তুমি_শুধু_গল্প_না_আমার_ভালোবাসা পর্ব-৪৯+৫০

0
54

#তুমি_শুধু_গল্প_না_আমার_ভালোবাসা
#আমেনা_আক্তার
#পর্ব_৪৯

আয়না আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে গুনগুন করে গান গাইছে।আর তৈরি হচ্ছে বান্ধবীদের সাথে মেলায় যাওয়ার জন্য। আয়নার মেলায় যেতে অনেক ভালোলাগে। কিন্তু মেলায় থাকা ভিড় অনেক বিরক্ত লাগে।তাই সব সময় রাজ কে সাথে নিয়ে মেলায় যায় আয়না যাতে মেলাতে থাকা খারাপ মানুষদের খারাপ স্পর্শ থেকে বাঁচতে পারে।আজ শুনেছে বেশি ভিড় থাকবে না।তাই আজ বান্ধবীদের সাথে মেলায় যাচ্ছে।আজ ভাইকে তো আর সাথে নিয়ে যাবে না ভাইকে সাথে নিয়ে গেলে বান্ধবীরা মেলায় জিনিসপত্র কম দেখে ওর ভাইকে বেশি দেখে ।তাই আজ আয়না শুধু বান্ধবীদের সাথে যাবে মেলায়।

ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক লাগিয়ে। চোখে গাঢ় করে কাজল দিয়ে হিজাবটি সুন্দর ভাবে মাথায় বেঁধে নিলো আয়না। মুচকি হেসে নিজেকে একবার আয়নায় দেখে থমকে গেল আয়না। এইভাবে তো ও এক সময় আব্রাহামের জন্য সাজতে চাইতো।আয়না চাইতো নিজের স্বপ্নের পুরুষের সাথে বিয়ে হওয়ার পর। প্রতিদিন শাড়ি পরে এই সাজে আব্রাহামের সামনে নিজেকে ফুটিয়ে ফুলবে। কিন্তু ভাগ্য, ভাগ্য কি সবার সকল আশা পূর্ণ করে।করে না তাই আয়না বাধ্য হয়ে নিজের প্রিয় স্বপ্ন গুলোর থেকে আব্রাহামের নাম কেটে দিয়েছে।যে ওর ভালোবাসার মূল্য দিতে যানে না তাকেও আয়না মূল্য দিবে না। এখন শুধু নিজেকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে চায় আয়না।

কথাগুলো ভেবে নিজের পার্স ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে যায় বাড়ি থেকে।বাড়ি থেকে বের হয়ে একটি রিক্সায় চড়ে বসে আয়না। রিক্সা চলছে আয়না এদিক সেদিক তাকিয়ে রাস্তায় ঘটা বিভিন্ন ঘটনা পর্যবেক্ষণ করছে। কিন্তু আয়না জানেনা ওকে কেউ ফলো করছে। যখন আয়না বাড়ি থেকে বের হয়েছে তখন থেকে। হুম আয়নাকে ফলো করছে আব্রাহাম।অন্য একটি রিক্সায় চড়ে যেনো আয়না ওকে দেখলেও না চিনে তাই নিজেকে ভালোভাবে আবৃত করে এসেছে। যখন আয়না বাড়ি থেকে বের হয়েছে তখন কিছুক্ষণ আব্রাহাম পলকহীন ভাবে তাকিয়ে ছিল আয়নার দিকে। কিন্তু ও যে তাকাতেও পারবে না আয়নার এইভাবে।দিকে কারণ আয়না এখনো ওর জন্য হালাল হয়নি। আয়নার কাছে ও যে পরপুরুষ। শুধু ভাইয়ের বন্ধু হওয়ার উসিলায় যে আয়নাকে দেখার অনুমতি ওর নেই। তবুও যে অবাধ্য মন মানতে চায় না। নিজের অনুভূতির কাছে বারবার হেরে যেতে হয় ওকে।

আয়নার রিক্সা এসে থামলো মেলার সামনে। মেলায় প্রবেশ করার মূল গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আয়নার বান্ধবীরা।আয়না নিজের বান্ধবীদের দেখে হাসি মুখে এগিয়ে গেল তাদের দিকে। আয়নার বান্ধবীরা বোধহয় আয়নাকে একা দেখে এতটা খুশি হয়নি।তাই আয়না ওদের সামনে যাওয়ার পরেও আয়নার পিছনে কাওকে খুঁজতে লাগলো।আয়না নিজের বান্ধবীদের কাওকে খুঁজতে দেখে বলল।

এই তোরা কাকে খুজছিস?

