#তুমি_শুধু_গল্প_না_আমার_ভালোবাসা
#আমেনা_আক্তার
#পর্ব_৫৫
হৃদিতা ওর বন্ধুদের প্রশ্ন শুনে মুচকি হেসে বলল।
আমি চাই না ওর পিঠের পুড়ে যাওয়া যায়গায় প্লাস্টিক সার্জারি করে ঠিক করানো হোক।আমি চাই এই পুড়া চিহ্ন যাতে সারাজীবন ওর পিঠে রয়ে যায়। কারণ…
কথাটি বলে একটু থামে হৃদিতা, তারপর আরশাদের দিকে তাকিয়ে বলল।
কারণ আমি চাই ওর এই দাগ যেনো আমাদের ভালোবাসার চিহ্ন হিসেবে গন্য হয়।মেয়েরা যেমন নিজের স্বামীর ভালোবাসার চিহ্ন হিসেবে তার সন্তান নিজের পেটে নয় মাস বহণ করে তাকে লালন পালন করে বড়ো করে। নারী যেমন নিজের স্বামীর সন্তানের সুখ দেওয়ার জন্য মাতৃত্বের স্বাদ গ্রহণ করে নিজের সুন্দর্য বলিদান দেওয়ার কথা একবারও ভাবে না।তেমনি আমার ভালোবাসার চিহ্ন ওর পিঠে সারাজীবন থাকবে এটা আমি চাই।
আমি চাইনা ও আমার কোনো খানিকের চিহ্ন সাথে রাখুক যা ওর চোখের আড়াল হওয়ার সাথে সাথে আমার স্মৃতি ও ওর মনের আড়াল হয়ে যায়।আমি চাই আমি যদি ওর সাথেও না থাকি তাহলেও যেনো ওর পিঠের এই পুড়ে যাওয়ার দাগ ওকে সারাক্ষণ অনুভব করায় ও শুধু আমার।আর ওর চিন্তা চেতনায় শুধু এক নারীর বসবাস তা শুধু আমি।
কথাগুলো বলে থামে হৃদিতা।হৃদিতার এই অদ্ভুত কথা শুনে সকলে সন্দিহ দৃষ্টিতে তাকায় ওর দিকে। নূর হৃদিতার উদ্দেশ্যে বলল।
তুই কি পাগল টাগল হয়ে গেলি, তোকে পাবনা ভর্তি করাতে হবে। তুই কি সকল অদ্ভুত কথা বলছিস।কেউ কখনো এইরকম ভালোবাসার চিহ্ন রাখে। কখনো দেখেছিস কাওকে এইরকম পাগলামো ভরা কথা বলতে।
হৃদিতা নূরের কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে শিতল দৃষ্টিতে তাকায় নূরের দিকে। এবং সংকোচ বিহীন গলায় নূরের উদ্দেশ্যে হৃদিতা বলল।
আমি পাগল আমার মাথা ঠিক নেই,এই পাগল কে নিয়েই ওর সারাজীবন কাটাতে হবে।ও যদি জেনে বুঝে একটি পাগল কে বিয়ে করে তাহলে তার পাগলামী সহ্য করার দক্ষতাও তো ওর ভিতর থাকতে হবে।
কথাগুলো বলেই হৃদিতা চুপ হয়ে যায়। হৃদিতার কথা শুনে ওরা কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না। হৃদিতা কে দোষ দিয়েই বা কি হবে ওদের বন্ধুদের মধ্যে তো সকলেরই একই অবস্থা। সকলেই কোনো না কোনো দিক দিয়ে একটি না একটি পাগলামো করতেই থাকে। হৃদিতার কথা শুনে আরশাদ কিছুটা ভারী কন্ঠে বলে উঠলো।
আমি রাজি তোর কথায়, কিন্তু আমারও একটি শর্ত আছে।
কি শর্ত?
