#তুমি_শুধু_গল্প_না_আমার_ভালোবাসা
#আমেনা_আক্তার
#বোনাস_পর্ব
ব্যস আমি আনন্দ মেলায় যেতে চাই, আমার বান্ধবীদের সাথে।
আচ্ছা আমি নিয়ে যাবো তোকে,
না আমি তোমার সাথে যাবো না,আমি আমার বান্ধবীদের সাথে যাবো। তোমার জন্য আমি ওদের সাথে ভালোভাবে ঘুরতেও পারি না। তুমি গেলে ওরা শুধু তোমার দিকেই তাকিয়ে থাকে।
তুই জানিস না ওখানে কত ভিড় থাকে? মেলায় একা যাওয়া তর জন্য সেফ না।
ভাইয়া ওরা ওতো যাবে, আম্মু আমাকে কখনো একা যাওয়ার অনুমতি দিবে না। প্লিজ ভাইয়া যেতে দাও না।
আচ্ছা ঠিক আছে কিন্তু বেশিক্ষণ থাকতে পারবি না ওখানে একা।আর যদি কোনো সমস্যা হয় তাহলে আমাকে কল করবি।
ভাইয়ের কথা শুনে আয়না খুশি হয়ে বলে উঠলো।
ঠিক আছে,
আয়নার হাসি মাখা মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে আব্রাহাম। আয়নাকে খুশি হতে দেখে ওর মনেও প্রশান্তিময় হাওয়া বয়ে যাচ্ছে।প্রিয়সির মুখের হাসি যে ওর মনে ঝড় তুলে তাকি আব্রাহামের প্রিয়সি জানে। জানেনা হয়তো, তাইতো আব্রাহামের ভালোবাসা গ্রহণ করছে না।
রুদ্র নিজের রুমে প্রবেশ করে দেখে সিরাত নিজের কিছু কাপড় লাগিসের ভিতর ঢুকাচ্ছে। রুদ্র কে দেখে সিরাত বলল।
তোমার যেই জামাকাপড় নিবে সেগুলো আমাকে দাও আমি নিয়ে নিচ্ছি।
সিরাতের কথায় রুদ্র ভ্রু কুঁচকে বলল।
কোথায় যাবো আমরা?
আমার বাড়িতে, আম্মু তোমাকে আর আমাকে আজ সাথে নিয়ে যাবে।
তোমার বাড়িতে যাবো তাহলে এটা কার বাড়ি।
এটাও আমার বাড়ি,দুটোয় আমার বাড়ি, এখন কথা না বাড়িয়ে নিজের জামাকাপড় গুছাও মা অপেক্ষা করছে।
রুদ্র সিরাতের কথা শুনে আর কথা বাড়ালো না। নিজের জামাকাপড় গুছানো শুরু করলো।
___________________________________
আদিত্যর গাড়ি এসে থামে একটি নামি দামি রেস্টুরেন্টের সামনে।নূরকে নিয়ে আদিত্য গাড়ি থেকে নেমে পড়লো। নূর এখনো আদিত্যর কুলে।শত চেষ্টা করেও নূর আদিত্য থেকে নিজেকে ছাড়াতে সক্ষম হয়নি।তাই এক প্রকার বাধ্য হয়ে নূর আদিত্যর কুলে থাকতে হচ্ছে।
আদিত্য গাড়ি থেকে নেমে রেস্টুরেন্টে ঢুকেই আদিত্য নূরকে একটি চেয়ারে বসিয়ে দেয়।পুরো রেস্টুরেন্ট খুব সুন্দর ফুল দিয়ে সাজানো। রেস্টুরেন্টে এই মুহূর্তে ওরা দুজন আর কিছু ওয়েটার ছাড়া কেউ নেই। নূর অবাক হয়ে রেস্টুরেন্টের চারপাশ দেখছে। আদিত্য ও নূরকে বসিয়ে নিজেও একটি চেয়ারে বসে পরে।তখনি সেখানে একজন ওয়েটার এসে টেবিলের উপর কিছু খাবার দিয়ে যায়। আদিত্য নূরের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আদিত্যর সকল ধ্যান এখন নূরের উপর। নূর আশেপাশে কিছুক্ষণ দেখে আদিত্যর উদ্দেশ্যে বলল।
এই সব কি?
