তুরাগের শ্যামলা ঢেউ পর্ব-০৪

0
17

#তুরাগের_শ্যামলা_ঢেউ
#পর্বঃ৪
#Jhorna_Islam

ঢেউয়ের প্রেক্টিকেল পরীক্ষার আর মাত্র দুই দিন বাকি কিন্তু এখনও স্যারের থেকে সিগনেচার নেওয়া হয়নি। আজ নয়টার দিকে তৈরি হলো স্যারের থেকে সিগনেচার নিতে। অনেক দিন পরে কলেজে যাওয়ার হচ্ছে ভাবতেই কেমন আনন্দ লাগছে। ঢেউ খুশি মনে বের হয়ে যায় কলেজের উদ্দেশ্যে। ইমা আর নিশিও কলেজে আসবে ওদের সাথে ওখানেই দেখা করবে।

ঢেউ ব্যাগ নিয়ে বের হতে যাবে তারমধ্যে মনে হলো তুরাগকে একটা কল দেওয়াই যায়। যেই ভাবা সেই কাজ।

“আসসালামু আলাইকুম। ”

“ওয়ালাইকুম আসসালাম। ”

“কেমন আছেন? ”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আপনি? ”

“আপনি? এখনও আপনি? মন খারাপের ইমোজি দিয়ে বলে ঢেউ। ”

“অভ্যাস ম্যাডাম। অভ্যাস কি সহজে বদলানো যায়? আর তাছাড়া আপনাকে কেন যেনো আপনি বলতেই বেশি ভালো লাগে। ”

“ঢং!”

“হু,হাহা ছেলেরা কিভাবে ঢং করে ম্যাডাম? এটাতো আমাদের সাথে যায় না। ঢং করাতো আপনাদের নিজস্ব সম্পদ। মেয়েদের ঢং করা যেনো ব্যাক্তিগত অধিকার। ”

“মেয়েদের নিয়েতো ভালোই ধারণা আছে দেখছি।”

“একটু আধটু আরকি।”

“তা ধারণা কার থেকে নিলেন শুনি?”

“যার থেকে নিলে আপনার মন খুশি হবে তাকেই ধরে নিন।”
তুরাগের কথায় ঢেউয়ের মন খুশি হয়ে যায়। নিজের খুশি নিজের মধ্যেই জমা রাখে।তারপর বলে,,,,আজ আমি এতো সকালে অবাক হননি?

“হ্যা আমি এটাই জিজ্ঞেস করতাম। ”

“থাক করতে হবে না আর, আমিই বলে দিচ্ছি। আজ কলেজ যাচ্ছি। ”

“কেনো?”

“দলিলে সিগন্যাচার নিয়ে সব সম্পত্তি আমার নামে করিয়ে নিতে। ”

“আপনি কি উনার পুত্রবধূ হোন নাকি হবেন? ”

“কার?”

“কার আবার আপনার স্যারের। নয়তো এমনিতে কি কেউ নিজের সম্পত্তি অন্য কাউকে দিয়ে দিবে নাকি? ”

“আপনি মজা বুঝেন না? আমি প্রেক্টিক্যাল খাতা সাইন করাতে যাচ্ছি । ”

“বুঝতে পেরেছি।”

“তো?”

“নাথিং খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে বাই।”

“উখে।”

“উখে নয় বলুন ওকে।”

“নট,,উখেই বলবো।”

“এজ ইউর উইশ।”

“ইয়াহ।”

ঢেউ খুশি মনে কলেজ যাচ্ছে আজ তার মন বলছে তুরাগ তার সাথে দেখা করতে আসবে। তুরাগের গুরুত্বপূর্ণ কাজ নিশ্চয় তার সাথে দেখা করা।সাধারণ ভাবেই যাচ্ছে ঢেউ। সে চায় না কৃত্রিম ভাবে সেজে কারো চোখে সুন্দর হতে।সে যেরকম সে চায় পছন্দের মানুষটা তাকে সেরকম ভাবেই ভালোবাসুক। যদিও বা ঢেউ এখনও তুরাগের মনের কথা জানে না। তুরাগ কি চায় তাও জানে না। সেদিনের পর থেকে টুকটাক কথা হতো দুইজনেরই। ঢেউই আগে আগে মেসেজ দিতো কারণ তার থেকেইতো ভালবাসাটা শুরু। তুরাগ ও রিপ্লাই করতো। কথা বলতে বলতে এখন ওরা খুব ভালো বন্ধু হয়ে গেছে। একে অপরের সম্পর্কে প্রায় মোটামুটি সবকিছুই জানা। ঢেউ দিনদিন তুরাগের প্রতি আরো দূর্বল হতে থাকে। ভালোবাসা আসক্তিতে পরিণত হতে থাকে।