আমার শর্ত হলো তোকে সকাল সন্ধ্যা আমার এই পুড়ে যাওয়া পিঠে চুমু খেতে হবে। অন্তত দিনের ভিতর একশটা চুমু তোকে আমার এই পুড়ে যাওয়া পিঠে দিতে হবে।আর বাকি নয়শ চুমু আমার শরীরের অন্য অন্য যায়গায় দিলেও হবে। তুই যদি আমার এই শর্তে রাজি থাকিস তাহলে আমার তোর কথা মানতে কোনো সমস্যা নেই।
এতক্ষণ ডাক্তার ও এখানেই দাঁড়িয়ে ওদের কথা শুনছিলো।হৃদিতার কথা শুনে ডাক্তারের যতটা না অদ্ভুত লেগেছে তার থেকে বেশি লজ্জা লাগছে আরশাদের কথা শুনে। এবং উনি আরশাদ কে এখন মনে মনে নির্লজ্জ উপাধি ও দিয়ে দিয়েছেন। নাহলে কেউ শরীরের এই অবস্থা নিয়ে এমন বেফাঁস কথা বলতে পারে। ডাক্তার আরশাদের কথা শুনে আর কেবিনে দাঁড়ালো না উনি চলে গেলেন বাইরে।
হৃদিতা ও রাজি হয়ে গেল আরশাদের কথায়।
হৃদিতা ডাক্তারের সাথে কথা বলতে কেবিনের বাইরে চলে গেল। এখন কেবিনের ভিতরে অবস্থান করছে আরশাদ ও ওর বন্ধুরা। আরশাদ ওর বন্ধুদের আকুল কন্ঠে বলে উঠলো।
তোরা দেখনা কোনো ব্যবস্থা করতে পারিস কিনা?
আরশাদের কথায় রুদ্র ভ্রু কুঁচকে বলল।
কি ব্যবস্থা করব,
রুদ্রের কথায় আরশাদ কিছুটা লজ্জা পাওয়ার ভান করে বলল।
আমার ও হৃদিতার বাসরের ব্যবস্থা, বিয়ে যখন হয়ে গিয়েছে তাই শুভ কাজ করতে দেড়ি করা উচিত না।তোরা শুধু হৃদয় কে রাজি করা বাকিটা আমি সামলে নিবো।
আরশাদের কথায় ও বন্ধুদের মুখ হা হয়ে গেল। নূর দাঁতে দাঁত চেপে আরশাদের উদ্দেশ্যে বলল।
হসপিটালে বসে তোর বাসর করার শখ জাগছে। তুই না অসুস্থ, অসুস্থ শরীর নিয়েও বাসর করার শখ জাগে কিভাবে তোর।
নূরের কথায় আরশাদ কিছুটা গম্ভীর গলায় বলল।
কিভাবে জাগবে আবার, যেভাবে সবার জাগে তেমনি জেগেছে।আর তোরা কি মনে করেছিস? আমি হসপিটালে আছি বলে আমার স্ত্রী কে আমি ওর অধিকার থেকে বঞ্চিত করব। একদম না, আমি অনেক দায়িত্ববান স্বামী কিছুতেই আমি আমার স্ত্রীকে আমার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত করব না।
আরশাদের কথা শুনে আব্রাহাম একটি সরল হাসি দিয়ে বলল।
যাকে তুই স্ত্রীর অধিকার দেওয়ার কথা ভাবছিস ও যদি তোর এই মহান পরিকল্পনার কথা জানতে পারে তাহলে তোর এক পা তো এখন কবরে আছেই দ্বিতীয় পা ও কবরে পাঠিয়ে দিবে। তখন সেখানে শুয়ে শুয়ে নিজের বাসরের স্বপ্ন দেখিস।
