#তুমি_শুধু_গল্প_না_আমার_ভালোবাসা
#আমেনা_আক্তার
#পর্ব_৪৭
নূর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সামনের দিকে। নূরের সামনেই বসে আছে আয়শা চৌধুরী ও সারা।আর নূরের আশেপাশে বসে আছে ওর বন্ধুরা। কিন্তু ওরা রেস্টুরেন্টের অন্য একটি টেবিল বুক করে বসেছে নূর ও আয়শা চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে আছে।
নূর এতক্ষণ ওর বন্ধুদের সাথে বসে হৃদিতার বিয়ে কিভাবে ভাঙ্গতে হবে সম্পর্কে আলোচনা করছিল। কিন্তু তখনি হঠাৎ আয়শা চৌধুরী ও সারা ওদের সামনে দাঁড়িয়ে নূরের উদ্দেশ্যে বলল।
তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে,
নূর আয়শা চৌধুরীর কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে ফেলে ওরা সকলে। তখনি নূর জবাবে বলল।
হুম বলুন,
নূরের শান্ত স্বরে বলা কথাটিও যেনো সারার কাছে বিষাক্ত লাগলো তাই সারা তেড়ে যেতে নেয় নূরের দিকে। তখনি আয়শা চৌধুরী সারার হাত ধরে ওকে থামিয়ে দেয়। আয়শা চৌধুরী নূরকে খুবই শান্ত স্বরে বলল।
কথাটি খুব জরুরী
আয়শা চৌধুরীর কথার প্রতি উত্তরে নূর ভাব অলসহীন ভাবে বলল।
আমি কি বলেছি,আপনি আমার সাথে ফালতু কথা বলতে এসেছেন,যা বলার বলুন।
নূরের কথা শুনে আয়শা চৌধুরী ক্রোধে নিজের চোখ বন্ধ করে ফেললো। এবং শক্ত কন্ঠে নূরকে বলল।
আমি তোমার সাথে কিছু পার্সোনাল কথা বলবো।
যা বলার আমার বন্ধুদের সামনে বলুন,
নূরের কথা শুনে আয়শা চৌধুরী চোখ মুখ শক্ত করে আবার বলল।
তোমার বন্ধুদের সামনে বলা যাবে না,
নূর আর কিছু বলবে তার আগেই হৃদিতা ওকে ইশারা করে থামতে বলল।হৃদিতা ও ওর সকল বন্ধুরা অন্য একটি টেবিলে বসে।
আয়শা চৌধুরী ও সারা বসে নূরের বরাবর।ওরা বসতেই নূর বলল।
কি বলবেন বলুন,
আদিত্য আমার ছেলে, ওইদিন নিশ্চয়ই দেখেছ আদিত্য আমাকে মা বলে ডাকছিল।
তো আমি কি করতে পারি,
নূরের ভাব অলসহীন কথা শুনে আয়শা চৌধুরীর মাথা গরম হয়ে গেল। তবুও উনি নিজেকে যথা সম্ভব শান্ত রাখার চেষ্টা করে বলল।
কত টাকা লাগবে তোমার,
কথাটি বলেই আয়শা চৌধুরী ব্যাগ থেকে কিছু টাকার বান্ডিল বের করে নূরের সামনে রাখে। নূর শান্ত দৃষ্টিতে তাকায় টাকার দিকে। আয়শা চৌধুরী টেবিলের উপর রাখতেই সারা বলে উঠলো।
আমার মনে হয় এই টাকা যথেষ্ট তোমার মতো ছোট লোকের জন্য।এই টাকার জন্যই তো আমার আদিত্য কে ফাসিয়েছ। আমার আদিত্য কে তো এই টাকার জন্যই আমার থেকে দূর করতে চাইছ।তাই তোমাকে টাকা দিয়ে তোমার মনের ইচ্ছা পূর্ণ করে দিলাম। এবার তুমি আমার আদিত্যর জীবন থেকে একেবারের জন্য চলে যাবে। অবশ্য এই টাকা তোমার মতো ছোট লোকদের জন্য অনেক তবুও যদি তোমার আরো টাকার প্রয়োজন পরে তাহলে আমরা তাও দিবো। কিন্তু যদি তুমি আদিত্যর জীবন থেকে না সরে দাড়াও। তাহলে,
সারার কথা শুনে রাগে গজগজ করতে করতে পাশের টেবিল থেকে রুদ্র দাঁড়িয়ে বলল।
তাহলে কি?
