#তুমি_শুধু_গল্প_না_আমার_ভালোবাসা
#আমেনা_আক্তার
#পর্ব_৪৫
সারার মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে এটা ভাবতেই আদিত্য রেস্টুরেন্টের ভিতরে অন্য একটি মেয়ের সাথে রয়েছে। যেখানে ওর থাকার কথা সেখানে অন্য কোনো মেয়ে কেনো থাকবে। আদিত্য তো শুধু মাত্র ওর।ও আদিত্য কে ভালোবাসে সারা কখনো আদিত্যর পাশে অন্য কোনো মেয়েকে সহ্য করবে না।যেই মেয়ে আদিত্য কে ওর কাছ থেকে কেড়ে নিতে চাইছে তাকে ও কিছুতেই ছাড়বে না।ওই মেয়েকে প্রয়োজন পরলে চুলে ধরে বের করে হলেও সারা আদিত্যর সাথে থাকবে। কথাগুলো ভেবে সারা পা বাড়ায় রেস্টুরেন্টের দিকে। কিন্তু তখনি সারার হাত পিছন থেকে ধরে ফেলল আয়েশা চৌধুরী।সারা আয়শা চৌধুরীকে নিজের হাত ধরে আটকাতে দেখে বলল।
আমাকে ছাড়ো খালামনি,আমি ওই মেয়েকে ছাড়বো না যে আমার আদিত্য কে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে চাইছে। প্রয়োজন পরলে আমি ওই মেয়েকে খুন করব। তবুও ওকে আমার আদিত্য কে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে দিব না।
সারার কথায় আয়শা চৌধুরী শক্ত গলায় সারার উদ্দেশ্যে বলল।
তুমি কি পাগল হয়ে গেছ। তুমি কি বলছ তুমি যানো। তুমি হয়তো ভুলে যাচ্ছে ভিতরে ওই মেয়ের সাথে আদিত্য ও রয়েছে। আদিত্যর স্বভাব তুমি খুব ভালো ভাবে জানো।ওর কথার খেলাপ করলে আদিত্য নিজের বাবা মাকেও ছাড় দেয়না। সেখানে তুমি ওর নিষেধ করা সত্ত্বেও ভিতরে যেতে চাইছো।ওই দিন আদিত্য বাড়ি থেকে বের হাওয়ার সময় তোমাকে কি বলেছিল মনে আছে তো নাকি ভুলে গেছ।
ওই দিনের আদিত্যর হুমকি দেওয়ার কথা মনে পরতেই মুহূর্তের মধ্যে চুপসে যায় সানা। সানার চুপসানো মুখ দেখে আয়শা চৌধুরী একটি নিঃশ্বাস ত্যাগ করে কিছুটা নরম স্বরে আবার বলল।
আদিত্য যখন কাওকে ভিতরে যেতে না বলেছে।তাহলে আমাদের এখন ভিতরে যাওয়া ঠিক হবে না।
আয়শা চৌধুরীর কথা শুনে সানা কান্না করে দেয়। আরিফ এতক্ষণ এখানে দাঁড়িয়ে আয়শা চৌধুরী ও সানার কথা শুনছিলো। আরিফ সানাকে কান্না করতে দেখে বিরক্তি ভরা চাহনিতে সারার দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলল।
শুরু হয়ে গেছে এর মিলোড্রামা।
আরিফ কথাটি খুব ধীরে বলায় আয়শা চৌধুরী ও সারার কানে পৌছালো না। পৌঁছালে হয়তো এতক্ষণে কুরুক্ষেত্র বাঁধিয়ে ফেলত ওরা। সারা কান্না করতে করতে আয়শা চৌধুরী কে বলল।
আমি এখন কি করব খালামনি। আদিত্যর পাশে অন্য একটি মেয়ে আমি এই কথা ভাবতেও পারছিনা।আমি কিভাবে ওর পাশে অন্য মেয়েকে সহ্য করব।আমি পারছিনা খালামনি আমি এখন কি করব। প্লিজ বলে দাও আমি এখন কি করব।
অপেক্ষা, এখন আমাদের এখানে দাঁড়িয়ে আদিত্যর জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।ও রেস্টুরেন্ট থেকে বের হলে আমি ওর সাথে কথা বলব।সেই পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।
