে ঘুমাবো মানে?

আমার সাথে ঘুমাবে মানে আমার সাথে ঘুমাবে।

কথাটি বলেই সিরাত কে আর কিছু বলার সুযোগ দেয়না রুদ্র। রুদ্র সিরাতের এক হাত ধরে টান দিতেই সিরাত বিছানার উপর পরে। রুদ্র সিরাতকে কিছু করার সুযোগ না দিয়ে ওকে জাপটে ধরে শুয়ে পরে। এভাবে প্রথম কোনো পুরুষের কাছে আসায় সিরাতের প্রচুর অস্বস্তি হচ্ছে সাথে কিছুটা লজ্জাও লাগছে।তাই সিরাত নিজেকে ছাড়ানোর জন্য মুচড়া মুচড়ি করতে করতে রুদ্রকে উদ্দেশ্যে করে বলল।

আমাকে ছাড়ো, আমার অস্বস্তি হচ্ছে।আমি তোমার সাথে ঘুমাতে পারব না।

সিরাতের কথায় রুদ্র বলল।

দেখো সিরাত বেশি নড়াচড়া করো না। নাহলে তোমার নড়াচড়া করার মাঝে যদি আমার হাত অন্য কোনো যায়গায় গিয়ে লাগে পরে আমি কিন্তু বাচ্চার নেওয়ার প্লানিং শুরু করে দিবো। তখন আমার দোষ দিতে পারবে না।

রুদ্রের কথা শুনে সিরাত একটি ঢোক গিলে এবং একদম শান্ত হয়ে শুয়ে থাকে..

#চলবে…

#তুমি_শুধু_গল্প_না_আমার_ভালোবাসা
#আমেনা_আক্তার
#পর্ব_৪৩

আজ মির্জা বাড়ি খুব সুন্দর করে সাজানো হচ্ছে। সকাল হতেই সকলে কাজে লেগে পরেছে। কিন্তু সকাল সকাল রুদ্র গায়ের হয়ে আছে ওদের বাড়ি থেকে। সকালে উঠে রুদ্র কোথায় গিয়েছে কেউ যানে না। রুবেল মির্জা রুদ্রকে অনেকবার ফোনও করেছে কিন্তু কোথাও রুদ্রের কোনো খবর নেই। এদিকে রেহানা বেগম ,সাইরা ও মহিমা ও ওদের বাড়িতে এসে পরেছে। কাল রুবেল মির্জা নিজে গিয়ে বলে এসেছে রেহানা বেগম কে আজ তাদের বাড়িতে আসার কথা।ও আজ রেহানা মির্জা রুদ্র ও সিরাত কে সাথে করে নিয়ে যাবেন।

সিরাত ও রুদ্রের বিয়েটি অস্বাভাবিক ভাবে হওয়ার কারনে এতদিন উনি ওদের দুজনকে বাড়িতে নিতে পারেনি। অবশ্য সিরাত প্রায় যেয়ে ওর বোন ও মায়ের সাথে দেখা করে আসে। রেহানা বেগম এই বাড়িতে আসার পর থেকে ওনার মন কিছুটা ব্যাকুল হয়ে আছে। কারণ এখানে আসার পর রুবেল মির্জা ও সাহানারা মির্জা ওনার সাথে ঠিকঠাক ভাবে কথা বললেও সালেহা মির্জা ও রুদ্রের চাচি কেনো যেনো রেহানা বেগম দেখলেই মুখ বাঁকিয়ে রাখছেন। আবার কথায় কথায় ওনার কে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে কথা বলছেন। এইসবে ও এতটা সমস্যা নেই রেহানা বেগমের সমস্যা হওয়ার কারণ সকাল হতেই রুদ্রের লাপাত্তা হয়ে যাওয়ার বিষয়টি।এখন রেহানা বেগমের মাঝে শংকা তৈরি হচ্ছে। আবার নাকি কাল সিরাতকে শপিং মলে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল রুদ্র তাও নিয়ে যায়নি।

