#তৃষিত_তরঙ্গ—০৬
#প্রানেশা_আহসান_শীতল
সতর্কতা —- কপি নিষিদ্ধ
গহনা গুলো ধীর হাতে খুলে দিচ্ছে মুসাওয়াদ। আর সাবরিহা অপলকভাবে নির্নিমেষ চোখ তাকিয়ে আছে মুসাওয়াদের মুখের দিকে। মুসাওয়াদ ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরে, তো আবার কপাল কুঁচকায় আবার স্বাভাবিক করে নিজের মুখাবয়ব। তাকিয়ে থাকতে থাকতে সাবরিহা কখন খুব কাছে এসেছে সাবরিহা নিজেও জানে না। ধীরে মুখ এগিয়ে মুসাওয়াদের কানের কাছে যেয়ে সাবরিহা খুব ধীরে ও আলতো স্বরে বলে—– ‘ এতো কাছে আসবেন না কমান্ডার! কেমন উতালপাতাল হচ্ছে মনের ভেতর! নিষিদ্ধ বাসনা জেগে উঠছে। আমি চাই না আপনি আমার আর বেহায়া, গায়ে পড়া, নির্লজ্জ ঠোঁট মেয়ে মানুষ ভাবুন। কিন্তু আমি নিজেকে থামাতে পারছি না।’
মুসাওয়াদের হাত থেমেছে অনেক আগেই। তবে ঘার বাকিয়ে সাবরিহার চোখে চোখ রাখলো। অদ্ভুত ভাবে কেঁপে উঠলো সাবরিহা। মুসাওয়াদের ধূসর রঙের মনি জোড়া অন্য কিছু ঝিলিক দিচ্ছে। সেই চোখে তাকিয়ে থাকতে পারলো না সাবরিহা। সে অপারগ হয়ে নজর সরিয়ে নিলো অন্যত্র! সাথে ঢোক গিললো। মুসাওয়াদের অধরে হাসি ফুটলো। বাচ্চামেয়েটা মুসাওয়াদকে ভড়কাতে যেয়ে বারবার নিজেই ভরকে যাচ্ছে! বারবার মুসাওয়াদকে উসকানি দিচ্ছি! অথচ মেয়েটা নিজেও জানে না এর ফল কতটা বাজে হতে পারে। ঠোঁট কোন বাঁকা হলো!
মুসাওয়াদের সাবরিহাকে পছন্দ হয়েছে! মেয়েটা অদ্ভুত, চঞ্চল, পাগলাটে! তার মতো ডিসিপ্লিন মেইনটেইন করা মানুষের সাথে এতো খামখেয়ালীপনা একটা মেয়ে জড়িয়ে গেছে সাথে তাকে খানিক বাদে বাদে উস্কানিমূলক কার্যক্রম করছে! মুসাওয়াদ অবশ্য ইনজয় করছে। বিয়ে করবে না বলে। হুট করে বিয়ে করা বউয়ের পাগলামি দেখতে আসলেই বিনোদন মূলক অধ্যায়ের মতো মনে হচ্ছে মুসাওয়াদের। সব কিছু ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলে মুসাওয়াদ তারপর উঠে যায়। সাবরিহা মুখ ঘুরিয়ে তাকালো। মুসাওয়াদ খাবার প্লেট-টা ধরে দেখলো এখনো গরম আছে তাই গম্ভীর কণ্ঠে শুধায়—– ‘ এখন খাবেন নাকি শাওয়ার নিয়ে? শাওয়ার নিয়ে খেলে আই থিংক ভালো হবে! আবার একদিক থেকে খাবার ঠান্ডাও হয়ে যাবে!’
সাবরিহা ঠোঁট বাকালো। তারপর ধীরে বিছানার পাশ ধরে উঠে দাঁড়িয়ে মুসাওয়াদকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলে— ‘ দেখছে অসুস্থ। একটুসেবা যত্ন করবে তা না!’