আদিত্য নূরকে নিজের কুলের উপর বসিয়ে নূরের ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে বসে আছে। এতে নূরের অস্থিরতা বেড়ে চলেছে। কিন্তু আদিত্য নূরের অস্থিরতা পাত্তা দিচ্ছে না। কিছুক্ষণ অতিবাহিত হাওয়ার পর আদিত্য নূরকে কুলে তুলে উঠে দাঁড়ালো।নূর আদিত্যর হঠাৎ উঠে দাঁড়ানোর কারণ বুঝতে পারল না। আদিত্য নূরকে কিছু না বলে। বাইরের দিকে হাঁটা দেয় নূর কিছু না বলে চুপচাপ আছে আদিত্যর কুলে । আদিত্য বাইরে বের হতেই আয়শা চৌধুরীকে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেললো আদিত্য। আয়শা চৌধুরী ও সারা ও আদিত্য কে দেখে আদিত্যর কাছে আসার আগেই আদিত্যর কুলে নূরকে দেখে থেকে যায়।
আয়শা চৌধুরী তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করছে নূরকে।আজ প্রথম আয়শা চৌধুরী নূরকে দেখেছে। নূরকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে মূলত নূরের স্ট্যাটাস সম্পর্কে বুঝতে চাইছে।আর এদিকে সানার রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে।ওর এখন নূরকে খুন করতে মন চাইছে। নিজের প্রিয় মানুষের কুলে অন্য কাওকে সহ্য করা যে অনেক কষ্টকর। কিন্তু সানা এইটা ভুলে যাচ্ছে নূর এখন আদিত্যর ওয়াইফ। নূরের সম্পূর্ণ অধিকার আছে আদিত্যের উপর।হয়তো বা সানা এটা জেনেও বুঝতে চাইছে না। কিন্তু সানার এই অবুঝের মতো আচরণ যে সানার জন্য সামনে বিপদ ডেকে আনতে পারে এটাও হয়তো সানার অজানা।
আদিত্য আয়শা চৌধুরী ও সানাকে দেখে কোনো অভিব্যক্তি প্রকাশ করল না। আদিত্য এমন ভাবে সামনে এগিয়ে গেল যেনো আদিত্য সানা ও নিজের মাকে ও দেখেই নি।
আদিত্য কে এভাবে ভাব অলসহীন ভাবে চলে যেতে দেখে আয়শা চৌধুরী বলে উঠলো।
আদিত্য দাঁড়াও,
মায়ের বলার সাথে সাথে থেকে গেল আদিত্যর পা। আদিত্য সেখানেই দাঁড়িয়ে যায়। নূর এতক্ষণ ওদের কাওকে খেয়াল করে নি। নূর এতক্ষণ মগ্ন ছিল নিজের ভাবনার জগতে। আয়শা চৌধুরীর কন্ঠস্বর শুনে নূর চমকে যায়।আয়শা চৌধুরী আদিত্য কে দাঁড়াতে বলে আদিত্যর সামনে এসে দাঁড়ায় সানাকে নিয়ে। নূর ওদের দুজনকে দেখে নড়ে চড়ে উঠলো। এবং আদিত্য থেকে ছাড়া পাওয়ার চেষ্টা করল। কিন্তু আদিত্যর বলিষ্ঠ হাত দুটো নূর কে এমন ভাবে আঁকড়ে ধরেছে যে নূর চাইলেও আদিত্য থেকে ছুটতে পারছে না।
আয়শা চৌধুরী আদিত্যর উদ্দেশ্যে আবার বলল।
এই মেয়েকে নামাও তোমার কুল থেকে আদিত্য।
আয়শা চৌধুরীর কথায় আদিত্যর মধ্যে কোনো পরিবর্তন দেখা গেল না।নূর ও আদিত্য কে বলল নামাতে কিন্তু আদিত্য নামালোনা নূরকে। ছেলের পরিবর্তন না দেখে আয়শা চৌধুরী আবার বলল।
তুমি তোমার ম্যানার্স ভুলে যাচ্ছ, তুমি তোমার মায়ের সামনে একটি বাই..
