তৃষিত তরঙ্গ পর্ব-০৭

0
19

#তৃষিত_তরঙ্গ—০৭
#প্রানেশা_আহসান_শীতল
সতর্কতা —- কপি নিষিদ্ধ

ওয়াশরুমের দরজা সাবরিহা বন্ধ করে নি। মুসাওয়াদও নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দরজা খুলে এগিয়ে এসে সাবরিহার হাত শক্ত করে চেপে ধরে। সাবরিহা শাড়ি শরীরে ঠিকঠাক ভাবে রেখে শাড়ির কুঁচি ঠিক করেছিলো। হুট করে মুসাওয়াদ সাবরিহার হাত ধরায় হাতে তোলা শাড়ির কুঁচি গুলো ঝরঝর করে হাত থেকে খষে পড়ে গেলো আর সাবরিহা থমকে নিজের হাত চেপে রাখা সেই পুরুষালী হাত থেকে মুখ উঁচিয়ে উপরে তাকায় আর মুসাওয়াদকে নিজের এতো কাছে দেখে ভরকে যায় সাথে সাবরিহা চোখ বিস্ময়ে অক্ষিকোটরের বাহির আসতে চায়… মুসাওয়াদ এখনো শান্ত চোখে তাকিয়ে আছে। অথচ তার মনে সমুদ্রের উত্তাল ঘূর্ণিঝড়ের মতো এলোমেলো হয়ে আছে! সে খুব ভালো করে জানে এখন যা হবে তা একদম ঠিক হবে না৷ সে যথেষ্ট ধৈর্যবান পুরুষ তবে বারবার চোখের সামনে তিলটা ভেসে উঠলেই যত সংযম আছে তা চূর্ণবিচূর্ণ হতে চাইছে। সাবরিহা এখনো অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। তারপর ধীরে বলে—– ‘ কি হয়েছে আপনার? এমন লাগছে কেনো আপনাকে! আর আমি তো চেইঞ্জ হই নি! আপনি তো বলেন —!’

কথা সম্পূর্ণ করতে পারলো না তার আগে সাবরিহার কটিদেশে মুসাওয়াদের শীতল হাতের ছোঁয়া পড়লো। সাথে -তা টেনে আরেকটু এগিয়ে নিলো সামনের পুরুষটি, তারপর তার শক্তপোক্ত দেহের সাথে মিশিয়ে নিল। সাবরিহার অদ্ভুত লাগছে এখন। হুট করেই মস্তিষ্ক কিছু জানান দিতেই ছটফটিয়ে উঠে উনিশ বছর বয়সী ছোট মেয়েটা। তার চোখে কি একটা আকুতি। থরথর করে উঠলো সে চাহনী দেখে। সাবরিহা কিছু বলতে চাইলো। তবে গলা থেকে শব্দ আসছে না যেনো। মুসাওয়াদ এক ভ্রু উঁচিয়ে তাকিয়ে আছে সাবরিহা কিছু বলবে তবে তাকে হতাশ করে দিয়ে উদ্ধিগ্ন চোখে তাকিয়ে আছে। মুসাওয়াদ কিছুটা মুখোমুখি ভাবে কাছে এলো তারপর ধীরে বলে—– ‘ হোয়াটস ইয়োর প্রবলেম মিসেস কায়ান?’

ঢোক গিললো! মুসাওয়াদের বলা গুলো নেশালো ও ভারী লাগলো। হৃৎপিণ্ডটা ছলাৎছলাৎ করছে। মুসাওয়াদ এখনো গভীর মনোযোগ সহকারে সাবরিহার মুখের ভাব পড়তে চাইলো। মেয়েটা জড়োসড়ো হয়ে এসেছে। মুসাওয়াদ ঠোঁট কোনে বাকা হাসলো। তারপর ধীরে সাবরিহার নিচে পড়ে থাকা শাড়ির কুঁচির অংশ তুলে কুঁচি তুললো নরম হাতে। সাবরিহা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। সব কয়টা কুচি ঠিক মতো তুলে তা সাবরিহার কাছে শীতল ও ধীরে বলে—– ‘ আপনি গুঁজবেন নাকি আমি গুজবো?’

থতমত খেয়ে যায় সাবরিহা। অতিদ্রুত বলে—– ‘ আমি, আমি গুঁজবো।’

কথাটা বলে শাড়ির কুঁচি গুলো কোমড়ে গুঁজে নিয়ে অবাক গলায় প্রশ্ন করে—– ‘ আপনি শাড়ির কুঁচি – কিভাবে?’