তাই রেহানা বেগমের মনে ভয় হচ্ছে। ওনার, ও ওনার বড়ো মেয়ের মতো সিরাতের কপাল ও যেনো পুড়া না হয়।সিরাতের খাটের উপর বসে আছে রেহানা বেগম। মহিমা একটু জার্নি করলেও এখন ক্লান্ত হয়ে যায়। তাই সে খাটের সাথে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আধশোয়া অবস্থায় বসে আছে।ওর পাশে বসেই সাইরা সিরাতের রুমের এক এক জিনিস দেখতে ব্যস্ত হয়ে আছে।সিরাত বাইরে কাজে ব্যস্ত তাই মা বোনদের সময় দিতে পারছে না।সিরাত নিজের সকল কাজ সম্পন্ন করে নিজের রুমে ফিরে এসে মায়ের সামনে বসে।সিরাত কিছু বলার আগেই রেহানা বেগম বলে উঠলেন।

আমি কি তোকে এখানে থাকতে বলে ভুল করে ফেলেছি?

রেহানা বেগমের কথা শুনে সাইরা চোখ বড়বড় করে রেহানা বেগমকে দিকে তাকায়। মহিমা ও নিজের চোখ খুলে মায়ের দিকে তাকায়।আর সিরাত ভ্রু কুঁচকে রেহানা বেগম কে জিজ্ঞেস করলো।

হঠাৎ এই প্রশ্নের কারণ?

রেহানা বেগম সিরাতের কথায় অধৈর্য হয়ে বলল।

তোর যদি কখনো মনে হয় তুই আর এই সম্পর্কে থাকতে পারছিস না বা রুদ্র তোর সাথে কোনো বাজে আচরণ করছে তোকে স্ত্রীর মর্যাদা দিচ্ছে না।ও যদি কখনো তোর গায়ের রং নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে বা অন্য কোনো মেয়ের দিকে ওর ঝোঁক থাকে। তাহলে তুই আমার কাছে চলে আসিস মা। জোরপূর্বক কোনো সম্পর্কে তোর থাকার কোনো প্রয়োজন নেই। কখনো নিজের আত্মসম্মান কারও জন্য বিসর্জন দিবি না।এটি মনে রাখিস মা সবসময় তোর জন্য আছি।তোর যখনি মনে হবে তুই এখানে থাকতে পারছিস না। তখন শুধু একবার আমাকে বলবি আমি তোকে নিয়ে যাবো এখান থেকে।

সিরাত মায়ের সম্পূর্ণ কথা ধৈর্য ধরে শুনে।সিরাত তার মাকে কিছু বলবে তার আগেই রুমে সাহানারা মির্জা প্রবেশ করে। এবং মা ও মেয়েকে একসাথে দেখে বলল।

এখানে চার মা মেয়ে মিলে আমাকে একা রেখে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে দেখি। তোমরা আমার কথা মনে হয় সকলে ভুলে গিয়েছ।

সাহানারা মির্জার কথা শুনে রেহানা বেগম হাসি মুখে বলল।

আপনার কথা কি আমরা ভুলতে পারি। আমার মেয়ের আগে তো আমি আপনার সাথে দেখা করেছি।আপনি এখন কাজে ব্যস্ত তাই আর ডাকি নি।

আমি শয়তানি করছিলাম,আমি জানি আপনি আমাকে কতটা সম্মান করেন। এবং আমি আমার শাশুড়ির করা আচরণের জন্য আপনার কাছে ক্ষমা চাইছি।

কথাটি বলেই সাহানারা মির্জা সিরাত কাছে গিয়ে ওনার হাতে থাকা একটি সুন্দর শাড়ি সিরাত কে দিয়ে বলল।

তুমি আজ এইটা পরো কাল তো তোমাদের শপিং মলে যাওয়া হয়নি। তাই আজকের জন্য কিছু আনাও হয়নি।আর এত কম সময়ে আমরাও কিছু যোগার করতে পারিনি।তাই আজ তুমি এই শাড়িটা পরো।এইটা আমার নতুন শাড়ি তোমাকে খুব মানাবে আর সাথে কিছু গয়না ও আছে তোমাকে অনেক মিষ্টি লাগবে এগুলো পরলে।

