তুমি_শুধু_গল্প_না_আমার_ভালোবাসা পর্ব-৫৩

0
46

#তুমি_শুধু_গল্প_না_আমার_ভালোবাসা
#আমেনা_আক্তার
#পর্ব_৫৩

আব্রাহাম উদ্বিগ্ন হয়ে বারবার আয়নার কথা জিজ্ঞেস করছে। আয়নার কি হয়েছে জানার জন্য ব্যাকুল হয়ে পরেছে। রাজ কেনো ওকে এই কথা বললো। কিন্তু এখনো রাজ আর ওর বন্ধুরা চুপ করে আছে। আব্রাহামের কথার জবাব রাজ দিতে পারলো না ওর কন্ঠ কাঁপছে নিজের আদরের করুন পরিনতির কথা রাজ বলতে পারবে না। রাজ যতটা নিজেকে শক্ত করে আব্রাহামের কাছে এসেছিলো ওকে সত্য কথা বলতে ঠিক ততটাই ও দুর্বল হয়ে পরেছে।তাই রাজ কিছু না বলে বের হয়ে গেল কেবিন থেকে।

রাজকে এভাবে কিছু না বলে বের হতে দেখে। আব্রাহাম যেনো আরো উদ্বিগ্ন হয়ে গেল। এবং ওর বন্ধুদের উদ্দেশ্যে বলল।

রাজ এভাবে চলে গেল কেনো, আয়নার কি হয়েছে। প্লিজ বল ও ঠিক আছে না।

কথাগুলো বলে আব্রাহাম বেড থেকে উঠতে নিতেই রুদ্র ওকে আটকে ফেলে। এবং আব্রাহামের উদ্দেশ্যে বলল।

আয়নার শরীর প্যারালাইজ হয়ে গিয়েছে।আয়না আমাদের দেখতে ও শুনতে পেলেও কোনো প্রকার প্রতিক্রিয়া করতে পারবে না। আয়নার ঠিক হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও কবে ঠিক হবে তা ডাক্তার ও নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি।

রুদ্রের কথা শুনে আব্রাহাম কিছুক্ষণ স্থির হয়ে বসে থাকে একি জায়গায়। তারপর ওর বন্ধুদের উদ্দেশ্যে শান্ত স্বরে বলল।

আমি ওকে দেখতে চাই,

আব্রাহামের কথায় নূর আব্রাহামের কাছে এসে বসে বলল।

আমরা তোকে নিয়ে যাবো, কিন্তু তুই হাইপার হতে পারবি না। হাইপার হলে তোর শরীরের ক্ষতি হতে পারে। তুই আগে আমাদের প্রমিজ কর তুই শান্ত হয়ে থাকবি তখনি আমরা তোর সাথে আয়নার দেখা করাবো।

আমি এমন কিছুই করব না যাতে আয়নার সমস্যা হতে পারে।আমি ওকে দেখে শুধু আমার চোখের পিপাসা মেটাতে চাই।

আব্রাহাম এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আয়নার দিকে।প্রায় এক ঘন্টা ধরে আব্রাহাম আয়নার দিকে তাকিয়ে আছে। এতক্ষণ তাকিয়ে থাকার পরেও বোধহয় ওর চোখ দুটো আয়নাকে দেখতে চাইছে। আব্রাহাম আয়নার দিকে কিছুটা ঝুঁকে পরে এবং আয়নার উদ্দেশ্যে বলল।

তুমি চিন্তা করো না।আমি তোমাকে হারাম ভাবে ছুবো না। তুমি সুস্থ হওয়ার পর তোমাকে আমার জন্য হালাল করার পর আমি তোমাকে ছুবো। আমার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমি তোমার সুস্থ হওয়ার অপেক্ষা করবো। এবং আমি জানি আল্লাহ চাইলে অনেক তাড়াতাড়ি তুমি সুস্থ হয়ে যাবে। তুমি সুস্থ হওয়ার পর আমি আর কারও বাধা মানবো না তোমার ও না। তুমি সুস্থ হওয়ার পর তুমি শুধু আমার হবে আর আমি তোমার হবো।