ঢেউ এখন তুরাগ বলতে পা*গল। মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে তুরাগকে মনের কথা বলে দিতে কিন্তু পর্যাপ্ত সাহসের অভাবে পারে না। তার উপর যদি তুরাগের তরফ থেকে কিছু না থেকে থাকে তাহলেতো তাদের বন্ধুত্ব শেষ হয়ে যেতে পারে।

যথাসময়ে ঢেউ কলেজে গিয়ে পৌঁছায়। অনেক দিন পরে সেই চেনা পরিচিত জায়গা। এতো কাছের জায়গাটাকেও এখন দূরের মনে হচ্ছে। ক্যাম্পাসে আর আগের মতো আড্ডা দেওয়া হয় না, ক্লাসরুমগুলোও নতুন মানুষের দখলে চলে যাবে। তারা এক একজন কে কোথায় চলে যাবে কে জানে। মানসপটে থেকে যাবে সেই পুরনো স্মৃতি। বন্ধু বান্ধবীদের সাথে কাটানো হাসি আনন্দের মন মালিন্য করে কাটিয়ে দেওয়া দিন।

নিশি,ইমা আর ঢেউ গিয়ে স্যারের থেকে প্রথমে সাইন নিয়ে নেয়।তারপর সকল স্যার ম্যাডামদের সাথে দেখা করে। সকলেই জিজ্ঞেস করে পরীক্ষা কেমন হয়েছে সব ঠিকঠাক দিতে পেরেছে নাকি।সকলের সাথে কোশল বিনিময় শেষে তিনজন বের হয়ে আসে ঠিক করে নেয় ফুচকা খাবে। যেই ভাবা সেই কাজ তিনজন মিলে চলে যায় ফুচকা খেতে। খুব আনন্দ করছে তিনজন সাথে কতো গল্পগুজব। এতোকিছুর মধ্যে ও ঢেউয়ের মনে অন্য কিছু সে যে মনে মনে কারো অপেক্ষায়। ঢেউয়ের খুব ছটফটানি হচ্ছে কেন জানি মন বলছে আজ কিছু ঘটবে। তুরাগের সাথে তার দেখা হবে। ঢেউয়ের মনের খবর পাশে থাকা দুই রমনীর একজন ও জানে না। ঢেউ বিষয়টা সম্পূর্ণ এড়িয়ে গেছে। এখন কিছু জানাতে চায় না তাদের কে।তুরাগের সাথে যদি কিছু হয় তাহলে সব জানাবে। এখন জানালে
দুইজনই মজা নিবে বলবে মরিচীকার পিছু ছুটছে।

ঢেউ ফুচকা মুখে দেওয়ার সাথে সাথে কেউ একজন পিছন থেকে বলে উঠে,,,, “মামা পানি হবে?”

“হ্যা মামা আমিতো পানিও বেচি।” ( লোকটার প্রতিউত্তরে ফুচকাওয়ালা বলে।

“আমাকে তিন বোতল পানি দিন তাহলে। ”

“আইচ্ছা। ”

ফুচকাওয়ালা পানি এগিয়ে দেয়। লোকটা হাত বাড়িয়ে নেয়,পকেট থেকে টাকা বের করতে থাকে দেওয়ার জন্য। অন্যদিকে আরেকজনের অবস্থা খারাপ একজন পানি নিচ্ছে তার গলা শুনে আরেকজনের গলা শুকিয়ে গেছে। ফুচকা আর খাওয়া হচ্ছে না। এতক্ষন যা উৎসাহ নিয়ে ছিলো তা মুহূর্তের মধ্যে ফুরুৎ করে আকাশে ডানা মেলে উড়ে গেছে। ঢেউয়ের ইচ্ছে করছে এখান থেকে
দৌড়ে পালিয়ে যেতে।
পানির টাকা দিয়ে লোকটা চলে যেতে নিলে ফুচকাওয়ালা বলে,,,খারান মামা পাঁচ টিহার ভাংতি দিতাছি।

“লাগবে না রেখে দিন।,,,,

ঢেউ ঘুরে তাকায় তুরাগ ঘুরে যাওয়ার আগেই। দুইজনেরই চোখাচোখি হয়ে যায়। কারো চোখে অবাকতা তো কারো চোখে লজ্জা দ্বিধা।