তার কোনো প্রয়োজন নেই,

সাহানারা মির্জা কথাটি শেষ করতেই পিছন থেকে বলে উঠলো কথাটি রুদ্র।

রুদ্রের আওয়াজ শুনে সকলে দরজার দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো। কিছু শপিং ব্যাগ হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছে ও। রুদ্র শপিং ব্যাগ নিয়ে রুমে প্রবেশ করে প্রথমে রেহানা বেগম ও সাইরা মহিমার সাথে কুশল বিনিময় করে।সিরাতকে উদ্দেশ্যে করে বলল।

তোমার জন্য এই শপিং ব্যাগের ভিতরে লেহেঙ্গা ও গয়না আছে। তার সাথে ম্যাচিং করা হিজাব। ভুলেও হিজাব ছাড়া রেডি হয়ে নিচে যাবে না।আর বেশি সাজার প্রয়োজন নেই। তুমি এমনেই ঠিক আছো।

কথাটি বলেই রুদ্র রুম থেকে বের হয়ে যায়। রুদ্র কথা এতক্ষণ সিরাত চুপ করে শুনছিলো। রুদ্র চলে যেতেই সিরাত শপিং মল খুলে দেখতে পায়। রুদ্র ওর জন্য একটি নীল রঙের লেহেঙ্গা সাথে ম্যাচিং হিজাব ও কিছু স্বর্ণের গহনা এনেছে। সাহানারা মির্জা এই সকল কিছু দেখে অনেক খুশি হয়েছেন। সাহানারা মির্জা খুব ভালোভাবে বুঝতে পারছেন রুদ্র আস্তে আস্তে সিরাতকে মেনে নিচ্ছে। কিন্তু রেহানা বেগম যেনো এখনো সন্তুষ্ট হতে পারছেন না। ওনার মনে এখনো দ্বিধা আছে।
___________________________________
সকল আত্মীয়র সমাগম আজ রুদ্রের বাড়িতে। আত্মীয়রা আসা শুরু করে দিয়েছে।এখন পুরো বাড়ি আত্মীয় স্বজন দিয়ে ভরপুর। রুবেল মির্জা ও রুদ্র দরজার সামনে দাড়িয়ে সকলে স্বাগতম জানাচ্ছে। রুদ্র সিরাতের সাথে ম্যাচ করে নীল রঙের একটি আধুনিক ডিজাইনের পাঞ্জাবি পরেছে। রুদ্রের সকল বন্ধুরাও ইতিমধ্যে অনুষ্ঠানে এসে পরেছে।রাজ নিজের সাথে আয়নাকে ও নিয়ে এসেছে। আয়না এই পর্যন্ত সিরাতকে দেখেনি। কিন্তু এখনো নূর আসে নি।ওর না আসার সম্ভাবনা বেশি কেননা নূর নিলয়ের জন্য কিছু জরুরী ঔষধ আনতে যাবে।যেই ঔষধ আনবে তা এখানে পাওয়া যায় না আর ঔষধ যে শেষ হয়ে গিয়েছে তাও নূর আগে দেখে নি তাই জরুরি ভাবে এখন ঔষধ আনতে যাচ্ছে।

বউভাত অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে। সকলে অধীর আগ্রহে দাঁড়িয়ে আছে বউ দেখার অপেক্ষায়। সালেহা মির্জা সাহানারা মির্জার উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন।

কত সময় হয়ে গিয়েছে বউ নিচে নামবে কখন ।ও কি কোনো রাজ রানী যে সকলকে এমন ভাবে অপেক্ষা করাচ্ছে।

