তুরাগের শ্যামলা ঢেউ পর্ব-১৪ এবং শেষ পর্ব

0
14

#তুরাগের_শ্যামলা_ঢেউ
#পর্বঃ১৪(শেষ পর্ব)
#Jhorna_Islam

“ঢেউ কই তুই ডাকছি শুনতে পারছিস না? ” ঢেউয়ের মা দরজায় নক করে একের পর এক ডেকে চলেছে কিন্তু ঢেউ কোনো সাড়াশব্দ করছে না। অনেকটা সময় যাওয়ার পর ও যখন ঢেউ দরজা খুলছে না বা সাড়াশব্দ করছে না এটা দেখে ঢেউয়ের মায়ের মনে ভয় ঢুকে যায়। ঢেউয়ের মা দৌড়ে যায় ঢেউয়ের বাবাকে ডাক দিতে। ঢেউয়ের বাবা এসে ঢেউকে ডাকে কিন্তু তাতেও সে সাড়া দেয় না। অনেকটা সময় যাওয়ার পর দুইজনের মনেই ভয় ঢুকে যায়। ঢেউয়ের কিছু হলোনা তো আবার নাকি ঝুঁকের বসে কিছু করে ফেলেছে মেয়েটা। ঢেউয়ের বাবা দরজা ভাঙার সিদ্ধান্ত নেন।

কিন্তু সাহস পাচ্ছেন না ভাঙার পর যদি অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু দেখতে পান তবে। ঢেউয়ের মা হয়তো বিষয়টা বুঝতে পেরেছে উনি তুরাগ কে কল করে সব বলে।
কিন্তু তুরাগ আসতে আসতে টাইম লেগে যাবে এতোটা সময় অপেক্ষা করাটা ঠিক হবে না। পাশের ফ্ল্যাট থেকে লোক এনে দরজা ভাঙ্গার ব্যবস্থা করেছে।

রুমের ভিতরে ঢুকে ঢেউয়ের মা বাবা দুইজনই অবাক হয়ে যায়। কিছু সময় থ মেরে দাঁড়িয়ে থাকে। ঢেউ ঘুমোচ্ছে। এভাবে ঘুমোতে দেখে বড্ড আশ্চর্য হয়। এতো আওয়াজে ও ঘুম ভাঙলোনা মেয়েটার? ঢেউয়ের মা গিয়ে ডাকতে থাকে।

“ঢেউ, এই ঢেউ উঠ বলছি কিসের ঘুম ঘুমাচ্ছিস তুই? ঢেউ শুনছিস না আমার কথা? ঢেউ কে ধাক্কাতে ধাক্কাতে অনবরত ডাকতে থাকে কিন্তু ঢেউয়ের কোনো নড়াচড়া নেই। একটু পর সাইড টেবিলের দিকে নজর যায় সেখানে একটু খালি ঔষধের পাতা পরে আছে। ঢেউয়ের মা ঢেউয়ের বাবা বলে জোরে চিল্লিয়ে উঠে।

ঔষধের পাতা হাতে নিয়ে বলে আমার মেয়ে শেষ। আমার মেয়ে এটা কি করলো? ঢেউরে মা ও মা?
বিষয়টা বুঝতে আর কারো বাকি নেই ঢেউ কি করেছে। পাশের ফ্ল্যাটের লোকটা পার্লস চেক করে দেখে।
এখনই ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান। ইমিডিয়েট নিতে হবে নয়তো সব শেষ হয়ে যাবে। সকলেই অনেক কষ্টে ঢেউকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে পৌঁছায়। ডাক্তার সুইসাইড কেইস বলে প্রথমে এডমিট করতে রাজি হয় না পরে পরিচিত এক লোকের মাধ্যমে ঢেউকে ইমার্জেন্সিতে নিয়ে যাওয়া হয়।