আর কিছু বলার আগে আদিত্য গর্জে বলে উঠলো।
একবার ওকে বাইরের মেয়ে বলে যেই ভুল করেছিলে দ্বিতীয় বার আর এই ভুল করার কথা স্বপ্নেও ভেব না।
আদিত্যর গর্জন শুনে কেঁপে উঠলো ওইখানে থাকা প্রত্যেকটি ব্যক্তি। সাথে কেঁপে উঠলো আদিত্যর কুলে থাকা নূর ও।আয়শা চৌধুরী ছেলের কথা শুনে নিজেকে কিছুটা শান্ত করল। কারণ ওনি খুব ভালোভাবে জানেন ছেলের সাথে যদি মাথা গরম করে কথা বলেন তাহলে হিতে বিপরীত হতে পারে।তাই তিনি কিছুটা শান্ত স্বরে বললেন।
তুমি সানাকে ছেড়ে এই মেয়ে কে বেছে নিচ্ছ আদিত্য। তুমি একবার ভালোভাবে তাকিয়ে দেখ এই মেয়ের থেকে সানা সব দিক দিয়ে এগিয়ে।এই মেয়ের আর সানার গায়ের রং ও যদি তুমি মিলাতে চাও তাহলে এই মেয়ের থেকে সানা অনেক বেশি সুন্দরী।
আদিত্য মায়ের কথা শুনে তাচ্ছিল্যে ভরা একটি হাসি দিয়ে বলল।
হয়তো সানা নূরের থেকে সুন্দর বেশি, কিন্তু তুমি হয়তো ভুলে যাচ্ছ। শরীরের সুন্দর্যের থেকে মনের সুন্দর্য বেশি গুরুত্ব। পবিত্রতা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
আদিত্যর কথা শুনে সারা রেগে বলল।
আমার ভিতরটা কি সুন্দর না,আমি কি পবিত্র না।
আদিত্য সারার কথায় ওর দিকে ঘাড় কাত করে তাকিয়ে বলল।
নাহ,
আদিত্যর কথা শুনে সারা রাগে গজগজ করতে করতে বলল।
আমি মনের দিক দিয়ে সুন্দর না,আমি পবিত্র না। আচ্ছা ঠিক আছে, কিন্তু তোমার কি মনে হয় তোমার হঠাৎ হয়ে যাওয়া স্ত্রী পবিত্র।
আদিত্য বিনা দ্বিধায় বলল।
হ্যাঁ ও পবিত্র,আমার স্ত্রী পবিত্র।পুরো দুনিয়া যদি আমার সামনে এসে বলে আমার স্ত্রী অপবিত্র তবুও আমি বলবো আমার স্ত্রী পবিত্র।আর এর জন্য আমার কোনো প্রমাণের প্রয়োজন নেই।
আদিত্যর আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলা কথাটি সোজা নূরের বুকে গিয়ে লাগলো।ওর ভিতরে কি জেনো একটা অনুভুতি হচ্ছে।নূর এই অনুভূতির সাথে পূর্ব পরিচিত নয়। নূর ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে আদিত্যর দিকে। কিভাবে আদিত্য ওকে এত কম সময় দেখে এত আত্মবিশ্বাস নিয়ে ওর পবিত্রতা নিয়ে কথা বলছে বিনা সংকোচে। কিভাবে নিজের মায়ের সামনে ওর পক্ষ নিয়ে কথা বলছে ও তো বলেনি একবারও।এই মেয়েটি ওর থেকে বেশি সুন্দর ও স্মার্ট হওয়ার পরেও কেনো আদিত্য এই মেয়ের জায়গায় ওকে বেছে নিচ্ছে। শুধু কি নূর আদিত্যর স্ত্রী এটাই কারণ নাকি অন্যকিছু।
আদিত্য আয়শা চৌধুরী ও সারাকে আর কিছু না বলতে দিয়ে নূরকে নিয়ে গাড়িতে বসে পরে। আয়শা চৌধুরী আটকানোর আগেই গাড়িটি চলতে শুরু করে দিলো।