সালেহা মির্জার কথা শেষ হতেই সাহানারা মির্জা বলে উঠলেন।

ওই দেখেন সিরাত নামছে,

সাহানারা মির্জার কথা শুনে সকলে সিঁড়ির দিকে তাকায়। রুদ্র,রাজ, আরশাদ ও আব্রাহামের দৃষ্টি যেনো থমকে যায় ওদের দিকে তাকিয়ে। শুধু সিরাত একা নামছে না।সিরাতের সাথে আয়না, হৃদিতা ও সাইরা ও নামছে সবার মুখেই হাসি লেগে আছে। রুদ্র যেনো চোখ সরাতেই পারছে না।সিরাত কে যে ওর এনে দেওয়া লেহেঙ্গায় এতটা সুন্দর লাগবে ও কখনো ভাবেনি।তার উপর রুদ্র সিরাত কে আজ প্রথম বার কাজল কালো চোখে দেখেছে। তার উপর সিরাত নুড কালারের লিপস্টিক দিয়েছে।সিরাত খুব সামান্য সাজার পরেও রুদ্রের কাছে সিরাতকে কোনো পরীর থেকে কম লাগছে না।ঠিক একই অবস্থা রাজ, আব্রাহাম ও আরশাদের ওরা হা করে তাকিয়ে আছে নিজেদের প্রিয়তমার দিকে। ওদের দেখে মনে হচ্ছে চোখ সরালেই বোধহয় ওদের প্রিয়তমা কে কেউ চুরি করে নিয়ে যাবে।

সিরাত সিঁড়ি দিয়ে নামতেই রুদ্র আগে বেড়ে তার হাত বাড়িয়ে দেয় সিরাতের উদ্দেশ্যে।সিরাত বিনা সংকোচে রুদ্রের হাত ধরে নিজের জন্য বরাদ্দকৃত স্থানে বসে। অনুষ্ঠান ঠিক ঠাকই চলছিলো কিন্তু হঠাৎ একজন মধ্যবয়স্ক মহিলা সাহানারা মির্জাকে বলে উঠলেন।

কি গো সাহানারা তুমি তোমার রুদ্রের জন্য এ কেমন বউ নিয়ে এসেছ। বউয়ের গায়ের রং দেখি কতটা কালো।দেখতে একদম কুৎসিত লাগছে।

মহিলাটির কথার সাথে তাল মিলিয়ে আরেকজন মহিলা বলে উঠলেন।

হ্যাঁ আপা ঠিকই বলেছে, তোমার এত সুন্দর ছেলের জন্য যে তুমি এমন একটি বউ আনবে আমরা কখনো ভাবিনি।

মহিলা গুলোর কথার সাথে আরও কিছু মহিলা তাল মিলালো।সিরাত ও ওর মায়ের এখন খুব অপমানিত বোধ হচ্ছে। কিন্তু মনে মনে পৈশাচিক আনন্দ পাচ্ছে সালেহা মির্জা।কারণ এই সকল কিছু তো উনার কথা মতোই হচ্ছে। সালেহা মির্জা তো এই সকল কিছুর অপেক্ষায় করছিলেন এতো সবে মাত্র শুরু। সালেহা মির্জা যখনি এই সকল কথা ভাবছিল। তখনি রুদ্র মহিলা গুলোর উদ্দেশ্যে বলে উঠলো।

আপনারা একদম ঠিক বলেছেন,আমার মতো ছেলের সাথে কি সিরাতের মতো মেয়েকে মানায়।আমার মনের কথাগুলো আমার বাবা মা না বুঝতে পারলেও আপনারা বুঝতে পেরেছেন তাই আমি আপনাদের উপর কৃতজ্ঞ। কিন্তু আমি জানতে চাই কে কে আমার সাথে একমত। যে আমি আরো ভালো মেয়ে ডিজার্ভ করি তারা এক পাশে এসে দাঁড়ান। তাদের জন্য আমার কাছে কিছু উপহার আছে।

রুদ্রের কথা মহিলা গুলো খুব খুশি হলো।সাথে সালেহা মির্জাও খুশি হয়েছে।এটা ভেবে যাক তাহলে নাতি ওনার পক্ষেই আছে। মহিলা গুলোর সাথে আরো কিছু মানুষ এক সাইডে দাঁড়িয়ে পরলো। তখনি রুদ্র জোড়ে জোড়ে চিল্লিয়ে গার্ড কে ডেকে আনলো।কেউ বুঝতে পারছেনা রুদ্র গার্ড কে কেনো ডেকেছে।তখনি রুদ্র বলে উঠলো।