রুদ্র দাড়াতেই নূর চোখের ইশারায় ওকে বসতে বলল। হৃদিতা রুদ্র কে জোড় করে বসিয়ে দিলো। তখনি নূর আয়না চৌধুরী ও সারার উদ্দেশ্যে বলল।
প্রথমত,আমি আপনার ছেলের কে না আপনার ছেলে আমার পিছে ঘুরছে। এবং দ্বিতীয়ত আমি আপনাদের থেকে বিত্তবান কম হতে পারি কিন্তু আবার বাবা মা আমার জন্য কম রেখে যায়নি।তাই নিজের টাকা নিজের কাছে রাখুন।আর আমার সামনে এই সকল তিক্ত বলি না আওড়িয়ে যা বলার আপনার ছেলেকে বলুন।
নূরের কথা শুনে সারা রাগে টগবগ করে উঠলো। এবং ও মাত্রা অতিরিক্ত চিল্লিয়ে বলল।
ছোটলোক কথাকার তোর সাহস কি করে হয় আমাদের সাথে উঁচু গলায় কথা বলার। তোর মতো একশো টাকে কিনার যোগ্যতা আছে আমাদের।তোর মতো মেয়ের সাহস কি করে হলো আমার আদিত্যর পিছনে পরার।ওই দিন রেস্টুরেন্টে তুই আমার আদিত্যর সাথে কি করছিলি।বল কি করছিলি আমার আদিত্যর সাথে।
রোমান্স করছিল,ওই দিন নূর দুলাভাই এর সাথে রোমান্স করছিল।
কথাটি পিছন থেকে বলে উঠলো হৃদিতা, আয়শা চৌধুরী ও সারা হৃদিতার দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে কিছু বলবে তার আগেই রেস্টুরেন্টের ভিতরে কিছু কালো পোশাকধারী বডিগার্ড প্রবেশ করল। বডিগার্ড গুলো পুরো রেস্টুরেন্ট ঘিরে ফেললো। বডিগার্ড গুলোকে দেখে সারা ও আয়শা চৌধুরী শুকনো একটি ঢোক গিলল।ওনারা ভালোভাবে জানেন এই বডিগার্ড গুলো কার। বডিগার্ড রেস্টুরেন্টের সকলকে বাইরে বের করে দিলো নূর ও ওর বন্ধুরা আর আয়শা চৌধুরী সারাকে বাদ দিয়ে। সকলে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হতেই সেখানে প্রবেশ করলো আদিত্য চৌধুরী।এই মুহূর্তে কেউ আদিত্য চৌধুরী কে আশা করে নি।
আদিত্য রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করে ওর মায়ের মুখোমুখি বসে পরলো। এবং খুব শান্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল।
তোমরা এখানে কার অনুমতিতে এসেছ,
আমার কোথাও যেতে হলে তোর অনুমতি নিয়ে যেতে হবে,
কথাটি রাগ মিশ্রিত স্বরে বলে উঠলো আয়শা চৌধুরী। আয়শা চৌধুরীর কথা শুনে আদিত্য আবার শান্ত স্বরে বলল।
না লাগবে না,তবে সেটি যদি আমার সাথে সম্পর্কযুক্ত না হয়। আমার ব্যক্তিগত কিছুতে আমি কারও হস্তক্ষেপ পছন্দ করি না।আর তুমি সেখানে আমার বউকে কিনতে এসেছ।এত টাকা তোমার যে তুমি আদিত্য চৌধুরীর বউকে কিনতে চাও। আমিও দেখতে চায় কার টাকা বেশি তোমার না আমার।বলো তোমার কত টাকা আছে তোমার কাছে।