তোর ভাইকে সঙ্গে নিয়ে আসিস নি।

নাহ,

আয়নার ছোট্ট উত্তরটি শুনে আয়নার বান্ধবীরা একসাথে চেঁচিয়ে বলল।

কেনো?

কারণ তোরা মেলার জিনিস কম আমার ভাইকে বেশি দেখিস, এমনিতেও আমার ভাইয়ের উপর লাইন মেরে এখন কিছু করতে পারবি না। আমার ভাই বুক হয়ে গেছে। ভাইয়া আমার জন্য ভাবি খুঁজে নিয়েছে।তাই তোদের জন্য এটাই ভালো হবে আমার ভাইয়ের পিছু ছেড়ে দে।

আয়নার কথা শুনে ওর বান্ধবীদের মন খারাপ হয়ে গেল। আয়না ওদের বিশেষ পাত্তা না দিয়ে সকলের সাথে মেলায় প্রবেশ করলো।আজ মোটামুটি ভিড় আছে মেলায় কিন্তু এতটাও না যে এক জনের শরীরের উপর আরেকজনের ঢলে পরতে হবে। শান্তি মতো আজ মেলায় ঘুরা যাবে।

আয়না মেলার এক একটি দোকান থেকে নিজের পছন্দের জিনিস নেওয়ার চেষ্টা করছে। ঘুরে ঘুরে দেখছে নিজের জন্য কি নেওয়া যায়। শুধু কি নিজের জন্য ওর বাবা মা আর ভাইয়ার জন্যও তো কিছু নিতে হবে যেই জিনিস দেখে তাদের মুখে হাসি ফুটবে। কথাটি ভেবে আগে আয়না নিজের পরিবারের মানুষের জন্য বিভিন্ন জিনিসপত্র বাছাই করছে। আয়নার সাথে ওর বান্ধবীরাও নিজেদের জন্য কেনাকাটা করছে।

দূর থেকে আয়নার সকল গতি বেগ লক্ষ্য করছে আব্রাহাম। মুচকি হেসে আব্রাহাম আয়নার দিকে তাকিয়ে আছে। আর দেখছে আয়নার আশেপাশে কোনো ছেলে ঘুরঘুর করে কিনা।অথবা কোনো ছেলে মেলার সুযোগ নিয়ে আয়নাকে খারাপ ভাবে স্পর্শ করতে চাইছে কিনা।বলতে গেলে আব্রাহাম এখন আয়াতের বডিগার্ডের দায়িত্ব পালন করছে।
___________________________________
কলেজ ক্যাম্পাসে বসে আড্ডা দিচ্ছে আরশাদ, রুদ্র, নূর, হৃদিতা ও রাজ।আজ অনেকদিন পর ওরা ভার্সিটিতে পা রেখেছে।তাই ক্যাম্পাসে বসে ওরা জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে এখন।রাজ ওদের মাঝে আব্রাহাম কে না দেখতে পেয়ে সকলের উদ্দেশ্যে বলল।

আব্রাহাম কোথায় ও এখনো আসছে না কেনো?

মূলত এখানে উপস্থিত রাজ ছাড়া সকলেই যানে আব্রাহাম কোথায় গেছে। কিন্তু রাজ কে কি করে বলবে আব্রাহাম ওর বোনের পিছু পিছু মেলায় গিয়েছে তাই আরশাদ বলল।

ওর কিছু জরুরী কাজ আছে ও পরে আসবে,

আরশাদের কথায় রাজ ভ্রু কুঁচকে ফেললো। এবং বলল।

এমন কি জরুরী কাজ যেটার সম্পর্কে তোরা জানিস আমি জানিনা।

রাজের কথা শুনে আরশাদ কিছু বলবে তার আগেই নূর স্পষ্ট ভাবে জবাবে বলল।

আব্রাহাম নিজের প্রিয়তমার সাথে দেখা করতে গিয়েছে।যাকে ও প্রচুর ভালোবাসে।

নূরের কথা শুনে রাজ হতভম্ব হয়ে তাকায় নূরের দিকে। নূর কি এটা শয়তানি করে বলছে।নাকি ও সিরিয়াস,নূরের চেহারা দেখে তো মনে হচ্ছে না ও শয়তানি করছে। নূরের বাকি বন্ধুরাও ওর দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।রাজ দাঁতে দাঁত চেপে নূরের উদ্দেশ্যে বলল।

