তুমি_শুধু_গল্প_না_আমার_ভালোবাসা পর্ব-১১+১২

0
65

#তুমি_শুধু_গল্প_না_আমার_ভালোবাসা
#আমেনা_আক্তার
#পর্ব_১১

আব্রাহাম তার গাড়ির উপরে শুয়ে আকাশ দেখছে। তাকে দেখে মনে হবে কতদিন ধরে হয়তো আকাশ দেখে না। হয়তো আকাশের দিকে তাকিয়ে কারও নামে অভিযোগ করছে। মুখে কিছু না বললেও মনে অনেক কথা বলছে আব্রাহাম হয়তো। নিজের ভিতরে লুকানো কষ্ট কারও সামনে দেখাতে চায় না।তাই এই পদ্ধতি অবলম্বন করছে। আব্রাহাম যখন আকাশ দেখতে ব্যস্ত তখনি তার দুপাশে উঠে বসে আরশাদ ও রুদ্র।

রুদ্র আরশাদের উদ্দেশ্যে বলল।

তুই এখানে বসে আকাশ দেখছিস।আর আমি তো মনে করেছিলাম এতক্ষণে বিরহের গান গাইছিস হয়তো। শুধু শুধু এত কষ্ট করে তোকে খুঁজে বের করেছি।

রুদ্রের কথার প্রতি উত্তরে আরশাদ বলল।

তুই কি ওকে তোর মতো মনে করেছিস।ও হচ্ছে শক্ত মনের মানুষ ভিতর থেকে ভেঙ্গে গুড়িয়ে গেলেও কাওকে কিছু জানতে ও দিবে না। চেহারায় ভাব ধরে রাখবে যেনো কিছুই হয়নি।

আরশাদের কথার প্রতি উত্তরে আব্রাহাম বলল।

তাহলে তোরা কি চাস তোদের মতো ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কান্না করি।

না তুই কান্না করবি কেনো তুই বিরহের আগুনে পুড়বি। পুড়তে পুড়তে ছাই হয়ে যাবি তোবুও কাওকে নিজের মনের দুঃখ বলবি না।

আচ্ছা আব্রাহাম তুই তো আয়নার জন্য বিয়ের প্রস্তাব ও নিয়ে যেতে পারিস।

আব্রাহাম হেসে রুদ্রের কথার উত্তরে বলল।

তোর কি মনে হয় রাজ তার বোনের সম্মতি ছাড়া ওকে আমার সাথে বিয়ে দিবে।

তুই একবার চেষ্টা তো করে দেখ এমনও তো হতে পারে।রাজ সকল কথা শুনে সকল সত্য জেনে নিজে আয়নার হাত তোর হাতে দিয়ে দেয়।

আরশাদের কথায় আব্রাহাম মুচকি হেসে বলল।

এমনটা না হয়ে, যদি রাজ সকল কথা জানার পর আমাদের বন্ধুত্ব ভেঙে দেয়।আর কখনো আমাদের উপর বিশ্বাস না করে । তোর মনে আছে একবার ওর চাচাতো ভাইয়ের বন্ধু ওর চাচাতো ভাইয়ের বোনকে নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল তখন ও তার চাচাতো ভাইয়ের বন্ধুর সাথে তার সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে দিয়েছিল। আবার ওই ছেলেকে আমরা সবাই মেরে ও এসেছি।রাজ কতটা ঘৃণা করে এই বিষয়টাকে।এখনো সেই ছেলের কথা আমাদের কাছে বলে।

তুই ওই এক কথা নিয়ে কেনো পরে আছিস।ওটা অন্য পরিস্থিতি ছিল আর ওই ছেলে নিজের বন্ধুকে ধোঁকা দিয়ে বন্ধুর বোনকে নিয়ে পালিয়েছিল। কিন্তু তুই তো এমন কিছু করিস নি। উল্টো তুই সকল প্রকার চেষ্টা করেছিস আয়না থেকে নিজেকে দূরে রাখার।আজ এই কারণে আয়না এখন তোর নাম ও শুনতে চায় না। না তুই ভালোবাসার কারণে আয়না থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারছিস।আর না নিজের বন্ধুত্বের কারনে ওকে কাছে নিয়ে আসতে পারছিস।

