#তুরাগের_শ্যামলা_ঢেউ
#পর্বঃ১০
#Jhorna_Islam
“আমিতো কিছু শুরু করলাম না এতেই এতো কাঁপা-কাঁপি? শুরু করলে মনে হয় খুনের দায়ে যাবত জীবন কনফার্ম। ” আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে ব্যঙ্গ করে বলে তুরাগ।
মাথাটা আর এতো শ’ক নিতে পারছে না। ঢেউ মনে হয় সারাজীবন এতো শ’ক খায়নি গত কয়েকদিনে এতো পরিমাণ শ’ক খেয়েছে। কি বলছে এসব ব’দ লোকটা মনে মনে ঢেউ তুরাগকে নির্লজ্জ ট্যাগ লাগিয়ে দিলো। ইচ্ছে করছে কয়েকটা লাগিয়ে দিতে কিন্তু না লোকটার যেই দানবের মতো শরীর ঢেউ কে এক আঙুল দিয়ে খোঁচা দিলেই মনে হয় পরে যাবে। ঢেউ আর চোখে একবার তাকায় তুরাগের দিকে এতো লম্বা পালোয়ানের মতো দেখতে লোকটাকে। লোকটার সামনে ঢেউয়ের নিজেকে নিতান্তই বাচ্চা মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে হাতির পাশে মশা। ছিঃ ঢেউ এসব তুই কি ভাবছিস? এসব ভাবনা বাদ দিয়ে এই লোককে তাড়ানোর বুদ্ধি ভাব। লোকটার মতিগতি একদম ভালো না কখন না জানি স্বামীত্ব ফলাতে চায়।
ঢেউয়ের ভাবনার মাঝেই দরজায় নক পরে।
মা এসেছে ভেবে স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ে। এবার কোনো সুযোগে ঢেউ এখান থেকে চলে যাবে। কিন্তু ঢেউয়ের ভাবনাকে ভেস্তে দিয়ে তুরাগ নিজেই দরজা খুলে।
“সরি তোমাদের ডিস্টার্ব করার জন্য। কিছু টুকটাক খাবার এনেছিলাম। ” হাসি মুখে বলে ঢেউয়ের মা।
“সমস্যা নেই মা আমার কাছে দিন।” বলেই তুরাগ ট্রে টা নিজেই নিয়ে নেয়।
তুরাগের মুখের মা ডাক শুনে থমকে যায় ঢেউয়ের মা। উনি কখনো কল্পনা ও করেননি তুরাগ এতো সহজে মা ডাকবে উনাকে। খুশিতে মন টা ভরে যায়। মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করে দেয় তুরাগকে।
তুরাগের মুখ দেখে কিছু বুঝার উপায় নেই। সে নির্বাক ভাবে ঢেউয়ের মায়ের সাথে কথা বলে দরজাটা আবারও লাগিয়ে দেয়।
কফির কাপ উঠিয়ে চুমুক বসায় তুরাগ।
ঢেউ চুপচাপ পর্যবেক্ষন করছে সব। লোকটা কেমন গম্ভীর মুখে কফি খাচ্ছে।
“আপনার মা দেখি ভালোই কফি বানান। আই লাইক ইট।”
ঢেউ চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে কোনো উত্তর দেয় না ।
“আপনি কফি বানাতে পারেন?”
“না।” সোজাসাপটা উত্তর দেয় ঢেউ।
” তাহলে কফি বানানোটা আপনার মায়ের থেকে শিখে নিবেন। আপনার বরের আবার প্রতি বেলায় বেলায় কফি লাগে। ”
ঢেউ মনে মনে বলে সখ দেখলে বাঁচি না। আসছে কফি খোর উনাকে নাকি আবার আমার কফি বানানো শিখে প্রতি বেলায় বেলায় করে খাওয়াতে হবে। ব’দ লোক একটা। আমিতো তোদের বাড়িতেই যাবো না আবার আসছে কফি খেতে ।
আপনি কি কথা কম বলেন নাকি? কিন্তু এমনটাতো মনে হচ্ছে না। আমার সাথে কি কথা বলতে আনকমফোর্টেবল ফিল করছেন?