ওনাদের সকল কে এখনি আমার বাড়ি থেকে বাইরে বের করো।আমি চাই না আমার বাড়িতে এমন কোনো ব্যক্তিরা থাকুক যারা আমার স্ত্রীকে নিচু চোখে দেখে।আমার স্ত্রীর গায়ের রংয়ের জন্য ওকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে।আমি আর এক মুহূর্তের জন্যও ওদের চোখের সামনে দেখতে চাই না।
___________________________________
নূর দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে গাড়ির জন্য। অনেকক্ষণ যাবত অপেক্ষা করার পরেও একটি গাড়িও পাচ্ছে না।একটি সিএনজি পেলেও তো হতো। নূরের অপেক্ষার মাঝেই ওর সামনে একটি প্রাইভেট কার এসে থামে। এবং তার থেকে আরিফ বের হয়ে আসে আরিফ কে দেখে নূর নিজের ভ্রু কুঁচকে ফেলে। আরিফ গাড়ি থেকে নেমেই ভদ্র ছেলেদের মতো মাথা নিচু করে নূরের উদ্দেশ্যে বলল…

#চলবে…

#তুমি_শুধু_গল্প_না_আমার_ভালোবাসা
#আমেনা_আক্তার
#পর্ব_৪৪
আরিফ মাথা নিচু করে নূরের উদ্দেশ্যে বলল।

ভাবি ভাই আপনাকে আমাদের সাথে নিয়ে যেতে বলেছে।ভাই আপনার সাথে দেখা করতে চায়।

নূর আরিফের কথা শুনে শক্ত গলায় জবাবে বলল।

আমি কোথাও যাবো না, এমনিতেও এখন আমার জরুরি কাজ আছে।

সব কাজ আমি সামলে নিবো,আপনি শুধু এখন আমার সাথে ভাইয়ের কাছে চলুন, নাহলে ভাই রাগ করবে।

তোমার ভাই রাগ করলে আমার কি,

নূরের কথা শুনে আরিফ বিরবির করে বলল।

আপনারই তো সব কিছু,

আরিফের বিরবির করে বলা কথা নূর ঠিক ভাবে শুনতে পেলো না।তাই ও আরিফকে জিজ্ঞেস করলো।

কি বললে?

কিছু না ভাবি, প্লিজ আপনি আমাদের সাথে চলুন। নাহলে ভাই আপনাকে অন্য পদ্ধতিতে নিয়ে যাবে।

আরিফের কথা শুনে নূর চোখ মুখ শক্ত করে কিছু বলার আগেই তার সামনে একটি ক্যাব এসে থামে। নূর আরিফকে কিছু না বলে ক্যাবে উঠে পড়লো। ক্যাব চলতে শুরু করলো নূরের বলা গন্তব্যে।নূর কিছুক্ষণ ক্যাবে থাকার পর এটি ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারছে ওর অনেক ঘুম পাচ্ছে। হঠাৎ এত বেশি ঘুম পাওয়ার কারণ ও বুঝতে পারছে না। নূর নিজের চোখ টেনেও খোলা রাখতে পারছে না। নূর ড্রাইভার কে কিছু বলতে চাইছে। নূর এটা ঠিকই বুঝতে পারছে এই ক্যাবে কোনো সমস্যা আছে। তাই এটিতে উঠার পর থেকেই ওর এত ঘুম পাচ্ছে। নূর ড্রাইভার কে কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারছে না। কিছুক্ষণের মাঝেই নূর গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে যায়। নূর ঘুমিয়ে যেতেই ড্রাইভার গাড়ি ঘুড়িয়ে নেয়।গাড়ি এখন চলছে অন্য একটি গন্তব্যে। নূরের সম্পূর্ণ অজানা গন্তব্যে এখন গাড়ি চলছে।
___________________________________
নূর পিটপিট করে নিজের চোখ মেলে তাকায়। নূর নড়তে চেয়েও যেনো নড়তে পারছে না। নূরের মনে হচ্ছে কেউ ওকে সাপের মতো পেঁচিয়ে ধরে শুয়ে আছে। নূর নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করেও ছাড়াতে পারছে না। নূর অনেক কষ্টে নিজের চোখ মেলে তাকায়।নূর তাকাতেই আদিত্যর বুকে নিজেকে আবিষ্কার করে।