আরশাদের কথার সাথে সম্মতি প্রকাশ করে রুদ্র বলল।

আরশাদ ঠিক বলেছে। তাছাড়া তুই একবার আয়নার সাথে আমাদের কথা বলতে দে। সকল কিছু ক্লিয়ার করতে দে। তারপর তো এমনো হতে পারে আয়না তোকে আগের মতো ভালোবাসছে।

আব্রাহাম একটি তপ্ত শ্বাস ফেলে বলল।

তোদের কি মনে হয় আমি আয়না কে আমি কিছু বলিনি। ওকে হাজার বার বলার পরেও ও আমাকে ঘৃণা করে। এখন এই সকল কথা বাদ দে এখন বাড়িতে চল অনেক রাত হয়ে গেছে।

আব্রাহামের কথায় তারা দুজনে সম্মতি প্রকাশ করে। নিজেদের বাড়ির উদ্দেশ্যে চলে যায়।
___________________________________

মহিমা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সামনে থাকা কাগজটির উপর। মহিমা যেই কাগজটির দিকে তাকিয়ে আছে সেটি ডিভোর্স পেপার। কিছুক্ষণ আগে মহিমা ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দিয়েছে। ডিভোর্স পেপার রাজিব পাঠিয়েছে এটা জানা সত্ত্বেও এখন তাদের ডিভোর্স হবে না।তাই মহিমা ডিভোর্স পেপারটি সযত্নে রেখে দিল কারণ এখন তাদের ডিভোর্স না হলেও বাচ্চা হওয়ার পর ডিভোর্স হয়ে যাবে। রাজিব মহিমার গ্রামের বাড়িতে ডিভোর্স পেপার পাঠিয়েছে কারণ কেউ জানেনা রেহানা বেগম তার তিন মেয়েকে নিয়ে কোথায় গিয়েছে। ডিভোর্স পেপার গ্রামের বাড়িতে দিয়ে গেলেও।সিরাত শামসুজ্জামানের টের পাওয়ার আগেই ডিভোর্স পেপার পাশের বাড়ির ভাবিকে দিয়ে সরিয়ে নিয়ে ছিল।ওই ভাবিতো সব খবরা খবর সিরাত কে দেয় যে তাদের বাড়িতে কি চলছে।

মহিমার কেনো দুঃখ নেই রাজিব তাকে ডিভোর্স পেপার পাঠিয়েছে। মহিমা আরো স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে কিছুদিন পরেই রাজিব টের পাবে সে কাকে ছেড়ে কাকে বেছে নিয়েছে। কারন যেই মেয়েরা বিবাহিত পুরুষের সাথে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে তারা আর যাই হোক চরিত্রবান ও বিশ্বাসের যোগ্য হতে পারে না।

মহিমা নিজের পেটের উপর হাত রাখে তার বাবুটা লড়ছে। এখন মহিমার সাড়ে সাত মাস চলছে। চলতে ফিরতে তার কিছুটা সমস্যা হয় এখন। তবুও ভালো লাগে মহিমার। পেটের উপর হাত বুলিয়ে আদর করে সে নিজের বাচ্চাকে।
___________________________________
একটি নতুন সকালের সূচনা ঘটেছে। রুদ্র তার বাবার অফিসে বসে আছে। কত মাস পর রুদ্র অফিসে এসেছে তা সে নিজেও জানে না।আজ এসেছে রুদ্র তার বাবার কাছ থেকে টাকা নিতে। এবং টাকাটা সে নিজের জন্য নিচ্ছে না। টাকা নিতে চাইছে ওই মেয়ের জন্য যেই মেয়ে রুদ্র কে বারবার ফিরিয়ে দেয়। তাকে ইগনোর করে ,সবার সামনে তাকে অপমান করে কিন্তু যখন টাকার প্রয়োজন হয় তখন ফোন দিয়ে শুরু রুদ্র রুদ্র করতে থাকে। রুদ্র ও গলে যায় কিন্তু টাকা দিয়ে দিলে আর রুদ্রের খবর ও নেই না।

রুদ্র তার বাবার উদ্দেশ্যে বলে উঠলো।

বাবা তুমি টাকাটা দিচ্ছ না কেনো?