___________________________________
হৃদিতা নিজের বাড়ির ড্রয়িং রুমে মাথা নিচু করে বসে আছে।ওর সামনেই বসে আছে শিহাব আর ওর বাবা মা। শিহাবের বাবা মা রুদ্রের বাবা মায়ের সাথে গল্পে ব্যস্ত হয়ে আছে।আজ হৃদিতার সাথে শিহাবের বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করবে। কিন্তু এই বিষয়ে হৃদিতা আগের থেকে অবগত ছিল না। হৃদিতা রুদ্রের বাড়ি থেকে ফিরার পর ওদের ড্রয়িং রুমে বসে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেলে। এমনিতে শিহাব আর ওর বাবা মা এমনিতে ওদের বাড়িতে আশা যাওয়া করে কিন্তু আজ হৃদিতার পরিবেশটি অন্যরকম লাগে।
তখনি হৃদিতার বাবা হৃদিতাকে দেখে ওকে ডাক দেয় এবং ওদের সাথে বসতে বলে। হৃদিতা বসার পর যখন ওর আর শিহাবের বিয়ের কথা শুনে এর পরেই রাগে যেনো ওর শরীর জ্বলতে থাকে। হৃদিতা কিছু না বলে চুপচাপ বসে আছে। কারণ হৃদিতা বাবা অনেক কড়া স্বভাবের এখন হৃদিতা কিছু বললে ওর বাবা বিয়ে এখনি করিয়ে দিতে পারে হৃদিতার সাথে শিহাবের।তাই এখন বসে থাকা ছাড়া আর কিছু করার নেই হৃদিতার।
হৃদিতার বাবা মা ও শিহাবের বাবা মা কথা বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সামনের শুক্রবার ওদের কাবিন করানো হবে।পরে অনুষ্ঠান করে মেয়ে বিদায় দিবে।হৃদিতা কথাটি শোনা মাত্র শিহাবের দিকে তাকায় শিহাব শয়তানি হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে হৃদিতার দিকে। শিহাব খুব ভালোভাবে জানে হৃদিতার এই বিয়েতে মত নেই কিন্তু তবুও শিহাব জোড় করে হৃদিতাকে পেতে চায়। হৃদিতা সেখান থেকে উঠে নিজের রুমে চলে আছে। এখন নিজেকে ঠান্ডা করা প্রয়োজন তাই হৃদিতা জামাকাপড় নিয়ে শাওয়ার নিতে ওয়াস রুমে চলে যায়।কাল বন্ধুদের সাথে কথা বলে একটি সমাধান করা যাবে। কিন্তু সমস্যা তো এইটা না মূল সমস্যা হলো আরশাদ। আরশাদ বিষয়টি জানার পর শিহাবের সাথে উল্টা পাল্টা কিছু করে না ফেলে ।
___________________________________
রুদ্র ও সিরাত অনেকক্ষণ হয়েছে সিরাতদের বাড়িতে এসেছে। এখানে আসার পর থেকে রেহানা বেগম একের পর এক আপ্যায়ন করে চলেছে।একের পর এক খাবার আনছে রুদ্রের সামনে।
অনুষ্ঠানে সবার সামনে যখন রুদ্র সিরাতের হয়ে কথা বলেছে। যখন রুদ্র সিরাতকে অপমান করা মানুষগুলোকে বের করে দিয়েছে। তখন রেহানা বেগমের ভিতরটা প্রশান্তিতে ভরে উঠেছিল। তখনি রেহানা বেগমের সিরাত ও রুদ্রের সম্পর্ক নিয়ে থাকা সকল দ্বিধা কেটে গিয়েছিল। তিনি বুঝতে পেরেছেন তিনি সিরাত হাত কোনো ভুল মানুষের হাতে দেয় নি।তাই তো রুদ্রের উপর ভালোবাসা রেহানা বেগম একটু বেশিই দেখাচ্ছে। কিন্তু বেচারা রুদ্র যে এত ভালোবাসা একসাথে হজম করতে পারছে না। ভাগ্যিস ব্যস্ততার জন্য অনুষ্ঠানে কিছু খায়নি তাইতো রেহানা বেগমের মন রক্ষা করতে পেরেছে খাবার খেয়ে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এত খাবার একসাথে খেলেও রেহানা বেগমের মন ভরবে না। রুদ্র নিষ্পাপ চেহারা করে সিরাতের দিকে তাকায়।সিরাত রুদ্রের চোখের ভাষা বুঝতে পারে হয়তো।তাই সিরাত তার মায়ের উদ্দেশ্যে বলল।
