তুরাগের শ্যামলা ঢেউ পর্ব-০৩

0
19

#তুরাগের_শ্যামলা_ঢেউ
#পর্বঃ ৩
#Jhorna_Islam

দেখতে দেখতে ঢেউয়ের এসএসসি পরীক্ষার সমাপ্তি ঘটে। এখন আছে শুধু প্রেক্টিকেল পরীক্ষাগুলো। এই পরীক্ষাগুলো দেওয়া হলে কয়েকদিনের জন্য শান্তি। আহ্ পরীক্ষা নিয়ে যা একটা প্যারা গেছে।ঢেউ ঠিক করে নেয় আপাতত এডমিশন টেষ্ট নিয়ে ভাববে না,কয়েকদিন আরামে কাটাবে। পুরো এক সপ্তাহ ঘুম দিবস হিসেবে পালন করবে। দিনরাত শুধু ঘুম ঘুম আর ঘুম। আহা ভাবতেই কেমন শান্তি শান্তি লাগে।

আজ বহুদিন পরে ঢেউ ফোন হাতে নেয়৷ কতোদিন হয়ে গেলো ভালো করে ফোন চালায় না। ফোন হাতে নেওয়ার সাথে সাথে ঢেউয়ের মনে হলো এইবার একটু সময় নিয়ে প্রথম ভালোবাসা বাস্তবায়িত করতে হবে।

ফেসবুকে ঢুকে ঢেউ তুরাগ লিখে সার্চ দেয় । সার্চ দেওয়ার সাথে সাথে বিশ ত্রিশটা তুরাগ নামের আইডি সামনে আসে। ঢেউ কনফিউজড হয়ে যায় এতো নামের মধ্যে সে সেই কাংক্ষিত পুরুষটিকে কি করে খুঁজে বের করবে। অবশ্য এখানে কয়েকজনের ফেইস ও শো করছে । যাদের ফেইস শো করছে তাদের লিস্ট থেকে বাদ দিয়ে দেয়। ঢেউ মনে মনে তুরাগ কে বকতে থাকে লোকটা কি নিজের খু’মা দিয়ে আইডি খুলতে পারলো না? নাকি মেয়েদের মতো পর্দা করে? ঢেউ ভাবতে লাগলো কি করে তুরাগের আইডিটা পাবে। কিছু একটা মনে করতে লাগলো। পরোক্ষনে মাথায় আসলো তুরাগতো ডিটেকটিভ। সব আইডির এবাউটে গিয়ে দেখতে লাগলো প্রফেশনে ডিটেকটিভ দেওয়া কার।কিন্তু দূর্ভাগ্যের বিষয় কোনো আইডিতেই পেলো না।
মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়। লোকটার সাথে কি আর দেখা হবে না? কোনোভাবে কি আর যোগাযোগ ও হবে না?
শতো ভাবনার মধ্যে হুট করে তুরাগ নামের এক আইডির ভিতর ঢুকে যায় ঢেউ। কি মনে করে পোস্ট দেখতে গিয়ে চোখ আঁটকে যায়। ঢেউ লাফিয়ে উঠে বলে,,,,”ইয়েসসসসস! ভুল করে যদি ভালো কিছু হয় তাহলে ভুলই ভালো। ”

তুরাগের করা পোস্টটা ছিলো এমন,,,,, ” মানবতা আজ কোথায়,ক্যাপ চো*র ধরতে ডিটেকটিভ হাহাহা!”

পোস্টের নিচে আবার প্রিন্সিপাল স্যারের রাগী ইমোজি দেওয়া। ঢেউ না চাইতেও হেসে দেয়, স্যার মনে হয় এমন পোস্টে রেগে গেছে একেইতো উনার ক্যাপ খুঁজে দিতে পারলো না আবার পোস্ট দেয় এজন্য।

ঢেউ তুরাগের আইডিটা ভালো করে স্ক্রল করতে থাকে। আইডিতে যদি ও বা আহামরি কিছু নেই সব জ্ঞানের কথাবার্তা। ঢেউ মেসেজ অপশনে গিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে সংকোচ নিয়ে মেসেজ দেয় আসসালামু আলাইকুম।