কি বলছিস এই সব,

নূর ভাব অলসহীন ভাবে উত্তরে বলল।

ঠিকই বলেছি আমি,রাজ একদিন না একদিন এই কথা জানবেই তাহলে আজ কেনো না।ওকে যত দেড়ি করে বলা হবে বিষয়টিতে তত বেশি কম্পিটিশন বাড়বে। আব্রাহাম মাথা মোটা ও নিজের বন্ধুত্বের জন্য নিজের ভালোবাসা বলিদান দিতে চাচ্ছে। কিন্তু আমরা তো ওর মতো মাথা মোটা না।ওর কথা শুনে অনেক চুপ থেকেছি। এখন আর না ও রাজ কে কিছু বলুক আর না বলুক কিন্তু আমাদের অবশ্যই বলা উচিত।

রাজ নূরের কথা শুনে আশ্চর্য হয়ে গেল। রাজ নূরকে উদ্দেশ্যে করে বলল।

কি বলছিস তুই,কি জানানোর কথা বলছিস আমাকে।আর আব্রাহামের প্রিয়তমা মানে,কে ওর প্রিয়তমা।আর আব্রাহাম নিজের ভালোবাসা বলিদান বা কেনো দিবে।তোরা সব কিছু জানিস কিন্তু আমি কিছু জানিনা।

রাজের কথার প্রতি উত্তরে নূর কিছু বলবে তার আগেই পিছন থেকে নূরের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো।

ম্যাম ভাই আপনার সাথে কথা বলতে চায়।ভাই আপনার মোবাইলে অনেক বার ফোন দিয়েছে কিন্তু আপনি ফোন রিসিভ করেননি।

আরিফের কথা শুনে নূর আরিফের হাত থেকে মোবাইল নিয়ে নিজের কানে চেপে ধরলো।

তখনি ওপাশ থেকে শুনা গেল আদিত্যর হুংকারিত কন্ঠ।

ফোন কোথায় থাকে তোমার? এতগুলো ফোন দেওয়ায় পরেও রিসিভ করোনি কেনো।

ফোন ভুল করে বাসায় রেখে এসেছি,

আদিত্য নূরের কথা শুনে নিজেকে কিছুটা শান্ত করে বলল।

এমন ভুল যেনো দ্বিতীয় বার না হয়,আর আজ বাইরে ঘুরা ফেরা করার দরকার নেই।আজ আনন্দ মেলায় গন্ডগোল হবে। এবং শহরেও কিছু জায়গায় ও গন্ডগোল হবে।তাই তুমি মেলা থেকে দূরে থাকবে ভুলেও সেখানে যাওয়ার কেনো প্রয়োজন নেই। আমার গাড়ি ভার্সিটির বাইরেই থাকবে ভার্সিটি ছুটি হওয়ার পর তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দিবে।

ঠিক আছে,

কথাটি বলতেই আদিত্য ফোন কেটে দিলো। তখনি হৃদিতা দুষ্টু হাসি দিয়ে বললো।

দুলাভাই এমন কি রোমান্টিক কথা বলার জন্য ফোন দিয়েছে যার জন্য তার সেক্রেটারি কে এখানে পাঠাতে হলো।

এমন কোনো কথা বলার জন্য আমাকে ও ফোন করেনি যা শুনে তুই মজা পাবি। কোথায় যানো মেলা হচ্ছে সেই মেলা থেকে দূরে থাকতে সেখানে নাকি গন্ডগোল হবে।

নূরের কথা শুনে রাজ অস্থির হয়ে বলল।

কোন মেলার কথা বলেছে,

আনন্দ মেলা,

নূরের কথা শুনে সকলের মাথায় যেনো আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। কারণ আয়না ও আব্রাহাম তো ওই মেলাতেই আছে।রাজ সময় ব্যয় না করে আয়নার মোবাইলে ফোন লাগায়। কিন্তু আয়না মোবাইল রিসিভ করছে না।