আদিত্যর কথা শুনে আয়শা চৌধুরীর মুখ অপমানে থমথমে হয়ে যায়। আয়শা চৌধুরী কিছু না বলে সারাকে নিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে যায়।
আয়শা চৌধুরী বের হতেই আদিত্য সম্পূর্ণ শান্ত দৃষ্টিতে তাকায় নূরের দিকে এবং নূরের উদ্দেশ্যে বলল।
গুড আমি তোমার কাছ থেকে এটি আশা করেছিলাম।আমি খুব ভালোভাবে জানতাম তুমি আমার মায়ের দেওয়া প্রস্তাব কখনো মানবে না।
নূর আদিত্যর কথায় ওর দিকে ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে বলল।
আর যদি মেনে নিতাম তাহলে,
তাহলেও আমি তোমাকে ছাড়তাম না, এবং মায়ের প্রস্তাব মানার জন্য তোমার জন্য শাস্তির ব্যবস্থা করতাম রোমান্টিক শাস্তি,
আদিত্যর কথা শুনে নূর বিরবির করে বলল।
অসভ্য,
___________________________________
কেটে গেছে কিছু দিন,হৃদিতার কাবিন আজ। কিন্তু হৃদিতার মধ্যে সামান্য পরিমাণের ও সংশয় নেই।আর না হৃদিতা উদ্বিগ্ন হয়ে আছে।হৃদিতার বাবা মেয়ের শান্ত মেজাজ দেখে ধরে নিয়েছে হৃদিতা বিয়ের জন্য রাজি ওনার হৃদিতা কে রাজি করাতে বিশেষ কিছু করতে হবে না। শিহাব এর মধ্যে অনেকবার হৃদিতা দের বাড়িতে এসে গেছে। এবং হৃদিতার সাথে আলাদা কিছু মুহূর্ত কাটানোর জন্য। হৃদিতা শিহাবের সাথে স্বাভাবিক আচরণ করলেও ওর সাথে কোথাও যেতে রাজি হয়নি।মূলত হৃদিতা ওর বাবাকে পরিষ্কার ভাবে বলে দিয়েছে।
শিহাবের সাথে যেখানে যাওয়ার বিয়ের পর যাবে শিহাব এখন ওর জন্য বেগানা পুরুষ তাই এখন ও শিহাবের সাথে কোথাও যেতে পারবে না।শিহাব এই কথা শুনে নিরাশ হলেও মনে মনে এই কথা ভেবে খুশি হয়েছে বিয়ের পর হৃদিতার সব দেমাগ বের করে ছাড়বে। কিন্তু শিহাব তো আর যানে না ওর সাথে কি হতে চলেছে সামনে।
হৃদিতাকে বধূ রুপে সাজানো হয়েছে খুব সুন্দর ভাবে।একটু পরেই ওর আর শিহাবের কাবিন পড়ানো হবে।কাবিনে শুধু হৃদিতা ও শিহাবের ঘনিষ্ঠ কিছু আত্নীয়রা আছে।আজ শুধু কাবিন হলেও শিহাব মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে এসেছে আজ যেই কোনো ভাবে রাতে হৃদিতার সাথে থেকে হৃদিতাকে নিজের করে নিবে।
হৃদিতা ও শিহাব কে মুখোমুখি এনে বসানো হয়েছে।শিহাব শয়তানি হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে হৃদিতার দিকে।আর হৃদিতা বসে আছে পুরো চিল মুডে।কাজি যখনি বিয়ে পড়ানো শুরু করবে তখনি দরজার সামনে থেকে আরশাদ বলে উঠলো।
আমাদের রেখে বিয়ে পড়ানো হচ্ছে,আমরা হৃদিতার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আমাদের ছাড়া এই বিয়ে পড়ানো সম্ভব না।