“আরেএএএএ আপনি সেই না?,,,ইমা অবাক হয়ে বলে।

তুরাগ হেসে বলে,,,,হ্যা!মাথা দেখি অনেক সার্প এক দেখায় চিনে ফেললেন।

“সেটাতো আমিও বলতে পারি। “(ইমা)

“ডিটেকটিভ হতে গেলে মাথা একটু সার্প হতেই হয় ম্যাডাম।”

এতক্ষন ওদের কথায় এমনিতেই ঢেউয়ের রাগ উঠছিল। তুরাগের ইমাকে ম্যাডাম ডাকা যেনো আগুনের মধ্যে ঘি ঢালার মতো কাজ করছে। ঢেউ রাগে কাঁপতে থাকে। তুরাগ তাকে ছাড়া অন্য কাউকে কেনো ম্যাডাম বলবে?ঢেউ এটা কিছুতেই মানতে পারছে না সে ফুচকার প্লেট টা রেখে দেয়। তার ভিতরে আর ঢুকবে না।
ঢেউয়ের কাঁধে ধাক্কা দিয়ে নিশি বলে,,,কিরে খাচ্ছিস না কেন? রেখে দিলি যে খাবি না নাকি?

“খ-খেতে ইচ্ছে করছে না। ”

তুরাগ ঢেউয়ের কাছে এগিয়ে যায়,,, “ম্যাডাম কি রাগ করেছেন? ”

ঢেউ অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে বলে,,,,”নাহ্ রাগ করবো কেনো? কার সাথে রাগ করবো? আমার রাগ করার কেউ নাই।

তুরাগ ভাবুক হয়ে বলে,,,”আচ্ছা? ”

ইমা আর নিশি ড্যাবড্যাব করে একে অপরের দিকে তাকিয়ে চোখে চোখে কিছু বলে।

তুরাগ কিছু বলতে যাবে এরমধ্যে রাস্তার অপর পাশ থেকে ডাক আসে,,,,কিরে তুরাগ আসছিস না কেন? পানি কি কূপ থেকে তুলে আনছিস নাকি?

ছেলেটার কথায় ইমা আর নিশি দুইজনই হেসে উঠে। কিন্তু নির্বাক থাকে ঢেউ।

“আসছি দোস্ত। ” চিল্লিয়ে বলে তুরাগ। তারপর ঢেউয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,,,, আপনারা এখানে একটু ওয়েট করেন আমি আসছি। আর এই যে ম্যাডাম আপনার সাথে একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে। অপেক্ষা করুন আমি পানি দিয়ে আসছি বলেই তুরাগ চলে যায় রাস্তার অপর পাশে।

সকলেই আবার ফুচকা খাওয়ায় মন দেয়। নিশি সরু চোখে ঢেউয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,কিরে তোর ব্যাপার কি বলতো?

“আমার আবার কি ব্যাপার?”

“তুই লোকটার সাথে এমন করে কথা বলছিলি যেনো তোর বিয়ে করা জামাই লাগে।”

“থাপ্পড় খাবি নিশি আজাইরা কথা বললে।”

“নে দে থাপ্পড়। ” নিশি গাল এগিয়ে দিয়ে বলে।

ঢেউ চোখে মুখ কুঁচকে বলে,,,সরতো ভাই।
এরমধ্যে চিল্লাচিল্লি হাঙ্গামার শব্দ কানে ভেসে আসে। রাস্তার অপর পাশে মারামারি লেগেছে মারাত্মক ধরনের।
সকলেই ছুটোছুটি করছে। কেউ এগিয়ে যাচ্ছে আর কেউ সেখান থেকে সড়ে যাচ্ছে।
ঢেউয়ের কলিজা মোচড় দেয় তুরাগতো ঐখানে আছে। কিন্তু ইমা আর নিশি তাকে দেখতে দিচ্ছে না টানতে টানতে সেখান থেকে নিয়ে আসে।
ঢেউ খুব ভয় পেয়ে যায় তুরাগের কিছু হলো নাতো আবার।ফোন দেয় তুরাগের নাম্বারে কিন্তু কল রিসিভ হয় না। ঢেউয়ের কান্না পাচ্ছে তুরাগ মনে হয় ঠিক নেই। তার তুরাগ। কাউকে কিছু বলতে পারছে না ভিতরে ভিতরে শেষ হয়ে যাচ্ছে। এরমধ্যে ঢেউয়ের ফোনে একটা কল আসে। ঢেউ কাঁপা কাঁপা হাতে ফোন নিয়ে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রয়।

#চলবে??