আব্রাহামের কথা শুনে আরশাদের মুখ ভোঁতা হয়ে গেল। অবশ্য আব্রাহাম কথাটি ভুল বলেনি কষ্টকর হলেও আপাতত বাসরের চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে। কথাটি ভেবে মনে মনে পণ করল আরশাদ যে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে নিজের এই অসম্পূর্ণ ইচ্ছা সম্পূর্ণ করবে।
___________________________________
সিরাতের চুল চিরুনি দিয়ে আঁচড়ে দিচ্ছে রুদ্র।সিরাতের চুল আঁচড়ানোর এক পর্যায়ে সিরাতকে জাপটে ধরলো রুদ্র।এতে অবশ্য সিরাত সামান্য পরিমাণও ঘাবড়ালো না। এখন ওর এই সকল কিছুর অভ্যাস হয়ে গেছে। রুদ্র হুট হাট সিরাতকে জাপটে ধরলেও জাপটে ধরার আগে বাড়তে পারেনি এখন ও । রুদ্র ভেবেই পায়না ও কিভাবে সিরাতের কাছে যাবে। আবার যখনি ও নিজের মনকে বুঝিয়ে সিরাতের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করে। তখনি আবার মাথায় এই প্রশ্ন উদয় হয় যে সিরাত আবার রাগ করবে নাতো।ও কি এখন তৈরি আছে নিজের ও রুদ্রের সম্পর্ক কে নতুন এক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
রুদ্র সিরাতের ঘাড়ে নিজের থুতনি রেখে বলল।
আজ হৃদিতা ও আরশাদের বিয়ে হয়েছে হসপিটালে।
রুদ্র কথাটি বলতেই সিরাতের কাছ থেকে উত্তর আসলো।
আমি জানি,
জানো আরশাদ কি বলছিল,
না এটা জানি না,
সিরাতের কথায় যেনো রুদ্র কিছুটা সুযোগ পেয়ে গেল সিরাতকে নিজের মনের কথা বুঝানোর জন্য।তাই রুদ্র গলাটা পরিষ্কার করে সিরাতকে বলল।
ও বলছিল ও নাকি আজ হসপিটালেই বাসর করবে।ওর নাকি অপেক্ষা করতে ভালো লাগছে না।এতে অবশ্য আরশাদের দোষ নেই।আসলে ছেলেদের বিয়ে হয়ে গেলে ওদের নিজের বউকে কাছে পাওয়ার জন্য মন ব্যাকুল হয়ে যায়। তুমি জানো এমনও অনেক ছেলে আছে যাদের বিয়ের দু তিন মাস পার হয়ে যাওয়ার পরেও বউকে কাছে পায়না। আমার না তাদের জন্য অনেক কষ্ট লাগে।মনে হয় বেচারারা কতই না কষ্ট পায় তাদের বউয়ের সাথে রোমান্স করতে না পেরে।
কথাগুলো বলেই রুদ্র আশার আলো নিয়ে সিরাতের দিকে তাকায়। সিরাতের জবাবের অপেক্ষায়।এই বুঝি সিরাত ওকে বলবে। তোমারও তো অনেক কষ্ট হয় আমাকে কাছে না পেয়ে।আমারই ভুল হয়েছে তোমাকে এতদিন স্বামীর অধিকার না দিয়ে। আমাদের ও উচিত এখন কাছে আসার।
কিন্তু সিরাত এমন কিছু না বলে রুদ্র কে বললো।
অন্যের কথা না ভেবে নিজের কথা চিন্তা করো।
সিরাতের কথা শুনে রুদ্র এক্সাইটেড হয়ে বলল।
কি চিন্তা করব?