আরশাদ ও হৃদিতার বাকি বন্ধুদের দেখে হৃদিতার বা ও শিহাব কিছুটা বিচলিত হয়ে যায়।হৃদিতার বাবা হৃদিতার দিকে তাকিয়ে কঠোর গলায় বলল।
তোমাকে না আমি মানা করেছি তোমার বন্ধুদের কে এখানে আসতে না বলতে।
হৃদিতা তার বাবার কথায় ভাব অলসহীন ভাবে বসে থাকে। তখন রাজ বলে উঠলো।
আমরা না আসলে আপনার কখনো না হওয়া হবু জামাতার আসল চেহারা দেখবেন কিভাবে।
রাজের কথা শুনে শিহাব বুঝে ফেলে ওর বিরুদ্ধে নিশ্চয়ই হৃদিতা কেনো প্রমাণ জোগাড় করেছে।এই জন্যই হৃদিতা ওদের বিয়ের বিষয়ে কেনো কিছু বলে নি। শিহাব হৃদিতার দিকে তাকিয়ে দেখে হৃদিতা ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে। শিহাব নিজেকে বাচাতে হৃদিতার বাবাকে বলল।
আন্কেল ওরা নিশ্চয়ই আমার ও হৃদিতার বিয়ে ভাঙ্গতে এসেছে।ওরা চাই না আমার ও হৃদিতার বিয়ে হোক আপনি ওদের গাড দিয়ে ওদের বাড়ি থেকে বের করে দিন।
হৃদিতার বাবা গাড কে ডাকার আগেই দরজার সামনে থেকে পুলিশ অফিসার বলে উঠল।
আপনি কি আমাদের ও বাড়ি থেকে বের করে দিবেন,
পুলিশ থেকে হৃদিতার বাবা অবাক হয়ে যায়।আর শিহাব অনেক ঘাবড়ে যায় পুলিশ দেখে।হৃদিতার বাবা মনে করে হৃদিতার বন্ধুরা হয়তো পুলিশ কে এটি বলে এনেছে যে হৃদিতার বিয়ে জোড় করে পরানো হচ্ছে।তাই তিনি আগে বেড়ে বললেন।
আপনাদের নিশ্চয়ই ওরা মিথ্যা কথা বলে এখানে নিয়ে এসেছে।ওরা নিশ্চয়ই বলেছে আমার মেয়েকে আমি জোড় করে বিয়ে দিচ্ছি।
পুলিশ অফিসার হৃদিতার বাবার কথা শুনে বলল,
আপনি ভুল বুঝছেন ওরা এই বিষয়ে আমার কাছে যায়নি আপনি যেইটা ভাবছেন।
হৃদিতার বাবা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল।
তাহলে কেনো গিয়েছে,
ওরা আপনার হবু জামাতার নামে রিপোর্ট লিখেছে। আপনার মেয়ের হবু জামাই অর্থাৎ মি.শিহাব চোরা কারবারের সাথে জড়িত এবং মি.শিহাবের একাধিক মেয়ের সাথে অবৈধ সম্পর্ক আছে এর সকল তথ্য আমাদের কাছে আছে।আপনি চাইলে দেখতে পারেন।
পুলিশ অফিসারের কথা শুনে হৃদিতার বাবা গম্ভীর গলায় বলল।
হুম আমি দেখতে চাই,
পুলিশ অফিসার সকল প্রমাণ দেখায় হৃদিতার বাবাকে হৃদিতার বাবার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। এদিকে শিহাবের বাবা মা হৃদিতার বাবার কাছে এসে হাত জোড় করে বলছে ওনার ছেলে কিছুই করেনি। শিহাবকে বাঁচাতে বলছে হৃদিতার বাবাকে। কিন্তু কঠোর ব্যক্তির অধিকারী হৃদিতার বাবা তাদের কেনো কথা না শুনে শিহাব কে পুলিশের হাতে তুলে দিলেন। শিহাব ক্রোধ ভরা দৃষ্টিতে হৃদিতার দিকে তাকিয়ে পুলিশের সাথে চলে গেল..