কথাগুলো বলে মুচকি হাসে আব্রাহাম।হাসি ভিতরে কতটা বেদনা লুকিয়ে আছে তা কেবল আব্রাহাম যানে। আয়নার অবস্থা দেখে নিজেকে পাগল পাগল লাগছে তবুও আব্রাহাম নিজেকে সামলানোর পুরো চেষ্টা করে চলেছে।
___________________________________
কেটে গিয়েছে একটি মাস।এই এক মাসে বদলে গিয়েছে অনেক কিছু।সিরাত বসে আছে ছোট্ট একটি বাচ্চা কে কুলে নিয়ে।ওর পাশেই মহিমা খাটের সাথে হেলান দিয়ে বসে আছে।কাল রাতেই মহিমা একটি ছেলে সন্তান জন্ম দেয়। মহিমা কে হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন পরেনি বাড়িতে নরমাল ডেলিভারি হয়েছে।সিরাত ছোট্ট বাচ্চা টির সাথে কথা বলছে। নিজেকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে ছোট্ট বাবুর সাথে। মহিমা শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নিজের নবজাতক শিশুর দিকে।ওর ভিতরে যে অনুভূতি জাগ্রত হচ্ছে তা কাওকে বুঝিয়ে বলা অসম্ভব।

আজ নিজেকে পরিপূর্ণ মনে হচ্ছে মহিমার। নিজের বাচ্চার দিকে তাকিয়ে অতীতে ঘটা সকল ঘটনা আজ মন থেকে মুছে ফেলতে সক্ষম হয়েছে মহিমা। ছোট্ট বাবু ঘুমিয়ে যেতেই সিরাত বাচ্চাটিকে শুয়ে দিলো মহিমার কাছে। এবং মহিমার দিকে তাকিয়ে বলল।

তোর ও রাজিবের তালাক হয়ে গিয়েছে,তাই আশা করি ওই জানোয়ারের কথা ভেবে আর নিজেকে কষ্ট দিবি না।

আয়নার কথার প্রতি উত্তরে মহিমা বলল।

আমি শুধু এখন নিজের ও নিজের বাচ্চার কথা ভাবতে চাই।আমি এখন এমন কারও কথা ভাবতে চাই না যার কথা মনে পরতে আমার সুখের সময় দুঃখের আভাস ভেসে আছে।আমি শুধু এখন নিজের ও নিজের বাচ্চার জন্য বাঁচতে চাই।

কথাগুলো বলেই মহিমার সিরাতের দু হাত নিজের দুহাতে মুষ্টিবদ্ধ করে বলল।

এই সকল কিছু আমি তোর জন্য করতে পেরেছি।আমি বড়ো বোন হওয়ার পরেও বড়ো বোন হওয়ার দায়িত্ব তুই পালন করেছিস।ওই জঙ্গজাল থেকে আমাদের বের করে এনেছিস। তুই যদি আমাদের সাথে এতটা কঠোর না হতি তাহলে এখনো হয়তো আমাকে আবেগে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে পস্তাতে হতো। তুই কঠোর হয়ে আমাদের আগলে রেখেছিস। মা তোর জন্যই অন্যায়ের প্রতিবাদ করার সাহস পেয়েছে।

আমার জন্য কিছুই হয়নি সব হয়েছে তোদের নিজেদের জন্য।তোরা সময়ের সাথে সত্যকে শিকার না করলে এখনো তোদের কষ্ট ভোগ করতে হতো।তাই অতীতের কথা না ভুলে তার থেকে শিক্ষা নিয়ে আগে বাড়।এত কঠোর ভাবে নিজেকে তৈরি কর যাতে কেউ তোর দিকে চোখ তুলে তাকানোর আগেও একশো বার ভেবে চিন্তে নেয়।