কারন তুমি নিজের জন্য টাকা না নিয়ে ওই মেয়ের জন্য নিতে চাইছো।ওই মেয়েকে আমি আমার এক টাকাও দিবো না।

বাবা ওই মেয়ে তোমার হবু পুত্র বধূ।

কখনো না, ওই মেয়ের সাথে আমি তোমার বিয়ে হতে দিবো না।ওই মেয়ে তোমার যোগ্য না।

রুদ্র কথাটি শুনে তার হাতের কাছে থাকা সব কিছু ফেলে দিলো। রুবেল মির্জা খুব ভালো ভাবে জানে রুদ্র এখন এমন কিছুই করবে। এবং তাকে থামাতে যাওয়া ও বিথা কারণ রুদ্র এখন কারো কথা শুনবে না। রুদ্র রুবেল মির্জার কেবিনে ভাংচুর করছে সকলে বাইরে থেকে আওয়াজ শুনলেও কারো ভিতরে এসে দেখার সাহস নেই।

রুদ্র তার হাতে একটি ল্যাপটপ তুলে নেয়। ল্যাপটপটি যেই না ধরে আছাড় মারবে তখনি পিছন থেকে কেউ বলে উঠলো।

এই খবরদার ওটা ভাংগবে না ওটাতে আমার কষ্ট করে তৈরিকৃত ডিজাইন আছে।

রুদ্র পরিচিত কন্ঠ শুনে পিছনে তাকাতেই দেখতে পেলো সিরাত দাঁড়িয়ে আছে।সিরাত কে দেখে রুদ্র অবাক হয়ে বলল।

তুমি আমাদের অফিসে কি করছো?

সিরাত খুব স্বাভাবিক ভাবে বলল।

আমি এই অফিসে কাজ করি।

কি তুমি আমাদের অফিসে কাজ করো।আর আমাদের অফিসের একটি সামান্য কর্মচারী হয়ে আমাকে বলছো আমাদের জিনিস ভাংগতে না।

হ্যা বলছি কারন ল্যাপটপটি আমাকে দেওয়া হয়েছে অফিস থেকে।আর এতে আমার অনেক কষ্টে তৈরি করা ডিজাইন আছে।তাই তুমি এটা ভাংগতে পারবে না।

ও এই কথা তাহলে তো আমার এই ল্যাপটপ সবার আগে ভাংগা উচিত ছিল।

কথাটি বলে রুদ্র ল্যাপটপটি আছাড় মারবে তার আগেই সিরাত বলে উঠলো।

যদি তুমি এই ল্যাপটপ মাটিতে আছাড় মারবে তো।

সিরাতের কথার সাথে সাথে রুদ্র বলল।

তো,

তো, সেদিন তোমার গাড়ির যেই অবস্থা করেছিলাম না। আমার ল্যাপটপ ভাংগলে তোমার ও ঠিক একই অবস্থা হবে বুঝেছ।

উফ আমি অনেক ভয় পেয়েছি, সত্যি ভয় পেয়েছে।এই যে আমি ল্যাপটপ রেখে দিলাম তোমার কথা মতো। কিন্তু আজ থেকে তোমাকে জ্বালানোর পূর্ণ দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিলাম বুঝেছ।

কথাটি বলেই রুদ্র নিজের বাবার দিকে তাকিয়ে আবার বলল।

বাবা কাল থেকে আমিও অফিসে জয়েন করব।

কথাটি বলেই রুদ্র ফুল মুডে অফিস থেকে বের হয়ে যায়। এতক্ষণ রুবেল মির্জা সিরাত ও রুদ্র কে পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। তিনি ভাবতেও পারেননি তার ছেলে এত তাড়াতাড়ি শান্ত হয়ে যাবেন।তার থেকেও বড় কথা রুদ্র অফিসে আসবে বলে জানিয়েছে। স্বপ্নের মতো লাগছে। তখনি সিরাত বলল।