রাজের অবস্থা দেখে নূর অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল।

রাজ এমন করছে কেনো।

কারণ আয়না ওর বান্ধবীদের সাথে আনন্দ মেলায় গিয়েছে।

এর মধ্যেই রাজ আরো অস্থির হয়ে বলল।

আয়না ফোন তুলছে না,

রাজের কথা শুনে আরশাদ বলল।

আব্রাহাম ও মেলাতেই আছে,আমি ওকে ফোন করে বলে দিচ্ছি।

আরশাদের কথা শুনে রাজ কিছুটা অস্থির হলেও এখন ওর অন্য কিছু ভাবতে মন চাইছে না। আরশাদ ফোন করে আব্রাহামের ফোনে। আব্রাহাম এতক্ষণ ধরে আয়নার পিছু পিছুই ঘুরছে। কিন্তু আয়না একবারের জন্যও আব্রাহাম কে দেখতে পায় নি। আব্রাহাম অদৃশ্য ভাবে আয়না কে রক্ষা করে যাচ্ছে খারাপ মানুষ থেকে।আয়না এখন একটি দোকানে দাঁড়িয়ে কিছু কেনাকাটা করছে। তখনি আব্রাহামের ফোনটি বেজে উঠল। আব্রাহাম ফোন রিসিভ করে কিন্তু আওয়াজের জন্য কিছুই শোনা যাচ্ছে না। আব্রাহাম একটি সাইডে চলে যায় তখনি আরশাদ আব্রাহাম কে উদ্দেশ্য করে বলল।

ভাই শোন মেলায় আজ গন্ডগোল হবে যত দ্রুত সম্ভব তুই আয়নাকে নিয়ে মেলা থেকে বেড়িয়ে যা।

আরশাদের কথা শুনে আব্রাহাম কোনো প্রতিক্রিয়া দেখানোর আগেই মেলার মূল গেইট দিয়ে প্রবেশ করে গাড়ি ভর্তি কিছু গুন্ডা তাদের সকলের হাতে অস্ত্র ও লাঠি। আব্রাহাম ওদের দেখে দ্রুত আয়নাকে রক্ষা করতে ওই দোকানে চলে যায়। কিন্তু আয়না দোকানে নেই। কোথায় গিয়েছে আয়না। আয়নাকে না পেয়ে আব্রাহামের কলিজা কেঁপে উঠল।
___________________________________
হসপিটালে হৈচৈ পড়ে গেছে। ডাক্তার অপারেশন থিয়েটারের ভিতরে ঢুকার পর আর বের হওয়ার নাম নিচ্ছে না। রুদ্ররা মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। ওদের সকলের চোখে অশ্রু চিকচিক করছে।আপন জন হারানোর ভয় যেনো কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে ওদের।কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। এখন ওদের আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা ছাড়া আর কিছুই যে করার নেই।

এরমধ্যে দেখা যাচ্ছে কিছু মানুষ আহাজারি করতে করতে প্রবেশ করছে হসপিটালে। তাদের কলিজা মনে হয় ছিঁড়ে যাচ্ছে। মানুষগুলোর আর্তনাদ শুনে যেই কেউ বলতে পারবে হয়তো ওনাদের আপন মানুষের বিরাট বড়ো কোনো ক্ষতি হয়ে গেছে। কি করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না।কে হসপিটালে ভর্তি কার অপারেশন চলছে। কাকে হারানোর ভয় রুদ্র ও তার বন্ধুদের কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। কোনো একজন কে কি হারিয়ে ফেলবে ওরা।কেউ কি চিরতরে চলে যাবে ওদের কাছ থেকে। ওদের বন্ধুত্ব কি এখানেই নিঃশেষ হয়ে যাবে।

#চলবে..