#চলবে..
#তুমি_শুধু_গল্প_না_আমার_ভালোবাসা
#আমেনা_আক্তার
#পর্ব_৪৮
শামসুজ্জামান খাটের উপরে বসে কান্না করছে। নিজের করা ভুলের জন্য,হয়তো এখন নিজের করা ভুলের মাশুল গুনছে আর প্রায়শ্চিত্তের আগুনে জ্বলছে।এ ছাড়া এখন কিছুই করার নেই শামসুজ্জামানের। কিছুদিন আগেই শামসুজ্জামান অনেক বড় একটি এক্সিডেন্ট করে। এক্সিডেন্টে শামসুজ্জামানের দুটি পা অবশ হয়ে গেছে। এখন নিজের থেকে থেকে উঠে দাঁড়ানোর সামর্থ্য নেই শামসুজ্জামানের।
এক্সিডেন্ট হওয়ার পর পরই শামসুজ্জামানের দ্বিতীয় স্ত্রী শামসুজ্জামান কে ডিভোর্স দিয়ে চলে যায়। শামসুজ্জামান এর থেকে বেশি কিছু আশাও করেননি নিজের দ্বিতীয় স্ত্রীর কাছ থেকে। কিন্তু পা দুটো অপশ হওয়ার পর থেকে যেনো রেহানা বেগমকে আরো বেশি মনে পরছে।যেই করেই হোক ওনি রেহানা বেগমকে কাছে চাইছে। অন্তত নিজের করা ভুলের জন্য একবার হলেও রেহানা বেগম ও নিজের সন্তানদের কাছে ক্ষমা চাইতে চাইছেন।ওনার করা ভুলের শাস্তি এখন ওনি যথাযথ পাচ্ছেন।ওনি বুঝে গেছেন খুব ভালোভাবে এই শাস্তি হলো বউ রেখে বাইরে পরকিয়া করার শাস্তি। নিজের মেয়ের গায়ের রং নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করার শাস্তি।এই জন্যই হয়তো আল্লাহ তায়ালা ওর পা দুটো অপশ করে দিয়েছে।
শামসুজ্জামান কখনো কখনো ভাবেন যদি রেহানা থাকতে ওর এই অবস্থা হতো তাহলে কি রেহানা বেগম ও ওনাকে এভাবে ফেলে চলে যেতেন। কথাটি ভাবতেই শামসুজ্জামানের ভিতর থেকে উত্তর আসে।
না এটি কখনো হতো না, রেহানা বেগম কখনো ওনাকে একা ফেলে যেতেন না। রেহানা বেগম তো ওনাকে ভালোবাসতেন।এই কথা অনেক আগেই উপলব্ধি করেছেন শামসুজ্জামান তাই হয়তো এত বড় অন্যায় করতে একবারও বুক কাঁপে নি শামসুজ্জামানের।উনি ভেবেছিলেন ভালোবাসার মানুষ যত বড় ভুল করুক না কেনো ভালোবাসার মানুষ কে কি কখনো ছেড়ে যাওয়া যায়।এই কথাটি ভেবেই হয়তো ভুল করেছিলেন শামসুজ্জামান। কিন্তু তিনি হয়তো জানতেন না রেহানা বেগমের কাছে ভালোবাসার থেকেও নিজের আত্মসম্মান বেশি গুরুত্বপূর্ণ।যদি জানত তাহলে হয়তো এই ভুল কখনো করতেন না। এখন শামসুজ্জামানের এই অবস্থায় ওর পাশে কেউ নেই। শামসুজ্জামান এখন নিঃস্ব ওর আগে পিছে কেউ নেই। নিজের করা কর্মের ফল এখন সারাজীবন ভোগ করতে হবে শামসুজ্জামান কে।
