#তৃষিত_তরঙ্গ —০৪
#প্রানেশা_আহসান_শীতল
সতর্কতা — কপি নিষিদ্ধ
মুসাওয়াদ তো এতো অভদ্র – অসভ্য ছিলো না, হলো কবে থেকে যে এভাবে চিন্তা করছে সে? ঢোক গিললো ছেলেটা। এর মধ্যে কানে এলো সাবরিহার বলা ধীরে স্বরে এক ভয়ংকর অকূল আবেদন—–
“ উইল ইউ গিভ মি এ্য কিস অন মাই ফরহেড?”
থমকালো মুসাওয়াদ। এতো সাবলীল ভাবে কে এমন আবদার করে? মুসাওয়াদের কি করা উচিত? সে কি করবে? ভাবনার মধ্যে রুমের দরজায় নক পড়লে দুজনের ভাবনায় ভাটা পড়ে আর সাবরিহা নিজের হুঁশে আসতেই ছিটকে সরে যায় সাথে লজ্জায় গুটিয়ে এলো মেয়েটা। মুসাওয়াদ বাঁধা দিলো না। ঘুরে রুমের দরজার দিকে একবার তাকিয়ে আবারো সেখান থেকে চোখ ঘুরিয়ে সাবরিহার দিকে তাকায়। সাবরিহার মাঝে এতো সময় জড়তা না দেখা গেলেও এখন জড়তা দেখা যাচ্ছে; লজ্জায় লালিমা আভা পড়ে গেছে মেয়েটার মুখে। মাথা নিচু করে এলোমেলো চোখের দৃষ্টি ফেলে জড়তায় মেঝেতে পা খুঁটতে খুঁটতে ধীরে অস্পষ্টে বলে—–
“ আ’ আ-ম একচুয়ালি স্যারি; আসলে; এক্সাইটেডমেন্টে কি থেকে কি করে—-!
কথা সম্পূর্ণ করার আগেই মুসাওয়াদ এগিয়ে এসে তার হাতের অজলায় উঠিয়ে নিলো সাবরিহার ছোট মুখটা তারপর ধীরে এগিয়ে এসে পরিপূর্ণতার ছোট্ট পরশ একে দেয়! নিঃসঙ্কোচ আবেদন ছিলো মেয়েটার! মেয়েটা এতো জড়তা কাটিয়ে খুব কাছে আসতে পারলে মুসাওয়াদেরও উচিত একটু ছাড় দিয়ে আরেকটু কাছে আসার পথ খুলে দেওয়া। মুসাওয়াদ ওষ্ঠ ছোঁয়াতেই চোখ বন্ধ করে কেঁপে উঠলো মেয়েটা। তা স্পষ্ট টের পেয়েছে মুসাওয়াদ। এই ছোঁয়া পবিত্র, হালাল! সাথে মেয়েটার একটু খানি জেদ আর আবদারও! থাকুক; মেয়েটার একটু আবদার না হয় পূরণ করেই দিলো। ওষ্ঠ ছুঁইয়ে মুসাওয়াদ খুব শান্ত শীতল চোখে তাকালো সাবরিহার মুখ পাণে। সাবরিহা এখনো চোখ বন্ধ করে আছে। দেখতে মন্দ নয়; হলেই কি? মায়ের পছন্দের উপর পুরো ভরসা আছে মুসাওয়াদের! মা যা বাঁছাই করবে নিশ্চয়ই সে জিনিস নিশ্চয়ই স্পেশাল!
আবারো দরজায় নক পড়তেই মুসাওয়াদ মেয়েটাকে ছেড়ে দেয়। সাথে সাথেই মুক্তি পেতেই ভারী শ্বাস ফেলে সাবরিহা। ঢোক গিললো; সে কখনো ভাবেই নি এভাবে, এতোটা কাছে, সব স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে সাবরিহার! সাথে লজ্জাও পেলো! লোকটাকে যতটা কাঠখোট্টা ভেবেছিলো সাবরিহা ততটাও সে নয়; তবে সে কি? বিয়ের প্রথম দিনেই? অসভ্যলোক বলবে সাবরিহা? কিন্তু দাবিটাতো সাবরিহার ছিলো! আর ভাবতে পারলো না। লজ্জায় মাথা নুইয়ে আসছে। আজকে আর মুসাওয়াদের দিকে চোখ তুলে তাকাবে না সাবরিহা। তাকালেই মনে হবে লজ্জায় মরে যেতে কিন্তু সাবরিহা এতো দ্রুত মরতে চায় না। মুসাওয়াদের সাথে অনেক গুলো তৃষিত তরঙ্গের বসন্ত পার করতে চায় সে…!