#তুমি_শুধু_গল্প_না_আমার_ভালোবাসা
#আমেনা_আক্তার
#পর্ব_৫০

আর্তনাদ করতে করতে হসপিটালে প্রবেশ করে আয়না ও আব্রাহামের বাবা মা। নিজেদের সন্তানদের জন্য যে ওনাদের জান বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম। আয়নার মা রাজের সামনে এসে দাঁড়ায়।রাজ নিজের মাকে কিছু বলার আগেই রাজের গালে কষিয়ে থাপ্পড় মারে।রাজ আহত দৃষ্টিতে তাকায় মায়ের দিকে। রাজের মা রাজকে থাপ্পড় মেরে শান্ত হতে পারেনি।তাই রাজের শার্টের কলার ধরে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বলল।

তোর উপর বিশ্বাস করে আমি আয়নাকে একা যেতে দিয়েছি।আমি ভেবেছিলাম তুই যখন বলেছিস তাহলে কোনো সমস্যা হবে না। তুই তোর বোনের খেয়াল রাখবি। কিন্তু না আমি ভুল ছিলাম তুই ওর খেয়াল রাখিস নি। তুই যদি ওর সাথে যেতি তাহলে আয়নার এই অবস্থা হতো না। কেমন ভাই তুই যে নিজের ছোট বোনের খেয়াল রাখতে পারলি না।আজ তোর বোনের এই অবস্থা শুধু তোর বেখেয়ালির জন্য আজ আয়নার এই অবস্থা হয়েছে।

কথাগুলো বলে থামে রাজের মা।ওনি এখন অঝোরে কান্না কান্না করছে
রাজের বাবা ও একটি চেয়ারে চুপচাপ বসে অপারেশন থিয়েটারের দিকে তাকিয়ে আছে। অনেক আদরের মেয়ে ওনার আয়না। মেয়ের জন্য নিজের কলিজা কেটে খাওয়ালেও উনার কম মনে হয়।আর আজ সেই মেয়ের কিনা এই অবস্থা। এদিকে রাজ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।ওর যে কিছু বলার মতো ভাষা নেয়। একদিকে ওর প্রাণের চেয়েও প্রিয় বোন মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে।তো আরেকদিকে ওর প্রাণ প্রিয় বন্ধু। একজন যদি ওর হৃদয় হয় তাহলে আরেকজন সেই হৃদয়ে চলা শ্বাস। রাজের ভিতরে এখন কি চলছে শুধু এটি রাজই জানে।

রাজ নিজের মায়ের দিকে এক নজর তাকায় যে অপারেশন থিয়েটারের দিকে তাকিয়ে অঝোরে কান্না করে চলেছে। আরেকদিকে আব্রাহামের বাবা মা যেনো ছেলের অবস্থা দেখে পাথর বনে গেছে। আব্রাহামের বড়ো ভাই বাবা মাকে শান্ত করার চেষ্টা করছে। আব্রাহামের বড়ো ভাইয়ের চেহারা দেখেও বুঝা যাচ্ছে আব্রাহামের অবস্থা দেখে কতটা বেদনায় আছে।

রাজ ওদের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে একটি চেয়ারে বসে পরে। এবং দুই হাত দিয়ে নিজের মাথা চেপে ধরে ভাবতে থাকে কিছুক্ষণ আগের কথা।

অতীত..

আব্রাহাম দৌড়ে দোকানে গিয়ে যখন আয়নাকে পায় না। তখন পাগলের মতো আব্রাহাম আয়নাকে খুঁজতে খুঁজতে এদিক থেকে সেদিক ছুটতে থাকে।ইতি মধ্যে গুন্ডা গুলো হামলা করে দিয়েছে মেলার মধ্যে। মানুষ ছুটাছুটি করছে। গুন্ডা দোকান পাট ভাংচুর করছে। মানুষের উপর ও হামলা করছে গুন্ডা গুলো। আব্রাহাম মনের মধ্যে এখন শুধু সংকোচ কাজ করছে। নিজের জীবনের বিনিময়েও আব্রাহাম নিজের প্রিয়তমা কে হারাতে চায় না।তাই ও খুঁজে চলেছে আব্রাহাম কে।