আদিত্য ভনিতা ছাড়াই নূরকে উত্তরে বলল।
আমাদের ফার্স্ট ডেইট,
নূর আশ্চর্য হয়ে তাকায় আদিত্যর দিকে আদিত্য যে এতটা ফার্স্ট নূরের ধারনার বাইরে ছিল।নূর শুনেছে যারা রাজনীতি করে তারা নাকি অনেক নিরামিষ হয়।কিন্তু আদিত্যকে দেখে নূরের ধারণা বদলে যাচ্ছে।
নূর কি বলবে ভেবে পায়না, নূরের সামনে খাবার রাখা হয়েছে। বিভিন্ন আইটেমের নূরের প্রচুর ক্ষুধা লেগেছে।আর নূর এটিও ভালোভাবে যানে এখন যদি খেতে না করে তাহলে আদিত্য অন্য পদ্ধতি ব্যবহার করবে নূরকে খাওয়ানোর।তাই নূর কিছু না বলে চামিচ হাতে তুলে নেয়। নূর যখনি খাবার খাওয়ার উদ্দেশ্যে চামিচ প্লেটে দিবে তখনি আদিত্য নূরের খাবারের প্লেট ওর সামনে থেকে সরিয়ে ফেলে।নূর অবাক হয়ে তাকায় আদিত্যর দিকে। আদিত্য নিজের চেয়ার টেনে বসে নূরের একদম নিকটে।নূর বসে বসে শুধু আদিত্যের কর্মকান্ড দেখছে।
আদিত্য নূরের হাত থেকে চামিচ রেখে দেয়। এবং নিজের হাত দিয়ে খাবার তুলে নিয়ে নূরের মুখের সামনে ধরল। একবার আদিত্যর দিকে তো একবার আদিত্যর হাতের দিকে তাকাচ্ছে।নূর খাচ্ছে না দেখে আদিত্য ধমকে বলে উঠলো।
খাও,
নূর হঠাৎ আদিত্যর ধমক শুনে হচকচিয়ে যায়। এবং তাড়াতাড়ি আদিত্যর হাত থেকে খাবার নিজের মুখে পুরে নেয়। এভাবে আদিত্য নূরকে নিজের হাতে খাওয়াতে থাকে।নূর ও ভদ্র ভাবে খাবার খেতে থাকে। আদিত্যর নূরকে খাবার খাওয়ানো শেষ হতেই নিজের হাত পরিষ্কার করে বলল।
এখন তুমি আমাকে খাওয়াও।
আদিত্যর কথা শুনে নূর একই ভাবে বসে আছে। আদিত্য নূরের কোনো হেলদুল না দেখে বলল।
তুমি শুনতে পাও নি,কি বলেছি?নাকি আমার তোমাকে শুনানোর জন্য অন্য কিছু করতে হবে।
আদিত্যর কথা শুনে নূর চোখ মুখ শক্ত করে বলল।
খাওয়াচ্ছি,
নূর কথাটি বলেই আদিত্যকে নিজের হাতে খাবার খাওয়ায়।এই ছাড়া তো এখন কোনো উপায় নেই ওর কাছে।
খাবার শেষ হতেই ওয়েটার এসে সব কিছু নিতে আসলো।ওয়েটার যখন খাবার নিয়ে যাচ্ছে তখনি আদিত্য ওয়েটারের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো।
এখানে যেনো এখন আর কেউ না আসে,
ওয়েটার জ্বি স্যার বলে সেখান থেকে চলে গেল।
নূর আদিত্যর কথা শুনে ওকে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো।
এখানে কাওকে আসতে না বললে কেনো।
আদিত্য নূরের কথা শুনে বলল।
খাবার খাওয়ার পর তো মিষ্টি কিছু খাওয়া লাগবে তাই না।
আদিত্যর কথা শুনে নূর আবার আদিত্য কে জিজ্ঞেস করলো।
এখানে কারো না আসার সাথে মিষ্টি কিছু খাওয়ার কি সম্পর্ক?
