তুরাগের শ্যামলা ঢেউ পর্ব-০২

0
14

#তুরাগের_শ্যামলা_ঢেউ
#পর্বঃ২
#Jhorna_Islam

হেই ক্যাপ চু*ন্নি!

কারো মুখে ক্যাপ চু*ন্নি শুনে ঢেউয়ের নাজেহাল অবস্থা। আশেপাশে তাকিয়ে দেখে লোকজন আছে নাকি বা কেউ শুনতে পেলো কি না। আশেপাশে তেমন কেউ নাই এখন। ঢেউ একটা স্বস্তির নিশ্বাস নিয়ে ইমার দিকে তেড়ে যায়। আজ এই মেয়ের খবর আছে একেইতো এদের জন্য মহা ঝামেলায় ফেঁসে আছে সারাক্ষণ আতংকে থাকে এই বুঝি ধরা পরে গেলো আর এরা ওর সাথে মজা করছে৷

ঢেউ দৌড়ে গিয়ে ইমাকে কয়েকটা লাগাতে যাবে এর মধ্যে কারো কন্ঠ শুনে হাত থেমে যায়।

আই কান্ট বিলিভ! কলেজে পরে আপনারা এইভাবে ক্লাস টুয়ের বাচ্চাদের মতো মারামারি করছেন। হাউ ফানি!

ঢেউ আর ইমা দুইজনই ব্রু কুঁচকে তাকায়। সামনে থাকা লোকটা কে দেখে কপালের ভাজ আপনা-আপনি মিলিয়ে যায় তাদের। চোখে ধরা দেয় এক রাশ মুগ্ধতা।

তাদের সামনে একজন সুদশর্ন পুরুষ দাঁড়িয়ে আছে। সাদা শার্ট কালো প্যান্টে লোকটাকে বেশ সুন্দর লাগছে। লোকটার চেহারায় কেমন শান্ত ভাব আছে। ঢেউয়ের কেন যেনো মনে হলো সামনে থাকা লোকটা চোখের শান্তি।

ঢেউয়ের ঘোর কাটে তুড়ি বাজানোর শব্দে।

হ্যালো! আপনাদের ঝগড়া কি শেষ? নাকি আমি এসে ব্যাঘাত ঘটালাম কোনটা? আপনারা চাইলে কন্টিনিউ করতে পারেন।

ঢেউ আর ইমা দুইজনই এবার লজ্জায় পরে যায়। আমতা আমতা করে ঢেউ বলে,, আমরা ঝগড়া করছিলাম না আমরাতো খেলছিলাম।

ঢেউয়ের কথায় লোকটা সরু চোখে পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষন করতে থাকে।

লোকটার এরকম তাকানো দেখে ঢেউ কিছুটা লজ্জায় পরে যায়।

লোকটা ঢেউয়ের কথার প্রতিউত্তরে কেমন করে যেনো একটা হাসি দিয়ে বলে আচ্ছা?

ব্যাস এখানেই যা হওয়ার হয়ে যায়। আঠারো বছরের কিশোরীর মাঝে নতুন গানের সুর এসে গুনগুনিয়ে গান গাইতে থাকে। আকাশ বাতাসে যেনো সাত রঙা প্রজাপতি গান গাইছে আর বলছে কিরে ঢেউ এতোদিনে তুই মনে প্রেমের হাওয়া লাগালি?