ও আপনার ছেলে,

রুবেল মির্জা মাথা নেড়ে হ্যা বুঝালেন।

আদর দিতে দিতে মাথায় উঠিয়ে ফেলেছেন।তাই এখন আপনার কথাও শুনে না।এখনো সময় আছে মাথার থেকে নামিয়ে ওকে মাটিতে আনুন।

রুবেল মির্জা সিরাতের কথা শুনে আবার মাথা নেড়ে হ্যা বুঝালেন।সিরাত বের হয়ে গেল কেবিন থেকে নিজের ল্যাপটপ নিয়ে।সিরাত বের হতেই রুবেল মির্জা তার স্ত্রী কে ফোন দিয়ে খুশির সংবাদটি জানিয়ে দিলেন।যে রুদ্র কাল থেকে অফিসে আসবে।
___________________________________
আজ শামসুজ্জামানের বাড়িতে এক প্রকার তান্ডব চলেছে। শামসুজ্জামান এখন বাড়িতে নেই বাইরে গিয়েছে।শামসুজ্জামানের দ্বিতীয় স্ত্রী বসে বসে কান্না করছেন কারণ …

#চলবে…

#তুমি_শুধু_গল্প_না_আমার_ভালোবাসা
#আমেনা_আক্তার
#পর্ব_১২

শামসুজ্জামানের দ্বিতীয় স্ত্রী বসে বসে কান্না করছেন।তার পাশেই বসে আছে উনার ছেলে। শামসুজ্জামান কাল বিকালে বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় বলে গিয়েছিল রাতে আর ফিরবে না। শামসুজ্জামানের না থাকার লাভ উঠাতে চাইছিলেন তার দ্বিতীয় স্ত্রী।তাই নিজের পুরনো প্রমিক কে ডেকে আনেন বাড়িতে। অনেক দিন ধরে শামসুজ্জামানের দ্বিতীয় স্ত্রীর মন ছটফট করছিল পুরোনো প্রেমিকার সঙ্গ পাওয়ার জন্য। কেনো মতে সুযোগ হয়ে উঠছিল না। তাই রাতে তার প্রেমিক কে ডেকে আনেন তিনি। কিন্তু হঠাৎ করে শামসুজ্জামান বাড়িতে ফিরে আসেন এবং নিজের দ্বিতীয় স্ত্রীকে অন্য পুরুষের সাথে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না । যখন তিনি বুঝতে পারলেন কি ঘটেছে তখন ইচ্ছা মতো ওই লোককে মারতে লাগলেন। লোকটি শামসুজ্জামান কে জানিয়েছে অনেক বছর ধরে তাদের মধ্যে সম্পর্ক। আগের বাড়িতে থাকতে তো প্রায় সময় দুজনে একসাথে রাত্রি যাপন করতেন। শামসুজ্জামান তো ওইখানে বেশিদিন থাকতেন না।এর পূর্ণ সুযোগ এই মহিলা উঠাতেন। লোকটি আরো জানিয়েছেন উনি ছাড়াও আরো অনেক লোকের সাথে অবৈধ সম্পর্ক আছে উনার দ্বিতীয় স্ত্রীর।

কথাগুলো শুনে শামসুজ্জামান যেনো বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। উনি রাতেই বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় আর ফিরেনি।
এখনো বসে কান্না করছে শামসুজ্জামানের দ্বিতীয় স্ত্রী। উনি এই জন্য কান্না করছেন না যে,উনি ভুল করেছেন উনার কান্না এই জন্য শামসুজ্জামান বাড়িতে ফিরে উনার সাথে কি করবে। উনার ভাবনার মাঝেই বাড়ি ফিরে আসলেন শামসুজ্জামান।এসেই যখন উনার স্ত্রী কে বাড়ির উঠানে বসা দেখলেন কাল রাতের ক্ষোভ আবার মাথা চারা দিয়ে উঠলো।