মা এবার থামো অনেক হয়েছে,এত খাবার একটি স্বাভাবিক মানুষ একসাথে খেতে পারে না। তুমি যত খাবার রুদ্র কে খেতে বলছো।
মেয়ের কথা শুনে রেহানা বেগম তেজি গলায় বলল।
তোর সমস্যা কি, আমার আমার জামাই বাবাকে খেতে দিয়েছি।তোর এত জ্বলছে কেনো।
আমার জ্বলছে না, তুমি পরিমাণে অতিরিক্ত ওকে খেতে বলছো।ও মানুষ কেনো এলিয়েন না যে একসাথে এত খাবার খাবে। তোমার যদি মনে হয় আমি রুদ্রের সাথে হিংসা করে তোমাকে কথাগুলো বলছি।তাহলে তুমি সাইরা ও মহিমা আপাকে জিজ্ঞেস করো আমি সঠিক বলছি কিনা।
রেহানা বেগম সিরাতের কথা শুনে সাইরা ও মহিমার দিকে তাকায়।সাইরা ও মহিমা সিরাতের কথার সাথে সম্মতি প্রকাশ করে দেখে মহিমা বেগম দমে যায়। রেহানা বেগম জোড় পূর্বক একটি হাসি দিয়ে বলল।
আচ্ছা বাবা,তাহলে তুমি এখন রুমে গিয়ে রেস্ট নাও।আর কিছুর প্রয়োজন পরলে আমাকে বলো।
রুদ্র স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সিরাতের রুমে চলে যায়।সিরাত মায়ের সাথে কাজে হাত লাগাতে আসলে রেহানা বেগম কড়া গলায় সিরাতের উদ্দেশ্যে বলল।
তোর এখানে আসতে হবে না। তুই যা জামাইয়ের কাছে যেয়ে দেখ ওর কিছু লাগবে নাকি।
মায়ের কথা শুনে সিরাত বিরবির করে বলল।
মেয়ের থেকে এখন জামাই বেশি আপন হয়ে গেছে…
#চলবে
#তুমি_শুধু_গল্প_না_আমার_ভালোবাসা
#আমেনা_আক্তার
#পর্ব_৪৬
সিরাত নিজের রুমে প্রবেশ করে দেখে রুদ্র বিছানার উপর বসে রয়েছে চুপ করে।সিরাত রুদ্রের কাছে গিয়ে বলল।
অনেক রাত হয়ে গিয়েছে বসে না থেকে শুয়ে পরো।
সিরাতের কথা শুনে রুদ্র সিরাতের দিকে তাকিয়ে জোড় পূর্বক একটি হাসি দিয়ে শুয়ে পরলো। রুদ্র অনেক ক্লান্ত বাড়িতে অনুষ্ঠানের পর আর বিশ্রাম করার সুযোগ হয়ে উঠেনি। রুদ্র এতক্ষণ ঘুমানোর অনেক চেষ্টা করেছে কিন্তু রুদ্র এসির নিজে ও আরাম দায়ক বেডে ঘুমানোর অভ্যাস থাকার কারণে ওর এখানে ঘুমাতে অসুবিধা হচ্ছে। কিন্তু রুদ্র নিজের অসুবিধার কথা সিরাতের সামনে প্রকাশ করতে চাইছে না।সিরাতের যদি মনে হয় রুদ্র ওদের বাড়িতে না থাকার বাহানা বানাচ্ছে। এমনিতেও রুদ্রের দাদি রুদ্র কে সিরাতদের বাড়িতে আসতে মানা করেছিলেন। কিন্তু রুদ্র রেহানা বেগমের মন রক্ষা করতে এসেছে।ও সিরাতের সাথে সিরাতের অতীতের থাকা পরিবেশের সাথে পরিচিত হতে এসেছে।