কথাটা শেষ করার পূর্বেই হুট করেই সাবরিহাকে পাজ কোলে তুলে নেয় মুসাওয়াদ। সাবরিহা ভরকে বড় বড় চোখে তাকায়। কিছু বলবে, তবে কথা খুঁজে পেলো না মেয়েটা। মুসাওয়াদ বড় বড় পা ফেলে শান্ত গলায় বলে—– ‘ সরাসরি বললেই পারেন ম্যাডাম! এতো ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বলেন! অবশ্য ব্যাপার না! আই আন্ডারস্ট্যান্ড এভরিথিং! তবে বেশি চালাকি ভালো নয়!’
কথাটা বলেই সাবরিহাকে ওয়াশরুমের সামনে নামিয়ে দেয় মুসাওয়াদ। সাবরিহা বোকা মুখে এখনো তাকিয়ে এক মুহুর্তের জন্য মনে হলো – সে মুসাওয়াদকে যতটা ভদ্রলোক ভেবেছিলো ততটা সে নয়; বরং সে সুযোগ পেলে একমুহূর্তের জন্যও সাবরিহাকে ছাড়বে না। সাবরিহা কিছু বলার আগে মুসাওয়াদ সাবরিহার ওষ্ঠে আঙ্গুল রেখে বলে—– ‘ হুশশ! আপনি মেয়ে বড্ড অধৈর্য! ফ্রেশ হন! আমি শাড়ি দিচ্ছি!’
‘ আমার—!’
‘ আম্মু আগে থেকেই আপনার জিনিসপত্র রুমে রেখে গেছে। তখন কাবার্ড খোলার সময় দেখলাম।’
‘ কিন্তু রাখলো কখন?’
বোকা গলায় প্রশ্ন শুধায় সাবরিহা। মুসাওয়াদ কপাল কুঁচকায় তারপর ধীরে বলে—– ‘ আমরা যখন গ্রাউন্ড ফ্লোরে ছিলাম তখন হয়তো! এখন যান; বেশি কথা বলছেন! আপনি না অসুস্থ? ‘
মা – ছেলে দুটোই ফাস্ট! তবুও মুখে কিছু না বলে ধীরে ওয়াশরুমের ভেতরের দিকে যেতে যোতে বলে—– ‘ যাচ্ছি!’
কথাটা বলেই চলে গেলো সাবরিহা। মুসাওয়াদ খানিকসময় ওখানে দাঁড়িয়ে থেকে আলতো পায়ে কাবার্ড থেকে হালকা মিন্ট কালারের একটা শাড়ি নামালো। তারপর আবারো ওয়াশরুমের দরজায় ছোট করে টোকা দিতেই ভেতর থেকে উত্তর এলো—–’ এই যে শুনছেন?’
বক্ষস্থলের অন্তঃকরণে যেন ধক করে উঠলো মুসাওয়াদের। গলা শুঁকিয়ে এলো। ঢোক গিলল, জবাব দিতে চাইলো। তবে গলা থেকে একটা কথা বলতে পারছে না। যেন সব কথা এলোমেলো হয়ে প্যাচিয়ে যাচ্ছে! এসব কি হচ্ছে মুসাওয়াদের! এতো প্যারোড, ক্যাডেট, ট্রেইনিং, এসব করে লাভ কি হলো? যে এমন এসে হুট করেই মেয়েটার এসব আচারণ ইনজয় করছে একজন পোঢাখাওয়া নেভী অফিসার। সাবরিহা অধৈর্য ও বিরক্ত হলো মুসাওয়াদের জবাব না পেয়ে তাই বিরক্ত কণ্ঠেই উচ্চ গলায় বলে—– ‘ এই যে, একটু ভেতরে আসুন না। শাড়ির পিছনের সেফটিপিন খুলতে যেয়ে হাত ফুটো হয়ে রক্ত বের হচ্ছে। আমায় একটু সাহায্য করুন!’
