#তুরাগের_শ্যামলা_ঢেউ
#পর্বঃ১২
#Jhorna_Islam
ঢেউ কাঁদছে খুব করে। এই জীবনে কান্নাই যেনো তার সংঙ্গী।
তুরাগের শ্যামলা ঢেউ নামটা তার একটা আবেগ অনুভূতির অংশ। তুরাগ তাকে এই নামে ডাকতো। তার শ্যামলাবতীকে এই নামে কি সুন্দর করে ডাকতো। ঢেউ শুধু তার ভালোবাসার মানুষের থেকে এই নামটা শুনতে চেয়েছে কিন্তু তার জোর করে হয়ে যাওয়া স্বামীর থেকে না।
লোকটা কি করে জানলো তুরাগের শ্যামলা ঢেউ এই নামটা। একজনের দেওয়া নাম কেনোইবা এই লোক ডাকবে?
“আপনি এই নামে ডাকছেন কেনো আমায়?”
“নামে ডাকতেও পার্মিশন লাগবে নাকি এখন? কি যোগ আসলো বউকে ভালোবেসে আদর করে একটা নামে ডাকতেও পার্মিশন লাগবে হাহ্।” অসহায় কন্ঠে বলে তুরাগ।
“এই নাম কি করে জানলেন আপনি? ”
“কোন নাম?”
“এই যে তুরাগের শ্যামলা ঢেউ। ”
” একটু আগেই না রাস্তা থেকে কুঁড়িয়ে পেলাম নামটা আপনি দেখেন নি?”
“মজা নিচ্ছেন আমার সাথে? ”
“আপনি কি আমার বেয়াইন হোন?” গম্ভীর কন্ঠে বলে তুরাগ।
তুরাগের প্রশ্নে ঢেউ এবার নিশ্চুপ হয়ে যায়। লোকটা হুটহাট মোড বদলায়, এই ভালো তো এই গম্ভীর। গম্ভীর মোডে থাকলে ঢেউ কেমন অস্বস্তিতে পরে যায়।
“উত্তর দিন।”
কি উত্তর দিবে ঢেউ তার কাছে কি কোনো উত্তর আছে? সেতো এই লোকটার গম্ভীর মুখ দেখেই সব ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।
“চলুন।”
“কো-কোথায়।”
“বউ বাজার । ”
“মানে? ”
“বউ বাজার গিয়ে বউ বিক্রি করবো।”
” বিক্রি করতে হবে না আরেকটা কিনে আনেন গিয়ে।” রাগ দেখিয়ে বলে ঢেউ।
” যা পরিস্থিতি দেখতেছি আরেকটা বউ লাগবেই। এই বউ অপরিচিত লোকের মতো আচরণ করে। ”
তুরাগের এহেন কথায় কেন জানি ঢেউয়ের খুব রাগ উঠে যায়। সে হাত শক্ত করে মুঠ করে ধরে দাঁত চিবিয়ে বলে,,,হ্যা করুন আরেকটা বিয়ে আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে দিবো। দরকার পরলে আমি নিজেই সাক্ষী হবো।”
আহা কি দরদী বউ আমার স্বামীর কষ্ট বুঝতে পারছে। এমন বউতো ঘরে ঘরে দরকার।
“একদম বউ বউ করবেন না। ”
“কেনগো বউ?”
” ছিহ্ এমন করে কথা বলছেন কেনো আপনি? ”
“শেষ মুহূর্তে একটু ভালোবাসা দেখিয়ে দিচ্ছি যেনো বউ বলতে পারে আমার স্বামী আমাকে ভালোবাসে।”
“শেষ মুহূর্তে মানে?”
” কারণ একটু পরেই আপনি শিয়ালের ডিনার হতে চলেছেন।”
তুরাগের কথায় ঢেউয়ের হুঁশ ফিরে। চারপাশে তাকিয়ে দেখে অন্ধকার প্রায়। এদিকে এখন মানুষ ও দেখা যাচ্ছে না। রাগ দেখিয়ে হাঁটতে হাঁটতে জনমানবহীন এলাকায় চলে এসেছে। কেমন শুনশান চার পাশ। ঢেউ শুকনো ঢুক গিলে । মনের ভিতর ভয় ঢুকে যায় তার।
সে তারাতাড়ি হাঁটা দেয় বাড়ি যাওয়ার জন্য। অনেকটা সময় নিয়ে হাঁটছে কিন্তু কোনো কুল কিনারা পাচ্ছে না। পথ হারিয়ে ফেলেছে সে এখন তিন রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে সে। কোন রাস্তা দিয়ে যাবে বুঝতে পারছে না। ঢেউ কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে,,,কোন দিক দিয়ে যাবো আমরা?
কোনো উত্তর আসে না।
কি হলো কিছু বলছেন না কেনো? কোন দিক দিয়ে যাবো?
””””””””””””’
তুরাগ আমি আপনাকে বলছি কথা বলছেন না কেনো?
ঢেউ পিছনে ফিরে আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারে না। পিছনে কেউ নেই। লোকটা কোথায় চলে গেলো।
তু-তুরাগ? কোথায় আপনি? তুরাগ শুনতে পাচ্ছেন?