শামসুজ্জামান তার দ্বিতীয় স্ত্রীর কাছে গিয়ে প্রথমে উনাকে একটি কষিয়ে থাপ্পড় মেরে দিলেন। এতক্ষণ শামসুজ্জামান কে খেয়াল না করায় হঠাৎ থাপ্পড়ে হচকচিয়ে গেলেন উনার স্ত্রী। শামসুজ্জামান টেনে হিচরে ভিতরে নিয়ে গেলেন উনার স্ত্রীকে এবং বললেন।

মা*গি আমি তোরে খাওয়ায় পড়ায় সব কিছু দেয় আর তুই ঘুমাস অন্য জনের সাথে। তোর জন্য আমার সংসার আমি নিজের হাতে নষ্ট করে ফেলেছি। তোর জন্য আমার প্রথম বউয়ের সাথে আমি বেইমানি করেছি।যে আমাকে ছেড়ে অন্য পুরুষের দিকে কখনো চোখ তুলে তাকায় ও নেই।আর সেই তুই কিনা অন্য পুরুষদের সাথে নষ্টামি করিস।তোর কতজনকে লাগে।আমারে দিয়ে তোর হয়নাই।

কথাটি বলেই বেদর মার মারতে লাগলেন শামসুজ্জামান তার স্ত্রী কে। উনার স্ত্রী উনার কাছে কেঁদে কেঁদে ক্ষমা চাইছে এবং মারতে না করছে। কিন্তু কেনো কথায় শুনছে না শামসুজ্জামান।
___________________________________
সাইরা ভয়ে ভয়ে এদিক সেদিক তাকিয়ে নিজের ক্লাস রুমের দিকে যাচ্ছে।সাইরা কে এভাবে ভয় পেতে দেখে নীলিমা জিজ্ঞেস করলো।

তোর কি হয়েছে , কিছুদিন ধরে দেখছি তুই কিছুটা ভয়ে ভয়ে থাকিস।

সাইরা নীলিমার কথার প্রতি উত্তরে বলল।

আমাকে কদিন ধরে একটি ছেলে খুব ডিস্টার্ব করছে। আমাকে প্রপোজ করেছিল কিন্তু আমি না করে দিয়েছি। আমাকে ধমকি দিয়েছে কলেজে এসে আমাকে উঠিয়ে নিয়ে যাবে।আজ আমি তাকে কলেজের বাইরে দেখেছি।

তুই কাওকে বলেছিস এই কথা।

না বলিনি, আপুকে বললে আপু ওই ছেলেকে উচিত শিক্ষা দিতো। কিন্তু আপু কিছুদিন ধরে খুব ব্যস্ত তাই বলা হয় নি। এখন মনে হচ্ছে না বলে খুব বড়ো ভুল করে ফেলেছি।

সাইরার কথা শেষ হতেই একটি ছেলে এসে সাইরা কে বলল।

আপু আপনাকে রাজ ভাই কলেজের পিছনের দিকে যেতে বলেছে।

কথাটি বলেই ছেলেটি চলে যায়। ছেলেটি যেতেই নীলিমা বলল।

ওইদিকটি তো অনেকটা শুনশান, ওখানে তোকে কেনো ডেকেছে। আমার মনে হয় তোর যাওয়া উচিত হবে না।

নীলিমার কথা শুনে সাইরা নির্ভয় ভাবে বলল।

আরে কিছু হবে না,রাজ অনেক ভালো আমাদের কিছুই করবে না।আর তাছাড়া রাজের সাথে এখন তার বন্ধুরাও হবে।তো টেনশন নেওয়ার কেনো কারন নেই।

কথাটি বলেই সাইরা কলেজের পিছনের সাইডে হাঁটা ধরলো। সাইরা সেখানে পৌঁছাতেই হঠাৎ করে একটি ছেলে সাইরার পায়ে ধরে মাফ চাইতে লাগলো।
হঠাৎ করে সকল কিছু ঘটার সাইরা কিছুটা হচকচিয়ে যায়। ছেলেটিকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে তাকে প্রচুর মারা হয়েছে। সাইরা সামনে তাকাতেই দেখতে পেলো রাজ সামনে হাতে একটি রড নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিছুটা দূরে তার বন্ধুরা চেয়ারে বসে আছে।রাজ সাইরার সামনে এসে ছেলেটির চুল নিজের আঙ্গুলের মুঠোয় নিয়ে নেই। সাইরার সামনে ছেলেটির মাথা উঁচু করে ধরে।সাইরা ছেলেটিকে দেখে চমকে উঠে কারন এটি সেই ছেলে যে এতদিন তাকে ডিস্টার্ব করছিল। রাজ দাঁতে দাঁত চেপে বলল।