সিরাতের কথায় সম্মতি প্রকাশ করলো মহিমা।
___________________________________
আব্রাহাম এক হাত দিয়ে লাঠি চেপে ধরে। কিছুটা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে প্রবেশ করলো আয়না দের বাড়িতে। আয়নার বাবা ড্রয়িং রুমে বসে খবরের কাগজ পড়ছিলেন। আব্রাহাম কে দেখে আয়নার বাবা হাতে থাকা নিউজ পেপারটি রেখে দিলো টেবিলের উপর।এই এক মাস আব্রাহামের প্রতিদিনের রুটিন হয়ে গিয়েছে আয়নাদের বাড়িতে আসা।এর কারণ শুধু মাত্র আয়না।

আয়নাকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে,এই বাড়িতে এসে আয়নার সাথে কথা বলে যায় আব্রাহাম।আয়না কোনো প্রতিক্রিয়া করুক আর না করুক আব্রাহাম সম্পূর্ণ চেষ্টা করে যেনো আয়না ওর কথায় কোনো প্রতিক্রিয়া করে। আব্রাহামের রোজ রোজ এখানে আসা নিয়ে আয়নার বাবা মায়ের খুব সমস্যা ছিল। কারণ যখন থেকে ওনারা শুনেছিল আব্রাহামের জন্য আয়না কষ্ট পেয়েছে তখন থেকে আব্রাহামের জন্য থাকা স্নেহ যেনো তাদের মন থেকে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু রাজের কথা অনুযায়ী আব্রাহাম কে এই বাড়িতে আসার অনুমতি দিয়েছেন ওনারা। কিন্তু পরবর্তীতে আয়নার জন্য আব্রাহামের ভালোবাসা দেখে ওনাদের মন পুলকিত হয়ে উঠল।আর বাঁধা দিতে পারলেন না আব্রাহাম কে।

আব্রাহাম প্রবেশ করলো আয়নার রুমে,আয়না একি ভাবে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে উপরের দিকে। আব্রাহাম আয়নাকে দেখে মুচকি হেসে আয়নার সামনে যেয়ে বসে বলল।

তোমার কি উপরের দিকে তাকিয়ে থাকতে বিরক্ত অনূভব হয়না।আমি তো তুমি ছাড়া অন্য কিছুর দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে পারি না। তোমার সামনে এত হ্যান্ডসাম একটি ছেলে বসে থাকার পরও তুমি উপরের দিকে তাকিয়ে থেকে আমার অপমান করছো। আব্রাহাম কখনো নিজের অপমান সহ্য করে না।তাই তোমাকে শাস্তি পেতে হবে। তোমার শাস্তি হলো তুমি এখন শুধু আমাকে দেখবে।

কথাগুলো বলে আব্রাহাম আয়নার মাথার সামনে দাঁড়িয়ে পরলো। আয়নার চোখ এখন আব্রাহামের দিকে তা দেখে আব্রাহাম মুচকি হাসলো। এবং বলল।

বলো তো আমাকে আজ কেমন লাগছে। তোমার চোখে তো সবসময় আমাকে ভালো লাগে তাই না। তোমার জন্য আমি এখন আমার মাথাও ঠিক ভাবে আছড়ে আসি না। কারণ মেয়েরা শুধু না ছেলেরাও চাই তাকে শুধু যেনো তার প্রিয়তমা সুন্দর বলে। ছেলের প্রশংসা যেনো শুধু তাঁর প্রিয়তমা করে। আমার সব কিছু শুধু তোমার জন্য। আমার সুন্দর্য এবং আমার সুন্দর্যে প্রশংসা করা ব্যক্তি শুধু তুমি হবে।

কথাগুলো বলেই আব্রাহাম ওর হাতে থাকা একটি সূর্যমুখী ফুলের তোড়া আয়নার সামনে রাখলো এবং বলল।