আয়না নিজের বান্ধবীদের সাথে এসেছিল একটি গহনার দোকানে এখানে বিভিন্ন ডিজাইনের গহনা আছে।আয়না যখনি নিজের জন্য একটি সুন্দর পায়েল পছন্দ করছিল তখনি শুনতে পায় শোরগোলের আওয়াজ।আয়না ও ওর বান্ধবীরা দোকানের বাইরে তাকাতেই মানুষ জনদের এদিক থেকে সেদিক ছুটতে দেখে।ওরাই আগ্রহ নিয়ে বাইরে আসতেই গুন্ডা গুলোকে দেখে ওদের অন্তত আত্মা যেনো কেঁপে উঠলো।আয়না তার বান্ধবীদের হাত চেপে ধরে লুকিয়ে পরে দোকানের মধ্যে।

দোকানে লুকিয়ে কতক্ষন থাকতে পারবে ওরা দোকানের ভিতর তো আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিচ্ছে গুন্ডা গুলো। এখান থেকে বের হওয়া ও তো সম্ভব না। মানুষের আর্তনাদ ভেসে আসছে চারদিক থেকে। আয়না ও ওর বান্ধবীরা ভয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। এখন কি করবে ওরা।আয়না কিছুক্ষণ সেভাবেই বসে থেকে নিজের ব্যাগ থেকে ফোন বের করে। ফোনটি বের করতেই রাজের অনেক গুলো কল দেখতে পায়।আয়না ভাইয়ের ফোন থেকে মনের মাঝে কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে কল ব্যাক করার আগেই কেউ ওর হাত থেকে ফোনটি থাবা দিয়ে নিয়ে নেয়।

আয়না ও ওর বান্ধবীরা ওপরের দিকে তাকাতেই একটি গুন্ডাকে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আয়না ভয়ে একটি শুকনো ঢোক গিলে। আয়না বুঝতে পারছে না গুন্ডাটির থেকে কিভাবে বাঁচবে গুন্ডাটি আয়না ও ওর বান্ধবীদের আরো নিকটে চলে আসছে।আয়নার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।আয়না নিজের হাত নিচে রাখতেই অনুভব করে আয়নার হাতে সামনে বালি তখনি আয়নার মাথায় একটি বুদ্ধি এসে হানা দেয়।আজ পর্যন্ত যা সিনেমায় দেখে এসেছে তা আজ কাজে লাগানোর সময় এসে গেছে।আয়নাকে যখনি লোকটি ধরতে নেই তখনি আয়না নিজের হাতে বালি মুষ্টিবদ্ধ করে গুন্ডাটার চোখের দিকে মারে।কিছু বালি প্রবেশ করে গুন্ডা টার চোখে।এই সুযোগে আয়না নিজের বান্ধবীদের নিয়ে বের হয়ে যায় সেখান থেকে।আয়না ও ওর বান্ধবীরা ছুটছে ওদের পিছনে পরে আছে কিছু গুন্ডা। যাদের সকলের হাতেই লাঠি। গুন্ডা গুলো আয়নার অনেকটা কাছে চলে এসেছে। দৌড়াতে দৌড়াতে আয়না একসময় আব্রাহাম কে দেখতে পায়। নিজের মনের ভুল ভেবে দৃষ্টি সরিয়ে আবার তাকায় সেই দিকে। কিন্তু না আব্রাহাম সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে। আব্রাহাম কে দেখে আয়নার সকল ভয় যেনো কেটে যায়। আব্রাহাম কে এই সময় মেলাতে পেয়ে ওর যে এখন কি অনুভূতি হচ্ছে তা বলে বুঝানো সম্ভব নয়।আয়না সময় ব্যয় না করে দৌড়ে চলে যায় আব্রাহামের কাছে। আব্রাহামের হাত আঁকড়ে ধরে কেঁদে উঠলো আয়না।

আব্রাহাম এতক্ষণ ধরে আয়নাকেই খুঁজছে। কিন্তু কোথাও খুঁজে না পেয়ে ও ভাবছে কিভাবে আয়নাকে খুঁজে বের করা যায়। তখনি কেউ আব্রাহামের হাত জাপটে ধরে আব্রাহাম সেখানে তাকাতেই আয়নাকে দেখে মনে হচ্ছে ওর কলিজা কিছুটা হলেও শীতল হয়েছে। আব্রাহাম জাপটে ধরে আয়নাকে। আব্রাহামের চোখ বেয়ে ঝরে পড়ে দু ফোঁটা অশ্রু।