ঢেউয়ের বাবা মা বাইরে বসে আল্লাহ কে ডাকছে। ঢেউয়ের মা কান্না করতে করতে অবস্থা বেহাল। কিছুক্ষনের মধ্যেই হন্তদন্ত হয়ে হসপিটাল প্রবেশ করে তুরাগ। ঢেউয়ের বাবা মায়ের কাছে যায়। ঢেউয়ের মা বসে আঁচলে মুখ গুঁজে কান্না করছে। ঢেউয়ের বাবা এগিয়ে এসে তুরাগ কে কিছু বলবে তার আগেই সে অপারেশন থিয়েটার ঢুকে যায়।
একটা নার্স অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হয়েছিল সেই সুযোগে তুরাগ ঢুকে পড়ে।

ডাক্তাররা তাদের কাজের মধ্যে নতুন লোক দেখে খুবই অবাক ও বিরক্ত হয়। তুরাগকে কিছু বলতে যাবে তার আগে তুরাগ শুধু বলে,,, নিজেদের কাজ করুন আমিও একজন ডক্টর আর উনার হাসবেন্ড।

ঢেউ বর্তমানে মোটামুটি সুস্থ আছে । ক্যাবিনে শুয়ে জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। সে তো এসব কিছু চায়নি শুধু ভালো ঘুমের জন্য ঘুমের ঔষধ খেয়েছিলো। কিজানি কি হলো তার মনে নাই কয়টা বড়ি খেয়ে নিয়েছে। সকলের ভোগান্তির কারণ হয়েছে।

তুরাগ গলা খেঁকাড়ি দিয়ে ক্যাবিনে প্রবেশ করে। ঢেউ তুরাগের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ছেড়ে দেয়। এই সেই তুরাগ যার সাথে সে দিনের পর দিন ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলেছে। কতো শতো মেসেজ করেছে। অথচ বুঝতেই পারেনি সে যাকে ভেবে এতোদিন কথা বলেছে আসলে তার সাথে কোনোদিন কথাই হয়নি। ঢেউ এটা ভেবেও খুব কষ্ট পায় সে কন্ঠ স্বর পর্যন্ত চিনতে পারেনি।

ঢেউ পুরনো স্মৃতি কল্পনা করতে থাকে যেদিন সে তুরাগের আইডি খুঁজছিল।সেদিন সে তুরাগের আইডি খুঁজে পেলেও সেটা ডিটেকটিভ তুরাগের আইডি ছিলো না। সেটা ছিলো বরং তার স্বামীর আইডি। ঢেউ সেদিন শুধু মাত্র একটা পোস্ট দেখে ভেবে নিয়েছিল সেটা ডিটেকটিভ তুরাগের আইডি। কাল সব ক্লিয়ার হয়ে গেছে ঢেউয়ের সামনে। ঢেউ বুঝতে পেরেছে সে যাকে ভালোবেসে মেসেজ দিয়েছে সেই লোক এখন তার স্বামী। এটাও ভালো মতো বুঝতে পেরেছে এই লোক কোথা থেকে জানতে পেরেছে ঢেউকে তুরাগের শ্যামলা ঢেউ ডাকা। এই লোক নিজেই সেই নাম দিয়েছে।
ঢেউয়ের সামান্য বোকামির জন্য কতো কষ্ট পেয়েছে দিনের পর দিন। কিন্তু এই তুরাগ কে সে কিছুতেই মানতে পারছে না মন থেকে। তুরাগের সাথে ভালো করে কথা ও বলে না।

দেখতে দেখতে অনেকগুলো দিন কেটে যায়। ঢেউ তার নিজের মতো জীবন কাটাতে থাকে। বিবাহিত হয়েও আগের মতো জীবন যাপন করছে সে।এতে অবশ্য তুরাগের কোনো আপত্তি নেই। সে ঢেউ কে নিজের মতো ছেড়ে দিয়েছে। তুরাগ ও সব জানতে পেরেছে আসল কাহিনী এজন্য ঢেউকে আর জোর করেনি তার সাথে থাকতে। ঢেউকে সে বলে দিয়েছে যদি কখনো মনে হয় যে এই লোকের সাথে জীবন কাটানো যায় লোকটাকে নিজের করে নেওয়া যায় তাহলে যেনো নির্দিধায় তার কাছে যায় সে তা
কে সাদরে গ্রহণ করে নিবে।