নূর চোখ বড় বড় করে আদিত্যর দিকে তাকায়। আদিত্য চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। নূরের মচড়া মচড়িতে বিরক্ত হয়ে আদিত্য চোখ বন্ধ অবস্থায় বলল।

সমস্যা কি তোমার? আমার ঘুমে ডিস্টার্ব করছ কেনো?

অসভ্য লোক, তুমি আমাকে ছাড়ো। আবার দম বন্ধ হয়ে আসছে।

তোমার দম তো আমার সামনেই আসলেই বন্ধ হয়ে আসে। এখন তোমার দমের জন্য কি আমি আমার বউয়ের কাছ থেকে দূরে থাকব। তোমার দম থাক বা না থাক আমার বউকে আমার পাশে চাই।

আমার দম যদি না থাকে তাহলে বউ দিয়ে কি করবে।

অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো নূর।

নূরের কথা শুনে আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে বলল।

দেখতে চাও কি করব,

আদিত্যর চাওনি দেখে নূর একটি ঢোক গিলে বলল।

না না আমি কিছুই দেখতে চাই না, আমাকে ছাড়ো।আমি এখানে কি করছি আমি তো ক্যাবে ছিলাম।

নূরের কথা শুনে আদিত্য ওকে ছেড়ে দিলো এবং বলল।

ওটা আমার পাঠানো ক্যাব ছিল,আমি ভালোভাবে জানতাম তোমার মতো ঘাড় ত্যাড়া মেয়ে আমার কথা এত সহজে মানবে না। তাই আমি আগের থেকেই সেকেন্ড অপশন রেখেছিলাম।

নূর আদিত্যর কথায় অবাক হয়ে বলল।

তুমি আমাকে কিডন্যাপ করে এনেছ এখানে।

কিডন্যাপ বা আমার অধিকার তোমার যেইটা মনে করতে হয় করতে পারো। তোমার ইচ্ছা।

লজ্জা করে না তোমার একটি মেয়েকে এভাবে তুলে এনে আবার গর্ব করে বলছ।

না করে না,আমার ভিতরে লজ্জা বলতে কিছু নেই।আর তা যদি হয় নিজের বউয়ের জন্য। তাহলে তোমাকে আমি নির্লজ্জের শেষ সীমানা দেখাতেও রাজি আছি।

আদিত্যর কথার প্রতি উত্তরে নূর কঠোর গলায় বলল।

আমাকে যেতে দাও, আমার জরুরি কাজ আছে।আমি এখন তোমার সাথে সময় কাটাতে পারব না।

ভাইয়ের জন্য ঔষধ আনতে যাবে এই তো, তোমার ভাইয়ের ঔষধ বাড়িতে পৌঁছে গেছে। তুমি এখানে এসেছ ইতিমধ্যে চার ঘন্টা হয়ে গেছে।আর এখন তোমার ভাইয়ের ঔষধের কথা মনে পরছে তোমার।

আদিত্যর কথা শুনে নূরের মাথায় যেনো আকাশ ভেঙ্গে পড়লো।এবং নূর অবাক হয়ে বলল।

কি চার ঘন্টা,আমি চার ঘন্টা ধরে এখানে আছি।আর চার ঘন্টা ধরে তোমার সাথে এক বিছানায় শুয়ে ছিলাম।