ঢেউয়ের সদ্য প্রেমে পা দিতে যাওয়া পা ঐখানেই থেমে যায় যখন লোকটা তাদের প্রশ্ন করতে থাকতে।

আচ্ছা মিসরা প্রিন্সিপাল স্যারের রুম কোনটা একটু দেখিয়ে দিলে খুব উপকার হতো।
আপনি কি নতুন টিচার প্রশ্ন করে ইমা।

ইশশশ আরো আগে কেনো আসলেন না স্যার আপনি? আমরা চলে যাবো আর আপনার আসার বুঝি সময় হলো? মন খারাপ করে ভাবতে থাকে ঢেউ।

আরে আপনারাতো এক লাইন বেশি ভাবছেন দেখি।আমি এখানের টিচার নই। প্রিন্সিপাল স্যারের সাথে দরকার আছে এজন্য এসেছি। আপনারা দেখিয়ে দিতে পারলে ভালো আর নয়তো আমিই খুঁজে নিবো।

ওহ আচ্ছা বলেই ইমা হাত দিয়ে বিল্ডিংয়ের কর্ণার সাইডের রুমটা দেখিয়ে বলে,,ঐ যে দেখছেন ঐ রুমটা, ঐটাই স্যারের রুম।

থ্যাংকস মিসসস,,,,,,?

ইমা হাসি হাসি মুখ করে বলে,,,ইমা।

“ওহ ওয়াও নাইস নেইম!”

ইমা আর আগন্তুক লোকটার কথা শুনে ঢেউ মুখ ভেংচি দেয়। যদিও বা মুখ ভেংচিটা কারো চোখে পড়ে না।।
লোকটা প্রিন্সিপাল স্যারের রুমের দিকে এগিয়ে যায়। কি মনে করে পিছন ঘুরে তাকিয়ে বলে,,, আমি তুরাগ ভূইয়া। একজন ডিটেক্টিভ।

ডিটেক্টিভ শুনে থমকে যায় ঢেউ ইমা দুইজনই। চোখ বড় বড় করে একে অপরের দিকে তাকায় তারা। তাদের মুখের এক্সপ্রেশন দেখে ব্রু কুঁচকে তাকায় তুরাগ।

“আ-আপনি গোয়েন্দা? ” আমতা
আমতা করে বলে ঢেউ।

“ইয়েস এনি প্রবলেম মিস?” (তুরাগ)

“ন-না। না কোনো সমস্যা নাই আপনি যান।
তুরাগ কথা বাড়ায় না এগিয়ে যেতে থাকে।
পিছন থেকে তার কানে আসে,,,,,” শুনুন এই পেশা
আপনার সাথে বড্ড বেমানান। আপনি অন্য কিছু হতে পারলেন না?

তুরাগ মুচকি হাসে কিন্তু পিছনে ফিরে না। তার কাজে সে চলে যায়।

ঢেউ আর ইমা দুইজনই কলেজ থেকে দৌড়ে বের হয়ে যায়। ঠিক করে নেয় কয়দিন আর কলেজেই আসবে না তারা। ক্যাপটা ঢেউ ঐদিন মিটিংয়ের পরে বেঞ্চের নিচ থেকে উঠিয়ে ব্যাগে করে বাড়িতে নিয়ে যায়। একবার বাইরে রেখে যে ভুল করে তা আর দ্বিতীয় বার করেনি সোজা আলমারিতে ঢুকিয়ে তালাবন্ধ করে রাখে।

পরের দিন নিশি কল করে ঢেউ কে কলেজ যাওয়ার জন্য। কিন্তু ঢেউ জানায় সে যাবে না। ঢেউয়ের উত্তরে নিশি বেশ অসন্তোষ প্রকাশ করে। কিছুটা রাগ দেখিয়ে বলে,,,,

“তুই কলেজ যাবি না কেন বেয়াদব? ”

“আমাকে ফাঁসিয়ে দিয়ে ঢং করস? জানিস না কেন যাবো না কলেজে?”

“ওটাতো কবেই মিটে গেছে। ”

“কিছু মিটে নাই। তুই ভাবতে পারছিস সামান্য একটা ক্যাপের জন্য ডিটেকটিভের কাছে চলে গেছে সোজা।”

“হাহাহা হাও ফানি”!

“একদম হাসবি না।”

আচ্ছা যা হাসবো না কিন্তু কলেজে চল। এখনকার ক্লাসগুলো কতোটা গুরুত্বপূর্ণ তুই জানিস না?