‘ আম্মুকে হেল্প করতাম তাই! একটু আধটু দেখে শিখে গেছি।’

‘ ওহ!’
কথা নাড়ালো সাবরিহা। তারপর মাথা ঘুরিয়ে আয়নায়দে খে নিজেকে তারপর ধীরে পানির ট্যাপ থেকে পানি নিয়ে মুখে দেয়। মুসাওয়াদ এখনো দাঁড়িয়ে আছে। সাবরিহা মুখে পানি দিয়ে পাশ থেকে টিস্যু নিয়ে ফেইসের মেকআপ উঠানোর চেষ্টা করছে। সময় গড়ায় তবে মুসাওয়াদ এখনো দাঁড়িয়ে আছে। সাবরিহা আয়নার প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে—– ‘ কি হয়েছে আপনার? এভাবে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো?’

‘ দেখছি!’
মন্ত্রমুগ্ধের মতো জবাব দিলো। সাবরিহার হাত থামে তারপর ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে—– ‘ কি? কি দেখছেন?’

‘ আপনাকে!’

মুখ বন্ধ হয়ে যায় সাবরিহার। ঢোক গিললো তবে মুখ ঘুড়িয়ে ফেল। তারপর আয়নার দিকে তাকিয়ে আবারো বলে—– ‘ এমন করবেন না কমান্ডার! মনের ভেতর কেমন করে!’

আলতো শব্দে হেসে ফেলে মুসাওয়াদ তারপর এগিয়ে এসে আবারো সাবরিহার কোমড়ের খাঁজে হাত রেখে টেনে নিলো নিজপর সাথে মিশিয়ে তারপর ধীরে আয়নায় তাকিয়ে চোখে চোখ রাখে! তারপর কানের কাছে ফিসফিস করে বলে—– ‘ কেমন করে?’

‘ কেমন যেনো! আপনাকে ছুঁতে ইচ্ছে করে!’

ঠোঁট কামড়ে হাসলো মুসাওয়াদ। মেয়েটা তাহলে ভালোই আচ্ছন্ন! ধীরে নেশালো গলায় বলে—– ‘ এই কথাটা যদি আমি বলতাম? কেমন হতো?’

বিষ্ময়চোখে তাকিয়ে ভরকানো গলায় বলে—– ‘ খুব খারাপ হতো!’

‘ তাহলে আপনি কেনো এসব বলে বলে আমায় উস্কে দিচ্ছেন?’

চোখের পলক ফেলে চোখ নামিয়ে নিলো সাবরিহা। মুসাওয়াদের আর বুঝতে বাকি নেই! মেয়ে তাকে ভালোই নাকানিচুবানি খাওয়াবে! তাই আর বেশি কথা না বলে আবারো কোলে তুলে নেয়! সাবরিহা অবাক মুখে বলে—– ‘ আরে, আরে কি করছেন? ‘

‘ রুমে যাচ্ছি! এখন খাইয়ে দিবো। পুতুলের মতো খেয়ে নেবেন! তারপর আমি ঘুমবো। আপনি বড্ড জ্বালাচ্ছেন! যত রাত জগবো আপনার জ্বালাতন বাড়বে! আর আছে কেবল পাঁচ দিন। আমি চাই না এই পাঁচ দিনে আমি এমন কিছু করি যার কারণে আমি ফিরে আসার আগ পর্যন্ত আপনি কান্না করুন!’

মুখটা ছোট হয়ে এলো সাবরিহার। চোখের কোটর পানিতে পরিপূর্ণ হতে চাইলো! ধীরে ঢোক গিলে প্রশ্ন করে —– ‘ ছুটি বাড়ানো যায় না? আরেকটু থেকে যান!’

‘ সম্ভব নয়! আমাদের ছুটি খুব কম মঞ্জুর হয়! তবে এবার দ্রুত ফেরার চেষ্টা করবো!’