আদিত্য খুব স্বাভাবিক ভাবে উত্তরে বলল।

হুম,

নূর যেনো ওখানেই পাথর বনে দাঁড়িয়ে রইল।

ডিভানের উপর তোমার জন্য একটি ড্রেস আছে।ওই ড্রেস পরে নিচে আসো।

আদিত্যর কথা শুনে নূর বলল।

আমি তোমার দেওয়া কোনো ড্রেস পরব না।

তুমি যদি না পরতে চাও,তাহলে তোমাকে আমার ড্রেস জোর করে পড়াতে হবে। এখন তুমি যদি চাও আমি তোমাকে ড্রেস চেঞ্জ করতে সাহায্য করি তাহলে আমার কোনো সমস্যা নেই। এমনিতেও এই রুম ও এই বাড়িতে তুমি আর আমি ছাড়া কেউ নেই। বউয়ের সাথে রোমান্স করার এটি সঠিক জায়গা ও সঠিক সময়।

আদিত্যর কথা শুনে নূর কিছুটা ভয় পেয়ে গেল কিন্তু ও নিজের ভয় আদিত্যর সামনে প্রকাশ করতে চাই না।তাই নূর অনেক কষ্টে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে বলল ।

তুমি অনেক বেশি অসভ্য, তোমার সাথে আমি কথা বাড়াতে চাই না।আমি ব্যস এখান থেকে বাড়ি যেতে চাই।তাই তোমার আনা ড্রেস আমি পরে নিচ্ছি।

আদিত্য ঠিকই বুঝতে পেরেছে যে নূর এখন ভয় পাচ্ছে। তাই আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে রুম থেকে বের হয়ে যায়।

নূর আর কিছু না ভেবে আদিত্যর আনা ড্রেস হাতে তুলে নেয়। শপিং ব্যাগ থেকে ড্রেস বের করতেই দেখতে পায় এটা একটি নীল রঙের গাউন।গাউনের মাঝে আবার খুব সুন্দর করে ডিজাইন করা। নূর গাউনটি দেখে আদিত্যের প্রশংসা করতে বাধ্য হলো। কারণ গাউনটি খুবই সুন্দর। নূর চেঞ্জ করে রুম থেকে বের হয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসে। নিচে এসেই দেখে আদিত্য পায়ের উপর পা দিয়ে বসে আছে। আদিত্য নিজের পোশাক চেন্জ করে রেডি হয়ে বসে আছে। আদিত্য কে যে কেউ দেখলে এখন ক্রাস খেতে বাধ্য। নূর ও আদিত্যর দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।নূর যখন বুঝতে পারলো ও বেহায়ার মতো আদিত্যর দিকে তাকিয়ে আছে নূর তখন সাথে সাথে নিজের চোখ সরিয়ে নিল।

তখনি আদিত্য নূরের উদ্দেশ্যে বলল।

আমি তোমারি স্বামী,তাই তুমি আমাকে সকাল সন্ধ্যা যখন মন চায় চোখ দিয়ে গিলে খেতে পারো।এতে আমার কোনো সমস্যা নেই। বরং আমি আরো উৎসাহিত হবো। নিজের বউকে আরো বেশি আদর করতে পারব।

আদিত্য কথা শুনে নূর বুঝতে পারে না ও কি বলবে। আদিত্য যে ওকে এভাবে আদিত্যর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ফেলেছে আর ও বুঝতেই পারেনি। নূর কিছুতেই আদিত্যর কাছে হার মানবে না।তাই নূর বলল।

আমি তোমাকে দেখছিলাম না,

আদিত্য নূরের কথা শুনে নিজের জায়গা থেকে উঠে নূরের একদম কাছে চলে আসল।নূর যখনি আদিত্য থেকে দূরে সরে যেতে চাইল। তখনি আদিত্য নিজের দু হাত দিয়ে নূরকে বন্দি করে ফেললো। নূরের কানের কাছে আদিত্য আস্তে করে বলল।

তোমাকে আমি কখন বলেছি, তুমি আমার দিকে তাকিয়ে ছিলে।আমি তোমাকে বলিনি তুমি নিজে স্বীকার করলে।

আদিত্য নূরের এত কাছে আসায়, নূর নিজের চোখ বন্ধ করে ফেললো।নূর চোখ বন্ধ করতেই অনুভব করে নূর শূন্যে ভাসছে। তখনি নূর চট করে নিজের চোখ খুলে ফেলে এবং দেখে। আদিত্য ওকে কুলে তুলে নিয়ে বাইরের দিকে হাঁটা দিলো।