তোমার কাজে যাওয়ার সময় হয়ে গিয়েছে।
সিরাতের কথা শুনে রুদ্র মুহূর্তের মধ্যে চুপসে গেল।ও বোধহয় কখনো সিরাতকে নিজের মনের কথা বলতে পারবে না। রুদ্র নিরাস হয়ে অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নেই রুদ্র যাওয়ার আগে সিরাত রুদ্রের উদ্দেশ্যে বলল।
আজ একটু তাড়াতাড়ি আসার চেষ্টা করো কিছু কাজ আছে।
রুদ্র নিরস মুখেই জবাবে বলল।
আচ্ছা,
তারপর রুদ্র চলে গেল নিজের কাজে। রুদ্র চলে যেতেই সিরাত শব্দ করে হেসে উঠলো।সিরাত খুব ভালোভাবেই তখন বুঝতে পেরেছে রুদ্র ওকে কি বুঝাতে চেয়েছে।সিরাত ইচ্ছে করে না বুঝার ভং ধরেছে। রুদ্র কে যে ওর জ্বালাতন করবে খুব ভালোলাগে।
___________________________________
আদিত্যের আলিশান বাড়ির চারদিকে ফুটে উঠেছে কৃত্রিম লাইটের আলো। বাড়ির আনাচে কানাচে দেখা মিলছে সাজ সজ্জার।চোখ ধাঁধানো সুন্দর্য যেনো ফুটে উঠেছে বাড়িটিতে এবং বাড়ির মানুষের মাঝে। এখন যেই কেউ এই বাড়ির দেখেই বলে দিতে পারবে আদিত্য দের আভিজাত্যের কথা। আজ দেশ বিদেশ থেকে ছুটে এসেছে বিভিন্ন আত্নীয় স্বজন।আজ আয়শা চৌধুরীর জন্মদিন বলে কথা।আয়শা চৌধুরীর জন্মদিন এমন ভাবে পালন করা হয় যেই কেউ এর প্রশংসা করতে বাধ্য।
বাড়ির সুন্দর্যের মতোই খাবারের আয়োজন করা হয়েছে খুব সুক্ষ্মভাবে। বিভিন্ন আইটেমের খাবার রান্না করা হয়েছে। খাবারের ঘ্রাণে পুরো বাড়ি মো মো করছে।এই সকল কিছুর মাঝে আয়শা চৌধুরীর চোখ আটকে আছে দরজার পানে। অপেক্ষা করছেন আদিত্যর জন্য।দূর দূরান্ত থেকে বিভিন্ন মানুষ ছুটে আসলেই এখনো নিজের সন্তানই আসেনি ওনার জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে।
আয়শা চৌধুরী যেনো অধৈর্য হয়ে পরেছেন আদিত্যর জন্য।এর একটি কারণ আছে অবশ্য। এতদিন চেষ্টা করেও নূর কে আদিত্যর কাছ থেকে দূরে সরাতে পারেনি আয়শা চৌধুরী।তাই আয়শা চৌধুরী আজ একটি ফন্দি এঁটেছেন।আজ যেই করেই হোক সবার সামনে আয়শা চৌধুরী আদিত্য কে রাজি করাবে সারার সাথে বিয়ের জন্য। আয়শা চৌধুরী কিছুতেই নূরকে আদিত্যর স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি দিবে না।তাই তো আজ উনি এই ফন্দি এঁটেছেন।আয়শা চৌধুরী আর যেনো অপেক্ষা করতে পারছেন না। বারবার ওনার মনের মধ্যে এই প্রশ্নই উদয় ইচ্ছে আদিত্য আজ আসবে তো। আদিত্য আজ না আসলে ওনার সকল প্লান যে ভেস্তে যাবে।
আয়শা চৌধুরী কথাগুলো যখন ভাবছিলেন তখনি সারা এসে দাঁড়ায় আয়শা চৌধুরীর সামনে এবং ওনাকে উদ্দেশ্যে করে বলল।
খালামনি আদিত্য এখনো আসছে কেনো।ও আসবে তো।ও যদি না আসে তাহলে আমাদের সকল প্লান বিফলে চলে যাবে।আমি আর কখনো আদিত্য কে নিজের করে পাবো না।
আয়শা চৌধুরী সারার কথায় ওকে শান্তনা দিয়ে বলল।
তুমি চিন্তা করো না, আদিত্য অবশ্যই আসবে।আজ আমার জন্মদিন আদিত্য কি না এসে থাকতে পারবে। আমাদের মাঝে যতই অভিযোগ আর অভিমান থাকুন না কেনো আদিত্য আমার জন্মদিনে নিশ্চয়ই আসবে।
আয়শা চৌধুরীর কথা শেষ হতেই প্রবেশ দ্বার হতে আগমন ঘটে আদিত্যর।তাও যেই সেই আগমন নয় যেনো কোনো রাজকীয় আগমন।আজ মনে হয় আদিত্য কে একটু বেশিই সুদর্শন লাগছে তাইতো পার্টিতে থাকা সকল মেয়ে হা করে তাকিয়ে আছে তার দিকে। আদিত্যর স্টাইল, আদিত্যর গেটআপ সকল কিছু যেনো ফিদা হয়ে যাওয়ার মতো।
সকলে আদিত্যর দিকে প্রশ্ন বোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে এখন।আর আয়শা চৌধুরী ও সারা তাকিয়ে আছে ক্রোধ ভরা দৃষ্টিতে কারণ…
#চলবে..