এতক্ষনে বুঝতে পারছে মনে মনে মুখ ভেংচি দেয় ঢেউ।
“হ,,,,, বলতে গিয়েও চুপ হয়ে যায়। হ্যা বলতে চেয়েছিলো মনে মনে কিন্তু মুখেই আওয়াজ করে বলে ফেলেছে।
তুরাগ কিছু সময় তাকিয়ে থাকে ঢেউয়ের দিকে। ঢেউ হাত কচলাচ্ছে আর দাঁত দিয়ে বারবার ঠোঁট কামড়াচ্ছে।
” এখানে বসুন কতক্ষন দাঁড়িয়ে থাকবেন আপনি ঢেউ। ”
“ঢেউ কিছু বলে না
” আপনার মুখ এমন শুকনো কেনো? খাওয়া দাওয়া করছেন না ঠিক মতো? চোখের নিচে ও দেখছি ডার্ক সার্কেল পরে গেছে। আপনি কি কোনো কারণ নিয়ে টেন্সড?”
”””””””””””’
আমি কিছু জিজ্ঞেস করছি। কিছুটা জোর গলায় বলে তুরাগ।
“কি-কিছু না।”
“বলবেন না আমাকে?”
ওকে ফাইন। ভালো থাকবেন আমি চলে যাচ্ছি। বলেই তুরাগ কফির কাপ সাইড টেবিলে রেখে বসা থেকে উঠে চলে যেতে ধরে। কয়েক কদম দিয়ে দাঁড়িয়ে ঢেউয়ের দিকে ফিরে বলে,,,”আপনাকে জাস্ট দুই দিন সময় দিলাম ঢেউ নিজেকে ঠিক করার। আগের মতো হয়ে যান নয়তো দুই দিন পর আপনার ঠিকানা হবে আমার বাড়ি। আপনাকে তখন ঠিক করবো আমি। এবার আপনার হাতে সব আপনি নিজে নিজে ঠিক হবেন নাকি আপনার স্বামীর হাতে ঠিক হবেন। আপনার যেমনটা ইচ্ছা।
কথাগুলো বলে মুহূর্তের মধ্যে তুরাগ চলে যায়। ঢেউ তুরাগের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে । লোকটা কি বলে গেলো। লোকটা নিরবে হুমকি দিয়ে গেলো তাকে।
ঢেউ তুরাগের কল বা মেসেজের অপেক্ষায় থাকে কিন্তু লোকটা তাকে আর মেসেজ বা কল কিছু দেয় না। হুট করে কি হলো বুঝতে পারছে না। আচ্ছা কোনোভাবে কি জানতে পেরেছে ঢেউয়ের বিয়ে হয়ে গেছে? জানতে পেরেছে ভালো কথা ঢেউয়ের সাথে তো একবার যোগাযোগ করবে। একবার তো কথা বলবে। ঢেউ যখন ভাবনায় ব্যস্ত তখন তার মা রুমে ঢুকে।
“কিরে তুরাগের সাথে পরে কথা হয়েছে তোর?”
তুরাগের কথা শুনে আবারও চমকে যায় ঢেউ৷ বুকটা কেমন কেঁপে উঠলো তার। কয়েক সেকেন্ড পর বুঝতে পারলো মা কোন তুরাগের কথা বলেছে। ঢেউ খুব বিরক্ত হয়। দুনিয়ায় কি আর কোনো নাম ছিলো না? এই লোকেরও কেন তুরাগ নামই হতে হবে? এমনিতেই কষ্টের সীমা নেই এই নামে আরো বেশি কষ্ট দিচ্ছে। এই লোকের নাম বলে মা বারবার তার তুরাগের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।
“আমার সাথে কেনো কথা হবে ঐ লোকের? ” বিরক্তি নিয়ে বলে ঢেউ।
” ওমা তাহলে কার সাথে কথা হবে? তোর বর তোর সাথেই কথা হবে।”
“আমি ঐ লোককে বর হিসেবে মানি না।”
“এক থাপ্পড় খাবি ঢেউ। ” তুরাগের মধ্যে কি এমন কমতি আছে যে মানছিস না? দেখতে ভালো, ব্যবহার ভালো, ভালো চাকরি করে, ফেমেলি ভালো আর কি চাই তোর?