___________________________________
নীলয় কে আজ আবার বাড়িতে নিয়ে এসেছে রেহানা বেগম। রেহানা বেগম যখন শুনেছে নূর আজ বাড়িতে থাকবে না তখনি ওনি নিলয়কে বাড়িতে নিয়ে আসার কথা বলে নূরকে।নূর নীলয় কে এখানে রেখে যেতে সামান্য পরিমাণও সংকোচে বোধ করে না।নূর যখন দেখে ওর ভাইকে কেউ মায়ের স্নেহ দিচ্ছে তখন প্রশান্তিময় হাওয়া বয়ে যায় ওর হৃদয় জুড়ে।
নীলয় বসে আছে খাবার টেবিলে।সাইরা ও মহিমা ও খাবার টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছে। মহিমা খুবই বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আছে নিলয়ের দিকে।ওর কেনো যেনো সহ্য হয়না নিলয়কে।কেনো যে ওর মা বারবার নিলয়কে এখানে নিয়ে আসে। শুধু কি নিয়ে আসে নিলয় ও রেহানা বেগম কে দেখে মনে হয় ওরা দুজন মা ছেলে।
রেহানা বেগম ওদের জন্য খাবার নিয়ে আসে। খাবার দেখেই নিলয় অনেক খুশি হয়ে যায়। রেহানা বেগমের হাতের খাবার অনেক মজা লাগে ওর কাছে।তাই রেহানা বেগম কে দেখতেই নিলয় নিজের প্লেট আগে বাড়িয়ে দেয়।
মহিমা বিরক্ত হয়ে বলল।
ওকি জীবনও খাবার খাইনি, খাবার দেখে এই রকম আচরণ করছে কেনো।
মহিমার কথা শুনে নিলয় নিজের প্লেট সরিয়ে ফেললো।রেহানা বেগম মহিমার আচরণ দেখে আশা হত হয়।
মহিমার খাবার শেষে মহিমা রুমে বসে আরাম করছে।তখনি রেহানা বেগম মহিমার রুমে প্রবেশ করে।মাকে দেখে মহিমা সোজা হয়ে বসে। রেহানা বেগম মহিমার কাছে এসে শক্ত গলায় বলল।
তোকে না আমি নিলয়ের সাথে খারাপ আচরণ করতে না করেছিলাম,
আমার ওকে দেখতে মনে চায়না,
আচ্ছা আমি মানলাম ওকে তোর দেখতে মন চাইনা। কিন্তু তুই কি জানিস নিলয় আগে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ছিল।চার বছর ধরে নিলয়ের মানসিক সমস্যা।
রেহানা বেগমের কথা শুনে মহিমা অবাক চোখে মায়ের দিকে তাকায়। কারণ ও জানতনা নিলয় যে জন্ম থেকে ভারসাম্য হীন না। তখনি রেহানা বেগম আবার বললেন।
নিলয় আগে আমাদের মতো স্বাভাবিক ছিল। নিলয়ের ও একটি সুন্দর পরিবার ছিল।ওই পরিবারে ছিল ও নূর আর…
আর?