এই নাও তোমার পছন্দের সূর্যমুখী, তুমি না বলেছিলে আমাদের বিয়ের পর তোমাকে প্রতিদিন একটি হলেও যেনো আমি সূর্যমুখী ফুল এনে দেয়। কারণ তোমার সূর্যমুখী ফুল ভিশন পছন্দ। তখন তোমার কথার গুরুত্ব না দিলেও এখন কত দায়িত্ববান হয়ে গিয়েছি আমি দেখেছ। তোমার সকল ইচ্ছে বিয়ের আগেই গুরুত্ব দেওয়ার চেষ্টা করছি। তোমাকে গুরুত্ব না দেওয়ার শাস্তি আমাকে কত দায়িত্ববান বানিয়ে দিয়েছে। তুমি এখন আমার শ্বাস প্রশ্বাসে মিশে গিয়েছে।

কথাগুলো বলে আব্রাহাম মুচকি হাসে। আয়নার এই অবস্থা দেখে আব্রাহামের মনের মাঝে আগুন জ্বলছে তবুও মুখে হাসি বজায় রেখে থাকে সবসময় আব্রাহাম। কাওকে বুঝতে দেয়না নিজের কষ্ট।
___________________________________
অনেক সময় যাবত নূর আদিত্যের বাহু ডোরে বন্দি আছে। নূর ও আদিত্যর সম্পর্ক এখন আগের থেকে অনেকটাই স্বাভাবিক।নূর যখন নিজের বন্ধুদের অবস্থা দেখে চিন্তিত ছিল তখন সবসময় আদিত্য কে নিজের পাশে পেয়েছে নূর। আদিত্যর মা ও সারা নূরকে কম হেস্তনেস্ত করতে চাইনি কিন্তু সকলের মাঝে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল আদিত্য। শুধু কি তাই আদিত্য নিলয়কে উন্নত মানের চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠিয়ে দিয়েছে যেখানে নূর অনেকবার চেষ্টা করার পরেও পাঠাতে পারেনি। কিন্তু আদিত্যর কাছে যেনো সেটি বা হাতের খেলা ছিল মাত্র।

কিছুক্ষণ অতিবাহিত হওয়ার পর নূর নড়েচড়ে উঠলো। এবং আদিত্যর উদ্দেশ্যে বলল।

ছাড়বে এখন?

আদিত্যর সোজা জবাব,

নাহ,

আদিত্যর কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে ফেললো নূর।

আমি কি সারাজীবন এভাবেই বসে থাকব।

আমি না করিনি,

মতলব কি তোমার,

ব্যস বউকে আরো কাছে পাওয়া,

কথাটি বলেই নূরকে নিজের সাথে আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো আদিত্য।নূর আদিত্য কে আরো কিছু বলার আগে বিকট শব্দে নূরের ফোন বেজে উঠল।

ফোনের আওয়াজে আদিত্য বিরক্ত হয়ে বলল।

বালের ফোন এখনি বাজার ছিলো,

কথাটি বলেই নূরকে ছেড়ে দেয় আদিত্য,নূর মুচকি হেসে ফোন রিসিভ করে কানে ধরতেই ওপাশে থাকা ব্যক্তির কথা শুনে হাত থেকে ফোনটি পরে যায় নূরের। নূর টাল সামলাতে না পেরে পরে যেতে নিলে আদিত্য নূরকে সামলে নেই।
___________________________________
নব বধূ রুপে একটি মেয়ে হসপিটালে প্রবেশ করতেই হসপিটালের সকলে হা করে তাকিয়ে আছে মেয়েটির দিকে। মেয়েটির শুধু কি নববধূ রুপে একা এসেছে।নাহ মেয়েটির সাথে রয়েছে একজন কাজি যে মেয়েটির সাথে তাল মিলিয়ে হাঁটার চেষ্টা করছে। মেয়েটির চেহারা দেখে বুঝা দায় মেয়েটির কোনো আপন মানুষের শরীর অসুস্থ নাকি।আর শরীর অসুস্থ হলেও কি কেউ এ বেশে কাজি কে নিয়ে হসপিটালে আসে।

পুরো হসপিটালে খানিকের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লো মেয়েটির কথা।সকলে কানাঘুষা করছে মেয়েটিকে নিয়ে কিন্তু মেয়েটির ভিতরের অভিব্যক্তি সামান্য পরিমাণও বদলালো না।মেয়েটি এগিয়ে যাচ্ছে …

#চলবে…