এটি সেই ছেলেটি না যে তোমাকে ডিস্টার্ব করছিল।

সাইরা মাথা নেড়ে হ্যা বুঝয় সাথে সাথে রাজ রড দিয়ে বারি মারে ছেলেটিকে। সাথে সাথে ছেলেটি কাঁতরাতে থাকে ব্যথায়। এভাবে অমানবিক ভাবে রাজকে ছেলেটিকে মারতে দেখে ভয়ে পুরো শরীর কাঁপতে লাগল।

রাজ সাইরার একটু কাছে এসে রাজ বলতে লাগলো।

যদি এর পরের বার কেউ তোমাকে ডিস্টার্ব করে। তাহলে তুমি সর্বপ্রথম আমাকে বলবে।আর যদি না বলেছ তাহলে আগে আমি তোমার ব্যবস্থা করব তারপর তার।

কথাটি বলেই রাজ সেখান থেকে চলে যায়।

রাজের পিছনে তার সকল বন্ধুরাও চলে যায় শুধু থেকে যায় নূর ও হৃদিতা। নূর ও হৃদিতা সাইরার কাছে এসে বলল।

এখন থেকেই এই সকল কিছুর অভ্যাস করে নাও।ভয় পেলে হবে না কারণ ওকে তোমারি সামলাতে হবে।তাই ওর অভ্যাস যত তাড়াতাড়ি তুমি করে নিবে তোমার জন্য ততই ভালো।

কথাটি বলেই তারা দুজনেও চলে যায়।আর সাইরা সেখানে দাঁড়িয়ে থাকে মূর্তির মতো।

সাইরার কাছ থেকে এসে সকলে মিলে আড্ডা দিচ্ছে। তখনি হৃদিতা রুদ্রের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো।

রুদ্র তুই নাকি আজ অফিসে যাবি।

হুম যাবো,

রুদ্রের কথা শুনে আরশাদ রুদ্রের উদ্দেশ্যে বলল।

এ আমি কাকে দেখছি,ও আমাদের রুদ্র নাকি অন্য কেউ। যেই ছেলে অফিসের নাম শুনলেও নাক সিঁটকায় সেই ছেলে নাকি যাবে অফিসে।

আরশাদের কথার সাথে তাল মিলিয়ে আব্রাহাম বলল।

ওকি আর এমনি এমনি যাবে কেনো, কারন ছাড়া ও নিশ্চয়ই যাবে না। কিন্তু কারনটা কি।

রাজ বলল।

কারনটি হলো সিরাত, যখন থেকে রুদ্র জানতে পেরেছে সিরাত ওদের অফিসে কাজ করে। তখন থেকে রুদ্র একপ্রকার পাগল হয়ে গিয়েছে অফিসে যাওয়ার জন্য।

নূর মুচকি হেসে বলল।

ব্যাপার কি দোস্ত, আমরা তো তোর এক্স গার্লফ্রেন্ড এর জন্যও তোকে এত ডিস্পারেট দেখিনি। কিন্তু সিরাতের জন্য এত ডিস্পারেট হওয়ার কারণ কি।

সকলের কথা শুনে রুদ্র ফুঁসে উঠল এবং বলল।

তোদের ফালতু কথা বন্ধকর,আমি শুধু অফিসে যাচ্ছি ওই মেয়েকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য। আমাকে ওই মেয়ে অনেক জ্বালিয়েছে এখন আমি ওকে জ্বালাবো।ইনিওয়ে আমি এখন অফিসে যাবো আমার লেট হয়ে যাচ্ছে।