এখন খুব আনইজি লাগছে, ঢেউ কয়েকবার মেসেজ ডিলিট করতে যেয়েও করেনি।যা হওয়ার হবে।

ঢেউ মোবাইল রেখে অফলাইনে চলে যায়। ভিতরে খুব অস্থির লাগছে তার। কি হবে কি হবে এই নিয়ে দ্বিধা দ্বন্দ্ব। না যা করেছে বেশ করেছে ওপাশে পজেটিভ হলে তবেই না আগাবে নয়তো সারাজীবন একটা আফসোস থেকে যাবে। নাহ অস্থিরতা কাটাতে তাকে কিছু একটা করতে হবে। কি করা যায়? কি করা যায়? নিজেকে প্রশ্ন করতে করতে মাথায় এলো যদি ফোন না চালানো হয় তাহলেতো একটাই কাজ আছে মাকে গিয়ে বিরক্ত করা। ঢেউ চল মাকে একটু জ্বালিয়ে আসি। যেই ভাবা সেই কাজ মা নিশ্চয়ই এখন সিরিয়াল দেখায় মগ্ন।

ঢেউ গিয়ে দেখে মা সিরিয়াল না দেখে পাড়ার দুই কাকির সাথে আলাপ সালাপে ব্যস্ত। উফফ বিরক্ত করা হলো না। সকলের সামনে দিয়ে ঢেউ চলে যায় ডাইনিং রুমে পানি খেতে। যাওয়ার আগে কাকিদের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসি দেয় ঢেউ। ঢেউয়ের হাসির বিপরীতে উনারা কেমন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ঢেউয়ের দিকে। উনাদের তাকানোতে ঢেউ অবশ্য পাত্তা দেয় না।

” তা ভাবি মেয়েতো এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে দিলো বিয়ের কিছু ভাবেন নি?”

ঢেউয়ের মা মেয়ের দিকে এক পলক তাকিয়ে উত্তর দেয়,,, “না ভাবি এখনও তেমন কিছু ভাবা হয়নি।”

“ভাবতে শুরু করেন। মেয়েদের এসএসসির থেকে এইচএসসি পর্যন্তই ভালো বিয়ের বাজার। এরকম মেয়েদেরই এখন টানে বেশি। এর থেকে বেশি হয়ে গেলে ভালো ছেলে কিন্তু পাবেন না।”

কাকির এসব কথায় ঢেউয়ের খুব রাগ উঠে যায়। বাজার মানে? সে কোনো পন্য নাকি? মায়ের জন্য কিছু বলতে পারছে না। মা চোখ দিয়ে ইশারা করে কিছু না বলতে বলছে এজন্য নয়তো আজ এই মহিলার খবরই করে দিতো।

মহিলার কথায় ঢেউয়ের মা মুখে জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে।

হাসলে হবে ভাবি? যা বলছি আপনাদের ভালোর জন্যই বলছি। এখনই বিয়ে দিয়ে দেন বেশি দেরি কইরেন না তারউপর আপনার মেয়ে আবার শ্যামলা।এখন চেহারার কাটিং ভালো দেখালেও পরে কিন্তু তা নষ্ট হয়ে যাবে। পরে আরো কালো দেখা যাবে। বুঝেনই তো?

ব্যাস হয়ে গেলো। ঢেউ পানি খাওয়ার গ্লাসটা সজোরে মেঝেতে ফেলে দেয়। চোখগুলো আপনা-আপনি জলে টইটম্বুর হয়ে উঠে।

“সসসসরি মা ভভুলে পরে গেছে” বলেই দ্রুত সেখান থেকে চলে এসে জোরে নিজের রুমের দরজা লাগিয়ে দেয়।

কয়েক মিনিট পর ঢেউয়ের মা এসে ডাকে তাকে কিন্তু সারা পায় না। বার কয়েক ডাকার পরে ঢেউ জানায় সে একা থাকতে চায়। ঢেউয়ের মা বুঝতে পারে মেয়েটা কষ্ট পেয়েছে। উনিও কথা শুনাতে ছাড় দেয়নি,আচ্ছা মতো কথা শুনিয়ে দিয়েছে। কিছু সময় একা থাকুক এই ভেবে ঢেউয়ের মা আর বিরক্ত করে না নিজের কাজে চলে যায়।