#তুমি_শুধু_গল্প_না_আমার_ভালোবাসা
#আমেনা_আক্তার
#পর্ব_৫৬
পার্টির সকলে হা করে তাকিয়ে আছে আদিত্য ও নূরের দিকে। আদিত্য নিজের হাতের মুঠোয় নূরের মুষ্টিবদ্ধ করে রেখেছে। ওদের দুজনকে পারফেক্ট জুটি লাগছে। ওদের থেকে চোখ ফেরানো দায় হয়ে পরেছে। নূর নীল রঙের একটি গ্রাউন পরেছে ও আদিত্য পরেছে একটি নীল রঙের পাঞ্জাবি। ওদের ম্যাচিং করে পড়া পোশাক সকলকে ভাবতে বাধ্য করছে আদিত্য ও নূরের মধ্যকার গভীর সম্পর্কের কথা। পার্টিতে ফিসফিস আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।কেউ মনে করছে নূর হয়তো বা আদিত্যর গার্লফ্রেন্ড হবে। আবার কেউ মনে করছে নূর আদিত্যর হবু বউ।একেক জনের একেক ভাবনা।
এই সকল কিছুর মাঝে আদিত্যর বাবা আফজাল চৌধুরী দাঁড়িয়ে আছে খুব শান্ত ভাবে। ওনাকে দেখে মনে হচ্ছে আফজাল চৌধুরী বোধহয় আগেই জানতেন আজ আদিত্য নূরকে পার্টিতে নিয়ে আসবে। আফজাল চৌধুরী কে দেখে বুঝা যাচ্ছে না আদিত্যর এই সিদ্ধান্তে উনি খুশি হয়েছেন নাকি বেজার।
আদিত্য বাড়িতে প্রবেশ করতেই এক গাধা সাংবাদিক এসে দাঁড়ায় আদিত্য ও নূরের সামনে সকলের মতো তাদেরও একই প্রশ্ন। নূর ও আদিত্যর মধ্যকার সম্পর্ক কি। সকলে উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে আদিত্যর দিকে। আদিত্যর উত্তর শোনার জন্য। সকলের মনে এখন অস্থিরতা কাজ করছে সত্য জানার জন্য। কেননা কেউ আজ পর্যন্ত আদিত্য কে কোনো মেয়ের সাথে দেখেনি। আদিত্য মেয়েদের কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে পছন্দ করে।আর না কেউ আদিত্যর সাথে আজ পর্যন্ত কোনো মেয়ের সাথে জড়িত কোনো বিষয়ের কথা শুনেছে।তাই সকলের আগ্রহ আদিত্য ও নূরের সম্পর্ক জানার জন্য স্বাভাবিক।
কিন্তু সকলে নিরাশ করে দিয়ে আদিত্য সাংবাদিকের উদ্দেশ্যে বলল।
আপনাদের প্রশ্নের জবাব আপনারা খুব শ্রীঘ্রই পাবেন। কিন্তু আপাতত পার্টি ইন্জয় করুন।
আদিত্যর কথা শুনে সাংবাদিকদের আর কিছু বলার সাহস হয় না।তাই তারা সেখান থেকে চলে যায়। পার্টির অন্যান্য ব্যক্তিরাও আবার পার্টির দিকে মনোনিবেশ করে।তখনি আয়শা চৌধুরী রাগে কটমট করতে করতে এগিয়ে আসে আদিত্যর দিকে। এবং আদিত্যকে উদ্দেশ্যে করে বলল।
এই মেয়েকে তুমি সাথে করে কেনো নিয়ে এসেছে, তুমি জানো না আমি এই মেয়েকে পছন্দ করি না।এইটা জানার পরেও তুমি এই মেয়েকে আমার বাড়িতে আমারি জন্মদিনে নিয়ে এসেছে।এই মেয়ের তোমার স্ত্রী এই কথা যদি লোকে জানে তাহলে আমার উপর ছি ছি করবে।
