তুহে_তো_দিল_ধারাকতা_হ্যাঁয় পর্ব-০৭

0
16

#তুহে_তো_দিল_ধারাকতা_হ্যাঁয়

(৭ম পর্ব)

সৌমিক হাসে। অতসী যেন অস্বস্তি বোধ না করে এজন্য খুব স্বাভাবিকভাবেই উত্তর দেয়

– নতুন জায়গায় এমন হওয়া স্বাভাবিক। আমি তোমার সাথে থাকবো সমস্যা নেই।

খিচুড়ি রান্না হতেই সৌমিক পেঁয়াজ মরিচ দিয়ে বাদামী করে ডিম মামলেট করে। ধোঁয়া উঠা গরম খিচুড়ির সাথে ডিম মামলেট – খেতে বেশ জোশ।

– বাহ, তুমি তো দারুণ খিচুড়ি রান্না করো। মজা হয়েছে।

মুগ্ধ কন্ঠে বলে সৌমিক।

– এটা হচ্ছে অসহায়ের সহায়।

– মানে?

– মানে আমি তো তেমন রান্নাবান্না করি না। তেমন একটা পছন্দ না। কিন্তু কোন কারণে মা অসুস্থ হলে বা রান্না করতে না পারলে তখন এই খিচুড়ি দিতেই চালিয়ে দিই। এজন্য এটা খেতে মোটামুটি ভালো৷

– আচ্ছা, তাহলে তো এটা চালাইদেন খিচুড়ি।

সৌমিক আর অতসী একসাথে হেসে উঠে। সৌমিকের হাসিটা খুব সুন্দর। ও হাসলে পুরো চেহারা এমনকী ওর চোখ পর্যন্ত হেসে উঠে। বেশ লাগে দেখতে। অতসী কি তাহলে সৌমিকের উপরে ক্রাশ খাচ্ছে? না বাবা, এসব ক্রাশ খাওয়া যাবে না! একসাথে থাকতে হলে যতোটুকু সম্পর্ক না হলে নয়, ঠিক ততটুকুই। এর বাইরে যাওয়া যাবে না। কারণ পৃথিবী খুব কঠিন জায়গা। যখন অপরজন বুঝে ফেলে সামনের মানুষটা তাকে পছন্দ করে, ওমনি অবহেলা শুরু হয়। শুরু হয় ভালোবাসার অবমাননা। কোন রকম প্রত্যাশা ছাড়াই অতসী সংসার শুরু করেছে। এখন এসব পছন্দ, ভালোবাসা – এসবের অহেতুক প্রত্যাশায় জড়িয়ে হতাশ হতে চায় না!

– কি ব্যাপার, কি ভাবছো?

– নাহ তেমন কিছু না। নতুন জীবন তো, তাই মাঝে মাঝে কেমন অদ্ভুত লাগে। মনে হয়, কোথায় আসলাম! কেন আসলাম!

সৌমিকের মায়া লাগে। আসলেই মেয়েদের জীবনটা বেশ কঠিন। মেনে নিতে আর মানিয়ে নিতেই জীবন পার হয়ে যায়। চিরচেনা পরিবেশ, স্মৃতিকাতর জায়গা সব চগেড়ে আসতে হয়।

– অতসী, তুমি যদি বিভিন্ন জায়গায় পোস্টিং হয়, এমন কোন চাকরি করতে, তাহলে তোমাকে কিন্তু বিভিন্ন পরিবেশে মিশতে হতো। বিভিন্ন জায়গায় থাকতে হতো। ইচ্ছা থাকলেও বাবা মায়ের সাথে থাকতে পারতে না। এখন ভেবে নাও তেমনি একটা বাস্তবতায় আছো। আর আমাকে না হয় একটু সহ্য করে নিলে!

– হুম একদম ঠিক কথা। আমার তো বরং অনেক কিছু ফেস করতে হচ্ছে না। শ্বশুরবাড়িতে প্রায় সবাইকেই আত্নীয় স্বজনের নানান আবদার কিংবা উদ্ভট ঝামেলা সহ্য করতে হয়। আমি তো একদম আরাম আরাম একটা নতুন ফ্লাট পেয়েছে। সুতরাং আমার বরং কৃতজ্ঞ হওয়া উচিৎ। অবশ্য মুরব্বি কেউ থাকা ভালো। আমি তো এই দুই দিনেই আমার আম্মার বকাঝকা মিস করছি!