আর নিলয়ের স্ত্রী কায়নাত,
নিলয়ের স্ত্রী আছে,
আছে না ছিল,নিলয় নিজের স্ত্রী কে প্রচুর ভালোবাসত,তোর আর আমার স্বামীর ভালবাসার মতো ভালোবাসা না।এটি ছিল সত্যকার অর্থে ভালোবাসা। ভালোবাসার জন্য নিলয়ের স্ত্রীর কখনো সন্তান হবে না যেনেও যাকে পূর্ণ সম্মান দিয়ে নিজের স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেছিল। ডাক্তার সাফ সাফ বাচ্চা হওয়ার বিষয়ে না করলেও বিয়ের চার বছরের মাথায় ওর স্ত্রী সন্তান সম্ভাবনা হয়। ওইদিন অনেক খুশি ছিল ও আর নূর। পাগলামী করছিল নিলয়, ওকে দেখে মনে হচ্ছিল ও বোধহয় খুশিতে পাগল হয়ে গেছে।পুরো এলাকায় ওইদিন নাকি নিলয় মিষ্টি বিতরণ করেছে। কিন্তু ভাগ্য ভাগ্যের উপর কি কারও জোড় চলে, চলে না।তোমনি নিলয়ের ভাগ্য নিলয়ের সঙ্গ দেয়নি।
নিলয় যখন ওর স্ত্রী কে নিয়ে ডাক্তারের কাছে চেকাপ করাতে যাচ্ছিল তখন ঘটে অনেক বড়ো দুর্ঘটনা।
মায়ের কথা এক ধ্যানে শুনছিলো মহিমা, রেহানা বেগম কথাটি বলে থামতেই মহিমা জিজ্ঞেস করলো।
কেমন দুর্ঘটনা মা,
এক ভয়াবহ এক্সিডেন্ট, নিলয়ের গাড়ির সাথে একটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এক্সিডেন্টে নিলয়ের গাড়ি থেঁতলে যায়। ওইখানে নিলয়ের স্ত্রী কায়নাত দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মারা যায়। নিলয়ের অবস্থা ও অনেক খারাপ ছিল। চিরদিন নিলয় হসপিটালে সেন্সলেস অবস্থায় ছিল।যখনি নিলয়ের জ্ঞান ফিরে তখন নিলয় সর্ব প্রথম নিজের স্ত্রীর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। ভাইয়ের করুন অবস্থা দেখে নূর ভাইকে মিথ্যা কথা বলতে বাধ্য হয়।ও বলে কায়নাত ভালো আছে কিন্তু ওর শরীর এখনো কিছুটা খারাপ।তাই কায়নাত কে ওর বাবা মায়ের বাড়িতে রেখে এসেছে নূর।নিলয় ও নিজের বোনের কথা বিশ্বাস করে ফেলে।
কিন্তু যখনি নিলয় কিছুটা সুস্থ হয় তখন নিজের স্ত্রীর সাথে দেখা করার জেদ করতে থাকে। তখন নূর বাধ্য হয়ে ভাইকে সত্য কথা বলতে।নিলয় যখন নিজের স্ত্রীর করুন পরিনতির কথা জানতে পারে।তখনি নিলয় নিজের সেন্স হারিয়ে ফেলে এবং তিনদিন পর চোখ খুলেই ও পাগলামো করতে লাগে। তখন থেকেই নিলয় নিজের মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে।
মহিমা স্তব্ধ হয়ে শুনছিলো কথাগুলো,ও কখনো ভাবেনি নিলয়ের সাথে এমন কিছু ঘটতে পারে। মহিমা নিজের স্বামী ও বাবাকে দেখার পর ভেবেছিল সব পুরুষ এক। কিন্তু না নিলয়ের অতীত সম্পর্কে শুনে এখন বুঝতে পারছে সব নারী যেমন এক নয় তেমনি সব পুরুষ ও এক নয়। নিলয়ের সাথে করা আচরণের জন্য এখন অপরাধ বোধ জাগ্রত হচ্ছে মহিমার মনে।ও কিভাবে একটি মানুষ সম্পর্কে না জেনে তার সাথে খারাপ আচরণ করতে পারে।এতো খারাপ কবে থেকে থেকে হয়ে গেল ও।