দরজা খুলতেই আমেনা বেগমকে দেখে একটু লজ্জিত ভঙ্গিতে হাসলো মুসাওয়াদ তারপর মাকে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো সে। আমেনা বেগমের বুঝতে আর বাকি নেই ছেলে কেনো লজ্জা পেয়েছে তাই আর কিছু বলে নি! মুসাওয়াদ চলে যেতেই আমেনা বেগম ধীরে রুমে প্রবেশ করে তারপর সাবরিহাকে উদ্দেশ্য করে বলে—–
“ কিরে; বিয়ে হতে না হতে আমায় ভুলে গেলি? নট ফেয়ার! এখন কি এখানেই থাকার ইচ্ছে আছে নাকি বাসায় যাবি?”
অবাক হয় সাবরিহা৷ সাথে ভালোও লাগে! আমেনা ম্যাম মানুষটাই এমন কত সুন্দর করে মানুষকে আপন করে নিতে জানে! তবে অবাক গলায় বলে—–
“ বাসায়?”
“ তোর বাসায়! এখন মুসাওয়াদের ঘরই তোর ঘর! তোর বাসা! এখন এটা তোর বাবার বাড়ি!”
দম আটকে এলো সাবরিহার! বিয়ে হতে না হতেই সাবরিহা পর হয়ে গেলো নাকি? এখন এটা আর তার বাড়ি নেই; এটা তার বাবার বাড়ি! কথা বলতে পারলো না। আমপনা বেগম হাসলেন তারপর মাথায় হাত রেখে বলে—–
“ একদম নার্ভাস হবি না। মন খারাপ তো একদমই না! বাসায় চল; যখন মন চাইবে চলে আসবি! আমি কিন্তু একটুও আটকাবো না। এখন ফিরতে হবে রাত অনেক হয়েছে! ব্যাগ ঘুছিয়েছিস?”
এবারও জবাব করতে পারলো না সাবরিহা। সুমি বেগম এলেন তখন তারপর পিছন থেকে বলেন—–
“ ভাবী ওর কথা বাদ দেন! ওই যে পেছনে লাগেজ আছে ওখানে ওর দরকারী জিনিস পত্র আছে!”
আমেনা বেগম হাসলেন। প্রতিটা মেয়েই এমন সময় পার করে। তাই আমেনা বেগম চায় না সাবরিহার উপর জোর খাটাতে তাই ধীরে বলে—–
“ তুই কি আজকে এখানে থাকবি? তাহলে আমি আর মুসাওয়াদ চলে যাই! তুই থাক। যখন ফিরতে ইচ্ছে হবে কল দিস নিয়ে যাবো!”
এবার চমকালো সাবরিহার। নির্লজ্জের মতো চেঁচিয়ে বলতে ইচ্ছে হলো—–
“ আমি যাবো; যেতে চাই! শিকারী নিজেই আমার কাছে এসেছে তাকে ছাড়ি কি করে?”
অথচ মুখ থেকে একটা কথা উচ্চারণ করতে পারলো না। মাথা নিচু করে মিনমিন করে বলে—-
“ আপনি যা বলবেন তাই হবে আমেনা ম্যাডাম!”
মিষ্টি হাসলো। আমেনা বেগম ঠিক জানেন সাবরিহার মনে কি চলছে তাই নিজেই এগিয়ে এসে লাগেজ তুলে নিয়ে বলে—–
“ আমার মুসাওয়াদের মতো আম্মু ডাকবি সাবরিহা। এই আপনি টাপনি শুনলে আমি কিন্তু বুড়ি বুড়ি ফীল পাই তখন আবার আবদার করে বলবো, বুড়ি হচ্ছি নাতী – নাতনী দেখতে চাই। আর ওই সব ম্যাডাম ফ্যাডাম আগে ডাকতি ওটা আলাদা এখন তুই আমার ছেলের বউ; এখন আমাকে আমার ছেলের মতোই আম্মু ডাকবি বুঝলি?”
আমপনা বেগমের প্রতিটা কথায় লজ্জায় নুইয়ে গেছে মেয়েটা শুধু মাথা নাড়িয়ে অস্পষ্ট ভাবে বলে—–
“ হু!”
আমেনা বেগম আবারো হাসলো তারপর বলে—–
“ তাহলে আয়! এই মুসাওয়াদ এদিক আয়; লাগেজটা নিয়ে গাড়িতে তোল!”