থমকায় মুসাওয়াদ। তবুও গলায় জোর এনে শুধায়—– ‘ আর ইউ শিউর?’
এবার যেন বিরক্তিতে ছেয়ে গেলো সাবরিহার শ্যামলা মুখটা তাই সেভাবেই জবাব দেয়—– ‘ না মজা করছি। আসতে হবে না আপনার! যদি শাড়ি খুলতে না পারি ছিঁড়ে তারপর বাহিরে আসবো। আপনার আসতে হবে না। আমার হাত রক্তে ভেসে যাক!’
কথা শেষ হবার সাথে সাথে কেউ আলতো হাত রাখলো সাবরিহার কোমড়ে৷ সাথে তা টেনে আরেকটু ঘনিষ্ঠ করলো। ব্যক্তিগত পুরুষালী ছোঁয়া পেতেই চুপ হয়ে যায় সাবরিহা। মুসাওয়াদ আলতো স্পর্শ করে হাত দেখলো সাবরিহার। ভালোই রক্ত বের হচ্ছে। তাই সময় ব্যয় না করেই সাবরিহার ডান হাতের আঙ্গুলটা নিজের মুখে নিয়ে নেয়। অবাক হয়ে ওয়াশরুমের বড় আয়নায় চোখ রাখে সাবরিহা। শরীর থরথর করে কেঁপে উঠলো যেনো। মুসাওয়াদ বিপরীতে একদম শান্ত। সে আরেকটু এগিয়ে এসে আয়নার সাথে শোয়িং গ্লাস খুলে সেখান থেকে একটা এন্টিসেপটিক বক্স বের করলো তারপর মুখ থেকে হাত বের করে, সাবরিহার আঙ্গুলটা দেখলো। এখনো রক্ত যাচ্ছে! মুসাওয়াদ একবার সাবরিহার চোখে তাকালো তারপর চোখ সরিয়ে নিয়ে আলতো গলায় বলে—– ‘ আপনি বড্ড বেখেয়ালী তরঙ্গ!’
সম্বোধন শুনে চমকে মুসাওয়াদের পাণে চোখ রাখে সাবরিহা তা টের পেতেই তুলোতে স্যাবলন নিয়ে ফুঁটো হয়ে যাওয়া স্থানে তা চেপে ধরে। সাবরিহা প্রথমে তা বুঝতে না পারলেও খানিক বাদে তা টের পেতেই বোকার মতো হাতের দিকে তাকায়। কিন্তু ততক্ষণে হাতে ওয়ানটাইম ব্যান্ডেজ দক্ষল করে নিয়েছে। মুসাওয়াদ শ্বাস ফেললো তারপর একটু সরে এসে বলে—– ‘ কোননসাইডে সেফটি পিন?’
‘ বাম সাইডের পিঠের দিকে!’
ঢোক গিলে আলতো হাত রাখলো সেখানে। তারপর সেখান থেকে বেড়িয়ে এলো ছোট তবে তীক্ষ্ণ ও ধারালো একটা সেফটিপিন। সে এনে রাখতেই সাবরিহা আবারো বলে—– ‘ আরো একটা আছে। দেখুন!’
মাথা নাড়িয়ে আবারো চোখ রাখতেই খানিক দুরত্বে সেফটি পিন পায়। তা খুলে সামনে রাখে। এবার যেন সাবরিহা একটু শান্তি পেলো। একটা লম্বা শ্বাস ফেলে আয়নায় চোখ রেখে ধীরে ভীতু গলায় শুধায়—–’ কমান্ডার?’
‘ উম?’
‘ ব্যাক হুক গুলো?’
