#তুরাগের_শ্যামলা_ঢেউ
#পর্বঃ৯
#Jhorna_Islam
প্রিন্সিপাল স্যারের ছেলের সঙ্গে জোর করে ঢেউ কে তার বাবা বিয়ে দিয়ে দিয়েছে। ঢেউ এটা কিছুতেই মানতে পারছে না। আগে হলে হয়তো তবুও মেনে নেওয়ার চেষ্টা করতো কিন্তু তা আর সম্ভব নয়। ঢেউ অন্য একজন কে ভালোবাসে। নিজের মনে একজন কে রেখে আরেকজনের সাথে সংসার সে কখনোই করতে পারবে না । স্যারের ছেলেকে ঢেউ দেখেনি। এমনকি লোকটার সাথে বিয়ে হয়ে গেছে ঢেউ নামটা পর্যন্ত জানে না । বিয়ে পড়ানোর সময় ঢেউ এতোটাই অন্যমনস্ক ছিল নামটা শুনতে পায়নি।
স্যারের উপর, ঢেউয়ের বাবা মায়ের উপর অনেক রাগ। এই জামানায় কেউ ধরে বেঁধে বিয়ে দেয়? স্যার অন্তত মতামত জানতে চাইতো। আর ঐ লোকটা, নিশ্চয়ই লোকটা শিক্ষিত। ঐ লোকটা কি করে এমন একটা কাজ করতে পারলো? বা’জে লোক ঢেউয়ের সামনে স্বামীর অধিকার নিয়ে আসলে একদম জানে মে’রে দিবে।
ঢেউ যখন ভোর রাতে মেইন দরজা খুলে পালাতে যাবে তখন তার বাবার কন্ঠে শুনতে পায়,,, , “কোথায় যাচ্ছো? ”
ঢেউ কোনো উত্তর দেয় না। চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে, চোখ মুখ কুঁচকে শুকনো ঢুক গিলে। মনে মনে বলে ধরা খেয়ে গেলাম? এবার কি হবে? বাবা কি মারবে?
“কি হলো ঢেউ? ” বাবার কন্ঠে ঢেউ ভাবনা থেকে বের হয়ে আসে।
হাঁটতে যাচ্ছো নাকি? কিন্তু এখনও তো ভোরের আলো ফুটেনি। ঢেউ কিছু বলছে না দেখে নিজেই জিজ্ঞেস করে।
ঢেউ এতক্ষন ভয় পাচ্ছিল ধরা পরে গেছে এই ভেবে। বাবার প্রশ্নে হুঁশ আসে তার। ব্যাগ নিয়ে বের হয়নি। চেক করতে এসেছিলো কেউ উঠেছে নাকি আর দরজা খুলে রাখতে এসেছিল। ভাগ্যিস ব্যাগটা নিয়ে আসেনি বড়ো বাঁচা বেঁচে গেছে।
–হ-হ্যা হাঁটতে যাচ্ছি একটু।(ঢেউ)
— কোনো দরকার নাই। চুপচাপ রুমে যাও। এখন তুমি ম্যারিড মাথায় রেখো। নিজের স্বামী আছে তার কথা মতো চলবে।
— তুমি আমার জীবনটা শেষ করে দিয়েছো বাবা। এর থেকে ভালো ছিলো মেরে ফেলতে একবারে। এই তিলে তিলে মরার চেয়ে একবারে মরে যাওয়া ভালো ছিলো। কাঁদতে কাঁদতে বলে ঢেউ।
— ঢেউ,,,,?