একদিন ইমা তার আর ডিটেকটিভ তুরাগের বিয়ের কার্ড নিয়ে আসে। আশ্চর্যের বিষয় হলো এতে ঢেউয়ের একটুও খারাপ লাগে না। সে বিষয়টি বুঝতে পেরে ইমার বিয়েতে যাবে বলে জানায়।
বিয়েতে গিয়ে তার স্বামী তুরাগের সাথে দেখা হয়ে যায়। লোকটা কেমন শুকিয়ে গেছে। আশ্চর্যের বিষয় হলো তুরাগ একটি বারও তার দিকে তাকায়নি বরং দূরে দূরে ছিলো। ঢেউয়ের সাথে
অচেনা লোকের মতো আচরণ করেছে। ঢেউ অনেক ভাবে তুরাগের মনোযোগ পাওয়ার চেষ্টা চালিয়েছে কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে।

ঢেউ তুরাগের আচরণে বেশ কষ্ট পায়।বাড়িতে এসে তার খাওয়া ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে। তুরাগের ইগনোরটা তার চোখে ভাসতে থাকে শুধু। একদিন সকালে দরজায় নক পরে। ঢেউ দরজা খুলে দেখতে পায় একজন লোক দাঁড়িয়ে আছে। কি চাই জিজ্ঞেস করতেই জানতে পারে তুরাগ ডিভোর্স পেপার পাঠিয়েছে। সে নাকি দেশের বাইরে চলে যাবে। ঢেউয়ের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পরে। যেখানে সে সম্পর্কটাকে একটু একটু করে মেনে নিচ্ছে।লোকটাকে মেনে নেওয়ার চেষ্টা করছে সেখানে লোকটা সব শেষ করতে চাইছে? রাগে ঢেউ কাগজটা ছিঁড়ে ফেলে।ঐ অবস্থাতেই বেরিয়ে যায়।
ঢেউ চলে যেতেই লোকটা হাসি মুখে মোবাইল কানে ধরে বলে,,, স্যার কাজ হয়ে গেছে।

ঢেউ তুরাগের বাড়িতে ঢুকে থতমত খেয়ে যায়। দরজার পাশে যেতেই সকলে ওয়েলকাম ভাবি বলে চিল্লিয়ে উঠে। বাড়ি সুসজ্জিত মনে হচ্ছে কোনো অনুষ্ঠান। তুরাগ ও নতুন জামাইর মতো সেজে আছে। ঢেউ কিছু বলার আগেই তাকে নিয়ে যাওয়া হয়।ঘন্টাখানেক পর নতুন বউ সাজিয়ে সকলের মাঝে উপস্থিত করা হয়।

সকলের উপস্থিতিতেই তুরাগ হাঁটু গেড়ে বসে ঢেউয়ের সামনে।

” এতোদিন যা ছিলো সব ভুলে যাও। ভেবে নাও এখন সব নতুন করে হচ্ছে। তুমিকি আমার সাথে থাকতে চাও সারাজীবন? এই তুরাগের শ্যামলা ঢেউ হয়ে থাকবে তুমি? উইল ইউ মেরি মি ঢেউ?

ঢেউ কিছু সময় তব্দা খেয়ে থাকে। সকলে উত্তর দিতে বললে তার হুঁশ আসে। ছলছল চোখে তুরাগের দিকে তাকিয়ে সম্মতি জানায়। ঢেউয়ের উত্তরে সকলেই চিল্লিয়ে উঠে।
আবারও নতুন করে ঢেউয়ের সম্মতিতে তাদের শুভ বিবাহ সম্পন্ন করে। ঢেউ প্রতিজ্ঞা করে নিয়তি তাকে যা দিয়েছে তা নিয়েই সে সুখি থাকবে।তুরাগকে আর কষ্ট দিবে না আর না সে নিজে কষ্ট পাবে।

#সমাপ্ত।