___________________________________
হৃদিতার বিয়ে ভাঙ্গার আনন্দে সবাই এখন সেলিব্রেশন করছে।হৃদিতার আনন্দে আজ সিরাত ও অংশ নিয়েছে।সিরাতের জন্যই তো এত সহজে শিহাবের আসল চেহারা সবার সামনে তুলে ধরতে পেরেছে।
হৃদিতা হাস্যোজ্জ্বল মুখে সিরাত কে বলল।
অনেক অনেক ধন্যবাদ, তুমি যদি শিহাবের ফোন হ্যাক করার আইডিয়া না দিতে তাহলে ওর আসল চেহারা বাবার সামনে আনতে আমাদের অনেক কষ্ট করতে হতো।
আমাকে ধন্যবাদ দেওয়ার কেনো কারণ নেই,আমি শুধু আইডিয়া দিয়েছি যা করার তোমরাই করেছ।
সিরাতের কথা শেষ হতেই রুদ্র বলল।
অনেক হয়েছে তোমাদের ধন্যবাদ দেওয়া নেওয়া এখন থামো নাহলে সেলিব্রশনের সব মজা তোমাদের ধন্যবাদ দেওয়া নেওয়াতেই শেষ হয়ে যাবে।
রুদ্রের কথা শুনে সকলে সহমত প্রকাশ করল। এবং নিজেদের পার্টি শুরু করল। ওদের পার্টি চলা কালীন নূরের ফোন সশব্দে বেজে উঠল নূর সকলকে উদ্দেশ্যে করে বলল।
আমি আসছি,
নূর সাইডে গিয়ে অচেনা নাম্বার দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেললো।এই সময় ওকে অচেনা নাম্বার থেকে কে ফোন করেছে কথাটি ভেবে।নূর ফোন রিসিভ করে কানে ধরে বলল।
হ্যালো কে বলছেন?
ওপাশ থেকে আদিত্য মুচকি হাসলো নূরের কন্ঠস্বর শুনে। এবং নূরের উদ্দেশ্যে বলল।
তোমার একমাত্র স্বামী,
নূর নিজের ভ্রু কুঁচকে ফেললো আদিত্যর কন্ঠ শুনে এবং আবার বলল।
কেনো ফোন দিয়েছ,
আদিত্যর সোজা জবাব,
বউয়ের সাথে প্রেম করতে,
আদিত্যর কথা শুনে নূর খুবই শান্ত স্বরে বলল।
আমি এখন ব্যস্ত,
আমি খুব ভালোভাবে জানি তুমি এখন ব্যস্ত।আমি তোমাকে এখন ডিস্টার্ব করব না। কিন্তু তোমার বন্ধুদের সাথে পার্টি শেষে বাহিরে দেখবে আমার পাঠানো একটি সাদা রংয়ের গাড়ি ধার করানো আছে।ওই গাড়িতে চুপচাপ ওঠে বসবে। এবং অবশ্যই গাড়িতে ওঠার আগে আমাকে ফোন করে কনফার্ম হয়ে তারপর গাড়িতে উঠবে।ওই গাড়ি সোজা তোমাকে আমার কাছে নিয়ে আসবে।
কথাটি বলেই আদিত্য নূরকে কিছু বলতে না দিয়ে ফোন কেটে দেয়।নূর আদিত্য কে এভাবে ফোন কাটতে দেখে রাগের মাথায় বিরবির করে বলল।
শয়তান, শুধু আমাকে হুকুম দেয়।
নূর আদিত্যের সাথে কথা বলে। আবার ওর বন্ধুদের সাথে আড্ডায় মেতে ওঠে।
সকলে মিলে অনেক মজা করে একসাথে। কিন্তু ওরা বোধহয় হয়তো জানে না এখন সবাই যতটাই আনন্দিত হয়তো কদিন পর এর থেকে বেশি কষ্ট পেতে হবে। হয়তো এক ঝড়ো হওয়ায় সবার জীবন এলোমেলো হয়ে যাবে।হয়তো এই ঝড় ওদের জীবনের নতুন সূচনা ঘটাবে নয়তো সমাপ্তি।
#চলবে…