“ক্লাসের সাথে আমার এই ছোট্ট জীবনটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ বুঝলি?”

তুই ভয়ে পাগল হয়ে গেছিস ইয়ার। ডিটেকটিভ কেন অন্য কিছু আনলেও তোকে ধরতে পারবে না কারণ ঐদিন একটা সম্মেলনে সবাই কলেজ মাঠে ছিলো।আর প্রিন্সিপাল স্যারের রুমের সিসিটিভি নষ্ট। তোকে একটা কাক পক্ষি ও দেখেনি। সো চিল ইয়ার।

সত্যি বলছিস?

হ্যা।

আচ্ছা ঠিক আছে কলেজ যাবো। ইমাকেও বলছি যাওয়ার কথা।

ওকে আয়। হুদাই কোন শা*লা ডিটেকটিভের জন্য প্যারা নিতেছিলি।

“একদম বকবিনা উনাকে।”

“কাকে?”

“ঐ ডিটেকটিভ কে।”

“কিরে ব্যাপার কি তোর? ওয়ে হয়ে সামথিং সামথিং? ”

শামসুদ্দিন,শামসুদ্দিন ফোন রাখ। বলেই ঢেউ কল কেটে দেয়।

*******

চোরের মন পুলিশ পুলিশ একটা বাক্য আছে সেটার এখন সত্যতা পাচ্ছে ঢেউ। প্রিন্সিপাল স্যারকে দেখলেই তার মনে হচ্ছে এই বুঝি সে ধরা পরে যাবে। এই বুঝি স্যার তাকে শাস্তি দিতে আসছে। আদতে কিছুই না সব তার মনের ভুল। ঐদিনের পরে থেকে ক্যাপের বিষয় টা অনেকটাই ধামাচাপা পরে যাওয়ার মতো ব্যাপার ঘটেছে।
দেখতে দেখতে এইচএসসি পরীক্ষা দোরগোড়ায় এসে হাজির হয়েছে। এক প্রকার যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে পড়াশোনা নিয়ে।

ঢেউ এইবার পড়াশোনা নিয়ে একটু বেশিই সিরিয়াস। অন্য সময় পড়াশোনায় ফাঁকিবাজি করলেও এইবার একদম করা যাবে না কারণ বাবা বলে দিয়েছে রেজাল্ট ভালো না আসলে বিয়ে দিয়ে দিবে। ঢেউ বাবার মুখে এমন কথা শুনে ঠাট্টায় উড়িয়ে দিয়েছিলো কিন্তু পরে বুঝতে পারছে আসলেই এইবার রেজাল্ট ভালো না আসলে তার ব*লি হবে। তাই রাতদিন এক করে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে। এতো প্রেশার নিতে নিতে খাওয়ার কথা ও ভুলে যায় যার দরুন প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পরে।

আজ বিকেলে একটু বের হবে ঢেউ ভেবেছিলো বান্ধবীদের সাথে বের হবে কিন্তু তার বাবা জানায় উনি নিজে নিয়ে যাবে। ঢেউয়ের এক্সামের জন্য কিছু টুকটাক কেনাকাটা আছে।
ঢেউ তাড়াহুড়ো করে তৈরি হয়ে নেয় কারণ তার জন্য বাবা নিচে রিক্সা থামিয়ে বসে আছে। ঢেউ নিচে গেলে বাপ বেটি মিলে রওনা দেয় শপের দিকে।

ঢেউয়ের বাবা রিক্সা থেকে আগে আগে নেমে গিয়ে ভাড়া পরিশোধ করতে করতে বলে,,,ঢেউ তুমি নেমে গিয়ে ঐ পাশটায় দাঁড়াও আমি আসছি।
তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে ঢেউ রাস্তায় পরে থাকা এক ইটে পা বেঁধে যায়। ঢেউ চোখ মুখ কুঁচকে মনে মনে বলে,, ঢেউ পড়াশোনার জন্য তোর মাথাটা গেছে। সবকিছুতেই তুই এখন তাড়াহুড়ো করিস। নে এবার।

