#তুরাগের_শ্যামলা_ঢেউ
#পর্বঃ৫
#Jhorna_Islam
ঢেউ বাড়িতে এসে চুপচাপ বসে আছে। তার বাবা গিয়ে তাকে নিয়ে এসেছে। কলেজের পাশের ঝামেলার খবরটা কোনোভাবে তিনি জানতে পারে। ঝামেলার খবর শুনে উনি নিজেই ঢেউ কে আনতে যায়। ঐ সময় ঢেউয়ের ফোনে তার বাবার কলই এসেছে। ঢেউ কি করবে বুঝতে পারছিল না। বুকের মধ্যে হাজার টনের একটা পাথর মনে হচ্ছে। বাবা মা ভাবছে ঝামেলা দেখে ঢেউয়ের এই অবস্থা।উনারা ঢেউ কে শান্তনা দিচ্ছে পানি খাওয়াচ্ছে ভয় তাড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু ঢেউতো জানে তার মনে কি চলছে সে এখন কল ও দিতে পারছে না বাবা মায়ের সামনে। এমন বা’জে পরিস্থিতিতে ঢেউ এর আগে পরেছে নাকি তার মনে নেই।
“মা আমি রুমে গেলাম।” ( অনেক কষ্টে কথাটা বলে ঢেউ।
“কোনো দরকার নাই আমাদের সাথে এখানে থাকো।একা থাকলে আরো ভয় পাবে।” (ঢেউয়ের বাবা)
ঢেউ মায়ের দিকে করুন চোখে তাকায়।তারপর মিনমিন করে বলে,, “বাবা আমি ঠিক আছি। আমি একদম ভয় পাচ্ছি না। ”
“তাহলে তোমার মুখের অবস্থা এরকম কেনো?”
বাবার প্রশ্নে কোনো উত্তর খুঁজে পায় না ঢেউ।
আহ্ ঢেউয়ের বাবা কি শুরু করেছো বলোতো? মেয়েকে এবার নিজেকে নিজে সামলাতে শিখতে হবে। এসব ছোটো খাটো বিষয়ে এমন ভয় পেলে বাকি জীবন কি করে কাটাবে? তাই এখন থেকেই স্পেস দাও। নিজের ভয় নিজেকে কাটাতে দাও।
ঢেউয়ের মায়ের কথায় ঢেউ মনে মনে কিছুটা স্বস্তি পায়।এখান থেকে তারাতাড়ি কেটে পরতে হবে নয়তো যে কোনো মুহূর্তে ধরা পরবে নিশ্চিত।
ঠিক আছে তোমাদের যা ইচ্ছে করো বলেই ঢেউয়ের বাবা চলে যায়।
যা ঢেউ নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে একটু বিশ্রাম নে। আমি এক কাপ চা দিই ভালো লাগবে তাহলে।
মায়ের কথায় ঢেউ মাথা নাড়িয়ে সেখান থেকে তারাতাড়ি চলে আসে। রুমে এসে দরজা আঁটকে দেয়। কিসের ফ্রেশ হওয়া তার আগে তুরাগের খবর লাগবে। ফোন বের করে তুরাগকে কল দেয় কিন্তু রিসিভ হয় না। কি মনে করে মেসেঞ্জারে ঢুকে, সেখানে গিয়ে কপাল আপনা-আপনি কুঁচকে যায়। তুরাগ অনলাইনে আছে। অনলাইনে থেকেও তার ফোন রিসিভ করছে না লোকটা। আর সে এদিকে টেনশনে শেষ হয়ে যাচ্ছিলো। ঢেউয়ের খুব রাগ হয়। নিজের রাগ কোনোমতে সংবরণ করে তুরাগকে মেসেজ দেয়।
“হ্যালো?”
মেসেজ সাথে সাথে ডেলিভারি হয়।কিন্তু মিনিট কয়েক যাওয়ার পর ও সিন হয় না। আচ্ছা তুরাগ কি তাকে ইগনোর করছে? কেনো করবে? সে কিছু করেছে নাকি। আবারও মেসেজ দেয়, “তুরাগ আপনি মেসেজ দেখছেন না যে?”