আবারও দুইজন হেসে উঠে। খেয়ে একসাথে প্লেট গ্লাস ধুয়ে ঘরে যায়। সৌমিক অনেকটা দুষ্টুমি করে বলে

– মনে হচ্ছে বনবাস থেকে আসলাম! আমি তো নিজ ভূমে পরবাসী হয়ে ছিলাম।

– আহ হা, এতো খুশি হওয়ার কিছু নেই। এই ঘরটা এখন আমার। আমি অনুগ্রহ করে থাকতে দিচ্ছি!

– জো হুকুম, মহারানী!

কিং সাইজ বিছানায় দুইজন দুই পাশে শুয়ে পড়ে। এই ঘরে ফিরতে পেরেই সৌমিক খুশি। মনের দূরত্ব কমলে দুই জনের মাঝের এটুকু দূরত্ব এমনিতেই কমে যাবে। এসব নিয়ে সৌমিক ভাবে না। বরং অতসী ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে, কথা বলছে, হাসছে – এটাই অনেক বড় কিছু। মেয়েটা এই ঘর কেন পুরো বাসাটাই নিজের মনে করুক। সৌমিকের মালিকানাও নিয়ে নিক। তবেই না সৌমিকের প্রকৃত বিজয়।

অতসীর মনেও নানান রকম চিন্তা। সৌমিককে ওর বেশ ভালো, না না অনেক ভালো ছেলে মনে হয়। বেশিরভাগ বাঙালি ছেলেরা বিয়ে বলতে সম্ভোগকেই বোঝায়। যেন কবুল বলে বা সিঁদুর পরিয়ে মেয়ে মানুষের শরীরটাকেই কিনে নিয়েছে। তারপরে মেয়েটার শারীরিক মানসিক কোন অবস্থার কথায় চিন্তা না করে নিজের চাহিদা মেটাতে উঠেপড়ে লাগে। অতসীর এসব মনে হলে ভয় লাগতো। কিন্তু সৌমিক ওর আচরণ দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে, ও কতোটাই আলাদা। অতসীর ইচ্ছাকে, অতসীকে কতোটা সম্মান করে। সবচেয়ে বড় কথা, সৌমিক ওর স্বামী নয় বন্ধু হতে চেয়েছে!

এটা ভেবেই অতসীর খুব শান্তি লাগে। হালকা করে আলো ছাড়ানো নীলচে আলোয় চুরি করে সৌমিকের দিকে তাকায়। মাথায় হাত দিয়ে খুব শান্ত ভঙ্গিতে শুয়ে আছে। অতসীর খুব নিশ্চিন্ত লাগে। খুব নিরাপদে আছে, শান্তিতে আছে, এমন একটা অনুভূতি কাজ করে। কিন্তু হঠাৎ একটা চিন্তা এসে ওর ঘুমের বারোটা বাজায়। গ্রুপ কলে এক বান্ধবী যে বললো, সৌমিকের অন্য কোন মেয়ে পছন্দ এজন্য অতসীর প্রতি এমন নিরামিষ আচরণ! এটা যদি সত্যি হয়!

হঠাৎ অতসীর খুব অস্বস্তি লাগে। না দেখা, না জানা সেই অলীল মেয়ের প্রতি খুব হিংসা লাগে। মেয়েরা ঠিক এই একটা জায়গায় খুব হিংসুটে। পছন্দের মানুষকে কারো সাথে ভাগ করে নিতে পারে না। শিক্ষিত, অশিক্ষিত, ধনী, গরিব – সব মেয়ে এই একটা জায়গায় একদম এক।

এই যেমন অতসী, এতো শিক্ষিত সুরুচী সম্পন্ন মেয়ে কোন এক বান্ধবীর অযথা কথায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। সকালে উঠেই আগে সৌমিককে জিজ্ঞাসা করবে – ওর কি বিয়ের আগে কোন পছন্দের মেয়ে ছিলো?

(চলবে)