নূরের কথার প্রতি উত্তরে আদিত্য একটি বাকা হাসি দিয়ে বলল।
এখনি বলছি,
আদিত্য কথাটি বলেই হঠাৎ নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দেয় নূরের ঠোঁটে। নূরের আবার দম বন্ধ অনুভূতি হচ্ছে। কিন্তু আগের মতো এখন আর এতটা অস্বস্তি অনুভব হচ্ছে না।
___________________________________
আয়শা চৌধুরী সারাকে নিয়ে গাড়ি দিয়ে বাড়ি যাচ্ছে।মনমরা হয়ে বসে আছে সারা।সারা আয়েশা চৌধুরী ও নিজের বাবা মাকে বলে দিয়েছে ওর আদিত্যকে যেই কোনো মূল্যে চাই। আদিত্যর জন্য ও সব কিছু করতে রাজি। আয়েশা চৌধুরী ও সারা কে অনেক কিছু বলে শান্তনা দিয়েছেন।আয়েশা চৌধুরী ও নিজের বোনের মেয়ে ছাড়া আর কাউকে পুত্র বধূ হিসেবে স্বীকৃতি দিবেন না। কিন্তু উনি খুব চিন্তায় আছেন। কেননা আদিত্যর উপর কোনো কিছু জোড় করে চাপিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। আদিত্য যে কারও কথা শুনে না নিজের মন মর্জি মতো চলে। ওইদিন আদিত্য বাড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর আর বাড়ি ফিরেনি।শত চেষ্টা করেও ওকে বাড়িতে আনা যায়নি। বাড়িতে বা তখন আনা যাবে যখন আদিত্যর খোঁজ পাবে কেউ। আদিত্য কখন কোথায় থাকে তা কেবল আদিত্যই যানে।আর এক জানে আরিফ তাও যদি আদিত্য ওকে কিছু বলে।
গাড়ি চলা কালীন সারা আরিফ কে একটা রেস্টুরেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ড্রাইভার কে বলল।
গাড়ি থামাও,
সারার কথা অনুযায়ী ড্রাইভার সাথে সাথে গাড়ি ব্রেক করে। হঠাৎ গাড়ি ব্রেক করায় আয়েশা চৌধুরী সারার উদ্দেশ্যে বলল।
কি হয়েছে তুমি এখানে গাড়ি থামাতে বললে কেনো?
আয়েশা চৌধুরীর কথা শুনে সারা আদিত্যর গাড়ির দিকে হাত দিয়ে ইশারা করে বলল।
খালামনির ওই দেখে আদিত্যের গাড়ি,আর ওই রেস্টুরেন্টের সামনে আরিফ দাঁড়িয়ে আছে।
সারার ইশারা অনুযায়ী আয়েশা চৌধুরী তাকাতেই আরিফ কে দেখতে পায়। আরিফকে দেখে আয়েশা চৌধুরী সারা কে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে পড়লো। এবং আরিফের কাছে চলে গেল। আরিফের ধ্যান এখন মোবাইলের মধ্যে আবদ্ধ তাই আয়েশা চৌধুরীকে আরিফ খেয়াল করে নি। আয়েশা মির্জা আরিফের কাছে এসে বলল।
আরিফ তুমি এখানে কি করছ,
অপ্রত্যাশিত ভাবে আয়েশা চৌধুরীর কথা শুনে আরিফ দ্রুত সামনের দিকে তাকায়। এবং নিজের সামনে আয়েশা চৌধুরী কে দেখে চমকে উঠে বলল।
ম্যাম আপনে এখানে,
হ্যাঁ আমি এখানে,আমি এটা খুব ভালোভাবে জানি আদিত্য ও এখানেই আছে। আদিত্য কি এই রেস্টুরেন্টের ভিতরে আছে।
আয়েশা চৌধুরীর কথায় ছোট করে উত্তরে বলল।
জ্বি ম্যাম,
আয়েশা চৌধুরী আর কিছু না বলে রেস্টুরেন্টের দিকে পা বাড়ায়। তখনি আদিত্যর বডিগার্ড ও আরিফ আয়েশা চৌধুরীর সামনে এসে দাড়ায়। আরিফ মাথা নিচু করে আয়েশা চৌধুরীকে বলল।
ম্যাম ভাই এখন ব্যস্ত আছে, এখন ভিতরে প্রবেশ করার অনুমতি কারও নেই।
আরিফের পথ আটকানো ও ভিতরে যেতে না করায় আয়েশা চৌধুরী রাগে আগুন হয়ে যায়। এবং আরিফ কে উদ্দেশ্যে বলল।
তুমি হয়তো ভুলে যাচ্ছ আমি আদিত্যর মা,ওর যত জরুরি কাজ হোক না কেনো। আমাকে তোমার থেকে আমার ছেলের কাছে যাওয়ার অনুমতি নিতে হবে না নিশ্চয়ই।আমি আদিত্যর কাছে যাবো আর এখনি যাবো। দেখি আমাকে কে আটকায়।
আয়েশা চৌধুরী আরিফের কথা শুনছে না দেখে আরিফ আয়েশা চৌধুরী কে বাধ্য হয়ে বলল।
ভাইয়ের সাথে ভাবি আছে ভিতরে,
আরিফের কথা শুনে আয়েশা চৌধুরী ও সারার পা থেমে যায়।সারা রাগে নিজের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলে। আদিত্যর বউ, আদিত্যর বউ শুধু সাইরা হবে আর কেউ না। কথাটি মনে মনে ভেবে সারা..
#চলবে…