সিরাতের বাড়ির খাট রুদ্রের বাড়ির খাটের তুলনায় অনেকটা ছোট।তাই রুদ্র খাটে শুতেই বিছানার অর্ধেক দখল করে নিলো রুদ্র।সিরাত সেদিকে তাকিয়ে একটি শ্বাস ফেলে অন্য দিকে ফিরে শুয়ে পরে । রুদ্র এপাস ওপাস করছে তবুও কিছুতেই ওর চোখে ঘুম ধরা দিচ্ছে না।সিরাত রুদ্রের এত নড়াচড়া করার কারণে ঠিক ভাবে ঘুমাতে পারছে না। রুদ্র যেমন ক্লান্ত তেমন তো সিরাত ও খুব ক্লান্ত।ওর এখন জরুরি ভাবে ঘুমের প্রয়োজন।
তাই সিরাত বিরক্ত হয়ে কিছুটা রাগ নিয়ে রুদ্রের দিকে ফিরতেই রুদ্রের কপালের সাথে ওর কপাল বারি খায়। দুজনে আউচ করে শব্দ করে দুজনের দিকে তাকাতেই একজন আরেকজনের একবারে কাছে আবিষ্কার করে। রুদ্র ও সিরাত বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে একজন আরেকজনের দিকে।ওরা এখন একজন আরেকজনের এত কাছে আছে যে একজনের শ্বাসের শব্দ আরেকজনের কানে এসে বারি খাচ্ছে। ওদের দুজনকে শ্বাস প্রশ্বাস যেনো ক্রমশ ভারি হয়ে উঠছে। রুদ্রের মনে সিরাতকে কাছে পাওয়ার ইচ্ছে জাগ্রত হচ্ছে। রুদ্র সিরাতের দিকে তাকিয়ে শুকনো একটি ঢোক গিলে।
সিরাত আর এই দম বন্দি পরিস্থিতি নিতে পারছে না।তাই সিরাত অন্য পাশ ফিরে শুতে নিলেই রুদ্র নিজের বলিষ্ঠ হাত ধারা ওকে আটকে ফেলে।সিরাত রুদ্রকে এভাবে নিজেকে আটকাতে দেখে খুব ধীরে বলল।
ছাড়ো,
সিরাত কথাটি বলতেই রুদ্র সিরাতের মাথা নিজের বুকের সাথে চেপে ধরল।
ছাড়বো না এভাবেই থাকো,
কথাটি বলেই রুদ্র নিজের চোখ বন্ধ করে ফেললো।সিরাত ও আর কোনো উপায় না পেয়ে রুদ্রের বুকেই ঘুমিয়ে যায়। রুদ্রের এতক্ষণ ঘুমাতে সমস্যা হলেও সিরাত কে নিজের বুকে নিতেই ওর বুকে যেনো প্রশান্তিময় হাওয়া বয়ে যায়।সাথে রুদ্রের চোখে ঘুম নেমে আসে।
___________________________________
রুদ্ররা সকল বন্ধু মিলে গভীর আলোচনা করছে সিরাতের রুমে। হৃদিতা সকাল সকাল সকল কে বলে দিয়েছে ওর কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে সকলের সাথে। রুদ্র সিরাত কে কথাটি বলতেই সিরাত ওদের বাড়িতে আসতে বলেছে সকলকে। রেহানা বেগম কালই সিরাত কে বলেছিল রুদ্রের বন্ধুদের যাতে সকালে নাস্তার দাওয়াত দেয় কিন্তু সিরাত ভুলে যাওয়াই রুদ্র কে বলা হয়নি। রুদ্র যখন ওর বন্ধুদের সাথে কথা বলছিল তখন সিরাতের মনে পরে যায় কথাটি । তখনি সিরাত রুদ্রকে বলেছে ওদের কে বলেছে সিরাতের বাড়িতে আসতে ।
আব্রাহাম হৃদিতার দিকে তাকিয়ে ওকে প্রশ্ন করল।
এত জরুরি তলব করলি কেনো,
আব্রাহামের কথার প্রতি উত্তরে হৃদিতা বলল।
বলব কিন্তু, আমার কথা শুনে কেউ হাইপার হতে পারবে না।
আব্রাহাম ও তার বন্ধুরা এটি খুব ভালোভাবে জানে কথাটি আরশাদ কে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে। আরশাদ হৃদিতার দিক কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল।
কি এমন কথা বলবি যা শুনে আমাদের হাইপার হতে হবে?