আর জবাব করলো না সাবরিহা। মুসাওয়াদ খুব যত্নে সাবরিহাকে বিছানায় নামিয়ে দিয়ে হাত ধুয়ে এসে পাশে বসলো। তারপর ভাত মাখিয়ে খাবার তুলে দেয়। সাবরিহা অনেকটা সময় তাকিয়ে থেকে মুখে তুলে নিলো ভাতের লোকমা। আসলেই ভীষণ ক্ষুদা লেগেছিলো সাবরিহার। এতো কথা বলায় মনে ছিলো না তবে এখন মাথা চাঁড়া দিয়ে উঠেছে। খাবার খাওয়া শেষ হতেই মুসাওয়াদ প্লেট রেখে আসে তারপর সাবরিহার দিকে তাকিয়ে বলে—– ‘ শাড়িতে অস্বস্তি হবে? আমি কি অন্যরুমে যাবো?’

সাবরিহা মাথা নাড়িয়ে একটু সরে বসলো তারপর বলে—– ‘ না না সমস্যা হবে না। আপনি এখানেই ঘুমান!’

‘ শিউর?’

‘ হ্যাঁ। আসুন!’

ছোট শ্বাস ফেললো তারপর বড় লাইটটা বন্ধ করে টিমটিমে আলো জ্বালিয়ে দিয়ে ধীরে চোখ বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে পড়ে। সাবরিহা বসে আছে তারপর ধীরে মাথার পাশে হাত রেখে কাতঁ হয়ে সুয়ে পড়ে। চোখে ঘুম আসছে না। মুসাওয়াদ চলে যাবে তা সাবরিহা আগে থেকেই জানতো। তবে মুসাওয়াদ এতো সহজে তার সাথে মিশে যাবে তা ভাবনাতীত ছিলো। মনে মনে খুশি হল! যাক এই দিকটা সাবরিহা ক্লিয়ার! কিন্তু কোনো ভাবে মুসাওয়াদকে আটকানো যায় না? কিছু দিনপর জন্য হলেও মুসাওয়াদ যদি থেকে যেতো। হতাশ শ্বাস ফেলে মুখ ঘুরিয়ে মুসাওয়াদের দিকে তাকালো। মুসাওয়াদ চোখ বন্ধ করে আছে। সাবরিহা যে ঘুমায়নি তা বুঝতে পেরে ধীরে বলে—– ‘ ঘুমাচ্ছেন না কেনো?’

‘ আসছে না। নতুন জায়গা তো!’

‘ আপনি চাইলে আম্মুর কাছে যেতে পারেন!’

‘ উহু! আপনি চলে যাবেন! আর আম্মুর সাথে তো আমি থাকবেই এখানে। আপনি আবার কবে আসবেন! তাই আমি চাই এই চার-পাচদিন আপনার কাছাকাছি থাকি! হয়তো বেহায়া মেয়ে লোকের মতো আবদার করেছি। তবে আপনি নিজেও জানেন না — আমি আপনাকে ঠিক কতটা ভালোবাসি। কত রাত জেগে নামজ পরে কান্না করে মুনাজাতে আল্লাহর কাছে আপনাকে চেয়েছি। আর সেই আপনি আমার হলেন তবে আবার চলে যাবেন। আবার কবে আসবেন! আপনাকে আমি প্রথম আমার স্কুলের সামনে দেখেছিলাম, ওই প্রথম আর ওই শেষ। তারপর আপনার পরিচয় বের করালাম। না যেনে না বুঝে এতো ভালোবাসলাম। ভাগ্য সহায় থাকায় তাকে পেলামও কিন্তু সে আবারো আগের মতো চলে যাবে। কবে আসবে কে জানে! তাই আমি চাই যতটুকু সময় আছে, এতোটুকু সময় আপনাতে জড়িয়ে থাকি!’

মুসাওয়াদ ঢোক গিললো। মেয়েটার ব্যপারে কি বলবে বুঝলো না সে। শুধু ধীরে বলে—– ‘ কাছে আসুন!’

সাবরিহা থমকায় তবুও এগিয়ে আসতেই মুসাওয়াদ সাবরিহার পিঠের দিক থেকে টেনে এনে তার বক্ষে জায়গা করে দেয় ছোট মেয়েটাকে। সাবরিহা প্রথমে ভরকালেও আনন্দে যেনো চোখ থেকে পানি পড়তে চাইলো। মুসাওয়াদ ধীরে সাবরিহার কপালে ঠোঁট ছুইয়ে দিয়ে বলে—– “ আমি আপনার পাশে থাকবো তরঙ্গ! একটু ধৈর্য ধরুন!”

——
চলবে…! [রিচেক দেই নি]