আব্রাহাম যখনি আয়না কে আগলে ধরে দাঁড়িয়ে ছিল। তখনি হঠাৎ পিছন থেকে একটি গুন্ডা লাঠি দিয়ে বারি মারে আব্রাহাম কে। হঠাৎ আক্রমণে আব্রাহাম ও আয়না একজন আরেকজন থেকে ছিটকে পরে কিছুটা দূরে। লোকটি আব্রাহাম কে আঘাত করে শান্তি পায়নি তাই তো গুন্ডাটা আবার আঘাত করতে চাইলো আয়নাকে। নিজের হাতে থাকা লাঠি দিয়ে যেই না আঘাত করতে নেই আয়নাকে তখনি আব্রাহাম লাঠিটি ধরে ফেলল। এবং সজোরে একটি লাত্থি মারলো গুন্ডাটির বুক বরাবর।গুন্ডাটি ছিটকে পরলো কিছুটা দূরে। নিজের সহকর্মী কে মারতে দেখে আরো কিছু গুন্ডা এগিয়ে আসলো আব্রাহামের দিকে।

গুন্ডা গুলো ঘিরে ধরলো আব্রাহাম কে।এত গুলো গুন্ডার একা মোকাবেলা করা অনেক কঠিন তবুও আব্রাহাম গুন্ডা গুলোকে এলোপাথাড়ি মেরে চলেছে। গুন্ডা গুলোকে মারার সাথে সাথে নিজেও আহত হচ্ছে। কিন্তু আব্রাহামের নিজেকে নিয়ে চিন্তা হচ্ছে না। ওর সকল চিন্তার মূল কারণ হলো আয়না। নিজের জীবনের বিনিময় হলেও আব্রাহাম আয়নাকে এখান থেকে সুরক্ষিত বের করতে চায়।

আয়না আব্রাহামের দিকেই তাকিয়ে আছে।ও চেয়েও কিছু করতে পারছে না। আব্রাহাম কে একা লড়াই করতে দেখে আয়না অনেক জনের কাছ থেকে সাহায্য চেয়েও আয়না কারও কাছ থেকে কোনো প্রকার সাহায্য পায়নি।সকলে নিজের প্রাণ বাঁচিয়ে বাঁচাতে ব্যস্ত এখন। আয়না লক্ষ্য করলো একটি গুন্ডা আব্রাহামের পিছনে একটি লোহার লাঠি নিয়ে আগে বাড়ছে। আব্রাহাম এখন অন্য গুন্ডাদের সাথে মারামারি করতে ব্যস্ত তাই গুন্ডা টিকে খেয়াল করেনি।

আয়না আব্রাহাম কে সাবধান করার জন্য আওয়াজ লাগালেও এত হৈচৈ এর মধ্যে তা আব্রাহামের কান পর্যন্ত পৌছালো না। আয়না আর উপায় না পেয়ে আব্রাহামের দিকে দৌড় দেয়। লোকটি আব্রাহামের একদম নিকট চলে এসেছে।আয়না আব্রাহাম কে ধাক্কা মেরে সেখান থেকে সরিয়ে ফেলে। কিন্তু সময়ের অভাবে আয়না আর সরতে পারে না।যার ফলে লোহার লাঠিটার বারি এসে লাগে আয়নার মাথায়। আয়নার মাথায় বারি লাগতেই আয়না সঙ্গে সঙ্গে লুটিয়ে পড়ল মাটিতে। এবং আয়না মাথা দিয়ে রক্ত বের হতে লাগলো।

আব্রাহাম কিছু সময়ের জন্য যেনো পাথর বনে গেল। আব্রাহাম তাকিয়ে থাকে আয়নার দিকে আব্রাহাম যখনি দেখলো আয়নার মাথা দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। আব্রাহাম যেনো পাগলের মতো হয়ে গেল। আব্রাহাম আয়নার কাছে যাওয়ার জন্য ছুটতে লাগলো তখনি একটি গুলি এসে লাগলো আব্রাহামের পায়ে। আব্রাহাম সামনে তাকাতেই দেখতে পেলো ওর দিকে গুলি তাক করে আছে একটি গুন্ডা। গুন্ডা টি এখন আব্রাহামের পায়ের কাছ থেকে বন্দুক সরিয়ে আব্রাহামের বুকের দিকে বন্ধুক তাক করলো…

#চলবে