— ঠিকই বলেছি আমি।
ঢেউয়ের বাবা এগিয়ে আসে মাথায় হাত দেওয়ার জন্য কিন্তু ঢেউ সরে যায়।
দরকার নেই বাবা গাছের গোড়া কেটে আগায় পানি দেওয়ার।
ঢেউয়ের বাবা কিছু বলতে যাবে তার আগেই ঢেউ নিজের রুমে চলে যায় । ঢেউয়ের বাবা নিজের মেয়ের যাওয়ার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। চোখের কোণে পানির আবাশ পাচ্ছেন। মেয়েটা কি বলে গেলো? তার বাবা এতোটাই খারাপ? বাবা তো তার ভালোর জন্যই করেছে এসব। তার ভবিষ্যতে ভালো করার জন্যই জোর করে বিয়ে দিয়েছে।
ঢেউয়ের বিয়ের দুই দিন দেখতে দেখতে চলে যায়। বাড়িতে থাকা সকল আত্নীয় স্বজন ও আস্তে আস্তে চলে যায়। ঢেউদের বাড়ি এখন পুরোই ফাঁকা। আগের মতো তারা আবার তিনজন হয়ে গেছে।
ঢেউ বাড়ির কারো সাথেই এখন কথা বলে না। বাবা মা যখন বুঝাতে আসে চুপচাপ শুধু শুনে কোনো উত্তর দেয় না। বাবা মা ঢেউয়ের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে।
ঢেউ এই দুই দিন তুরাগের সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি। কিজানি কি হয়েছে ঢেউয়ের মেসেজ সেন্ট হয় কিন্তু ডেলিভারড হয় না । তুরাগের আইডির পিকটা ও শো করে না। ফোন নাম্বারে কল দিলে বেস্ত দেখায়। ঢেউ সব দিক দিয়ে এখন অসহায়। তার একূল অকূল কোনো কূলই নাই। কথায় আছে না অভাগী যেদিকে যায় সাগর শুকায় ঢেউয়ের ও ঠিক তাই মনে হচ্ছে এখন।
দেখতে দেখতে আরো দুটো দিন পাড় হয়ে যায়। ঢেউ নিজেকে কেমন ঘরবন্দী করে নিয়েছে। প্রয়োজন ছাড়া রুম থেকে ও বের হয় না। সারাদিন বসে বসে তার আর তুরাগের কনভারসেশন গুলো বারবার পরে। পরতে পরতে হাসে আর কখনো বা কান্না করে উঠে ফুপিয়ে ।
আজকে সকালে ঘুম থেকে উঠে বারান্দায় বসে অনিমেষ তাকিয়ে থাকে শূন্যের দিকে। তাকিয়ে থাকতে থাকতে চোখ কেমন জ্বালাতন করে তার। এরমধ্যে ঢেউয়ের মায়ের ডাক শুনতে পায়।
“ঢেউ এদিকে আয় তারাতাড়ি দেখ কে এসেছে। ”
ঢেউ মায়ের কথায় কোনো সাড়া দেয় না আর না গিয়ে দেখে কে এসেছে। যে ই আসুক না কেনো এতে ঢেউয়ের কিছু যায় আসে না।
“ঢেউ শুনতে পাচ্ছিস না আমার কথা? দেখ তুরাগ এসেছে ছেলেটা একা একা সোফার রুমে বসে আছে। তোর রুমে নিয়ে যা। আমি চা নাস্তা নিয়ে আসছি।”
মায়ের কথায় ঢেউ ব্রু কুঁচকায়। সে কি ভুল শুনেছে?
“ঢেউ তুরাগ এসেছে। ”
নানা এইতো স্পষ্ট শুনলো মা বলছে তুরাগ এসেছে। তুরাগ এসেছে তার মানে। তুরাগ? ঢেউয়ের সব কেমন তালগোল পাকিয়ে যায়৷ নিশ্বাসের গতি বেড়ে যায়। জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকে দৌড়ে চলে যায় বসার রুমে তুরাগ কে দেখার জন্য।
সোফার রুমে গিয়ে হাঁপাতে থাকে ঢেউ। তুরাগ তখন একটা প্রাকৃতিক ছবির দিকে মনোযোগ দিয়ে তাকিয়ে আছে। ঢেউ পিছন দিক দিয়ে দেখে ছলছল চোখে তাকিয়ে রয় কিছু সময়। শুকনো গলা ঢুক গিলে ভিজিয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে ডেকে উঠে,,,, তু-তু-তুরাগ?