আদিত্য খুবই শান্তভাবে নিজের মায়ের কথা শুনে এবং আয়শা চৌধুরী কে জবাবে বলল।
তুমি ভুলে যাচ্ছ এই বাড়ি তোমার একার নয়। তুমি যেমন এই বাড়ির বউ তেমনি নূর ও এখন এই বাড়ির বউ। তোমার যতটা অধিকার এই বাড়িতে আছে তেমন নূরের ও আছে।তাই আমার স্ত্রীকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসতে হলে আমার নিশ্চয়ই কারও অনুমতির প্রয়োজন নেই।আর আদিত্য যে কারও অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করে না এটিও খুব ভালোভাবে জানো তুমি।আমার ওয়াইফের উপর কেউ ছি ছি করবে এত যোগ্যতা এখনো কারো হয়নি।
কথাটি বলেই আদিত্য ও নূর চলে যায় সামনের দিকে।আর আয়শা চৌধুরী রাগে ফোঁস ফোঁস করতে থাকে।আয়শা চৌধুরী আদিত্য কে কিছু বলার উদ্দেশ্যে ওর পিছনে যেতে নিলেই আয়শা চৌধুরীর সামনে এসে দাঁড়ায় আফজাল চৌধুরী। এবং তিনি আয়শা চৌধুরীর উদ্দেশ্যে বলল।
আমি চাইনা পার্টিতে কোনো প্রকার সিন ক্রিয়েট হোক। এমনিতেও তোমার জন্য এটাই ভালো হবে তুমি আদিত্যর স্ত্রী কে মেনে নাও। তুমি খুব ভালোভাবেই আদিত্য কে চিনো।ও কাওকে পরোয়া করে না নিজের ইচ্ছে অনুযায়ী নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নেই। এবং ওর সিদ্ধান্তে কেউ বাঁধা হয়ে দাঁড়ালে তার অবস্থা ও কি করে তাও খুব ভালোভাবে জানো।
স্বামীর কথা শুনে চুপ হয়ে গেল আয়শা চৌধুরী। এখন তিনি চাইলেও কিছু বলতে পারবেন না।আর কিছু বললেও যে কোনো লাভ হবে না এটি খুব ভালোভাবে জানেন। আয়শা চৌধুরী আশেপাশে তাকিয়ে সারা কে খুঁজতে চেষ্টা করলেন উনি এই বিষয়টি মেনে নিলেও সারা যে এত সহজে মেনে নিবে না তা খুব ভালোভাবে জানে আয়শা চৌধুরী।সানা উল্টো পাল্টা কিছু করে না বসে।এর আগেও সানা নিজের রাগের বশে অনেক কিছু করতে চেয়েছে যা শুধু সানার জন্য বিপদ ডেকে আনত। আয়শা চৌধুরী তাকে ওই সকল কাজের থেকে বিরত রেখেছে।সানা কে বুঝিয়েছে। কিন্তু আজ সানা কোনো ভুল না করে বসে। সানা আজ নূরের ক্ষতি করতে চাইলে আদিত্য যে ওকে ছাড়বে না এটা খুব ভালোভাবে জানে আয়শা চৌধুরী।তাই তিনি আফজাল চৌধুরী কে রেখেই চলে গেলেন সারা কে খোঁজার উদ্দেশ্যে।
নূর চোখ ছোট করে তাকিয়ে আছে আদিত্যর দিকে।আসলে ও বুঝতে চাইছে আদিত্য কি করতে চাইছে।নূরকে আদিত্য এই পার্টিতে কি জন্য নিয়ে এসেছে তা এখনো নূরের অজানা।তাই ও আদিত্যর মতিগতি বুঝার চেষ্টা করছে।