আমি হাইপার হতে না করেছি আর তুই কথা শোনার আগেই হাইপার হয়ে যাচ্ছিস।যদি এমন ব্যবহার করিস তাহলে আমি বলব না।
হৃদিতার কথা শুনে আরশাদ চোখ বন্ধ করে নিজের রাগ দমন করার চেষ্টা করে বলল।
ঠিক আছে হাইপার হব না,কি বলবি বল।
আরশাদের কথা শুনে হৃদিতা ভাব অলসহীন ভাবে বলল।
শিহাবের সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে।আমার ও শিহাবের কাবিনের দিন তারিখ ও ঠিক হয়ে গেছে সামনের শুক্রবার।
হৃদিতার কথা শুনে যেনো আরশাদের রাগ দমন করার চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গেল। আরশাদ নিজের রাগ তবুও দমন করার প্রচেষ্টা করতে নিজের চুল খামচে ধরে জোরে জোরে শ্বাস ফেলছে। আরশাদ রাগে গজগজ করতে করতে বলল।
কখন ঠিক করেছে?
কাল রাতে,
আরশাদ রুদ্রের কথা শুনে একদম হৃদিতার নিকটে এসে দাঁতে দাঁত চেপে বলল।
কাল রাতে ঠিক হয়েছে,আর তুই আমাদের এখন বলছিস।আর তুই বিয়ের জন্য রাজি হলি কেনো? বিয়ের জন্য মানা কেনো করে দিলি না?
আরশাদের কথা শুনে হৃদিতার মনে একটু দুষ্টু বুদ্ধি আছে।তাই হৃদিতা আরশাদ কে আরেকটু রাগিয়ে দিতে বলল।
আমি কেনো না বলব, বিয়েতে না বলার বিশেষ কারণ তো দেখছি না।বাবা যখন আমার সাথে শিহাবের বিয়ে ঠিক করেছে তাহলে তো নিশ্চয়ই কিছু ভেবে তারপর আমাদের বিয়ে ঠিক করেছে।তাই তোদের আমি দাওয়াত দিতে এসেছি। সামনের শুক্রবার আমার ও শিহাবের বিয়ে, তোরা সবাই গিয়ে পেট পুরে খেয়ে আসিস।
হৃদিতার কথা শুনে আরশাদ একদম শান্ত চোখে হৃদিতার দিকে তাকায়। সবাই তাকিয়ে আছে আরশাদের দিকে আর আরশাদ তাকিয়ে আছে হৃদিতার দিকে। আরশাদ খুবই শান্ত স্বরে হৃদিতার উদ্দেশ্যে বলল।
তোর মনে হয় ওই কুত্তার বা** লাশ দেখতে মন চাইছে তাই এই কথা বলছিস।ঠিক আছে তুই যখন চাইছিস আমারও কেনো সমস্যা নেই ওকে কবরে পাঠাতে।
সকলে জানে আরশাদের বলা কথাটি খুবই সিরিয়াস।ও শান্ত ভঙ্গিতে কথাটি বললেও এর গুরুত্ব অনেক তাই হৃদিতা শুকনো ঢোক গিলে আরশাদ কে বলল।
আমি শয়তানি করছি, আমার কোনো শখ নেই ওকে বিয়ে করার।আর ওকে মারার ও কোনো প্রয়োজন নেই। এমন কিছু ভাবতে হবে যেনো সাপ ও মরে আর লাঠিও না ভাঙ্গে।