ঢেউয়ের ডাকে তুরাগ তাকায় ঢেউয়ের দিকে। ঢেউ এখনও দৃষ্টি সরায়নি এক ভাবেই তাকিয়ে থাকে। তার পায়ের নিচের মাটি যেনো সরে গেছে। সমস্ত আশার আলো বারবার শুধু নিভে যায়৷। ঢেউ তুরাগের দিকে তাকিয়ে কয়েক পা পিছিয়ে যায়। এটাতো তার তুরাগ না। এটাতো অন্য লোক। এই লোককে কেনো মা তুরাগ বলল?
এসেছিস তুই। জামাই বাবাজি কে নিয়ে যা তোর রুমে। ছেলেটা সেই কখন থেকে একা একা বসে আছে। তুরাগ বাবা তুমি যাও ঢেউয়ের সাথে। ঢেউয়ের ভাবনার মাঝেই তার মা কথাগুলো বলে।
ঢেউ বুঝতে পারে এটাই সেই ব্যক্তি যার সাথে তার বিয়ে হয়েছে। আচ্ছা মা তুরাগ কেন বলছে লোকটা কে? তারমানে এই লোকের নাম ও তুরাগ। হায়রে ভাগ্যে এই হওয়ার ছিলো। ঢেউয়ের ইচ্ছে করছে এই মুহূর্তে সব ভেঙে গুড়িয়ে দিতে। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে রুমের দিকে পা বাড়ায়। ঢেউয়ের উদ্দেশ্য রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিবে এই লোককে কিছুতেই ঢুকতে দিবে না সে।
রুমে ঢুকে দরজা লাগাতে নিবে কিন্তু পারে না কিছু একটা যেনো বাঁধা দিচ্ছে। ঢেউ ব্রু কুঁচকে দরজা পুরোপুরি খুলে দেখে তুরাগ নামের লোকটা দরজা আঁটকে দাঁড়িয়ে আছে।
ঢেউ কিছু বলার আগেই লোকটা দরজা দিয়ে রুমে ঢুকে যায়।
এবার দরজাটা লাগিয়ে দিন।( গম্ভীর কন্ঠে বলে কথাটা)
ঢেউ তার উল্টো করে পুরো দরজা হা করে খুলে দেয়। ঢেউয়ের কর্মকান্ডে লোকটা হাসলো নাকি বুঝা গেলো না। নিজ দায়িত্বে এসে দরজা লাগিয়ে দেয়।
লোকটার কাজে ঢেউ থমকায় কেন যেনো খুব ভয় করছে। এই লোক কি করতে চাইছে।
“আ-আপনি দ-দরজা লাগাচ্ছেন কেনো?”
“আপনি না লাগাতে চাইলেন? বউয়ের সামান্য ইচ্ছে পূরণ করলাম মাত্র। ”
লোকটার কথায় গা জ্বলে যায়। চোখ মুখ কুঁচকে ঢেউ জিজ্ঞেস করে,,, “আপনি এখানে কি করতে এসেছেন? ”
“একজন স্বামী বউয়ের কাছে কি করতে আসে? অবশ্যই রোমান্স। ঢেউয়ের কানের কাছে কথাটা বলে তুরাগ ঢেউয়ের বিছানায় আয়েশ করে গিয়ে বসে। ”
তুরাগের এরকম কথায় ঢেউয়ের পুরো শরীর আপনা আপনি কাঁপতে থাকে। ঢেউয়ের মাথা ও কেমন ঘুরোচ্ছে মনে হচ্ছে এখনই বুঝি মাথা ঘুরে পরে যাবে।
#চলবে?,,,,