নূরকে এভাবে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আদিত্য ভ্রু কুঁচকে নূরকে জিজ্ঞেস করল।
আমাকে কি গিলে ফেলবে চোখ দিয়ে, আমাকে দেখতে এতই হ্যান্ডসাম লাগছে যে চোখ সরাতে পারছ না।যদি আমাকে দেখার এতই ইচ্ছা থাকে তাহলে বলো দুজনে রুমে চলে যায়। সেখানে কেউ আমাদের ডিস্টার্ব করবে না।
আদিত্যর কথা শুনে নূর থতমত খেয়ে যায়।ও কি ভাবছে আর এই বজ্জাত কি বলছে।নূর নিজেকে স্বাভাবিক করে কিছুটা শক্ত গলায় বলল।
আমাকে এখানে নিয়ে আসার কারণ কি? আমার একদম ভালোলাগে না যারা আমাকে পছন্দ করে না, তাদের আশেপাশে ঘুরঘুর করতে।
তোমার সব পছন্দ অপছন্দ সকল কিছু আমাকে ঘিরে থাকবে। আমার এইটা পছন্দ না যে অন্য কারও থাকা না থাকা আমার স্ত্রীর উপর সামান্য পরিমাণও প্রভাব ফেলবে।
কথাটি বলেই আদিত্য নূরের হাত শক্ত করে চেপে ধরে বলল।
চলো,
কথাটি বলেই আদিত্য নূরকে কোথায় যেনো টেনে নিয়ে যেতে লাগলো।নূর কিছুই বুঝতে পারছে না ওকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আদিত্য নূরকে নিয়ে থামতেই নূর লক্ষ্য করে দেখলো এখানে কিছু সাংবাদিক ও পার্টিতে আসা মানুষগুলো জড়ো হয়ে আছে।মূলত আদিত্যর কথায় সকলকে এখানে ডাকা হয়েছে। আদিত্য সকলের মাঝে দাঁড়িয়ে বলা শুরু করলো।
আপনারা সকলেই আমার ও নূরের মধ্যকার সম্পর্কের বিষয়ে জানতে চাইছেন। আপনাদের সকলে মনে হয়তো কৌতুহল জন্মাচ্ছে আমি কেনো নূরকে আমার সাথে এই পার্টিতে নিয়ে এসেছি।
আদিত্যর কথা শুনে এক গাধা সাংবাদিক আদিত্যর সামনে এসে প্রশ্ন করতে লাগলো।
আদিত্য চৌধুরী উনি কি আপনার হবু ওয়াইফ। আপনাদের কি বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে এই কথা জানাতেই কি আপনি ওনাকে এই পার্টিতে নিয়ে এসেছেন।
সাংবাদিকের কথা শুনে আদিত্য বলল।
না ও আমার হবু স্ত্রী না,
কথাটি বলেই আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে বলল।
ও আমার হবু স্ত্রী না।ও আমার বর্তমান স্ত্রী।ওর আর আমার বিয়ে অনেক আগেই হয়ে গিয়েছে।
আদিত্যর কথা শুনে সকলে অবাক হয়ে তাকায় ওদের দিকে। আদিত্য চৌধুরীর বিয়ে হয়ে গিয়েছে কিন্তু এই কথা এখনো কেউ জানেনা। কিভাবে সম্ভব। সাংবাদিক আরও কিছু জিজ্ঞেস করতে চায় আদিত্য কে কিছু আদিত্য নিজের হাতের ইশারায় সাংবাদিকদের থামিয়ে দেয় এবং নূরকে চলে যায় সেখান থেকে।