ঢেউয়ের খুব কষ্ট লাগে এই একটা কারণে মানুষ তাকে কথা শুনায়। শ্যামলা কি সে ইচ্ছে করে হয়েছে? সকলেই ঢেউয়ের চেহারা নিয়ে প্রশংসা করে তার চেহারার সাথে নাকি গায়ের রং বেশ মানিয়েছে। কিন্তু হাজারের মধ্যে এমন দুই একজন তাকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করে এতেই ঢেউ বেশ কষ্ট পায়।

মনের কষ্টে ঢেউ ফোন হাতে নেয়। তার কাউকে দরকার নাই তুরাগকে ও না। তুরাগকে পাঠানো সালাম ঢেউ রিমোভ করে দেয়। ফোনটা পাশে রেখে হাঁটুতে মাথা ঠেকিয়ে বসে থাকে।

মিনিট কয়েক পর ফোনের নোটিফিকেশনের আওয়াজ হয়। ঢেউ মাথা তুলে তাকায়।কে মেসেজ দিয়েছে দেখার জন্য মেসেজ অপশনে গিয়ে দেখে তুরাগ মেসেজ দিয়েছে।

“ওয়ালাইকুম আসসালাম।”

ঢেউ ব্রু কুঁচকে ভাবে মেসেজ তো লোকটা দেখার আগেই রিমোভ করে দিয়েছে তাহলে? পরোক্ষনে ভাবে হয়তো নোটিফিকেশনে দেখতে পেয়েছে।

তুরাগের মেসেজের পর ঢেউ আর কিছু লিখে না শুধু সিন করে রেখে দেয়।
মিনিট দুই এক পর তুরাগের আইডি থেকে আবার মেসেজ আসে। তাও কিনা একটা প্রশ্নবোধক চিহ্ন।

“?”

“কি?” ঢেউ রিপ্লাই করে।

“আপনি কি আমাকে চিনেন?”

“হ্যা।” দায়সারা ভাবে উত্তর দেয় ঢেউ।

“স্ট্রেন্জ!”

“স্ট্রেন্জের কি আছে? আমিকি আপনাকে চিনতে পারি না?”

“অবশ্যই চিনতে পারেন আমি তা বলিনি।”

“ওহ!” ঢেউ ওহ পাঠিয়ে মেসেজের অপেক্ষা করে দুই মিনিট কিন্তু সিন হয়ে আর উত্তর আসে না।

ফোন রেখে দিতেই আবার ফোনে টুং করে শব্দ হয়। ঢেউ খুশি মনে হাতে নেয়।

“আমি কি আপনাকে চিনি?”

“হ্যা!”

“অদ্ভুত এই নামের কাউকে চিনি বলে মনে পরছে না।”

“মন থেকে মনে পরার চেষ্টা করলে তবেই না মনে পরবে।”

“ওহ আচ্ছা। “আমার মন নেই তো তাই মনে করতে পারছি আমি। আপনি একটু মনে করিয়ে দিলে উপকৃত হতাম।

“সরি! এই ঢেউ বিনা পারিশ্রমিকে কারো উপকার করে না।

” হু হাহাহা! হাও ফানি!”

“আ’ম নট জোকার। ”

” এবার এসব ভনিতা রেখে পরিচয় টা দিন আপনার। ”

“আমি ঢেউ রহমান। ”

অপর পাশ থেকে সিম হয় কিন্তু রিপ্লাই আসে না। ঢেউ অপেক্ষা করতে থাকে,,,, দুই মিনিট,,, পাঁচ মিনিট,,, তারপর দুশ মিনিট এমন করতে করতে প্রায় এক ঘন্টা অপেক্ষা করে কিন্তু রিপ্লাই আর আসে না অথচ তুরাগ অনলাইনেই আছে।
ঢেউয়ের মনটা আবার ও খারাপ হয়ে যায়। তুরাগের প্রতি একটা অধিকার বোধ কাজ করে। বড্ড ইচ্ছে করছে বলতে,,, আপনি সিন করে রিপ্লাই দেন না কেনো? সিন করে রিপ্লাই না করলে আমার খুব রাগ হয়। নিজেকে কেমন গুরুত্বহীন মনে হয়।
আমি মেসেজ দেওয়ার সাথে সাথে সিন করবেন আর উত্তর দিবেন। কিন্তু কিছুই বলা হয় না। আদতেও কোনোদিন হবে নাকি ঢেউ জানে না এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।

#চলবে,,,,,,,,?