রুদ্র চলে যেতেই নূর হৃদিতা হেসে বলল।

কে কাকে জ্বালায় তা তো সময় বলে দিবে।

কথাটি বলেই সকলে একসাথে হেসে উঠলো।
___________________________________
রুদ্র এইমাত্র অফিসে এসে পৌঁছাল। রুদ্র কে দেখে তার বাবা রুবেল মির্জা খুব খুশি হলেন। রুদ্র তার বাবাকে বলল তার নির্দিষ্ট কেবিন দেখিয়ে দিতে। রুবেল মির্জা ও খুশি মনে রুদ্র কে তার কেবিন দেখিয়ে দিলো তখন রুদ্র বাবার উদ্দেশ্যে বলল।

বাবা সিরাত কোন পোস্টে চাকরি করে আমাদের অফিসে।

ডিজাইনারের পোস্টে,আর মেয়েটি খুবই ভালোভাবে নিজের কাজ করে।কাজে কখনো ফাঁকি দেয়না।

আচ্ছা তো আমিও দেখতে চাই, তোমার ওই সিরাত কে কেমন কাজ করে ওকে ডাকো।

কালকের ব্যবহারে রুবেল মির্জা ভালোভাবে বুঝে গিয়েছে। রুদ্র আগের থেকেই সিরাত কে চিনে। এবং সিরাত কে রুদ্র খুব বেশি পছন্দ করে না। রুবেল মির্জা এটাও ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন রুদ্র অফিসে এসেছে শুধু মাত্র সিরাতের জন্য।তাই তিনি সিরাত কে ডাক দিলেন।

সিরাত কেবিনে ঢুকতেই তার চোখ পড়লো দুই বাবা ছেলের উপর। রুদ্র সিরাত কে দেখে শয়তানি হাসি দিয়ে বলল।

মিস.সিরাত আমি তোমার এইমাত্র অনেক সুনাম শুনলাম আমার বাবার মুখ থেকে। আমিও দেখতে চাই তুমি কেমন কাজ করো তাই..

রুদ্রের কথা পুরো করতে না দিয়ে সিরাত প্রশ্ন করলো।

তুমি কে?যে আমার কাজের জবাবদিহি আমি তোমাকে করব?

সিরাতের কথা শুনে রুদ্র ফুঁসে উঠলো। রুদ্র বসা থেকে দাঁড়িয়ে বলল।

এটা আমার বাবার কোম্পানি।আর এখন থেকে আমিও এখানে কাজ করব।তাই তোমায় আমার কথা শুনতে হবে।

আচ্ছা তুমি এখানে কাজ করবে,তো কি কাজ করবে তুমি এখানে।তা নিশ্চিত করেছ।

দেখো সিরাত তুমি..

তোমার ভিতর এমন কোনো বৈশিষ্ট্যতা নেই যার কারণে তোমাকে আমার দেখতে হবে।

সিরাতের ভাব অলসহীন ভাবে কথা শুনে রুদ্র চেঁচিয়ে বলল।

তুমি আমার সাথে এভাবে কথা বলতে পারো না।

তো তুমি কি চাও আমি তোমার সাথে প্রেম ভালোবাসার কথা বলবো।

সিরাতের কথায় রুদ্র হচকচিয়ে যায়। রুদ্র কি বলবে ভেবে পায় না। কিন্তু সিরাত কে কাবু করা যে এতটা সহজ হবে না তা অবশ্য বুঝতে পেরেছে রুদ্র। রুদ্র কে কিছু না বলতে দেখে সিরাত রুবেল মির্জার থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায়। রুবেল মির্জা মনে মনে খুব খুশি হয়েছেন। এখন তার মনে হচ্ছে তার রাগি ছেলেটাকে জব্দ করার মানুষ পেয়ে গেছে।সিরাত যেতেই রুদ্র রুবেল মির্জাকে বলল।

বাবা তুমি আমাকে যত দ্রুত সম্ভব আমার কাজ বুঝিয়ে দেও।আর হ্যাঁ আমার আন্ডারেই যেনো সিরাত কে কাজ করতে হয় সেই ব্যবস্থা করো।যদি এমন না হয় আমি কাল থেকে অফিসে আসবো না।

#চলবে…
ভুল হলে ক্ষমা করবেন আশা করি।