মনে কতো শতো ভাবনা উদয় হতে থাকে। তুরাগ তার সাথে এমন করছে কেনো? ফুচকা দোকানে ও ভালো করে কথা বলেনি।অথচ ইমার সাথে কি সুন্দর করে কথা বলল।আচ্ছা তুরাগকি তাকে সামনা-সামনি দেখে এমন করছে? কিন্তু আরোতো দুই বার দেখা হয়েছিলো এর আগে তাহলে? নাহ্ ঐ সময় তো অপরিচিত ছিলো এখন ওরা ভালো বন্ধু। আর সবচেয়ে বড় কথা মাঝেমাঝে তুরাগের কথা শুনে ঢেউয়ের স্পেশাল ফিল হয়। উফফ ভাবতে পারছে না ঢেউ। এ কোন দোটানায় পরলো সে। মিনিট দশেক ভাবতে ভাবতেই পার হয়ে যায় ঢেউয়ের। এরমধ্যে ঢেউয়ের ফোনে যে মেসেজ এসেছে সে খেয়াল ও করেনি।
ফোনের রিংটোনে ঢেউয়ের ভাবনা থামে। তাকিয়ে দেখে তুরাগ মেসেন্জারে কল দিয়েছে। ঢেউয়ের হাত কাঁপছে কেন জানি আজ কল ধরতে। ঢেউ ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। দেখতে দেখতে কল কেটে যায়, আবার মেসেজ আসে ঢেউ সিন করে।
“ঠিক আছেন আপনি? ” তুরাগের মেসেজ।
ঢেউয়ের ইচ্ছে করলো বলতে আপনি কি ঠিক থাকতে দিয়েছেন। কিন্তু বলল না ছোট্ট করে উত্তর দিলো “হ্যা।”
“আমিতো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ”
“কেনো?”
” ফোন ধরছিলেন না, মেসেজ দেখছিলেননা।”
” আপনিওতো সেইম কাজই করেছেন। ”
” আমার বিষয় আলাদা বোকা। আমি কতো কাজে ব্যস্ত থাকি।আর সবচেয়ে বড় কথা আজ কলেজের সামনে গে’ন্জাম হয়েছে। আপনি যেই ভিতুর ডিম ভয় পেয়েছো নাকি এই নিয়ে টেনশন হচ্ছিলো।”
” আমাকে নিয়ে আপনার টেনশন হয় তুরাগ?”
“এটা আবার কেমন কথা ঢেউ? বন্ধুর জন্য টেনশন হবে না? ”
“হয়তো।”
” আপনার কি মন খারাপ? ”
ঢেউ মনে মনে বলল,, সবই আপনি বুঝতে পারেন তুরাগ শুধু আমার মনের কথাটা ছাড়া। মানুষ বুঝি এমনই সব বুঝে শুধু আমরা যেটা বুঝাতে চাই ঐটা ছাড়া।
“আমার মন খারাপ হবে কেনো?”
” আমার মনে হচ্ছে আপনার মন খারাপ। ”
“ভালো। ”
“কি ভালো? ”
” ঐ যে আপনার মনে হচ্ছে আমার মন খারাপ ঐটা।”
” একটা কথা বললে শুনবেন? ”
“হুু বলুন।”
“বসা থেকে উঠে একটু বেলকনিতে আসেন।”
“কেনো?”
“আসেনই না তারপর বলছি।”
” ঢেউ অনিচ্ছায় উঠে দাঁড়ায়। কেন জানি চাইলেও তুরাগের কথা সে ফেলতে পারে না। ঢেউ বেলকনিতে দাঁড়ায় চারপাশ অন্ধকার হয়ে আসছে। পৃথিবীর বুকে রাত নেমে আসছে। দখিনের হিমেল হাওয়া গা ছুঁয়ে যাচ্ছে।
” চোখ বন্ধ করে কয়েকটা জোরে জোরে শ্বাস নিনতো ঢেউ। ”
“কেনো?”