কিন্তু ঢেউ খুব অবাক হয় নিচে পরেনি সে। কেউ তাকে ধরে নিয়েছে। ঢেউ তাকিয়ে দেখে সেইদিনের সেই ডিটেকটিভ তুরাগ। উমমম নামটা তার বেশ মনে আছে। নামটা কি সহজে ভুলা যায় নাকি।হয়তো চাইলে ভুলা যায় কিন্তু ঢেউতো ভুলতে চায় না। তুরাগ কে দেখে চোখ মুখ কেমন চনমনিয়ে উঠে ঢেউয়ের। পায়ে মারাত্মক আঘাত পেয়েছে হয়তো নখ ও উল্টে গেছে কিন্তু সেইদিকে তার হুঁশ নেই। তুরাগ কে দেখে ব্যথা যেনো তার গায়েব হয়ে গেছে।

” এতো তারাহুরো করে কেউ? দেখে হাঁটবেন তো নাকি?” ব্রু কুঁচকে বলে তুরাগ।

” ঢেউ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। ”

” আরে আপনাকে যেনো কই দেখেছি? “বলেই তুরাগ ভাবতে থাকে।

তুরাগের কথা শুনে নিমিষেই ঢেউয়ের মন খারাপ হয়ে যায়। যাকে নিয়ে ঢেউ একটু একটু স্বপ্ন সাজায় সে নাকি তাকে মনেই রাখেনি।

ওহ ইয়াহ মনে পরেছে কলেজে রাইট?

ঢেউ মাথা নাড়িয়ে হ্যা জানায়।এরমধ্যে পায়ে ঠান্ডা কিছু অনুভব হয় সাথে জ্বলন ফ্রি। ঢেউ চোখ মুখ কুঁচকে নেয়। পা সরিয়ে নিতে যাবে কিন্তু করো ভরাট কন্ঠের বুলি শুনে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রয়।

” ডোন্ট মোভ।”

তুরাগ ও বলে নড়োনা। পায়ে তো ভালো ব্যাথাই পেয়েছো ঔষধ লাগিয়ে দিতে দাও।

রোবটের মতো দাঁড়িয়ে রয় ঢেউ। তুরাগ কে দেখতে এতোটাই ব্যস্ত হয়ে গেছে কেউ একজন তার পায়ের কাছে বসে ঔষধ লাগাচ্ছে তার খেয়ালই ছিলো না।

এরমধ্যে ঢেউয়ের বাবা এসে বলে,,,, “কি হচ্ছে এখানে? ”

কিছু না আংকেল উনি পায়ে ব্যাথা পেয়েছে তারই ব্যবস্থা হচ্ছে। (তুরাগ)

কি করে ব্যাথা পেলি ঢেউ? বাবার প্রশ্নে সব খুলে বলে ঢেউ। সব শুনে হেয়ালির জন্য লোকগুলোর সামনেই বকা খেয়ে মাথা নিচে নামিয়ে ফেলে ঢেউ।

তুরাগকে আর তার বন্ধুকে ধন্যবাদ দিয়ে ঢেউ কে নিয়ে চলে যায় তার বাবা। ঢেউ বার কয়েক তাকায় আড় চোখে তুরাগের দিকে। ঢেউ যেতে যেতে শুনতে পায়,,,

উঠে আয় ডক্টর টি স্কয়ার।

টি স্কয়ার? এটা আবার কেমন নাম? আসলেও কি কারো নাম এমন হয়? আচ্ছা লোকটা দেশি না বিদেশি? ঢেউ তাকিয়ে দেখার আগেই তার বাবা তাকে নিয়ে শপে ঢুকে যায়। নাম শুনে লোকটাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছিল ঢেউয়ের কিন্তু আফসোস হলো না।

চলবে?,,,,,,