“আমার কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। এখন যাও তুমি। ”
“হ্যা যাচ্ছি। তুরাগ বলে গেলো আমাকে সে যা বলেছে তা মেনে চলতি। নয়তো তারাতাড়ি তোকে নিয়ে যাবে। কি বলেছেরে ও?”
“জানি না মা যাও তো।”
ঢেউয়ের ইমির সাথে কথা হয়। রাগ এক সাইডে রেখে কথা বলেছে। কয়েকদিন আগে ঢেউ জানতে পেরেছিল তুরাগ নাকি তার সাথে ফেসবুকে এড হয়েছে। এটা ইমিই তাকে বলেছে।
তুরাগের সাথে যোগাযোগ করার জন্যই ইমির সাথে কথা বলা। তুরাগ ঢেউকে ফেসবুকে ব্লক করে রেখেছে৷ ইমি যদি বলে কোনোভাবে রাজি করাতে পারে।ইমি জিজ্ঞেস করেছিলো কিসের জন্য? ইমিকে সাত পাঁচ বুঝিয়েছে ঢেউ। অনেক সময় পরে জানায় তুরাগ রাজি হয়েছে দেখা করার জন্য।
পরের দিন বিকেলে ঢেউ রেডি হয়ে যায় দেখা করতে। মনে খুব ভয় সংশয় কি হবে। তুরাগের উপর আজ সব। ঢেউয়ের ভালো থাকা সুখে থাকা সব।
একটা রেস্টুরেন্টে দেখা করবে। ঢেউ আগেই গিয়ে বসে আছে। সাথে ইমিও আছে । ইমিকে এখনও কিছু বলেনি ঢেউ। তুরাগের জন্য অপেক্ষা করছে দুইজন।। ইমি বসে বসে কফির কাপে চুমুক দিচ্ছে আর মোবাইল দেখে দেখে হাসছে। ঢেউ বিষয় টা লক্ষ করলেও কিছু বলছে না সে এখন টেনশনে আছে তুরাগ আসলে কি দিয়ে শুরু করবে।
মিনিট পাঁচেক পর তুরাগ রেস্টুরেন্টে ঢুকে। ঢেউ তুরাগ কে দেখে একটা শুকনো ঢুক গিলে। কেন যেনো গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।
তুরাগ এসে হাসি মুখে ওদের সামনের চেয়ারে বসে পরে।
“হেই কি অবস্থা তোমাদের কেমন আছো? ”
তুরাগের প্রশ্নে ইমি উত্তর দেয় ঢেউ চুপচাপ। তুরাগকে দেখছে সে কি স্বাভাবিক ভাবে আছে যেনো কিছুই হয়নি। অথচ এতক্ষনে ঢেউকে দেখে পাগল হয়ে যাওয়ার কথা।
তুরাগ এসে কফি অর্ডার করে দুই কাপ।ঢেউরা আগেই কফি নিয়েছে তাই আর কিছু নেয়নি। তুরাগ জানায় তার বন্ধু আসবে তাই দুই কাপ অর্ডার করেছে। সকলেই এখন চুপচাপ।
এরমধ্যে তুরাগ কিছুটা চিল্লিয়ে বলে,,, টি স্কয়ার এদিকে। হাত দিয়ে ইশারা করে দেখায়।
ঢেউ সামনের দিকে তাকিয়ে স্তব্ধ হয়ে যায়। বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়। বিপদ যখন আসে সব দিক দিয়েই আসে। আর বিপদ মনে হয় ঢেউকে একটু বেশিই পছন্দ করে।
#চলবে?,,,,