দূর থেকে আদিত্য ও নূরকে একসাথে দেখে একের পর এক ড্রিংক শেষ করছে সারা।ওর এখন মনে হচ্ছে সারার পুরো শরীরে কেউ আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে।এই আগুন এখন তখনি নিভভে যখন সারা নূরকে নিজের ও আদিত্যর মাঝ থেকে সরাতে পারবে।
অনেক্ষণ যাবত নূর দাঁড়িয়ে আছে। আদিত্য ওকে রেখে কোথায় গায়েব হয়ে গিয়েছে তা নূরের অজানা। নূরের প্রচুর বিরক্ত লাগছে। নূর এখানে একা দাঁড়িয়ে আছে এমনটি নয় নূরকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে চার পাঁচজন মহিলা সকলের মুখে একই প্রশ্ন কিভাবে নূর ও আদিত্যর বিয়ে হয়েছে। নূর ও আদিত্য কি প্রেম করে বিয়ে করেছে নাকি পারিবারিক ভাবে ওদের বিয়ে হয়েছে।ওরা কতদিন ধরে একজন আরেকজনকে চিনে বা কেনো ওরা এতদিন ওদের বিয়ে লুকিয়ে রেখেছিল।
এমন আরো অনেক কথা জিজ্ঞেস করছে নূরকে।নূর মহিলাদের প্রশ্ন শুনে প্রচুর পরিমাণে বিরক্ত হচ্ছে। কিন্তু মুখে কিছু বলছে না। কেননা নূর চাইনা ওর জন্য আদিত্যর সম্মানে কোনো আঘাত আসে।তাই চুপচাপ মহিলাদের সকল কথা হজম করতে হচ্ছে ওকে।এর মধ্যে একটি ওয়েটার এসে নূরের উদ্দেশ্যে বলল।
আদিত্য স্যার আপনার জন্য ছাদে অপেক্ষা করছেন।
কথাটি বলেই ওয়েটার চলে যায় নিজ কাজে।নূর বুঝতে পারছে না আদিত্য ওকে ছাদে কেনো ডেকেছে।ওতো এই বাড়ির কিছু ভালোভাবে চিনেও না।নূর একটি তপ্ত শ্বাস ফেলে হাঁটা শুরু করলো ছাদের উদ্দেশ্যে।নূর ছাদে পৌঁছানোর পর চারদিকে শুধু অন্ধকার দেখছে। কোথাও আদিত্য তো দূরের কথা অন্য কোনো মানুষ ও দেখা যাচ্ছে না।
নূর কাওকে না পেয়ে ফিরে আসার জন্য পা বাড়াতেই হঠাৎ মনে হলো হয়তো নূর কারও ছায়া দেখতে পেয়েছে এখন।নূর সামনের দিকে তাকাতেই ছাদের একদম কর্ণারে কাওকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। নূর ভাবে হয়তো আদিত্য হবে। নূর আগে বেড়ে সেই ছায়াটির কাছে যেতেই দেখতে পায় এটি একটি পুতুল। নূর ছাদে এতবড় একটি পুতুল তাও এই সময় দেখতে পেয়ে কিছুটা অবাক হয়ে যায়।নূর পিছনে ফিরতে নিলেই হঠাৎ কে যেনো নূরকে ধাক্কা মারে।
নূরকে ধাক্কা মারতেই বিকট শব্দে কিছু নিচে পড়ার আওয়াজ আসে। পার্টিতে থাকা লোকজন বাইরে বের হয়ে দেখতে পায় একটি মেয়ের রক্তাক্ত দেহ। পার্টির সকলের রুহ কেঁপে উঠছে মেয়েটির এই অবস্থা দেখে।
#চলবে…