অদ্ভুত চোখে তাকালো মুসাওয়াদ। এই মেয়ে কে মুসাওয়াদকে লাগাম ছাড়াতে চাইছে? মেয়েটা ঠিক কি করতে চাইছে? কেনো শুধু শুধু ভেতরের মানুষটাকে উস্কাচ্ছে? চোখের পলক ফেলে ধীরে বলে—– ‘ আম্মু কে ডেকে দেই?’
সাথে সাথেই ঘুরে দাঁড়ালো সাবরিহা। তারপর বড় বেশিনের পাশে হেলান দিয়ে বলে—– ‘ আম্মু জেগে আছে?’
‘ না!’
এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে বলে মুসাওয়াদ তাই সাবরিহা শ্বাস ফেলে বলে—– ‘ শুধু শুধু আম্মুকে ডেকে লাভ কি বলুন। এর থেকে আপনিই সাহায্য করুন। আম্মু তো ঘুমিয়ে গেছে!’
কথাটা বলেই আবারো ঘুরে দাড়িয়ে ঠোঁট টিপে হেসে ফেলে সাবরিহা। মুসাওয়াদ দ্বিধাদ্বন্দের সাথে এগিয়ে এসে হাত রাখে সাবরিহার ব্যাকহুকে। তারপর ধীরে জিজ্ঞেস করে—– ‘ পড়ার সময় সাহায্য কে করেছিলো?’
‘ যারা আমাকে সাজাতে এসেছিলো!’
‘ ওহ!’
সাথে সাথেই চোখ পড়লো সাবরিহার পিঠের একটা লাল তিলের ওপর। শরীরের সাথে পায়ের তলানী পর্যন্ত শিরশির করে উঠলো। তবুও চোয়াল শক্ত করে নিজেকে সামলে নিয়ে ধীরে প্টতিটা হুশ ওপেন হলে সরে আসতে আসতে বলে—– ‘ ওই যে শাড়ি। ফ্রেশ ওর শাওয়ার! যা প্রেফার করেন। করে ডাক দিয়ে। আপনি তো আবার অসুস্থ।’
কথাটা বলেই মুসাওয়াদ বেড়িয়ে গেলো। আর সাবরিহার বোকার মতো তাকিয়ে রইলো। হলো কি হুট করে এমন রেগে গেলো কেনো এই লোক? সাবরিহা তো কিছুই করেনি। তাহলে এভাবে রেগে যাবার কারণ কি? ভাবতে ভাবতেই একটা লম্বা শাওয়ার নেবার কথা ভাবে।
ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে এসেই লম্বা লম্বা শ্বাস ফেলে নিজেকে স্বাভাবিক করতে চাইলো৷ কি একটা মনের ভেতর হচ্ছে যা আগে কখনো হয় নি। কেনো হচ্ছে এসব? কেনো মেয়েটা এমন করে তার ধৈর্যের বাধ ভেঙে উস্কানিমূলক কাজ করতে প্ররোচিত করছে। এর ভোগ খুব খারাপ হবে। খুব খারাপ! তারপর যদি মুসাওয়াদের উপর রাগ করে, মুসাওয়াদকে খারাপ ভাবে তাতে মুসাওয়াদের কিচছু আসে যায় না। কিচ্ছু না! আফটার অল হি ইজ নট এ্যা গুড ম্যান; সাবরিহা অলসো প্রভোকিং হিম টু ডু দিস টাইপস অফ শীট’স—!’
আর কিছু ভাবলো না মুসাওয়াদ। ওই লাল তিলটা মুসাওয়াদকে অশানৃত করে ছেড়েছে৷ এটা আগে কখনো হয় নি তবে আজকে নিজেকে সামলানো যেন অসম্ভব হয়ে উঠেছে৷ এর বিহিত সে করেই ছাড়বে; তাই আবারো ওয়াশরুমের দরজা খুলে এগিয়ে এসে যা করলো তাতে সাবরিহা চোখ বিস্ময়ে অক্ষিকোটরের বাহির আসতে চাইছে যেনো…
চলবে .
রিচেক দেই নি .