মুসাওয়াদ এলো ডাক দেবার কিছু সময় পরেই! এসে এদিকসেদিক না তাকিয়ে লাগেজ নিয়ে চলে গেলো। কেনো যেনো খুব জড়তা কাজ করছে। লাগেজ নিয়ে গাড়িতে রেখে এসে আবারো বাসায় এলো মুসাওয়াদ তখন সুমী বেগম মেয়েকে জাপ্টে ধরে কাঁদছে! আর আমেনা বেগম বুঝানোর চেষ্টা করছে। সাথে সুবাইতাও বোনের আঁচল ধরে আছে। সাবরিহাও কান্না করছে। কান্নার দোমকে শরীর ভেঙ্গে আসছে; বিয়ে শেষ হতেই ধীরে ধীরে যারা ছিলো তারা চলে গেছে; তাতে মুসাওয়াদের খানিকটা অবাক লাগলেও ততটা ভাবে না। সে এগিয়ে এসে সুমী বেগমের সামনে দাঁড়িয়ে বলে—–
“ আমাদের যেতে হবে; রাত হচ্ছে—!”
সুমী বেগম মুখ তুলে সাবরিহার হাত মুসাওয়াদের হাতে তুলে দিয়ে বলে—–
“ সাবরিহা আমাদের ভীষণ শখের মেয়ে ছিলো বাবা। ওকে দেখে রাখবে! এখন থেকে ওকে দেখে রাখার দায়িত্ব তোমার বাবা। যদি কখনো মনে হয়; আমার মেয়ের দায়িত্ব আর নিতে পারছো না তখন আমার মেয়েকে এভাবেই ফিরিয়ে দিয়ে যেও তবুও ওকে কষ্ট দিও না। সাবরিহার বাবার কাছে যেনো বলতে পারি মেয়েটা ভালো আছে; মেয়েটা যোগ্য মানুষের কাছে আছে!”
শান্ত শীতল চোখে নির্নিমেষ চোখ তাকিয়ে রইলো খানিকক্ষণ তারপর সাবরিহার হাতটা আরেকটু শক্ত হাতে ধরে বলে—–
“ এই যে হাত ধরলাম; নিজের শরীরের এক বিন্দু রক্ত থাকলে তা দিয়েই আপনার মেয়েকে আগলে রাখার চেষ্টা করবো আম্মা। আম্মু আর আপনার মেয়েকে দেখে রাখবো! ভরসা করুন; সাবরিহাকে ভালো রাখবো!”
কথায় কি একটা যেনো ছিলো। সবাই মন্ত্র মুগ্ধের মতো তাকিয়ে রইলো। মুসাওয়াদ সবাইকে দেখে আবারো নির্জীব গলায় বলে—–
“ আমাদের ফিরতে হবে!”
————–
গাড়ি চলছে নিজস্ব গতিতে। গাড়ির মধ্যে নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে সাথে মুসাওয়াদের নাসারন্ধ্রে একটা মেয়েলি মিষ্টি ঘ্রাণ ধাক্কা দিচ্ছে বারবার! তাতে যেনো মনোযোগ সরে যাচ্ছে! আমপনা বেগম আগে এসে পিছনে বসেছিলেন। এখন ঘুমিয়ে গেছে অনেক সময়। সাবরিহাও সীটে মাথা হেলিয়ে চুপ করে চোখ বন্ধ করে আছে। হয়তো কিছু একটা ভাবছে। মুসাওয়াদ গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে বেশ কয়েকবার লুকিং গ্লাস দিয়ে চোখ ঘুরিয়ে সামনে পিছনে তাকাচ্ছে! এমনটা মুসাওয়াদের কখনোই হয় না! তবে এবার কেনো ড্রাইভে মনোযোগ দিতে পারছে না সে? কি সমস্যা? কি কারণ ঠিক ধরতে পারলো না। কিছু সময় পর পর সাবরিহার চুড়ির শব্দে মনোযোগ আবারো ভ্রষ্ট হচ্ছে মুসাওয়াদ তাই গম্ভীর গলায় বিরবির করে বলে—–
“ আমি কোনো জেন্টলম্যান নই, তরঙ্গ… আপনি অতল সমুদ্রের মতো নীল সমুদ্র আমায় নির্ভীক বানিয়েছে আর আপনি সেই তরঙ্গ যে আমার নির্জীবতাকে চূর্ণবিচূর্ণ করেছে! আপনি যেমন আপনার তাণ্ডবী ঢেউয়ে আমাকে উন্মাদ করবেন, আমিও আপনাকে ছিন্নভিন্ন করব আমার শর্তে। আপনার চুড়ির শব্দ, নূপুরের কম্পন; সবকিছু আমার ছোঁয়ায় এমনভাবে আপনাতে গেঁথে যাবে, যা কখনোই আপনার থেকে মুক্তি পাবে না। নট ইভেন হোয়েন আই টিয়ার ইউ অ্যপার্ট পিসেস বাই পিসেস, হোয়াইল ইউ উইশপার মাই নেইম বিটুইন ইউর স্যাটার্ড ব্রেথ, তরঙ্গ!”
——
চলবে…!”