তুরাগের কোনো সারা শব্দ পাওয়া যায় না।
ঢেউ এবার কান্না করে দেয় খুব ভয় করছে তার। কোথায় চলে গেলো লোকটা ঢেউ এতো ডাকছে তাও তার খবর নাই। আশে পাশে কেমন যেনো অদ্ভুত আওয়াজ হচ্ছে। দূরে কোথাও শিয়াল ডাকছে।
তুরাগ? কাঁদতে কাঁদতে ডাকে ঢেউ।
ঢেউ একটা রাস্তা ধরে দৌঁড়ানো শুরু করে আর উপায় নেই। কাঁদতে কাঁদতে দৌড়াতে থাকে পিছন দিক দিয়ে মনে হচ্ছে ঢেউয়ের সাথে সাথে অন্য কেউ দৌড়াচ্ছে। একটা পর্যায়ে ঢেউ হাঁপিয়ে যায় আর দৌড়াতে পারে না। হাঁটুতে ভর দিয়ে হাঁপাতে থাকে। মনে হচ্ছে আজকেই তার শেষ দিন। হুট করেই কেউ ঢেউয়ের সামনে এসে দাঁড়ায় আবছা অন্ধকারে ঢেউ ছায়া দেখতে পায়। ঢেউ ভয় পেয়ে আবার পিছনে দৌড়াতে যাবে তার আগেই কানে আসে,,,, কি শুরু করেছেন আপনি ঢেউ? এতো সময় দৌড়ে সখ মিটেনি? আবার দৌড়ের প্রতিযোগিতা লাগাবেন?
তুরাগ এটা বুঝতে পেরে ঢেউ এক মুহূর্ত ও দেরি করেনি দৌড়ে গিয়ে তুরাগের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ভয়ে ঢেউয়ের হাত পা এখনও কাঁপছে। কান্নার ছলকে কিছু বলতে পারছে না কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বার বার বলছে কোথায় চলে গিয়েছিলেন আপনি?
আ-আমি ককতো ডেকেছি আপনাকে। আআমার খুব ভয় করছে।
তুরাগ বুঝতে পারে ভালোই ভয় পেয়েছে মেয়েটা। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,,, আপনিইতো একা একা চলে এসেছেন এদিকে। আমিতো গাড়ি খুঁজতে গিয়েছিলাম৷ ভেবেছি আপনি হয়তো কাছাকাছিই থাকবেন তারপর খুঁজে যাই আপনাকে পেলাম তাও দৌড়ের উপর ছিলেন। পিছন থেকে কতো ডাকলাম শুনলেনই না।
“আআপনি দৌড়েছেন আমার পিছনে?”
” হ্যা আর নয়তো কে?”
ঢেউ কথা বলে না চুপচাপ তুরাগের বুকের সাথে মিশে থাকে। শরীরের কাঁপুনি এখনও কমেনি। কান্না থামলেও বারংবার হেঁচকি উঠে যাচ্ছে।
“আপনার ব্যাগে পানি আছে? ”
ঢেউ কথা বলে না।
আমি চেক করবো? তুরাগের কথায় ঢেউ এবার তুরাগকে ছেড়ে কিছুটা দূরে সরে যায়। কাঁপা হাতে ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে তুরাগের হাতে দেয়। তুরাগ বোতল নিয়ে মুখ খুলে আবার ঢেউয়ের দিকে বাড়িয়ে দেয়।
“নিন পানি পান করেন।”
ঢেউ অন্ধকারে তুরাগের মুখের দিকে তাকায় কিন্তু কিছুই দেখতে পায় না। খুব পানি তেষ্টা পেয়েছে কথা না বাড়িয়ে পানি পান করে নেয়। তুরাগ এবার ঢেউকে জিজ্ঞেস করে স্বাভাবিক হয়েছে নাকি। হেঁটে যেতে পারবে কি না। ঢেউ জানায় যেতে পারবে।
দুইজনই হাঁটতে থাকে। এরমধ্যে ঢেউয়ের মনে আবার আজব চিন্তার আগমন ঘটে। ঢেউয়ের কেন যেনো মনে হতে থাকে এটা তুরাগ না তুরাগ রূপী অন্য কেউ। আচ্ছা অন্য কেউ ঢেউকে তার সাথে করে নিয়ে যেতে আসেনিতো আবার? ঢেউ আবার ভয় পেতে থাকে। হাটা থামিয়ে
দাঁড়িয়ে যায়।
“কি ব্যাপার ঢেউ কোনো সমস্যা? ” তুরাগ জিজ্ঞেস করে।
”””””””’
“কি হলো কথা বলছেন না যে কোনো সমস্যা হলে আমাকে বলুন। ”
“আ-আপনি মানুষ? ”
“নাহ্ জ্বি’ন। ”
ঢেউ জোরে জোরে দোয়া পড়তে থাকে আর কাঁপতে থাকে।
কিছু সময় যাওয়ার পর ঢেউ বুঝতে পারলো আসলেই এটা তুরাগ কারণ দোয়া পড়ার পরও তুরাগ একই ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। এরমধ্যে পিছন দিকে কিছু একটার শব্দ হয় যার আওয়াজ শুনে মাগো বলে তুরাগের হাত খামচে ধরে। তুরাগ ঢেউয়ের কান্ড দেখে অন্ধকারে নিঃশব্দে হাসে। সারা রাস্তা তুরাগের হাত ধরেই আসে ঢেউ। তুরাগ তাদের বাড়িতে নিয়ে যাবে বললেও ঢেউদের বাড়িতেই যায়। তারা বাড়িতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে সাড়ে বারোটা বেজে যায়। তুরাগ যখন বের হয়ে যাবে বাড়ি থেকে তখন প্রায় একটা বাজে।
বিপত্তি ঘটে তখন যখন ঢেউয়ের মা তুরাগের ফিরে যাওয়াতে বাঁধ সাজে। উনি কিছুতেই তুরাগ কে এতো রাতে বাড়ি থেকে বের হতে দিবেন না।
ঢেউকে আদেশ দিয়ে বলেন তুরাগকে যেনো তার রুমে নিয়ে যায়।
ঢেউ মনে মনে বলে,,বাহ্ মা বাহ্ এই ছিলো তোমাদের মনে।
#চলবে,,,,?