হৃদিতার কথার সাথে রুদ্র ,নূর, আব্রাহাম ও রাজ সম্মতি প্রকাশ করে আরশাদ কে শান্ত করে বসিয়ে গভীর চিন্তায় ডুবে যায় ওরা সকলে। ওদের প্রধান লক্ষ্যই হলো কিভাবে ঝামেলা বিহীন হৃদিতার বিয়ে ভাঙ্গা যায়। কারণ ওদের খুব ভালোভাবে জানা আছে হৃদিতার বাবা কতটা কঠোর টাইপের।পরে দেখা যাবে হৃদিতা কে ওদের থেকে দূরে পাঠিয়ে দিবে।তাই ওরা বেশি বাড়াবাড়ি করতে চাই না।
এর মধ্যে সিরাত কিছু খাবার নিয়ে রুমে প্রবেশ করে। সিরাত রুমে প্রবেশ করার পরেও কারও ধ্যান ওর দিকে নেই সবাই কে চিন্তায় মশগুল থাকতে দেখে সিরাত সকলের উদ্দেশ্যে গলা খাঁকারি দিয়ে বলল।
কি হয়েছে তোমাদের সকলে একসাথে কোন ভাবনায় হারিয়ে গেছ।
সিরাতের কথা শুনে ধ্যান ভাঙ্গে সকলের।সিরাত ওদের সামনে খাবার রাগে কাওকে কিছু না বলতে দেখে সিরাত আবার বলল।
তোমাদের পার্সোনাল বিষয় হলে বলার দরকার নেই।
সিরাতের কথা শুনে হৃদিতা হাসি মুখে বলল।
এমন কিছু না যে তোমাকে বলা যাবে না,আসলে বাবা আমার মতের বিরুদ্ধে আমার বিয়ে ঠিক করেছে। কিন্তু যার সাথে বিয়ে ঠিক করেছে ওকে আমি পছন্দ করি না।তাই এই বিয়ে কিভাবে ভাঙ্গা যায় সেই কথায় চিন্তা করছি।
সিরাত হৃদিতার কথা শুনে ওর উদ্দেশ্যে বলল।
কোন কারণে তুমি ওই ছেলেকে পছন্দ করো না।
অনেক চিপকু স্বভাবের,আর আমার বাবার সামনে এক রুপ ও বাইরে অন্য রুপ ধারণ করে। আমার বাবার সামনে দুনিয়ার সবচেয়ে ভদ্র ছেলে হয়ে থাকে।আর বাইরে সবচেয়ে বেয়াদব।
হৃদিতার কথা শুনে সিরাত কিছু একটা ভেবে বলব।
আচ্ছা ওকি শুধু তোমার সাথে চিপকে থাকে নাকি অন্য মেয়েদের সাথেও একই রকম আচরণ করে।
ওই শয়তান সবার সাথে একই আচরণ করে। যেই মেয়েকে দেখে তারই পিছে পরে থাকে ।
তাহলে তো তোমার জন্য এই বিয়ে ভাঙ্গা খুবই সহজ,
সিরাতের কথা শুনে সকলে একসাথে বলে উঠলো।
কিভাবে,
খুব সহজ, তোমার বাবার সামনে ওর আসল চেহারা তুলে ধরো তাহলেই দেখবে তোমার বাবা নিজ থেকে বিয়ে ভেঙে দিবে।
এই চেষ্টা অনেক আগেও আমি করেছি, কিন্তু কিছুই করতে পারিনি।ও খুব চালাক ওর পিছনে যদি কোনো মানুষ লাগাই তাহলে কিভাবে জানি ও সব বুঝে ফেলে ও সাবধান হয়ে যায়।
হৃদিতার কথা শুনে সিরাত মুচকি হেসে বলল।
মানুষ লাগানোর কোনো প্রয়োজন নেই,আমরা এমন কিছু করব যে ও বুঝতেও পারবেনা আর ওর বিরুদ্ধে সকল প্রমাণ আমাদের হাতে থাকবে।
কথাটি বলেই রহস্যময় হাসি দেয় সিরাত,আর সিরাতের কথার অর্থ না বুঝতে পেরে সকলে ওর পানে তাকিয়ে থাকে।
#চলবে..