আমার পা আছে তুমি আমাকে নিচে নামাও।আমি হেঁটে যাবো।

নূরের কথা শুনে আদিত্য ওর দিকে তাকিয়ে বলল।

তোমার পা থাকতে যদি তোমার স্বামী তোমাকে কুলে না নিতে পারে।তাহলে আমি তোমার পা দুটো ভেঙ্গে সারা জীবন কুলে নিয়ে ঘুড়ব। এখন তুমি বলো ভালো পা নিয়ে আমার কুলে ঘুরতে চাও।নাকি ভাঙ্গা পা নিয়ে। আদিত্যর কথায় নূর আর কিছু বলে না।কেননা এই তার ছিঁড়ার কেনো ভরসা নেই সত্যি না নূরের পা ভেঙ্গে ফেলে।
___________________________________
অনুষ্ঠান প্রায় শেষের দিকে। রুদ্র তার সকল বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে।সকলে নূরকে এখন অনেক মিস করছে। ওদের মধ্যে যদি এক বন্ধু ও না থাকে তাহলে ওরা অসম্পূর্ণ হয়ে থাকে। রুদ্র যখন ওর বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে তখনি সাইরা কিছুটা অস্বস্তি নিয়ে রুদ্রের কাছে এসে বলে।

দুলাভাই আপনাকে সিরাত আপু ডাকছে,

আড্ডার মাঝে দুলাভাই ডাক শুনে সকলে সাইরার দিকে তাকায়।সাইরা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে লজ্জায়। সাইরা কে দেখেই বুঝা যাচ্ছে ও এখন ঠিক কতটা লজ্জা পাচ্ছে। রুদ্রের ও সাইরার মুখে দুলাভাই ডাকটি শুনে কেমন যেনো লাগলো। কারণ এই প্রথম রুদ্র কারও মুখ থেকে দুলাভাই ডাক শুনেছে।

রুদ্র সাইরার উদ্দেশ্যে কিছু বলার আগেই রাজ ঠাট্টা করে সাইরার উদ্দেশ্যে বলল।

বিয়াইনের কি শুধু তার দুলাভাইয়ের কথা মনে পরে আমাদের কথা মনে পরে না।আমরাও তো এখানে আছি আমাদের দিকেও এখানে একটু তাকান।আমি যে ব্যাকুল..

রাজ কথাটি শেষ করার আগেই আরশাদ হাত দিয়ে খোঁচা দেয় রাজ কে।রাজ কিছুটা থতমত খেয়ে বলল।

আমি বলতে চাইছি,আমরা সকলে ব্যাকুল হয়ে আছি আপনার সাথে কথা বলার জন্য।

সাইরা রাজের করে শুয়ে অনেক লজ্জা পেয়েছে।তাই সাইরা আর সেখানে না দাঁড়িয়ে চলে যায়।

সাইরা চলে যেতেই রুদ্র ও চলে যায় সিরাতের সাথে দেখা করতে।আর রাজ সাইরার লজ্জা মাখা মুখ দেখে মাথা নিচু করে মুচকি হাসে।মাথা উঠিয়ে যখন রাজ সামনে তাকায় তখনি দেখে আয়না ওর দিকে ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে আছে।

রাজ আয়নাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলল।

তুই এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছিস কেনো।

দেখছি,

কি দেখছিস?

তোমাকে দেখছি, তুমি কিভাবে সিরাত আপুর বোনের দিকে তাকিয়ে ছিলে।তাই দেখছিলাম আবার সিরাত আপুর বোনের চেহারায় কিছু লেগে ছিল নাকি।যে এভাবে হা করে ছিলে ওকে দেখে।

তোর মনে হয় না তুই বেশি ভাবছিস।

একদম না,আমি এটা খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছি তুমি সাইরা কে আমার ভাবি বানাতে চাইছো। এখন যদি আমি এই কথা বাসায়..

সাইরার কথা পূর্ণ হওয়ার আগেই রাজ বলল।

কি চাস?

বেশি কিছু না, ব্যস…

#চলবে…