“ম্যাজিক দেখাবো।”
ঢেউ তুরাগের কথা মতো তাই করে। মিনিট দশেক চলে যায় ঢেউ চোখ খুলে না।মনে হচ্ছে স্বপ্নে ভাসছে সে।। জীবনের সব সমস্যা যেনো হাওয়ায় মিলিয়ে যাচ্ছে। প্রশান্তিতে বুকটা ভরে যাচ্ছে। এভাবেও মনে প্রশান্তি আনা যায় ঢেউয়ের জানা ছিলো না। ঢেউয়ের মন এখন অনেকটাই শান্ত হয়ে গেছে। অনেকটা সময় পরে ঢেউ চোখ খুলে। চোখ খুলতেই যেনো ঢেউ দেখলো নিচ থেকে কিছু একটার ছায়ামূর্তি সরে গেলো। ঢেউ বুকে থুথু দিয়ে এক দৌড়ে ভিতরে চলে যায়। এই সন্ধার সময় নিশ্চয় তেনারা ঘুরাঘুরি করছে।
“মন ভালো হয়েছে আপনার? ”
” হ্যা। সাথে ভয় ফ্রি।”
” মানে বুঝলাম না। ”
” তেনাদের দেখেছি আমি। ”
“কাদের? ”
“আরে নাম বলা যাবে না।”
” হু হাহাহা! আপনি বড্ড সরল শ্যামলা ঢেউ। ”
” আমার গায়ের রং শ্যামবর্ণ দেখে আমাকে শ্যামলা বলে কটাক্ষ করছেন?”
“আপনি বড্ড বা’জে বকেন। আপনার মোটা মাথায় সব ঢুকবে না। আচ্ছা বায় আমি গেলাম কাজ আছে আমার। ”
“আরেএএএএ,,, ততক্ষণে তুরাগ চলে গেছে। ঢেউ মনের সব ভাবনা রেখে এবার শান্ত হলো। এখন হালকা লাগছে অনেকটা।
****
দেখতে দেখতে ঢেউয়ের শেষ প্রেক্টিকেলের দিনও চলে আসে। পরীক্ষা দিয়ে বের হতেই দেখা হয়ে যায় প্রিন্সিপাল স্যারের সাথে। তিন বান্ধবী মিলে কোশল বিনিময় করে। চলে আসতে নিলেই তাদের ডাক পরে। ঢেউয়ের হুট করে ভয় জাগ্রত হয় মনে। স্যার আবার কেনো ডাকছে তাদের। কোনোভাবে ক্যাপ নিয়ে কিছুনাতো। ভয়ে ভয়ে স্যারের কাছে যায়।
“তোমাদের বাড়ি যেনো কোথায়? স্যার প্রশ্ন করে।
ঢেউ প্রথমে ভেবেছিলো ইমা আর নিশিকে জিজ্ঞেস করছে কিন্তু স্যার তার দিকে তাকিয়ে আছে।
ঢেউ তোতলাতে তোতলাতে বলে,,, স-স্যার আ- আমার?
” হ্যা।”
ঢেউ ঠিকানা বলে।
আচ্ছা তোমার বাবার নাম্বারটা দাও।
“কক-কেনো স্যার? আ-আমি কি কিছু ভুল করেছি?”
“উফফ এতো প্রশ্ন কেনো? যা বলছি তা করো।”
ঢেউ কাঁদো কাঁদো মুখ করে তার বাবার নাম্বার দেয়। কি মুসিবত হলো কে জানে।
সারা রাস্তা ভয়ে ভয়ে বাড়িতে আসে সে।
বাড়িতে এসেও মন শান্ত হচ্ছিল না, টেনশন করতে করতে ঢেউ এক সময় ঘুমিয়ে যায়। ঘুম ভাঙে রাত আটটায় তাও আবার হাসাহাসি জোরে জোরে কথা বলার শব্দে। ঢেউ বিরক্ত নিয়ে উঠে যায় বসার রুমে।
বসার রুমে লোক দেখে ভাবতে থাকে ঘুমের ঘোরে ভুলভাল দেখছে। চোখ মুখ কুঁচকে আবার তাকিয়ে দেখে নাহ্ ভুল দেখছে না সবই ঠিক আছে। কিন্তু এমন আশ্চর্য ঘটনা ঢেউ কিছুতেই মানতে পারছে না।
#চলবে,,,,?